#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৩১
খেলনার দোকানে ঢুকে মাহি পপ্ ইটের নানা শেইপ দেখে যেটা সবচাইতে ভালো লেগেছে, সেটা নিয়েছে। শৈলী ওর দুই তিন ধাপ পেছনে দাড়ানো। বান্ধবীর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ও। ঠিক তখনই দোকানটায় প্রবেশ করে মিহরান। ছোট্ট দোকান, তাতে দোকানি দুজন। ক্রেতা হিসেবে ঢুকেছে মাহিরা আর শৈলী, এখন আবার মিহরানও যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দোকান একদম জ্যামপ্যাক্ড হয়ে গিয়েছে। মাহিরা টাকা পরিষোধ করতে কাউন্টারে গিয়েছে বলে মিহরান শৈলীর পাশেই দাড়ালো।
এমন ভাবে মাথা নোয়ালো যেন সামনে থেকে কেউ না বোঝে। ঠোটটা নিয়ে গেল শৈলীর কানের একটু ওপরে।
– আপনার খেলনা দিয়ে খেলার দিন তো শেষ। তাহলে এসব দেখছেন কার জন্য?
শৈলী চমকে পেছায়। একটা বারবি মেকআপ সেট দেখে ওর এতো ভালো লাগছিল যে পুরো মনোযোগ ওখানে দেয়ায় মিহরানকে খেয়াল করে নি। আর এই মানব তো এই মানবই! সোজা বাংলায় কথা মুখ দিয়ে তার বেরই হয় না। তো বেচারি কি করবে? চমকাবেই তো।
শৈলী ছোট্ট করে একবার মাহিরাকে দেখে আবার কপট রাগ নিয়ে চায় মিহরানের দিকে, ফিসফিস করে বলে,
– আমি এমনেই এই মেকআপ সেট টা দেখছিলাম। নিজের খেলার জন্য না।
– আপনার জন্য দেখছেন না, জানিতো সেটা। এবং কার খেলার জন্য দেখছেন তাও জানি।
-মানে? কার জন্য দেখবো আবার?
মিহরান কন্ঠ খাদে নামায়,
– আমাদের ছোট্ট শৈলীর জন্য।
নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হলো শৈলীর। এক মুহূর্তের জন্য থরথর করে কেঁপে উঠলো। গাল দুটো গরম হয়ে উঠলো ততক্ষণাৎ। ওড়নার আঁচল মুঠিবদ্ধ হলো। পায়ের আঙ্গুলগুলো সংকীর্ণ হলো স্যান্ডেলের সাথে। নিজের ভারসম্য ঠিক রাখাটা বিপদজনক হয়ে দাড়ালো ওর জন্য ।ভীষন… ভীষন রকম লজ্জা পেয়েছে সে। যেটাকে ভয়াবহ লজ্জা বলে।
মিহরান নিঃশব্দে বাঁকা হাসে। শৈলীর নোয়ানো চেহারাটা পেছন থেকে না দেখতে পেলেও ওর অভিব্যক্তি স্পষ্ট বোঝে। এখনই বোধহয় এই দুষ্টুমি মেয়েটার সাথে করা ঠিক হয়নি। ছোট মানুষ, নিতে পারছে না। এবং এর থেকে আরও দুষ্টুমি করলে ও যে অদূরেই জ্ঞান হারাতে পারে তা বুঝেই ওখান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মিহরান।
মিহরানকে সরে যেতে দেখেই শৈলী আর সেই দোকানে থাকে না। দুরন্ত পায়ে বের হয়ে মালিহার পাশে যেয়ে চুপটি মেরে দাড়ায়। মালিহা ওর মুখের চঞ্চলতা খেয়াল না করলেও, তুরিনের চোখ তা এড়ায় না। ভ্রু কুচকে ফেলে ও,
– এই মেয়ের আবার কি হলো? মিহরান দোকানে ঢুকতে না ঢুকতেই ও দৌড়ে বের হলো, মনে হচ্ছে ভূত দেখেছে। যত্তসব ঢং!
কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল মাহিরা আর মিহরানকে বের হতে। সোজা মালিহার কাছে এসে শৈলী কে কৌতূহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো মাহিরা,
– তুই বের হয়ে আসলি কখন? আমি পেছনে ঘুরে তোর জায়গায় ভাইয়াকে দেখে অবাক।
শৈলী আড়চোখে মিহরানের বাঁকা হাসি দেখে মাহিরার দিকে তাকায়,
– ভেতরে বেশ গরম ছিল, তাই চলে আসছি।
মাহিরা বুঝে মাথা নাড়ে। তখনই মালিহা তাড়া দেয়,
– এই মাহি, তোর পপ্ ইট কেনা হইসে না?
– হ্যা, ডান।
– তাহলে চল্ শপিং শুরু করি।
সবাই রাজি হয়ে আগাতে গেলেও মালিহাই আবার হোচট দিয়ে দাড়ালো। মিহরানের দিকে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– ভাইয়া, তোমার না আমাদেরকে ড্রপ করে চলে যাওয়ার কথা? তুমি কি থাকবা?
তুরিনের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো মালিহার গলাটা টিপে ধরতে। আরে মানুষটা পাশে আছে, থাকতে দে। তোর এতো তাকে তাড়ানোর কি দরকার?
ততক্ষণে মিহরান উত্তর দিয়ে দিয়েছে,
-তন্ময় আসেনি এখনো। আর আমার নিজেরও কিছু শপিং আছে।
শুনে মাথা ঝাকায় মালিহা, কিন্তু মনে শান্তি বয়ে যায় তুরিনের। উফফ! শান্তি। আরও কিছুক্ষণ তাকে দেখার সুযোগ পাওয়া গেল।
শৈলী এসব শুনে কিছুই বলে না। ও মাহিরার কথা শোনার ব্যস্ততা দেখায়, তবে কেউ বুঝতে পারে না, ওর মনে দোলা দেওয়া ভালো লাগার আভাসটাকে।
মিহরান থেকে যাওয়ায় ভীষণ খুশি ও।
……………….
প্রথমে ঝুমার জন্য অর্ডার করা গহনাগুলো ডেলিভারি নিয়ে নেয় ওরা। তারপর যায় ড্রেসের সেকশনে। মালিহা, মাহিরা ঘুরে ঘুরে কয়েকটা সাড়ির দোকান দেখে, কিন্তু পছন্দসই জিনিস পায় না। ওদের পিছে বাকি চারজন, তন্ময়ও ইতিমধ্যে যোগ হয়েছে এই পালে, দিশেহারার মতন ওদের পিছ পিছ চলছে। একসময় আর মিহরান নিজের মেজাজ ধরে রাখতে পারে না, বোনদের দিকে কড়া চোখে তাকায়,
– তোদের সমস্যাটা কি? দুইটা ড্রেসের জন্য এতো ঘুরতে হয় নাকি?
মাহিরা করুণ চোখে তাকায়। সেই চাউনি তে বয়ফ্রেন্ডের মায়া হলেও ভাইয়ের কোনো কিছু আসে যায় না,
– ভাইয়া এরকম করো কেন? কতোদিন পর বাসায় একটা জমজমাট আয়োজন হতে যাচ্ছে, আমরা সুন্দর ভাবে তৈরী হবো না? তার জন্য আউটফিট টাও তো সেরকম জমকালো হতে হবে তাই না?
– জমকালো চাইলে, কামিজের সেকশনে ঢুকসিশ কেন? কামিজ কি জমজমাট আয়োজনে পরার জিনিস নাকি?
মালিহা, মাহিরা এবং তন্ময় চোখ বড় বড় করে তাকায় মিহরানের দিকে। শৈলী আর তুরিন যেহেতু মিহরানের চরিত্রের সাথে অত পরিচিত না, তাই ওরা চুপ থাকে। মালিহা হতবাক হয়েই সামনে চলে আসে,
– তুমি কি বললা ভাইয়া? এই সবের জ্ঞানও তোমার আছে নাকি?
মিহরান কপাল কুচকায়,
– ফালতু কথা বলিস কেন? এটার জন্য আবার আলাদা জ্ঞান লাগে নাকি? এটা তো রুচির ব্যাপার।
তন্ময় ততক্ষণে পাশ দিয়ে জাপ্টে ধরে,
– তো আমাদের রুচিশীল মিহরান সাহেবের কোনধরনের আউটফিট পার্ফেক্ট মনে হয়?
তরিৎ গতিতেই আসলো উত্তর,
– এসব ওকেশনের জন্য শাড়িই সবচাইতে বেস্ট অপশান। এবং তোরা এখন শাড়িই কিনবি, চল্।
দুই বোন হই হই করে উঠলো,
-না ভাইয়া। শাড়ি তো আমরা ছাদে যেই অনুষ্ঠান হবে সেখানে পরছিই। একই ধরনের কাপড় দুই প্রোগ্রামে পরতে চাই না।
– তাই বলে সালোয়ার কামিজ পরবি নাকি? নিজের ভাই ভাবির প্রোগ্রামে কেউ এতো সাদা মাটা জিনিস পরে? যত্তসব।
তিন ভাইবোনের যুদ্ধে বাকি তিনজন নির্বিকার, হতবাক। কি বলা উচিত এখানে? কিন্তু কিছু তো একটা করতেই হবে যাতে দুই পক্ষ মাঝ বরাবর আসতে পারে। হঠাৎ শৈলী তৎপর হলো। মালিহাদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আপু একটা কাজ করলে কেমন হয়? তোমরা শাড়ি না পরে লেহেঙ্গা অথবা শারারা পরো। অনেক এথনিক ফিউশান ওয়েরও আছে, একটু ইনডো ওয়েস্টার্ন ওগুলাও বেশ জমকালো হয়। ট্রাই করতে পারো।
শৈলীর কথায় কাজ হয়। মালিহা মাহিরার চোখে আশার প্রদীপ জ্বলে। ওদিকে মিহরানের কপালের ভাজও ঠিক হওয়ার পথে। একজন ছাড়া বাকি সবারই শৈলীর আইডিয়া ভালো লাগে।
তুরিন নিজের মেজাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। নিচে মালিহার ওপর রাগ উঠেছিল আর এখন শৈলীকে মনে হচ্ছে গালে দুইটা টপাশ টপাশ করে চড় মারতে। বাইরের একটা মেয়ে সে, এতো কথা বলে কেন? লেহেঙ্গার কথাটা তো তুরিনের মাথাতেও এসেছিল কিন্তু ও মুখ খোলার আগেই এই নাচুনি বুড়ির মুখে খৈ ফুটলো। উফফ! আর সহ্য হয় না।
তুরিন আসলে নিজের রাগের আসল কারণটা হয়তো ধরতে পারছিলো না। বা ধরতে পারলেও সেটা স্বীকার করতে চাচ্ছিলো না। ওর ভেতর থেকে ভীষণ মন খারাপ। এতোক্ষণ হয়ে গেল, মিহরানের সাথে একটা শব্দ পর্যন্ত বলতে পারে নি ও। কিভাবে বলবে? লোকটা সর্বদাই গুরুগম্ভীর হয়ে থাকে। এই পুরোটা সময় কথা বলেছে তো শুধু তার বন্ধুর সাথে, তাও তন্ময় দশটা কথা বললে তার মুখ থেকে বের হয়েছে দুইটা। এরপর তো বোনদের ধমক দিয়ে পিলেই চমকে দিল তুরিনের। এখন আর সাহসই হচ্ছে না এগোনোর।
ইতিমধ্যেই কামিজের লেভেল পার করে শাড়ির ফ্লোরে এসে পরেছে সবাই। প্রথমেই যেই বড় দোকানটা পরলো সেটাতেই ঢুকলো ওরা। শৈলী হাটতে হাটতেই ওর মোবাইলে ম্যাসেজের টোন বেজে ওঠে। মাহিরাদের সামনে এগোতে বলে ও ফোনটা বের করে লক্ খোলে। ‘মিহরান স্যার’ লেখা দেখে অবাক হয়। উনি ম্যাসেজ পাঠিয়েছেন?
শৈলীর দৃষ্টি ওপরে মিহরানকে খুজে। দেখে গভীর দুটো চোখ ওর দিকেই টিকিয়ে আছে। শৈলী সাথে সাথেই চোখ নামায়। ম্যাসেজ ওপেন করে,
– আপনি নিজের জন্যও একটা কিছু সিলেক্ট করুন। শাড়ি অথবা অন্য কিছু।
শৈলী পলক ঝাপটে আবার ম্যাসেজটা পড়ে। যখন বোঝে এটার অর্থ তখন রিপ্লাই দেয়,
– আমার লাগবে না।
মিহরান মোবাইল হাতেই নিয়ে ছিল,
-কেন লাগবে না? আমি বলছি নিতে, নেন।
– আরে আমার সত্যিই লাগবে না। অনেক আছে কাপড়। সেখান থেকেই একটা জমজমাট কিছু পরে নিব।
‘জমজমাট’ শব্দটায় একটু আলাদা করে লিখলো মজা করে শৈলী। এরপর ম্যাসেজের রিপ্লাইয়ের অপেক্ষায় রইলো, কিন্তু আর কিছুই আসলো না। একটু অবাক লাগলো শৈলীর। টেনশনও হলো, মানুষটা রাগ করলো নাকি? রাগ তো তার নাকে বসা থাকে।
ওপরে তাকিয়ে মিহরানের দিকে চেয়েই দেখলো সে তন্ময়ের সাথে গল্পে ব্যস্ত। শৈলীও আর বেশী ঘাটালো না, এমনিতেও মাহিরা ওকে ইতিমধ্যেই দুইবার ডেকে বসেছে তাই ওর কাছেও গিয়ে বসলো।
দোকানটায় শাড়ি সহ লেহেঙ্গার কালেকশনও এতো ভালো যে মালিহাদের আর অন্য কোথাও ওঠা লাগেনি। এখান থেকেই কয়েকটা ডিজাইন পছন্দ হলো ওদের। তুরিনও আগেই ভেবে রেখেছিল সেও একটা কিছু প্রোগ্রামের জন্য কিনবে। মিহরানকে ইম্প্রেস করতে হবে না? ছেলেরা যতই গুরুগম্ভীর, রগচটা হোক না কেন, সুন্দর পরিপাটি মেয়েদের থেকে নজর ফেরাতে পারে না। আর মিহরানের রুচির ব্যাপারে ও তো জানলোই তখন। শাড়ি তার পছন্দ তাই না? ঠিক আছে, তুরিন শাড়িই কিনবে।
তুরিনের কেনাকাটা করাটা মালিহা মাহিরা এক্সপেক্ট করেনি। তবে যখন শুনলো ওদের প্রোগ্রামের জন্যই কিনছে, তখন খুশি হলো। মাহিরা তাই দেখে শৈলীকেও বললো,
– শৈলী তুইও একটা শাড়ি বা লেহেঙ্গা নে।
শৈলী মুচকি হাসে,
– না রে দোস্ত, আমি নিব না কিছু।
-কেন? দেখ তুরিন আপুও নিল। নিজের বান্ধবীর ভাইয়ের প্রোগ্রাম তাতেই নিল। তুইও তো আমার বান্ধবী, আমি চাব না তোকে সবচাইতে সুন্দর লাগতে? তুই নে না।
শৈলী শান্ত চোখে ফেরে,
– দোস্ত, তুই জানিস আমি কাপড় দিয়ে সুন্দরতা যাচাই করি না। আমি যাই পরি সেটা ভালোভাবে ক্যারি করতে পারলেই আমাকে সুন্দর লাগবে বলে আমি মনে করি। আর আমার নতুন অনেক গুলো ড্রেস পরে আছে, সেগুলো থেকেই একটা পরবো।
নিজের বান্ধবীর এই সাধারণের মাঝের অসাধারণ চিন্তাটাকে গভীর ভাবে শ্রদ্ধা করে শৈলী, তাই মুচকি হেসে ও মেনে নেয়। জানে, বললেও কোনো লাভ নেই। শৈলী এমন কিছুই কিনবে না যা ওর কাছে অপচয় মনে হবে।
………..
মিহরান পাশের কাউন্টারে কনুই ঠেকিয়ে এক নজরে দেখছিল শৈলীকে। মাহিরা আর ওর মাঝের কথোপকথন সব শুনতে পেরেছে ও। ঠোট ছুয়ে এক আল্তো হাসি বের হলো ওর। নিজের স্ত্রীর এতো নির্মল চিন্তা চেতনায় রীতিমতো মুগ্ধ সে।
পাশেই দাড়ানো তন্ময় মিহরানকেই লক্ষ করছিল। ঘাড়ে হালকা এক চাপড় মেরে ওর দৃষ্টি আকর্ষণ করলো,
-কি দেখিস বন্ধু? তাও আবার এতো মনোযোগ দিয়ে?
মিহরান চোখ নামায়,
-কিছু না।
-কিছু তো অবশ্যই আছে। তোর এই চাউনি আমি সেদিন তোর বাসার ছাদের প্রোগ্রামেও দেখেছিলাম। তখনো জিজ্ঞেস করেছিলাম তুই তেমন কিছু বলিস নি। আজকে সেইদিনের থেকেও বেশী সন্দেহ হচ্ছে আমার। বল্ কি ঘটনা? এই মেয়েদের শপিং এ এনে ওদের পিছ পিছ ঘোরারও বা কারণ কি? তুই তো মোটেও এরকম না মিহরান। কিছু তো ঘাপলা আসে। বল্ এক্ষণ আমাকে।
মিহরান গম্ভীর দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে চায়, তারপর বোনদেরকে ডাকে,
– এই তোরা, কিনতে থাক, আমরা আসছি একটু।
বলেই তন্ময় কে নিয়ে বের হয়ে একেবারে আট তলার ফুডকোর্টে পৌছায়। সারি সারি পাতা টেবিলের একটাতে বসে, দুইটা জুস অর্ডার দিয়ে তন্ময়ের মুখোমুখি হয়,
-বল্ কি বলবি।
-আমি বলবো না, জিজ্ঞেস করবো। দেখ ভাই, সরাসরি জিজ্ঞেস করছি, তুইও একই ভাবে উত্তর দিবি।
-হমম বল্।
– আমার সন্দেহ হচ্ছে তুই তোদের প্রতিবেশী মানে শৈলীকে একটু হলেও পছন্দ করিস। আমার সন্দেহ কি সঠিক?
-হমম।
তন্ময় পুরা তাজ্জব বনে যায়। যদিও মিহরান যে একদম স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কথা বলে এটা ও জানে, তাই বলে এই উত্তর টা এভাবে আশা করে নি ও।
– আসলেই পছন্দ করিস?
– এক উত্তর কয়বার দিব? বললাম তো করি।
-ওও করে তোকে পছন্দ?
-মনে হয় করে।
তন্ময় এবার পুরাই নড়েচড়ে বসে। এরই মধ্যে জুসও চলে আসে ওদের। ভীষণ উত্তেজিত তন্ময় দাঁতের পাটি বের করে জিজ্ঞেস করে,
– তার মানে তোদের মাঝে রিলেশন হয়ে গেসে?
– বলতে পারিস।
তন্ময় লাফায়,
– কি বলিস্ মামা। তুই এতো দূর আগায় গেসিশ? তলে তলে টেম্পু চলসে এতো স্পিডে। ওয়েইট, ওয়েইট, এখন বুঝছি তোমার এখানে আসার কারণ। গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে শপিং আর ডেটিং মারতে আসছো না… হাহাহা।
বলেই তন্ময় নিজের গ্লাসে সিপ নিতে যায় তখনই ওর কানে আসে মিহরানের কথা,
– শৈলী আমার গার্লফ্রেন্ড না।
ভ্রু কুচকে তন্ময় তাকায়,
– গার্লফ্রেন্ড না?
-মহম।
– তাহলে?
– শি ইস মাই ওয়াইফ।
তুমুল বেগে তন্ময়ের গলা দিয়ে কাশি উঠলো। খক্ খক্ করতে করতে পারলে টেবিল থেকে পরে যায় ও। আশ পাশে বসা মানুষজনও ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। দোকানের কর্মচারীও টিশ্যু নিয়ে ছুটে আসলো। তবে মিহরান সেই একই ভাবে নিজের জুস পান করেই চলেছে।
তন্ময়ে স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগলো। চোখ কোটর থেকে বের করে জিজ্ঞেস করলো ও,
– শৈলী তোর স্ত্রী?
– হমম।
– ফাজলামো করিস?
-না।
– আসলেই?
-হমম।
– এটা কিভাবে সম্ভব?
এবার মিহরান তাকায় ওপরে,
– কিভাবে সম্ভব মানে?
– আমার মানে হলো, এই বিয়ে হলো কখন? কিভাবে?
এবার নড়চড়ে বসার পালা মিহরানের।
-পিকনিকের রাতে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
তন্ময় মাথা চক্কর খায়,
– দোস্ত প্লিস। এবার ক্ষ্যামা দে। এই এক দুইটা শব্দ উচ্চারণ না করে পুরো ঘটনা টা বল্। নয়তো আমি সিরিয়সলি নিজেকে নিয়ে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করাবো।
মিহরান একটা দম নেয়। তারপর সেই দিনের সব ঘটনা একে একে তন্ময়কে বিশ্লেষণ করে। বিস্ময়ে মুখ হা হতে হতে তন্ময়ের মনে হচ্ছিল ওর চোয়াল খুলে যাবে। সব শুনে কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে বসে রইলো ও কিছুক্ষণ। তারপর আস্তে ধীরে আউড়ালো,
– তোদের কাহিনি মুভিকেও হার মানাবে দোস্ত। তবে আই মাস্ট সে দ্যাট আই এ্যাম প্রাউড অফ ইউ। এতো ভয়ানক অবস্থাতেও তুই যে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পেরেছিস, তার জন্য হ্যাটস অফ টু ইউ।
তন্ময়ের হাতের তালি আর ঠোটের গর্বিত হাসি দেখে মিহরান বাঁকা হাসে। তন্ময় আবার উত্তেজিত হয়ে সামনে আগায়,
– সো ভাবিকে আমাদের সব ফ্রেন্ড দের সাথে কবে ইন্ট্রোডিউস করাবি? চল্ আমি এখনি দেখা করি।
মিহরান থামায়,
– না এখন না।
-কেন?
– মালিহা, মাহিরা এখনো জানে না এই বিষয়ে। বাসায়ও কাউকে বলিনি।
তন্ময় অবাক হয়,
– বলিস নাই কেন?
– আরে সময় পাইলাম কই? মাত্র তো এক দেড় সপ্তাহ হলো। তার মাঝে এই প্রোগ্রাম পরলো। ভাবছি প্রোগ্রাম টা শেষ হলেই বলবো। আর…তোদের সাথে এর মাঝেই একদিন আলাদা ভাবে দেখা করিয়ে দিব, চিন্তা করিস না।
তন্ময় খুশি হয়,
-গুড বন্ধু। এমনিতেও তোমার এখন ট্রিট দেওয়া ফরজ হয়ে গেসে। বিয়া টিয়া সাইরা ফেলাইসো, আমরা এখনো ব্যাচেলার। এইটা কিসু হইলো? আচ্ছা…..ভালো কথা মাম্মা, আসল কথাই তো জিজ্ঞেস করলাম না।
মিহরানের ভ্রু জোড়া কুচকে আসে,
– আর কি কথা?
তন্ময় কাছে এসে কানের কাছে বলে,
-শুধু কি কবুল টাই বলসো, নাকি গাড়ি সামনে আগাইসে? কোনটা?
তন্ময়ের দুষ্টুমি ঝট্ করে ধরে ফেলে মিহরান,
– এক থাবড় দিব, সব দাঁত বাইর হয়ে যাবে। ফাজিল! চল উঠি। ওরা নিচে ওয়েট করছে।
তন্ময়ের ঠোটের দৈর্ঘ্য এপার ওপার ছড়ায়। বন্ধু যে রাগের পেছনে লজ্জা পেয়েছে বুঝতে বাকি নেই। কাধ চাপড়ে সামনে আগায় মিহরানকে নিয়ে,
– গাড়ির স্পিডের খবর কিন্তু চাই মামা। হা হা হা।
মিহরান নিজের ভেতর হাসে,
– গাড়ি চলছে আস্তে ধীরে। চলুক না। এতো তাড়া কিসের?
চলবে