#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১০
যথা সময়ে অনুষ্ঠানে অতিথিদের আগমন শুরু হলো। প্রোগ্রামটা যেহেতু কেবল ওদের ডিপার্টমেন্টের তাই লোক সংখ্যা অনেক বেশীতে ঠেকলো না। দুই হাজার সিট বিশিষ্ট দোতলা অডিটোরিয়মের শুধু নিচের মাঝ ভাগ টাই ভর্তি হলো, ফ্যাকাল্টি ও শিক্ষকদের দিয়ে। মিহরান ওর কথা মত বাকি শিক্ষকদের সাথেই হলে ঢুকলো। তবে যেয়েই নিজ আসনে বসলো না। রাকিব স্যারের সাথে ব্যাকস্টেজ পৌছালো শেষ মুহূর্তের তদারকি করতে।
ব্যাক স্টেজে তখন চলছে শেষ প্রস্তুতির ঝড়। নাচের ছেলেমেয়েদের পায়ের ঝুমুরের আওয়াজ, গানের টিমের শেষ রেয়াজ, নাটকের কলা কুশলীর নিজ নিজ ডায়লোগ আওড়ানোর হিড়িক। সব মিলিয়ে একদম গমগমে পরিবেশ। এদের মাঝে মিহরান খুজলো এক কাঙ্খিত মুখ, কিন্তু পেল না। চোখ এদিক সেদিক ফেরালো। অবাক হলো ও। মেয়েটা এই অন্তিম সময়ে কই গেল?
ঠিক সেই সময়ে এক কোণায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো মিহরানের। কোলাহল থেকে বেশ দূরে কানে হেডফোন জুড়ে একমনে স্কিপ্টের লেখা মুখে আউড়াচ্ছে এক রমণী। আধো আলো, আধো অন্ধকারে কেমন মায়াবী লাগছে ওর অবয়ব। একটি সিড়ির ওপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকায় শাড়ির কুচিগুলো সামনের পায়ের ওপর ভাজে পরা। দীর্ঘ কালো কেশ লুটিয়ে পরা সমগ্র মাথা জুড়ে, তা থেকেই কিছু গুচ্ছ সামনে এসে বিরক্ত করছে। রমণী আবার সেই কেশগুচ্ছটুকু স্বভাবসুলভ ভাবে হাতের উল্টো পিঠের সাহায্যে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। মিহরান মিহি হাসে তবে সবার অগোচরে। একবার পলক ফিরিয়ে রাকিবকে খোজে। দেখে সে আবৃত্তির যুগলকে ব্যস্ত কি যেন বোঝাতে।
আবার ফিরে চাইলো মিহরান সেই রমণীর পানে। হাটা দিল সেই পথে।
শৈলী নয়েস ক্যান্সেলিং হেডফোন কানে গুজে এক ধ্যানে স্ক্রিপ্টে চোখ বুলাচ্ছে। যে কোনো প্রোগ্রামে সবচাইতে বড় দায়িত্ব থাকে সঞ্চালকের। অনুষ্ঠান শুরুই করে সে, প্রথম ইম্প্রেশন বানায় সে, আবার প্রতিটা পরিবেশনার সময় নির্ধারণও তাকেই করতে হয়। অনেক কাজ!
শৈলী এতো জিনিস চিন্তা করতে করতে এক প্রকার নুইয়ে গিয়েছে। তাই সামনে দন্ডিয়মান ছয় ফুট উচ্চতার মানবকে প্রথমে চোখে পরেনি। তবে হঠাৎ আগের হাল্কা আলোটাও কারো ছায়ায় তলিয়ে যাওয়াতে ভ্রু কুচকে চোখ তুলে তাকালো। মিহরানকে দেখতে পেয়ে ভ্রুয়ের ভাজ মিলিয়ে গেল। মিহরান স্যার!
হড়বড়িয়ে উঠে দাড়াতে গেল শৈলী, ভুলেই গেল ওর পরনে যে শাড়ি। উঠতে গিয়ে পা বেজে গেল কুচিতে, ওমনেই হেলে পরলো এক পাশে। পরেই যেত যদি না তখনি দুটি বলিষ্ট হাত ওর বাহু চেপে ধরতো। আচমকা এই নিরেট শক্ত স্পর্শে চমকে তাকায় শৈলী। কেঁপে উঠে সহসা। তখনই দু জোড়া চোখের মিলন হয়,
– আর ইউ অলরাইট?
মিহরানের চিন্তা মাখা প্রশ্নে শৈলী নিশ্চুপ। জ্বীভ অসাড় হয়ে গিয়েছে। কি বলবে জানে না।
মিহরান শৈলীকে সোজা দাড়াতে সাহায্য করলো।
-আপনি ঠিক আছেন?
দ্বিতীয়বার একই প্রশ্নে শৈলী আর চুপ থাকতে পারলো না,
-জ..জ্বী স্যার আমি ঠিক আছি।
নিজের দুটো হাত ততক্ষণে মিহরান সরিয়ে ফেলেছে। ব্যালেন্স ঠিক হতেই মাথা নিচু করে নিজেকে শৈলী মনে মনে দুটো গালি দিল। মিহরানের সামনে এই নিয়ে কতবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরলো তার হিসাব রাখাই ছেড়ে দিয়েছে ও। মানে শৈলীর সমস্যা টা কি, নিজেই বুঝে উঠে পারছে না। নয়তো বারবার এই স্যারের সামনেই কেন ঝামেলায় পরতে হয়?
মিহরান একপাশ হালকা হেলে বুঝতে চাইলো মেয়েটার কি হয়েছে। ভীষণ অদ্ভুত ব্যবহার করছে আজ ও। লিফ্টেও। আবার এখনো। উপস্থাপনার টেনশনে আছে নাকি? তাই হবে হয়তো। মিহরান সরাসরি উপস্থাপনা নিয়েই প্রশ্ন করলো,
– আপনার স্ক্রিপ্ট ঠিক আছে?
শৈলী আবার চাইলো নিখাদ মুখ পানে
-জ্বী স্যার।
-প্র্যাক্টিস করেছেন?
-জ্বী।
– কোথাও কোনো কনফিউশন্ আছে?
– না স্যার।
শুপ্ত একটা দীর্ঘস্বাস ফেললো মিহরান। দুই হাত পকেটে গুজে টান টান হয়ে দাড়ালো।
-ওকে দেন। বেস্ট অফ লাক্।
বলেই আর দাড়ালো না। উল্টো পায়ে হাটা ধরলো ব্যাক স্টেজে দরজার দিকে। শৈলী একমনে চেয়ে রইলো সেই পিঠের দিকে। ঠোটে মুচকি হাসি উঠলো, এইটুকু উপস্পনার জন্য ‘বেস্ট অফ লাক্’ পেল? তাও আবার এই গুরুগম্ভীমর স্যারের কাছ থেকে? ইন্টারেস্টিং!
……………..
অনুষ্ঠান যথা সময়ে শুরু হলো। প্রথমেই একটি কবিতা আবৃত্তি দিয়ে পরিবেশনা শুরু। এরপরে স্টেজে প্রবেশ করলো শৈলী। ওকে স্টেজে দেখে মিহরান নিজের মাঝেই কেমন যেন নার্ভাস হয়ে গেল। নিজের সিটে নড়েচড়ে বসলো একটু। চিন্তিত মুখ স্টেজের দিকে চেয়ে। কেন যেন মনে এক ধরনের উৎকণ্ঠা কাজ করছিল ওর। মনে হচ্ছিলো মেয়েটা বোধহয় ভয় পাবে, উপস্থাপনায় আটকাবে, বিব্রত হবে। ব্যাক স্টেজেই যেই রকম নার্ভাস ছিল, এটা তো সোজাসুজি যুদ্ধের ময়দান।
তবে হাস্যজ্জ্বল মুখে আর আত্মদিপ্তময় আচরণে মিহরানকে রীতিমতো অবাক করে দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা খুব নিপুণ ভাবেই সারলো শৈলী। কোথাও আটকানো তো দূরে থাক, একটা শব্দেরও কোনো লয় কাটেনি। মিহরান একপ্রকার মন্ত্রমুগ্ধের মতন শুনেছে আর দেখেছে ওকে। বলা যায়, অন্য পরিবেশনা গুলোর থেকে শৈলীর উপস্থাপনাতেই বেশী মনোযোগ ছিল ওর। এক পর্যায়ে শৈলী অনুষ্ঠানের অন্তিম বার্তা শোনায়। সেটা শেষ হতেই হল জুড়ে বেজে উঠে করতালি, জ্বলে উঠে আলো। সেই আলোকবন্যার মাঝেই হঠাৎ ওর চোখ পরে প্রথম সারির এক কোণায় বসা মিহরানের ওপর। সেও তাকিয়ে আছে এদিকেই। চোখাচোখি হতেই মিহরানের ঠোট ছুয়ে যাওয়া হাসিটা নজরে পরে শৈলীর। তুষ্ট হওয়ার এই হাসিটা শৈলীকে ভীষণ লজ্জায় ফেললো। এতোক্ষণ যেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে পুরো অনুষ্ঠান মাতালো, এখন সেটাই মনে হচ্ছে, টায় টায় ফিশ হয়ে গিয়েছে। সেখানে ভর করছে নার্ভাসনেস। কি আজব ব্যাপার তাই না? সবাই প্রথমে নার্ভাস হয়, শৈলী হলো শেষে। আর এখানে থাকা যাবে না বুঝতে পেরে, চা চক্রের জন্য সবাইকে নিমন্ত্রন জানিয়ে তাড়াতাড়ি স্টেজ ছাড়লো ও।
শৈলীর উপস্থাপনায় মুগ্ধ যে শুধু মিহরান হয়েছিল তা নয়। ছাত্রছাত্রীদের সারিতে বসা আরেকজনও পুরো অনুষ্ঠানেই শুধু শৈলীকে পর্যবেক্ষণ করেছে। রিক্ এক মনে দেখে গেছে শৈলীকে তবুও মনে হচ্ছে ওর তৃষ্ণা মেটেনি। মেয়েটা শাড়িতে আজ মারাত্মক রুপবতি লাগছে। রিকের মনের অশান্ত ইচ্ছেগুলো তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে সব দিকে। নিজেকে অনেক কষ্টে ধাতস্থ করতে হলো ওকে। এই হলে কিছু উল্টাপাল্টা করা যাবে না। চেয়ারম্যান ও ডিনের সাথে ওর বাবাও যে এখানে উপস্থিত। যা হবে প্রোগ্রাম শেষে।
………………….
হলরুমের এক ভাগে চা চক্রের আয়োজন করা। বুফে এরেঞ্জমেন্টে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। যার যেটা পছন্দ, নিয়ে খাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা বেশীর ভাগই বের হয়ে গিয়েছে। ফ্যাকাল্টিদের সামনে দাড়িয়ে ভীতমন্থর গতীতে খাবার খাওয়ার থেকে ক্যান্টিনে বসে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে কিছু খাওয়া ঢের ভালো। শুধু অনুষ্ঠানের কলাকুশলিরা ডিন স্যারের নির্দেশে চা চক্রের আয়োজনে যোগ দিয়েছে। সেই সুবাদে শৈলীও রয়ে গেল। দুজন বান্ধবীর সাথে এক পাশে দাড়িয়ে কেক মুখে দিতেই যাবে ঠিক তখনই অপর পাশ থেকে নিজের নাম শুনতে পেল ও,
-এই শৈলী।
চোখ তুলে তাকাতেই শৈলী দেখতে পেল রাকিব স্যারকে। একটু দূরেই দাড়ানো তিনি। হেসে, হাত উচিয়ে ওকে ডাকছেন। পাশেই তার দাড়ানো মিহরান স্যার। গভীর এক জোড়া দৃষ্টি নিয়ে শৈলীর পানে চেয়ে। মুখাবয়ব নিরুৎসাহিত, স্থির। শৈলী বান্ধবীদের ‘ আসছি’ বলে চপল পায়ে এগিয়ে আসলো,
-জ্বী স্যার।
রাকিব নিজের উচ্ছাস লুকাতে পারলেন না,
– তুমি তো বাজিমাত করে দিয়েছো। সেই তুখোড় উপস্থাপনা করেছ। কি বলেন মিহরান ভাই? শৈলী খুব প্রাণবন্ত ভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেছে না?
মিহরানের এক হাত পকেটে আরেক হাতে জুসের গ্লাস। চোখ এখনো শৈলীতে আটকানো। এক চুমুক গ্লাসে দিয়ে শুধু বলল,
– হমম।
ব্যাস! আর কিছুই না। মিহরান চুপ হয়ে গেল আবার। শৈলী একটু অবাক হলো। বলা যায় মনটাও একটু খারাপ করলো। ও তো ভেবেছিল স্যার ভিষণ খুশি হয়েছে। অন্তত তার মুখের হাসি দেখে তো তখন শৈলীর তাই মনে হয়েছিল। কিন্তু এখন…তাহলে কি ও বুঝতে ভুল করলো?
শৈলী এতোকিছু মনে মনে ভাবলেও মুখ ফুটে বলার মতন তো উপায় ওর নেই। তাই মাথা নিচু করে চুপ করে রইলো। মুখের প্রানবন্ত হাসিটা ম্লান হয়ে গেল নিমিষেই। কি ভাবলো আর কি হলো!
তবে মাথা নিচু থাকায় এবার মিহরানের ঠোটের চোরা হাসি ওর চোখে ধরা দিল না।
………………..
পুরো অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেল আধ ঘন্টা পরে। আস্তে আস্তে সবাই হল থেক প্রস্থান নিল। শৈলী বের হয়ে সোজা ফোন দিল মাহিরা কে। তবে মাহিরা ফোন ধরলো না। ম্যাসেজে জানিয়ে দিল, ক্লাসে আছে। শৈলী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেও মেসেজের উত্তরে জানিয়ে দিল যে আজ যেহেতু অনুষ্ঠানের কারণে ওদের সব ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে তাই ওর ক্যাম্পাসে আর কাজ নেই। তাই ও আগেই বাসায় চলে যাচ্ছে।
মাঠ পার করে গেট অবধি যেতেই শৈলীর চোখে বিধলো এক অপ্রিতিকর মুখ। এমনিতেই প্রখর রোদ, তার ওপর রিকের চেহারা দেখে ভয়ংকর রকম বিরক্ত হলো ও। যথাসম্ভব ওকে উপেক্ষা করে পাশ ফিরে চলে যেতে নিলেই বড় কদমে রিক এসে ওর সামনে দাড়ালো।
-আজ এত সুন্দর করে সেজে এসে আমার সাথে না দেখা করেই চলে যাচ্ছো, এটা কি ঠিক হলো রুপবতী?
বিকৃত অষ্টে ‘চ’ শব্দ বের হলো শৈলীর। মুখ তুলে তাকানোরো রুচিবোধ হলো না, উত্তর দেওয়া তো অনেক দূর। রাস্তায় সিন ক্রিয়েট করতে চায় না বলে আবার সামনে পা বাড়ালো। তবে দ্বিতীয় কদম ওঠানোর আগেই শাড়ির আঁচলে তীব্র টান অনুভব করলো ও। চকিতে ঘুরে তাকালো।
– আপনি কোন সাহসে আমার আঁচল ধরেছেন? গেট ইউর হ্যান্ডস্ অফ।
শৈলীর চিৎকার আশ পাশে সহসাই ছড়িয়ে পরলো। ছেলেমেয়েরা যারা খুব কাছে ছিল তারা অবাক নয়নে দাড়িয়ে পরলো। খোদ রিকও ভড়কে গেল এই আচরণে। মেয়েটার তেজ দিন দিন বাড়ছে দেখে সে স্তম্ভিত। বুঝে গেল আর ছাড়া যাবেনা একে নয়তো বন্ধু মহলে ওর পুরুষত্বের ও দাপটের ওপর প্রশ্ন উঠবে। ভেবেই রিক্ কটমটিয়ে তাকালো,
– এই মেয়ে তোমার সাহ…
– কি হচ্ছে এখানে?
রিকের দাপটিও চিৎকার পেছন থেকে কারও হুঙ্কারে ধপ করে মাঝ পথে থেমে গেল। ছোট যেই জটলা টা বেধেছিল সেটা ভেদ করে দেখা গেল একটা রক্তিম জলন্ত মুখশ্রি।
মিহরান ওখানে দাড়িয়েই আবার হুঙ্কার ছাড়লো,
– এখানে কি কোনো মেলা বসেছে? সার্কাস চলছে? তা না হলে এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন আপনারা? এখনই এই জায়গা খালি চাই আমি। ফাস্ট!
মিহরানের বলতে দেরী, পুরো জায়গা ফাঁকা হতে দেরী হলো না। রিক আর শৈলী বাদে সব দৌড়ে পালালো। রিক এখনো শৈলীর আঁচল ধরে, কিন্তু মনোযোগ সম্পূর্ণই মিহরানের দিকে। কটমটিয়ে তাকিয়ে আছে ও। মিহরান এবার সামনে আগায়। রিক আর শৈলীর ঠিক মাঝ বরাবর দাড়ায়। রিকের চোখে নিজের রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অত্যন্ত শীতল হাতে শৈলীর শাড়ির আঁচল ছাড়িয়ে নেয়। সাথে সাথে নিজেকে গুটিয়ে নেয় শৈলী। বিব্রত বোধ ও মিহরানের আকস্মাত উপস্থিতির প্রতি কৃতজ্ঞতায় মাথা নুইয়ে গেল।
মিহরান শৈলীর দিকে একবারও তাকালো না, ওর শুষ্ক নজর রিকের দিকেই। তবে নিজেকে এগিয়ে রিক আর শৈলীর ঠিক মাঝ বরাবর দাড়া করালো, আগলে দাড়ালো শৈলীর সামনে, মুখোমুখি হলো রিকের। দাঁত চিবিয়ে হিসহিসিয়ে বললো
– আপনার মনে হয় শর্ট টার্ম মেমোরি লস্ আছে। নয়তো চব্বিশ ঘন্টার মাঝে আমার কথাগুলো ভুলে যাওয়ার কথা না।
একটু থামলো মিহরান, তবে রক্তচক্ষুর পলক ফেললো না।
– একজন নারীর সন্মান যে না দিতে পারে তাকে দিয়ে সন্মান কিভাবে দেওয়াতে হয়, তা আমার ভালো ভাবেই জানা আছে। কিন্তু গতকালই বলেছি যে সেই পথ আমি অবলম্বন করতে চাই না। তাই আমাকে বাধ্য করবেন না। এখন ভদ্রভাবে মিস শৈলীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন।
তব্দা খেয়ে যাওয়া রিকের সামনে থেকে একটু সরলো মিহরান। প্রকট হলো শৈলীর শীর নোয়ানো অবয়ব। রিকের চোখ ভয়ানক আকার ধারণ করেছে তবে মুখ খুলছে না, না ভেদ হচ্ছে অষ্ট। কাউকে সরি বলা যে কখনো শেখেইনি তার জন্য এই অভিব্যক্তিই স্বাভাবিক।
মিহরান এক পল চুপ থাকলো, সময় দিল। কিন্তু আশাতিত ফলাফল না পেয়ে আবার গর্জে উঠলো,
– কি ব্যাপার রিক? কিসের জন্য ওয়েট করছেন? সরি বলুন দ্রুত।
আশপাশে একটু দূর দূর দিয়ে আবার ছোট খাটো জটলা সৃষ্টি হচ্ছে। নিজেদের মতন করে থাকার ভান করলেও সবারই কান ও চোখ জোড়া যে এদিকেই নিবদ্ধ সেটা আলোর মতন স্পষ্ট। এতো মানুষের মাঝে একটা তুচ্ছ মেয়ে মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া নিজেকে অসন্মানের চুড়ান্তে পৌছে দেওয়ার ন্যয় রিকের কাছে। কিন্তু সামনে যেই দৈত্য দাড়ানো, এখন ক্ষমা না চাইলে সবার সামনে রিকের সম্মান বেঁচতে এক ক্ষণও লাগবে না তার। দুই দিক ঝটপট বিবেচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌছালো রিক্। সময় নিল না আর।
-সরি শৈলী।
ব্যাস! ঠোট দুটো নরলো কেবল আর চাঁপা, খুব চাঁপা হিসহিসানো আওয়াজে দুটো শব্দ।
শৈলী এতোটাই অবাক হলো যে নিজেকে সামলে রেখে দাড়িয়ে থাকা দায় হয়ে পরলো ওর জন্য। রিকের মুখে এই শব্দ ওর ইহকালে আশায় ছিল না। তবে অভদ্র মানুষটা যে মন থেকে সরি বলে নি সেটা তো ওর ভালোই জানা। তাই পরক্ষণেই নিজেকে স্থির করে পাত্তা দিল না বেশি একটা বিষয় টাকে।
মিহরান এইটুকু সময় নিরব দর্শক ছিল। রিকের কথা শেষ হতেই খেই ধরলো সে,
– দ্বিতীয় বার যেন আমার চোখে এই অভদ্রতা গুলো না পরে মি: রিক। নয়তো আমি আর ওয়ার্নিং এ যাব না।
আর দাড়ায় না মিহরান। শৈলীও দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করে। রিকের সামনে থাকার বিন্দু মাত্র রুচিও ওর মনে কুলায় না। তবে দুইজনই পেছনে ছেড়ে আসা হিংস্র মানবটার রুপ দেখতে পেল না। ভেতরে আগ্নেয়গিরির ন্যায় ফেটে পরা রিক্ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো,
– আগে শুধু এই ফালতু মেয়েকে সবক শেখানোর ইচ্ছা ছিল। তবে এখন ওর থেকেও বেশী জরুরি এই হা**মী মিহরান কে সবক শেখানো। বাই***দের বেশী পাঙ্খা গজাইসে। রিকের সাথে পাঙ্গা নেওয়ার ফল ওকে আমি বোঝাবো হারে হারে। ওর সম্মান যদি সবার সামনে না বিক্রি করসি তো আমার নাম রিক না।
চলবে।