#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১৬
শৈলীর মাহিরাকে মিউসিক সিস্টেম আনা থেকে মানা করা এবং ইশারায় গিটার দেখানো, সবই খেয়াল করেছে মিহরান। তাইতো বাঁকা হেসেছে ও। মাহিরাও ভাইয়ের থেকে ফিরে শৈলীর কাছে অনুরোধ করে একটা গান শোনানোর জন্য। দোলনায় বসা ঝুমাও তাল দেয় ননদের সাথে। শৈলীর তো না করার এমনিতেই উপায় নেই। শর্ত পুরোন করতে হবে যে। তাই আর বিলম্ব না করে গিটার হাতে নিল ও। সুর তুললো মধুর কন্ঠে,
“একটা গোপন কথা ছিল বলবার
বন্ধু, সময় হবে কি তোমার?
একবার শুনে ভুলে যেয়ো বারবার
ভুলেও কাওকে বলোনা আবার
মুখে ভালোবাসি না, বলে মনেতে প্রেম নিয়ে
চলে আছে অনেকে
এত দিন ছিল সাধারণ
তার মাঝে একজন যাকে আজ বড় আলাদা লাগে
মন, আঁধারের নীলিমায়
তোমাকে আজ খুঁজতে চায়
জানি না (জানি না) কোথায় পাবো তোমায়?
একবার এসে দেখো আমায়
ভেবেছি তাই এবার, যা কিছু হবে হবার
হোক তবু করে স্বীকার
পরাজয় মেনে নিয়ে, সব কিছু বলে দিয়ে
চাইবো আমার অধিকার
কপালে যা আছে লেখা, মনে যদি পাইয়ো ব্যাথা দেখে নিবো আমি এর শেষ
মিথ্যে অভিনয় আর নয় আর নয়
এই ভালো আছি এই বেশ
মন, আঁধারের নীলিমায়
তোমাকেই আজ খুঁজতে চায়
জানি না (জানি না)কোথায় পাবো তোমায়?
একবার এসে দেখো আমায়
প্রতিদিন এ-গলি ও-গলিতে ঘুরঘুরি কেটে যায় সময় আসে রাত
মেয়েটা বাঁকা করে চুল বাঁধে প্রেম করে দেখ
ছেলেটাও পড়ে, ফুলহাতা শার্ট
এই দেখে হাসাহাসি, গানটাকে ভালবাসি
এই ভালো আছি এই স্বপ্ন আমার
কখনও বুঝিনি যে তা এটা ছিল সূচনা
আছে বাকি স্বপ্নের উপসংহার
মন, আঁধারের নীলিমায়
তোমাকেই আজ খুঁজতে চায়
জানি না (জানি না) কোথায় পাবো তোমায়?
একবার এসে দেখো আমায়”
চারিদিকে এক সুরেলা নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে শৈলী গানটার ইতি টানে। পরমুহূর্তেই আবহাওয়া ভারী করে বেজে উঠে করতালি। কিন্তু তন্ময় লক্ষ্য করে অন্য এক বিষয়। পুরো গানটা শোনার সময় ওর কান শৈলীর সুরের সাথে তাল মেলালেও, চোখ টিকে ছিল মিহরানের পানে। তন্ময় স্পষ্ট দেখেছে মিহরানের চোখ মুখ থেকে উপচে পরা মুগ্ধতা। শৈলীর দিকে তাকানোর সময় ছেলেটা একটা পলকও ফেলেনি। আশ্চর্য হয়েছে তন্ময় খুব। এটাই কি সেই নিরস, রগচটা, নিরুৎসাহিত মিহরান যে এতো মেয়েদের মন নিষ্ঠুর ভাবে ভেঙে চলে এসেছে? তন্ময় মিল খুজে পায় না।
তন্ময় মিহরানের পাশ ঘেঁষে বসে। কন্ঠ খাদের নামিয়ে ফিসফিস করে কানে বলে,
– কাহিনী কি মামা?
মিহরান চট্ করে তাকায়,
– মানে? কি কাহিনী ?
– সেটাই তো আমার প্রশ্ন? আজ যা যা দেখছি তোর মাঝে, তাতে তো মনে হচ্ছে অনেক কাহিনী ঘটে গেসে। আমার কাছে লুকায়ে লাভ নেই মামা, বলে ফেল, বলে ফেল।
মিহরান আবার সামনে ফেরে, ঠোটের কোণে হাসির ছোয়া লাগায়। কাহিনী যে কিছু একটা হয়েছে তা তো ও নিজেও বুঝতে পারছে কিন্তু এখন সে এসব কারও সাথেই শেয়ার করতে চায় না। এমনকি তন্ময়ের মতন সবচাইতে কাছের বন্ধুর সাথেও না। তাই ফের তাকায় ও তন্ময়ের দিকে,
– যখন কিছু বলার মতন হবে তখন জানাবো। তোকেই জানাবো।
মিহরান কাধ জাপটে ধরে তন্ময়,
– সেই অপেক্ষাতেই রইলাম।
……………………..
শৈলীর গান শেষ হতেই সবাই প্রশংসার বন্যায় ভাষিয়ে দিল ওকে। তবে যার জন্য গান গাওয়া তার থেকেই কোনো মন্তব্য না আসাতে শৈলীর একটু খারাপ লাগলো। শৈলী নিজেও একটা ব্যাপার বোঝে না যে, মিহরানের মতামত ইদানিং ওর কাছে এতো জরুরি হতে গেল কেন? সেইদিন উপস্থাপনাতেও মিহরান ওর কোনো প্রশংসা না করায় ওর মন খারাপ হয়েছিল, আজও একটু হলো। বিষয়টা চিন্তিত করে তুললো শৈলীকে।
………………………….
গানের আসরও শেষ হলো এক সময়। যে যার মতন আবার ছড়িয়ে পরলো নিজ আড্ডায়। ডেসার্ট হিসেবে চিজ কেইক আর বাটারস্কচ আইসক্রিম তো সাথী হিসেবে ছিলোই। শৈলীর ভীষণ পছন্দ বাটারস্কচ আইসক্রিম, তাই বাটি ভর্তি করে নিয়ে ফেললো ও। তবে আজ বোধহয় এই খাদ্য ওর রিজিকে ছিল না, কারণ পাশ ফিরতেই মেহরাবের সাথে এমন ধাক্কা খেল যে ওপরে বসানো স্কুপটা ওর সাদা ওড়নায় মেখে গেল। মেহরাব গেল হকচকিয়ে,
– সরি সরি দোস্ত, আমি খেয়াল করিনি।
শৈলী স্মিত হাসে,
– আরে দোস্ত ইট্স ওকে। আমিও তো খেয়াল করিনি। ভুল আমারও ছিল।
– আয় হায়, তোর ওড়নায় তো দাগ লেগে গেসে। এটা তো ঠিক করতে হবে। দাড়া আমি মাহি কে ডেকে আনি।
মুহূর্তেই মেহরাব মাহিরাকে নিয়ে হাজির করালো শৈলীর সামনে। মাহিরা শৈলীর অবস্থা দেখে হায়হুতাশ শুরু করলে মেহরাব দিলো ওর মাথায় এক গাট্টা,
– আরে ড্রামা কুইন, তুই কান্দিশ পরে, আগে ওকে ওয়াশ রুমে নিয়ে যা। ভাইয়ার রুমেরটায় নিয়ে যা, এটা কাছে আছে।
মাহিরার তখনই চেতনা জাগ্রত হওয়ায় তাড়াতাড়ি শৈলীকে নিয়ে গেল মিহরানের ওয়াশরুমে। আর বেশী দেরী করলে ওড়নায় দাগ বসে যেতে পারে বুঝে শৈলীও আপত্তি করলো না। পুলের পাশের দরজা দিয়ে সোজা ঢুকলো মিহরানের কামরায়। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল ওয়াশরুমের দিকে।
…………………
এদিকে মালিহা ঘুরঘুর করছে একটা সুযোগের অপেক্ষায়। কখন সে মিহরানকে একা পাবে আর তুরিনের গিফ্টটা দিবে। এদিকে তুরিনেরও যে ভয়ংকর মন খারাপ হয়ে আছে, সেটাও মালিহা বুঝতে পারছে। পুরো অনুষ্ঠানে মিহরান একবারও তুরিনের দিকে তাকায়নি। মেয়েটা এতো সুন্দর করে সেজেছে কিন্তু মিহরান সেদিকে নজর পর্যন্ত দেয়নি। তুরিন নিজের থেকে কথা বলতেও চেয়েছিল, কিন্তু দু পা আগাতে গিয়েও পিছিয়ে এসেছিল মিহরানের গম্ভীর অভিব্যক্তি দেখে। মালিহাও খেয়াল করেছে সেটা, আফসোস হচ্ছিলো ওর। ভাইয়া ওনার বন্ধুদের সাথেও যেখানে সিরিয়াস ভঙ্গিতে কথা বলে, সেখানে জীবনসঙ্গীর সাথে তার কেমন ব্যবহার হবে?
মালিহা বুঝলো এভাবে হবে না। বান্ধবীর মুখে হাসি ফোটাতে হলে ওকে নিজ থেকেই কিছু করতে হবে। এজন্যই মিহরানের কাছে স্বশরীরে পৌছালো ও,
– ভাইয়া?
মিহরান ওর বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো তখন। বোনের আওয়াজে চোখ ফেরালো,
-হমম বল।
– ভাইয়া একটু কথা ছিল। এইদিকে আসবা?
মিহরান একবার স্থির চোখে তাকায় বোনের দিকে। তারপর বন্ধুদেরকে ‘আসছি’ বলে মালিহাকে ইশারা করে চলার জন্য।
মালিহা আবার চোখের ইশারায় তুরিনকে সামনে আসতে বলে। তুরিন এতোক্ষণ বান্ধবীর দিকেই উৎসুক নজরে তাকিয়ে ছিল। সিগনাল পেতেই আরেক পাশ দিয়ে এগিয়ে এলো ও। মিহরান এসে একটা খোলা জায়গায় থেমে ঘোরে। মালিহা ওর সম্মুখে আর তুরিন ওদের থেকে একটু দুরত্ব বজায় রেখে দাড়ায়। মিহরান এবার প্রশ্ন ছোড়ে,
– বল কি বলবি।
মালিহা আড়চোখে একবার বান্ধবীকে দেখে সরাসরি ভাইয়ের দিকে হাতে রাখা বাক্সটা এগিয়ে দেয়।
– ভাইয়া, এটা তোমার জন্য।
মিহরান একটু অবাক হয়। ভ্রু কুচকে বাক্সটা নিজের হাতে নেয়,
– এটা কি?
-তোমার জন্য একটা ছোট্ট গিফ্ট।
– আমার জন্য? কেন? আর কে দিয়েছে?
মালিহা আমতা আমতা করে
– ককে আর দেবে? আআমি কিনেছি ততোমার জন্য। আসলে… তুমি দেশে ফেরার পর তোমাকে কোনো হোমকামিং গিফ্ট দেওয়া হয়নি, তাই ভাবলাম….তুমি খুলে দেখ না, পছন্দ হয় কি না।
মিহরান বোনের কথায় ঠোটে হাসি ছোয়ায়। বাক্সটার ওপরের ফিতা খুলে ভেতর থেকে মেরুনের মাঝে চেক ডিজাইনের ফরমাল টাইটা বের করে। মালিহা তুরিন কে তখন দেখে মনে মনে হাসছিল। মেয়েটার চোখ চকচক করছে খুশিতে। মনে হচ্ছে এখুনি কেঁদে দিবে। তারপর আবার ভাইয়ের দিকে উৎসুক মেজাজে প্রশ্ন করলো,
– পছন্দ হয়েছে ভাইয়া?
– হমম। থ্যাঙ্কস।
– ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম ভাইয়া। আচ্ছা এখন আসি আমি, তুমি পার্টি এনজয় করো।
এই বলে মালিহা মিহরানের পাশ কাটিয়ে তুরিনের কাছে আসে। তুরিন চোখ ভরা কৃতজ্ঞতায় বান্ধবীর হাত জাপটে ধরে। তারপর মনের সুখে দুই সখী আবার মিশে যায় মানুষের ভীড়ে।
………………..
শৈলী ওয়াশরুমে ঢুকেই মাহিরা কে চলে যেতে বললো। মাহিরা থাকতে চেয়েছিল কিন্তু শৈলী ওকে রাখলো না। মেয়েটা মজা করছিল, এমনিতেই মেহরাব ওকে ডেকে নিয়ে এসে সেটার ব্যাঘাত ঘটালো, এখন আবার শৈলীর পাহারায় খামখা দাড়িয়ে থাকার কোনো মানে হয় না। তাই এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দিল মাহিরাকে ও। বললো ওড়নাটা ধুয়েই পাঁচ মিনিটে মাহিরার কাছে আসছে।
তবে ওড়না ধুতে পনের মিনিটের মতন সময় লেগে গেল শৈলীর। সাদা কাপড় হওয়াতে দাগটা বার বার চেয়ে থাকছিলো। ঘসে ঘসে শেষে তুলতে পেরেছে সবটুকু। কিন্তু এটা করতে গিয়ে কাপড় অনেকখানি ভিজেছে। এখন এটা গায়ে চড়িয়ে মানুষের সামনে যাওয়াটা সম্ভব না।
ওয়াশরুম থেকে উঁকিঝুকি দিয়ে বের হলো শৈলী। রুমে কাউকে না দেখতে পেয়ে শান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। এভাবে ভেজা কাপড় নিয়ে বাইরে না যেয়ে কিছুক্ষণ ফ্যানের নিচে দাড়িয়ে শুকানোর চিন্তা মাথায় এলো ওর। তাই ঠিক রুমের মাঝখানে ফ্যানের নিচে গিয়ে দাড়ালো ও। চলন্ত ফ্যানের নিচে ওড়নাটা গায়ের ওপরেই ছড়িয়ে দিল। দুহাত সামনে টেনে ওড়না তার ওপরে রাখলো।
কেটে গেল কিছু মুহূর্ত। ফ্যানের বাতাসের ঝাপটা মুখে সরাসরি লাগার কারণে শৈলী নিজের চোখ বন্ধ করেছিল। হঠাৎ ওর মনে হলো কেউ ঢুকেছে রুমে। পায়ের আওয়াজ হতে হতে হঠাৎ মনে হলো হোচট খেয়ে থেমে গেল। শৈলীর ষষ্ঠন্দ্রীয় জেগে উঠে। চোখ খুলে চকিতে পেছনে তাকায়। মিহরানকে সামনে দেখতে পেয়ে পুরোপুরি ভড়কে যায়।
– স্যার…
মিহরান নিজেও কম অবাক হয়নি। শৈলীকে নিজের রুমে আশা করেনি ও। তারওপর এরকম ভেজা কাপড়ে…
মিহরান সাথে সাথে চোখ নামিয়ে একপাশে ঘোরে। শৈলীরও তখনই নিজের পরিস্থিতির কথা মনে পরে। ঝড়ের বেগে ও নিজেও আবার ঘুরে দাড়ায়। মুখ চোখ সাথেসাথে কুচকে আসে। জিভে দেয় কামড়। এটাতো হওয়ারই ছিল। মিহরান স্যার সামনে আর ওর সাথে অপ্রস্তুত কিছু হবে না তা কি হয়!
কিছু মুহূর্ত নিস্তব্ধতায় কাটে দুজনের মাঝে। একে অপরের পিঠাপিঠি দাড়ানো এখন ওরা। বোঝাই যাচ্ছে দুজনই বিব্রত। একসময় এই পরিস্থিতি কাটাতে মিহরান নিজেই শুরু করে..
-সরি, আসলে আমি জানতাম না আপনি রুমে আছেন। আমি তো একটা জিনিস রাখতে…
মিহরানের মুখের কথা কেড়ে নেয় শৈলী,
– স্যার, সরি তো আমার বলা উচিত। আপনার পারমিশন ছাড়াই আপনার রুমে এসেছি…
-ইট্স, ইট্স নট্ আ প্রবলেম।
আবার চুপ হয়ে যায় দুজন। নিজের গহীনে শব্দমালা খুজে বেড়ায়। কি বলবে পরবর্তীতে? শৈলীর তো একবার ইচ্ছে হয় দৌড়ে বের হয়ে যেতে। কিন্তু ওর আর দরজার মাঝে খোদ মিহরান দাড়ানো। তাই যাওয়াটা অসম্ভব। তাহলে এখন কি হবে?
– বাই দা ওয়ে, থ্যাঙ্কস ফর দা সং, শৈলী।
শৈলী চমকে উঠে। চোখ শুন্যে তোলে। নিজের চেতনা একপাশে ফেলে মিহরানের ধন্যবাদের উত্তর দিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘাড় এক পাশ করে,
– ইউ আর ওয়েলকাম স্যার।
আবার চুপ দু প্রান্ত। তবে এবার বেশিক্ষণ এভাবে থাকলো না, কারণ মিহি কন্ঠে শৈলী সাহস জোগায়,
– গানটা আআপনার ভালো লেগেছে স্যার?
এবার মিহরান ঘাড় ঘোরায়। শৈলী দেখতে পায় না ওর ঠোটের তৃপ্ত হাসি,
– আমার ভালো লাগাটা কি খুব জরুরী?
শৈলী ওপরের দাঁতের পাটি দিয়ে নিচের ঠোট কামড়ে ধরে। এই প্রশ্নের মৌখিক উত্তর দেওয়ার মতন অবস্থায় নেই ওর। আর কি বলবে ও? মিহরান স্যার কি উত্তরটা জানেন না? জানেন তো যে আজ শৈলী গান গেয়েছে তো শুধু ওনার জন্য। ওনার শর্ত মানতেই তো, ওনার ভালো লাগার জন্যই তো।
-স্যার…
ঠিক তখনই ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে শৈলীর ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ ছাড়লো ও,
-স্যার, মাহিরা ফোন দিচ্ছে…আমাকে যেতে হবে
ভেজা ওড়নার পাশটা ভালো করে হাতের মাঝে নিয়ে ঘোরে শৈলী। ওকে দেখে মিহরানো সরে দাড়ায়। জায়গা করে দেয় ওর যাওয়ার। তবে পাশ কাটাতেই মিহরানের শব্দে শৈলী থমকায়,
– গানটা কেমন লেগেছে আমার, শুনে গেলেন নাতো।
শৈলী চমকে পাশ ফিরে মিহরানের দিকে তাকাতেই ও এগিয়ে আসে। শৈলীর একপাশে দাড়িয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে ওর কানের কাছে নিয়ে আসে,
– লাইভ গান শোনার লোভ ধরিয়ে দিলেন যে। এখন আবার শুনতে ইচ্ছে করলে কি করবো? আবারও বার বি কিউ পার্টি থ্রো করতে হবে কি?
হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় শৈলীর। এই কথা এইভাবে বলা লাগে? ওতো জানেই আজ এই পার্টির মূল কারণ ওর গান। তারপরও কথাটা নিজ কানে শুনলে যে শৈলীর সারা শরীরে কাঁপুনি ধরে যেতে পারে সেটা কি এই মানুষটা বোঝে না? নাকি সে বলেই এই কারণে যাতে ওর কাঁপুনি ধরে?
শৈলীর ভেতর ভেতর এই সব প্রশ্ন জাগলেও, ওর ওষ্টে ফোটে হাসি, লাজুকতার হাসি। মিহরান স্পষ্ট তা পর্যবেক্ষণ করে। ওর ঠোটেও তখন সংক্রমিত হলো সেই একই হাসি,
– আপনার কন্ঠের সাথে আপনার উপস্থাপনাও কিন্তু প্রশংসনীয় শৈলী। সত্যি বলতে আমি বুঝতেই পারিনি আপনি উপস্থাপনায় এতোটা দক্ষ। ইউ টুক মি বাই কম্প্লিট সারপাইজ। আমি দুঃখিত, আমার সেইদিনই আপনাকে অনুষ্ঠানের পর অভিনন্দন জানানো উচিত ছিল, কিন্তু রিকের বিষয়টা ঘটে যাওয়ায়….
শৈলী বুঝলো মিহরানের না বলা কথাটা। তার সাথে ওর দৃষ্টিতে জায়গা পেল কৃতজ্ঞতা,
– স্যার, আপনাকেও তো সেইদিনের জন্য আমার ধন্যবাদ জানানো হয়নি। রিকের হাত থেকে আমাকে এভাবে বাঁচানোর জন্য আমি আসলেই কৃতজ্ঞ আপনার কাছে। থ্যাংক্স আলট্।
মিহরান মুচকি হাসে। শৈলীর এই স্পষ্ট ভাষী ব্যবহারটা ওকে বরাবরই আকৃষ্ট করে। মুগ্ধ করে দেয়। শৈলী এবার অনুমতি নেওয়ার সুরে বলে ওঠে,
-স্যার আমি আসি…মাহি ডাকছে।
-শিউর।
আর দাড়ায়না শৈলী। মিহরানকে সেখানে রেখেই বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। সাথে নিয়ে ফেরে এক ঝাক ভালোলাগার অনুভূতি।
……………….
মাহিরা ওর বড় বোন আর তার বান্ধবীর সাথে দাড়িয়ে ছিল ঠিকই তবে ওর মন পরে ছিল ছাদের আরেক কোণায় যেখানে মাহিব আর মিহরানের বন্ধুরা জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো। তাদের মাঝেই একজন ছিল যে মাহিরার অতি প্রিয়, অতি কাছের মানব। মাহিরা আড়চোখে নিজের নজর বার বার সেদিকেই টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল, দুতিন বার যে নজরে নজর মেলেনি তা কিন্তু না। সেই মানবের মনও যে এদিকেই বাসা বেঁধেছে। মাহিরা তখন মুচকি হাসে, ওপাশের মানব কে দেখিয়ে। তখনই সবার অগোচরে সেই মানব চট্ করে চোখ টিপ দেয় মাহিরাকে। হকচকায় মাহিরা। দৃষ্টিতে ভর করে ভয়, লাজ দুটোই। এদিক ওদিক চায় সে, পাছে আবার কেউ দেখে ফেললো না তো? তারপর কপট রাগ নিয়ে তাকায় সামনে। মনে মনে বকা দেয়,
-সিরিয়াস দুষ্টু এই লোকটা।
চলবে….