পরিণয়_প্রহেলিকা #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৪৯

0
969

#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৪৯

– তোর বান্ধবীর সমস‍্যাটা কি? আমাকে এক্স‍্যাক্টলি বলবি?

মালিহা নিজের মেঝ ভাইয়ের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকানো। সবকিছু ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে ভাইয়ের ফোন পেয়েই ও বুঝেছিল কোন একটা গন্ডগোল হয়েছে। নয়তো এই মধ‍্যরাতে মিহরান ভাই জীবনেও কাউকে বিরক্ত করার পাত্র না। যারপরনাই দৌড়ে মালিহা ওপরে উঠে, মিহরানের রুমে আসে। এসে ভাইয়ের পাশে শৈলীকে সঙ্কির্ণ রুপে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরো বেশী অবাক হয়। বুঝতে অসুবিধে হয় না দুজন হয়তো নিজেদের একান্ত সময় কাটাচ্ছিলো। তা কাটাতেই পারে, তবে এসবের মাঝে মালিহাকে তলব দেওয়ার কারণটা কি?

– মালিহা, আই এ‍্যাম আস্কিং ইউ সামথিং।
ভাইয়ের দাঁত চিবিয়ে কথা বলায় পিলে চমকে ওঠে মালিহার।
-ভভাইয়া, ততুমি ককি বলছো আআমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি হইসে? কোন বান্ধবী?
– তুরিন।

মালিহা হোচট খায়। হায় হায়! এই মেয়ের নাম হঠাৎ ভাইয়ের মুখে কেন? তাও আবার এতো রাতে। এই পাগল মেয়ে আবার কি গন্ডগোল বাধালো?
– তুরিন? ও কি করেছে ভাইয়া?

মিহরানের তখনো ঘন ঘন শ্বাস ওঠানামা করছে। রাগে কপালের সিরা উপসিরা দপ্ দপ্ করে জ্বলছে।
– ওই মেয়ে শৈলীর ফোন নাম্বার পেল কিভাবে? তুই দিয়েছিস?

মালিহা সাথেসাথে মাথা নাড়ে,
– না ভাইয়া? পাগল নাকি? আমি কেন দিতে যাব? কেন, ও কি কল দিয়েছিল নাকি?

শেষ প্রশ্নটা মালিহা শৈলীর মুখের দিকে তাকিয়ে করে। শৈলীর মাথা কিছুটা নোয়ানো তাই মালিহার চাউনি ও দেখতে পারে না। কিন্তু সেই উত্তরের হয়তো প্রয়োজনবোধও হয় না কারণ মিহরানের হিসহিসানো আদেশের সুর মালিহার রুহ্ কাঁপিয়ে দেয়।
– এক কাজ কর্। তোর ঐ বান্ধবীকে কাল সকালে আমার এখানে আসতে বল্। এক্ষুনি বল্। আই ওয়ান্ট টু মিট উইথ হার ইন পার্সন। অনেক কথাই ও শৈলীকে শুনিয়েছে, কিন্তু এই মিহরানের মুখোমুখি হয়নি এখনো। সেটার দরকার আছে। তুই ফোন দে।

মিহরান কোন মাত্রায় রেগে আছে তা শৈলী রগে রগে টের পাচ্ছে। ঐ তুরিন নামক মেয়েটার যে নাস্তানবুদ হাল করে ছাড়বে ওর জামাই, সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। এতে মালিহা কষ্ট পেতে পারে ভেবে শৈলী একটু আগায়,
– শুনো, বিষয় টা ছেড়ে দিলে…

মিহরানের হাত ওপরে ওঠাতে শৈলী মাঝ পথেই থেমে যায়। পাশ দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে শুধু তাকায় ওর দিকে মিহরান। সেই রক্তমাখা চাউনিই কুলুপ আটকে দেয় শৈলীর মুখে। স্বামীর আকাশচুম্বি রাগ দেখে এসির কনকনে ঠান্ডার মাঝেও দরদর করে ঘামতে লাগলো ও। মিহরান শৈলীর থেকে চোখ সরিয়ে বোনের দিকে স্থির করে,
-কল্ হার।

কঠিন, শীতল কন্ঠে এই দুটি শব্দই মালিহার তৎপর হওয়ার জন‍্য যথেষ্ট ছিল। সাথেসাথেই ফোন বের করে ডায়াল করলো তুরিনের নাম্বারে। মনে মনে দোয়া পড়া বাদ নেই। এই কান্ডজ্ঞানহীন মেয়ে যে কি করসে কে জানে!

ইতিমধ‍্যে ওপাশে কল রিসিভ হতেই মালিহা বললো,
– হ‍্যালো তুরিন….ভালো আছিস?….হমম ভালো। আচ্ছা কাল সকালে ফ্রি আছিস?….একটু আমার বাসায় আসতে পারবি?….হমম দরকার ছিল।…সকাল সকালই চলে আসিস। আচ্ছা ওকে বাই।

ফোনটা রেখেই ভাইয়ের দিকে তাকালো মালিহা। মিহরানের রক্তিম গালগুলো দিকে চেয়ে থাকা দায় হয়ে পরেছে। এমন কি হলো যে ভাই এতো বেশী রেগে গেলেন। এরকম রাগ কখনোই আগে দেখেনি মালিহা।
তারপরও সাহস করে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাইয়া তুরিন আসলে কি করেছে? আমাকে একটু বলো?
– এখন এসব নিয়ে কোনো কথা হবে না। কাল ঐ মেয়েকে নিয়ে তুই ওপরে আসবি। তখনই সব জানাবো। এখন রাত হয়েছে, তুই রুমে যা।

ভাইয়ের এই কথাই যে শেষ কথা এটা মালিহা জানে। এখন জোরাজুরি করেও কোন লাভ হবে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। তাই মালিহা আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

শৈলী এতক্ষণ এক ওয়ালের সাথে হেলে দাড়িয়ে ছিল। ভাইবোনের মাঝে না ঢোকাই শ্রেয় মনে হয়েছে ওর। এখন মালিহা চলে যাওয়াতে ও নিজেও নড়েচড়ে উঠলো। তুরিনের কথার রিয়‍্যাকশন যতটা ওর হওয়ার কথা ছিল তার থেকে ঢের গুন বেশী হয়েছে মিহরানের। সেই ঝড়ের দোলায় তুরিন ওকে কি কি বলেছিল তা ও ভুলেই বসেছে এক প্রকার। স্বামীর রাগ দেখেই কাবু ও। এখন মানুষটাকে একটু সময় দেওয়া দরকার ঠান্ডা হওয়ার জন‍্য।

মিহরানের কাছে এগোয় শৈলী। ওর পাশে যেয়ে চুপটি করে দাড়ায়। মিহরান এখনো সামনে, শূন‍্যে তাকানো। শৈলী বুঝে পায় না কিভাবে কথা শুরু করবে, সম্পর্কের পর থেকে এই প্রথম মিহরানের এই চেহারা দেখলো ও। পৃথিবীর কাছে গম্ভীর মৃদুভাষী হলেও শৈলীর কাছে সে একান্তই অনন‍্য। দুষ্টুমি, গল্পকথায় ভরপুর এক প্রেমিক পুরুষ। সেই মানুষের এমন চেহারা আসলেই সহ‍্য করা কষ্টকর শৈলীর জন‍্য।

শৈলী এসবই ভাবছিল যখন সামনে থেকে গম্ভীর জোড়ালো কন্ঠ ওকে নাড়া দিয়ে ওঠে,
– তুমি কি ঐ মেয়ের বলা কথাগুলো বিশ্বাস করেছো?

শৈলী থমকায়, ক্ষণিকের জন‍্য বাকরুদ্ধ হয়, তারপর মুখ খুলে,
– কোন কথাগুলো?
– তোমার প্রতি আমার অনুভূতি নিয়ে যেই কাঁদা ছুড়েছে ও সেগুলো। বিশ্বাস করেছো?

শৈলীর ঠোটে আল্তো হাসি ভাঙে। এখনো সামনে তাকিয়ে থাকা স্বামীর ডান হাতে নিজের কব্জি গলায় ও,
– আমি আমার নিজের ভালোবাসার ওপর বিশ্বাস করি। যার তার কথার ওপর না।

মিহরান সচকিতে ঘুরে দাড়ায়। শৈলী ওর চোখে অনেকক্ষণ পর হাসি জ্বলতে দেখে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শৈলী নিজেকে মিহরানের বুকে পায়। নিশ্চুপ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে মিহরান নিজের মাঝে তার স্ত্রী রুপি মানবীকে। প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলে বারংবার। ভস্মিত রাগের প্রলেপের ভেতর দিয়ে এতক্ষণ বয়ে যাওয়া আতঙ্ক ও শঙ্কাগুলো এখন একে একে নিভছে। শৈলীর ওর প্রতি এই অগাধ বিশ্বাস, তাই এখন ওর মন,দেহ সব ঠান্ডা করে দিয়ে যাচ্ছে।
………………………
শুভ্র সকাল। রোদের মিষ্টি আভা পর্দা ঠিকড়ে রুমে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টায় লিপ্ত। তবে এসির কনকনে ঠান্ডায় যেন সেই উদ্দিপ্ত কিরণ মিইয়ে যাচ্ছে। ছুতে পারছে না মিহরানের পেটানো মেদহীন শরীর এলানো বিছানাতে। তাই এখনো কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই আরাম করে ঘুমিয়ে আছে ও। এমনই এক প্রহরে শৈলী রুমে প্রবেশ করলো। মেইন দর্জা ভেতর দিয়ে সিটিকিনি দিয়ে লক্ থাকলেও, থাই গ্লাসে শুধুই এলেকট্রনিক লক্ লাগানো। সেটার খোলার জন‍্য একটা চাবি আগেই শৈলীকে দিয়ে রেখেছে মিহরান, যাতে ও যখন খুশি তখন আসতে পারে। সেই রাস্তা ধরেই শৈলী এই মুহূর্তে রুমে প্রবেশ করেছে। গত রাতে শৈলী বেশিক্ষণ থাকে নি মিহরানের সাথে। মিহরানও জোর করেনি। মন মেজাজ পুরোপুরি ঠিক হচ্ছিলো না ওর। তবে শৈলীকে যাওয়ার সময় বলে দিয়েছিল সকাল বেলা এসে যেন ওকে ঘুম থেকে উঠায়। এখন সেই আবদার পূরণ করতেই শৈলীর আগমন।

শৈলী রুমে ঢুকতেই ওর সাথে পাল্লা দিয়ে সূর্যের কিরণগুলো ঢুকে পরে। মুহূর্তেই রুমে ছড়িয়ে পরে লালাভ আভা। দরজা বন্ধ করতেই আবার কিছুটা নিভে যায় সেই আলো। শৈলী মুচকি হেসে পা বাড়ায় খাটের দিকে। মিহরানের চওড়া কাধের পাশে গিয়ে শান্ত হয়ে বসে। ওর ঘুমন্ত তৈলাক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। আস্তে আস্তে কেমন এক নেশায় জড়িয়ে পরে। ঘুমের মাঝেও কি এতো সুন্দর লাগাটা জরুরি এই মানুষটার? ভেবে পায় না তা শৈলী। আল্তো হাতে অমসৃন গালে হাত ছোয়ায়। খোঁচা খোঁচা দাড়ি এসে লাগে তালুতে। আজব এক শিহরণ তড়িত গতিতে গায়ে বয়ে গেলেও শৈলী হাত সরায় না। উল্টো বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে গালে পরম আদরে ঘসতে ঘসতে মুখ নোয়ায় মিহরানের কানের কাছে,
– গুড মর্নিং।

মিহরান কিছুটা নড়ে ওঠে, তবে চোখ খোলে না। শৈলী মুচকি হেসে আবার শুধায়,
– ওঠো না। সকাল হয়েছে তো।

চোখ পিটপিট করে তাকায় মিহরান। শৈলীকে দেখে প্রশান্ত হাসি দিয়ে আবার চোখ মুদে। শৈলী এবার কপট রাগ দেখায়,
– আরে? উঠছো না কেন? নয়টা বেজে গিয়েছে তো। দেখো, তুমি না উঠলে আমি চলে যাব কিন্তু।

এটা বলার পরও যখন মিহরান উঠছে না দেখে, শৈলী আসলেই চলে যাওয়ার প্ল‍্যান করলো। কিন্তু ওঠার জন‍্য পিঠ সোজা করতেই মিহরানের হাতের টানে একদম যেয়ে পরলো ওর বুকে। আকস্মাত এই টানে শৈলী পুরো ভড়কে যায়।
-কি সমস‍্যা? সকাল সকাল কি করছো?

ততক্ষণে শৈলীর গলায় মুখ ডুবিয়েছে মিহরান,
– গুড মর্নিং জান।

শৈলী থমকায়। রুক্ষ, সোজাসাপ্টা, গম্ভীর এই মানুষটা এতোদিন নিজের ভালোবাসা নানান ভাবে জানান দিলেও এরকম ফিল্মি স্টাইলে ওকে কোনো নামে ডেকে ওঠেনি। আজ প্রথম ‘জান’ বলে ডাকলো। পেটের ভেতর প্রজাপতিদের পাড়াপাড়ি যেন সহ‍্য হচ্ছে না আর। গলে যায় মিহরানের শরীরে ও। মিহরানও সেটা বুঝে নিজের স্পর্শের গভীরতা আরও বাড়িয়ে দেয়। সকাল সকাল শৈলীকে প্রেম রাজ‍্যে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ও। কিন্তু বেশি একটা দূরে আগাতে পারে না ও, তার আগেই মিহরানের ফোনটা বেজে ওঠে। মালিহা কল দিয়েছে দেখেই শুধু কলটা রিসিভ করার সিদ্ধান্ত নেয় ও। শৈলীও দেখেছে কলটা, বুঝেও গিয়েছে কেন মালিহার কল এসেছে। তাই নিজেকে মিহরানের বন্ধন থেকে বের করে পরিপাটি হয়ে বসে ও।
……………..
সকাল সাড়ে নয়টা। মালিহা তুরিনকে নিয়ে ছাদে উঠে আসে। রাতেই রুমে এসে তুরিনকে ফোন দিয়ে ওর মুখ থেকে সব কথা বের করেছে মালিহা। তুরিনের করা কান্ড শুনে ইচ্ছা মতন গালমন্দ করে ওকে। এতো বড় গাধামি কেউ করে কিভাবে? তুরিন প্রথমে নিজের পক্ষে অনেক তর্কে জড়ালেও যখন শুনেছে যে ওর সব কথা মিহরান শৈলীর পাশে বসে শুনেছে, তখন তুরিনের মাথায় বাজ পরে। তার ওপর যখন জানতে পারে যে মিহরান ওকে ডেকে পাঠিয়েছে, তখন সাথেসাথেই বেঁকে বসে ও। কোনোভাবেই মিহরানের সামনে আসতে চাচ্ছিলো না তুরিন, মালিহাই জানে কতো কাঠখোর পুড়িয়ে ওকে মেয়েটাকে এখান পর্যন্ত আনতে হয়েছে।

ছাদে এসে মালিহা মিহরানকে ফোন দেওয়ার দশ মিনিট পর রুম থেকে বের হলো মিহরান। তুরিনের ওকে দেখা মাত্র মনে জেকে আসা ভয় কর্পুরের মতন উবে গেল যখন মিহরানের পেছন পেছন ওর হাত ধরে শৈলীকে বের হতে দেখলো ও। মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। কাল অনেক রাতে এই বদ্ মেয়েটাকে ফোন দিয়েছিল, তখন ও মিহরানের পাশে ছিল, আবার এখন এই সাত সকালে মিহরানের হাত ধরেই রুম থেকে বের হচ্ছে। এসব চিত্র একদিকেই ইঙ্গিত করে। তুরিনের, সেটা বুঝতে পেরে, অজান্তেই চোখের কোণ ভরে এলো। সব শেষ ওর জন‍্য!

গম্ভীর ও রুক্ষ সাজে মিহরান সামনে এসে দাড়াতেই তুরিন মাথা ঝুকায়। মিহরান একটু সময় নেয় না। অতন্ত আনুষ্ঠানিক স্বরে কাঠিনত্ব মিশিয়ে প্রশ্ন ছোড়ে,
– আপনি তুরিন?

তুরিনের বুক ছ‍্যাৎ করে ওঠে। যাকে এতো ভালোবাসলো সেই মানুষটা নাকি ঠিকঠাক ভাবে ওর নামই জানে না। তাহলে কার আশায় এতোদিন পথ চেয়ে বসেছিল ও?

মিহরান তুরিনের উত্তরের জন‍্য অপেক্ষা করলো না,
– গতকাল রাতে আপনিই কি আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়েছিলেন? আমাদের সম্পর্ক নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলেন? কেন এই দুঃসাহস দেখিয়েছেন জানতে পারি কি?

সকাল অনুযায়ী বেশ কাঠফাটা রোদই উঠেছে বাইরে। তবে চারিপাশে এতো গরমের মাঝেও মিহরানের বলা বাক‍্যগুলো বরফের ন‍্যায় হিম শীতল শোনালো বাকি তিনজনের কাছে। তুরিন যা দেখছে, যা শুনছে, এতে ভেতর থেকে সে পুরাই জর্জরিত। মনের গহীন কুঠিরে টাইফুন, সুনামি একসাথে আঘাত হেনেছে, যা সামলানো একেবারেই অসম্ভব।

মিহরান এবার অধৈর্য হয়। এই মেয়েটাকে দেখার পর থেকে গতকাল রাতের প্রতিটা কথা অক্ষরে অক্ষরে মনে পরে গিয়েছে ওর। দপ দপ করে জ্বলতে শুরু করেছে মাথার রগ।
– আপনার বলা প্রতিটা শব্দ আমি কাল শুনেছি মিস তুরিন। আপনার সাহস দেখে আমি আসলেই অবাক হতে বাধ‍্য হয়েছি। আমার বোনের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী আপনি, তার ওপর দাবি করছেন যে আমাকে নাকি পছন্দও করেন। কিন্তু আমার ব‍্যাপারে এইটুকু জ্ঞান রাখেন না যে আমার একান্ত নিজেস্ব জিনিসের ব‍্যাপারে আমি কতটুকু পসেসিভ? আপনি কিভাবে সাহস করলেন আমার ভালোবাসার মানষটাকে আঘাত করতে? হাও ডেয়ার ইউ?

তুরিন শেষ বাক‍্যে রীতিমতো চমকে ব‍্যালেন্স হারানোর জোগাড়। আর না হওয়ার কোনো কারণও নেই, মিহরান বাঘের মতন গর্জে উঠেছিল যে। এতোক্ষণের টলমলে অশ্রু এবার দৃশ‍্যমান হয় গালে। কিন্তু তখনো মিহরানের কথা শেষ হয়নি,
– আপনি আমার অনুভূতি নিয়ে শৈলীকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তাই না? এই বিয়ে নিয়ে আপনার বড় সংসয়। এমনকি আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা থেকেও বিরত থাকেননি। কিন্তু এসবে আমার কোনো যায় আসে না। আই ডোন্ট ইভেন কেয়ার ওয়াট ইউ থিংক। বিকজ ইটস নট মাই বিজনেস। আপনাকে আজ এখানে ডেকে আনার কারণ টা আমার ভিন্ন।

হঠাৎই চারজনের মাঝের আবহাওয়া বদলে যেতে দেখে মিহরান বাদে বাকিরা একটু বিচলিত হয়। মালিহা আর শৈলী আসলেই মনে করেছিল মিহরান বোধহয় তুরিনকে ডেকে ভীষণ অপমান করবে, গতকালের ওর করা প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর তুরিনের থেক নিবে। কিন্তু এখন মিহরানের বলা এই কথায় ওদের অবাক লাগে।

ততক্ষণে মিহরান শৈলীর দিকে একবার চেয়েছে। তারপর ওর হাত নিজের মাঝে টেনে ওকে সামনে নিয়ে একদম তুরিনের মুখোমুখি দাড়া করায়। বিভ্রান্ত শৈলী স্বামী মুখ পানে চাইতেই মিহরান বলে ওঠে,
– তোমাকে হুট করে বিয়ে করলেও, আমি তোমাকে পছন্দ অনেক আগ থেকে করি শৈলী। মনে আছে, হাতিরঝিলে তোমাকে আমি বলেছিলাম, তন্ময় আমার জীবনে দুজনের মাঝে প্রথমজন যে কোনো অনুমতি ছাড়াই আমার জীবনে ঢুকে একটা ভাইটাল পার্টে পরিণত হয়েছে। তুমি দ্বিতীয় ব‍্যাক্তির ব‍্যাপারে আমাকে কোন প্রশ্ন করোনি। করা উচিত ছিল তোমার। কারণ তখন সেটা করতে পারলেই তুমি জেনে যেতা যে সেই দ্বিতীয় ব‍্যাক্তি আর কেউ না, তুমি। তুমি কিভাবে, কখন আমাকে না জানিয়ে, আমার মনের গোপন কুঠুরিতে প্রবেশ করে সেখানে নিজের রাজত‍্য বসিয়েছো তা হয়তো তুমিও জানো না। কিন্তু তুমি এখন রাজত্ব করছো, এবং চিরজীবনই করবা।

শৈলীর চোখ ভরে আসে এসব শুনে। মিহরান নিজের ভালোবাসার উপস্থাপনা এতো সুক্ষ ভাবে কখনোই এর আগে দেয়নি। নিজেকে পরম রুপে ভাগ‍্যবতী মনে হয় ওর।
দৃষ্টি দিয়ে নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ও মিহরানের কাছে। মিহরান ততক্ষণে তাচ্ছিল্যের চাউনি দেয় তুরিনের দিকে,
-আমাদের সম্পর্ক হয়তো সমাজের কাছে কিছুটা অগ্রহনযোগ‍্যতার তকমা পেয়েছে, তাই যে কেউ যা ইচ্ছা তাই মন্তব‍্য করে বেড়াচ্ছে। আমি আগেও বলেছি আই ডোন্ট কেয়ার ফর দেম, বাট আই কেয়ার ফর ইউ শৈলী। তোমার মাঝে জীবনেও যেন কোনো ভ্রান্ত ধারণা না জাগে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে তাই আজ সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি বলছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। এবং কেউ না আগে আমার জীবনে ছিল, আর না নতুন কেউ আসবে। আমাদের পরিনয় এক প্রহেলিকার মাঝে দিয়ে চললেও আমার কাছে এই সম্পর্কটা পুরোপুরি স্পষ্ট। এবং এই ম‍্যাসেজটা আমি সবাইকে দিতে চাই। সো মিস তুরিনের মতন উদ্ভট ও বেইসলেস কথা তোমার সম্মুখে আসতে পারে ভবিষ্যতেও, জীবনেও সেগুলো কানে তুলবা না। ঘরের বাইরের ময়লা বাইরে থাকাই শ্রেয়, তা ভেতরে এনে ঘর নোংরা করার মানে হয় না।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here