#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২৪
ক্যাম্পাসে পৌছতে দুপুরের কাছাকাছি সময় হয়ে গেল। আসলে শিডিউল অনুযায়ী ১১ থেকে সাড়ে ১১ টার মাঝেই ওদের পৌছানোর কথা ছিল। কিন্তু ঢাকার ট্রাফিক তো মারহাবা! তাকে বিট করা সত্যি মুশকিল।
বাস থেকে নেমেই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের লাগেজ কালেক্ট করে যার যার পথে রওনা দিল। আজ ডিপার্টমেন্টের ক্লাস অফ থাকায় আর দুপুর গড়িয়ে যাওয়াতে খিদার জ্বালায় মোটামোটি সবাই দ্রুত ক্যাম্পাস ছাড়লো।
শৈলীও বান্ধবীদের বিদায় জানিয়ে নিজের লাগেজ উঠিয়ে রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে। এতো স্টুডেন্টস হওয়াতে রিকশার সংকট কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা দিল। শৈলী দাড়িয়ে না থেকে হেটে চললো কিছু দূর। ভার্সিটির গলি পার হতেই একটা রিকশার দেখা মিললো। নিয়ে নিল ও সেটা। তবে কিছুদূর যেতেই একটা গাড়ি এসে থেমে গেল রিকশাটার সামনে। হোচট্ খেয়েই থেমে গেলেন রিকশা চালক।
প্রথমে কপালে ভাজ পরলেও পরক্ষণেই গাড়িটা চিনতে পারলো শৈলী। আর ড্রাইভিং সিট থেকে মানুষটা বের হতে তো সব পরিষ্কার হয়েই গেল। মিহরান নেমেই শৈলীর সামনে এসে দাড়ায়,
– গাড়িতে উঠুন।
-কিন্তু স্যা….
মিহরানের হঠাৎ চোখে রাগ দেখতে পেয়ে কথাটা গিলে ফেললো ও। ততক্ষণে মিহরান রিকশা চালককে ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছে। শৈলী কোনো বাধা দেওয়ার সুযোগই পেল না। তার আগেই ওর লাগেজ মিহরানের হাতে চলে গিয়েছে। অগত্যা ওকে নামতেই হলো। মিহরান লাগেজ ডিকিতে ঢুকিয়ে ওকে ইশারা করলো গাড়িতে ওঠার। আর কোনো উপায় না দেখে শৈলী গাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।
গাড়ি স্টার্ট দিতেই মিহরানের প্রশ্ন শৈলীর কানে আসে,
– আমার সাথে না দেখা করেই বের হয়ে গেলেন কেন শৈলী? জানেন আমি কতো খুজেছি আপনাকে?
জ্বীভ কামড়ায় শৈলী। আসলেই ও মিহরানের সাথে দেখা করার কথা একদম ভুলে গিয়েছিল।
– সরি। আসলে তাড়াহুড়োর মাঝে…ভুলে গিয়েছিলাম।
– আমাকেই ভুলে গেলেন? হায় রে কপাল আমার!
শৈলী চকিতে পাশ ফেরে,
– মানে বুঝলাম না,
– না বলছি আর কি। আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার মনে হচ্ছে।
-কেন?
– শুধু ফ্যাকাল্টি থাকলে বুঝতাম ভুলে যাওয়ার বিষয়টা, তবে এখন….
ক্ষনিকের জন্য শেষ শব্দটি আউড়াতে গিয়ে শৈলীর দিকে চোখ রাখে মিহরান। দুষ্টমি ভরা চাহনি দেখে ঝট করে আরেক পাশে দৃষ্টি সরায় শৈলী। মিহরানের ইঙ্গিত বোঝা এতোটাও কঠিন ছিল না। গাল গুলো নিমিষেই ওর লাল টসটসে হয়ে উঠলো। এই মানুষটা কাল থেকে যা শুরু করেছে না…
ওদিকে মিহরানের ওষ্টে ফোটে নিঃশব্দ হাসি। শৈলীকে এভাবে লজ্জায় ফেলতে আগেও ভালো লাগতো ওর, তবে এখনের অনুভূতিটা সম্পূর্ণই আলাদা। এখন ও জানে এই লাজের পেছনের কারণ শুধুই ও, আর কেউ না।
নিজেদের বাসার দিকের রাস্তাটায় গাড়ি না ঢুকে যখন পাশ কাটিয়ে চলে গেল তখন শৈলী আবার ফেরে মিহরানের দিকে,
– বাসা তো পেছনে…..আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– লাঞ্চ করতে।
– কিন্তু বাসায় তো বলা হয়নি।
– তো এখন বলে দিন।
দমে যায় শৈলী। ঠোট টিপে একটু থামে। আবার বলে,
– আজ সকালে কোথায় গিয়েছিলেন?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে মিহরান অবাক হয়,
-হঠাৎ এই প্রশ্ন?
– এমনিতেই।
– কেন? টেনশন হচ্ছিলো আমার জন্য নাকি কৌতুহল?
– কোনটাই না…বললাম তো এমনিতেই।
মিহরান এবার একটু শব্দ করেই হাসে। শৈলী এর আগে এই হাসি মিহরানকে ওর বন্ধুদের সাথে হাসতে দেখেছে। অসম্ভব নজরকাড়া একটা দৃশ্য এটা যেটার থেকে চোখের পলক ফেলাতে পারে না শৈলী।
একটু পর মিহরান শান্ত হয়,
-একটা কাজে গিয়েছিলাম।
শৈলী এবার চোখ সরায়। নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। দৃষ্টি সামনে। কোথায় যেন কিঞ্চিত অভিমান হয়। এতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলে শেষে কিনা উত্তর আসে ‘একটা কাজে গিয়েছিলাম’, হূহ!
এরই মাঝে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামায় মিহরান। শৈলীকে নামতে বলে নিজেও নামে। গাড়ি লক্ করে দুজনেই রেস্টুরেন্টে ঢোকে। বসে একটা কোণার টেবিলে।
ওয়েটার আসলে দুজনেই নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার দিয়ে দেয়। এরপর কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে টেবিলে। এক সময় শৈলী মিহরানের গম্ভীর আওয়াজ শুনতে পায়,
– শৈলী, আপনাকে গতকাল সন্ধ্যার বিষয়গুলো নিয়ে কিছু প্রশ্ন করতে পারি? আই মিন আর ইউ ওকে টু ডিসকাস এবাউট দেম নাও।
শৈলী টান টান হয়ে বসে। এই সময়ের অপেক্ষায় ছিল ও,
– আমি গতকালই আপনার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আপনি জিজ্ঞেস করুন, আমি সব কিছু বলতে পারবো।
মুচকি হেসে মিহরান প্রশ্ন তোলে,
-আপনি তো আরও তিনজন বান্ধবীর সাথে বাইরে গিয়েছিলেন? ছেলেদের রেস্টহাউসে একা আটকা পরলেন কিভাবে?
-ভুল বললেন। বান্ধবী ওখানে আমার ছিল দুইজন। আরেকজন তো ছিল এই সব গন্ডগোলের মূল হোতা। তবে সেও হতে পারে আরও একজনের হাতের পুতুল।
সম্পূর্ণ গম্ভীরতা ছেয়ে গেল মিহরানের মুখে,
– মানে কি বোঝাতে চাচ্ছেন? আচ্ছা এক কাজ করুন। পুরো ঘটনাটা আমাকে বলুন। কি হয়ছিল কাল আপনার সাথে? কোনো কিছু বাদ দিবেন না।
শৈলী একটা গভীর শ্বাস নিয়ে শুরু করে। লাবন্যর রুমে এসে পার্টির জন্য ওদেরকে বের করা থেকে নিয়ে মিহরানের ওকে সেই বিভীষিকাময় রুম থেকে উদ্ধার করা পর্যন্ত সব বলে। কিচ্ছু ছাড়ে না। তবে রুমের ঘটনাটা বলতে গিয়ে বার বার কেঁপে ওঠে ও। চোখের কার্নিশে পানির আনাগোনা দেখা যায়। শক্ত চোয়ালে মিহরান সব শোনে। শৈলীর অভিব্যক্তি দেখে লাবন্য নামের মেয়েটার ওপর ওর ক্ষোভ যেন বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
একসময় শৈলীর বৃত্তান্ত শেষ হয়। ক্লান্ত নজরে মাথায় ওঠায় ও,
– আমার জানা নেই, আমাকে এভাবে বন্দি করার পেছনে কি কারণ ছিল। কাল আপনি যদি ঠিক সময় এসে আমাকে উদ্ধার না করতেন, আমি জানি না আমার সাথে পরবর্তিতে কি হতো।
বলেই শৈলী কান্নায় ভেঙে পরে। মিহরানের বুক মুচড়ে ওঠে। মেয়েটাকে ইচ্ছা করে বুকের মাঝে আগলে ধরতে, ওর কান্না থামাতে। কিন্তু সেটার পারমিশন হয়তো এখনো ওর হয়নি। বক্স থেকে টিশ্যু এগিয়ে দিল ও। নিঃশব্দে সেটা গ্রহন করে শৈলী।
ততক্ষণে খাবার চলে আসে দেখে ওরা কথা এখানেই থামিয়ে দেয়। চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দেয় দুজন। আর বিশেষ কথা হয় না। আসলে উত্তেজিত শৈলীকে একটু শান্ত করতেই এ কাজ করে মিহরান।
বিল মিটিয়ে বের হয়ে যায় ওরা। যেহেতু বেশ দেরী হয়ে গিয়েছে, আর যাত্রার ক্লান্তিও আছে, তাই মিহরান সোজা বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘোরালো। দশ বারো মিনিটের মধ্যেই নিজেদের ফ্ল্যাটের ড্রাইভওয়ে ধরে লিফ্টের কাছে এসে গাড়ি থামালো মিহরান। এর মাঝে আর কোনো কথাই হয়নি দুজনার, তবে শৈলী অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।
গাড়ি পুরো থেমে যাওয়ায়, শৈলী দরজার হাতলে হাত দিল। খুলতে যাবে তখনই পাশ থেকে মিহরান বলে ওঠে,
– তাহলে সন্ধ্যায় পাচ্ছি তো?
শৈলীর ভ্রুজোড়া কুচকে আসে। পাশ ফিরে জিজ্ঞেস করে,
– কি?
– আমার কফি।
শৈলী টান টান হয়ে বসে। লজ্জায় নিমজ্জিত হয় মুখ। কফির কথা ভুলেই বসেছিল ও। তাই বলে এভাবে মনে করিয়ে দেওয়া লাগবে?
– এভাবে ভুলে গেলেন আপনি শৈলী? ভেরী পুয়র শো।
কন্ঠের দুষ্টুমি ধরতে শৈলীর একটুও বেগ পেতে হলো না। কপট রাগ দেখাতে গিয়েও লাজুক হাসি হেসে ফেললো।
– কয়টার সময় খেতে চান?
– যখন আনতে পারবেন। আজ রুমেই আছি।
-আচ্ছা। এখন আসি।
– একসাথেই উঠি। একটু ওয়েট করুন গাড়িটা পার্ক করে আসছি।
শৈলী নেমে দাড়াতেই মিহরান গাড়ি নিয়ে চলে যায়। পাঁচ মিনিটের মাঝেই নিজের আর শৈলীর লাগেজ নিয়ে ফেরত আসে। শৈলীর মাথায় হাত। আজ কি হয়েছে ওর? লাগেজের কথা ভুলে গেল কিভাবে? সবই দেখি ভুলে যাচ্ছে?
শৈলী তাড়াতাড়ি এগিয়ে নিজের ট্রলির দিকে ঝুকে হাত বাড়ায়,
– সরি সরি, আপনার খামখা কষ্ট হলো।
তবে ওর হাত ট্রলিতে পরার আগেই মিহরান সেটা সরিয়ে নেয় পেছনে,
-আপনার নেওয়া লাগবে না। সামনে চলুন।
-কিন্তু…আপনি কেন ক্যারি করবেন? আপনার কষ্ট হয়ে যাবে।
– এখন থেকে তো সারাজীবন আমাকেই ক্যারি করতে হবে, তাই এখন থেকেই প্র্যাক্টিস করে নিচ্ছি।
তড়াক করে সোজা হয় শৈলী। চোখের মণিতে বিস্ময় ভর করে। মানুষটা পরোতে পরোতে ওকে জ্বালাচ্ছে, লজ্জায় ফেলছে। এর কোনো মানে হয়?
মিহরান যেন একদম নরমাল কোনো কথা বলেছে, এই ভাব নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। শৈলীও কপট রাগ নিয়ে পেছন ধরে ওর। প্রতিজ্ঞা করে, লিফ্টে আর কোনো কথা বলবে না। নয়তো আবার কি না কি বলে ফেলে এই লাগামহীন পুরুষ, লিফ্টে তো মুখ লুকানোরও জায়গা নেই।
আসলেই শৈলী লিফ্টে কোনো কথাই বললো না। শুধু চুপ হয়ে মাথা নিচু করে থাকলো। মিহরানও আর ঘাটালো না ওকে। যখন লিফ্ট এসে শৈলীদের ফ্লোরে থামলো তখন আল্তো হাতে শৈলীর লাগেজ বাড়িয়ে দিল ও। শৈলীও একটু মাথা ঝুকিয়ে ইশারায় ধন্যবাদ বুঝিয়ে বের হয়ে গেল। কিন্তু যাওয়ার সময় মিহরানের শেষ বাক্য শুনতে ভুল হলো না,
-কফির অপেক্ষায় থাকলাম।
দুজনের মাঝে লিফ্ট বন্ধ হয়ে গেল। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে শৈলী। আস্তো দুষ্টু মানুষ একটা।
……………………….
মালিহা অনেক্ষণ ধরেই রায়হানের ফোন ব্যস্ত পাচ্ছে। বিরক্ত লেগে যাচ্ছে ওর। সেই কখন ক্লাস শেষ হয়েছে কিন্তু ও হ্যাবলাকান্তের মতন দাড়িয়ে আছে। আজ আবার ভাইয়া ফিরবে, বাসায়ও যাওয়া দরকার তাড়াতাড়ি। কিন্তু কিভাবে? এই ছেলেটার সাথে দেখা করার কথা। গতকাল নিজেই মালিহাকে রাজি করিয়েছে দেখা করার জন্য, আর এখন সেই গায়েব। সহ্য হয় এসব?
তখনই মালিহার হাত কেঁপে ফোন বাজলো। বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ও,
– কি সমস্যা তোমার? ফোন এতো ব্যস্ত থাকে কেন? কার সাথে কথা বলছিলা?
ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ এসে বাড়ি খায় কানে,
– চিল চিল ডার্লিং। এতো রাগ করলে কেমনে হবে বলো তো?
– তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দাওনি রায়হান। কার সাথে এমন কথা বলছিলা যে এতোক্ষণ ফোন ওয়েটিং এ ছিল?
– আরে আমার কলেজের এক বন্ধু ফোন দিয়েছিল। তার সাথেই কথা বলছিলাম অনেকদিন পরে ফোন দিয়েছে তো তাই সময় লেগেছে একটু। আচ্ছা ওসব বাদ দাও। বলো কোথায় তুমি? ক্লাস শেষ?
– সময় খেয়াল করেছো? ক্লাস কি এখন শেষ হয়েছে? সেই কখন থেকে দাড়ানো আমি। তোমার সাথে দেখা করবো বলে আজ গাড়িও আনিনি। আরেকটু সময় গেলে আমি সিএনজি বা উবার ডেকে চলে যেতাম।
– আচ্ছা বাবা, সরি তো। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি রাস্তাতেই, দশ মিনিট লাগবে।
মালিহা আর কথা বাড়ায় না। ফোনটা রেখে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলে যায়।
…………………………
শৈলী বাসায় ঢুকতেই নিপুণ আর রেহানা ওকে নিয়ে হই হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন। শৈলী ফোনে বাবার সাথেও কথা বলে নেয়। আধা ঘন্টা ভরে মা বোনের সাথে আড্ডা দিয়ে নিজের রুমে যাওয়ার সুযোগ পায় শৈলী। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে রুমে এসে দেখে নিপুণ খাটে বসা। শৈলী দুষ্টুমির ছলে বলে,
-কি ম্যাডাম? এক রাত ছিলাম না, নিশ্চয়ই মজা করে বিছানা জুড়ে ঘুমিয়েছেন?
নিপুণও বোনের দুষ্টুমিতে তাল দেয়,
-একদম মনের কথাটা বলসো আপি। কালকের রাত আমি ভুলবো না। এতো শান্তির ঘুম এই জীবনে আগে ঘুমাইনি। ভাবতেসি আম্মু আব্বুকে বলবো তাড়াতাড়ি তোমার বিয়েটা দিয়ে দিতে। তুমি জামাই বাড়ি চলে গেলে এই রুম পার্মানেন্টলি আমার।
বিয়ের কথায় শৈলীর সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে। মুখটা ফ্যাকাশে হয়। আব্বু আম্মু নিপুণের কথা চিন্তা করেই হয় এরকম। ওরা যখন সত্যটা জানবে কিভাবে রিয়্যাক্ট করবে? কতোটা দুঃখ পাবে যখন জানবে তাদের বড়ো মেয়ে, বড়ো বোন কাউকে কিছু না জানিয়ে বিয়ের পিড়িতে বসেছে। কেউ কি তখন ওর আর মিহরানের গত রাতের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে? কিসের ওপর দিয়ে দুজনের জান ও ইজ্জত বেঁচেছে তা বুঝবে? গত রাত তো ওরও ভোলার মতন নয়।
– এই আপি? কি হলো তোমার?
নিপুণের ঝাকুনিতে শৈলী বাস্তবে ফিরে,
-হমম? না কিছু হয়নি। আসলে টায়ার্ড লাগছে রে। একটু শুবো। সন্ধ্যার দিকে আমাকে ডেকে দিস।
নিপুণ ব্যস্ত হয়ে পরে। মুখে মুখে যতই মজা আর দুষ্টামি করুক না কেন, ওর বোন ওর জান। শৈলীর একটু কিছু সমস্যা হলেই তাই এই মেয়ে ঘাবড়ে যায়।
– তুমি এখনই শুয়ে পরো। আমি পর্দা টেনে রুম অন্ধকার করে দিচ্ছি।
– হ্যা দে। তবে সন্ধ্যায় অবশ্যই ডেকে দিস?
– কি দরকার সন্ধ্যায় ডাকার? তুমি ঘুমাও না শান্তি মতন।
– না রে। একটু কাজ আছে। তুই ডেকে দিস।
– আচ্ছা ডেকে দিব। এখন ঘুমাও।
নিপুণ রুম ঠিক করে, দরজা টেনে দিয়ে চলে গেল। শৈলীও ও শুয়ে পরলো। কিন্তু সন্ধ্যার এ্যালার্ম দিতে ভুললো না। নিপুণের ভরসা নেই। ও নাও ডাকতে পারে। আর ওদিকে আরেকজন যে ওপরে ওর অপেক্ষায় বসে থাকবে? সেটার কি?
……………………
মিহরান নিজের রুমে ঢুকে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে আবার নিচে নামলো। মা আর ঝুমাকে ছাড়া আর কারও দেখা পেল না। মাহিরা, মেহরাবের সাথে কথা হয়েছে, ক্লাসে দুজন। মালিহাকে অবশ্য ফোনে পায়নি, হয়তো রাস্তায়। বড় ভাই আর বাবার আসতে তো সন্ধ্যাই হয়।
লাঞ্চ করে আসলেও মায়ের জোড়াজোড়িতে একটু পাতে খাবার নিতে হলো মিহরানের। পাশে আফিয়া বসলেন,
– তো আব্বু, সব ঠিকঠাক ছিল পিকনিকে? কেমন মজা করলি?
মিহরান থমকে যায়। ঠিকঠাক আর কি থাকবে? যা করে এসেছে পিকনিকে তা আর বলতে!
– আমি ফ্যাকাল্টি আম্মু, পিকনিক স্টুডেন্টদের জন্য ছিল। ওরা মজা করেছে।
– ওওও। আচ্ছা শোন একটা প্ল্যান করেছি।
মিহরান পাশ ফিরে,
– কিসের প্ল্যান?
-ঝুমার সাদের জন্য একটা প্রোগ্রাম করবো ভাবছি।
মিহরান বোঝে না,
– সাদ কি জিনিস?
আফিয়া বেগম হাসেন,
– আরে এটা এমনেই একটা প্রোগ্রাম। গর্ভবতী মায়ের সাত মাস পূর্ণের সময় করে এই প্রোগ্রাম। যদিও এটা ইসলামে নেই এবং পালন করাও উচিত না। আমি অবশ্য সাদের আচারগুলো করতে চাই না। শুধু একটা গেট টুগেদারের মতন করতে চাই। পরিবারের প্রথম বাচ্চা, একটু সেলিব্রেশন না করলে হয় বল্? তুইও এসেছিস এতোদিন পর। সব মিলিয়েই আরকি।
-হমম। তো করো? নিষেধ করেছে কে?
– করবো তো। কিন্তু এখানে ব্যাপার আছে। করলে প্রোগ্রামটা একটু বড় করেই করতে চাচ্ছি। ঝুমার পরিবার থাকে খুলনায়, তারা আসবেন। আবার আমাদেরও ঢাকার বাইরের আত্মীয়দের দাওয়াত দিতে হবে। অনেকেই তোর কথা জিজ্ঞেস করে, দেখা করতে চায়। এখন সমস্যা হলো, এক রাত হলেও তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বড়দেরকে তো নিজ নিজ রুম দিতে হবে। এতোগুলো রুম পাবো কই?
– তুমি টেনশন করো না। একটা না একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আগে ঝুমাকে নিয়ে তোমার প্ল্যান ঠিক করো। তারপর আমাদের বলো কি করা লাগবে। আমি উঠি এখন।
– কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
– এই একটু নিচে থেকে আসছি। স্টেশনারির দোকানে যাব।
– আচ্ছা। বাসায় ফিরে রেস্ট করিস। অনেক কষ্ট হয়েছে তোর এই দুদিন।
মিহরান মায়ের দিকে মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় বাসা থেকে।
চলবে।