#পরিণয়_প্রহেলিকা
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৫
মোবাইল খোজাতে মন থাকায় শৈলী প্রথমে শুনতেই পারেনি মাহিরার কথা। সামনের দিকে পরে থাকা চুলের গোছা কানে গুজে এপাশ ওপাশ খুজতে খুজতে জিজ্ঞেস করলো ও,
-কি বললি? কাকে পেয়েছিস?
মাহিরা কিছুটা এগিয়ে আসে,
– তোকে শৈলী। তোকেই আমার মেজো ভাবী করতে চাই আমি।
তড়িত বেগে চোখ ফেরায় শৈলী, দৃষ্টিতে অসীম বিশ্বয় দেখা দেয় প্রথমে। মাহিরার দিকে থম মেরে কিছুক্ষণ তাকিয়েই তারপর ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠে।
মাহিরা হকচকায়। এই রুপ প্রতিক্রিয়া ও আশা করেনি।
-শৈলী তুই ঠিক আছিস? এভাবে পাগলের মতন হাসছিস কেন?
শৈলী তখনো নিজেকে থামাতে পারেনি। হাসতে হাসতে হেলে পেছনের দিকে পরে যেতে যেতে কোনভাবে মুখ দিয়ে বের করলো,
– নাইস জোক দোস্ত! ভীষণ মজা পেলাম।
মাহিরা চেহারা সোজা করে,
-আমি কোনো জোক করছি না। আই এ্যাম সিরিয়াস শৈলী।
শৈলী তখনো হাসে। এ যেন আজ থামবার নয়,
– সাধেই কি তোকে মেহরাব গাধী ডাকে মাহি? তুই আসলেই গাধী রে। তোর মাথার হার্ড ডিস্কের কোনো স্টেশন নাই, যা খুশি তাই চিন্তা করে, তা সে যতই উদ্ভট হোক না কেন।
শৈলীর অট্টহাসিতে মোটেও যোগ দিল না মাহিরা, বরং মুখটা সেই একই ভাবে সিরিয়াস করেই রাখলো। পলক না ফেলে এক নাগারে চেয়ে থাকলো ও শৈলীর দিকে।
এদিকে, এতোক্ষণ পেট ফেটে হাসলেও মাহিরার গম্ভীরতা আঁচ করে শৈলী একটু থামলো। চোখে ফিরে এলো আবার সেই বিশ্বয়,
– তুই কি এই ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে কথা বলছিলি মাহি?
– অবশ্যই। তো তোর কি মনে হয়, আমি ফান করছিলাম?
নাদানের মতন ওপর নিচ মাথা নাড়ায় শৈলী। সে আসলেই মনে করেছিল মাহিরা মজা করছে। মাহিরা নিরুদ্বেগ হয়ে বললো,
– আমি আমার মেজো ভাইয়াকে সব চাইতে বেশী ভালোবাসি। তাকে নিয়ে ফান আমি জীবনেও করবো না। তোকে আমার ভাইয়ার জন্য পারফেক্ট মনে হয়েছে, তাই আমি বললাম। আর এখানে আমি কোনো প্রবলেমও দেখতে পাচ্ছি না।
শৈলী তখনো হতভম্বের মতন চেয়ে আছে,
– তুই কোনই প্রবলেমই দেখতে পাচ্ছিস না?
মাহিরা নির্বিকার,
– একদমই না। কেন তুই কি প্রবলেম পাচ্ছিস নাকি কোন? এই, তোর কাছে আমার ভাইকে কি পার্ফেক্ট মনে হয় না নাকি? আমার মিহরান ভাইয়া লাখে না কোটি তে একটা বুঝলি? ওনার মতন হাসবেন্ড পেলে তুই হবি পৃথিবীর সবচাইতে ভাগ্যবতি মেয়ে। তখন দেখবি অন্য মেয়েরা কেরকম জেলাস হয়, আর তোর মনে তখন উড়বে প্রজাপতি, বাড়বে তোর ঠাট।
মাহিরার উচ্ছাসিত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে শৈলীর লজ্জা বাদ দিয়ে আবার পেট ফেটে হাসি আসলো,
-বান্ধবী, থাম থাম। অত দূরে যাসনে।
মাহিরা এতোক্ষণ আসলেই শৈলীকে মিহরানের পাশে চিন্তা করছিল। শৈলীর অট্টহাসিতে বাস্তবে এসে সে বেশ বিরক্ত,
– কি হইসে? সমস্যা কি তোর বলতো শৈলী? এভাবে ভ্যাবলার মতন খালি হেসে যাচ্ছিস কেন? তোর মাথার তার কি ছিড়ে গেছে?
শৈলী একটু থেমে বলে,
-ছেড়েনি, তবে এই সব কথা শুনলে অতি শীঘ্রই ছিড়বে, বুঝলি? যেটা সম্পূরণই অবাস্তব, তা বাস্তবে শুনলে তো তার কেন মাথাই ছিড়ে যাওয়ার কথা।
মাহিরা হঠাৎ থমকায়। শৈলীর কথায় একদম পাত্তা না দিয়ে গোল গোল চোখে তাকায়,
-এই থাম থাম। সত্যি করে একটা কথা বলতো, তুই আবার অন্য কাউকে মন টন দিয়ে বসিস নি তো? আছে নাকি কেউ তোর জীবনে?
শৈলী বিরক্তিতে দ্রুত মাথা নাড়ায়,
– ওফফো! তুই কোথাকার চিন্তা কোথায় নিয়ে গেলি। আরে আমার এরকম কিছু নেই। তবে তোর কথা গুলো শুনে আমার আসলেই খুব কাল্পনিক লাগছে রে। এই ডিসকাশনেরই কোনো মানে হয় না। চল্ অন্য কিছু নিয়ে গল্প করি।
কিন্তু মাহিরা নাছোড়বান্দা। সে সরাসরি চায় শৈলীর দিকে,
– কেন?
-কি কেন?
– কেন এই ব্যাপারটা কাল্পনিক? কেন ভাইয়া আর তোর মাঝে সম্পর্ক হতে পারবে না?
-কারণ তিনি আমার ডিপার্টমেন্টের লেকচারার…
-তো? লেকচারার রা কি বিয়ে করে না?
– আরে ধুর! তুই কথা শেষ তো করতে দিবি? তিনি আ_মা_র ডিপার্টমেন্টের লেকচারার। আমার গুরু হন তিনি।
-তো? কোথায় লেখা আছে গুরু শিষ্যে বিয়ে বন্ধন সম্ভব না? দেখাতে পারবি কোনো দলিল?
শৈলী এবার থমকায়। লজ্জায় উত্তর দিতে পারেনা মাহিরার প্রশ্নের, কারণ কোনো উত্তর নেই। আসলেই এই বিষয়ে কোথাও দলিল নেই বলেই শৈলী জানে। কতো টিচার স্টুডেন্ট এর বিয়ে হয়েছে। দু একটা তো নিজের কানেই শুনেছে। তাই এই ধরনের হৃদয়ের বন্ধন আসলেই অসম্ভব কিছু না এটা সঠিক। তারপরেও মাহিরার বলা কথা গুলো কেমন যেন ঠেকছিল শৈলীর কাছে। অদ্ভুত লাগছিল সবকিছু, পুরো প্রপোসালটাই। কিন্তু বান্ধবীকে এই বিষয়ে বাজিমাত দিতে ও সক্ষম হবে না দেখে বিষয় পাল্টানোর চেষ্টা করলো, ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,
-আচ্ছা এইসব কথা বাদ দে তো। আগে বল কালকের প্রিপারেশন কেমন? আমারও কাল একটা এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। অনেক কাজই বাকি সেটার। কম্প্লিট করতে না জানি রাত কয়টা বাজে।
মাহিরা মুচকি হাসে, শৈলীর পলকে আঁকা স্পষ্ট লজ্জা অবলোকন করে। বোঝে মেয়েটা এখন ওর থেকে লুকানোর চেষ্টা করছে। তাই আপাতত ওকে একটু ক্ষান্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ও,
– কালকের কুইজের পড়া ধরিই নাই এখনো। বাসায় এক দন্ড বসার সময় পাই নাই, পড়বো কিভাবে। এখন ধরবো যেয়ে। তাহলে উঠি রে।
শৈলী যেন মনে মনে হাপ ছেড়ে বাঁচে,
-আচ্ছা।
মাহিরা দরজা পর্যন্ত যেয়েই আবার শৈলীর দিকে ফিরে তাকালো,
– শোন, কালকে আমি, তুই আর মেহরাব একসাথে মেঝো ভাইয়ার গাড়িতে যাবো। ভাইয়া বলে দিয়েছেন। আমি গেলাম।
শৈলী মানা করতে চায়। কিন্তু মুখ খুলার আগেই মাহিরা ওকে থামায়,
– আ..আ! খবরদার মানা করবি না। আমাদের সাথে তুই যাবি, এটাই ফাইনাল। আর শৈলী…আমার প্রপোসালটা ভেবে দেখিস।
– কিন্তু মাহি…
শৈলীর ডাক রুমেই ছড়িয়ে রয়ে গেল। মাহিরা তো কখনই পগাড় পার।
……………
মাহিব রুমে এসেই দেখতে পেল তার ২৩ বছরে উপনিত রমণীর ক্লান্ত মুখ। সবে সালোয়ার কামিজ ছেড়ে মেক্সি পরে খাটে বসেছে ঝুমা। সারাদিনের ধকলটা ওর চোখে মুখে স্পষ্ট। কোমড়ে এক হাত রেখে পিঠটা একটু টেনে নিল। সাথেসাথেই মুখের অবয়বে এলো হাল্কা বিকৃতি। এই দেখে ধড়াশ করে উঠলো মাহিবের বুক। চলন্ত পায়ে স্ত্রীর কাছে পৌছে গেল দ্রুত।
পলক মুদে থাকায়, মাহিবের রুমে আসা তখনো খেয়াল করে নি ঝুমা। কারো হাতের উষ্ণ স্পর্ষ নিজের পিঠে অনুভব করতে পেরে চোখ মেললো ও। শান্ত নয়নে, অধরে স্মিত হাসির রেখা একে নিজের প্রেমিক পুরুষকে নজরে আটকে নিল। মাহিব আস্তে ধিরে পাশে বসলো ঝুমার। পিঠে রাখা হাতটা বাড়িয়ে কাধ ছুয়ে নিজেকে স্ত্রীর অতি নিকটে নিয়ে আসলো। ঝুমাও স্বামীর ইঙ্গিত বুঝে মাথাটা এলিয়ে দিল প্রসস্ত কাধে।
– ঝুমা?
-হমম?
– খুব খারাপ লাগছে?
ঝুমার হাসি আরও চওড়া হলো,
-এখন একদমই না।
মাহিব নিজের আরেক হাত ঝুমার উঁচু পেটে ছুয়ে ওর চুলের ভাজে নিজের অষ্টের স্পর্শ এঁকে দিল,
– মিথ্যা বলছো কেন বউ? তোমার ক্লান্তি তোমার সারা অঙ্গে স্পষ্ট। এতো দৌড়াদৌড়ি কেন করতে যাও তুমি? আম্মু কতো নিষেধ করে, তাও শোনো না। বাসায় কি কাজ করার মানুষের অভাব? রুমটাও নিচে শিফ্ট করতে বললাম, তাও করলে না। বড্ড জেদ দেখাচ্ছো ইদানিং।
মাহিবের কপট রাগ আর আহ্লাদি বকায় ঝুমার খুব হাসি পেল। মানুষটা ওকে চোখে হারায়। ঝুমাকে স্ত্রী না বরং ছোট বাচ্চার মতন আগলে রাখে। মাথাটা কাত করে ঠোট উল্টে ঝুমা বললো,
– আমি কোথায় বেশী কাজ করলাম? আম্মু কিছু ধরতে দেয়? বরং আমার খুব বোরিং লাগে এখন। তুমিও সময় দাও না একদম। খারাপ লাগে একা একা। তাই তো আজ বাসায় সব কাজিনদের পেয়ে একটু মজা করলাম। এই কারণে সামান্য হাপিয়ে উঠেছি এই যা! আর রইলো এই রুমের কথা, এই রুমে আমি নববধু হয়ে এসেছিলাম, তোমার বধু হয়ে এসেছিলাম । আমাদের জীবনের শুরু এই রুমটাতে। আমাদের স্বামী – স্ত্রী হওয়ার অস্তিত্ব এই ঘরের কোণায় কোণায় ছড়ানো। এই জায়গা ছাড়া আমি কোথাও শান্তি পাই না। আর তুমি বলছো, এই রুম শিফ্ট করবো? কখনোই না। আমি একদম ভালো থাকবো না অন্যকোথাও।
মাহিব মুচকি হেসে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ঝুমাকে নিজের মাঝে। বউটা তার ভিষণ আহ্লাদি। বয়সের ব্যবধান দুজনের মাঝে প্রায় দশেরএর কোঠায় তাই হয়তো এই আহ্লাদের মেলা। মাহিব আস্তে ধীরে পেছনের বালিশ ঠিক করে ঝুমাকে শুইয়ে দিল। নিজে পাশে কাত হয়ে এক হাতে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে শুলো। অন্য হাত দিয়ে ঝুমার চুলের ভাজে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো,
– তুমি এখন ঘুমাও। আমি আছি পাশে।
ব্যস! এতটুকুই যথেষ্ট ছিল ঝুমার মনে প্রশান্তি বয়ে যাওয়ার জন্য। আর চোখ খুলে রাখতে পারলো না। পারি জমালো ঘুমের দেশে।
———–
গভীর রাত্রি। ঘড়ির ছোট হাতটা দুটার ঘর পার করেছে বহু আগে। আশ পাশের পরিবেশ একদম নির্জন, ঘুমন্ত, চুপচাপ। ঘুম নেই তো শুধু এক জোড়া চোখে। সেই আক্ষিযুগল আবার নিজ কাজে ব্যস্ত। ব্যস্ত কাউকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করায়।
তুরিন নিজের মোবাইলে একটার পর একটা মিহরানের ছবি দেখেই যাচ্ছে। এই সব ছবি তার অনেক সাধনার। সংগ্রহ করতে জান বের হয়ে গিয়েছে যে! তাও তো ভাগ্য ভালো যে মিহরান নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল প্রাইভেট রাখেনি। ফ্রেন্ড না হওয়া সত্বেও তাই তুরিন যখন খুশি তখন প্রোফাইলে ঘুরে আসতে পেরেছে। তুলে নিয়েছে মিহরানের গুটি কয়েকটা পাবলিশ করা ছবি। এটা স্টকিং করা হচ্ছে যেটা দন্ডনিয় অপরাধ জেনেও তুরিন নিজেকে থামাতে পারেনি। ভালোবাসা যে মানুষকে পুরাই অন্ধ করে দেয় কথাটার সত্যতা নিজের জীবন দিয়েই বুঝতে পারে তুরিন।
মিহরানকে তুরিন প্রথম দেখেছিল আজ থেকে চার বছর আগে। মালিহার সাথে তখন ও ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রি। দুই বান্ধবীর সখ্যতা সবসময়েই ছিল আকর্ষণীয়। ভার্সিটির বাইরেও একে অপরের বাসায় ওদের আসা যাওয়া ছিল নিয়মিত। এরকমই এক দিন মালিহাদের বাসায় তুরিনের দেখা মেলে এক অতি সুদর্শন পুরুষের। প্রথম ঝলকেই যে এভাবে ক্রাশের ভারে হৃদয় চুরমার হয়ে যাবে, তুরিন তা কষ্মিকালেও ভাবেনি। মালিহার মেজো ভাইই যে সেই সুদর্শন মানব এটা জানার পর তুরিনের জীবনে বয়ে যায় বসন্ত। কোনো ভণিতা ছাড়াই বান্ধবীকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দেয় ও। তার সাথে আকুতি মিনতিও করে মালিহার কাছে ওর সাহায্যের জন্য। নিজের প্রানপ্রিয় বান্ধবীকে সাহায্যের আশ্বাস দিলেও মালিহা বেশি একটা কিছু করতে সক্ষম হয় নি। এমন না যে মেয়েটা চেষ্টা করেনি। চেষ্টা করেছে অনেক। কিন্তু পাহাড়েও মনে হয় খোদাই করে রাস্তা বানানো, মিহরানের মনে ঘর বানানোর থেকে সহজ। মালিহা ভাইয়ের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে চেষ্টা করেও তুরিনের ফিলিংসের ব্যাপারে বলতে পারেনি। আর তুরিন তো আরেকজন! মিহরানের সামনে যেতেই তার পুরো গতর জুড়ে কাপন ধরে বলে চার বছর পর, আজও সেই একই মোড়ে ওর ভালোবাসা রেড সিগনালে আটকানো।
ফোনের দিকে একটু ঝুকে তুরিন। আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে দেয় মিহরানের ছবি। ঠোটে আনে রহস্যময় হাসি,
– এবার আপনাকে ছাড়বো না আমি। এবার আপনাকে নিজের করেই তারপর দম নিব মিহরান সাহেব। আপনার ব্যাচেলার দিন অতি দ্রুতই শেষ হচ্ছে। নতুন জিবনে আপনাকে স্বাগত জানাতে আসছি আমি।
………………
রৌদ্রজ্জল সকাল। গত রাতেও বৃষ্টি হয়েছে তবে তার প্রমান হিসেবে কিছু জায়গায় জমে থাকা পানির আস্তর ছাড়া আর কিছুই নেই। শৈলী রাতের বৃষ্টি দেখে একটা জর্জেটের থ্রী পিস বের করেছিল যেটা ভিজলেও গায়ের সাথে সেটা লেগে যেয়ে ওর জন্য অপ্রস্তুত কোনো পরিস্থিতি বয়ে আনবে না, তবে এখন ঝলমলে রোদ দেখে, নিজের মত বদল করলো ও। আলমারি থেকে বের করলো, টিয়া আর হলুদের মিশ্রণে একটি লং কোঅর্ড সেট। সেটা পরে আয়নায় নিজেকে ঘুরে ঘুরে বেশ কয়েকবার দেখলো শৈলী। টপ্সটা হাটু বরাবর আর পালাজ্জো প্যান্টেটা জুতোর পাশ ছুয়েছে।
-হমমম। খারাপ তো লাগছে না মনে হয়।
নিজেকেই দেখে মন্তব্য করে বসলো শৈলী। আসলে এই ড্রেসটা কেনার সময় বেশ দ্বিধায় ছিল ও, ভালো লাগবে কি না এই নিয়ে। সেবার মাহিরা ছিল সাথে, ওই জোর করলো শৈলীকে কিনতে। বললো এটা নাকি বেশ মানাবে শৈলীর ওপর। এখন মনে হচ্ছে মাহিরা ভুল ছিল না।
চুল খোলা রেখেই আচড়ে নিয়ে, কানে অক্সিডাইজের বড় একটা রিং পরে নিল শৈলী। চোখে কাজল, ঠোটে হাল্কা কালারের লিপস্টিক ও হাতে ঘড়ি, ব্যাস! হয়ে গেল তৈরী ও। রুম থেকে বের হওয়ার সময় একটা স্কার্ফ গলার পেছন থেকে সামনে ঝুলিয়ে নিতে ভুললো না।
ব্রেকফাস্ট মাত্র শেষ করে উঠে দাড়াতেই বাসার বেল বেজে উঠলো। শৈলীর বুঝতে দেরী নেই এটা কে। একেবারে ব্যাগ হাতে নিয়ে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গেট খুললো ও।
মাহিরা ওপাশে দাড়িয়ে শৈলীর দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেল,
-ও মাই গুডনেস! আজকে সুর্যের দিকে তাকাবো না তোর দিকে বলতো?
শৈলী বের হয়ে দরজা ভিড়াত ভিড়াতে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি দিল মাহিরার দিকে,
– সকাল সকাল কি আবোল তাবোল বলছিস?
-আবোল তাবোল মোটেও না, সত্যি বলছি। সূর্যের মতন জ্বলজ্বল করছিস তুই এই মুহূর্তে। দেখলি আমার চয়েস কতো সুন্দর? ড্রেসটা যেন তোর জন্যই বানানো হয়েছিল রে।
এবার শৈলী হেসে দিল। বান্ধবীর কমপ্লিমেন্ট দেওয়ার ভঙ্গি বেশ উপভোগ করলো ও।
-মেহরাব কই?
মাহিরার চেহারায় তখনই হঠাৎ অস্থিরতা ধরা পরলো,
-এই যা! এখানে বকবক করতে করতে ভুলেই গিয়েছি, মেজ ভাইয়া আর মেহরাব অলরেডি নিচে নেমে গেছে। আমাদের জন্য ওয়েট করছে। চল্ চল্ তাড়াতাড়ি।
যেই ঝড়ের বেগে মাহিরা কথা শুরু করেছিল, ঠিক সেই বেগেই শৈলিকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে লিফ্টে উঠলো। শৈলী এখন আর এসব কিছুতে অবাক হয় না। মেয়েটা ভীষণ রকমের দুরন্ত, জানে ও।
মিহরান গাড়ি বের করে ড্রাইভওয়েতে রেখেছে। ড্রাইভিং সিটে বসেই মাইলেজ চেক করছিল। গাড়ির ব্যাপারে অনেক বেশী সচেতন সে, তাই প্রতিবার ড্রাইভের পূর্বে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সবকিছু চেক করে নেয়। এখনও তাই করছিল যখন পেছন থেকে হাসাহাসির আওয়াজ এসে ওর কানে বাধলো। মুখটা তুলে পাশের লুকিং গ্লাস দিয়ে পেছনে তাকাতেই চোখ আটকে গেল ওর।
চলবে….