#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_৩৪
#নিশাত_জাহান_নিশি
চাঞ্চল্যকর সব তথ্য শোনার পর মিশাল অস্থির হয়ে ওঠল! পাগলের ন্যায় ছুটে কলেজ থেকে বের হয়ে গেলো। রিকশা করে পার্কের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
রিকশায় কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত মিশাল উৎকণ্ঠায় কাতর হয়েছিল। রুমকির সরলতার সুযোগ নিয়ে যে তার ভাই রাফিন তার সাথে অন্যায় কিছু করবে না তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোথাও না কোথাও মিশালের এতোটুকু বিশ্বাস ঠিকই আছে রুমকি তার ভাই রাফিনকে নয় বরং মিশালকেই বেশি ভালোবাসে, বিশ্বাস করে এবং ভরসা করে! মিশাল যে কখনও তার খারাপ চাইবেনা রুমকির এই বিশ্বাসটুকুনু অন্তত মিশালের প্রতি রয়েছে। যদিও এটি একান্ত মিশালের ধারণা!
রিকশাওয়ালা চাচাকে মিশাল তাড়া দিতে লাগল জলদি রিকশা চালানোর জন্য। মিশাল পারছেনা নিজেই রিকশাটি চালাতে! কিয়ৎক্ষণ বাদে রিকশা এসে পার্কের সামনে থামলো। ভাড়া চুকিয়ে মিশাল হন্তদন্ত হয়ে পার্কের ভেতর প্রবেশ করল। বিশাল পার্কের এদিক ওদিক অস্থির ও নিঁখুত দৃষ্টি ফেলে রুমকিকে খুঁজতে লাগল। এই সময়ে পার্কের জনসংখ্যা খুবই কম। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে জনসংখ্যা বাড়বে। পার্কের আরও একটু ভেতরে এগিয়ে যেতেই মিশালের সূক্ষ্ম দূরদৃষ্টিতে ধরা পরল কলেজ ড্রেস পড়ুয়া রুমকিকে। তার পাশে রয়েছে একটি তরুন ছেলে! বয়স বেশি হবে বলে মনে হচ্ছেনা। বেঞ্চিতে পাশাপাশি চিপকে বসে রয়েছে দুজন। ছেলেটির হাতে ঠোঙা ভর্তি বাদাম। জড়তা নিয়ে রুমকি ছেলেটির হাত থেকে একটি একটি করে বাদাম নিয়ে খাচ্ছে ও মাথা নুইয়ে লাজুক হাসছে। ছেলেটি যেনো নিষ্পলক দৃষ্টিতে রুমকির লাজুকতা দেখছে। ভাই হয়ে এই দৃশ্য হজম করতে পারছেনা মিশাল। শরীরের রক্ত টগবগ করছে। তাছাড়া ছেলেটিকে খুব একটা সভ্য ভদ্র মনে হচ্ছেনা! মিশালের কোনোদিক থেকেই ছেলেটিকে পছন্দ হচ্ছেনা।
হনহনিয়ে হেঁটে মিশাল রুমকির দিকে এগিয়ে গেল। রুমকি এবং ছেলেটির মুখোমুখি দাড়ালো। দুজন দুজনের মধ্যে এতোটাই মগ্ন ছিল যে মিশালের উপস্থিতি তারা টের পেলোনা! মিশালের রাগ এবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল। শার্টের কলার পেছনের দিকে এলিয়ে সে রুমকির দিকে আক্রোশিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গলা ঝাকালো! ঝাজালো গলায় শুধালো,
“এটা তোর কলেজ? আর এখানে তুই ক্লাস করছিস?”
তাৎক্ষণিক ভড়কে ওঠল রুমকি। মিশালের কণ্ঠস্বর ধরতে তার বেগ পেতে হয়নি। জড়তা ও লজ্জা ভুলে সে মাথা তুলে আতঙ্কিত দৃষ্টি ফেলল বদরাগী গোলন্দাজ মিশালের দিকে। ভয়ে রুমকির দু’চোখে জল ছলছল করতে লাগল! সমস্ত শরীর তার হরহর করে কাঁপতে লাগল। মুহূর্তেই ছেলেটি বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। ডর ভয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশটুকু নেই তার মধ্যে! স্বাভাবিক গলায় ছেলেটি মিশালের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আপনি রুমকির স্টেপ ব্রাদার তাইতো?”
ছেলেটির দিকে ফিরে তাকানোরও ইচ্ছে পোষণ করলনা মিশাল। তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তো দূর! তবে ছোটোখাটো একটু আঘাত পেল মিশাল। সত্যিই কী রুমকি তাকে সৎ ভাই ভাবে? ছেলেটির কাছে তার সৎ ভাই হিসেবে তাকে পরিচয় করিয়েছে? কঠোর গলায় মিশাল নির্বাক ও ভীতসন্ত্রস্ত রুমকির দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমি তোর স্টেপ ব্রাদার? সৎ ভাই আমি তোর?”
“আমি কিছু বলিনি ভাইয়া। রাফিন ভাইয়া হয়তো তোমার পরিচয় জারিফকে এভাবে দিয়েছে।”
“বাড়ি চল!”
অপ্রতুল রাগ ও জেদ নিয়ে মিশাল তাৎক্ষণিক রুমকির হাতটি টেনে ধরল। সঙ্গে সঙ্গে রুমকি বসা থেকে দাড়িয়ে গেল। মিশালের পিছু পিছু যেতে লাগল। কোনো রকম আপত্তি করলনা সে। তবে তার হয়ে আপত্তি জানালো জারিফ! পেছন থেকে রূঢ় গলায় মিশালকে ডেকে বলল,
“হেই প্লিজ থামুন। রুমকিকে আপনি আমার সামনে থেকে এভাবে টেনে হেছড়ে নিয়ে যেতে পারেননা। যেখানে রুমকির আরেক ভাই রুমকিকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে সেখানে আপনি কে রুমকিকে আমার থেকে আলাদা করার?”
থামলো মিশাল। পিছু ফিরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্ষুদ্ধ জারিফের দিকে তাকালো। প্রত্যত্তুরে জারিফকে বলল,
“রুমকির জীবনে তার ঐ ভাইয়ের তুলনায় এই ভাইয়ের গুরুত্ব বেশী! তাই আমি যা বলব তাই হবে। রুমকির ঐ ভাইকে বলে দিও মোকাবেলা করতে হলে আমার সাথে এসে করতে। তোমাকে এরমধ্যে না জড়াতে। আর কখনও যেনো তোমাকে আমার বোনের আশেপাশে না দেখি! ইট’স মাই ওয়ার্ণিং।”
রুমকি হ্যা বা না কিছু বললনা। মিশালের পিছু পিছু পার্ক থেকে বের হয়ে সোজা রিকশায় ওঠে গেল। রাগে বোম হয়ে গেল জারিফ। মাথার চুল টানতে লাগল সে। ফর্সা মুখটি তার অচিরেই রঙিন হয়ে ওঠল। বিদ্বেষি ভাব নিয়ে রাফিনের নাম্বারে কল করল। কলটি তুলল রাফিন। খোশমেজাজে বলল,
“হ্যালো।”
“হ্যালো মাই ফুট। তোমার বোনকে তার ঐ স্টেপ ব্রাদার এসে আমার সামনে থেকে নিয়ে গেছে। আমি এই অপমান সহ্য করতে পারছিনা।”
“হোয়াট? তুমি কী মিশালের কথা বলছ?”
“কেন তুমি বুঝতে পারছনা আমি কার কথা বলছি? মুখে মুখে তো খুব বড়ো বড়ো কথা বলছিলে তুমি যা বলবে রুমকি না-কি তাই শুনবে। আজ কোথায় গেল তোমার সেই বড়ো কথা? তোমার বোন তো তার ঐ ভাইকেই গুরুত্ব দিলো! তার মুখের ওপর একটা টু-শব্দও করলনা। আমি অতো শতো বুঝিনা রুমকিকে আমার চাই মানে চাই। জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়েকে আমার মনে ধরেছে! তাকে আমার প্রেমিকা হিসেবে চাই মানে চাই। আমি তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে পারবনা। যদি সে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার চেষ্টা করে না? তবে সেদিনই তোমার শেষদিন হবে!”
কলটি কেটে জারিফ পার্ক থেকে বের হয়ে গেল। রাফিন সিগারেট ধরাতে গিয়েও থেমে গেল। বিষয়টা তার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাড়ালো। জারিফ কোটিপতি বাপের একমাত্র ছেলে বলেই তো রুমকিকে তার ঘাড়ে গছাতে চেয়েছিল রাফিন! ছলেবলে জারিফের থেকে টাকা হাতাবে বলে। ছাদ থেকে নেমে রাফিন তার ফ্ল্যাটে তার রুমে ফিরে এলো। পরিবার থেকে দূরে ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকে সে! বাবা তার আপন হলেও মা সৎ। পরিবারে তার গুরুত্ব নেই বললেই চলে। অন্যের সংসারে থেকেও শাহনাজ বেগম রাফিনকে গুরুত্ব দেয়, তার খরচ চালায়! নিজের ছেলে বলে কথা! ইতোমধ্যেই শাহনাজ বেগম কল দেয় রাফিনের নাম্বারে! বিরক্তি নিয়ে রাফিন কলটি তুলে। উদ্বিগ্ন গলায় শাহনাজ বেগম বললেন,
“কাল রাত থেকে তোকে কল দিচ্ছি কল তুলছিস না কেন তুই?”
“কী দরকার?”
“ব্যাংকের সব টাকা কী তুই তুলে টুলে খেয়ে ফেলেছিস না-কি?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?”
“টাকাগুলো আমার লাগবে!”
“মানে?”
“মিশাল টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে তার সব টাকা আমাকে ফেরত দিতে হবে।”
“টাকাগুলো তোমার ছিলনা?”
“আমার ছিলোনা মানে? আমার টাকা আসবে কোত্থেকে? আমি কী চাকরী বাকরী করি?”
“হুট করে বললেই তো হয়ে গেলনা তাইনা? তাছাড়া আমার কাছে কোনো টাকা নেই! সব টাকা খরচ করে ফেলেছি। তুমি কিভাবে ম্যানেজ করবে করো। আমার জীবনটা তো তুমিই নষ্ট করে দিয়েছ! সামান্য কারণে তুমি বাবার সাথে ঝগড়া করে বাবাকে ছেড়ে চলে গেলে। বাবা বিয়ে করল তোমার মতোই একজন বিধ্বংসী নারীকে! যার অত্যাচারে আমাকে নিজের বাড়ি ছাড়তে হলো! এখন তুমিই রিপেন্ড করো।”
বুকের ভেতর এক অদ্ভুত যন্ত্রণা ও উভয় দিকের চাপ নিয়ে রাফিন ফোন টোন বন্ধ করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল! কান্নায় ভেঙে পরলেন শাহনাজ বেগম! সত্যিই আজ তাঁর বড্ড অসহায় লাগছে। নিজের ছেলে তাঁর দুঃখ বুঝলনা। অতীতের করা ভুল নিয়ে এখনও তাঁকে খোঁটা দিচ্ছে। একতরফা তাকেই দোষী ভাবছে। এই ছেলে যে কখনও তাঁর কোনো কাজে আসবেনা তা যদিও তিনি অনেক আগে থেকেই জানতেন তবুও ছেলের ভালোর কথা ভেবে তিনি মিশালকে দিনের পর দিন ঠকিয়েছেন! তবে তাঁর এতোটুকু বিশ্বাস নিশ্চয়ই আছে তাঁর সব কুকীর্তি জানার পরেও মিশাল কখনও তাঁকে দূরে ঠেলে দিবেনা! হয়তো সাময়িকভাবে রাগ অভিমান করবে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব রাগ, অভিমান ধুঁয়ে জল হয়ে যাবে। মিশালকে যতোই তিনি নিন্দা করুক না কেন মিশালের মতো খাঁটি ছেলে জগৎ ঘুরেও তিনি পাবেননা সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
রুমিককে নিয়ে মিশাল কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরল। ড্রইংরুমে সকালের নাশতা খেতে ব্যস্ত জেনিয়া। সদ্য ঘুম থেকে ওঠল সে। শাহনাজ বেগম রয়েছেন রান্নাঘরে। দুর্বল শরীর নিয়েই তিনি চা গরম করতে গেছেন। প্রেশার প্রচণ্ড রকম বেড়ে আছে তার। ইতোমধ্যেই জেনিয়ার চোখের সামনে দিয়ে মিশাল একপ্রকার জোর করে টেনে হেঁছড়ে রুমকিকে নিয়ে রুমকির রুমে প্রবেশ করল! ভেতর থেকে দরজার ছিটকিনি আটকে দিলো। পরোটার টুকরো মুখে নিয়ে জেনিয়া বেকুব বনে তাকিয়ে রইল বিক্ষুব্ধ মিশালের যাওয়ার পথে। আঁচ করতে পারল ভাই-বোনের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। চট করে দৌড়ে সে রান্নাঘরে চলে গেল শাহনাজ বেগমকে এই ব্যাপারে বলতে।
ভয়ে জীর্ণশীর্ণ রুমকি। মাথা নুইয়ে বসে রয়েছে তেজষ্ক্রীয় মিশালের মুখোমুখি। বুকের ওপর হাত দুটি গুটিয়ে মিশাল সূচালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল রুমকির দিকে। প্রশ্ন ছুড়ল,
“কবে থেকে চলছে ঐ লাভ সাভ?”
“বেশিদিন হয়নি ভাইয়া।”
“রাফিনের সাথে ঐ ছেলের সম্পর্ক কী?”
“একই এলাকার তারা।”
“রাফিনের সাথে তোর আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল?”
“না ভাইয়া। তবে মা মাঝেমধ্যে রাফিন ভাইয়ার সাথে দেখা করার জন্য আমাকেও সাথে নিয়ে যেতো। কিছুদিন আগে ভাইয়া হঠাৎই আমার কলেজে আসে। আমাকে এটা ওটা কিনে দেয়, পার্কে ঘুরতে নিয়ে যায়। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই ভাইয়া কলেজে আসত। সাথে জারিফও আসত! আর তখন থেকেই….
“জারিফর সম্পর্কে যা যা জানিস বল?”
“আগে বলো তুমি জারিফের কোনো ক্ষতি করবেনা?”
চড় ওঠালো মিশাল রুমকিকে মারার জন্য! তবে মাঝপথেই থেমে গেল। রুমকির মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“আমি চাইনা তুই ঐ ছেলের সাথে আর যোগাযোগ রাখিস।”
“কেন ভাইয়া? কেন আমি তার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবনা? সাইফা আপুর সম্পর্ক যেহেতু তুমি মানতে পেরেছ তবে আমারটা মানতে সমস্যা কী?”
“কারণ, লাবিব ছেলেটা যথেষ্ট ভালো। তোর ঐ জারিফের মতো বেয়াদব না! আমি নিশ্চয়ই জেনেশুনে আমার বোনকে একটা বেয়াদব ছেলের হাতে তুলে দিবনা? ফারদার তুই ঐ ছেলে সম্পর্কে আমার কাছে সাফাই দিতে আসবি তো আমি কিন্তু টলারেট করবনা। গাঁয়ে হাত তুলতে বাধ্য হবো।”
রুমকির কাছ থেকে রুমকির ফোনটি ছিনিয়ে মিশাল হনহন করে রুমকির রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুমের দরোজায় বাইরে থেকে খিল মেরে দিলো। রুমের ভেতর থেকে রুমকি চ্যাচাতে লাগল! কাঁদতে কাঁদতে সে মৃদু চিৎকার করে বলল,
“আমি জারিফকে ভুলতে পারবনা ভাইয়া! আমি তাকে ভালোবাসি। তুমি কিছু না জেনেশুনে জারিফ সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করতে পারোনা! প্লিজ আমার ফোনটা দিয়ে যাও বলছি।”
জেনিয়া ও শাহনাজ বেগম হন্তদন্ত হয়ে রুমকির রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই তারা মিশালের মুখোমুখি হয়ে গেল। বিচলিত হয়ে শাহনাজ বেগম উগ্র মিশালের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“কী হয়েছে? আমার মেয়ে কী করেছে?”
“মেয়েকে চোখে চোখে না রাখার ফল। একটা লম্পট ছেলের প্রেমে পরেছে আপনার মেয়ে। আর কে আপনার মেয়েকে উস্কিয়েছে জানেন? আপনার ছেলে! আপনার নিজের ছেলে। নেশা ভান করে নিজের জীবনটা তো নষ্ট করছেই সাথে আমার বোনের জীবনটাও নষ্ট করতে চাইছে। খবরদার রুমকির রুমের দরোজা খোলার চেষ্টা করবেননা। একদম না। এই বয়সে তার প্রেম করা আমি ছুটিয়ে দিব।”
ডাইনিং টেবিলে বসল মিশাল সকালের নাশতা করার জন্য। রাফিনের কোনো সিদ্ধান্তই যে রুমকির জীবনের জন্য সুখকর হবেনা তা শাহনাজ বেগম বেশ ভালোভাবেই জানেন! তাই তিনি এই বিষয়টিকে নিয়ে তেমন ঘাটাঘাটি করলেন না। মিশালের সিদ্ধান্তকেই গুরুত্ব দিলেন। মিশালের প্লেটে তিনি সকালের নাশতা সাজিয়ে দিলেন। জেনিয়াও মিশালের পাশের চেয়ারে বসল চা খেতে। ইতোমধ্যেই সামান্তা হাতে একটি টিফিন বক্স নিয়ে মিশালদের বাড়িতে এলো। ড্রইংরুমে প্রবেশ মাত্রই মিশালকে নাশতা করতে দেখে সে খুশি হয়ে গেল। দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে টিফিন বক্স থেকে কয়েকটি নারকেলের পিঠে বের করে সে মিশালের প্লেটে দিলো। পরোটা চিবাতে চিবাতে মিশাল মাথা তুলে সামান্তার দিকে তাকালো। মিষ্টি হেসে সামান্তা বলল,
“মা বানিয়েছে তোমার জন্য। তোমার তো নারকেল পিঠা খুব পছন্দ তাইনা?”
মিশালের উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে সামান্তা এক এক করে জেনিয়া ও শাহনাজ বেগমের প্লেটে নারকেল পিঠা তুলে দিলো। বাকি কয়েকটি পিঠা রুমকির জন্য বক্সে রেখে দিলো। উপস্থিত সবার মন মেজাজের খারাপ অবস্থা দেখে সামান্তা কপাল কুঁচকালো। আগ্রহী হয়ে ওঠল। কৌতূহলী গলায় সবাইকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হয়েছে তোমাদের? অমন মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন সবাই?”
ইতোমধ্যেই রুমকির চিৎকার চ্যাচাম্যাচির আওয়াজ সামান্তার কানে এলো। হকচকিয়ে ওঠল সে। শঙ্কিত গলায় মিশালকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“রুমকিকে তোমরা আটকে রেখেছ?”
“হ্যা রেখেছি। যতদিন অবধি তার ঘাড় থেকে প্রেমের ভূত না নামবে ততোদিন অবধি সে তার রুমে বন্দি থাকবে।”
“হোয়াট? রুমকি প্রেম করছে?”
হুট করে শাহনাজ বেগম রেগে ওঠলেন। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় সামান্তাকে বললেন,
“হ্যা। এবার শুধু মসজিদের মাইক দিয়ে এনাউন্স করা বাকী!”
তুখোর রাগ দেখিয়ে তিনি খাবার টেবিল ছেড়ে ওঠে গেলেন। শাহনাজ বেগমের ব্যবহারে সামান্তা দুঃখ পেল! তবে তা প্রকাশ করলনা। হাত থেকে পরোটাটি প্লেটের ওপর ছুড়ে মেরে মিশাল মৃদু চিৎকার করে শাহনাজ বেগমকে বললেন,
“সামান্তা বাইরের কেউ নয় যে তাকে আমাদের ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু শেয়ার করা মানে মসজিদের মাইক দিয়ে এনাউন্স করা। কথা বলার সময় একটু বুঝেশুনে বলতে হয়। নেক্সট টাইম আপনার কাছ থেকে এমন ব্যবহার আমি আশা করবনা।”
মিশালকে ভয় পেতে শুরু করল জেনিয়া! জঙি বাঘের থেকে কোনো অংশে কম হিংস্র দেখাচ্ছেনা মিশালকে। ঝট করে জেনিয়া জায়গা থেকে ওঠে গেল। তার খালামনির পিছু নিলো। সামান্তা নিশ্চল দৃষ্টিতে মিশালের আক্রোশিত মুখশ্রীতে তাকিয়ে রইল। মিশালের টইটম্বুর রাগ দেখতে লাগল। আচমকা মিশালের দু-গালে হাত ঠেকিয়ে সামান্তা শান্ত স্বরে বলল,
“বি কুল। এতো রাগ দেখানোর মতো আহামরি কিছু হয়নি এখানে। শান্ত হয়ে বলো কী হয়েছে?”
#চলবে…?
[রি-চেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।]