#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২১
নিঝুম রজনী। মেঘবৃত্তরা আজ আকাশকে ছিনিয়ে নিয়েছে নিজেদের দখলে। নিশ্চিন্তে খেলায় মেতেছে তারা সেই খোলা আসমানের বুকে। চন্দ্র কে আজ আসতে দেওয়া মানা। না না, কোনো ভাবেই আসতে দেওয়া যাবে না।
রাত পৌনে দশটা। মেঘাচ্ছন্য তিমিরে ডোবানো নির্জন পথ দিয়ে হেটে যাচ্ছে এক কপোত কপোতি। নিঃশব্দ পরিবেশের সাথে তাল মিলাতেই যেন তারাও নিশ্চুপ। কি আর বলবে দুজন? ভাষা যে নিমজ্জিত হয়েছে গহীন কোনো কুপে। এখন সেটা তোলা অসম্ভবের ন্যায়।
শৈলী ধীর পায়ে হাটছে। পথের দিকে মনোযোগ তার নেই। সেতো এই মুহূর্তে তার জীবনের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত। ২১ বছরের সাত হাজার দুইশো ছিয়ানব্বই টা দিন ছিল একরকম আর আজকের এক সন্ধ্যা ছিল সম্পূর্ণ আরেকরকম। এভাবে জীবনটা ট্র্যাক থেকে ছিটকে যাবে শৈলীর কল্পনার স্বপ্নতেও আসে নি। কিন্তু সেটা বাস্তবে ঘটেছে। আর সেই বাস্তব তার সামনে, তার সামনে হাটছে। মিহরান নামক বাস্তব।
শৈলীর মতন ধীর পায়ে না হাটলেও মিহরানও যাত্রার দিকে কোনো নজর দিচ্ছে না। তার মন মস্তিষ্ক পরে আছে সেই ছনের ঘরটাতে যেখানে কিছুক্ষণ আগেই ঘটে গেল তার জীবনের সবচাইতে চমকপ্রদ ঘটনা। একমুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে গেল অনেককিছু। যেমন সে আজ রাত নয়টা পর্যন্তও নিজেকে ব্যাচেলার বলেই গণ্য করতো, কিন্তু সেই খেতাব এখন পাল্টে গিয়েছে। স্বত্তায় লেগেছে নতুন লেবেল: বিবাহিত।
হঠাৎ মিহরান থামে, হাল্কা হাতে পেছনে ঘোরে। নিজের সদ্য বরণ করা স্ত্রীর দিকে কোমল দৃষ্টি টেকায়। ছোট খাটো আদুরে আননের অধিকারীনী এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত। ভাবলেশহীণ নয়নে হেটে আসছে। এক সময় সটান দাড়ানো মিহরানের বুকে এসে মাথা ঠেকে ওর। হকচকিয়ে কেঁপে সরে যায় তখন। বোঝে এতোক্ষণ অন্যমনষ্ক হয়ে হাটছিল ও।
মিহরান দু হাত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে মুখ নিচু করে। শৈলীর চোখে চোখ রাখে,
– শৈলী?
শৈলীর পলক নড়ে ওঠে তবে ও ওপরে তাকায় না। বরং মাথা আরও নিচু করে দেয়। মিহরান অবুঝ না, মেয়েটার মনের সবকিছুই আয়নার মতন দেখতে পারছে ও। তাই ধীরস্থিরতা অবলম্বন করে কথা আগায়,
– শৈলী, এখন আমরা খামারবাড়িতে ব্যাক করছি।
অনেকক্ষণ সেখানে আমরা দুজনই অনুপস্থিত ছিলাম। তাই একটু ঝামেলা হলেও হতে পারে। আপনি কি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি?
শৈলী এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আর কি ঝামেলা হওয়ার বাকি থাকতে পারে? জীবনের সবচাইতে বড় কান্ড তো ঘটেই গেল। তবুও শৈলী নিঃশব্দে মাথা ওপর নিচ নাড়ে, ও বুঝতে পারছে।
মিহরান দম ছাড়ে। শৈলী, এই অবস্থাতেও এখনো ওর সাথে কোঅপারেট করছে দেখে ও আসলেই মেয়েটার প্রতি মুগ্ধ। এতো টা ম্যাচুউর্ড ও দায়িত্বশীল মেয়ে যে শৈলী এটা ও আগে বোঝেনি। মিহরান নিঃশব্দে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলে,
– আমাদের এক সাথে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আপনি আগে যাবেন, আমি আধাঘন্টা পরে ঢুকবো। আমি ফ্যাকাল্টিদের সবাইকে সামলে নিব কিন্তু আপনার বান্ধবীদের…
– আমি ম্যানেজ করে নিব স্যার।
একটু থমকায় মিহরান, শৈলীর মুখে ‘স্যার’ শব্দটা হঠাৎ ওকে হোচট খাওয়ালো। এতোদিন এই সম্মোধন টা খারাপ না লাগলেও এই মুহূর্তে গায়ে লাগলো মিহরানের। এতে ও নিজেই অবাক। বিয়ে হয়েছে আধাঘন্টাও হয় নি, এখনই অন্যচোখে সব দেখতে শুরু করে দিয়েছে নাকি সে?
মনে এতো কিছু চিন্তা করলেও মুখে কিছু বললো না ও। শৈলীকে পাশে নিয়ে আবার হাটতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই খামারবাড়ির সীমানা চোখে পরলো ওদের। শৈলী সেটা দেখেই ভেতর থেকে আবারও কাবু হতে লাগলো ভয়ে। মিহরানকে বলে তো দিল ও ম্যানেজ করবে কিন্তু আসলে বান্ধবীদের কি উত্তর দেবে ও? তিনঘন্টার মত গায়েব ছিল? কি বলবে, কই ছিল? আর ওর ফোন? সেটা তো লাবন্যর কাছে?
লাবন্যর নামটা মাথায় আসতেই শৈলীর রাগ তড়তড় করে বেড়ে যায়। রাগের অভিব্যক্তি প্রকাশ পায় ওর কাঁপুনির তালে। মিহরান সেটা দেখেই দাড়িয়ে যায়। উত্তেজিত হাতে শৈলীর বাহু ধরে ওকে নিজের দিকে ঘোরায়,
-শৈলী? কি হয়েছে? আপনি ঠিক আছেন?
শৈলীর চেতন ফেরে,
-জ্বজ্বি স্যার।
– এরকম কাঁপছেন কেন?
শৈলীর কপালে হাতের পেছনটা দিয়ে ছোয় মিহরান,
– না, জ্বর তো আসেনি। তাহলে?
শৈলী দুটো ঠোট টিপে। এবার তাকায় মিহরানের দিকে। ছলছল নয়নে শুধায়,
– স্যার সন্ধ্যায় আমার সাথে….
মিহরান ঝট্ করেই বুঝে ফেলে শৈলী কি বলতে যাচ্ছে। মাঝ পথে থামায় ওকে,
-হুশ!… এই নিয়ে এখন কোনো কথা বলবেন না। আমি সব শুনবো আপনার থেকে, সব। কিন্তু এখন না। কাল ঢাকায় ফিরে তারপর।
-কিন্তু…
মিহরান শৈলীর দু বাহু ধরে ওকে একটু কাছে টানে। দৃষ্টিতে টেনে আনে নমনীয়তা। মন্থরগতিতে কথা বলে,
– শৈলী, আজ আমাদের দুজনের সাথেই অনেক কিছু হয়েছে। এগুলো বুঝতে, প্রসেস করতে আমাদের সময় লাগবে। সেই সময়টা একে অপরকে দিতে হবে আমাদের। আমরা দিবও সেটা। তবে আজ এগুলার সময় না। আজকে আপনার রেস্ট দরকার। মাথা ঠান্ডা করুন, খাওয়া দাওয়া করে একটা ঘুম দিন। কালকে সব দেখা যাবে।
নিঃশব্দে শৈলীর চোখ থেকে জল গড়ায়। নিজেকে ধরে রাখতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে ওর। মিহরান শৈলীর বাহু ছেড়ে এক হাত ছোয়ায় ওর কোমল মুখশ্রিতে। আঙ্গুল দিয়ে আলতো স্পর্শে পানি মুছে দেয় গাল থেকে।
– আর কোনো কান্না করবেন না। এখন থেকে যা হবে দুজন মিলেই সেটা বুঝে নিব। আপনি একা নন্।
শৈলীর কান্না একসময় থামে। নিজেই চোখ মুছে ঘুরে হাটা ধরে ও। মিহরানও ওকে ছেড়ে দিয়ে পাশে হাটে।
……………..
খামারবাড়ির দরজায় দারোয়ান আছে দেখে মিহরান শৈলীকে পাশের গাছে নিচে যেতে বলে। তারপর দারোয়ানকে ডেকে গেট খোলায়। ফ্যাকাল্টি বলে দারোয়ান তাকে দেখেই গেট খুলে পাশে দাড়িয়ে সালাম দেয়। মিহরান ঢুকে ওনার সাথে কিছু খোশ গল্প করতে করতে তাকে এক পাশে নিয়ে যায়। এই সুযোগে শৈলী ঢুকে পরে ভেতরে। অন্ধকারে খুব তাড়াতাড়ি ড্রাইভওয়ে দিয়ে হেটে ভবনের কাছে চলে আসে সে।
বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে সবাই ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ডিনারে ব্যস্ত। এতো মানুষ দেখে শৈলী একটু স্বস্তি বোধ করে। এই ভীড়ে ওকে কেউ নোটিস করবে না। শৈলী খোলা দরজা দিয়ে চুপি সারে ঢুকেই বামের সিড়ি দিয়ে ওপরে রুমের দিকে চলে যায়।
রুমে এসে কাউকেই পায় না শৈলী। এটাই আশা করেছিল ও। দরজা বন্ধ করে ধপ্ করে বসে পরে ও মাটিতে। আজ কি হয়ে গেল ওর সাথে? জীবনের এতো বড় একটা মোড় এভাবে ঘুরলো?
এখন ও আর মিহরান স্যার স্বামী স্ত্রী?
শৈলীর সেই মুহূর্তটার কথা মনে পরে। মিহরান বিয়ে পড়ানোর কথা বলতেই গ্রামের মানুষজনের মাঝে হঠাৎ ব্যস্ততা বেড়ে গেল। শুধু থমকে দাড়িয়েছিল শৈলী। চমকানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছিল মিহরানের দিকে। মিহরান তখনো শৈলীকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে। গলা খাদে নামিয়ে মিহরান ওর কাছে আসলো,
– এই মুহূর্তে এ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই শৈলী আর সেটা আপনিও বুঝতে পারছেন। আমাকে অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। প্লিস আমার সাথে কোঅপারেট করুণ।
শৈলী ঘাবড়ায়,
-কিন্তু স্যার..বিয়ে? কিভাবে? এটা সম্ভব না। আমার বাবা মা জানলে….
মিহরান তখন শৈলীর এক হাত চেপে ধরেছিল।
– এই যে,আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে, এই রাতের ঘটনা আপনি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। যেদিন আপনার মনে হবে সবাইকে জানানো উচিৎ সেদিনই আমরা এগোবো। আপনি নিশ্চিত থাকুন। আমি আছি তো আপনার পাশে।
শেষ দুই বাক্য কি যেন জাদু মেশানো ছিল। শৈলী সব ভুলে একদম শান্ত হয়ে গেল। এর মাঝেই সেই হুজুর তার রেজিস্ট্রি বই নিয়ে চলে এসেছেন। গ্রামের দু একজন মহিলা ভেতরে ঢুকে শৈলীকে মিহরানের থেকে ছাড়িয়ে মাথায় ওর ওড়না দিয়ে ঘোমটা পরিয়ে দিল। শৈলীকে সরিয়ে ফেললও মিহরান ওর হাত ছাড়েনি। নিজের মুঠিতে বন্ধ করে রেখেছিল। সেটাই ছিল শৈলীর একমাত্র ভরসা।
বিয়ে পড়ানোর সময়ও যখন শৈলী কাঁপছিল, মিহরানের মুষ্ঠিবদ্ধ সেই হাতের চাপই ওকে সাহস যোগায় মুখ খোলার, কবুল বলার, মিহরানের বৈধ সঙ্গীনীতে রুপান্তরীত হওয়ার।
………………
শৈলী দ্রুত কাপড় চেইঞ্জ করে রুম ছাড়ে। যত দেরী করবে ততো বেশী প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ওকে। সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ওর চোখ খোজে ওর বান্ধবীদের, তার সাথে আরেকজনকেও। মিহরান স্যার। কিন্তু তাকে দেখতে পায় না। বোঝে এখনো আসননি ভেতরে তিনি।
– শৈলী?
হঠাৎ পরিচিত এক কন্ঠের চিৎকারে শৈলী চকিতে তাকায়। ভীড়ের মধ্য দিয়ে আতঙ্কিত এক প্রিতিকে ধেয়ে আসতে দেখে হেসে দেয়। পেছনে কেয়াকেও দৌড়াতে দেখে। প্রিতি এসেই জড়িয়ে ধরে শৈলীকে,
– তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? পার্টি তে তোকে পাই নাই কেন? রুমে এসেও কতো খুজলাম, কোথাও নেই। কই ছিলি, বল না?
শৈলী উত্তর দেয়ার আগেই কেয়া ওর পশ্নের পশরা বসায়,
– লাবন্যকে একা পার্টিতে আসতে দেখে আমরা অবাক হয়েছিলাম। ওকে জিজ্ঞেস করাতে ও নিজেও তোর ব্যাপারে কিছু বলতে পারলো না। তুই ছিলি কোথায় তাহলে?
লাবন্য নামটা শুনতেই শৈলী আবার ধপ্ করে জ্বলে ওঠে। রাগের পারা উঠতে থাকে উপরে। কিন্তু শৈলী চেষ্টা করে নিজেকে দমানোর। বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়,
– আমার….আসলে হঠাৎ মাথা ধরেছিল রে, তাই রুমে ফিরে এসেছিলাম।
প্রিতি ভ্রু কুচকায়,
– কিন্তু রুমে এসেও তো তোকে দেখলাম না। আর মোবাইল বন্ধ কেনো তোর?
– মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রুমে এসে বোর ফিল করছিলাম তাই ছাদে গিয়েছিলাম। এসে আবার গোসলে গিয়েছি। এর মাঝেই হয়তো তোরা এসেছিলি….
এবার কেয়া আর প্রিতি শান্ত হয়।
-তাই হবে হয়তো। আচ্ছা চল। তোর টেনশনে আমাদের অনেক ক্ষিদা লেগে গেসে। খেয়ে নেই আগে।
এই বলে মুচকি হেসে দুজন দুদিক দিয়ে শৈলীর বাহু ধরে নিয়ে যায় ওকে খাবারের টেবিলের কাছে।
………………….
ডিনার টেবিলের এক কোণায় সবার থেকে একপ্রকার লুকিয়ে লাবন্য বসা। ওর সহ রিকের বন্ধুদেরও আজ বেহাল অবস্থা। শৈলীকে একা রুমটাতে রেখে পার্টিতে ফেরার পর থেকে গত এক ঘন্টা আগ পর্যন্ত যা হয়েছে সেটাই মাথায় ভনভন করছে ওর।
পার্টিতে এসে লাবন্যরা নিজ নিজ ভাবে মজায় লিপ্ত হলো। এরই মাঝে পার্টি থেকে কিছু সময়ের জন্য রিক্ গায়েব ছিল। সেটা লাবন্য খেয়াল করেছে তবে বিশেষ পাত্তা দেয়নি। তবে একসময় যখন হন্তদন্ত হয়ে আসা জোহেব লাবন্যকে ডাকতে আসলো, লাবন্যর মনে তখন ভীতি জন্মায়। জোহেব টেনে নিয়ে যায় লাবন্যকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটা দেখে ও পার্টির জায়গাটা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। জোহেবের হাতে টান মেরে ও জিজ্ঞেস করে,
– কি হইসে টা কি? এভাবে আমাকে টেনে টেনে কই নিয়ে যাচ্ছিস?
জোহেব হাপায়। ফিরে তাকাতেই লাবন্য দেখতে পায় ওর রক্তবর্ণ চোখ,
– সর্বনাশ হইসে। শৈলী ঘর থেকে পালিয়েছে। অথবা কেউ ওকে উদ্ধার করেছে। রিক্ ভীষণ রকম ক্ষেপে আছে এই মুহূর্তে। আমাদের সবাইকে রুমে ডাকসে।
লাবন্যর গলা শুকাতে এক মুহূর্তও সময় নেয় না। রিকের রাগ কতোটা ভয়ংকর এটা ওর স্পষ্ট জানা। এই অবস্থায় ওর সম্মুখীনে যাওয়া বাঘের মুখে হাত ঢোকানোর ন্যয়। তারপরও লাবন্য জানে যে ওকে যেতেই হবে নয়তো এখন তো জোহেব এসেছে, পরে খোদ রিক আসলে….আর চিন্তা করতে পারে না লাবন্য। জোহেবের সাথে জলদি পা চালায়।
রিকের রুমে ঢোকার আগেই জোরালো চিৎকারে বুক কাঁপে লাবন্যের। ও ঢুকতেই রিক ঘুরে তাকায়, এর পর তেড়ে আসে ওর দিকে,
– এই লাবন্য, তুই খুলে দিসিলি দরজা তাই না? তুই ঐ খা*কি কে রিলিস করসোশ তাই না? খুব তো তখন দরজা খোলার জন্য রিকুয়েস্ট করছিলি। আমার অগোচরে এই কাজ করার সাহস কে দিল তোরে?
লাবন্য পুরাই হতভম্ব,
– আমি? আমি কেন খুলতে যাব রিক? আমার কোন ঠ্যাকা পরসে? আমি তো সবার সাথে পার্টিতেই ছিলাম। জিজ্ঞেস কর্ অন্যদের।
তখন ওদেরই গ্রুপের রাতুল নামের এক ছেলে বলে ওঠে,
– হ্যা রিক্। আমি লাবন্যকে পার্টিতেই দেখসি। ও এদিকে আসে নাই।
লাবন্য কান্নায় ভেঙে পরে। রিক চরম বিরক্তি নিয়ে অন্যপাশ ফেরে। মাথায় ঘুরছে নানা প্রশ্ন। লাবন্য করেনাই, ওর বন্ধুগুলো তো ওর সাথেই ছিল, ওরা এই কাজ করার প্রশ্নই আসে না। তাহলে দরজাটা খুলে দিল কে?
রিক দরজা চেক করেছে, কোনো ভাঙচুর হয়নি তার মানে ভেতর থেকে শৈলী একা খোলেনি, বাইরে থেকেই কেউ একজন সাহায্য করেছে ওকে। কিন্তু কে?
রিক এবার সবার দিকে ফেরে,
-সবাই কান খুইলে শোন। আজকের ঘটনা কোনোভাবেও যেন বাইরে না যায়। লাবন্য ছাড়া শৈলী আমাদের আর কাউকেই দেখে নাই। তাই আমাদের অযথা ফ্যাসাদে পড়ার দরকার নাই। শৈলীকে দেখলে কেউ কোনো এক্সপ্রেশন দিবি না, যাতে ও কিছু বুইঝা ফেলায়।
এবার রিক শুধু লাবন্যর দিকে দৃষ্টি স্থির করে,
– আর তুই। তোকে শৈলী নিশ্চিত কিছুতো জিজ্ঞেস করবেই। উত্তরে ওকে একটা কিছু বুঝায়ে দিবি এমন ভাবে যেন ও কোনোক্রমেই বুঝতে না পারে যে ওকে ট্র্যাপ করা হইসিলো। যদি ও এইটা বুঝে যায় আমার জন্য, আমার জন্য বিরাট ক্ষতি হবে। তাই তোকে যেভাবেই হোক, ওকে কনভিন্স করতে হবে। বুঝছিস?
লাবন্য মনে মনে গালি দেয় রিক্ কে। ব্যাটা আস্ত একটা কাপুরুষ। উদ্দ্যেশ্য হাসিল হয়ে যাওয়ার পর শয়*তানটা গা ঢাকা দিতে চাচ্ছে। আর বলির বাকরা বানাতে চাচ্ছে লাবন্যকে। ধুর! এই ফ্যাসাদে পরাই ঠিক হয় নাই।
– কি হলো? কথা কানে যায় নাই?
ঘাবড়ে কেঁপে উঠে লাবন্য। মুখ কালো করেই উপর নিচ মাথা নাড়লো। সে শৈলীর কাছে কখনোই ধরা দিবে না।
এরই প্রেক্ষিতে লাবন্য এখনো লুকানো। মূলত শৈলীকেই এভোয়েড করতে চাচ্ছে ও। এতোক্ষণ মেয়েটাকে দেখতে না পেয়ে একটু স্বস্তিতে ছিল, কিন্তু এই মুহূর্ত ওকে চোখে পরলো লাবন্যর। সাথে সাথেই খাবার নিয়ে ও রুম থেকে সরে গেল।
…………………
প্রিতি কেয়াকে পাওয়ার পরও শৈলীর দুই নয়নের চঞ্চলতা একটুও কমেনি। তারা তো শৈলীর অজান্তেই অন্য কারোও অপেক্ষায় মত্ত। শৈলীর এই একটু পর পর এদিক ওদিক তাকানো কেয়ার চোখে পরে। দুষ্টুমির ছলে কনুই দিয়ে আস্তে গুতা মারে ও শৈলীর কোমরে,
– কাকে খুজ্ছিস রে শৈলী? তখন থেকেই দেখছি এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস। স্পেশাল কেউ মনে ধরেছে নাকি এখানে?
শৈলী হুট করে কেশে উঠলো। চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাবার জোগাড়,
-কি বলিস আবল তাবল? এমন কিছু না।
– এমন কিছুই তো মনে হচ্ছে। নাহলে আমার একটু দুষ্টামিতে তুই এরকম ভড়কালি কেন? নিশ্চয়ই তোর কোন পছন্দ আছে এখানে।
প্রিতি একটা খাবার নিতে একটু দূরে সরেছিল। কেয়া আর শৈলীর সব কথা না শুনতে পারলেও শেষ কথাটা শুনেই উত্তেজিত হয়ে উঠলো,
-কার পছন্দ আছে? শৈলীর? কৈ কৈ? কে?
কেয়া প্রিতির কাধে হাত দেয়,
– সেটাই তো বের করতে হবে দোস্ত। এই শৈলী বল না, কাকে পছন্দ হইসে তোর? আমাদের ব্যাচের কেউ নাকি কোন সিনিয়র ভাইয়া? পিয়াল চেনে? ওকে বলবো খোজ নিতে?
শৈলী কেয়া আর প্রিতির কথায় অতিষ্ট হয়ে তাকায়,
– তোদের কি আর কোনো কাজ নেই? বলছি না এরকম কেউ নে….
ঠিক তখনই শৈলীর চোখ পরে সদর দরজার দিকে। ওর নয়ন জোড়া হঠাৎই শান্ত হয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে দৃষ্টির সীমানায় দেখতে পেয়ে।
চলবে…….