#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_২২
#নিশাত_জাহান_নিশি
মাঝপথে সামান্তাকে ডুবানোর জন্য সাহিলের আকস্মিক আগমনে ভড়কে ওঠল সামান্তা! সাহিলের নাম বেচে খাওয়া এই বুঝি তার কাল হয়ে দাড়ালো।
চোখের সামনে জলজ্যান্ত মানুষরূপী য’ম’কে দেখে ভিডিও করা থামিয়ে দিলো সাইফা। ফোনটিও বেশ বেগ নিয়ে হাত থেকে ছিটকে পরার উপক্রম হলো তার! শঙ্কিত দৃষ্টি ফেলে সে তাকিয়ে রইল সক্রিয় সাহিলের পানে। কী হবে এবার তাদের? যে পাতি সিংহ দিয়ে তারা মোষ তাড়ানোর চিন্তাভাবনা করেছিল, সেই সিংহ-ই তো তাদের ফাঁসাতে বিনা নিমন্ত্রণে চলে এলো। আজ বুঝি তাদের শনির দশা লাগল বলে। হেস্তনেস্ত হওয়ার আর কোনো পথ বাকি রইলনা তাদের।
নির্লিপ্ত সাহিল। বেজায় শান্ত! কেবল বুকের ওপর হাত দুটি গুটিয়ে ক্ষণে ক্ষণে দৃষ্টি ঘুরিয়ে একবার ওড়না দ্বারা মুখ ঢেকে রাখা আহাম্মক সামান্তার পানে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ভীত সাইফার পানে। অতি আশ্চর্যের বিষয় হলো সাহিল রেগে আছে ঠিকই তবে সেই রাগের বিক্ষিপ্ত ধরণ অনুপস্থিত তার মুখশ্রীতে! দিনে চাঁদ দেখার ন্যায় অবাক সামান্তা! দুইদিনের দুনিয়ায় আর কত আশ্চর্য জিনিস দেখবে সে? অন্যদিকে, আচমকা সামান্তার আচার আচরণের পরিবর্তন ও মুখ লুকিয়ে রাখার নাটকীয়তা দেখে প্রিয়া ও তার বান্ধবী সিনহা বিস্ময়ভরা কৌতূহলী দৃষ্টিতে সামান্তার পানে তাকিয়ে রইল। সাহিল তখন মুখ খুলল। ধীরস্থির গলায় সামান্তাকে শুধিয়ে বলল,
“কী ব্যাপার? তোরা দু-বোন এখানে কী করছিস? তাছাড়া মুখে ওটা কী বেঁধে রেখেছিস? সরা মুখ থেকে ওসব ওড়না টোড়না। আমার হাত থেকে লুকানোর চেষ্টা তোর বৃথা।”
চট করে সামান্তা তার মুখ থেকে ওড়নাটি সরিয়ে নিলো। গলা ভেজানোর জন্য ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি গিলে খেলো। ভাগ্যিস সাহিলের ছবি এখনও প্রিয়াকে দেখায়নি তারা! নয়তো এখনি তুলকালাম বেঁধে যেতো। চতুর প্রিয়া আঁচ করতে পারল সাহিলের আগমনে সামান্তা বড্ড ভয় পেয়ে গেছে। রাগে গজগজ করে বসা থেকে সে ওঠে দাড়ালো! সাহিলের দিকে আঙুল তাক করল। উঁচু গলায় বলল,
“হেই? হু আর ইউ? আমার সামনে আমার ফ্যানকে ধমকানোর সাহস আপনার হলো কীভাবে?”
বেকুব বনে গেল সাহিল। সাথে প্রচণ্ড রাগও হলো! সামান্তার থেকে দৃষ্টি ফেরালো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ক্ষিপ্র প্রিয়ার দিকে। আগের মতো হুটহাট রেগে না গিয়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেও সাহিল ব্যর্থ হলো! নিজের পুরোনো রূপে পুনরায় ফিরে এলো। ঝাঁজালো গলায় প্রিয়াকে বলল,
“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড। আগে বলুন আপনি কে? আমার সাহসের দিকে আঙুল তোলার আপনি কোন ডিসি, মন্ত্রী টেল মি?”
বেশ ভাবসাব নিলো প্রিয়া। কপালে পরে থাকা কার্ল করা ছোটো চুলগুলো ফুঁ মেরে পেছনের দিকে উড়িয়ে দিলো। নিজেকে বড়ো ধাতস্থ করে অত্যধিক অহংকার নিয়ে বলল,
“একদম ঠিক বলছেন আপনি। আমি সত্যিই ডিসি, মন্ত্রীর চেয়ে কোনো অংশে কম নই! দেশের ম্যাক্সিমাম পাবলিকই আমাকে চিনে। ফ্যান ফলোয়াসরা আমাকে প্রতিনিয়ত ফলো করে। এদের মধ্যে যদি আপনার মতো “ইতর, জাদরেল, বদরাগী হুলো” আমাকে না চিনে এতে অবশ্য আমার কিছু ছেঁড়া গেলোনা!”
সাহিলের রাগকে দ্বিগুন তাতিয়ে দিলো প্রিয়া! অতি রাগে সাহিল বিষধর সাপের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করতে লাগল! এতো বড়ো স্পর্ধা প্রিয়ার? তাকে যাচ্ছে তা বলে অপমান করছে? দুনিয়া ভস্ম করে দেওয়ার মতে রাগ হতে লাগল তার। কিন্তু কিন্তু কিন্তু, এই পুরো বিষয়টিতে সামান্তা বেশ মজা নিচ্ছে! সাহিলকে জব্দ করার জন্য প্রিয়াকেই তার যোগ্য মনে হচ্ছে। প্রিয়ার দিকে আঙুল তাক করে সাহিল চোয়াল উঁচিয়ে সামান্তাকে বলল,
“এই কী চলছে এখানে? তুই কিছু বলছিসনা কেন ঐ মেকাপখোর অসভ্য জংলী মেয়েটাকে? তুই যদি এখনি তাকে কিছু না বলিস তো আমি বাধ্য হবো তাকে চরমভাবে ইনসাল্ট করতে। আমার সম্পর্কে তোর কিন্তু ধারণা আছে। হুটহাট গাঁয়ে হাত তুলে ফেলার হেবিট কিন্তু আমার জন্মের পর থেকেই।”
অপমান হজম হলোনা প্রিয়ার! আঙুল উঁচিয়ে সে তর্জন গর্জন করে সাহিলকে পূর্বের তুলনায় অধিক বিশ্রীভাবে অপমান করার পূর্বেই সামান্তা তাকে হাত ধরে থামিয়ে দিলো।পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার শতভাগ চেষ্টা করল। তার উদ্দেশ্য সফল হতে আর বেশী সময় নেই। কথায় আছে না? আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন? এই ভালো সময়টাই চলছে এখন সামান্তার। সাহিল এই মোক্ষম সময়ে এখানে উপস্থিত হয়ে বেশ ভালোই করেছে। এতে অন্তত প্রিয়াকে হাতেনাতে ধরা যাবে! ব্যস এইতো আর একটুখানি অভিনয় বাকী আছে সামান্তার। সবদিক ভেবেচিন্তে সামান্তা অস্থিরতা নিয়ে প্রিয়ার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“স্টপ আপু। হাতে ধরে নিজের শনি টেনে এনোনা প্লিজ। তুমি জানো ছেলেটি কে?”
“না তো। কে?”
“সাহিল ভাই! ঐযে কোটিপতি কাজিনটা৷ একটু আগে যার কথা আমি তোমাকে বলছিলাম।”
নীরব খেয়ে গেল প্রিয়া। অবিলম্বেই মুখে হাত চলে গেল তার। আশ্চর্যিত প্রকাণ্ড দু-চোখে রাগান্বিত সাহিলের পানে তাকালো সে। হতবাক গলায় ফিসফিসিয়ে সামান্তাকে বলল,
“এ্যাঁ! ইনিই তবে তিনি?”
“হ্যাঁ গো হ্যাঁ। ইনিই হলেন তিনি। এখন কী হবে বলো তো? তুমি তো না চিনেই মানুষটার সাথে রুড বিহেভ করে বসলে। এবার তুমি তাকে ভাগে আনবে কী করে বলো?”
“ফিকার নট। চুটকিতেই আমি ছেলেদের বশে আনতে পারি! আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমার কোনো ধারণা নেই। জাস্ট ওয়েট সি। তোমার মনস্কামনা পূরণ করার ব্যবস্থা আমি করছি।”
প্রিয়া ধীরে ধীরে সামান্তার পাতা ফাঁদে পা দিতে লাগল। প্রিয়া বুঝতেও পারলনা তার সাথে কী হতে চলছে। প্রিয়া যতোই নিজেকে ধূর্ত প্রমাণ করার চেষ্টা করুক না কেন বস্তুত সে সীমাহীন বোকা একটি মেয়ে। যা সামান্তা বেশ নিরিক্ষিতভাবেই আঁচ করতে পারছে। কেননা, কারো সাথে প্রথম দেখাতেই কিংবা ঘণ্টাখানিকের আলাপেই কেউ কাউকে এতোটা বিশ্বাস করতে পারেনা যতোটা নির্বোধ প্রিয়া সামান্তাকে করছে। নিজেকে প্রিয়া এমন খোলামেলাভাবে প্রকাশ করছে যেনো সামান্তা তার কতো কালের চেনা। এতে করে সামান্তার আরও সু্বিধা হচ্ছে প্রিয়াকে হাতেনাতে ধরতে। যদিও সাহিল এখানে অকারণেই ফেঁসে গেছে!
সামান্তাকে পাশে সরিয়ে প্রিয়া হঠাৎ হেসে হেসে ওঠে সাহিলের দিকে এগিয়ে গেলো! সাহিলের দিকে নির্মল, কোমল ও মধুকরী দৃষ্টিতে তাকালো। হতভম্ব সাহিল! দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এলো তার। জীবনে এই প্রথমবার অদ্ভুত সব পরিস্থতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। যা মূলত সামান্তা তৈরী করে দিচ্ছে। বিচিত্র এক নারী তাকে রঙ খেলা দেখাচ্ছে। যার দরুন নাজেহাল সে। আকস্মিকভাবে ও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তব্ধ সাহিলের গাঁয়ের সাথে ঘেঁষে দাড়ালো প্রিয়া! মাথা নুইয়ে ইনিয়েবিনিয়ে লাজুক সুরে সাহিলকে বলল,
“আ’ম সো সরি সাহিল! একচুয়েলি আমি তোমার এই ডেসপায়ারড লুকটি দেখার জন্যই এতোক্ষণ যাবত এতো অভিনয় করছিলাম! তুমি হয়তো জানোনা এই লুকে তোমাকে কতোটা কুল দেখায়!”
সাহিলের গাঁ বরফ হয়ে এলো! অন্য নারীর ছোঁয়া তার শরীরকে শিউরে তুলল। এই প্রথম কোনো মেয়ে মানুষ তাকে নিয়ে এতো গভীর ও প্রশংসনীয় কোনো মন্তব্য করল! যা সাহিল রীতিমতো উপেক্ষা করত। প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময়টিও পেলোনা সাহিল। ইতোমধ্যেই সামান্তার ইশারা অনুযায়ী রেস্টুরেন্টের বাইরে বিচলিত হয়ে দাড়িয়ে থাকা মিশাল ও লিওন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলো! মুখ থেকে লিওন মাস্ক খুলতেই প্রিয়ার জ্ঞান হারাবার জোঁ হলো! রক্তশূল দৃষ্টিতে লিওন তাকিয়ে রইল আতঙ্কিত প্রিয়ার দিকে। তবে সিনহা দেখালো তার অন্য রূপ। সুযোগ বুঝে রেস্টুরেন্ট থেকে কেটে গেল সে! প্রিয়া সম্পূর্ণ অবাক হয়ে গেল। সাহিলের সাথে ঢলাঢলি বন্ধ করে ঈষৎ দূরে সরে দাড়ালো।
মিশাল, সামান্তা ও সাইফা কিঞ্চিৎ দূরে দাড়িয়ে প্রিয়া ও লিওনের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল। সামান্তার প্ল্যান তবে কাজে দিলো। ইতোমধ্যেই মিশাল গলা ঝাঁকালো। বিড়বিড় করে সামান্তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“সাহিল ভাই বকাঝকা করেনি তো তোকে?”
“উঁহু। পাল্টা সাহিল ভাই বকা খেলো প্রিয়ার কাছ থেকে।”
“মানে? কীভাবে?”
“আমি না একটা ক্যালো করে ফেলেছি জানো?”
“কী ক্যালো?”
“সাহিল ভাইকে আমার প্ল্যানে দুরূপের দাস বানিয়েছি!”
“কীভাবে?”
সামান্তা প্রথম থেকে শেষ অবধি পাই টু পাই সব খুলে বলল মিশালকে। বিস্তারিত শুনে মিশালের বেশ পৈশাচিক আনন্দ হলো! সাহিল আজ আচ্ছে মতোই হেনস্তা হলো। তবে সব ভান্ডা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সামান্তা ও মিশালের অবস্থা যে কতোটা ভয়ঙ্কর হবে তার টের মিশাল ঠিকই আঁচ করতে পারছে! মন্থর গলায় মিশাল বলল,
“সাহিলকে ভয় পাচ্ছিস তুই?”
“কখন বললাম ভয় পাচ্ছি?”
“না। দেখে মনে হলো তাই বললাম।”
“সাহিল কোনো চিজ হলো ভয় পাওয়ার? তাকে তো আমি এক চুটকিতে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখি!”
“ওহ্ রিয়েলি?”
“কেন? কোনো সন্দেহ আছে তোমার?”
“হঠাৎ করে খুব সাহস ভর করল যে তোর মধ্যে। কারণ কী এর? বাড়ি থেকে তাবিজ টাবিজ পড়ে এসেছিস না-কি? কেউ ঝাড় ফোঁক করে দিয়েছে তোকে?”
“উঁহু। এসব কিছুই নয়। সাহসটা ঠিক তোমার দিক থেকে আসছে! ভরসার জায়গা পেলে সামান্য পিঁপড়েও কিন্তু হাতি হয়ে ওঠে! তুমি হলে আমার সেই সাহস ও ভরসার জায়গা। যাকে পাশে পেলে আমি মৃত্যুকেও ভয় পাবোনা।”
মিশাল কেমন যেনো নিথর হয়ে গেলো! বুকের ভেতরটা তার নীরবভাবে পুঁড়তে লাগল। নিগূঢ় দৃষ্টি ফেলল সে সামান্তার পানে। তবে সামান্তার মনোযোগ এখন সামনের দিকে। তাই মিশালের নিরাগতা তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেল। ধীরে ধীরে সামান্তাকে দুর্বল করে ফেলছে মিশাল। তার প্রতি নির্ভর করে তুলছে। এভাবে চলতে থাকলে যে সামান্তার জীবনটা তার জন্য এলোমেলো হয়ে যাবে। কারো গোছানো জীবনটাকে অগোছালো করে দেওয়ার কী কোনো অধিকার আছে তার?
সাহিল বেহুদা প্রিয়া ও লিওনের মাঝখানে সং হয়ে দাড়িয়ে আছে! বস্তুত সে পরিস্থিতি বুঝে ওঠতে পারছিলনা। মাথা পুরো খারাপ হয়ে যাচ্ছিল তার। পাগল পাগল লাগছিল। অবিলম্বেই দুজনের মাঝখান থেকে সরে দাড়ালো সে। অবশেষে লিওন প্রিয়ার মুখোমুখি হলো। বাঁজখাই গলায় প্রিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“ছেলেদের তুই খুব সস্তা পেয়েছিস তাইনা? তাদের যখন ইচ্ছে যেভাবে খুশি ফাঁসানো যাবে? তাদের মন নিয়ে খেলা যাবে? টাকা-পয়সার প্রতি এতো লোভ তোর? শুধুমাত্র আমার সম্পত্তির জন্য আমাকে বিয়ে করার নাটক করছিস তুই? আমার পরিবারের ভালোবাসা, সহানুভূতি ও দুর্বলতা নিয়ে এতো নিকৃষ্টভাবে খেলা করছিলিস?”
বেশ বড়োসড়ো এক ধাক্কা খেলো প্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে সে বুঝে ওঠতে পারছিলনা কী ঘটছে তার সাথে। শঙ্কায় গলায় কম্পন ধরে গেল তার। অশ্রুজড়িত গলায় বলল,
“তুমি এসব কী বলছ লিওন? আমি সত্যিই বুঝতে পারছিনা।”
সাইফার হাত থেকে লিওন ফোনটি কেড়ে এনে ফোনে ধারণ করা ভিডিওটি প্রিয়ার চোখের সামনে তুলে ধরল। ভিডিওটির দিকে তাকিয়ে প্রিয়ার চোখ থেকে আপনাআপনি অশ্রু ঝরতে লাগল! তবে এই অশ্রু ভয়, দুঃখ, অনুশোচনা কিংবা ধরা পড়ে যাওয়ার নয়। এই অশ্রু হলো সামান্তার প্রতি জন্ম নেওয়া ক্ষোভের অশ্রু, তার সাথে হওয়া বিশ্বাসঘাতকতার অশ্রু। রোষাগ্নি দৃষ্টিতে প্রিয়া পাশ ফিরে ক্রুর হাসতে থাকা সামান্তার দিকে তাকালো। লিওনকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“মেয়েটা আমাকে ফাঁসাচ্ছে লিওন৷ তুমি যদি তার চাল কিংবা তার কথায় বিশ্বাস করে থাকো তবে জীবনের সবচেয়ে বড়ো বোকামিটা করবে তুমি!”
অট্ট হাসল লিওন। সূচালো দৃষ্টি নিক্ষেপ করল প্রিয়ার দিকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমি নিজের চোখে যা দেখেছি তা কোনোভাবেই ভুল হবার নয়। সাহিল ভাইয়ার সাথে ঢলাঢলিও আমার দৃষ্টি এড়ায়নি। ভিডিওতে সবার কথা এবং মুভমেন্ট স্পষ্ট বুঝাও যাচ্ছে। তোকে বিশ্বাস করে যদি আমি ঐ মেয়েটাকে অবিশ্বাস করি তবে এটা হবে আমার বোকামি।”
নির্বোধ সাহিলকে এরমধ্যে টেনে আনল সামান্তা! সাহিলের হাত ধরে টেনে নিয়ে সে সাহিলকে প্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করালো। কঠিন গলায় সাহিলের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“আমার প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দাও সাহিল ভাই। এই মেয়েটা কী তোমার সাথে ঢলাঢলি করেনি? তোমার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করেনি? প্রথম দেখায় কোনো মেয়ে একটা অপরিচিত ছেলের সাথে এভাবে ঘেঁষাঘেঁষি করতে পারে বলো?”
“তুই আমাকে কীসের মধ্যে ফাঁসাচ্ছিস বল তো? কী হচ্ছে এখানে? আমার তো এখন ইচ্ছে করছে মেয়েটার সাথে সাথে তোর গালেও ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মারি! মিশালদের বাড়িতে থেকে এসব অকাজ শিখছিস তাইনা? দাড়া মামুকে বলে আমি আজই তোকে নিজের বাড়িতে ট্রান্সফার করছি!”
সামান্তাকে শাসিয়ে সাহিল অবিশ্বাস্যভাবে প্রিয়ার গালে সজোরে একটি চ’ড় বসিয়ে দিলো! আঘাত প্রাপ্ত প্রিয়াকে আঙুল তাক করে তেজী গলায় বলল,
“এই চড়টা হলো আমার সাথে বে’য়া’দবি করার জন্য! নেক্সট টাইম আমার সামনে পরলে তোকে আমি তোকে গেড়ে রেখে দিব! মাইন্ড ইট।”
প্রিয়া চিৎকার চ্যাচাম্যাচি গোটা রেস্টুরেন্টকে এক করে ফেলার পূর্বেই সাহিল পিছু ঘুরে নিশ্চুপ মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। ঠাণ্ডা মাথায় মিশালকে শাসিয়ে বলল,
“তোরা দুজন আমাকে ভালো হতে দিচ্ছিসনা! আমার সামান্তাকে দিয়ে তোর এসব অকাজ করানোর হিম্মত দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছিনা। লাস্ট বারের মতো সাবধান করলাম তোকে। পরেরবার কিন্তু গাঁয়ে হাত তুলতে দ্বিধাবোধ করবনা।”
হনহনিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল সাহিল। বাঁকা হাসল মিশাল। খানিক চ্যাচিয়ে সাহিলকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“সামান্তা তোমার নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নয় যে তাকে পাওয়ার অধিকার শুধু তোমার। দশবার মার খাওয়ার পর যদি আমি ভুলেক্রমে একবার হলেও ওঠে দাঁড়াতে পারি তবে ভেবে নিও সেদিনই তোমার খেলা শেষ!”
#চলবে…?