#আনন্দ_অশ্রু
#পর্ব_১১
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
কাধে ঝুলিয়ে মায়াকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো রেহান, কাধ থেকে ধপাস করে নিচে নামিয়ে দিল মায়াকে আর নিজে খাটের ওপর শুয়ে পরলো। মায়া অবাক না হয়ে পারছে না, এই লোক ওকে কাধে ঝুলিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে আসে ফ্লোরে ধপাস করে ফেলে দিলো আর নিজে বিছানায় নবাবের মতো শুয়ে পরলো। ফ্লোর থেকে উঠে মায়া বজ্র কণ্ঠে বলে,,
আমি আমার জীবনে কোনো দিন ডাকাত দেখিনি আজ সেটাও দেখে নিলাম মিষ্টার চকিদার শিকদার পুরনো আমলের গুন্ডাদের মতো আমাকে কাধে করে তুলে আনার মানে কী হেএএএ?
বিয়ে করছি কত বছর হলো কিন্তু আজও বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে পারিনি। মানছি সেটা আমার জন্যই আমি পারিনি তখন বউ ছোটো ছিলো কিন্তু এখন তো বউ বড় হয়ে গেছে তাই আজ থেকে বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।
রেহানের কথা শুনে রাগে গীরগীর করছে মায়া। রেহান মায়ার চেহারার ভাব দেখে শুয়া থেকে উঠে দাঁড়ায় আস্তে করে মায়ার বাহু ধরে খাটে বসিয়ে দিয়ে নিজে আলমারির কাছে যায়। মায়া বসে বসে রেহানের কাজ কর্ম দেখছে। রেহান আলমারি থেকে একটা বড় গিফট বক্স বের করে মায়া শুধু দেখছে, রেহান সেই বক্সটা মায়ার পায়ের কাছে রাখে আর নিজে মেঝে তে বসে পরে রেহান মায়াকে নিজের সাথে বসতে বলে মায়াও বাধ্য মেয়ের মতো বসে পরে। রেহান মায়ার দিকে তাঁকিয়ে বক্সটা খুলার জন্য ইশারা করে, মায়া বক্সটা খুলে বক্সে থাকা জিনিস গুলো একটা একটা করে বের করতে থাকে।
বক্সে ছিল বাহারি রঙের চুড়ি, অনেক গুলো শাড়ি,চকোলেট, একটা ফটো এ্যালবাম একটা ছোটো ক্যামেরা আর একটা ডায়রি ।ডায়রিটার ওপর মায়ার একটা ছবি প্রিন্ট করা ছিলো। মায়া এগুলো দেখে রেহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মায়ার তাকানো দেখে রেহান মুচকি হেসে মায়ার হাতে হাত রেখে বলে,,
কী ভাবছো আসু, আমি কী করে তোমার পছন্দ জানলাম?
মায়া উপর নীচ মাথা ঝাঁকায় হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত দেয়। রেহান আবার বলে,,
তুমি জিজ্ঞেস করেছিলে না আমি এতো খবর কোথা থেকে পাই?
বড় ভাবী আমাকে তোমার সব খবর দিতো তুমি যে প্রতিদিন রাতে আমার ঘরে আসতে সেই খবরটাও ভাবী আমাকে দিয়েছে। আমি প্রতিদিন রাতে তোমাকে দেখার জন্য ভিডিও কল দিতাম। যেদিন তুমি আমার ঘরে এসে ছিলে সেদিনও দিয়েছিলাম। ভাবী তোমার ঘরে তোমাকে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে আমার ঘরের সামনে আসে দড়জা খোলা দেখে ভিতরে উকি দেয়, তুমি ডায়রি পড়ছিলে তাই ভাবীর উপস্থিতি টের পাওনি। সেদিন নিজ চোঁখে দেখেছিলাম কী ভাবে আমার শার্ট নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখে ছিলে জানো সেদিন তোমার কান্না দেখে তোমার কাছে ছুটে চলে আসতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু আমি পারিনি। তারপর থেকে তোমার পছন্দ অপছন্দ সব আমাকে বলতো আমি আমার কল্পনা দিয়ে ভাবতাম তোমার পছন্দ কেমন হতে পারে আর দেখ না সব কিছু তোমার পছন্দের সাথে মিলে গেছে।
মায়া এখনও রেহানের দিকে তাঁকিয়ে আছে রেহান মায়ার গালে হাত রেখে আবার বলে,
ভয় পেওনা আসু আমি তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে তোমার ওপর কাবু পেতে চাইবো না। এই গুলো তোমাকে দেওয়ার ছিলো তাই তোমাকে এমন করে তুলে নিয়ে এসছি। আমি জানি তুমি কখনোই ইচ্ছে করে আমার ঘরে আসবে না। এখন এই গুলো নিয়ে বিদায় হও আমার ঘর থেকে, একটু জন্য আমার ঘরে এসে পুরো ঘরটা বউ বউ ঘ্রাণে ভরিয়ে দিছো।
শেষের কথা শুনে মায়া ভ্রু কুঁচকে তাকালো রেহানের দিকে, গিফট বক্স টা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো তারপর বললো,,
এই বউ বউ ঘ্রাণ নিয়েই জীবন পার করতে হবে বউ আর আসবে না। আর একটা কথা আজ যেই কাজটা করেছেন এমন কাজ আর করবেন না তাহলে আপনার পিঠের একটা হাড্ডিও আস্ত থাকবে না।
আর কিছু পারো আর না পারো হুমকি টা ভালোই দিতে পারো দেখি।
হ্যাঁ, ছোটো বেলা থেকেই শিখেছি আর আমার হুমকির গুরু হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার রেহান শিকদার। আপনিও যদি ভালো ভালো হুমকি শিখতে চান তাহলে আমি তার বাসার ঠিকানা দিতে পারি।
যাক বউ আমার থেকে কিছু তো শিখছে এটাই আমার সৌভাগ্য নয়তো আজকাল বউয়েরা স্বামীকে নানান শিক্ষা দেয়।
রেহানের কথায় মায়া কপাল কুঁচকে চলে গেলো। রেহান হাসতে হাসতে দরজা লাগিয়ে দিল আর আবার শুয়ে পরলো।
এদিকে মায়া নিজের ঘরে গিয়ে নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে নাচা নাচি শুরু করে দিয়েছে। নাফিসা একটা একটা জিনিস দেখছে আর রেহানের পছন্দের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছে মায়া নাফিসার দিকে সরু চোঁখে তাকাতেই নাফিসা মায়াকে বলে,,
মায়া দোস্ত আমার,তোর পছন্দ কাকার পছন্দের চেয়ে বেশি সুন্দর। তাইতো আমার এতো সুন্দর কাকাকে পছন্দ করেছিস আমার কাকার পছন্দ এতো সুন্দর না তাই তো তোকে পছন্দ করেছে।
কথা টা বলে নাফিসা মায়ার দিকে তাকায় মায়া এখনও নাফিসার দিকে তাকিয়ে আছে মায়ার তাকানো দেখে নাফিসা কেবলা মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলে,,
দোস্ত একটা বলতে গিয়ে আর একটা বলে ফেলেছি তুই টাইপিং মিসটেক মনে করে ভুলে যা আমি বোকা শোকা মানুষ কী বলতে কী বলে ফেলেছি তুই আমার কথা মনে ধরিস না।
মায়া জিনিস গুলো বক্সে রাখতে রাখতে বলে,, আমি আগেই বলেছিলাম রক্তের টান আপন বেশি তাই তো নিজের কাকার জন্য বেষ্ট ফ্রেন্ডকে অপমান করতে তোর বাঁধলো না। এই অপমান নিয়ে এখন আমার একটা কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে সেটা হলো বিদায় পৃথিবী।
দোস্ত, মুখ ফসকে সত্যি টা বেড়িয়ে গেছে তুই তো জানিস আমি তোর সাথে মিথ্যা কথা বলতে পারি না সরি দোস্ত তুই অভিমান করিস না,তোর অভিমান আমি সইতে পারি না তাই আমিও বিদায় পৃথিবী বলে দিলাম তুই যেখানে যাবি আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবি।
নাফিসার চেহারা দেখে মায়া ফিক করে হেসে দেয় মায়ার হাসি দেখে নাফিসাও হেসে দেয় তারপর দুজনেই বক্সে জিনিস পত্র গুলো রেখে চকলেট খাওয়া শুরু করে।
___________________
সকালে সবাই নাস্তা করে যার যার কাজে বেরিয়ে গেলো নাফিসা আর মায়া হসপিটালে গিয়ে নিজেদের ক্লাস শেষ করে তানজিলের চেম্বারের বসে আছে। তানজিল রাউন্ডে বেরিয়েছে শাফায়াত ডক্টর তন্ময়ের সাথে ছিলো এখন তানজিলের চেম্বারের যাচ্ছে। চেম্বারের দড়জা খুলতেই মায়া আর নাফিসার কথা শুনতে পায়,,,
দোস্ত শাফায়াতরে আজকে যা লাগছিলো না ওরে দেখলেই মন চায় একটু আদর করে দেই এতো কিউট ও।
ছি নাফু তুমি তো দেখি ভালোই দুষ্টু দুষ্টু কথা শিখছ। এই গুলা কিন্তু ভালো মেয়ের লক্ষণ না।
আরে দোস্ত তুই এমন করস কেন তোর কাছে তো আমার সুদর্শন কাকা আছে আর আমার কাছে তো একটা লোক দেখানো বপেন ও নাই একবার আমার কষ্টটাও বুঝ।
হুমম বুঝি বুঝি তাইতো আর এখন হুমকি দেই না ভালো বুদ্ধি দেই। শোন তুই যে শাফায়াত কে পছন্দ করিস এটা যেনো শাফায়াত না বুঝে বুঝলি আগে জানতে হবে শাফায়াত ও কী তোকে পছন্দ করে নাকি।
এই টুকু শোনার পর শাফায়াতের আর কী লাগে। খুশীতে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার কিন্তু এখন সে কিছু করবে না নাফিসা আর মায়ার মত সেও ফন্দ্দি আটে সে নাফিসকে বুঝতে দিবে না সে ওজে নাফিসার জন্য এখানে এসেছে। ওদের কথা শুনে শাফায়াত আর ভিতরে প্রবেশ করলো না।
______________
রাত দশটার কাছা কাছি মায়া একা ছাদে বসে আছে মনটা ভালো নেই তার এখন খুব করে রেহানকে তার প্রয়োজন। খুব ইচ্ছে করছে রেহানকে জড়িয়ে ধরতে তার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকতে। রেহান কাজ থেকে বাসায় ফিরে মায়াকে কোথাও না দেখে নাফিসার কাছে জিজ্ঞেস করে মায়া কোথায়? নাফিসা মন খারাপ করে বলে মায়া ছাদে আছে। রেহান নাফিসার মুখের অবস্থা দেখে দ্রুত পায়ে হেঁটে ছাদে যায়,, মায়া দোলনায় বসে আছে পিছন থেকে রেহানের কন্ঠ শুনে উঠে দাড়ায়,,
আসু এতো রাতে ছাদে কী করছো?
বন্ধু আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন আমার পাশে একটু বসবেন আমি আপনার কাধে মাথা রেখে একটু বসবো?
#চলবে………………….
(আসালামু আলাইকুম সবাইকে আজকের পর্বটা খুব ছোট হয়ে গেছে। কালকে ইনশাল্লাহ অনেক বড় একটা পর্ব দিবো। কেউ খারাপ মন্তব্য করবেন না। আল্লাহ্ আপনাদেরকে হিফাজতে রাখুক আমীন।)
গল্পটি সম্পর্কে (রিভিউ) আলোচনা সমালোচনা করুন এই গ্রুপে।(যেকোনো গল্প খুজতে আমাদের গ্রুপটি ব্যবহার করতে পারেন)
গ্রুপ লিঙ্ক👇
https://www.facebook.com/groups/273212672043679/?ref=share_group_link