#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৮
দুরু দুরু বুকে মিহরানের দরজার সামনে এসে দাড়ালো মাহিরা। পথে আসতে আসতে তিন কুল সুরা পড়ে তিন বার ফু দিয়ে নিয়েছে নিজের ওপর। যমের আস্তানায় যাচ্ছে, নিজের রক্ষা কবজ তো পরে নিতে হবে তাই না!
ওর এই মেজো ভাইটা বাসায় সবচাইতে চুপচাপ থাকে যা বাকি চার ভাইবোন থেকে একদম আলাদা। সেই ভাবে চিন্তা করলে, তার স্বভাব হওয়ার কথা একদম শান্ত, শিষ্ঠ। কিন্তু এই চুপচাপ বৈশিষ্ট্যের পেছনের অগ্নিশর্মা ব্যক্তিত্ব খুব করে চেনা আছে মাহিরার। যদি কোনো উল্টা পাল্টা কিছু মিহরানের চোখে লাগে বা কানে আসে তাহলে খবর এক্কেবারে টাইট। সাধেই কি আর আড়ালে মিহরানকে যম ডাকে মাহি?
নিজের রচিত কান্ডটা আবারও একবার মনে মনে রিভিশন দিয়ে দরজায় টোকা দিল মাহিরা। ওমনেই ভেতরে থেকে চেনা গমগমে আওয়াজ কানে বাজলো,
-come in.
মাহিরা টিপ টিপ পায়ে ভেতরে ঢুকলো। রুমে প্রবেশ করতেই ভাইয়ের গম্ভীর শীতল চাহণীর সাথে ওর সাক্ষাত ঘটলো। একটা শুক্না ঢোক গিললো মাহিরা।
– ভ..ভাইয়া ড..ডেকেছিলা?
-হ্যা। বোস, কথা আছে?
মাহিরা চুপচাপ সামনে এসে বসে পরলো, কিন্তু ভিতরে রীতিমতো সিডর চলছে ওর। কি বলবে ভাই? কি কথা আছে?
মাহিরা বসার পর, মিহরান একটু সামনে ঝুকলো। ডেস্কের ওপর নিজের দুহাত মুঠ করে বোনের দিকে তাকালো,
– তোকে কিছু প্রশ্ন করবো ভেবে চিন্তে উত্তর দিবি।
ক…কি জিজ্ঞেস করবা?
মিহরান ভ্রু জোড়া কুচকায়,
-তুই এরকম তোতলাচ্ছিস কেন?
– হ্যা? কই? কই তোতলাচ্ছি? তোতলাচ্ছি না তো। তুমি বলো বলো।
দুই ঠোট চেপে একটু থামলো মিহরান,
– তুই রিক্ নামের কোন স্টুডেন্ট কে চিনিস? তোর সিনিয়র হবে মেইবি।
এবার মাহিরার ভ্রু জোড়া কুচকে গেল। প্রশ্নটা প্রথমে ওর বোধগম্য হলো না,
-কার কথা বলছো?
– রিক্। আমাদের ডিরেক্টর দের মধ্যে একজনের ছেলে।
মাহিরা এখনো কনফিউস্ড,
-রিক্ কে কেন চিনবো না? ওকে ভার্সিটির কে না চিনে? তবে তুমি…ওর কথা জিজ্ঞেস করছো কেন?
মিহরান এই উত্তরে একটু দম নিল। তারপর সরাসরি নিজের বোনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিল,
– রিক্ ছেলেটা কি শৈলী কে কোনো ভাবে ডিস্টার্ব করে?
মাহিরার চোখ ততক্ষণে কোটর থেকে বের হয়ে যাবার জোগাড়,
-তুমি কিভাবে জানলা?
-তার মানে করে?
ভাইয়ের এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দিল না মাহিরা। নিজের আসনে নড়েচড়ে বসলো,
– ভালো হইসে যে তুমি নিজে থেকেই ব্যাপারটা বুঝতে পারসো ভাইয়া, নয়তো আমি চিন্তা করসিলাম আজ সন্ধ্যায় তোমার সাথে এই নিয়ে কথা বলবো। এই রিক্ ছেলেটা, আস্ত একটা গুন্ডা বুঝছো। বাবা বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের একজন বলে ও মনে করে ভার্সিটিটা ওর পার্সোনাল সম্পত্তি। অনেক মানুষদের বুলি করে ও। কিছু সাগরেদ জোগাড় করসে, তাদেরকে নিয়েই ক্যাম্পাসে দাপট দেখায় বেড়ায়, স্টুডেন্টসদের নানান ভাবে হ্যারাস করে। আর সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয়টা হলো, গত দুই সেমিস্টার থেকে এই গুন্ডাটার চোখ পরসে শৈলীর ওপর। মেয়েটাকে এতো বিরক্ত করে, তুমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবা না। রাস্তায়, করিডোরে, সিড়িতে যেখানে শৈলীকে পায় সেখানেই ওর অসভ্যতামো শুরু। শৈলী বেচারি প্রথম কয়েকদিন ভীষণ ভয় পেয়েছিল, কিন্তু ও নিজেও রুখে দাড়ায়, কঠিন চেহারায় প্রতিবাদ করে, তবে লাভ সেরকম হয় না। আর…
মাহিরাকে মাঝ পথে থামায় মিহরান।
– এতো কিছু শৈলীর সাথে ঘটছে, তো ও কম্প্লেইন দেয় না কেন? তুইও তো বান্ধবী হিসেবে প্রতিবাদ করতে পারিস, টিচারদের জানাতে পারিস।
মাহিরা একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে,
– সেটা যদি আমরা করতে পারতাম তাহলে তো হইতোই। কিন্তু করার উপায় নাই। কারণ হলো শাহজাহান স্যার, মানে রিকের বাবা। রিকের নামে নালিশ মানে সেটা তো তার কাছেই যাওয়া, এবং এই রিস্ক কোনো ফ্যাকাল্টি নিতে চায় না। প্রথম দিকে একবার শৈলী একজন ফিমেল ফ্যাকাল্টিকে বিষয়টা বলেছিল।
-তারপর?
– সেই ম্যাডাম আস্বস্ত করেছিলেন যে ব্যাপারটা উনি দেখবেন, কিন্তু পরে এটা নিয়ে আর কোনো কথাই হয় নাই। শৈলীও আস্তে ধীরে বুঝে গেল যে এখানে কিছুই হবে না। তাই ও কারো সাহায্য নেওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। নিজেই যতটুকু পারে ফাইট করে।
মিহরান এতো কিছু শুনে ভেতর ভেতরে পুরা তব্দা খেয়ে গিয়েছে। এতো মান সম্মত একটা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এরকম জঘন্য কাজ হচ্ছে, সেটার প্রতিবাদ কেউ করছে না? কারোর মাথা ব্যাথা নেই। সবাই কি আসলেই এতোটা কাপুরুষ? চেইন অফ কমান্ডের নীতিমালার তলে সবাই কি নিজেদের সততা হারাতে বসেছে? শৈলীর কথা চিন্তায় আসতেই মনটা মিইয়ে গেল, ভীষণ রকম খারাপ লাগছে মেয়টার জন্য। না যেন কতো কিছু একা সহ্য করতে হয়েছে ওকে। কতোটা অসহায় বোধ করেছে হয়তো। তবে এটা ভাবনায় আসতে আবার ভালোও লাগলো যে শৈলী নিজের জন্য লড়ছে, সততার লড়াই নিজেকে হারতে দেয়নি। বোঝাই যায় মেয়েটা সাহসি ও আত্মসম্মানি।
নিজের আসনে একটু নড়লো মিহরান। বোনের দিকে তাকালো,
-আজকে তোর ক্লাস শেষ কয়টায়?
– এই তো আর একটা ক্লাসের পরেই ছুটি।
-আর মেহরাবের?
– ওরও একই সাথেই শেষ।
অষ্টযুগল আবার চেপে মিহরান আদেশের সুর তুললো,
– গুড। ক্লাস শেষ করে সোজা অডিটোরিয়ামে যাবি তোরা দুইজন। শৈলীর কাজ শেষ হলে ওকে নিয়ে একেবারে বাড়ি ফিরবি।
এইবার তব্দা খাওয়ার পালা মাহিরার। এতোক্ষণ ঝুকে থাকা পিঠ সোজা হয়ে গেল ঝটপট। ভাইয়ের এমন আদেশ যেন গলদেশ দিয়ে নিচে নামছে না।
– শৈলীকে…কেন?…মানে হঠাৎ কি ব্যাপার ভাইয়া? শৈলীকে নিয়ে হঠাৎ এতো কন্সার্নড…
বোনের স্বরে দুষ্টুমির রেষ বুঝতে মিহরানের একটুও সময় লাগলো না,
-তোকে এতো প্রশ্ন করতে বলেছি?
-না না… আমি তো এমনি…
– এমনি ওমনি পরে হবে। তোর ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে, এখন যা।
মাহিরা প্রচন্ড রকম অবাক হচ্ছে,
– তুমি আমাকে এই কারণে এখানে ডেকেছিলা?
মিহরান শীতল পানে চায়,
– তো আর কোন কারণে ডাকবো?
-না….মানে হ্যা আর তো কোনো কারণ নেই। আচ্ছা আমরা শৈলীকে নিয়েই বাসায় ফিরবো। তুমি কোনো চিন্তা করো না।
-হমম। এখন যা।
মাহিরা ঘুরে দরজা পর্যন্ত যেয়েই আবার কিছু মনে করে ফিরে আসলো। মিহরান চিন্তায় পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতে নিয়েও আবার বোনকে দেখলো,
– ভাইয়া…ভুলেই গেলাম বলতে, আজ তো আম্মু কে নিয়ে আমার ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা। তাই বাসায় দুপুরেই যেতে হবে।
মিহরান উত্তর দিতে একটুও সময় নিল না,
– আম্মুকে ডাক্তারের কাছে আমি নিয়ে যাব। তোর লাগবে না এবার।
-কিন্তু…ঐ জায়গাটাতো শুধু আমিই চিনি। সবসময় আমিই নিয়ে যাই।
– তুই এড্রেস আমাকে পাঠিয়ে দে। আমি নিয়ে যাব আম্মুকে।
দুই কাধ একসাথে উঁচু করে সম্মতি জানালো মাহিরা। ভাইকে তখনি লোকেশন সেন্ড করে বের হয়ে আসলো রুম থেকে। বের হয়েই খুশিতে দুই হাত আকাশে তুলে পরম করুণাময় আল্লাহ্কে বড় সর একটা ধন্যবাদ জানালো। যাক্ বাবা, ওকে নিয়ে ভাইয়ের কাছে কোনো নিউজ আসে নি। বকা খাওয়া থেকে বাঁচা গেল।
—————————
গাড়িতে নাইয়োতো বিশবার নিজেকে আয়নায় দেখে ফেলেছে তুরিন। একবার একপাশের চুল কানের পিছে গোজে। আবার সেটা ঠিক যায়গায় নিয়ে আসে। ঠোট দুটো নানান আঙ্গিকে ঘুড়িয়ে দেখে নিচ্ছে লিপস্টিক বসেছে কি না।
ওর এই কান্ড অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছে মালিহা। এতোক্ষণ বান্ধবির সন্মানে চুপ থাকলেও এখন আর না হেসে কোনো ভাবেই পারলো না। হো হো করে সারা গাড়িময় হেসে উঠলো ও। এতে তুরিন বেচারি বেশ বিরক্ত হলো,
– এই ভাবে হাসছিস কেন তুই?
মালিহা হাসি থামাতেই পারছে না,
– তো কি করবো বল্? সেই কখন থেকে এই এক চেহারা দেখেই যাচ্ছিস আয়নায়। এতো সাজ আয়োজন কাজে লাগবে তো শেষ পর্যন্ত?
তুরিনের মেজাজ আরো বিগড়ে গেল। বান্ধবী কোমড়ে একটা চিমটি দিয়ে বললো,
-তুই বন্ধু না শত্রু বল তো? অলক্ষি কথা তোর না বললে হয় না?
চিমটিতে ব্যাথা পেলেও সেটা এখন গ্রাহ্য করলো না মালিহা। বান্ধবী ভীষণ ক্ষেপেছে। তাকে মানানো জরুরি। দু হাতে একপাশ দিয়ে তুরিনকে জড়িয়ে ধরে বললো সে,
– আরেহ্ মেরি জান, এতো ক্ষেপিস না। আমি তো এমনিতেই বললাম। আর শোন, তোকে ভিষণ সুন্দর লাগছে, ভাইয়া দেখে একেবারে ফিদা টিদা হয়ে শেষে প্রপোজ না করে বসে আজ, তাই দেখ।
মুহূর্তেই তুরিনের রাগ কর্পুরের ন্যায় ভেষে গেল, সেখানে জেঁকে বসলো একরাশ লজ্জা আর খুশি। কুন্ঠায় নুইয়ে যাওয়া নয়নে মালিহাকে বললো,
– তুই কথা বললেই সব এক্সট্রিম লেভেলে বলিস। সেটা খারাপ হোক বা ভালো। তোর ভাইকে বুঝি আমরা দুজন চিনি না? উনি করবে আমাকে প্রপোজ, চোখ তুলে তাকায় কি না তাতেই সন্দেহ আছে।
মালিহার হাসি আবার চওড়া হলো।
– আজকে দেখবে, দেখিস তুই।
-তাই যেন হয় বান্ধবী, তাই যেন হয়।
………………………..
ক্লাস শেষ করে মাহিরা মনের সুখে হেলতে দুলতে অডিটোরিয়ামে পৌছালো। শৈলীর সাথে ফোনে আগেই জেনে নিয়েছে যে ও কোথায়, তাই দিক নির্ধারণ করতে বিলম্ব হলো না। গভীর মনোযোগ নিয়ে রঙ বসানো শৈলীর পাশে এক প্রকার আছড়ে পরলো মাহিরা। শৈলী বান্ধবীকে দেখেই ঠোটে টেনে আনলো উজ্জ্বল হাসি,
– কি রে? তুই হঠাৎ এখানে?
শৈলীর কাধে কনুই ঠেকিয়ে মাহিরা না জানার ভান ধরে বললো,
– সেটাই তো আমি ভাবছি ডিয়ার বান্ধবী, আমি এখানে কেন?
মাহিরার হেয়ালি কথায় শৈলী ভ্রু জোড়া কুচকে হেসে দেয়,
– ফাজলামো করিস? তোর না আন্টিকে নিয়ে আজ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা?
-ছিল কিন্তু এখন প্ল্যান পরিবর্তন হয়েছে। এবং সেটার কারণও সয়ং আপনি ম্যাডাম।
হঠাৎ হাতের তুলি থেমে যায় শৈলীর, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন ছুড়ে,
– আমি? আমি কেন?
-ভাইয়া বলেছে তাই।
-কোন ভা…মানে মিহরান স্যার বলেছে? মানে বুঝলাম না তোর কথার মাহি?
মাহিরা এবার আসলেই গম্ভীর চোখে তাকালো,
-মানে তো আমার কাছেও ক্লিয়ার না দোস্ত। ভাইয়া আমাকে নিজের কেবিনে ডেকে, হঠাৎ রিকের ব্যাপারে খোজ খবর নিলো। কথার মধ্যেই রিকের তোকে বিরক্ত করার ব্যাপারটাও চলে আসলো। এরপর ভাই হুট করেই আমাকে আদেশ দিলেন তোকে সাথে নিয়ে বাসায় যেতে। আম্মুকেও নাকি সে নিজেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন কিন্তু আমার তোকে ছাড়া বাসায় যাওয়া চলবে না। কি আজব ব্যাপার স্যাপার তাই না? তোকে নিয়ে ভাইয়া এতো কনসার্নড?
শৈলীর মন পুরোপুরি রঙতুলির জগৎ থেকে বের হয়ে এসেছে। মাহিরার কথায় ওর সপ্তম আসমান থেকেও পরাটা কম মনে হচ্ছে। আসলেই তো! মিহরান স্যার হঠাৎ ওকে নিয়ে কেন চিন্তিত হতে গেলেন?
শৈলীর গম্ভীর চিন্তনে বাধ সাধলো মাহিরার দুষ্টুমি,
-কি গো বান্ধবী, গতকাল তো আমার দেওয়া প্রপোজালে খুব হেসেছিলা। কিন্তু দেখ, আমার কথা কিভাবে ফলিত হচ্ছে। ভাইয়ার তোকে নিয়ে এতো টেনশন দেখে আমি শিওর ভাইয়া তোকে পছন্দ করে। আমার ভবিষ্যৎবাণী কখনোই ভুল হয় না।
শৈলী একবার চোখ খিচে বন্ধ করে আবার খুললো,
– তোর ব্রেনের ট্রেন কে একটু ধীর গতিতে চালা দোস্ত। ট্র্যাকের বাইরে চলে যাচ্ছে।
মাহিরা চোখ কুচকে চায়,
-মানে কি?
-মানে হলো, ব্যাপার নিশ্চয়ই অন্য কোথাও ঘটেছে। আজ স্যার ব্যাক স্টেজে যখন এসেছিলেন তখন রিকের সাথে আমাকে দেখেছিলেন। ওই সময় রিক্ আমাকে ভীষণ জ্বালাতন করছিল। হয়তোবা সেটা স্যারের চোখে পরেছে। আবার পরেও কিছু ঘটতে পারে যেটা আমি জানি না আর স্যার তোকে জানায়নি। সব মিলিয়েই স্যার হয়তো এমন একটা সিদ্ধান্তে পৌছেছেন। সো, আগে থেকেই বেশি চিন্তা না করাটাই ভালো।
এবার মাহিরা ধাতস্থ হলো। এইভাবে আসলে ও চিন্তাই করেনি। করলেই মনে পরতো যে ওর এই মেঝ ভাইটা যে ধাঁচের সেভাবে হুট করে কারো প্রেমে পরা অসম্ভবের থেকেও বেশি কিছু তার ক্ষেত্রে। উদ্ভট সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে শৈলীর দিকে তাকালো ও,
– আচ্ছা বুঝছি এবার। বাদ দে এসব কথা। তোর কতোক্ষণ লাগবে বল্।
শৈলী নিজের কাজের দিকে একবার চেয়ে বললো,
-একটু সময় লাগবে রে। কালকেই তো প্রোগ্রাম, হাতে টাইম নাই। তুই এক কাজ কর্, তুই চলে যা। আমি চলে আসতে পারবো।
-আমাকে কি পাগল কুকুরে কামড়াইসে যে মেজো ভাইয়ার কথার বরখেলাফি করবো? বাসায় গেলে সবার আগে আমাকে এই নিয়ে জেড়া করবে ও। তোর সাথে আমাকে যেতে বলসে মানে আমাকে এখানেই থাকতে হবে। এখন তুই কাজে মন দে। তোর কাজ শেষ হলে আমরা দুজনেই রেহাই পাবো।
শৈলী আর কোনো কথা বাড়ালো না। বলেও যে কোনো লাভ হবে না সেটা ওর জানা। তাই মাহিরার কথা মেনেই নিজের কাজে মনোযোগ দিল।
……………………
আসরের আজান কিছুক্ষণ আগেই শেষ হলো। গার্ল্স কমন রুম থেকে মাহিরা আর শৈলী নামাজ পরে, ক্যান্টিন থেকে দু কাপ চা খেতে খেতে উঠে এসেছে অডিটোরিয়ামে। আরেক কাপ এনেছে মেহরাবের জন্য। ছেলেটা সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে বেজায় ব্যস্ত।
দরজা দিয়ে দুজন ঢুকতে যাবে ঠিক তখনই চিৎকার দিয়ে ব্যাগের ভেতর থেকে বেজে উঠলো মাহিরার ফোন। মাহিরা দাড়িয়ে গেলেও শৈলী কাজের তাড়া বলে ভেতরে চলে গেল। সাথে নিয়ে গেল মেহরাবের চা। শৈলীর তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হলেই তো দুজন বাসায় জলদি ফিরতে পারবে! নয়তো ওর জন্য মাহিরার দেরী হচ্ছে এটা ভালো দেখায় না।
শৈলী যেতেযেতেই মাহিরা ফোনটা বের করলো। কলার আইডি দেখেই মুচকি হেসে ফেললো ও। ঝটপট আশপাশে একবার তাকিয়ে ফোনটা ধরলো,
– হ্যালো
ওপাশের ব্যক্তির হাস্যজ্জ্বল কন্ঠ শুনে মহিরার মনে বয়ে গেল, হিম শীতল বাতাসের দোলা। আজ সারাটাদিন কাজের ব্যস্ততায় মানুষটাকে সময়ই দিতে পারেনি মাহিরা। এই জন্যই বোধহয় এতো অভিযোগ আজ! সমস্যা নেই, মাহিরা সময় নিয়ে নিজের প্রেমিক পুরুষের মান ভাঙাবে এখন। এমনিতেও এই সময় ওর আর কোনো কাজ নেই। শৈলী নিজের কাজ করুক, মাহিরা নিজের।
……………
মিহরান বাসায় ফিরেছে আধাঘন্টা আগে। মায়ের বাসা থেকে লাঞ্চ করে উপরে উঠেছে। বিকেল চারটায় ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট। সেই অনুযায়ী সময় বেশি নেই। ভালো করে একটা শাওয়ার নিয়ে ড্রেস পাল্টে আবার নিচের দিকে রওনা হলো। সকাল থেকে ফরমাল শার্ট প্যান্টে বেশ হাস ফাস লাগছিল এতোক্ষণ। তার ওপর রাগে মাথার রগ্ তো নিভার নামও নিচ্ছে না। তাই এখন একটা ফ্রেশ শাওয়ারের খুব দরকার ছিল বৈকি। পেটানো শরীর থেকে জলফোটা মুছে ক্যাশুয়াল টিশার্ট আর গ্যাভাডিন জিন্স পরেই রওনা দিল মায়ের বাসায়।
এক তলা ওপরে বলেই লিফ্ট না ব্যবহার করে সিড়ি দিয়ে নামলো মিহরান। বাসার মূল ফটকের সামনে আসতেই দেখলো পেছনে লিফ্ট খুলতে। ও মনে করেছিল মাহিরা, মেহরাব আর শৈলী বোধহয় ফিরেছে। শৈলীকে নিশ্চিন্তে বাসায় ফিরতে দেখার আকাঙ্ক্ষায় গম্ভীর মুখে অষ্টযুগলের দুপ্রান্তে না দেখা হাসি পরে পেছনে ঘুরলো, কিন্তু সেই না দেখা হাসিটাও পুরাপুরি গায়েব করে দিতে হলো ঠোট থেকে। শৈলীরা আসেনি। লিফ্ট থেকে বের হলো….
চলবে…..