#বুকে_যে_শ্রাবণ_তার
#পর্ব_২৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“হ্যাঁ। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম মিশালকে বিয়ে করে তুই ঠকবি! কি আছে ঐ ছেলের? না আছে টাকা পয়সা, না আছে বাড়ি,গাড়ি,সম্পত্তি। এই ভিটে বাড়িটা ছাড়া আর কী আছে তার? দুইদিন পর হয়তো এই ভিটেবাড়িটাও হারাতে হবে তাকে। তুই তো আমার বোনের মেয়ে বল? তোকে কীভাবে এই অশান্তির মধ্যে জড়াই?”
জেসমিন বেগমের এহেন স্বার্থপরায়ন কথা মেনে নিতে পারলনা জেনিয়া। তীব্র প্রতিবাদ জানালো সে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ভৎসনার স্বরে বলল,
“আমি শুধু মিশাল ভাইয়াকে চাই খালামনি। তার বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি এসব কিছুই আমার চাইনা। প্লিজ তুমি স্বার্থপরের মতো কথা বলোনা। মা হয়ে ছেলে সম্পর্কে এসব নোংরা কথা তোমার মুখে মানায় না। মিশাল ভাইকে ছাড়া আমি বাঁচবনা। আই লাভ হিম লট! তার জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি খালামনি।”
রেগে গেলেন জেসমিন বেগম। যেনো তেনো রাগ নয় এ যেনো সামনের ব্যক্তিটিকে নখে তোলে মারার মতো রাগ। খাবারের বড়ো একটি লোকমা তিনি জোর করে জেনিয়ার মুখে ঠেসে দিলেন। মুখে মুখে তর্ক করা তিনি পছন্দ করলেন না। চোখ থেকে টলটলিয়ে জল নেমে এলো জেনিয়ার। না পারছিল খাবারটি গিলতে না পারছিল উগলাতে। ক্ষিপ্ত গলায় জেসমিন বেগম হুমকিস্বরূপ জেনিয়াকে বললেন,
“আজই তোকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করছি! ছোটোকে কল দিয়ে বলছি শীঘ্রই তোর বিয়ের ব্যবস্থা করতে। তোদের এলাকার রাজন চেয়ারম্যানের ছেলে নাকি তোর জন্য পাগল? গত দুই বছর ধরে তোর পেছনে ঘুরছে। শোনলাম ইটালিতে তাদের নিজস্ব ব্যবসাও নাকি আছে। ঐ ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে! দেখব তোর বিয়ে কে আটকায়। ঐ বেরোজগার মিশালের ভূত তোর মাথা থেকে কীভাবে বের করতে হয় আমার জানা আছে!”
মুখ ভর্তি বমি করে ভেতরের সব খাবার উগলে দিলো জেনিয়া! তেতে গেলেন জেসমিন বেগম। বসা থেকে দাড়িয়ে পরলেন তিনি। পানির গ্লাসটি দুর্বল ও কান্নারত জেনিয়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“এসব দুই টাকার নাটক করা বন্ধ কর! যদি এখনি বিয়ে করতে না চাস তো মিশালকে ভুলে যা! ঐ বাউন্ডুলে ছেলের দ্বারা কিছু হবেনা। তোর সস্তা আবেগ ও বোকামির জন্য আমি আমার বোনের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে পারবনা। আর তোর জীবনটাও নষ্ট করতে পারবনা। কথাটা ভালোভাবে মাথায় ঢুকিয়ে নে এতে তোরই মঙ্গল।”
কাঁদতে কাঁদতে যেনো রুহ্ বের হয়ে যাচ্ছিল জেনিয়ার! নোংরা মেঝে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন জেসমিন বেগম। একটি ভেজা নেকড়া দিয়ে তিনি মেঝেটি মুছতে লাগলেন। ভরাট গলায় জেনিয়া অনুনয়ভরা গলায় তার খালামনিকে বলল,
“আমি মিশাল ভাইয়াকে ভুলতে পারব কিনা জানিনা খালামনি! তবে আমি এখনি বিয়ে করতে চাইনা। আমি অনেক পড়তে চাই। প্লিজ তুমি আমাকে এখনি বাড়ি পাঠিয়ে দিওনা। আমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করতে চাই।”
“ভুলতে হবে ঐ নিকাম্মাটাকে! শুধু চেহারা সুরত দিয়ে কী মানুষ গুলে গুলে শরবত খাবে? ছেলে হিসেবে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, বাড়ি, গাড়ি, সম্পত্তি, ক্যারিয়ার সব থাকতে হবে। ঐ ছেলের তো কিছুই নেই। যে ছেলে তার মাকে তার বোনকে সুখী রাখতে পারেনা বিয়ের পর সে ছেলে তার বৌকে কিভাবে সুখে রাখবে? আজকালকার যুগের মেয়েদের কি চাহিদার অভাব আছে? আমি জেনেশুনে তোকে এই নরকে নিক্ষেপ করতে পারবনা। বিশাল কোটিপতির কাছে তোকে বিয়ে দিবো। জানিনা আমার মেয়েটার ভাগ্যে কী আছে। এখন শুধু মেয়েটাকে নিয়েই আমার টেনশন। ঐ ছেলের জন্য না আমার মেয়েটার জীবনও নষ্ট হয়ে যায়।”
কাজ শেষে বকবক করতে করতে জেসমিন বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। মুখ চেপে কাঁদতে লাগল জেনিয়া। জেসমিন বেগমের যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলল,
“বিয়ে করতে হলে তো আমি মিশাল ভাইকেই করব খালামনি! তুমি বা তোমরা কেউ আমাকে আটকাতে পারবেনা। মিশাল ভাই যে একটা খাঁটি সোনা তা আমার বুঝা হয়ে গেছে। যা তুমি মা হয়েও বুঝতে পারোনি আর পারবেও না।”
উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পরল জেনিয়া। দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে এলো সামান্তা। মিশালকে নিয়ে জেসমিন বেগমের বিরূপ চিন্তাধারা দেখে সত্যিই অবাক না হয়ে পারলনা সামান্তা। মিশাল নামক অমূল্য রত্নকে চিনতে জেসমিন বেগম এতটা ভুল করলেন? জেসমিন বেগমের যাওয়ার পথে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসল সামান্তা। মিশালকে কীভাবে তৈরি করতে হয় জানা আছে তার! সময় এসেছে মিশালকে নিজের মতো তৈরি করার। মিশালের ক্ষমতাকে নিংড়ে বের করার। তবে জেনিয়ার অনুভূতিকেও এড়িয়ে যেতে পারলনা সামান্তা। মিশালের জন্য তার অনুভূতি ফেইক মনে হলোনা! তবে যতো দ্রুত সম্ভব জেনিয়ার মাইন্ড থেকে মিশালকে দূর করতে হবে। সাহিলকে সেই জায়গায় বসাতে হবে! জেসমিন বেগম জেনিয়ার জন্য যেমন কোটিপতি ছেলে চাইছেন সাহিল হলো তার অনুরূপ।
_______________________________
তমাল খানকে দেখে হকচকিয়ে ওঠল সাহিল! হুড়োহুড়ি করে সে মিশালকে কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলো। সাহিলের মতো মিশালও তমাল খানের সামনে মাথা নুইয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইল। স্যুট বুট পরা তমাল খান প্যান্টের পকেটে হাত গুজে গম্ভীর দৃষ্টিতে বাড়ির এদিক ওদিক তাকালেন। খরতর গলায় সাহিলের দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন,
“কী ব্যাপার সাহিল? বাড়ি ভাঙার কাজ এখনও শুরু করোনি?”
মাথা তুলে সাহিল সরু দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকালো। ভনিতা ভুলে স্পষ্ট গলায় বলল,
“বাড়ি ভাঙা হবেনা বাবা। আমাদের এতে স্বয় সম্পত্তি থাকতে নানার বাড়ির সম্পত্তিতে আমি লোভ করতে চাইনা! তাছাড়া যার সাথে রাগ করে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তার সাথে এখন আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে! আমরা আবারও ভাই ভাই হয়ে গেছি। সো ঐসবের আর প্রয়োজন নেই।”
“হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি সাহিল? রাতারাতি তুমি তোমার সিদ্ধান্ত পাল্টে নিলে? হাউ ইট’স পসিবল? তুমি কি ভুলে গেছ তোমার পাশের ছেলেটার জন্যই তুমি জেলে গিয়েছ? মিথ্যে মামলার আসামী হিসেবে জেলে গিয়েছ?”
“এটা আমার জন্য একটা শিক্ষা ছিল বাবা! মাঝে মাঝে ছোটোদের থেকেও আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। তুমি প্লিজ এখানে আর সিনক্রিয়েট করোনা। বাড়ি চলো, তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি।”
সাহিল তার বাবাকে নিয়ে একপ্রকার জোর করেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। গাঁ ঘিন ঘিন করে ওঠল তমাল খানের। যেতে যেতে তিনি তেজী গলায় সাহিলকে বললেন,
“এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তোর কী হয়ে গেল সাহিল? কী খাইয়ে দিয়েছে এই ছেলে তোকে? যাদু টোনা করেনি তো তোকে? আমিতো এখন আমার ছেলেকেই চিনতে পারছিনা।”
“বাবা প্লিজ অবুঝের মতো কথা বলোনা। এসব টোনা তাবিজ ভুয়া। আল্লাহ্ কখন কাকে কীভাবে হেদায়েত করে কেউ জানেনা। বাড়ি চলো আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলছি। এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হোক আমি চাইনা।”
পেছন থেকে সাহিলকে ডাকল মিশাল। উদাস স্বরে বলল,
“না খেয়েই চলে যাচ্ছ ভাইয়া? মা কতো শখ করে আমাদের জন্য রান্না করল।”
প্রত্যত্তুরে সাহিল পিছু ফিরে মিশালকে শান্তনার স্বরে বলল,
“রাতে এসে একসাথে খাবো মিশাল। আমার খাবারটা তুলে রেখে দিস।”
পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার ভয়ে সাহিল তার বাবার সাথে গাড়িতে ওঠে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। মিশাল মন খারাপ করে সাহিলদের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইল। কতো বছর তারা দুই ভাই একসাথে হলো। কিন্তু খুব বেশি একটা সময় তারা একসাথে কাটাতে পারলনা। সাহিলদের গাড়ি মিশালের দৃষ্টির সীমানা থেকে পুরোপুরি মিলিয়ে যেতেই মিশাল মাথা নুইয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। খাবার টেবিলে প্লেটে শুধু ভাত নিয়ে বসে আছে সাইফা, সায়মা ও রুমকি। তরকারির জন্য ওয়েট করছে তারা। রান্নাঘরে বকবক করতে করতে জেসমিন বেগম তরকারি গরম করছেন। সঙ্গে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলছেন,
“ধ্যাত তরকারিটা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। মেয়েটাকে বললাম সবাইকে নিয়ে গরম গরম খাবারটা খেয়ে ফেলতে শুনলনা আমার কথা। কোনো কাজের না এই মেয়ে। বড়ো লোকের মেয়েরা হয়তো এরকমই হয়! শরীরে অলসতা বেশি। কে জানে কোথায় গিয়ে বসে আছে এখন। আমার মেয়ে তো হয়েছে আরেক নবাবজাদী। গরম তরকারি ছাড়া খাবেই না। ভাঙা ঘরে থেকে বড়োলোকি চালচলন!”
ইতোমধ্যেই সামান্তা রান্নাঘরে চলে এলো। জেসমিন বেগমকে যাচাই করার জন্য সামান্তা তাঁর পাশে এসে দাড়ালো। হেয়ালি গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আচ্ছা চাচি একটা প্রশ্ন করি?”
সামান্তার হঠাৎ আগমনে হকচকিয়ে ওঠলেন জেসমিন বেগম। এতক্ষণ তো সামান্তার নামেই তিনি বদনাম করছিলেন! হুট করে যে কোথা থেকে উদয় হলো এই মেয়ে। কিছু শুনে নিলো না তো আবার? ভয়ে শুকনো ঢোঁক গিললেন জেসমিন বেগম। জোরপূর্বক হেসে পাশ ফিরে সামান্তার দিকে তাকালেন। বললেন,
“কী প্রশ্ন রে মা?”
“আমাকে তোমার কেমন লাগে?”
“তুইতো একটা হীরের টুকরো রে! তোকে আমার ছেলের বৌ বানানোর খুব ইচ্ছে! হবি আমার ছেলের বৌ? খুব যত্নে আগলে রাখব তোকে। আমার মিশালের মতো গুনী ছেলে ভদ্র ছেলে পৃথিবীতে কী আর দুটো পাবি তুই”
গিরগিটির ন্যায় রঙ রূপ বদলে নিলেন জেসমিন বেগম! কোন উদ্দেশ্যে তিনি রঙ বদলালেন বুঝতে বেশি বেগ পেতে হয়নি সামান্তাকে। সন্দেহ এখন সত্যিতে রূপান্তরিত হলো তার। উদ্দেশ্য সফল হতেই ক্রুর হাসল সামান্তা। সোজাসাপটা গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“আচ্ছা? আমার বাবার অঢেল জায়গা সম্পত্তি, বাড়ি-গাড়ি আছে বলে তুমি আবার লোভে পরে আমাকে তোমার ছেলের বৌ করতে চাইছনা তো চাচি?”
ভড়কে ওঠলেন জেসমিন বেগম! হাটে হাঁড়ি ভাঙল বলে! সামান্তার মনে কিছুতেই সন্দেহের বীজ বুনতে দেওয়া যাবেনা। ছলনার আশ্রয় নিতে হবে। নির্বোধ গলায় তিনি আমতা আমতা করে বললেন,
“আস্তাগফিরুল্লাহ্। এসব কী বলছিস তুই? আমি তো এটা ভেবেও দেখিনি সামান্তা।”
রঙ ঢঙ করে সামান্তা ইনিয়ে বিনিয়ে বলল,
“আমি তোমার কাছের কেউ নই বলে তোমার বেকার ছেলের ঘাড়ে আমাকে চাপিয়ে দিতে চাইছ চাচি? ইট’স নট ফেয়ার! কজ বিয়ের পর তো মেয়েরা স্বামীর সম্পত্তিকেই বেশি প্রাধান্য দেয় নয় কী? মেয়ের বাবার হাজার থাকলেও কোনো সুনাম থাকেনা তখন। তবে আমি মিশাল ভাইকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছিনা কিন্তু এর আগে তাকে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে! তারপর আমি ভেবে দেখব!”
জেসমিন বেগমের আশাকে নিরাশা করে দিয়ে সামান্তা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে গেল। গভীর শোকে যেনো তলিয়ে গেলেন জেসমিন বেগম! লোভী জেসমিন বেগমকে শিক্ষা দিতে চায় সামান্তা। মিশালকে ব্যবহার করে তিনি নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছেন সামান্তা এই বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। মিশালের সাথে খুব শীঘ্রই তিনি সামান্তার বিয়েটা সেরে ফেলতে চাইছিলেন। কেননা তিনি ভাবছিলেন তাদের বিয়ের পর সামান্তার সম্পত্তির অংশটুকু তিনি ছলাকলা করে মিশালের নামে লিখে নিবেন! সেই সম্পত্তি দেখিয়ে তিনি রুমকিকে ভালো জায়গায় বিয়ে দিবেন! সামান্তাকে বিয়ে করা ছাড়া মিশাল আদোতেই যে লাইফে স্যাটেল্ডড পারবেনা এ বিষয়ে যেনো শতভাগ নিশ্চিত তিনি! প্রেশার তরতর করে বেড়ে যাচ্ছিল জেসমিন বেগমের। টাকা-পয়সা কিংবা কোনো যোগ্যতা ছাড়া মিশাল কী আদৌ লাইফে স্যাটেল্ডড হবে?
________________________________
মিশালের একহাতে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে তো অন্যহাতে কাপড়ের ব্যাগ গোছাচ্ছে। কোথাও যাওয়ার তাড়া তাকে বেশ পীড়া দিচ্ছে। পরিবেশ বদলাতে চাইছে সে। কয়েকটা দিন নিজের মতো করে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে চাইছে। বিষাক্ত শহর ছাড়তে চাইছে। নিকোটিনে আসক্ত সে! রাত প্রায় নয়টার কাছাকাছি তখন। রুমে টিউব লাইটের বদলে ড্রিম লাইট জ্বলছে। মৃদু
অন্ধকারে ঢাকা রুমটি। চকচকে আলোতে যেনো তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল! তাইতো আলো আঁধারে নিজেকে সমর্পণ করল। উদোম গাঁয়ে থাকার দরুন তার সমস্ত শরীরের রগগুলো যে ফুলেফেঁপে ওঠছে তা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। বিষাদে ডুবন্ত মুখশ্রী। রাগও যেনো নিয়ন্ত্রণ হচ্ছেনা তার!
ইতোমধ্যেই মিশালের রুমে সামান্তার আগমন ঘটল। হাসতে হাসতেই সে মিশালের রুমে প্রবেশ করেছিল। তবে রুম জুড়ে আর্বতমান মিটমিটে আলোতে সামান্তা তব্দা লেগে গেল। আচ্ছন্ন দৃষ্টিতে মিশালকে একটুখানি দেখতে পেল। সামান্তাকে দেখেও মিশালের হাব ভাবের কোনো পরিবর্তন হলোনা। বরং সে একের পর এক সিগারেট ফুঁকতে লাগল! সামান্তার উপস্থিতিকে বিরক্ত মনে করল। তোয়াক্কাই করলনা যেনো। নাকের ডগায় রাগ ভীড় করল তার। বিষয়টায় অবাক হলো সামান্তা। নাকে ওড়না চেপে মিশালের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“ব্যাগপত্র গোছাচ্ছ যে? কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
“পারমিশন ছাড়া আমার রুমে ঢুকলি কেন?”
“ওহ্ রিয়েলি? আমি রুমে ঢুকতে পারমিশন লাগবে কেন?”
“তোর সাথে আমার এমন কোনো আহামরি সম্পর্ক নেই যে পারমিশন ছাড়া তুই আমার রুমে ঢুকতে পারবি!”
“মনে হচ্ছে জুতো শুকাতে হবে তোমাকে! জ্বীন ভূত আছড় হয় তো কিছুক্ষণ পর পর তাই।”
মিশালকে ক্ষেপাতে মুখ টিপে হেসে দিলো সামান্তা! মিশাল তাতে হিংস্র প্রতিক্রিয়া করল। ঘাড়ের রগ টান টান করে বলল,
“শাট আপ! বুঝেশুনে কথা বলবি আমার সাথে। আর হুটহাট আমার রুমে ঢুকবিনা। আমার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করবি।”
ব্যাগ গোছানো শেষ করে মিশাল হাতে থাকা সিগারেটটি মেঝেতে ছুড়ে ফেলল। হন্তদন্ত হয়ে গাঁয়ে শার্ট জড়াতে লাগল। মিশালের এহেন উগ্র আচরণে সামান্তা হয়রান হয়ে গেল। তেড়ে গিয়ে মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। একরোঁখা গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হয়েছে তোমার? অসভ্যের মতো আচরণ করছ কেন?”
“আমি অসভ্য তাই! এমনিতেও আমি ক্লাসলেস। তোর হাই ক্লাসের সাথে আমার ল ক্লাস যায়না!”
ব্যাগ হাতে নিয়ে মিশাল রুম থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই সামান্তা পেছন থেকে মিশালের ডান হাতটি টেনে ধরল। নাক টেনে ভরাট গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী হয়েছে বলোনা আমায়? আমার কোন আচরণে তুমি আঘাত পেয়েছ বলো?”
পিছু ঘুরে তাকালো মিশাল। বিক্ষিপ্ত দৃষ্টি তার। বিমর্ষ গলায় বলল,
“জেমসের একটা গানের কথা খুব মনে পরে গেল। ঐযে ঐ লাইনটা আছেনা? তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম কী দোষ দিবি তাতে। বন্ধু তোরে খুঁজে বেড়াই সকাল-দুপুর-রাতে। আগুন জ্বেলেও পুড়লাম আমি দিলাম তাতে ঝাপ। তোর আমার প্রেমে ছিলো রে বন্ধু, ছিলো রে পুরোটাই পাপ!”
#চলবে…?