#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১৯
শাহজাহান সাহেব শুধু ওদের রিসিভ করতেই এসেছিলেন। কার্যক্রম শেষে তার ম্যানেজার সহ যেই টিমকে ওদের সব খেয়াল রাখার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাদেরকে সব বুঝিয়ে তিনি চলে গেলেন।
এরপর সবাইকে নিজেদের রুম বুঝিয়ে দেওয়া হলো। চারজন ফ্যাকাল্টি বাদে বাকিসবার এবং ছাত্রীদের জন্য রুম বরাদ্দ করা হয়েছিল মূল বিল্ডিংয়ে। আর সেই চারজন ফ্যাকাল্টি সহ ছাত্রদের জায়গা দেওয়া হলে এই বিল্ডিংয়ের পেছনে আরেকটা দোতলা বাড়ি আছে, সেখানে।
মিহরানের রুম রাকিবের সাথে মূল বিল্ডিংয়েই দেওয়া হলো। মুখে কোনো এক্সপ্রেশন না দেখালেও ভেতরে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে মিহরান। শৈলীর পাশে থাকলে অন্তত মেয়েটাকে দেখে রাখা যাবে। নয়তো এই মেয়ে দেখি ভালো তিরিং বিরিং করে, মিহরান লক্ষ করেছে।
সবাই নিজেদের রুমে সেটেল হয়, ফ্রেশ হয়ে আবার নিচে নামলো। ততক্ষণে দুপুর হয়ে গিয়েছে। যদিও ঘড়ির কাঁটা দুইটার আশপাশ দিয়ে ঘুরছে, আবহাওয়া দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। আকাশ আজ অতিরিক্ত মেঘলা, আলোর ছিটা ফোটাও নেই কোথাও। বৃষ্টি এখন যদিও হচ্ছে না, তবে বোঝা যাচ্ছে অতি শীঘ্রই অম্বরধারার ঢল নামবে ধরণীতে।
রোদ না থাকায় মূল দালানের সামনে ফোয়ারার পাশের বাগানে লাঞ্চের ব্যবস্থা করা হলো। এতে অবশ্য মজা হলো দ্বিগুন। একে তো এতো মানুষের একসাথে ভেতরে খাওয়ায় কষ্ট হয়ে যেত। এখন সবাই যে যার মতন খাবার নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে খাচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত বাইরের পরিবেশটা ঠান্ডা, ছবি তোলার জন্যও চমৎকার।
শৈলী সকালে মিহরানের সেই ফোনালাপের পর থেকে আর ভুলেও ওর বান্ধবীদের কাছ থেকে সরছে না। কেয়াকে মাঝে মধ্যে পিয়ালের সাথে একা ছেড়ে দিলেও, প্রিতিকে একদম বগলদাবা করে ঘুরছে ও। প্রিতির অবশ্য এতে কোনো আপত্তি নেই, শৈলীর সঙ্গ তার বরাবরই পছন্দ।
মিহরানও শৈলীর এই বিষয়টা লক্ষ করেছে। ভেতর ভেতর মুচকি হাসি দেয় সে। তড়িৎ গতিতে মোবাইল ফোন বের করে শৈলীকে ম্যাসেজ পাঠায়।
শৈলী তখন খাবার নিয়ে লনের এক পাশের ঘাসে মাত্র আসন পেতেছে যখন ফোনে ওয়াট্স এ্যাপের রিং বাজলো। মোবাইল উঠিয়ে শৈলীর চোখ সরু হলো। এবার ম্যাসেজ পড়ার আগে মিহরানকে খুজতে এদিক সেদিক তাকালো ও। প্রথমে না পেলেও একটু পর ফ্যাকাল্টিদের টেবিলে তাকে খুজে পেল ওর দৃষ্টি। কি আরামে গল্প করছে পাশে বসা কলিগের সাথে।
শৈলী চোখ নামিয়ে ম্যাসেজ খোলে,
– এই তো গুড গার্ল। বান্ধবীদে ছাড়া যেন আপনাকে না দেখি কোথাও। আর দেখলে আমি কি করবো সেটা নিশ্চয়ই কিছুক্ষণ আগে আমাদের ফোনালাপের সময় আপনি বুঝতে পেরেছেন। আমার অবশ্য সেটাতেও কোনো সমস্যা নেই….
শৈলীর চোখ কোটর থেকে বের হয়ে আসার যোগাড়। বিশ্বাসই হচ্ছে না এই রগচটা মানব ওর সাথে ফ্লার্ট করছে। ফ্লার্টই তো! এটাকে আর কি বলা যায়?
শৈলী মাথা ওঠায়। ভাবে, স্যার তো অন্যদের সাথে গল্প করছেন এই ফাঁকে তার দিকে একটু রাগি লুকে তাকিয়ে নিজের কলিজা ঠান্ডা করবে। কিন্তু বিধিভাম! শৈলী চোখ তুলতেই দেখে মিহরান ওর দিকেই সরাসরি তাকানো। সাথেসাথে মনকে অনেক কষ্টে মানিয়ে চেহারা থেকে রাগের রেশটা লুকিয়ে ফেললো ও। একদম ব্ল্যাঙ্ক লুকে চোখ নামালো।
প্রিতি পাশেই বসে দেখছিলো সব,
– কি হইসে দোস্ত? কোনো সমস্যা?
শৈলী হকচকিয়ে পাশ ফিরে। প্রিতির কথা ও ভুলেই বসেছিল,
– ননা দোস্ত। কি আর হবে?
– তাহলে তুই তোতলাচ্ছিস কেন?
– হমমম…ও…ঝঝাল লেগেছে তো তাই।
প্রিতি খাবারের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। মোরগ পোলাও আর সাদা ডিমের কোরমা, সাথে কাবাব। এখানে মেয়ে ঝাল পেল কোথায়?
শৈলী সাথেসাথেই পাশে রাখা সেভেনআপের বোতল থেকে পানীও ঢকঢক্ করে গিলে। প্রিতির মায়া হয় তা দেখে। আসলেই বোধহয় ঝাল লেগেছে, কাবাবটা অবশ্য একটু স্পাইসি, ওটাই হয়তো।
……………..
লাঞ্চের শেষে যদিও সব ছাত্রছাত্রীদের কিছুক্ষণ বিশ্রামের জন্য বলা হয়, তবে কে শুনে কার কথা! এখানে তো ওরা বাধন ছাড়া পাখি, মুক্ত আকাশে না হোক জমীনে তো বিচরণ করবেই। কয়েকজন যারা এসির ভেতর বসে আড্ডা দিতে ইচ্ছুক, তার বাদে বাকি কেউই ভেতরে গেল না। লনেই নিজ নিজ আড্ডার গ্রুপ বানিয়ে বসলো। শৈলী, প্রিতিও আরও কিছু ক্লাসমেট্সদের সাথে গল্পে জুটে গেল।
টিচারদের মাঝে যারা সিনিয়র ও বয়ষ্ক তারাও ছোট একটা ভাতঘুম দেওয়ার চিন্তায় লন ছাড়লেন। তবে মিহরান, রাকিব, মিলা সহ আরও কিছু জুনিয়ার ফ্যাকাল্টি নিচেই রয়ে গেলেন।
রিক্ ওর সাগরেদদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলো ফোয়ারার পাশে বসে। সবার সাথে কথায় তাল মেলালেও দৃষ্টি টিকিয়ে ছিল ও শৈলীর দিকে। মেয়েটাকে জ্বালাতন নিছকই র্যাগিং এর ইচ্ছা দিয়ে শুরু করলেও, রিকের জন্য এখন কেমন একটা জেদে পরিণত হয়েছে ও। যেন মেয়েটা ওকে সবসময় একটা চ্যালেঞ্জের আহবান করে। হঠাৎ ওদের ব্যাচের লাবন্যকে সামনে দিয়ে হেটে যেতে দেখলো রিক্। মুখ উজ্জ্বল হলো ওর,
– এই লাবন্য
লাবন্য হাসিমুখে ফিরে তাকায়। সুযোগসন্ধাণী মানুষগুলোর মাঝে ও অন্যতম। রিকের এ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা সর্বদাই থাকে। তবে রিকের ভাষ্যে এই সব ছ্যাচড়া জাতীয় মেয়েদেরকে ও তেমন পাত্তা দেয়না। আবার দূরেও ঠ্যালে না, কখন কাজে লেগে যায় বলা তো যায় না। এই যে যেমন এখন রিকের ভীষণ কাজের পাত্রী সে।
লাবন্য কাছে আসতেই রিক্ ওকে নিয়ে একটু দূরে সরে,
– আজকে সন্ধ্যায় তোকে আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
লাবন্য যেন পারে না গলে যেতে। রাকিব শাহজাহান নিজ থেকে ওর সাহায্য চাচ্ছে। গদগদ হয়ে ওঠে ও,
– কি করতে হবে বল্ রিক্।
– শোন তাহলে।
রিক্ গলা খাদে নামিয়ে ওর প্ল্যানটা লাবন্যকে বলে। লাবন্যর দায়িত্বও ওকে বুঝিয়ে দেয়। সব শুনে এই মেয়ে মহা খুশি। শৈলীর ওপর ওর একটা চাঁপা ক্ষোভ ছিল বহুদিনের। রিকের এই ফালতু মেয়েটার প্রতি এতো এ্যাটেনশন ওকে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিল। এইবার ওকে জব্দ হতে দেখে লাবন্য শান্তি পাবে। আর নিজের এই শান্তি হাসিল করতে ওর রিকের দেওয়া কাজটা ভালোভাবে করতেই হবে।
…………………………..
লনে সবার গল্পের মাঝেই বিকাল হয়ে গেল। এর মধ্যে কয়েকবার মেঘ ডেকেছে, বিদ্যুতও চমকেছে দুই বার। হয়তো বৃষ্টি নামতে নামতে রাত হবে। শাহজাহান সাহেব আশপাশের ক্ষেত ও বাগান থেকে অনেক রকম মৌসুমী ফল আনিয়েছেন। সেগুলো দিয়েই বিকালের নাস্তা সারা হলো। তার সাথে সঙ্গী হিসেবে চা তো ছিলোই।
এই পুরোটা সময় একই জমিনের দুপাশে বসে ছিল মিহরান আর শৈলী। দুজনের অবস্থান আলাদা, গল্পের সাথী আলাদা, আলোচনার বিষয় বস্তুও আলাদা। কিন্তু কোথায় যেন তারা দুজন এক হয়ে আছে। কোনো এক অজানা, অনধিকারের এক আজব বন্ধনে বেঁধে গিয়েছে দুজন। শৈলীর এখনো মনে পরে ওর আর মাহিরার মাঝে সেই রাতের আলাপন। মাহিরা ওকে মিহরানের বউ করতে চেয়েছিল। শৈলী সেদিন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিল সব। একদমই পাত্তা দেয়নি বান্ধবীর কথায়। আজগুবি কথা কারই বা কানে যায়। কিন্তু আজ? আজ সেই আজগুবি কথায় শৈলীর কান সহ পুরো শরীর আমল করছে। স্যার ওকে পছন্দ করে কি না বা ভবিষ্যতে ওদের মাঝে কিছু হবে কিনা, এই নিয়ে শৈলী চিন্তা করে না। ও শুধু জানে এই মানুষটাকে, যে কারণেই হোক, ওর মনে ধরেছে।
…………….
মাগরিবের আজানের কিছু আগে টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হওয়াতে সবাইকে ভেতরে চলে যাওয়ার জন্য বলা হলো। ছেলেরা নিজেদের বরাদ্দকৃত বাড়িটায় চলে গেল, মেয়েরা ফিরলো নিজেদেরটায়। শৈলী আর প্রিতি নরমাল থাকলেও কেয়ার মন ছিল ভীষণ খারাপ, কারণ উপরে উপরে আসতে আসতে শুনতে পেয়েছে যে রাতে আবহাওয়া আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে আর যদি হয় তাহলে ছেলেদের আজকে আর মূল বিল্ডিংয়ে আসা হবে না। তাদের ডিনার ঐ বাড়িতেই সার্ভ করা হবে।
এটা শোনার পর থেকেই কেয়ার মুখ কালো, কারণ পিয়ালকে সে আজকে আর হয়তো দেখতে পাবে না। কিছুক্ষণ আগে যখন তারা আলাদা হলো, তখনও এমন হই হট্টগোল লেগে গেল যে ঠিক ভাবে একে অপরকে বিদায়ও জানাতে পারেনি ওরা।
বান্ধবীর মন খারাপ দেখে প্রিতি আর শৈলীরও খারাপ লাগে। নিজেদের প্রেমিকপুরুষ না থাকলে কি হবে, ভালোবাসার মর্ম তো বোঝে তারা। কেয়া দুজনই শান্ত্বনা দিতে বসে,
– দোস্ত চিন্তা করিস না, ওয়েদার ভালোও তো হয়ে যেতে পারে তাই না? আর যদি না হয় তাহলে যে ভাবেই তোকে রাতে ভাইয়ার সাথে দেখা করায় আনবো, প্রমিস। ওকে?
কালো আঁধারের মাঝে যেন একটু আলোর রেখা পাওয়া গেল কেয়ার মুখে। সে প্রিতির হাত জড়িয়ে ধরলো।
………………….
মিহরান আর রাকিব যেই রুমটা পেয়েছে তা বেশ বড়। সাথে একটা ব্যালকনিও আছে। সেটা দিয়ে ভেতরের লন সহ পুলটা দেখা যায়। রাকিব শাওয়ার নিতে গিয়েছে। মিহরান সেই সময় একা ব্যালকনিতে দাড়িয়ে সিগারেট স্মোক করছিল। হঠাৎ ফোনের রিং পেয়ে ঘুরে দাড়ায় ও। রুমে গিয়ে বেডসাইড টেবিল থেকে ফোন তুলে। মিলা ম্যামের কল। ফোন রিসিভ করে যা শুনলো তাতে একটু বিরক্ত হলো মিহরান। এর মাঝেই শাওয়ার নিয়ে রাকিব বেরিয়েছে। মিহরান ফোন রাখতে রাখতে সামনে আসলো সে,
– কি হইসে ভাই? বিরক্ত কেন?
মিহরান দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
– সকল ফ্যাকাল্টিদেরকে নিচে যেতে বলা হয়েছে। চেয়ারম্যান স্যার গল্প করার ইচ্ছা পোষন করেছেন।
রাকিব মাথা মোছা বন্ধ করে রেগে তাকালো,
– ধুর শালা! চেয়ারম্যান স্যারও আর সময় পাইলেন না। দুপুরে তো সুন্দর মতন রেস্ট নিয়েছেন। এখন শরীর মন চাঙ্গা করে মাঠৈ নেমেছেন তিনি। আর আমরা সেই কখন থেকে ডিউটি করেই যাচ্ছি।
রাকিবের মুখ কালো হয়ে উঠলো,
ইশ! কই ভাবলাম শাওয়ার নিয়ে শান্তি মতন এখন একটু ফেইসবুকে সময় কাটাবো বা নেটফ্লিক্সে একটা সিরিজ দেখবো। তা না করে এখন চলো বুড়ো খোকার বকবকানি শুনতে।
মিহরান নিজেও চাচ্ছিলো কিছুটা সময় নির্জনে কাটাতে। ওভার সোশাল ছেলে মিহরান না। পরিবারের সদস্য আর খুব কাছের বন্ধুদের ছাড়া বেশী একটা মেলামেশা করে না সে। আজ তো সকাল থেকেই সোশালাইজ করেই যাচ্ছে, তাও সেটা শুধু মাত্র শৈলীর জন্য। ওকে চোখে চোখে রাখার জন্য। কিন্তু আর নিচে নামতে ইচ্ছা করছে না।
তবে চেয়ারম্যানের ডাকা সাড়া না দিয়ে উপায় নাই। অগত্যা দুজনকেই রেডি হয়ে নিচে নামতে হলো।
………………
শৈলী, প্রিতি আর কেয়া রুমেই বসে গল্প করছিল যখন ওদের দরজায় টোকা পরে। প্রিতি যেয়ে দরজা খোলে। লাবন্যকে সামনে দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে আসে ওর,
– তুমি?
লাবন্য উত্তেজনার এক হাসি দেয়।
-কেয়া আছে?
– হ্যা আছে। কেয়া….
প্রিতির ডাকার আগেই কেয়া আর শৈলী এসে দরজায় দাড়ায়। লাবন্য দ্বীগুন উত্তেজনা নিয়ে বলে ওঠে,
– জানো, ছেলেরা ওদিকে সেইরকম মজা করছে। রীতিমতো পার্টি চলছে। কেয়া, পিয়াল ভাইও আছে ওখানে। যাবা নাকি তোমরা, চলো যাই।
কেয়া পিয়ালের নাম শুনতেই দিল এক লাফ। সে তো এই সুযোগটাই খুজছিল। যেতে তো ওকে হবেই। কিন্তু শৈলী আপত্তি জানালো,
– ছেলেরা পার্টি করছে, এতে আমরা কিভাবে যাই, আই মিন বিষয় টা অড লুকিং হয়ে যায় না?
প্রিতিও সহমত পোষণ করতে চাইলেও লাবন্য আটকালো ওকে,
– আরে ওখানে আমরা একা নাকি? সিনিয়র অনেক আপুরাই গিয়েছে। অনেকেরই তো বয়ফ্রেন্ড আছে ওখানে। তাই…. এখন চলো চলো, দেরী হলে সব মজা শেষ।
কেয়ার চোখ ততক্ষণে চক্ চক্ করছে। আকুতি ভরা দৃষ্টিতে তাকালো ও ওর প্রাণ প্রিয় বান্ধবীদের দিকে। প্রিতি আর শৈলী এ দেখে হেসেই ফেললো। প্রিতি কেয়ার কাধ ঝাকিয়ে বললো,
-চলো বন্ধু, তোমার ইচ্ছাই পূরণ করি। আফটার অল এসেছিও তো তোমার জন্যই।
খুশিতে কেয়া ভেতরে দৌড়ালো। শৈলী আর প্রিতিও গেল নিজেদের মোবাইল আর ব্যাগ নিতে। রেডি ওরা আগেই ছিল।
দরজা লক্ করে বের হলো চারজন। নিজেদের গল্পে শৈলীরা এমনই মশগুল যে লাবন্যর ঠোটের হাসি খেয়াল করলো না।
প্রিতিদের রুম পরেছে তিন তলায়। নিচ তলায় নেমে আসতেই ওদের চোখ বড় বড় হয়ে গেল কেননা ড্রয়িং রুমে সব ফ্যাকাল্টিরা বসা। ওরা আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে নামলো। যদিও নিচে লনে অনেক মেয়েরাই হাটাহাটি করছিল তারপরেও ওদের মাঝে কাজ করছিল এক অজানা ভয়।
মিহরান সব স্যারদের আলাপ চুপচাপ শুনছিল। হঠাৎ ওর চোখ পরে সদর দরজায়। চারটা মেয়েকে নিচে নামতে দেখে ও। সেটা কোনো ব্যাপার হতো না ওর কাছে যদি ওদের মাঝে শৈলী না থাকতো। মেয়ে চারটে দরজা খুলে বাহিরে যাচ্ছে দেখেই মিহরান উঠে দাড়ায়। চেয়ারম্যানের থেকে অনুমতি নিয়ে সামনে আগায় ও। শৈলীরা বের হওয়ার আগেই ওদের পথ রোধ করে। সরাসরি শৈলীর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে,
– কোথায় যাচ্ছেন আপনারা?
হিমশীতল এই আওয়াজ শৈলীর কর্ণকুহুরে কয়েকদিন ধরে আসেনি বিধায় ধক্ করে ওঠে ওর বুক। বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। একই অবস্থা কেয়া আর প্রিতিরও। তখন ওদের হারিয়ে ফেলা খেই ধরে লাবন্য,
– স্যার আমরা বাইরে একটু হাটতে যাচ্ছি। এরকম পরিবেশ শহরে পাই কই স্যার। তাই একটু….
মিহরানের উত্তরটা মোটেও পছন্দ হলো না। সবচেয়ে বড় কথা এই রাতে শৈলীকে ওর বাইরে পাঠাতে ইচ্ছা করছে না একদমই। ও কঠোর ভাবে মানা করার জন্য মুখ খুললেও পেছন থেকে চেয়ারম্যান স্যারের বাধা পেল,
– কি হলো মিহরান? কোনো সমস্যা?
– জ্বি না স্যার। ওরা বাইরে যাচ্ছিলো তাই…
– তো যেতে দাও। যাক ওরা। ঘুরুক ফিরুক। এখানটা বেশ নিরাপদ। আর এখন তো মাত্র সন্ধ্যা নামলো। তোমরা যাও, ঘুরে আসো। বাইরের দিকে যেও না ব্যাস।
চেয়ারম্যান স্যারের পারমিশন পেয়ে আর কে থামে। ওনাকে ধন্যবাদ দিয়ে লাবন্য, প্রিতি আর কেয়া তো শুনেই দৌড় দিল। স্যার বাকিদের সাথে গল্পে ফিরলেন। শৈলীও ওর বান্ধবীদের পেছন পেছন যাওয়ার জন্য ঘুরে দাড়ালো কিন্তু আচমকা থামতে হলো ওকে। চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবার যোগাড় হয়েছে শৈলীর। কারণ পেছন থেকে ওর হাত আটকে ফেলেছে কেউ।
শৈলী কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে আবার পেছনে ঘোরে। মিহরানের হাত ওর কব্জির ওপর দেখে ভেতরে কেঁপে ওঠে ও। তারপর তাকায় মিহরানের শীতল চোখের ওপর।
ডান হাতে শৈলীকে ধরা মিহরান নিজের বাম হাত উঠিয়ে ওকে ঘড়ি দেখায়,
– শুধু আধা ঘন্টা। এর মাঝে ফিরে আসবেন।
চলবে….
বি:দ্র: ইনশাল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি একটা ধামাকা পর্ব আসছে। আমি লেখা শেষ করলেই পোস্ট করে দিব।