#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৭
শৈলী মনে মনে যেন হাফ্ ছেড়ে বাঁচলো ওখান থেকে ছুটতে পেরে। তাড়াতাড়ি ব্যাকস্টেজের দিকে পা বাড়ালো। ও অনুধাবন করতে পারছে যে মিহরান স্যারের সামনে থাকলে ওর কি যেন হয়। কি হয় সেটার ব্যাখ্যা ও দিতে পারবে না, কিন্তু হয়। আর তাই সব উদ্ভট কান্ড সে করে বসে স্যারের সামনে। শৈলী নিজে থেকেই সিদ্ধান্ত নিল মিহরান স্যারের থেকে যথা সম্ভব দুরে থাকতে হবে ওকে। নয়তো এইসব কোনোভাবে যদি মাহিরার কানে যায়, তবে তো কেল্লা ফতেহ্ হয়ে যাবে ওর জন্য। এমনিতেই মেয়েটা নাচুনি বুড়ি, তার ওপর পরবে ঢোলের বাড়ি।
নিজের গ্রুপের কাছে শৈলী এসে দেখলো ওর ডিজাইন অনুযায়ী কাজ অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েছে। প্রসণ্ণ মনে মুচকি হেসে নিজেও সহকর্মীদের সাথে হাত লাগালো ও।
এদিকে শৈলীর যাওয়ার পানে একপলক চাইলো মিহরান। এতোক্ষনের অস্থির থাকা মনটা এখন শান্ত হওয়ায় নিজের ওপর ভেতর থেকে চরম বিরক্ত হয় ও।
সুদর্শন আর পুরুশালি ব্যক্তিত্যের অধিকারি মিহরানের আশপাশে মেয়েদের সমাগম থাকাটা সবসময়েই স্বাভাবিক ছিল। কলেজে, ভার্সিটিতে এমনকি কর্মক্ষেত্রেও প্রেমের প্রস্তাব কম পায়নি ও। কিন্তু সবগুলো প্রস্তাবই সে ফিরিয়ে দিয়েছে। মেয়েদের এই অযথা ঢলাঢলিটা ওর কোনো কালেও ভালো লাগে নি। বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে যারা ওকে পছন্দ করতো তাদের ব্যক্তিত্যের প্রতি ওর ছিল গভীর সন্দেহ।
কিন্তু জীবনে এই প্রথম, ব্যতিক্রম একটি ঘটনা ঘটলো। মিহরানের, হ্যা, সয়ং মিহরানের কোনো মেয়ের প্রতি আকর্ষণ জেগেছে। আকর্ষণটি এই মাত্রায় যে মেয়েটার বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে পর্যন্ত মিহরানের ভাবনা গড়িয়েছে যেই চেতনাটাকেই মিহরান একপ্রকার ঘৃণা করতো। তবে শৈলীর জন্য সেটা আর ঘৃণার রুপ নিচ্ছে না। বরং সেখানে বসতি গড়ছে মুগ্ধতা। মেয়েটার ওর আশপাশে উপস্থিতি ওকে অস্থির করে তুলেছে। হৃদপিণ্ডের রেট ক্রমাগত বাড়িয়েছে। মেয়েটাকে চেনার, জানার বাড়িয়েছে কৌতুহল।
অষ্টযুগলে চাপ দিয়ে মিহরান ভাবনায় ডোবে কিছুক্ষণ। তবে এখন সব এলোমেলো লাগায় সেই ভাবনাগুলতে দাড়ি দেয়। বাসায় যেয়ে ঠান্ডা মাথায় এ নিয়ে চিন্তা করবে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুষ্ঠানের অন্য কাজগুলোর দিকে মনোনিবেষ করে।
……………….
প্রায় আধঘন্টা পর, সব কাজ পর্যবেক্ষণ করে মিহরান অডিটোরিম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো, যখন দরজার পাশে কিছু ছেলেদের কথোপকথন ওর মনোযোগ টানে।
– মেয়েটার দেমাগ দিন দিন বাড়ছে রিক্। তুই কেন কোন স্টেপ নিচ্ছিস না?
– হ্যা রিক। জোহেবের সাথে আমিও একমত। জুনিয়র একটা মেয়ে আমাদের পার্ট দেখায় চলে। তোর মুখের ওপর কথা বলে? সাহস কতো বাড়সে বুঝছস? শৈলীর মধ্যে তুইও যে কি পাস বুঝি না, ওর মেজাজ সহ্য করিস কেমনে? এরকম ভাবে চললে তো আমাদের জুনিয়ররা আর পাত্তাই দিবে না। প্রেস্টিজ একেবারে পাংচার।
শৈলীর নামটা আসতেই মূলতো মিহরানের মনোযোগ ওদের দিকে ঠেকেছে। হুট করেই পদযুগল থমকে গেল।
চকিতে ঘুরে দাড়ালো ও।
অডিটোরিয়ামের দ্বারপ্রান্তটা অন্ধকার তাই এখানে কাউকেই ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছিলো না। মিহরান ছেলেগুলোর নাম শুনে চিনতে পারলেও, রিক এবং ওর বন্ধুরা বুঝলো না যে ওদের ছাড়াও আরও কেউ একজন ওদের আড্ডায় অনামন্ত্রিত ভাবে উপস্থিত। রিক্ ততক্ষণে চিবিয়ে কথা বলছে,
– দোস্ত, তোরা এই রিক্ কে এখনো ভালো মত চিনতে পারিস নাই। রিক্ কারও দেমাগ সহ্য করে না, তা সে মিস ইউনিভার্সই হোক না কেন। সেখানে ঐ শৈলী কোন ছাড়! আমি তোকে বলসিলাম না জোহেব, একটু অপেক্ষা কর্। ঐ মেয়ে বেশী আকাশে উড়তেসে তো, দেখ আমি ওরে কেমনে মাটিতে আছড়ে ফেলাই। Messing up with Rick is going to be tough on her.
মিহরানের চিবুক শক্ত হয়ে এলো। জায়গাটা আলোকিত থাকলে ওর কপালের সুক্ষ রগগুলো যে দৃশ্যমান হয়েছে তা দেখা দিত নিমিষেই। যে কাউকে মূহুর্তেই ভয় কাবু করে ফেলার জন্য ওর এই মুখাবয়বই যথেষ্ট। হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আসতেই আগ বাড়ালো ও সামনে,
– আপনাদের সবারই কি ক্লাস অফ এখন?
পুরুষালী, অত্যন্ত গম্ভীর আওয়াজটা অন্ধকারের মাঝে সবাইকে নড়বড়িয়ে দিল। রিকও বাদ যায়নি তা থেকে। ঝট্ করে সবাই উঠে দাড়াতেই মিহিরানের শক্ত নিরেট মুখশ্রি চোখে পরলো ওদের। জোহেব ও রাসেল ভীষণ ভয় পেয়ে গেল, স্যার ওদের কথোপকথন শুনে ফেলেনি তো? ওদের আতঙ্ক, মুখাবয়বে স্পষ্ট। তবে রিক সাথেসাথে নিজেকে সামলে মিহরানের সামনে দাড়ালো,
– স্যার ক্লাস করে এসেছি।
রিকের দিকে কঠিন নজর টিকিয়ে দ্বিতীয় পলকে নিজের ঘড়ি দেখলো মিহরান,
-পিরিয়ড তো এখনো শেষ হয়নি। এখনো ১০ মিনিট বাকি।
এইবার রিকেরও মুখ বন্ধ হয়ে গেল। কি বলবে ও? এই অধ্যাপক নতুন, হয়তোবা রিক কে চেনে না, নয়তো বাকি কোনো শিক্ষকই ওর কাছে প্রশ্ন করে না এভাবে।
মিহরান রিকের দিক থেকে নিজের চোখ না সরিয়েই সবাইকে আদেশের সুরে বললো,
– আপনাদের কারও এখানে থাকার কোনো প্রয়োজন আমি দেখতে পারছি না। আমার জানা মতে প্রোগ্রামের কোনো কাজেও আপনার ইনভল্ভড না। ভার্সিটিতে নিশ্চয়ই ক্লাস বাঙ্ক করে আড্ডা দিতে তে আসা হয় না, রাইট? এখনো কিছু সময় বাকি আছে, এক্ষণ নিজেদের ক্লাসে চলে যান। ফাস্ট্।
অতিরিক্ত শীতল সুরের এই আদেশ এক প্রকার হুমকির মতন কানে গিয়ে ঠেকলো ওদের। সাথেসাথেই ছোট জটলাটা ভাঙ্গতে শুরু করে দিল। জোহেব আর রাসেল তো পারলে আরও আগে দৌড়ে পালাতো। এখন সুযোগ পেয়ে কোনো পাশে না তাকিয়ে সোজা হাটা দিল দরজার দিকে। সিনিয়র ভাইদের মুখে আগেই শুনেছে মিহরানের রগচটা স্বভাবের কথা, এখন তা স্বচক্ষে দেখতে পেয়ে ওদের ষষ্ঠইন্দ্রেয় জানান দিয়ে দিয়েছে যে মিহরান স্যার বাকিদের মতন না। তার সাথে কোন প্রকার ঝামেলায় না জড়নোই অতি শ্রেয়। যত এনার থেকে দূরে থাকবে তত বেশিদিন এই ভার্সিটিতে আয়ু বাঁচবে ওদের।
সবাই যাওয়ার পরে রিক হাটা ধরেছিল। ভীতর ভীতর ফুসছিল। জোহেবদের মতন ও নিজেও মিহরান ও তার বলিষ্ঠ ব্যক্তিতের গল্প শুনেছে। শুনেছে মিহরানের ছাত্র জীবনের গল্প, যখন সে এই ভার্সিটিতে পড়াকালিন সময় স্টুডেন্টস সোসাইটির প্রসিডেন্ট ছিল। কি দাপট ও সন্মানের সাথে সে এখানে রাজত্ব করেছে তা এখনো এখানকার স্টাফদের কাছে স্বরনীয়। সেই থেকেই এই স্যারটাকে ওর একেবারেই অসহ্য লাগে। মস্তিষ্কের কোনো এক নিউরনে হিংসেরা আলোড়ণ সৃষ্টি করে বসে আছে, তাই হয়তো এই ক্ষোভ। দাপট তো ওরও আছে, কিন্তু জুনিয়র থেকে সন্মান পায় না কেন সেটাই বোঝে না। এই ব্যাটা এমন কি করতো যা রিক করে না?
তবে নিজেকেই নিজে বুঝ দিল, এই মানুষটাকে বেশিদিন বাড়তে দেওয়া ঠিক হবে না। বনে একটা বাঘ থাকা উচিত। দুটো থাকলে গ্যাঞ্জাম লাগে। আর এই বনের বাঘ হলো একমত রিক। মিহরান হয়তো আগে ছিল, কিন্তু এখন সে শুধুই একজন টিচার। ব্যাস!
মাত্র তো সে এলো! আরো কিছুদিন যাক, উনি নিজেই বুঝে যাবেন এই রাকিব শাহজাহান ওরফে রিক্ কে। আর নিজে না বুঝলে রিক তো আছেই বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য, তাই না?
মনের ভাষা মস্তিষ্কে গড়াতেই রিকের চেহারায় ছেয়ে গেল অহমিকার এক ঘৃণ্য হাসি যা মিহরানের চোখ এড়ানো সম্ভব হলো না,
-স্টপ!
সবেই ঘুরে দাড়িয়েছিল রিক। তবে মিহরানের পুরু কন্ঠস্বর ওকে আবার থেমে যেতে বাধ্য করলো। ভ্রুজোড়া কুচকে পেছন ঘুরতেই দেখলো মিহরান ওর খুব কাছে চলে এসেছে। ওনার চেহারার কাঠিনত্ব ও শীতলতা রিক্ কে ভয় না দিলেও বেশ চমকে দিতে সক্ষম হলো। নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রিকের ওপর টিকিয়ে হীম চিবানো স্বরে মিহরান নিজের মুখ খুললো,
– এটা ভার্সিটি, কোনো মাস্তানি করার বা মেয়েদের উত্যাক্ত করার জায়গা না। আর আপনি নিজেও এখানকার একজন স্টুডেন্ট…. কোনো মাস্তান না। আশা করি আমার কথা বুঝতে আপনার সমস্যা হচ্ছে না। আর যদি এখনো না বুঝতে পারেন তবে…আপনার পন্থায় বোঝানোরও উপায় আমি জানি। আমার সেটা এপ্লাই করতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু নিশ্চয়ই সেই পথে আপনি যেতে চাইবেন না, তাই না?
প্রবল শান্ত স্বর, তবে তা ছুড়ির মতন ধারালো ঠেকলো রিকের কানে। চকিতে ভ্রুজোড়া সোজা হয়ে গেল। শুষ্ক ঠোট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হলো। মুহূর্তেই মস্তিষ্কে আঘাত করলো, এতো খোলা হুমকি দেওয়া হলো ওকে? মাস্তানি না করার ধমকি মাস্তানি ভাব নিয়ে?
রিকের চমকৃত মুখশ্রি দেখে এতোক্ষণ ফুলে থাকা মিহরানের কপালের রগগুলো নিভে এলো। মনে হয় এই অভিব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করে শান্তি লাগলো ওর। এবার নিজে ঘুরে বের হয়ে যাওয়ার সময় আবার ঘড়ি দেখলো,
– ক্লাস আর মাত্র পাঁচ মিনিট আছে তবে এখন গেলেও অন্তত এটেন্ডেন্স ধরতে পারবেন।
আর থামলো না মিহরান, বড় বড় পা ফেলে রিক্ কে বাকরুদ্ধ রেখে বের হয়ে গেল।
এতোক্ষণ যেন এক ঘোরের মাঝে ছিল রিক্ বলে মুখে কোনো কথা আসেনি। মিহরান যাওয়াতে সেই মোহের সুতাও মনে হয়ে নিজের সাথে টেনে নিয়ে গেল। এই কারণেই যেন এখন মুখ খুললো রিকের। তার সাথে ঘাড়ে হুড়মুড়িয়ে চেপে বসলো আকাশ সম রাগ। মিহরানের যাওয়ার, এখন খালি পথটার দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে বললো রিক,
– রিককে মাস্তানি শিখানো হচ্ছে? আজ সব কিছুই হুটহাট ছিল বলে কোনো কিছু বলতে পারিনি আপনাকে স্যার। তবে এটা ভেবে নিয়েন না যে এইরকম চুপ আমি সবসময় থাকবো। আর আপনিতো আজ থেকে আমার কাছে খুব স্পেশাল হয়ে গেলেন ঠিক ঐ শৈলীর মতন। আপনাদের দুইজনকে স্পেশাল ট্রিটমেন্ট তো দিতেই হবে। অপেক্ষা এখন শুধু ঠিক সময়ের।
………………………..
নিজের নির্ধারিত কেবিনে ঢুকে এতোক্ষণের চাঁপা রাগটা ফস্ করে বেরিয়ে আসলো মিহরানের। দরজা বন্ধ করলো বেশ আওয়াজে। ডেস্কের ওপরে ঝুকে হাত মুঠি করে স্বজোরে একটা বাড়ি দিল। গাল আর চিবুক লাল হয়ে উঠেছে ওর। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমছে। মিহরান বেশ রগচটা স্বভাবের ঠিকই তবে রাগ ওর যখন তখন উঠে না। গম্ভীর মিহরানকে বন্ধু মহল খুব ঠান্ডা মাথার অধিকারী হিসাবেই চিনে। ভয়ংকর কোনো পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে মিহরানের জুড়ি মেলা ভার। তাই তো অনার্স মাস্টার্স দুটো সময়েই স্টুডেন্ট বডির প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের দায়িত্ব বেশ সফল ভাবে পালন করতে পেরেছে। তবে ও নিজের রাগের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না কেবল একটা সময়ে। যখন ওর চোখের সামনে ঘটে কোনো অসামাজিক কর্মকান্ড। আগ্নেয়গিরির ন্যায় ফেটে ওঠা মস্তিষ্ক তখন ওর চুপচাপ, ঠান্ডা স্বত্বাকে গ্রাশ করে নেয়। যেমনটি আজ হতে যাচ্ছিলো কিছুক্ষণ আগে, অডিটোরিয়ামে। কোনো মেয়েকে নিয়ে এতো অশ্লীল কথাবার্তা সহ্য করা মিহরানের ধাঁচে নেই একেবারেই। তাও আবার কোন মেয়েকে নিয়ে কথা উঠেছে? শৈলী। যাকে একটু আগেও মিহরান নিজের মনোজগতে ধারন করে নানা ভাবনার জাল বুনছিল।সেই শৈলীকে নিয়ে।
শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে যেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা তখন কতটা মুশকিল হয়ে পরেছিল তা শুধু জানে এক ওপরওয়ালা আর মিহরান। ভার্সিটির বাইরে হলে রিকের এতোক্ষণে বসবাস হতো হাসপাতালে।
নিজেকে ঠান্ডা হতে মিহরান সময় দিল। ডেস্কের ওপাশের সুইভলিং চেয়ারটায় বসে শার্টের বুকের প্রথম বোতাম টা খুলে একটু সহজ ভাবে হেলান দিয়ে বসলো। সাথে চিন্তায়ও নিমজ্জিত হলো, ঠান্ডা মাথায় ভাবতে লাগলো সব। রিক আর ওর বন্ধুদের আলাপের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শৈলী, এটা স্পষ্ট। ব্যাকস্টেজে রিক কে তো শৈলীর সাথে কথাও বলতে দেখেছিল মিহরান। তখনও শৈলীর অস্বস্তি ওর চোখ এড়ায়নি। তার মানে শৈলীর সাথেই ঝামেলা করতে চাচ্ছে এই বখাটের দল। ভাবনা টা মাথায় আঘাত করতেই আবার কেমন যেন বিচলিত হয়ে উঠলো মিহরানের মন। মেয়েটার জন্য ভীষণ টেনশন হলো।
শৈলী বিপদে আছে বোঝাই যাচ্ছে। আর মিহরান এসব বুঝতে পেরেও কখনোই হাত গুটিয়ে বসে থাকার ছেলে না। সাথে সাথে টেবিলে রাখা মোবাইলটা নিয়ে কল দিল ও মাহিরাকে।
মাহিরার ক্লাস মাত্রই শেষ হয়েছে। ও অডিটোরিয়ামের দিকে যাচ্ছিল শৈলীর কাজ দেখতে, তখনই ভাইয়ের কলে ওর ফোন কেঁপে ওঠে। কলটা পিক করতেই মিহরানের পুরু কন্ঠস্বর শুনে ওর পা থমকে যায়।
– মাহি, ক্লাসে?
– না ভাইয়া। মাত্র বের হলাম ক্লাস থেকে।
– এখন কি আরেকটা পিরিয়ড আছে?
– না, লাঞ্চের পরে আরেকটা।
-ওহ্। তাহলে টিচার্স ব্লকে আমার কেবিনে আয়।
দেখা করার কথা শুনেই আঁতকে উঠলো মাহিরা। ভাইয়ের আওয়াজও সুবিধার ঠেকছে না। গতকাল যে একটা ছেলেকে রামধমক দিয়েছিল, সেই বজ্জাত টা আবার কোনো কম্প্লেইন করেনি তো? যদি ওই ছে*মরার জন্য মাহিরা আজ ওর ভাইয়ের হাতে বকা খেয়েছে তো ওর একদিন কি মাহিরার যত দিন লাগে।
-হ্যালো মাহি, শুনছিস?
বাস্তবে ফিরে আসলো মাহিরা,
-হ্যা ভাইয়া শুনছি, আই মিন আসছি।
চলবে…….