পরিণয়_প্রহেলিকা #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৪৫

0
971

#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৪৫

নিশুতি রাত। গত দুদিন ধরেই বেশ বাতাস বইছে। সাথে কেমন থম মেরে থাকা এক আবহাওয়া। ঝড় আসার আগাম বার্তা যেন। বাইরের এরকম বৈরী পরিবেশটা যেন শৈলীর মনের প্রতিফলন দিচ্ছে। ওর মনের আকাশও যে আজ একদম উতলা, অস্থির।

মায়ের মুখ থেকে বের হওয়া সেই সর্বনাশা বাক‍্য কানে এখনো ঝঙ্কার তুলছে শৈলীর। মিহরানের সাথে ওর বিয়েটা মানেন না তিনি। চিন্তায় আসতেই আবার কেঁপে উঠলো ও। আপনাতেই চোখ খিঁছে বন্ধ করে ফেলে। আবার দু ফোটা জল গড়ায়। সন্ধ‍্যা থেকে এতো কাঁদার পরেও এতো পানি আসে কোথা থেকে তাই বুঝতে পারে না ও।

মিহরানের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে শৈলীর। ওর তীক্ষ্ম দৃষ্টি যেন এই মুহূর্তেও স্পষ্ট ওর দিকে ফেরানো। কি নেশালো সেই অক্ষিযুগল। কি নেশালো সেই অক্ষিযুগলের মালিক। সত‍্যি, মিহরান, এই কদিনে শৈলীর নেশা তে রুপান্তরিত হয়েছে। মানুষটাকে গভীর ভাবে অনুভব করতে শিখে গিয়েছে। হয়তো সম্পর্কর শুরুটাই বৈধ ভাবে ছিল বলেই এতোটা আগাতে পেরেছে ও। কিন্তু এখন তো আর পেছানো সম্ভব না। একেবারেই না। মিহরানকে ছাড়া এক মুহূর্তও জীবন চালানো সম্ভব না শৈলীর।

শৈলী বিচলিত হয়। খাট ছাড়ে, মায়ের সাথে কথা বলার জন‍্য আগায়। যেভাবেই হোক মা কে ও বোঝাবেই। মা কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন সেটা ও জানে না, তবে সিদ্ধান্ত টা যে ভুল সেটা মাকে বলতে হবে। ওনার মুখের কথা ফিরিয়ে নেওয়ার জন‍্য অনুরোধ করতে হবে, মানাতে হবে ওনাকে তা যেভাবেই হোক।

নব খোলার জন‍্য হাত দিতে যাওয়ার আগেই অপর পাশ দিয়ে দরজাটা খুলে যায়। শৈলী পিছাতেই দেখে বাইরে থেকে নিপুন ঢুকছে। বড় বোনের রক্তিম আখি, এলোমেলো চুল দেখে বিচলিত হয়ে কাছে আসে,
– আরে আপি, তুমি কি পাগল হয়ে গেলা নাকি? এভাবে কেউ ভেঙে পরে? আমি কিছুক্ষণের জন‍্য বাইরে গেলাম, তুমি আবার কান্না শুরু করসো?

শৈলী আর পারে না। ঝাপিয়ে পরে বোনের কাঁধে। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে,
-আম্মুর কি হইসে নিপুন? আম্মু কেন এমন অলোক্ষিনি কথা বললো? বল্ না। আমাদের সম্পর্ক কেন মেনে নিবেন না তিনি? কি সমস‍্যা? কি সমস‍্যা?

নিপুন বোনকে আগলে নিলো নিজের মাঝে। একবার দুদিক থেকে পেঁচিয়ে জোড়ে একটা আলিঙ্গন করলো। তারপর নিজের থেকে সরিয়ে সামনে নিয়ে আসলো। শৈলীর চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
-আপি তুমি একটু সামলাও নিজেকে। আম্মুর কি হইসে তা কিছুটা মনে হয় আমি জানতে পারসি। চলো খাটে বসো, আমি সব বলছি।

শৈলী নিপুনের কথা মতন খাটে যেয়ে বসলো। উৎসুক চোখে বোনকে ওর পাশে বসতে দেখলো। নিপুন শৈলীর দিকে তাকিয়ে কথা শুরু করে,
– আজকে মিহরান ভাইয়াদের বাসায় একটু বাকবিতন্ডা হয়েছে তোমাদের বিয়ের ব‍্যাপার নিয়ে। আমার মনে হচ্ছে আম্মু হয়তো কোনো ভাবে সেটা শুনে ফেলেছে।

শৈলীর ভ্রু জোড়া কুচকে যায়,
– কি হয়েছে ওখানে? আর তোকে এটা কে বললো?
– মাহিরা আপুর সাথে এতোক্ষণ কথা হচ্ছিলো আমার। আপুই জানালো সব।

শৈলী সাথেসাথে খাটের আশপাশে উন্মাদের মতন নিজের ফোন খোজে। সেটা পেতেই কোন কাল বিলম্ব না করে কল করে মাহিরাকে। দুই রিং এই অপর পাশে রিসিভ হয়,
– হ‍্যালো ভাবিজান। কি অবস্থা আপনার?
– ফাইজলামি বন্ধ কর্ মাহি। আগে বল্ আজ বাসায় কি হয়েছে? নিপুন বললো…
– হমম, আজকে তোদের বিয়ে নিয়ে বাসায় খালা ফুফুদের সাথে একটু ঝগড়া ঝাটি হয়েছে। বুঝিশই তো, এই বিষয়টা খুব সোজাও না সবার জন‍্য মেনে নেওয়া।

শৈলীর ভেতরটা আশঙ্কার গভীর খাদে ডুবে যায়। এতোক্ষণ নিজের মাকে নিয়েই টেনশনে বেহাল ছিল ও, এখন আবার ঐ পরিবারেও ঝামেলা, কি হবে এখন?

-শৈলী আছিস? হ‍্যালো?
– বল্।
– কিন্তু আজকে যেই ফিল্মি কান্ডকারখানা বাসায় হলো রে। আমি তো পুরাই টাষ্কিত!

শৈলী মাহিরার কথা বোঝে না। ক্লান্ত স্বরে বলে ওঠে,
– কি বলিস?

মাহিরার উত্তেজিত কন্ঠ শোনা যায়,
– আমার বলা রাখ্। আগে তুই আমাকে বল্ আমার ভাইকে এরকম পাগল করলি কবে রে তুই? তোর সাথে তো সবসময়ই থেকেছি, কই কখনো তো এটা বুঝিনি?

শৈলী অধৈর্য‍্য হয়,
– মাহি, আমার এই সব একদম ভালো লাগছে না রে। যা বলবি সরাসরি বল্ প্লিস। কি হইসে?
– তাহলে শোন। গন্ডোগোল তো লেগেছিলোই কিন্তু সন্ধ‍্যায় মিহরান ভাইয়া এসে প্রতিটা মুখে পার্মানেন্ট তালা লাগিয়ে দিয়েছে।

এরপর মাহিরা বিস্তারিত সব শৈলীকে জানায়। মিহরানের বলা কথা গুলো শুনে আজ সন্ধ‍্যা থেকে এই পর্যন্ত সময়ে এই প্রথম শৈলীর ঠোটে হাসি ভাঙে। লজ্জায় মুখ ডোবায় ও নিচে। তবে মনের ভেতর গর্বে ভরে যায়। মানুষটা এভাবে ওর জন‍্য সবার সাথে তর্কে জড়িয়েছে? আসলেই কি ও নিজেও মানুষটার কাছে এতোটা আপন হয়ে গিয়েছে? তাই তো মনে হচ্ছে।

মাহিরা সব কথা শেষ করে বললো,
– তো এই হইলো পুরো কাহিনি ম‍্যাডাম। শোন, এইদিকে এখন সব ঠিক আছে। ভাইয়া চলে যাওয়ার পর আব্বু আর বড় ভাইয়া মিলে ছোট খালা আর ছোট ফুফুকে অনেক কিছু বলেছে। বেশ ভালো ডোজ দিয়েছে। আমি তো জানি ছোট খালার ভেতর ভেতর মন কেন পুড়ছে। নিজের মেয়েকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিতে পারলো না তো তাই। সে যাই হোক। বড় ফুফুও শেষ পর্যন্ত রাজি। তো আর কোনো সমস‍্যা নেই। তুই নিশ্চিন্তে থাক্।

শৈলীর হাসি আবার মুছে গেল,
– কেমনে নিশ্চিন্তে থাকি বল্ মাহি? এখানে আম্মু হঠাৎ বেঁকে বসেছেন? ওনাকে কিভাবে বোঝাই?
– একসাথে এতো টেনশন নিস না দোস্ত, শরীর খারাপ করবে। এইখানে তো সব ঠিক হলো, তোদের ওদিকেও হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এখন তুই কান্নাকাটি বন্ধ করে রেস্ট নে।

আরো দুই একটা কথা বলে শৈলী ফোন রাখে। মনটা দুই ভাগে বিভক্ত এখন। একদিকে মায়ের আশংকা, তো আরেকদিকে মিহরানের অভিব‍্যক্তি জানার উল্লাস। হঠাৎ শৈলী তৎপর হয়। মনটা আনচান করে ওঠে নিজের অর্ধাঙ্গের সাক্ষাতের জন‍্য। সাথেসাথেই খাট ছাড়ে ও, কোনমতে পায়ে স‍্যান্ডেল গলিয়ে দৌড় দেয় দরজার কাছে। নিপুন কিছু বুঝে ওঠার আগেই শৈলী রুমের বাইরে হারিয়ে যায়।
…………………………

মালিহা নিজের রুমে বসে নিজের চিন্তায় মগ্ন। একটু আগে কথা হয়েছে তুরিনের মায়ের সাথে। বান্ধবীর খোজ নিয়ে জানতে পেরেছে গতকালের পর আর জ্ঞান না হারালেও, মেয়ের শরীরের কোন উন্নতি হয়নি। হবেই বা কেমনে? উন্নতির জন‍্য খাওয়া দাওয়া করা লাগে, শরীরকে চনমনে বানানোর ইচ্ছা শক্তি থাকতে হয়। কিন্তু এগুলোর একটাও নাকি তুরিন করছে না। একদম চুপ মেরে নাকি বসে থাকে সারাক্ষণ। মিসেস দিলারা মেয়ের হাবভাব কিছুই বুঝতে পারছেন না। কি হলো হঠাৎ সেটাও ওনার ধারনার বাইরে। মালিহাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন কিন্তু মালিহাকে বলেছে ও কিছু জানে না।

আসলে মালিহা জানে। জানবে না কেন? কিন্তু বলবে কি তুরিনের মা কে? এটাই যে, উনার মেয়ে ওর ভাইয়ের হঠাৎ বিয়ের খবর শুনে এরকম শক্ মোডে চলে গিয়েছে? এটা বলা যায়? সম্ভব?
তুরিনের জন‍্য মায়া লাগে আসলে মালিহার। মেয়েটার ভালোবাসাটা সত‍্য ছিল। কিন্তু সেটা নিয়তির সাথে পেরে উঠে পারলো না। মিহরান ভাই ছিল না ওর ভাগ‍্যে। শৈলীর ভাগ‍্যে ছিল।

মালিহার চিন্তা এবার অন‍্যদিকে মোড় নেয়। শৈলী। মেয়েটাকে ও খুব পছন্দ করে। মাহিরার মতন ওকে ছোট বোনের আদরের ভাগিদার বানিয়েছে সবসময়। কিন্তু নিজের মেঝ ভাইয়ের বউ হিসেবে কল্পনাতেও আনেনি ও। কিন্তু আজ সেটাই সত‍্য। মালিহা চিন্তায় পরে। ওর কি এই সত‍্যটা সাবলীল ভাবে মেনে নেওয়া উচিত। বোন হিসেবে অবশ‍্যই। ভাই যেখানে খুশী সেখানে ওর আপত্তি করার কিছুই নেই। কিন্তু….বান্ধবী হিসেবে? সেটা চিন্তা করলে তো আবার পাল্টে যায় পুরো ছক্।

মালিহার মাথা ধরে যায়। ধুর! এতো প‍্যাচ কেন লাইফে? উফফ!
………………..

এক নিঃশ্বাসে শৈলী সিড়ি বেয়ে ওপর তলায় ওঠে। ছাদে তখন উত্তাল হাওয়ার উন্মাদনা চলছে, ঠিক যেন শৈলীর মনের মতন। ও দৌড়ে যেয়ে মিহরানের রুমের দরজায় জোড়ে জোড়ে নক্ করে। কয়েকবার করে। ভেতর থেকে নড়াচড়ার আওয়াজ পাওয়ার পরও থামে না ওর ধাক্কানো।
– কি ব‍্যাপার! কে এতো বার নক্…

মিহরান দরজা খুলে কথা শেষও করতে পারে না, তার আগেই কারো গভীর আলিঙ্গনে নিজেকে জড়িত পায়। তীব্র বেগে ঘটনা ঘটায় ও পিছিয়ে পরে এক কদম। তবে আপনাতেই দু হাত উঠে পেচিয়ে নেয় তাকে জড়িয়ে রাখা মানুষটাকে।

মিহরান একবার নিচে তাকায়। শৈলীর কান্নার দমক বাইরের উত্তাল হাওয়ার আওয়াজকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। মিহরান তারপর সামনে তাকায় আকাশের দিকে। সেই আলিঙ্গনরত অবস্থাতেই ও শৈলীকে নিয়ে পিছ পা হয়ে ভেতরে ঢুকে। তারপর এক হাত বাড়িয়ে লাগিয়ে দেয় দরজা। মুহূর্তেই বাইরের সব শব্দ থমকে যায়, শুধু এক চাঁপা কান্নার আওয়াজ ছাড়া।

শৈলী মিহরানকে জাপটে ধরেছে। যতটা শক্তি আছে ওর মাঝে, বোধহয় সব প্রয়োগ করেছে মেয়েটা। এতে একটু হলেও মিহরান ব‍্যাথা পাচ্ছে। কিন্তু ও টু শব্দ করলো না। বরং পরম যত্নে নিজের স্ত্রীর মাথায় একটা হাত বুলিয়ে ওর চুলের মাঝে ঠোট ডুবালো।
– শৈলী…

এক ডাকেই আহ্লাদে যেন গলে পরে মেয়েটা। কান্না আরও জোড়ে বাড়ে।
– শৈলী, আগে কান্না থামাও। এভাবে কাঁদবা না। দেখি দেখি।

মিহরান, শৈলীর মুখটা এবার তুলে আনে নিজের দিকে। এলোমেলো চুলে, চোখের পানি দিয়ে ভেজা, রমনীকে মন ভরে দেখে একবার। তারপর বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে দু চোখ মুছে দেয়।
– এতো কান্না কিসের জন‍্য বলোতো? তোমার বর তোমাকে ছেড়ে অন‍্য কারও হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছে নাকি? হমম?

মিহরানের দুষ্টামি তক্ষণি ধরতে পারলেও শৈলীর মুখে হাসি ফুটলো না। কান্না থামলেও হেঁচকি দিতে লাগলো অবিরত। মিহরান তা দেখে ওকে একপাশ দিয়ে আগলে নিয়ে ওর খাটে এনে বসায়। শৈলীর পায়ে যেন কোনো বল নেই, মিহরান যেভাবে টানলো সেভাবেই গেল ও। শৈলীকে বসিয়ে মিহরান কাউন্টারের পিছে রাখা ছোট ফ্রিজ থেকে এক বোতল পানি আনলো। শৈলীর পাশে বসে, নিজের বেডসাইড টেবিলে রাখা গ্লাসটাতে পানি ঢেলে এগিয়ে দেয় স্ত্রীর দিকে। শৈলী কোনমতে গ্লাস টা নেয়। পানি এক ঢোকের মতন খেয়ে আবার ফিরিয়ে দেয়। মিহরান সেটা সরিয়ে রেখে, আরেকটু কাছে ঘেসে ওর। ডান হাত দিয়ে এক পাশ হয়ে জড়িয়ে ধরে,
– এবার বলো, তুমি কাঁদছো কেন?

শৈলী ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিজের মাথা মিহরানের বুকে এলিয়ে দেয়, আঁকুতি ভরা কন্ঠে শুধায়,
– আপনি আমার আম্মু কে বোঝাবেন প্লিস?

মিহরান কপাল কুচকায়,
– মা কে কি বোঝাবো?
– যাতে আমাদের বিয়েটা সে না ভাঙ্গে।

মিহরান এবার একটু ত‍ৎপর হয়,
– মা আমাদের বিয়ে কেন ভাঙতে চাইবেন? কি হয়েছে? আমাকে খুলে বলো শৈলী।

শৈলী মাথা ওঠায় ওপরে। মিহরানের মুখোমুখি পাশ ফিরে কান্নারত অবস্থায় বলে,
– আমি নিজেও সব জানি না। কিন্তু আজকে সন্ধ‍্যায় আম্মু আব্বুকে বলেছে যে তিনি আমাদের বিয়ে মানেন না। এটা যেন আব্বু ভেঙে দেয়।
– কিহ্? কেন?
– জানি না। তবে নিপুন বললো আপনাদের বাসায় সন্ধ‍্যায় আজ আমাদের বিয়ে নিয়ে যেই সমস‍্যা হয়েছে তা হয়তো আম্মু শুনে ফেলেছে। সেটা থেকেই…..প্লিস, প্লিস আপনি আম্মুকে বোঝান যেন এই সিদ্ধান্ত তিনি বদলে ফেলেন। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
– তুমি চাইলেও দেব না আমি আমাকে ছাড়া থাকতে।

শৈলী চুপ হয়ে মিহরানের দিকে দৃষ্টি দেয়। কাছে আসে মিহরান। গলা খাদে নামায়,
– কারণ আমি নিজেও যে তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।

কেঁপে ওঠে শৈলী। ওর পাশে বসা নিরেট মুখের পুরুষটার মাতাল করা কন্ঠ ওকে নেশায় ফেলে মুহূর্তে। ধীরে দু চোখের পলক নামিয়ে ফেলে ও। মিহরান নিজের ডান হাত শৈলীর কাধ থেকে নামিয়ে কোমড়ে রাখে। আস্তে তবে শক্ত হাতে মিশিয়ে দেয় ওর ছোট্ট শরীরটা নিজের সাথে। সঙ্কীর্ণ শৈলীর কানে ঠোট নামায়,
– আমি তোমার স্বামী শৈলী। তুমি আমার স্ত্রী। আমরা কোন অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে নেই, যা নিয়ে অন‍্য কেউ কোনো নির্ণয় নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তা সেই মানুষটা যত কাছেরই হোক না কেন। আমরা না চাইলে কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। এখন তুমি বলো, তুমি কি আমার থেকে আলাদা হতে চাও?

সাথেসাথেই ডানে বামে মাথা নেড়ে শৈলী নিজের মতামত জানায়। সম্ভবই না এই মানুষটার থেকে আলাদা হওয়া ওর।

মিহরান তুষ্ট হয়। ঠোটে দুই কোণা একটু ভেঙে বলে,
– তাহলে নিশ্চিন্তে থাকো, কেউ আমাদের একে অপরের থেকে আলাদা করতে পারবে না। ইট্স আ প্রমিস। দরকার পরলে আমি নিজে মায়ের সাথে কথা বলবো। ওনাকে নিয়ে চিন্তা করার তোমার কোন দরকার নেই।

শৈলীর মনটা তক্ষণই শান্ত হয়ে যায়। এই আশ্বাসটারই বোধহয় দরকার ছিল ওর। তাই তো, কিছুক্ষণ আগের কান্না, আতঙ্ক, ভয়, আশঙ্কা মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। সেখানে এসে ডানা ঝাপটে বসলো এক রাশ প্রশান্তি। আস্তে ধীরে ও তাকায় মিহরানের পানে। এর পর আপনাতেই উঠে যায় ওর হাত, মিহরানের গালে। অমসৃণ ত্বকে আঙুল বোলায় ও। মিহরানের ওর ওপর টিকে থাকা তীক্ষ্ম, স্থির দৃষ্টি তে চোখ পরে।

কি হলো সেই মুহূর্তে তা জানা নেই, তবে শৈলী নিজেই আগায় সামনে। মিহরানের পুরু ওষ্টে প্রথমে নিজের আঙ্গুল বুলিয়ে এরপর সেথায় নিজের অধর ডোবায়। এতোটা সাহস, এতোটা আকুলতা কোথা থেকে সঞ্চয় হলো, শৈলীর সেটা গণণা করার সময় নেই। সে তো তার স্বামীকে ভালোবাসতে ব‍্যস্ত। তার থেকে ভালোবাসা নিতে ব‍্যস্ত। কারণ মিহরান নিজেও তখন শৈলীর আবেশে নিমজ্জিত। আজ সমস্ত নিয়ন্ত্রণকে বিসর্জন দিয়ে স্ত্রীর কাছে নিজেকে সমর্পণ করলো মিহরান। হয়তো শৈলীর অনুভূতিও ছিল সমতূল‍্য। নয়তো মিহরান ওকে খাটে শোয়াতেই ও বাধা দিত। নয়তো মিহরানের আরও ঘনিষ্টভাবে কাছে আসাতে ও নিজের দুহাত দিয়ে মিহরানের শক্ত পেটানো পিঠকে জড়িয়ে ধরতে পারতো না। পারতো না সহ‍্য করতে মিহরানের হাতটাকে যা ওর কাপড় ভেদ করে নগ্ন কোমড়ের ভাজে গলিয়ে বেশামাল স্পর্শে লিপ্ত হয়েছে। সরিয়ে দিত মিহরানকে যখন ওর ওষ্ট শৈলীর মুখের প্রতিটা অংশ ছুয়ে গলার ভাজে নেমেছে। ও এগুলো কিছুই সহ‍্য করতো না যদি না ও চাইতো।

কিন্তু শৈলী চেয়েছে স্বামীর এইটুকুন ভালোবাসা।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here