#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৩৩
মিহরানের আঙ্গুল নিজের থুতনি থেকে সরিয়ে লজ্জায় আবার ওরই বুকে মুখ লুকায় শৈলী। এই দেখে শান্ত হাসি ছোটে মিহরানের। এক হাতে আদুরে ছোয়ায় আগলে নেয় নিজের স্ত্রীকে। শৈলী ওর কাধের পাশে মিহরানের হাতের পরশ পেয়ে শান্ত হয়। আগে ঠিক এই পরশেই চমকে উঠতো ও, এখন শান্ত হচ্ছে। আচ্ছা এটা কিসের লক্ষণ? ও কি মিহরানকে আসলেই ওর সন্নিকটে আসার পথ খুলে দিচ্ছে?
– কি ভাবছেন?
শৈলী চোখ তোলে শুধু, দুষ্টু হাসি মেখে বলে,
– ভাবছি আপনি কতো বড় একজন মুখশধারি মানুষ।
মিহরানের ভ্রু জোড়া তখনই কুঞ্চিত হয়,
– এটা কেন মনে হলো আপনার?
– তো হবে না? সবার সাথে আপনি এক রকম, গুরুগম্ভির মিহরান হাসান, যে স্বল্পভাষী, রগচটা, ভারিক্কি ভাব নিয়ে চলা একজন জলজ্যান্ত রোবট। আর আমার সামনে আরেক রকমের, মিহরান হাসান, যে দুষ্টু, লজ্জা দেওয়ায় ওস্তাদ, যার চোখে মুখে হাসি আর দুষ্টুমি খেলে। এই মুহূর্তে কেউ আপনাকে দেখলে বলবে আপনি রগচটা, রাগী? জীবনেও না।
আসলেই, আপনার পর্সোনালিটি খুবই বিভ্রান্তিকর, বুঝলেন? আপনি এখন, আমার সাথে যেরকম আছেন সেরকম সবার সাথে থাকেন না কেন?
– সবাই কি আমার বউ?
শৈলী তড়াক করে আবার তাকায় মিহরানের দিকে। চোখের রাগটা এখন লজ্জার দখলে। আবার নামিয়ে ফেলে নয়ন যুগল। মিহরান তা দেখে হাসে,
– আমি ছোটবেলা থেকেই বেশ ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম। বড় ভাইয়া আর আমার বয়স খুব কাছাকাছি হওয়াতে আমরা বন্ধুর মতন বড় হয়েছি। সে যেরকম ছোটবেলা থেকেই সবার সাথে মিশতে পারতো, আমি সেরকম ভাবে কিছুই পারতাম না। মিশতে গেলেই একধরনের লজ্জা, নার্ভাসনেস ঘিরে ধরতো। তাই এক সময় ভাইয়ার সাথে বাইরে যাওয়া বন্ধ করলাম। নিজের রুমকেই পৃথিবী বানালাম। সময়টা কষ্টের ছিল খুব আর আমাকে সেভাবে বোঝার মতন ছিলোও না কেউ। আম্মু তখন মাহিরা, মেহরাব কে নিয়ে ক্যারিং। মালিহাও ছোট খুব। বাবা নিজের বিজনেস দাড় করানোতে ব্যস্ত। কারোর সময় তখন ছিল না আমাকে দেখার, আমার মনকে পড়ার। আস্তে আস্তে আমার বড় হওয়ার সাথে সাথে আমার শাইনেস টা অনেকখানি কমে যায়। নিজেকে তখন যতটা সময় দিয়েছিলাম সেটা বেশ কাজে এসেছিল। অনেক গল্পের বই পড়তাম তখন। মেইন যে ক্যারাক্টার থাকতো, তার গুণাবলী গুলো রপ্ত করার চেষ্টায় থাকতাম। একসময় সেগুলোই ফল দিল।
মিহরান একটা শ্বাস নেয়। শৈলী বিড়াল ছানার মত চুপটি করে পরে থাকে মিহরানের বুকে। চোখ দিয়ে নিঃশব্দে যেই অশ্রু ঝরছে তা হয়তো ওর খেয়ালেও নেই। মিহরান আবার শুরু করে,
– আমার জড়তা আস্তে আস্তে কাটতে শুরু করে কলেজে এসে। তখন তন্ময়ের সাথে বন্ধুত্ব হয় আমার। আমার পরিবারের পর যদি কাউকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি তবে সেটা তন্ময় হবে। কারণ ওকে আমি গভীর ভাবে শ্রদ্ধা করি। আমার মাঝের জড়তার আভাস ওই পায় প্রথমে। অন্য ছেলেমেয়েরা আমাকে এ্যারোগেন্ট, রগচটা মনে করতো, কিন্তু তন্ময় আমার ভেতরের কষ্টটা কোনোভবে বুঝতে পেরেছিল। ওর নিজেরও আমার কাছে আসাটা সহজ ছিল না, কিন্তু এই পর্যন্ত দুইজন ব্যক্তি নিজে থেকেই সেই দেয়াল ভেঙে আমার কাছে পৌছেছে, তার মাঝে প্রথম হলো ও। কিভাবে কিভাবে যেন আমাকে ওর বন্ধু বানিয়ে ফেললো। তারপর আরও বন্ধু জুটালো, আমার জড়তা কমালো। ভার্সিটি আসতে আসতে এ সব সমস্যারই সমাধান হয়ে যায় কিন্তু ঐ যে অভ্যাস বলে একটা কথা আছে না? সেটা ছাড়তে পারলাম না। গুরুগম্ভীর ভাব টা রয়েই গেল আমার ব্যবহারে। তাই আমাকে এখনো মানুষ দেখে এ্যারোগেন্ট মনে করে। এবার বুঝছেন মিসেস মিহরান?
শৈলী এবার মাথা ওঠায়। কান্নায় লাল হয়ে যাওয়া চোখ দুটো দেখে ব্যস্ত হয়ে পরে মিহরান। তাড়াতাড়ি দুই হাতের দুই বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ওর চোখের জলধারা মুছে দেয়।
– কাদঁছেন কেন?
– আপনি এতো কষ্ট পেয়েছেন ছোটবেলায়? আমি কেন তখন ছিলাম না আপনাকে সাহায্য করতে। আমি থাকলে কখনো কষ্ট পেতে দিতাম না আপনাকে।
বলতে বলতে শৈলী অঝরে কেঁদে দেয়। মিহরান হাসবে না অবাক হবে তাই বুঝে উঠতে পারে না। শেষে আর না আটকে, হো হো করে হেসে শৈলীকে বুকে জড়িয়ে নেয় আবার।
– আহারে! আমার বউয়ের তার স্বামী কে নিয়ে কতো চিন্তা! এতো টেনশন করতে গিয়ে সে ভুলেই গিয়েছে ঐ সময়টায় সে হয়তোবা তখনও পৃথিবীতে পদার্পনই করেনি অথবা করলেও সে একদম দুধের শিশু।
শৈলী ফোঁফাতে ফোঁফাতেই দাত কামড়ায়। হ্যা, তাই তো! মিহরানের সাথে যে ওর আট নয় বছরের গ্যাপ এটা ভুলেই বসেছিল ও।
– সরি। ভুলে গিয়েছিলাম, আপনি তো বুড়ো মানুষ।
মিহরান ঝট করে শৈলীর মুখ নিজের দিকে তোলায়। চোখে দুষ্টুমি আর কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– আপনি কি বলতে চাচ্ছেন হুম?
শৈলী চোখে পানি নিয়েই খিলখিল করে হেসে ওঠে,
– দেখুন না আপনি কতো বড় আমার থেকে। পাক্কা আট বছরের গ্যাপ দুইজনের মাঝে। তাই বললাম আর কি।
শৈলী এটা বলেই আবার হাসতে থাকে, কিন্তু পরক্ষণেই মিহরানের খাদে নামা কন্ঠে বুক কেঁপে ওঠে ওর,
– এই বুড়োকেই নিয়ে সারাজীবন চলতে হবে আপনার, শৈলী। আর এই বুড়োরই সব আবদার, মিষ্টি যন্ত্রণাগুলোও সহ্য করতে হবে। কোন ছাড় পাবেন না কিন্তু।
শৈলী শুকনো ঢোক্ গিলে। ‘মিষ্টি যন্ত্রণা’ দিয়ে মিহরান কি বোঝাতে চেয়েছে তা কি শৈলী বোঝে না? বোঝে। যে কোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষই বুঝবে। তার ওপর মানুষটার পুরো চেহারায় তার কথার প্রতিফলন স্পষ্ট। ইশ! কি ভয়ানক দুষ্টু লোক একটা।
কিছুটা সময় আবার নিস্তব্ধতা ঘ্রাস করে ওদের। শৈলী মিহরানের বুকেই পরে থেকে আর আলিঙ্গনে ওকে জড়িয়ে রেখেই মিহরান, দূর পানে তাকায়। ব্রিজের আলোর ঝিলমিল খেলা দেখে। একসময় শৈলীর আদুরে কন্ঠ কানে ভাসে ওর,
– আপনার কাছে আমি একটা আবদার করি?
মিহরান শৈলীকে আরেকটু কাছে টেনে নেয়,
– কি চান, বলুন।
– আমাকে এখন থেকে আপনি ‘তুমি’ করে ডাকবেন প্লিস। আপনিটা যেন কেমন লাগে শুনতে।
মিহরান হেসে দেয়, আবার সাথে সাথেই ওর চোখে দুষ্টুমিও খেলে যায়,
– মমম, আমি আপনাকে কিভাবে ‘তুমি’ করে বলি বলুন? আমার স্টুডেন্টদের তো আমি কখনো তুমি করে বলি না। সেখানে কিভাবে…?
শৈলী ঝট্ করে রাগি চোখে মিহরানের দিকে মুখ ওঠায়। এতো কাছ থেকে মানুষটার দুষ্টুমির অভিব্যক্তি বুঝতে মোটেও বেগ পেতে হয় না ওর। ফাজিল লোক কোথাকার! ইচ্ছে করে মজা করছে ওর সাথে।
শৈলী ঝামটা দিয়ে মুখ নামায়,
– বইলেন না ‘তুমি’ করে, ‘আপনি’ তেই থাকেন স্যার। যত্তসব!
মিহরান এবার শরীর কাঁপিয়ে হেসে দেয়। বোঝে তার ছোট্ট আদুরে বউটা বেশ অভিমানী। আলীঙ্গন দৃঢ় করে কিছু বলতে যায় তবে তার আগেই শৈলীর ফোন বাজায় ও একটু নড়েচড়ে ওঠে। মিহরানকেও ওকে আলিঙ্গন থেকে ছোটাতে হত। মাহিরার কল্ দেখে মিহরানের দিকে তাকায় শৈলী তারপর ফোন ধরে,
– হ্যা মাহি বল্। হ্যা হ্যা স্যারের সাথেই আছি, ব্যাগও পেয়েছি। ফিরছি বাসায়। হমম…হমমম। স্যার অনেক ভালো মানুষ, আমাকে সাহায্য করেছেন। হমম…ঠিকাছে রাখ্। হমম বাই।
ফোন রেখেই মুখ সোজা করে শৈলী বলে,
– চলেন স্যার। ফিরতে হবে এখন।
হঠাৎ করেই এবং বার বার ‘স্যার’ ডাক শুনে মিহরানের খটকা লাগে। শৈলী এভাবে ওকে জব্দ করার চেষ্টা করছে, সেটা ভালোই বুঝে। তবে সে দমে যাওয়ার মানুষ না। দেখতে চায় শৈলী ওর রাগ পুষে রাখে কতোক্ষণ।
………..
সারা রাস্তাই শৈলী মুখটা ভার করে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। মিহরান হাত বাড়িয়ে ওর হাতটা নিজের মাঝে নেওয়ার পরেও ও তাকায়না। এর মাঝে কলিগের একটা ফোন আসায় মিহরানও একটু ব্যস্ত হয়ে যায়। বাকি রাস্তা আর কথা হয় না দুজনের মাঝে।
বাসার সামনে গাড়ি থামতেই শৈলী দরজা খুলে বের হতে নিলে পেছন থেকে আটকায় মিহরান,
– আরে আরে বাই না দিয়েই চলে যাচ্ছেন?
শৈলীর মুখ সেই থমথমে, সেই মুখেই ঘুরে তাকায়,
– সরি স্যার, আপনাকে সালাম না দিয়েই চলে যাচ্ছিলাম বিরাট ভুল হয়েছে। আস্সালামুআলাইকুম স্যার।
এই বলে হাত ঝামটা মেরে মিহরানের কব্জি থেকে সরিয়ে নিল। মিহরান রিয়্যাক্ট করার আগেই গটগট্ করে হেটে বাড়ির ভেতরে চলে গেল শৈলী। মিহরান সেটা দেখেই ‘চ’ শব্দ করে নিজের মাঝেই চিন্তায় পরলো,
– বউ তো খেপসে দেখি।
……………………..
শৈলী ওপরে উঠলো ভারাক্রান্ত মনে। একটা আবদারই তো করেছিল। এভাবে মানুষটা ওকে ক্ষ্যাপাবে তাই বলে? উনি যখন আবদার করেছেন তখন তো শৈলী সরল হৃদয়ে তার কথা মেনে নিয়েছে। শুধু মেনেই নেয় নি, ভীষণ লজ্জা পাওয়ার পরেও মিহরানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছে। আর সেখানে, ও এতো ছোট একটা আবদার করার পরও মিহরান সেটা মানতে পারলো না? ভীষণ খারাপ লোক একটা।
বাসায় যেয়ে মায়ের রুম থেকেই নিজেকে ফ্রেশ করে নিল শৈলী। নিজের রুমের থেকে অচেনা আওয়াজ পেয়েই বুঝতে পারলো মেহমানরা চলে এসেছে। ওদিকে আর পা বাড়ালো না ও। বরং বাসা থেকে বের হয়ে সোজা মাহিরাদের বাসায় গেল। মা আর নিপুণও ওখানেই।
ড্রয়িং রুমে যেয়েই মিহরানকে সোফায় বসা দেখলো শৈলী। মিহরান তখন পানি খাচ্ছিলো। বোঝাই যাচ্ছে মাত্র উঠে এসেছে নিচ থেকে। মিহরান শৈলীকে দেখে চোখ ওঠালেও শৈলী মুখ বাকিয়ে ওর সামনে দিয়ে ডাইনিং রুমে চলে গেল, মিহরান ওকে ডাকার সময়ও পেল না।
ডাইনিং হলে নারীদের আসর বসেছে। নিজের মা, বোন এবং মিহরানের মা, ভাবি আর বোনরা ছাড়াও নতুন কিছু মুখ চোখে পরলো শৈলীর। বুঝলো তারাই মেহমান। একজন বয়ষ্কাকে দেখে মনে হলো তিনিই মাহিরার সন্ধ্যা খালা। শৈলী বিনয়ী ভাবে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলো সেখানে। ওকে দেখেই একটা আলাদা হই হই পরলো। মাহিরা দৌড়ে আসলো ওর কাছে,
– শৈলী, পেয়েছিস তো ব্যাগটা তাই না?
-হমমম।
পাশ দিয়ে শৈলীর মা কপট রাগ দেখালেন,
– এতো কেয়ারলেস কবে থেকে হইলি তুই? মানি ব্যাগের মতোন এতো জরুরী জিনিস কেউ হারিয়ে আসে? কতো জরুরী কাগজও ছিল ওটাতে।
শৈলী চুপ মেরে মাথা নোয়ায়, তখনই পানির গ্লাসটা রাখতে ডাইনিং হলে আসে মিহরান। ওকে দেখেই, শৈলীর মা যেন আরও দম পেয়ে যান শৈলীকে বকার,
– ওটাতো ভালো যে মিহরান ছিল। আজকে ও না থাকলে তুই আবার যেয়ে কেমনে খুজে নিয়ে আসতি ব্যাগটা? অনেক ধন্যবাদ বাবা, তোমাকে খামখাই কষ্ট দিয়ে ফেললো মেয়েটা।
মিহরান সুন্দর একটা হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছিলো কিন্তু ওর মুখের কথা বের হওয়ার আগেই শৈলী বুলি ছুড়লো,
– সত্যি মা। স্যারকে আমাদের আসলেই ধন্যবাদ জানানো উচিত। এতো উদার মনের স্যার, তোমাকে কি বলবো। আমাকে নিয়ে গেলেন, পার্স খুজতে সাহায্য করলেন, সেটা আবার পেয়েও গেলাম। স্যার আসলেই অনেক সাহায্য করেছেন আমার। ধন্যবাদ স্যার।
শেষ দুই বাক্য একটা মেকি হাসি মিহরানের দিকে ছুড়ে শৈলী আওড়ায়। ঠোট দুটো ফাঁকা কিন্তু চোখ দুটো শীতল, এই এক্সপ্রেশন মিহরানের চেনা। স্ত্রীর মেজাজ এখনো গরম বুঝতে পারছে। তবে এই সময় ওরও রাগ উঠে যায়। শৈলীকে উপেক্ষা করে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ধন্যবাদ আন্টি, এটা এমন কোনো ব্যাপার না।
এরপর নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আম্মু মেহরাব কই?
আফিয়া তৎপর হলেন,
-ও এই সময় বাসায় থাকে কই? গিয়েছে মনে হয় ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে।
– ওওও…আমি ওর রুমে গেলাম। একটু রেস্ট নিব।
বলেই মিহরান ওপরে উঠে যায়। শৈলী আড়চোখে সবই লক্ষ করে কিন্তু আর কিছুই বলে না।
………..
সময় পার হয়, তার সাথে জমে গল্পও। এর মাঝে পরিবেশ ঠান্ডা করে দিয়ে আবার ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও নামে। ধুম পরে মুড়ি মাখা খাওয়ার। মাহিরার হাতের মুড়ি মাখা সেই রকম মজা, সেটা মোটামুটি সবাই জানে। তাই কাল বিলম্ব না করে ও ছোটে কিচেনে মুড়ি মাখা বানাতে। শৈলীও যায় ওকে সাহায্য করতে। দুই বান্ধবী টুকুর টুকুর কথা বলতে বলতে মাখিয়ে ফেলে এক গামলা মুড়ি। সেই গামলা থেকে মুড়ি খাবার মজাই আলাদা বলে মাহিরা সেটাকে নিয়েই টেবিলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। তবে তার আগে এক বাটিতে বেড়ে শৈলীর দিকে তা ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– শৈলু, প্লিস একটা হেল্প করনা বোন? এই বাটিটা মেঝ ভাইয়া কে দিয়ে আয় উপরে।
শৈলী মুখ সোজা করে,
– আমি কেন? আমি পারবো না। তুই দিয়ে আয়।
মাহিরা নিজের মুড়ি মাখানো হাতটা উঠায়,
– তুই দেখসিশ আমার হাতের অবস্থা? এই অবস্থায় ভাইয়ার কাছে খাবার নিয়ে গেলে, থাবর খেয়ে ফিরতে হবে। আমি বরং এখানে সবাইকে সার্ভ করি, তুই ঝটপট দিয়ে চলে আয়। যা না দোস্ত, প্লিজ।
মাহিরার আঁকুতি শৈলী ফেলতে পারে না। মুখ বাকিয়ে বাটিটা উঠায় হাতে। তারপর বের হয়ে যায় রান্নাঘর থেকে।
…………..
সবাইকে নিচে রেখে শৈলী ওপরে ওঠে। মিহরান মেহরাবের রুমে আছে জেনে সরাসরি সেখানেই যায়। দরজার সামনে দাড়িয়ে একটু দম নিয়ে নক্ করে ও। সাথেসাথেই ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,
-কে?
শৈলী মুখে উত্তর না দিয়ে আবার নক্ দেয়। এবার ওপাশ থেকে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। মুহূর্তেই দরজা খোলে। শৈলীকে এখানে আশা করেনি মিহরান তাই অবাক হয়, কিন্তু মুখে কিছু বলে না। গভীর চাহনীতে তাকিয়ে থাকে।
শৈলী বেশী সময় নেয় না, শক্ত স্বরে বলে ওঠে,
– আপনার জন্য নাশতা এনেছি স্যার।
বলেই ও মুড়ির বাটিটা সামনে ধরে। ওমনি মিহরান মুড়ির বাটির পেছনে রাখা শৈলীর হাতটা ধরে এক টানে ওকে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। ওদের পেছনে বন্ধ করে দেয় রুমের দরজা।
শৈলী এই আকস্মিক টানে একদম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়।
– আপনি আমাকে টেনে আনলেন কেন স্যার?
মিহরান আর পারে না, ধমক দেয় একটা
– এই মেয়ে, কি তখন থেকে স্যার স্যার বলে কান পাকাচ্ছেন?
শৈলী বুঝেও না বোঝার ভান করে। মুড়ির বাটিটা পাশের টেবিলে রেখে, নিষ্পাপ চেহারায় প্রশ্ন ছোড়ে,
– কেন স্যার? আমি কি কিছু ভুল বলেছি?
মিহরান দাঁত চিবায়,
– আমি আপনার স্যার হই?
– হ্যা স্যার। আপনি তো আমার স্যারই হন।
– শুধু স্যার হই তাই না?
– হ্যা। আর নয় তো কি?
– কি, সেটা দেখাবো?
খাদে নামা কন্ঠে শৈলীর মুখের একেবারে কাছে এসে বলা এক বাক্য মুহূর্তেই পরিবেশ বদলে দেয়। থরথর করে কেঁপে উঠা শৈলী কিছু একটা আঁচ করতে পেরে এক পা পিছাতে চায়, কিন্তু সেটা করার আগেই এক বলিষ্ট হাত ওর কোমর জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নেয়। বিন্দু পরিমাণ দূরত্ব না রেখে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। আরেক হাত গলিয়ে দেয় শৈলীর কানের পেছনের চুলের গোছার মাঝে। পরক্ষণেই মেয়ে টা নিজের ঠোটে অনুভব করে পুরু এক জোড়া ওষ্টের মাদকময় স্পর্শ।
চলবে……