পরিণয়_প্রহেলিকা #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৫১

0
1014

#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৫১

আজ রাতে পুলের পাশে আবার বন্ধুদের মেলা বসেছে। দুই একজন বাদে আবারও সেই অনেক দিন আগে এই আসর বসিয়েছিল যারা তারাই উপস্থিত হয়েছে। সেই আগের বারের মতনই বারবিকিউর আয়োজন হয়েছে, আগের বারের মতনই গান বাজনাও হচ্ছে। সবই এক, শুধু একটি পরিবর্তন আছে। সেইবার যেই আকর্ষণ ছিল এক লুকোচুরির আস্তরণে ঢাকা, আজ সেটা জনসম্মুখে। সেবার শৈলী ছিল শুধুই একজন গেস্ট, এসেছিল মিহরানের বোনের বান্ধবী হয়ে। আর আজ সে এই পার্টির হোস্ট। নিজের উচ্ছলতার সাথে জানান দিচ্ছে সে মিহরানের স্ত্রী, তাই এই পার্টির দায়িত্ব তার নিজেরই।

আজ এই পার্টি আয়োজনের মূল কারণ হলো হলুদে কে কি পারফর্ম করবে তা নিয়ে আলোচনায় বসা। তন্ময়ের ইচ্ছা পুরোন দিনের হলুদের মতন গানের প‍্যারোডি করার। এতে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে পঁচাতে পারবে। কিন্তু মাহিরা, মালিহার আবার ইচ্ছা নাচের ম‍্যাশাপ করা। সবাই নিজেদের মতামত নিয়ে গভীর আলোচনার নিবদ্ধ থাকলেও যাদের ঘিরে এই আয়োজন তারাই চুপচাপ।

পুলের পারে সবাই জরো হয়ে বসা। কেউ কেউ চেয়ারে বসলেও বেশীর ভাগই বসা ফ্লোরে, একদম ফুলের ফিরোজা পানির পাশে। মিহরান মাত্রই গ্রীল বন্ধ করে এসে একটা বিচ চেয়ারে বসেছে। শৈলীও খাবারের প্লেট গুনে দেখছিল সবাই পেয়েছে কি না। সবার হাতে খাবার আছে দেখে মিহরানের আর ওর প্লেট টা নিয়ে আসরে আসলো। মাহিরা আগের থেকেই ওর পাশে শৈলীর জায়গা রেখেছিল, যেটা শৈলী জানতো। তাই মিহরানের হাত খাবার দিয়ে ও সেদিকেই যাওয়ার জন‍্য পা বাড়ায়। কিন্তু এক কদমও যাওয়া হয় না, তার আগেই বলিষ্ট হাতের বাধা ওকে থামিয়ে দেয়। চকিতে পেছনে ফিরে মিহরানের চোখে তাকিয়ে দেখে নিজের পাশেই বসার আহবান জানাচ্ছে মিহরান। এই আবদার ফেলার রুচি ও ইচ্ছা কোনটাই নেই শৈলীর। মুচকি হেসে চেয়ারের পাশে, ঠিক মিহরানের হাটু বড়াবড় ফ্লোরে বসে পরে সে। এই দেখে মাহিরা দুষ্টুমি করে রাগ দেখায়,
-কি রে শৈলী, তুই ওখানে কেন বসলি? তোর না আমার পাশে বসার কথা? তা না করে যেয়ে ভাইয়ার গা ঘেষেই বসলি? ওররে ভালোবাসা….

শৈলী ঠোট টিপে মুখ লুকায়। ততক্ষণে মাহিরার কথা ও দুষ্টুমি সবাই বুঝে যেয়ে হো হো করে হেসে ফেলে। শৈলীর মনে মনে ইচ্ছে হচ্ছিলো তখন ওর বান্ধবীর চুল ধরে টানুক। মেয়েটার মুখ আসলেই লাগামছাড়া। তন্ময় ভাই যে কেমনে একে সামলাবে। উফফ!

কিছুক্ষণ এই নিয়ে হাসি মজার মাঝেই অনেক কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। শৈলীর কাজিনরা বেশীরভাগই দেশের বাইরে থাকে, তাই হলুদের আসর জমানোর দায়িত্ব মিহরানের পরিবার ও বন্ধুদের ওপরেই পরলো। এবং সেটা সানন্দেই গ্রহন করলো তারা।

খাবারের শেষেও চললো বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা। এরই মাঝে শৈলীকে মাহিরা ইশারায় একবার কাছে ডাকে। দুই বান্ধবী মিলে আসর থেকে উঠে মিহরানের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে ঢুকতেই মাহিরা বলে,
-দোস্ত তোর কাছে একটা আবদার করবো। বান্ধবী হিসেবে না, ননদ হিসেবে, ভাবির কাছে আবদার করবো। রাখবি?

শৈলী কপাল কুচকায়,
-বল না, কি আবদার? কি করতে হবে আমাকে?
– দোস্ত ভাইয়ার কাছে আমার আর তন্ময়ের ব‍্যাপারটা তোকেই হ‍্যান্ডেল করতে হবে। তন্ময় নিজে থেকে তো বলবেই কিন্তু আমি চাচ্ছি বিষয়টা আমার তরফ থেকেও ভাইয়ার কানে যাক। আফ্টার অল সে আমার ভাই। আমার কাছ থেকেও জানার অধিকার আছে ওনার। কিন্তু লজ্জায় ওনার সামনে দাড়ানো আমার জন‍্য দায়, এগুলো বলা তো দূরে থাক। তাই আমার হয়ে তুই একটা সুযোগ খুজে ভাইয়াকে বলে দিশ না দোস্ত। তোর প্রতি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।

শৈলী বান্ধবীর আকুতি শুনে ওকে জড়িয়ে ধরে,
– তুই একদম চিন্তা করিস না। আমি আছি তো। সময় বুঝে আমি তোর ভাইয়ের সাথে কথা বলবো। কিন্তু আমার মনে হয় তন্ময় ভাইয়ারও উচিত উনাকে সব জানিয়ে দেওয়া।

ততক্ষণে মাহিরা শৈলীর থেকে সরে এসেছে,
– হ‍্যা, ও জানাবে বলেছে। আসলে তোদের বিয়ের মধ‍্যে মেঝ ভাইয়াকে আর ডিস্টার্ব করতে চাচ্ছে না ও। এই অনুষ্ঠান শেষ হলেই আমাদের ব‍্যাপারটা নিয়ে ভাইয়ার সাথে আলোচনায় বসবে।
শৈলী মাহিরার কাধ আকড়ে ধরে। দুষ্টুমির ছলে বলে ওঠে,
– হাসান পরিবার তাহলে পর পর দুই দুইটা বিয়ে হোস্ট করতে যাচ্ছে? বাহ্ বাহ্।
মাহিরা লাজে রক্তিম হয়ে রুম থেকে বের হয়। দুই বান্ধবী আবার হাসতে হাসতে এসে সবার সাথে গল্পে যোগ দেয়।

…………………

রাত এগারোটা নাগাদ পার্টি ভঙ্গ হলো ছাদে। আজ অস্বাভাবিক গরম ছিল সারাদিন। দুদিন ধরেই এরকম। কেমন আবহাওয়াটা গুমোট হয়ে আছে। রাতে বিদ‍্যুৎ চমকালেও গতকাল বৃষ্টি হয়নি। আজও বিদ‍্যুত চমকেছে কিন্তু কালকের মতোই হয়তো আকাশ আজও ধোকা দিবে মনে হচ্ছে। কিন্তু বৃষ্টির খবর তো আর মানুষ আগের থেকে জানে না। তাই বাইরে থেকে আসা মিহরানের গেস্ট আর কাজিনরা থাকতে চাইলো না। বৃষ্টির কবল থেকে বাঁচতে বাসায় আগে ভাগেই চলে যেতে চায়। এসব বুঝে মিহরানও আর জোর করে না কাউকে। সবাইকে বিদায় জানায় ও ছাদের দোরগোড়া থেকেই। শৈলীও বিদায় জানিয়ে আবার ছাদে ফিরে আসে, সব অগোছালো জিনিসপত্র নিজের মতন ঠিক করতে ব‍্যস্ত হয়ে পরে।

সব ওয়ানটাইম প্লেটগুলো একসাথে করে সবে বিনে ফেলে সোজা হয়ে দাড়িয়েছিল শৈলী, তখনই ওর চোখ বড় হয়ে যায়। বলিষ্ট অমসৃন এক হাতের শিহরিত স্পর্শ ওর কামিজ ভেদ করে নগ্ন কোমরে পৌছতেই শিরদ্বারা দিয়ে বয়ে যায় হিমশীতল অনুভুতি। আপনাতেই শৈলীর বড় হয়ে যাওয়া চোখ বন্ধ হয়ে যায় যখন ওর খালি কাধে কারো ভারী নিঃশ্বাস মুক্তোর মতন লুটিয়ে পরে।
একয়দিনে এসব ঘটনা নতুন নয় ওর সাথে। হঠাৎ হঠাৎ দেহ অষাঢ় করে দেয়া এই নেশাতুর স্পর্শগুলো শৈলীর চেনা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কেন যেন আজও সে অভ‍্যস্ত হতে পারেনি। মনে হয় প্রতিটা ছোয়াই নতুন, প্রতি বার কাছে আসাই এক নব গতীর সুখের আভাস। শৈলী ঠোট টিপে মুচকি হাসে,
-ভারি অসভ‍্য তো তুমি। এই খোলা ছাদে কাছে আসছো, মাহিরা রা কেউ চলে এলে?

ততক্ষণে স্ত্রীর দেহ কাঁপিয়ে মিহরান নিজের ঠোট ডুবিয়েছে ওর কাধে। নিজ সুখে মত্ত হয়ে ধীর গলায় উত্তর দেয়,
– চোখ খুলে দেখুন ম‍্যাডাম। ছাদের দরজা বন্ধ সবার জন‍্য।

শৈলী আসলেই চোখ খুলে। ফিরে তাকিয়ে দেখে দরজা সত‍্যিই বন্ধ। তাহলে তখন এটারই আওয়াজ পেয়েছিল ও। লাজে রক্তিম মুখ নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজের স্বামীকে,
– দরজা বন্ধ করলা কেন?
-যাতে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব না করতে পারে।
– ধুর! সারাক্ষণ তোমার দুষ্টামি লেগেই আছে। ছাড়ো তো। কাজ আছে অনেক।
-সব কাজ বাদ।

বলেই শৈলীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে পাঁজাকলে তুলে নেয় মিহরান। অবাক হলেও সাথেসাথেই ওর গলা জড়িয়ে ধরে শৈলী। স্বামীর বাঁকা হাসির বাণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ওরই বুকে মুখ লুকায়। তৃপ্তি নিয়ে সুন্দরী স্ত্রী মায়াবী এই রুপটা দেখে নিজের চোখকে শান্তি দেয় মিহরান। স্বযত্নে নরম, মসৃন দেহখানি আগলে নিজের রুমে প্রবেশ করে। পেছন থেকে দরজা বন্ধ করে দুজন পাড়ি দেয় প্রেমস্বর্গে।

………………..

মধ‍্যরাত। হঠাৎই শৈলীর ঘুম ভাঙে। নিজেকে বিছানায় একা পেয়ে উঠে বসে। টেবিলে রাখা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আড়াইটা ছুই ছুই। কপাল কুচকে যায় ওর,
-উনি কোথায়?

তখনই নিস্তব্ধতা চিড়ে বাইরে থেকে পানি ছলকানোর আওয়াজ পায় শৈলী। মিহরান কোথায় বুঝতে পেরে খাট ছাড়ে ও।

থাই গ্লাস ভেদ করে সামনে তাকাতেই শৈলীর মুখে হাসি ফোটে। মিহরানকে পুলে সাঁতার কাটতে দেখে থাই এর চৌকাঠে হেলান দু হাত বুকে বেধে দাড়ায় ও। বাদলের ঘনঘটা সরিয়ে আকাশে চাঁদ উঠেছে এখন, নিজের উজ্জ্বলতায় তিমিরে ডোবা ধরনীকে আলোকিত করার চেষ্টায় লিপ্ত সে। সেই চন্দ্রকিরণ পুলের আশপাশের পরিবেশকে ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজের আলোয়। তারই মাঝে এক পেটানো মেদহীন শরীরের অধিকারী সাঁতার কেটে একবার যাচ্ছে এপার তো একবার ওপার। পানির আস্তর তার চওড়া কাধ বেয়ে গলিত কাঁচের ন‍্যায় নামছে। শৈলী এই দৃশ‍্য দেখে রীতিমতো কেঁপে ওঠে। এতো আকর্ষণীয় কেন এই মানুষটা? কেন এতো সুন্দর সে?

মিহরান ততক্ষণে শৈলীর অস্তিত্ব বুঝে তাকিয়েছে। স্ত্রীকে সামনে পেয়ে সাঁতার থামিয়ে পারে আসে। পুল থেকে বের হয়ে পাশে রাখা টাওয়েল ঘাড়ে পেঁচায়। শৈলীও পেছনে থাই গেট লাগিয়ে বেরিয়ে আসে। মিহরান এক পাশের টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ব‍্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
– তুমি উঠলা কেন ঘুম থেকে?

শৈলী মিহরানের হাত টাওয়েল থেকে সরিয়ে, টাওয়েলটাই ওর কাধ থেকে বের করে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। তারপর মিহরানকে নিয়ে যেয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে ওর মাথা নিজ হাতে মুছে দিতে থাকে,
– আগে বলো, তুমি এতো রাতে সুইমিং করছিলা কেন?
– গরম লাগছিল খুব। পানিতে কয়েকটা ঝাপ দিতে ইচ্ছা করছিলো।
– তাই বলে এতো রাতে? ঠান্ডা লেগে যেতে পারে তো।

মিহরান শৈলীর কথা শেষ হওয়া মাত্রই শৈলীর হাত ধরে পেছন থেকে এক ঝটকায় টেনে সামনে নিয়ে এসে ওর কোলে বসায়। নিজের ভেজা শরীরের সাথে লেপ্টে রেখে গোলাপি ওষ্টে অধর ছোয়। গভীর এক ভালোবাসার চিন্হ এঁকে দিয়ে চমকে ওঠা শৈলীর পানে চেয়ে বলে,
– ঠান্ডা লাগার কোন চান্সই নেই। গরম থাকার উপায় আছে যে আমার।

শৈলী ধরফরিয়ে কোল থেকে সরে ওঠে।
– তোমার রগে রগে শুধু দুষ্টামি বুঝছো। দেখ, এই রাত বিরাতে আমাকেও ভিজিয়ে দিলা। এখন ওঠোতো, যাও জলদি ড্রেস পাল্টাও, নয়তো আসলেই ঠান্ডা লেগে যাবে।

মিহরান আর কথা না বাড়িয়ে বাধ‍্য ছেলের মতন রুমে গেল চেইঞ্জ করতে। শৈলীও ভেবেছিল কাপড় বদলাবে কিন্তু পরে দেখলো সিল্কে নাইট গাউনের ওপর পরিবেশের শুষ্কতার কারণে পানি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ভেতরে আর না যেয়ে ওখানেই বসে মিহরানের অপেক্ষায় রইলো।

কিছুক্ষণ পরেই মিহরান বের হয়ে বসলো শৈলীর পাশে। এখন দুজনের চোখ থেকেই ঘুম পুরাই গায়েব। নানান বিষয়ে তাই নিজেদের মাঝেই আলোচনায় মত্ত রইলো দুজন। এমনই এক ক্ষণে শৈলী মাহিরার কথাটা তুললো,
– তোমার সাথে একটা বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগে প্রমিস করো যে নেগেটিভ ভাবে কোনো রিয়‍্যাকশন দিবা না।

মিহরান হাল্কা হাসে,
– বলো।

শৈলী অভয়ে নিজের কথা শুরু করে,
– মাহিরা….একজন কে….পছন্দ করে। আই মিন….তারা দুজনই করে…শুধু মাহিরা একা না…..
– আমি সেটা জানি।

শৈলী পিঠ সোজা করে চমকে তাকায়।
– তুমি জানো মানে?
– মানে আমি জানি যে মাহিরা একজনকে পছন্দ করে এবং কাকে করে সেটাও জানি।

শৈলীর সত‍্যি সত‍্যি মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। এই মানুষটা কিভাবে জানলো মাহিরার ব‍্যাপারে, কখনো তো এটা নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। তাহলে? ফাজলামো করছে না তো? শৈলী আরও গভীরে নজর দিল এই ব‍্যাপারে,
– তোমার কি মনে হয় কাকে করে পছন্দ তোমার বোন।

সামনে থেকে অকপটে জবাব আসে,
– তন্ময়কে।

শৈলী এক ঝটকায় দাড়িয়ে যায়,
– তুমি জানলে কিভাবে?

স্ত্রীর বিস্ফোরিত চোখের বিস্ময়কর দৃষ্টি দেখে এবার মিহরান একটু বড় করে হাসে, তবে কোনো উত্তর দেয় না। শৈলী অধৈর্য‍্য হয়ে ওর পাশে বসে বাহু ঝাকায়,
– এই বলো না, তুমি এটা কিভাবে জানলা?
– আমার বোন আমার বেস্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করছে আর এটা আমি জানবো না? তুমি আমাকে আসলে কি মনে করো?

শৈলী একটু চুপ হয়, তারপর আবার আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– তুমি কি প্রথম থেকেই জানতে ওদের ব‍্যাপারে?
– না, প্রথম থেকে না। তবে যখন তন্ময়ের বারংবার নানা জিনিস নিয়ে মাহিরাকে ঘিরে চিন্তা করা অস্ট্রেলিয়া থেকে শুনতাম তখনই বুঝেছি ও আমার বোনের প্রতি দুর্বল। এবং এখানে আসার পর দুইজনের ভাবভঙ্গি দেখেই আন্দাজ করে ফেলেছি যে দুর্বলতা শুধু আমার বন্ধুর তরফ থেকে না।

শৈলী অপ্রতিভ চোখে মিহরানকে দেখে। মানুষটার মাথা কতো দিকে চলে তা আসলেই বোঝা মুশকিল।
– তুমি যখন জানোই তাহলে মাহিরা আর তন্ময় ভাইকে টেনশনে রাখসো কেন? বলে দাও যে তুমি জানো।

মিহরান একটু গম্ভীরতা নিয়েই জবাব দেয়,
– মহম। আমি কেন বলতে যাব? দায়িত্ব এটা তন্ময়ের আমাকে জানানোর। ওর বন্ধু হলেও এখানে সম্পর্কে আগে আমি মাহিরার বড় ভাই। সেই স্বার্থে আমি আগাবো না। ওকেই এগিয়ে আসতে হবে।

শৈলী বুঝলো ব‍্যাপারটা, কারণ মিহরান ভুল বলেনি। মাহিরার সারা জীবনের দায়িত্ব তন্ময়কে নিতে হবে। তাহলে সেই দায়িত্ব নেওয়ার যোগ‍্যতা প্রমানে তাকে তো সুপুরুষ হয়ে সামনে আসতে হবে আগে। মিহরান আগালে তো হবে না। তবে একটা বিষয় মিহরানের থেকে শৈলীর জানতেই হবে, তাই নিজের আল্তো হাতের স্পর্শে শৈলী সেই প্রশ্নটাই করে,
– আচ্ছা তন্ময় ভাইয়া তোমাকে বলার পরে তুমি কি করবা? মানে তুমি কি এই সম্পর্কে রাজি হবা?

মিহরান ভাবলেশহীন চোখে তাকায়,
– না রাজি হওয়ার কি আছে? তন্ময়ের পুরো পরিবারকে আমি চিনি, জানি। ওনারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত একটি পরিবার। আর তন্ময় তো আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, আমার বোন যে ওর সাথে পূর্ণ রুপে সুখি থাকবে, আমি সেটা খুব ভালো মতনই জানি।

শৈলী তো খুশিতে আত্মহারা। মিহরানের বাহু জড়িয়ে ওর কাধে নিজের মাথা রেখে প্রফুল্লচিত্তে বললো ও,
– ওয়াও আমাদের বিয়ের পর মাহিরাদের বিয়ে। আমি তো আমার বান্ধবী কাম ননদের বিয়েতে সেই মজা করবো।

মীহরান স্ত্রীর খুশি দেখে হাসে,
– ম‍্যাডাম আপনার বান্ধবী ছাড়াও যে আরেকটা অবিবাহিত ননদ আছে, সেটা কি ভুলে গিয়েছেন? মাহিরার বিয়ে আগে হবে না। আগে আমরা মালিহার বিয়ে দিব।

শৈলী উঠে মিহরানের দিকে তাকিয়ে দাঁত কামড় দেয়,
– উপস্ সরি সরি। আমি এক্সাইটমেন্টে আপুর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাই তো। আগে তো আপুর বিয়ে তারপর সে না মাহি। আর আমি শুধু মাহির বিয়েতে মজা করা নিয়ে বসে আসি। দেখসো আমার বোকামি?

নিজের স্ত্রীর মুখরিত আননে অপরাধবোধের ছায়া দেখে মিহরানের ভারী আদুরে লাগে। সাথেসাথেই নিজের বুকে টেনে ওর মাথা। আগলে নিয়ে মাথার চুলে ঠোট ছোয়ায়।
– এতো টেনশনের কিছু নেই। দুইজনই তোমারই ননদ। মজা দুই বিয়েতেই করতে পারবা।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here