#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১৫
রাতের প্রোগ্রামের জন্য মালিহাও তুরিনকে রেখে দিল। মনে মনে শতভাগ ইচ্ছা থাকলেও প্রথমে তুরিন মানা করেছিল মালিহাকে, বাসায় যেতে দেরী হয়ে যাবার বাহানা করেছিল। আসলে এক বার বলাতেই রাজি হয়ে যাওয়া কেমন দেখায় না?
কিন্তু মালিহা যখন বললো যে আজ রাতেই ওর গিফ্ট টা ওর সামনেই মিহরানকে দেওয়া হবে, তখন সেই মুহূর্তটা কোনোভাবেই মিস করতে চাইলো না তুরিন। ও নিজের হাতে না দিতে পারুক, অন্তত মানুষটার গিফ্ট টা পাওয়ার পর রিয়্যাকশন তো দেখতে পাবে? সেটাই বা কম কিসে?
………………….
শৈলী মাহিরাদের বাসা থেকে কিছুক্ষণ পরই নিজের বাসায় চলে এসেছে। আফিয়া আগেই মিসেস রেহানাকে ফোন দিয়ে শৈলী আর নিপুণকে দাওয়াত দেওয়ার কথাটা জানিয়ে দিয়েছেন, তাই শৈলীর আর আলাদা করে কিছু বলতে লাগেনি। ও এসেই প্রথমে শান্তি মতন শাওয়ার নিয়েছে। তারপর বসেছে আলমারি খুলে। অনেক গুলো ড্রেস একটা পর একটা গায়ের সামনে লাগিয়ে আয়নায় দেখছে কিন্তু পছন্দসই কিছুই মিলছে না। শেষে একবার হেসেই ফেললো ও। অজানা কারণেই আজ শৈলীর সাজতে ইচ্ছে করছে। মনটা ফুরফুরে হয়ে আছে হয়তো তাই। কন্ঠেও গুন গুন করছে অনবরতো, কোন গানটা শোনাবে সেটারও হৃদয় গহ্বরে খোজ চলছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আজ সন্ধ্যাটা সুন্দর হবে।
………………………..
মাহিরা আর মেহরাবের আজ একটুও দম ফেলার সময় নেই। বাড়ির সবচাইতে ছোট সদস্য বলেই আজকের প্রোগ্রামের দায়িত্ব পরেছে এই দুইজনের ঘাড়ে। কিছুক্ষণ আগেই বাজার থেকে আসলো ওরা। মিহরান ওদেরকে বেশ বড় একটা এমাউন্ট বিকাশ করে দিয়েছিল বলে জিনিস কিনতে কোনো চিন্তা করতে হয় নি। বিফ স্টেক, চিকেন ড্রামস, বিফ আর চিকেন সসেজেস থেকে নিয়ে গ্রিলের কোন আইটেম টা নেই ওদের ফর্দে, তার সাথে আবার সিক্রেট রেসিপি থেকে বড় দেখে একটা র্যস্পবেরি চিজ কেইক আর সফ্ট ড্রিংকস ও এনেছে।
মায়ের হাতে সবকিছু সপে দিয়ে দুজনই গেল ফ্রেশ হতে। এর মাঝে শুনে গিয়েছে যে মিহরানও বাসায় চলে এসেছে আর ওদের তাড়াতাড়ি ওপরে চলে আসতে বলেছে সব সেটাপ করার জন্য। তাই সময় বিলম্ব করার প্রশ্নই আসে না।
………………………..
তুরিনের মন এই মুহূর্তে খারাপ। ভীষণ রকম খারাপ। সে থম মেরে চুপচাপ খাটে বসে নিজের মোবাইলের দিকে তাকানো। ঠিক সেই সময়ই মালিহা রুমে আসে দুজনের জন্য পানি নিয়ে। বান্ধবীর এরকম শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখে মালিহা ব্যস্ত হয়ে খাটে বসলো,
– এই দোস্ত, কি হইসে?
তুরিন মুখ লটকে তাকায়,
– আজ যদি আমি যানতাম যে তোর ভাই এমন এক প্রোগ্রাম দিয়ে বসবে তাহলে বাসা থেকে ঠিক ভাবে প্রিপারেশন নিয়ে আসতাম। ভালো ড্রেস পরে সেজেগুজে আসতাম। সেখানে এখন ভার্সিটিতে পরা ড্রেস নিয়ে আমি পার্টি এ্যাটেন্ড করবো। এটা কিছু হইলো?
মালিহা বান্ধবীর এহেন কথা শুনে হেসেই ফেললো,
– তুই এই দুঃখে দুঃখিত? এটা কোন ব্যাপার দোস্ত?
বলেই মালিহা নিজের আলমারির কাছে যায়,
– এই নে, পুরো আলমারি খুলে দিলাম তোর জন্য। এখান থেকে যেই ড্রেসটা পড়তে ইচ্ছে করে সেটাই পর। আমার গুলো তোর হবে বোধহয়। আর মেকআপ কি আমার নেই নাকি? আগে ড্রেস সিলেক্ট কর্, তার সাথে মেকাপ, অর্নামেন্টেস সব দিব আমি।
তুরিন প্রবল বেগে মাথা নাড়ে,
– না না। তোর ড্রেস পরে তোর ভাইয়ের সামনেই যাব এটা কেমন দেখায়, নো ওয়ে।
– ইয়েস ওয়ে। আরে? আমার ড্রেসের হিসাব কি আমার ভাইয়ের কাছে আছে নাকি যে সে বুইঝে যাবে এটা তোর না আমার? এখন আয়, আর দেরী করিস না।
তুরিন ভেবে দেখলো বিষয়টা আসলেই তাই। মিহরানের সামনে সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করাটাই মুখ্য। কার, কি পরে ও সামনে যাচ্ছে সেটা জরুরি না। তাই আর দেরী না করে লাফ দিয়ে উঠে দাড়ালো ও। আলমারির সামনে যেয়ে প্রতিটা ড্রেস নেড়েচেড়ে দেখলো। মনমতো কোনোটা পছন্দ হচ্ছিলো না ওর এমন সময় হুট করেই চোখ গেল একটা কাপড়ের ওপর। হ্যাঙ্গার থেকে বের করে নামালো ও। মালিহা ওর কান্ড দেখে অবাক,
-তুই শাড়ি পরবি?
– হমম।
– শাড়ি কেন? কামিজ পর? আমরা সবাই তো কামিজ পরছি।
তুরিন লাজুক হাসে,
– আমার শাড়ি পরতে ইচ্ছা করছে রে। পরি?
মালিহা হেসে দেয়,
– আচ্ছা পর। এমনিতেও ভাইয়া শাড়ি পছন্দ করে। দেশে যখন ছিল, তখন আম্মুকে বলতো শাড়ি পরতে।
মুহূর্তেই চেহারায় ঝিলিক দিয়ে উঠলো তুরিনের। সাথে সাথেই ব্লাউজ পেটিকোট নিয়ে ওয়াশরুমে দৌড়ালো।
……………………
সন্ধ্যা প্রায় নেমে গিয়েছে। আকাশের লালচে আভা নিজের জৌলুস হারাতে বসেছে। ঠিক এরকম এক সময়ে মাহিরা পুলের ছাদে উঠলো। নিজেকে কালোর মাঝে সোনালী পাথরের কামিজে সাজিয়েছে ও। এসেই দেখে মিহরান বাড়ির কেয়ার টেকার, রহমান কে দিয়ে গ্রিল সেটাপ করাচ্ছে। সোজা ভাইয়ের কাছেই গেল মাহিরা,
– ভাইয়া, বলো কি হেল্প লাগবে।
মিহরান ফিরে বোনকে দেখে আবার সামনে চায়,
– এতো দেরী যে?
– কই দেরী করেছি ভাইয়া? বাজার থেকে এসে তো দম ফেলানোরই সময় পাই নি। তার মাঝেই ঝটপট রেডি হয়ে দৌড়ে এসেছি। সেখানে তোমার হতোচ্ছাড়া আরেকটা ভাই কই? ওউ তো আমার সাথে গিয়েছিল। ছেলে হয়ে এখনো রেডি হয়ে আসতে পারলো না? মেহরাবের বাচ্চা, তোরে আমি খাইসি।
মিহরান ভ্রু কুচকায়,
-মাহি…ল্যঙ্গুয়েজ!!
-ওহ্ সরি ভাইয়া।
এর মধ্যেই মেহরাবও ঢুকে ছাদে। ওকে দেখে মাহিরা চেঁচাতে গিয়েও চেঁচায় না। পিছিয়ে যায় এক কদম। কারণ মেহরাবের সাথে ছাদে প্রবেশ করে মিহরানের তিন বন্ধু, তন্ময়, শাকিল আর অর্ণব। মিহরান আজ ওদেরও পার্টিতে ইনভাইট করেছে। এই চার বন্ধু সেই কলেজ থেকে একসাথে। শারীরিক ভাবে যে যত দূরেই থাক না কেন, বন্ধুত্ব তাদের অটুট।
মাহিরা তাদের দেখে মিইয়ে যায়। নিজের চঞ্চলতাকে ঢেকে পরিপাটি বেশে রুপান্তরিত হয়। তবে মনে মনে সুখ দিয়ে যায় দামাল হাওয়ার ডাক। আজ কারও উপস্থিতি ওকে অত্যন্ত খুশি করে দিয়েছে।
আজ পার্টি জমবে।
……………………….
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মাঝেই আমন্ত্রিত সবাই ছাদে উপস্থিত হলো। বাবুল সাহেব আর আফিয়া ছোটদের মাঝে আর থাকতে চাইলেন না বলে তাদের খাবার নিচেই দিয়ে আসা হবে। মাহিব ঝুমাকে নিয়ে এসেছে। ছাদে একটা বেতের চেয়ার দোলনা আছে, ওখানেই ঝুমাকে বসিয়ে দেওয়া হলো। মাহিব নিজের জন্য একটা চেয়ার পাতলো ওর পাশে তবে বসলো না। ইতিমধ্যে গ্রিলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, মাংসর প্রথম পরত বিছিয়ে দেওয়াও শেষ। বউকে সব দিক থেকে সিকিউর করে সেই গ্রিলের কাছেই গেল মাহিব।
মালিহা আর তুরিনও চলে এসেছে ছাদে। তুরিনকে শাড়িতে আসলেই নজরকাড়া লাগছে। নিজেকে আজ ঢেলে সাজিয়েছে ও। না কোথাও বেশী, না কোথাও কম। বেইজ আর কালোর কম্বিনেশনের শাড়ির সাথে করেছে নিউড মেকাপ, যা আকর্ষণীয়তার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণ। এবং সেটার প্রমান ওর ছাদে ঢোকার পরই পাওয়া গেল মিহরানের বন্ধু অর্ণবের কথায়,
– মিহরান দোস্ত, এই বম্ব শেল টা কে রে? আমি তো ফুললি ক্রাশ্ড।
মিহরান বন্ধুর চোখ অনুসরণ করে সামনে তাকিয়ে তুরিনকে দেখে। তারপর নিরুৎসাহিত হয়েই আবার চোখ নামায় গ্রিলের দিকে,
– মালিহার বান্ধবী মনে হয়।
-মনে হয় মানে কি? তুই চিনিস না?
– নাহ্।
– তাহলে তোর পার্টিতে আসলো কেমনে?
এবার মিহরান বিরক্ত হয়,
-আরে সেটা আমি কি জানি? মালিহা এনেছে নিশ্চয়ই।
-হমমম।
তুরিন মিহরানকে আসার পরেই খুজে পেয়েছে। মিহরান যে ওর দিকে তাকিয়ে মুখ নামিয়ে নিয়েছে সেটা লক্ষ্য করেছে ও। সাথে সাথেই ঘাড় নামিয়ে নিজেকে পরখ করতে বসলো। ওকে কি খারাপ লাগছে শাড়িতে? আয়নার সামনে একশো এক বার ঘুরে ফিরে দেখেছে, যাচাই করেছে। কই? ওর তো খারাপ লাগেনি কিছু? আর ওকে যে সুন্দর লাগছে তার প্রমান তো মিহরানের পাশে দাড়ানো ছেলেটার লালিত চোখই দিয়ে দিয়েছে। তাহলে মিহরান কেন ফিরে তাকালো না?
তুরিনের মুখের বেদনা দেখে মালিহা বান্ধবীর হাত ধরলো। চোখের ইশারায় মন না খারাপ করতে বলে ওকে নিয়ে সামনে আগালো।
…………………….
গ্রীলে মাংস তখন ভাজা প্রায় শেষের দিকে। স্টেকের ঘ্রাণে আর ড্রামস্টিকের চটাক চটাক পোড়ার আওয়াজে পরিবেশ তখন ভারী। যদিও গ্রীলের ওপাশে খুন্তি হাতে ছিল রহমান, মিহরান পুরো প্রস্তুতির দায়ভার নিজের ঘাড়ে নিয়ে সটান দাড়িয়ে ছিল ওখানে। ওর দেখাদেখি বাকি ছেলেরাও আশপাশে আড্ডা দিচ্ছিলো। ছোলেদেরও যে কতো ধরনের গল্প থাকে তা এই আসর দেখলে মানুষ বুঝতো। কিন্তু মিহরানের তখন, এই সব গল্পে মনোযোগ ছিল না। পুরো ছাদ জুড়ে একটু পর পর ও খুজে যাচ্ছে কাউকে। এতোসব মানুষের ভীড়ে এক আকাঙ্ক্ষিত চেহারা দর্শনের অপেক্ষা ওকে ভেতর থেকে নাড়া দিচ্ছে। কি ব্যাপার? মেয়েটা এখনো আসছে না কেন? যার জন্য এতো আয়োজন সে নিজেই কিনা লেইট?
মিহরানের ভেতরের এতোসব ঝড়ের কিছুটা দমক চেহারাতেও প্রষ্ফুটিত। তাই দেখে তন্ময় কাছে আসে ওর।
– কি ব্যাপার দোস্ত? লুকিং এ্যাজিটেইটেড?
মিহরান সতর্কবোধ করে,
– কই? না তো।
তন্ময় বিজ্ঞ হাসে,
– তোর মনের খবর সবচাইতে ভালো আমি বুঝি মিহরান এবং এটা তুইও খুব ভালো ভাবেই জানিস। গাম্ভীর্য দিয়ে তোর ইমোশান্স পৃথিবীর সামনে ঢাকতে পারলেও, আমার কাছে পারবি না। এখন বল্, তুই এরকম বিচলিত কেন? মনে হচ্ছে যেন কারো অপেক্ষায় আছিস?
মিহরান তন্ময়ের কথা শুনে নিঃশব্দ কিন্তু চওড়া এক হাসি পরলো মুখে। হয়তো তন্ময়কে কিছু একটা বলতো ও, তবে তার আগেই ছাদের দরজায় চোখ আটকে গেল।
তন্ময় মিহরানের পাশেই দাড়ানো। বন্ধুর চেহারা সে পর্যবেক্ষণ করছে অনেকক্ষণ ধরে। এতোক্ষণ সেখানে ছিলো কিছুটা উৎকন্ঠা, অল্প বিরক্তি, কিন্তু এখন? এখন মিহরানের চক্ষু স্থির হয়ে গিয়েছে, গালের পেশীগুলো হয়ে এসেছে শিথিল। হাতের চিমটা আটকে আছে গ্রীলে পুরে যাওয়া মাংসের ওপর। তন্ময় মিহরানের চোখ অনুসরন করে সামনে তাকালো। ছাদের দরজায় দিয়ে ঢুকছে গিটার হাতে একটি মেয়ে। মেয়েটার হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা দেখে তন্ময়ের ঠোটেও হাসি ছড়িয়ে পরলো। আবার বন্ধুর দিকে ফিরলো ও, দেখলো মিহরান এখনো সেদিকেই নজর টিকিয়ে রয়েছে। ওষ্টযুগল টিপে তন্ময় মিহরানের কানে নিজের মুখ আগায়,
– মাংস টা পুড়ে যাচ্ছে।
মিহরানের হাত অল্প নড়ে উঠে। দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটিয়ে মাংসের দিকে যায়। আসলেই পুড়ে যাচ্ছে দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে সেটা উঠাতে যায় ও। তন্ময়, বন্ধুর কান্ড দেখে হেসে দেয়। ঘটনা যে একটা ঘটছে বা ঘটেছে, সেটা বুঝতে সময় লাগে না ওর। পরে এক সময় মিহরানকে নিয়ে ওর বসতে হবে, বোঝা গিয়েছে। এখন পার্টি টা এনজয় করা যাক।
………………..
শৈলী আর নিপুণ এসেই মাহিরাকে খুজেছে। মাহিরা শৈলীর হাতে গিটার দেখে খুবই অবাক হলো,
– তুই গিটার নিয়ে এসেছিস যে? গান শোনাবি নাকি আমাদের আজ?
শৈলী জানতো এই প্রশ্নের সম্মুখীন ওকে হতেই হবে, তাই ও একটুও ভড়কালো না।
– আসলে বার বি কিউ পার্টিতে লাইভ মিউসিক না থাকলে কেমন যেন জমে না। তাই গিটার টা নিয়ে আসলাম। আমিই শুধু কেন? যে কেউ গান গেতে পারে।
মাহিরা কিছুক্ষণ ভাবলো,
– হমম। ঠিক বলেছিস। গান থাকলে পার্টি আরও জমবে। তবে আর কেউ গাক আর না গাক, তোর থেকে কিন্তু গান শুনবই শৈলী। মনে থাকে যেন।
শৈলী হাসে। মনে মনে লজ্জায় মরে। ও কি আর আজ গান না গেয়ে থাকতে পারবে?
………………
সবাই মোটামোটি চলে আসায় আসর জমলো ছাদে। মেয়েরা পুলের পাশের চেয়ার গুলো টেনে বসেছে, ঝুমার দোলনাটাও সেখানেই। আর ছেলেরা মোটামুটি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই আড্ডা দিচ্ছে। এক সময় খাবার রেডি হয়ে গেলে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাক দেওয়া হয়। মিহরান, এক গ্লাস কোক হাতে, সার্ভিং টেবিলের পাশেই দাড়ানো ছিল। মাহিরা শৈলীকে সাথে করে নিয়ে আসতেই এক কদম আগ বাড়িয়ে আসলো মিহরান। কিছুই করলো না আর। ওদেরকে খাবারও এগিয়ে দিল না, কোনো কথাও বললো না, শুধু এগিয়ে আসলো। এতেই শৈলীর ষষ্ঠন্দ্রীয় জেগে অস্থির। মিহরানের দিকে তাকানোরও সাহস হলো না, ৎকোনমতে খাবার নিয়ে মাহিরাকে তাগিদ দিল চলে আসার। মিহরান নিঃশব্দে মুখ বাঁকিয়ে হাসলো। মেয়েটা যে এভাবেই রিয়্যাক্ট করবে ও সেটা জানতো আর তাইতো ও এই কাজটা করেছে। মেয়েটাকে ওর কারণে অপ্রস্তুত দেখতে কেন যেন ইদানিং মজা লাগে মিহরানের।
খাওয়াদাওয়ার পাট চুকানোর পর সবাই একত্রিত হলো পুলের পাশে। গোল করে বসা হলো, কেউ চেয়ারে তো কেউ ফ্লোরে। পুর্ণিমা রাত থাকায় চাঁদের কিরণ ছুয়ে দিচ্ছে পুলের পানি, যার কারণে চকচক্ করছে ফিরোজা জল।
গল্পের মাঝেই মিহরান হঠাৎ শৈলীর দিকে চায়, রমণী গল্পে মশগুল তার বান্ধবীর সাথে। মনে হচ্ছে যেন গানের কথা তিনি ভুলেই গিয়েছেন। ভুরু জোড়া কুচকায় মিহরান, তারপর হাক ছাড়ে,
– মাহি?
ওমনি সবাই চুপ হয়ে যায়। মাহিরা আর শৈলী তাকায় একসাথে,
– জ্বী ভাইয়া।
– আমার রুম থেকে মিউসিক সিস্টেমটা নিয়ে আয় তো। গান শুনি, বোরিং লাগছে।
শৈলীর মিহরানের বাক্য বুঝতে একটুও সময় লাগলো না। এই জন্যই যখন মাহিরা ভাইয়ের আদেশ পালন করার জন্য উঠতে নিল তখনই ওর হাত ধরে ফেলে শৈলী। মাহিরা ফিরে তাকাতেই শৈলী ইশারায় গিটারটা দেখালো। মাহিরার বুঝতে সময় লাগলো না। মুহূর্তেই হাসি মাখা মুখে মিহরানের দিকে চাইলো ও,
– ভাইয়া, মিউসিক সিস্টেমের কি দরকার, যদি আমরা লাইভ মিউসিকের আনন্দ উপভোগ করতে পারি।
মিহরান বাঁকা হাসে। শৈলীর দিকে চায় তবে মুখে কিছু বলে না। ও যা বোঝাতে চেয়েছে এবং যাকে বোঝাতে চেয়েছে, সে বুঝে গিয়েছে।
চলবে…..