#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১৬
” এই আপনি শুধু আমার। আবার যদি দেখি অন্যকোনো মেয়ের সাথে ফ্লাটিং করেন তাহলে আপনার এই একজোড়া চোখ ছুড়ি দিয়ে কানা করে দিবো! ”
” নীলা বি কুল ওরা আমার শালি। আর শালীদের সাথে সম্পর্ক এইরকম হয়। এতটুকুতে জামাইকে এতো সন্দেহ করলে হয়। ”
” আমি সন্দেহ করছিনা আকাশ। আপনাকে মনে করিয়ে দিলাম আমার সামনে কখনো অন্য মেয়ের সাথে যেনো এরকম ফ্লাটিং না করেন। এমনকি আমার আড়ালেও না। আমি আপনাকে অনেক ভালো মানুষ করি। বিশ্বাস করে এই হাতদুটি আপনাকে ধরতে দিছি। বিশ্বাসের মান রাখিয়েন । ”
” এই পৃথিবীতে কেউ ভালো না নীলা। বলে নীলার কাছে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসে। ”
” নীলা পিছিয়ে যায়। কি করছেন আকাশ? আমার কাছে আসতেছেন কেনো? ”
” বউ রাগ করছে। বউয়ের অভিমান ভাঙ্গার দায়িত্ব জামাইয়ের। ”
” কি করতে চান আপনি? দেখেন আকাশ এগোবেন না! আমার ভয় লাগছে।”
” ভয় কিসের বউ। আমিই তো, পরপুরুষ নইতো। জামাই হই তোমার।”
এই কথা বলে নীলার হাত দুটি ধরে মুঠি করে। নীলাকে ওয়ালের সঙ্গে লেপ্টে ধরে ঠোঁটে চুমু দেয়। ”
” ছি! আকাশ আপনাকে আমি অনেক ভালো মনে করেছিলাম। আপনিয়ো এসব লুচি কাজ করেন। ভাবতেও ঘৃণা লাগছে এইরকম লুচ্চা আজ থেকে আমার জামাই। ”
” এই বউ পৃথিবীতে কেউ মহাপুরুষ বা মহানারী নয়। স্বামী স্ত্রী হয়ে যদি এই কাজ তোমার কাছে লুচ্চামি লাগে। তাহলে লাগুক! কারণ সবাই যদি তোমার মতো ড্যামেট মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতো তাহলে ভবিষ্যতে প্রজন্ম বলে কিছু থাকতো না। আমি তো বাবা হতে চাই। তাড়াতাড়ি বাবা ডাক শোনার ব্যবস্থা করো। ”
” নীলা ঠোঁট চেপে হাসি দেয়। আমি কিভাবে আপনাকে বাবা ডাক শুনাবো। এই দায়িত্ব আপনার। এই বলে ওয়াশরুমে দৌড়ে যায়। ”
” নীলা ওয়াশরুমে যাচ্ছো ক্যান? চলো না বাকি কাজটুকু সেরে ফেলি আজকে! ”
” আকাশ আমার দম বন্ধ বন্ধ লাগছে, এতো ভারী ভারী গহনাতে। আমি চেঞ্জ করতে ঢুকেছি। তুমি পিল্জ চেঞ্জ করে নাও। শেরেওয়ানি টা খুলে পাতলা কোনো কাপড় পড়ো। ”
” হুম নীলা ঠিক বলছো তো। ”
এরপরে দুজনেই চেঞ্জ করে নেয়। নীলা বাড়ি থেকে ল্যাগেজে থ্রি পিস গুলো নিয়ে এসেছিলো। এরমধ্যে পছন্দের থ্রিপিস পড়ে বাইরে আসলো। আকাশ শুধু ব্লাক কালারের স্যান্ডো গেঞ্জি, ও জিন্স প্যান্ট পড়ে আছে।
এর আগে নীলা আকাশকে এভাবে কখনো দেখে নাই। আকাশের বডি দেখে নীলা মনে মনে বলে কি পালোয়ান একটা। জিম করে বডিটা এইরকম বানাইছে উফফ! যেকোনো নারী প্রেমে পড়ে যাবে। সাবধানে রাখতে হবে জামাইকে। আকাশের বুকের লোমগুলো দেখে নীলার খুব ভালো লাগলো। কারণ নীলা মা ও ফুপির কাছে জেনেছিলো যে পুরুষের বুকের লোম রয়েছে। তারা নাকি বউকে খুব ভালোবাসে ও আদর করে। নীলা মনে মনে মিঠি মিঠি হাসছিলো।
” কি ব্যাপার নীলা তুমি হাসছো কেনো? ”
” কই আমি হাসছি! আপনি যতটা ওভারস্মার্ট সাজার চেষ্টা করেন না কেনো? আসলেই আপনি ওতোটা ওভারস্মার্ট নন। আমার খুব গরম লাগছে আকাশ। আমাকে ছাঁদে নিয়ে চলেন । অনেকদিনের ইচ্ছে বিয়ের প্রথম রাতে জামাইয়ের বুকে মাথা রেখে জোৎস্ম্যাবিলাশ ও আকাশের চাঁদকে দেখবো। ”
“আকাশের চাঁদতো তুমি। মন ভরে আজকে তোমাকে আমি দেখে নিবো! ”
” সব প্রশ্নের ডাবল মিনিং খোঁজা কি আপনার অভ্যাস আকাশ? আমি আপনার পাঁচটা না দশটা না একটা মাত্র বউ। আমার ইচ্ছেগুলো পূরণ করার দায়িত্ব আপনার। ”
” আর কোনো ইচ্ছে আছে তোমার? ”
” ইচ্ছেগুলো একদিনে প্রকাশ করলে আপনি অনেক ভয় পাবেন। আস্তে আস্তে প্রকাশ হবে সব। প্রথম ইচ্ছে টা আগে প্রকাশ করুন। ”
এরপরে আকাশ ও নীলা ছাঁদে আসে। মেঘালয় আকাশের মাঝে চাদ মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে। চারদিকে জোৎস্নার কিঞ্চিত আলো ফুটছে এই নিভছে। আকাশে আজ কোনো তারা নাই। ঠান্ডা বাতাস বইছে। নীলার গা ককিয়ে উঠছে ঠান্ডাতে। ঝিরিঝিরি কুয়াশা পড়ছে তুষারের মতো। নীলা আর ছাদে থাকতে চায়না প্রচুর ঠান্ডা পাচ্ছে।
” আকাশ আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমি আর ছাঁদে চাঁদমামার খেলা উপভোগ করতে পারছি না। আমি রুমে যাবো আকাশ। ”
” আকাশ এসে নীলাকে জাপটে ধরে। নীলা আকাশের ঘাড়ের কাছে মুখ লুকায়। আকাশ নিজের বুকের উঞ্চতা নীলাকে দিয়ে বলে। অবুঝ বউ তোমাকে এই কথায় বলতে চেয়েছিলাম বাইরে শরৎকালের ঠান্ডা বাতাস বইছে। কিন্তু তুমিতো আমার কথা শুনতে না। এখন হয়েছে উপভোগ করা। চলো যাই রুমে। ”
জাকিয়া সুলতানা আকাশের রুম খোলা পেয়ে ভিতরে ঢুকে। ভিতরে ঢুকে দেখে আকাশ ও নীলা নেই। জাকিয়া দেখলো বাসরের খাটটা এখনো ঠিক আছে।
” কে তুমি? এখানে কি। জানো না স্বামী স্ত্রী নতুন বিয়ে করলে তাদের প্রাইবেট রুমে তৃতীয় ব্যাক্তি এলাও না। ”
” দুলাভাই আমি। আপনার শালি। আমি আসতে চাই নাই। কিন্তু ফুপি জোড় করে পাঠাইছে। নীলাপু এই দুধটা শুরু করার আগে আকাশ ভাইয়াকে খাইয়ে দিস। দুধটা টেবিলে রেখেই জাকিয়া দৌড়ে পালায়। ”
” দেখছো নীলা। তোমার বোনগুলো আমাকে কি ভয় খায়। ”
” আপনি একটিমাত্র দুলাভাই ওদের। বেচারিরা বাসরের খাট সাজাইছে। তারবিনিময়ে ওদের উপহার বাসররাত দিতে চাইছেন। তো আপনাকে ভয় খাবেনা। আপনার মতো লুইচ্ছা জামাই একটাও দেখি নাই। এইবলে নীলা বেসিনের কাছে চলে যায়। ”
আকাশ রুমের বাতি সুইচ অফ করে দেয়। নীলা প্রচুর ভয় পেয়ে আকাশ বলে চিৎকার দিয়ে আকাশের বুক জাপটে ধরে।
” বি কুল নীলা! বাতি আমি বন্ধ করেছি। ”
” কেনো করলেন বন্ধ? ”
” বাহ বাসররাত করবো এখন বাতি জ্বালিয়ে! এমনিতে আমার বউটা অনেক লাজুক। বাতি জ্বালিয়ে এসব করলে আমারো লজ্জা লাগতে পারে। আমি চাইনা আমাদের মাঝে আজকে লজ্জাটুকু দুশমন হিসাবে ধরা দিক। ”
” বাল্ব অন করেন আকাশ! বাতি ছাড়া আমার প্রচুর ভয় করে। ”
” পাগলী বউ ডিমলাইটের আলো জ্বল জ্বল করছে। দুপাশে ল্যাম্পপোস্টের আলো আছে এরপরেও তোমার আলো লাগে। বললাম না আজকে লজ্জা নামক দুশমন আমাদের মাঝ থেকে তাড়াতে হবে। ”
” নীলা আকাশের বুক থেকে বের হয়ে দুধের গ্লাসটা হাতে নেয়। আকাশ খাটে শুয়ে পড়ে তখন। নীলা বলে দুধটা খেয়ে নেন আকাশ। ফুপিমা পাঠিয়েছে। ”
” আমার এসব দুধ লাগেনা নীলা। আমাদের কোনো নার্ভাসনেস নেই তাহলে অযথা দুধ খাবো কেনো? দুধটা খেতে পারি যদি তুমি অর্ধেক টা খাও। ”
” নীলা তখনি বাধ্য স্ত্রীর মতো অর্ধেক দুধ খেয়ে ফেলে। এরপরে আকাশকে অর্ধেক দুধের গ্লাস এগিয়ে দেয়। ”
” আকাশ দুধটা শেষ করে পাশে রাখা ল্যাম্পপোস্টের কাছে গ্লাসটা রেখে। নীলাকে ডাক দেয়। ”
নীলা তখন বেডে এসে গা এলিয়ে দেয়। আকাশ নীলাকে জড়িয়ে ধরে। এরপরে মুখে ও ঠোঁটে কয়েকটা লম্বা কিস করে। নীলা চুপ করে থাকে কারণ দুধটা খেয়ে নীলার উত্তেজিত ফিল ফিল লাগছিলো। এরপরে আকাশ ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো নিভে দেয়। দুজন দুজনকে চুমু দিয়ে ভরিয়ে ফেলে। একটা সময়ে পর একে অপরের ভালোবাসায় আলিঙ্গন করতে থাকে।
সকাল হয়ে যায়। নীলার ঘুম ভেঙ্গে যায়। নীলা চারদিকে চোখ বুলাতে থাকে। আকাশকে দেখে শর্ট পড়ে তার উপরে পা তুলে দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আকাশের হাত নামিয়ে দেয়,পা সরিয়ে দেয়। ফুলশোভিত খাটটা এলোমেলো হয়ে গেছে। নীলা আস্তে আস্তে বেড থেকে উঠে। নীলার নিচের দিকে খুব ব্যাথা অনুভূত হচ্ছেছিলো। বেসিনে যেয়ে নীলা নিজের মুখ দেখে। অনেক জায়গায় নখের আচড় দেখতে পায়। নীলা প্রচন্ড রাগ হয় আকাশের উপর।
” কি লোকরে বাবা শিকারের উপর বাঘের থাপা বসিয়ে দিছে। কত ভালো ভাবতাম বিয়ের আগে এই লোকটাকে। কিন্তু প্রথমরাতে বাঘ তার আসল রুপ দেখিয়ে দিছে।কি দেখে যে এই লোকটাকে বিয়ে করেছিলাম। কোনো দয়া মায়া নেই লোকটার। ”
” আকাশ বেসিনের কাছে এসে বলে বীরবীর করে কি বলছো নীলা? নীলাকে পিছন দিক থেকে এসে জড়িয়ে ধরে। নীলার কাঁধে নিজের থুতনী লাগিয়ে দেয়। ”
” আপনার কোনো দয়া মায়া নেই আকাশ। বউয়ের উপর কেউ এভাবে নির্যাতন করে। চারদিকে শুধু বাঘের মতো আছড় মারছেন। ”
” এই যে বউ আমার মুখটা দেখো আমার কাধ দেখো। কি করেছো তুমি? ”
নীলা আকাশের মুখ ও কাঁধ দেখে লজ্জায় পড়ে যায়। নিজের উপর গিল্টি ফিল হচ্ছিলো। এ আমি কি করেছি তার সাথে। আকাশ তখন বলে গেঞ্জি খুলে দেখাবো আমার বুকটার সাথে কি করছো? ”
” নীলা এই কথা শুনে লজ্জায় পড়ে যায়। এই না না এসব করবেন না আমার লজ্জা লাগে। ”
” কাল রাতে তোমার মধ্যে তো লজ্জার আভাসটুকু পেলাম না। একা একটা নিরীহ ছেলে পেয়ে তার সতীত্ব এভাবে নষ্ট করে দিলে। বউয়ের এসব রুপ দেখে আমি নিজেই লজ্জায় পড়ে গেছিলাম। তুমি যতোটা ইনোসেন্ট সাজো ততোটা একেবারে নয়। আমি দেখেছি একা পেয়ে তুমি আমার সাথে এসব করছো। দেখছো কত আঁচড় মারছো আমাকে। চারদিকে শুধু লাল হয়ে আছে। বুকটাতে তোমার দুপাটি দাতের দাগ ইতিমধ্যে বসে আছে। ”
” নীলা মনে মনে বলে এসব কি বলছে আকাশ! সত্যি আমি এতোটা নির্লজ্জের মতো কাজ করেছি। আমিতো এরকম করার মেয়ে মোটেও নই। কিন্তু দাগগুলো তো মিথ্যা নয়। একাজ যদি সত্যি করে থাকি আমি ওনাকে মুখ দেখাবো কি করে? ”
” থাক বউ লজ্জা পেতে হবেনা! একটা কচি ছেলেকে পেয়েকে নিজেকে সামলাতে পারো নাই লোভের বশবর্তী হয়ে আমার সাথে এরকম করেছো। যাও আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম। কিন্তু দ্বিতীয়বার যেনো এরকম ভূল না হয়। তাহলে আমি কিন্তু এই সমাজকে বলে দিবো, আমার বউ অবলা স্বামী পেয়ে প্রতিরাতে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে। ”
” চুপ করেন! যতোটা ইনোসেন্ট সাজছেন আপনি ততোটাও নয়। লজ্জা করেনা পুরুষ মানুষ হয়ে এসব কথা বলতেছেন। আমি কি আপনাকে একা কাছে টেনেছি। আপনি টানেন নাই। আপনিয়ো তো আমার সব জায়গায় আচড় মেরেছেন। আমি কাউকে বলছি আমার সতীত্ব কেনো নষ্ট করলেন। আমার এখনো পুরো শরীর ঝিমঝিম করছে। নিচের দিকে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। এগুলা কার জন্য হচ্ছে সবতো আপনার জন্যই হচ্ছে। ”
” আকাশ এবার চুপ করে যায়। কারণ নীলা রাগলে তালছিড়ার মতো স্বভাব করে। এখন যদি তাকে রাগাই তাহলে বাইরের সবাইকে সব বলে দিতে পারে। তাহলে মান সম্মানের বারোটা বেজে যাবে। ”
” নীলা মনে মনে বলে এইতো চুপ করেছে। নাহলে মান সম্মানের তেরোটা বাজাইতো আমাকে দেখে দেখে। হুম ওনি এমন ভাব করছে যেনো আমি একাই ওনাকে কাছে পেতে চেয়েছি ওনি চায় নাই। এমন হাভভাব যেনো ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানে না। ”
” সাওয়ার নিয়ে বাইরে আসো নীলা নিচে যেতে হবে। ”
” আপনিয়ো সাওয়ার নিন। আমার সামনে এভাবে শর্ট পড়ে কখনো থাকবেন না আর। আমার লজ্জা লাগে! ”
” কেনো বউ আমাকে আবারো কাছে পেতে ইচ্ছে করে নাকি! বলতে পারো আমি রেডি আছি! ”
” কি নির্লজ্জ লোকরে ভাই। এ আমি কাকে বিয়ে করলাম। ওনিই কাছে টানবে। ওনিই আছড় মারবে। আবার মেয়েদের মতো ঢং করে বলবে আমার সতীত্ব হরণ করছে আমার বউ। আল্লাহ কোন পাপ করেছিলাম আমি এরকম জামাই আমার কপালে দিলেন।
চলবে,,,,
আপনারা অনেকে বলবেন গল্পের নাম দহন। তাহলে গল্পে ভালোবাসা কিন্তু খুব প্রকাশ পাচ্ছে। বলছি ভাই ওরা বিয়ে করছে এসব হওয়া স্বাভাবিক। কেউ নেক্সট কমেন্ট করে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।