#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৪০
সব মেহমান যেতে যেতে প্রায় মধ্যরাত পার হয়েছে। বাড়ির নারী সদস্যরা আর থাকার মেহমানরা সাড়ে এগারোটার পরেই চলে এসেছে। শুধু বাসার ছেলেরা সব র্যাপ আপ করার জন্য রয়ে গেছে।
শৈলী বাসায় এসেই আগে নিজের রুমে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় একটা জিনিস নিয়ে ছুটে গিয়েছে সাত তলার ছাদে। সেই জিনিসটা এক কোণায় রেখে তারপর ছয় তলায় মিহরানের রুমে এসেছে। হাল্কা পাতলা ফ্রেশ হয়ে আবার ছুটেছে ছাদে, কেউ আসার আগেই।
……………..
রাত প্রায় একটা। মিহরান পা রাখলো ছাদে তখন। মৃদুমন্দ বাতাস ছেড়েছে চারিপাশে। শীতল একটা পরিবেশ। শরীরের সাথে লেগে থাকা শার্টও কিছুটা চনমনিয়ে উঠলো যেন। ভালো লাগলো হাওয়াটা। মিহরান ছাদের মাঝামাঝি এসে আশপাশে তাকালো। শৈলীকে দুচোখ খুজে পেল না।
হঠাৎ পেছনে কিছুর অস্তিত্বের আভাস পায় মিহরান। ঘুরে দেখতে যাবে তার আগেই এক জোড়া কোমল হাত পেছন থেকে সামনে আসে। ওর পিঠ ছুয়ে সামনে টেনে বুকের ওপর এসে অবস্থান করে। একমুহূর্ত পরেই মিহরান ওর পিঠে ছোয়া পায় কারো মসৃন ত্বকের। সাথে সাথেই চোখ বন্ধ হয়ে আসে ওর। অজানা এক আরাম ঘিরে ধরে চারপাশ দিয়ে।
কিছুক্ষণ এভাবেই সময় স্তব্ধ হয়ে যায়। দুই মানব মানবী নিজেদের নিঃশ্বাসের সুর শুনতেই ব্যস্ত থাকে। দু জোড়া চোখ বন্ধ হয়ে এক আরেক দুনিয়ায় পারি জমায়। তারপর মিহরান এক পাশে ঘাড় ঘোরায় শুধু। চোখ নিচে নামিয়ে মুখ খুলে,
– মাহি বললো তুমি আমাকে এখানে আসতে বলেছো। কোন বিশেষ কারণ?
শৈলী মুখে কিছু বলে না, তবে মাথা ওপর নিচ ঝাকায়। মিহরানের পিঠে সেই অভিব্যক্তির অনুভূতি ঘটে।
– বলো কেন আসতে বললে।
– সরি।
মিহরান ঠোট টানে,
-এটা বলার জন্য নিশ্চয়ই ডাকো নাই। এটাতো সকালেও শুনেছি। নতুন কিছু বলার থাকলে বলো।
– আছে তো অনেক কিছু বলার।
– শুনছি।
শৈলী একটু পায়ের পাতা ওঠায়। নিজেকে চেষ্টা করে মিহরানের কান পর্যন্ত নিয়ে আসতে,
– মিস্টার মিহরান হাসান, আজ আপনার অর্ধাঙ্গিনি আপনার সাথে এই রাতটা থাকতে চায়। আপনাকে পুরো সময়টা নিজের মতন করে পেতে চায়। দিবেন আজ এই রাতটা আমাকে?
সরল স্বীকারক্তি, সরল অনুমতি । কিন্তু অর্থ বিশাল, অর্থ জটিল। মিহরান তড়াক করে ঘুরে দাড়ায়। শৈলীর অবাক চোখ জোড়ায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করে,
– কি বললা তুমি? আবার বলো,
শৈলী হকচকায়। ভুল কিছু বললো নাকি,
– কি বললাম? আপনার সাথে রাতটা কাটাতে চাই তাই বললাম। আড্ডা দিব, গল্প করবো। কেন আপনার সমস্যা আছে?
মিহরানের গম্ভীর মুখে খুব আস্তে করে কিন্তু অনেক বড়সর একটা হাসি ভাঙলো। শৈলীকে পুরোপুরি অবাক করে দিয়ে হো হো করে হেসে ফেললো ও। শৈলী আগামাথা কিছুই বুঝছে না। লোকটা কি পাগল হয়ে গিয়েছে নাকি?
-এই কি ব্যাপার? আপনি এভাবে হাসছেন কেন? কি হলো, বলুন না।
মিহরান অনেক কষ্টে হাসি থামায়। তারপর দৃষ্টি স্থির করে শৈলীর ওপর। বাঁকা চোখের চাউনি দেখে শৈলী একটু নার্ভাস বোধ করে হঠাৎ। তবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করার আগেই হ্যাচকা একটা টান খায়। পরমুহূর্তে মিহরানের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ পায় নিজেকে। চোখ ওপরে তুলতেই আবার সেই নেশালো চোখের দেখা মেলে।
ঠোটে বাঁকা হাসি নিয়ে আর কন্ঠ খাদে নামিয়ে মিহরান প্রশ্ন ছোড়ে,
– আমার সাথে রাত কাটাবা?
শৈলী প্রথমে ধরতে পারে না।
– হম্।
– এখানেই কাটাবে?
– হ্যা। এখানে নয়তো কই?
– আমার সাথে রাত কাটানোর মানে বোঝো?
এবার শৈলীর চোখ বড় হয়। মিহরানের দুষ্টামি বুঝতে পেরেছে ও। ওর কথার কি অর্থ বের করেছে মানুষটা, হায় আল্লাহ্! ও কি এরকম ভাবে কিছু বলেছিল নাকি? শুধু বলেছিল রাত কাটাতে চাচ্ছে একাসাথ….
শৈলী নিজের ভাবনাতেই হোচট খায়। এখন বুঝছে কেন মিহরান ওকে ক্ষেপাচ্ছে। ওর কথার মিনিং তো এটাই দাড়ায়। শব্দ চয়নে ভুল হয়েছে। শি*ট! সাথে সাথে প্রতিবাদ করে ওঠে শৈলী,
– আমি ঐ মিনিং করে কিছু বলতে চাই নি বিশ্বাস করেন।
মিহরানের বাঁকা হাসি ততক্ষণে ছড়িয়েছে ওর ঠোটে,
-কোন মিনিং?
শৈলী চরম বিপাকে পরে। তার সাথে ওর পিঠের ওপর মিহরানের বেশামাল স্পর্শে, লজ্জায় বার বার মরতে হচ্ছে ওকে।
– আআমমি শশুধু গগল্প করতে চচাচ্ছিলাম। আর কিছু না।
– আর কিছু মানে?
– আমি জানিনা।
মিহরান আরো ফিসফিসিয়ে পরের প্রশ্ন ছাড়ে,
– আর কিছু হলেও কি কোনো সমস্যা আছে?
শৈলীর ভতরটা হঠাৎই মনে হলো ফাঁকা হয়ে গেছে। চোখ ধীরে বন্ধ হয়ে যায় এক নেশালো বাক্যে।
– বাসর না হওয়া স্বামী স্ত্রী আমরা শৈলী। হতেই তো পারে কিছু? পারে না?
কর্ণকুহুরের শেষ প্রান্তে গিয়ে কথাটা বাজে শৈলীর। আর নিতে পারে না এই লাজ। সহ্যের বাধ ভেঙে এক প্রকার আঁছড়ে পরে ও মিহরানের বুকে। চোখ খিচে বন্ধ করে পেছন দু হাত দিয়ে শক্ত করে খামচে ধরে শার্ট। ওর নখ্, শার্ট গলে মিহরানের পিঠে বিধে।
মিহরানও আগলে নেয় নিজের নারীকে। খুব কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে। এতোক্ষণের দুষ্টুমির আবহাওয়া টা হঠাৎই বদলে যায়। পাল্টে এসে বসে অনুভূতির জোয়ার। মস্তিষ্ক আর মনের মাঝে বিশাল যুদ্ধ চলছে মিহরানের তখন। মস্তিষ্ক বলছে থেমে যেতে, মন বলছে আগাতে। এখন কি করবে ও? শৈলীর কানের লতির খুব কাছে নিজের ঠোট নামায় মিহরান। স্বাস ভারী স্বরে কানে শুধায়,
– আমি আগেই বলেছিলাম তোমাকে, এতো সুন্দর ভাবে সামনে আসলে বার বার নিজেকে কন্ট্রোল করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাও কেন আসলে শৈলী? কেন ডাকলে আমাকে? কেন আমার অনুভূতি গুলো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠালে? এখন কি করি বলোতো?
শৈলী নিশ্চুপ। শুধু গভীর গভীর স্বাস নিচ্ছে মিহরানের বুকে ছড়ানো কড়া পারফিউমের ঘ্রানের ভাজে। তার সাথে মিহরানের বলা প্রত্যেকটা শব্দের অনুভূতি ওকে দিগভ্রান্ত করে তুলেছে। নিজেকে ধাতস্থ করার একদমই ব্যর্থ প্রচেষ্টায় সে তৎপর। এরকমই এক সময় ওর কম্পিত মুখকে ওঠানো হয়। ঠোটের কোণ ঘেষে আঙ্গুলের আল্তো পরশ পায় ও। লজ্জায় নিজের চোখের পাপড়ি পিটপিট করে ওঠে। পুরোপুরি খোলার আগেই আঙ্গুলের পরশ সরে এক জোড়া পুরু ঠোটের অস্তিত্ব পায় ও নিজের ওষ্টে।
সময় গড়ায়, তার সাথে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে মিহরানের আদরের প্রলেপ। আবার চোখ বন্ধ করে শৈলী শুধু সব অনুভব করে। তার সাথে নিজের সুপ্ত অনুভূতিকেও আজ আর থামায় না। কখন যে ওর এক হাত পিঠ ছেড়ে মিহরানের চুলের পেছনে নিজের স্থান গড়ে তোলে তা বোঝে না শৈলী।
এক সময় মিহরান বেশামাল হয়ে পরে। শৈলীকে আজ যেন নিজের প্রেম দেখাতে অধীর ওর মন। শৈলীর গলার ভাজে ঝুকে ঝড় তোলে ও মেয়েটার অঙ্গে প্রত্যঙ্গে। নিজের মাঝে শৈলীকে জড়িয়ে পিশে ফেলাটাই যেন এখন ওর মূল উদ্দেশ্য। তবে বার বার বেজে ওঠা শৈলীর হৃদকম্পন আস্তে আস্তে মিহরানকে থামতে বাধ্য করে। এতোক্ষণের ধামাচাঁপা খাওয়া মস্তিষ্ক একটু মাথা চাড়া দিয়ে উঠেই মিহরানের কানে শুধায়,
– এখন থেমে যাও, নয়তো মেয়েটার আজ ভালোবাসায় মৃত্যু ঘটবে।
চলবে।