#চন্দ্রকিরণ
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:১৭
নির্জন কক্ষে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে জাহান। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা হয়নি। কয়েক দফায় পুলিশ এসেছিল। উগ্রপন্থী ছেলেদের কয়েকজনকে ধরা হয়েছে বাকিদের খোঁজ চলছে। বিকালের সেই ঘটনার পর ফিরোজের কক্ষে আর যাওয়া হয়নি। আলেয়া বারবার এসে খবরাখবর পৌঁছে দিচ্ছে। আরিয়ানের কিছু কাজ ছিল তাই সন্ধ্যায় বাইরে গেছে এখনো আসেনি। জাহান আপাতত ওই লোকটার সম্মুখে যেতে চাইছে না। রাগ উঠলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। দুদিন ভালো ব্যবহার করেছে বলে রাগ নেই তেমন না। পরিস্থিতি বুঝে আচরণ করতে ওর জুড়ি নেই। হঠাৎ কেউ খুটখাট আওয়াজ করে ওর পাশে এসে দাঁড়িলো। জাহান চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে ভ্রু কুটি করে চাইলো। একজন অচেনা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার গায়ের রং শ্যামবর্ণ। গোলাকার মুখ, উঁচু নাক দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে। গায়ে সাদা রঙের থ্রি পিচ। জাহান পা হতে মাথা অবধি স্ক্যান করলো ।মেয়েটা বেশ পরিপাটি। যত্ন নিয়ে মেকাপ নিয়েছে সেটা দেখেই বোঝা যায়।জাহানকে চুপচাপ দেখে মেয়েটা হাসি মুখে বলল,
> আমি ইকরা,আরিয়ান ভাইয়ের বাড়িতে থাকি। আমাকে আপনি চিনবেন না। ভাইয়ার কাছে নিউজ শুনে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এসেছি।
জাহান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বলল,
> পাশে বসো। কেমন আছো? ছোট আব্বাজান কেমন আছেন?
ইকরা পাশে বসতে বসতে উত্তর দিলো,
> অনেক ভালো আছে।সামনে থেকে দেখলে বুঝতে পারবেন। আমি উনাদের অযত্ন করিনা। সব সময় আগলে রাখি। চাচাজান ফিরোজ ভাইজানের ওখানে আছেন। এখানে পরে আসবেন। রাতের ডিনারের আয়োজন করতে গিয়ে আমার লেট হলো। আমাকে ছাড়া চাচাজান আসতে চাইছিলোনা। উনি অনেক ভালো। আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।
জাহান চোখ বন্ধ করলো। এই মেয়ে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কথা বলে। মাঝে মাঝে অতিরিক্ত কিছুর ফল ভালো হয়না। তাই খানিকটা হেসে বলল,
> কারো দায়িত্ব নিলে পালন করতে হয়। ছোট আব্বাজান অনেক নরম মনের মানুষ। যাইহোক তোমার কি খবর? কোন বিষয়ে যেনো পড়াশোনা করছো?
> অর্থনীতি,আমি চেয়েছিলাম নরমাল কোনো বিষয় সিলেক্ট করতে। কিন্তু আরিয়ান ভাইয়া দিলেন না। উনি বললেন আমি পড়াশুনার পাশাপাশি উনাকে সাহায্য করতে পারবো। তার জন্য উপযুক্ত হতে হবে। আমার জন্য অর্থনীতি ঠিক আছে। আমি আবার উনার কথা অমান্য করতে পারিনা। আমাকে আগলে রেখেছেন। যখন যা প্রয়োজন না চাইতে পেয়ে যায়। গাড়ি করে কলেজে দিয়ে আসেন।
মেয়েটা কথা বলছে আর লাজুক হাসছে। জাহান সবটা দেখে চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলো,
> আচ্ছা ইকরা আরিয়ান শাহরিয়ার লোকটিকে তোমার কেমন লাগে?মানে লোকটা কেমন?বোকা সরল নাকি ভীষণ চালাক?
ইকরা চনচল হয়ে উঠলো। আগ্রহ নিয়ে বলল,
> ভীষণ সরল। কাউকে ধমক দেয়না। ভুল করলে কি সুন্দর বুঝিয়ে কথা বলে। আমাকে আজও পযর্ন্ত কিছু বলেনি। কতবার ভুল করেছি। বারবার বলেছে ভুল থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। কষ্ট না পেয়ে ভুলটা সুধরে নাও তোমার মঙ্গল হবে।
ওর কথা শুনে জাহান হাসলো,
> সুন্দর উপদেশ। তা তুমি কি নিজের ভুলটা সুধরে নিয়েছো? নাকি সেই ভুলকে আঁকড়ে বারবার ভুল পথে চলছো?
জাহানের কণ্ঠে কঠিনত্বের ছোঁয়া।ইকরা ঢোক
গিলে চোখের পাপড়ি নাড়িয়ে বলল,
> আমি এই জিবনে বড় কোনো ভুল করিনি। যাইহোক শুনলাম আপনাকে বড় চাচাজান অষ্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবেন।আপনি কি যাবেন না? চাচাজানের জন্য ভীষণ দুঃখ হয়। আপনি বরং উনার কথা মেনে নেন। লোকটা সারাজীবন কষ্ট করেছে। বাকীটা সময় চাচাজানের সঙ্গে থাকেন। যা বুঝলাম চৌধুরী বাড়িতে আপনাকে কখনও আর পাঠাবেনা। আপনাদের বিয়েটা কমোলিনি ফুপিমা যেভাবে জোর জবরদস্তি করে দিয়েছিলো ওই বিয়ের কোনো মানে আছে? আরিয়ান ভাইয়া বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছিল। তাছাড়া আপনিও শুনলাম ভাইয়াকে এখন আর পছন্দ করেন না। শুনুন পিতা মাতার কথা শুনতে হয়।
জাহান এক দৃষ্টিতে মেয়েটাকে দেখছে। কি সুন্দর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। এতো সুন্দর লাগছে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। জাহান আনমনে বলল,
> ইকরা মানুষের ভেতরটা যদি বাইরের মতো লাবণ্যময়ী হতো তাহলে ভীষণ ভালো হতো বলো? একটা কথা কি জানো তুমি? আরিয়ান শাহরিয়ার আমাকে খুব ভালোবাসে? ভালোবাসার সেই পরিমাণ ঠিক কতখানি তুমি আন্দাজ করতেও পারবে না। আমার প্রতি উনার ভালোবাসা কমছে না বরং দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাইহোক তুমি বড্ড বেশি অতিরিক্ত কথা বলো। বাজে অভ্যাস ত্যাগ করবে তোমার জন্য ভালো হবে।
জাহানের কথায় মেয়েটার মুখখানা দেখার মতো হলো। থমথমে মুখ করে বলল,
> এতোদিন এক সঙ্গে আছি যদি তেমন কিছু হতো বুঝতে পারতাম না? আপনার ভুল ধারণা। ওই সংসারটা আমি আগলে রেখেছি। যত্ন নিয়ে সাজিয়েছি সবকিছু।
ইকরার চোখে পানি টলটল করছে। সেটা দেখে জাহান হেসে ফেললো। মাথা উঁচু করে বালিশে পিঠ লাগিয়ে বসতে বসতে বলল,
> সেই জন্য বুঝি সেই রাতে আমাকে ওসব ভুলভাল বলে রাগিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলে? কি ভেবেছিলে ওসব বললে আমি ডিভোর্স দিয়ে তোমাকে সুযোগ করে দিবো? আমি ব্যারিষ্টার মানুষ, তাছাড়া বুদ্ধি জ্ঞান ছোট থেকেই কেনো জানি আমার মাথার মধ্যে কিলবিল করে। তুমি অনেক আগেই ধরা পড়েছো। তোমার কথা বহুবার শুনেছি আজ সামনে থেকে দেখলাম। যাইহোক অতিরিক্ত কথা বলা মানুষগুলো ভীষণ বোকা হয়।উদাহরণ তুমি।
ইকরা ভয়ে কেঁদে ফেললো। আরিয়ানকে ওর ভালো লাগতো। সেই ভালো লাগা কবে জানি ভালোবাসাতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া এক সঙ্গে থাকতে থাকতে চৌধুরী বাড়ির অর্থ সম্পত্তি দেখে মনের মধ্যে লোভের জন্ম নিয়েছিল। আরিয়ান যদি ওকে বিয়ে করে তাহলে সবটাই ওর হয়ে যাবে। দূর সম্পর্কের এক ফুপি ওকে বুদ্ধি দিয়েছে একবার যদি আরিয়ানের সঙ্গে বিয়ে করে নিতে পারে তাহলে লাইফ সেটেল। অল্প বয়স, জ্ঞান বুদ্ধি অতটা হয়নি তাই লোকের প্রলোভনে পড়ে মাথা বিগড়ে যেত সময় লাগেনি। ইকরা দ্রুত জাহানের হাতখানা টেনে নিয়ে বলল,
> দয়া করেন আপু। আপনার কোনো কিছুর অভাব নেই কিন্তু আমিতো শূন্য। বাবা মা পরিবার পরিজন কেউ নেই। আপনি ভালো কাউকে পেয়ে যাবেন কিন্তু আমার কি হবে? প্লিজ আপু আরিয়ান ভাইয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দিন। আমি প্রমিজ করছি উনাকে আগলে রাখবো। অনেক ভালোবাসবো।
জাহান কিছু বলতে চাইলো তার আগেই হুট করে দরজা খুঁলে গেলো। আরিয়ান ভেতরে আসলো। ওকে দেখে ইকরা চমকে উঠে তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে চোখের পানি মুছে ফেললো। আরিয়ান সেদিকে চেয়ে বলল,
> কি ব্যাপার ইকরা হঠাৎ কান্নাকাটি করে আমার বউয়ের থেকে কি চাইছো? অতিরিক্ত কিছু চেয়ে ওকে বিব্রত করোনা তুমি বরং আমার থেকে চাইতে পারো।
আরিয়ান কথা বলতে বলতে জাহানের কপালে হাত রেখে জ্বর আছে কি দেখে নিলো। জ্বর আছে তবে কম। জাহান গাল ফুলিয়ে আছে দেখে আরিয়ান হেসে ওর গালটা টেনে দিয়ে বলল,
> এতোক্ষনতো বেশ ছিলেন।তবে আমাকে দেখে গাল ফুলিয়ে ঢোল করলেন কেনো? যাইহোক কি সিদ্ধান্ত নিলেন ডিভোর্স দিবেন নাকি আরিয়ান শাহরিয়ারকে আগামী প্রজন্ম উপহার দিয়ে খুশী করবেন? আপনার আম্মা জামাইয়ের কাছে বিশেষ এক আবদার রেখেছেন। ভাবছি সময় নষ্ট করবো না।
আরিয়ানের দিকে দুজনেই চেয়ে আছে। বোঝা যাচ্ছে কক্ষের সব কথা ওর কান পযর্ন্ত পৌঁছে গেছে। ইকরা ভয়ে ঢোক গিলছে। ঠান্ডার মধ্যেও ঘেমে উঠেছে। জাহান নির্বাক আছে। মনে হচ্ছে এমনটা হবে ওর জানা আছে। নির্জনতা কাটিয়ে আরিয়ান পূণরায় বলল,
> ইকরা তোমাকে তো বলাই হয়নি সেদিন রাতে তুমি যে কথাগুলো বলেছিলে সেগুলো আমি পরদিন সকালেই জেনেছি। তুমিতো বাচ্চা মেয়ে বুদ্ধি কম। আসলে আমার ফোনে কল রেকর্ড চালু ছিল ওটা ধরতে পারোনি। আমি পারতাম জাহানকে সত্যি বলে ভুল ভাঙাতে কিন্তু করিনি। কারণ কি জানো? সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বরের পিছু নিবে। ব্যারিষ্টার হতে গেলে বাংলাদেশ ছাড়তে হবে সেটা উনি পারছিলেন না। নীরু আপা আর শাশুড়ি আম্মা ফোন করে বিষয়টা আমাকে জানানোর পর ভেবে দেখলাম বউ তো আর পর হচ্ছে না। সাময়িক দূরুত্বে যদি ভালো কিছু হয় দোষের কি? যাইহোক আমার মনে হয় আমাদের ব্যারিষ্টার সাহেবা বিষয়টা ধরতে পেরেই চুপচাপ চলে গিয়েছিলেন। ঠিকতো?
আরিয়ানের কথা শুনে জাহান মাথা নিচু করলো। প্রচুর রাগ হচ্ছে। ইকরা না থাকলে কঠিন কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো। ওকে চুপচাপ দেখে ইকরা ফুপিয়ে উঠলো,
> ভাইয়া আমি ইচ্ছে করে ওসব বলিনি। ফুপিমা বলেছিল এগুলো বললে আপু তোমাকে ভুল বুঝে ছেড়ে যাবে। আমি তোমাকে ভীষণ পছন্দ করি। অনেক ভালোবাসি। তুমি ছাড়া আমার তো কেউ নেই। আপুর সবাই আছে।
ইকরা নাক টেনে কাঁদছে। ওকে কাঁদতে দেখে জাহান বিরক্ত হলো। আরিয়ানের দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
> বাচ্চাদের পালতে হলে সব বিষয় মাথায় রাখতে হয় জানেন না?ও দিনদিন আপনার প্রতি দুর্বল হয়েছে দোষটা সম্পূর্ণ আপনার। আপনি বুদ্ধিমান হয়ে এতোবড় ভুল করলেন কিভাবে? ওকে আগেই বুঝিয়ে বলতে পারতেন। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা ফ্যানটাসিতে ভুগে। এখন কি হবে? আমি কিছুতেই বর ছাড়তে পারবো না। অতটা দয়ালু হতে পারিনি। দোষী আপনি তাই কি করবেন আপনি ভেবে দেখুন। সিনেমা পেয়েছেন যে ওকে থাপ্প*র দিয়ে বের করে দিবেন? দায়িত্ব নিয়েছেন ঠিকঠাক পালন করুন। আপনাকে দেখলেই আমার রা*গ হচ্ছে বিশ্বাস করুন।
জাহান চেতে আছে। ইকরা কান্না থামিয়ে দিয়েছে। আরিয়ান যদি ওকে বের করে দেয় কি হবে তাহলে? সুখে থাকলে ভুতে কিলাই কথাটা সত্যি ছিল। চিন্তা হচ্ছে। আরিয়ান জাহানের দিকে চেয়ে কিছু একটা ভেবে বলল,
> চিন্তা নেই একদিন আমাকে দেখলে আর রাগ না বরং আদর আদর পাবে।আমি পুরুষ মানুষ। সব সময় বাইরে বাইরে থাকি। তাছাড়া মনের মধ্যে আপনি যেভাবে তান্ডব করেন অন্য দিকে খেয়াল দিতে পারিনি। দায়িত্ব যখন নিয়েছি ঠিকঠাক পালন করবো। ইকরা তুমি যাও বাইরে বাবা অপেক্ষা করছে। আমি আজ এখানেই থাকবো। আমাদের প্রতিবেশী হান্নান সাহেব আছে না? উনার ছেলে আলিফ ইন্জিনিয়ারিং শেষ করে বিদেশ গিয়েছিল ওখানেই সেটেল। তোমাকে ওরা পছন্দ করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আমি রাজি হয়েছি। ছেলে ভালো। তাছাড়া সব জেনে বুঝে যখন তোমাকে ঘরে তুলতে চাইছে তাই প্রস্তাবটা লুফে নেয়েছি। ভেবে দেখো আলিফ কিন্তু তোমাকে নিয়ে দেশের বাইরে সেটেল হবে। আজকের রাতটুকু ভেবে সকালে সিদ্ধান্ত জানাবে। যে অপরাধ তুমি করেছো আমি সেটা ক্ষমা করেছি। তাই পূণরায় যা করবে ভেবে করবে। আমার কাছে আজীবন বোনের স্নেহ ভালোবাসা পেতে চাও নাকি ঘৃণা? জাহান আমার স্ত্রী, আমার মৃ*ত্যু ছাড়া ওর মুক্তি নেই।
ইকরা ওর কথা শুনে মাথা নিচু করে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। যে অপরাধ করেছে অন্যকেও হলে থা*প্পড়ে দাঁত ফেলে দিতো। কলোলিনির কথা শুনে ভুল করে ফেলেছে। ওকে বোঝানো হয়েছে পরিবারহীন দরিদ্র হবার জন্য ভালো ঘরে ওর বিয়ে হবে না। সুখের থাকার একমাত্র অপশন হচ্ছে আরিয়ান। কথাগুলো ভুল ছিল আজ প্রমাণ পেলো। এতো বড় ঘরে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে আরিয়ানের উপরে ভরসা রাখা উচিত ছিলো। কথাগুলো ভেবে এখন আফসোস হচ্ছে। ইকরা কক্ষের বাইরে যেতেই জাহান তেড়ে উঠলো,
> বাজে লো*ক,এখুনি আপনি আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হবেন। দশটা মাস আমাকে যেই যন্ত্রণাটা দিয়েছেন সবটা উসুল করে তবে ছাড়বো। জাহান চুল পরিমাণ ছাড় দিবে না।
আরিয়ান ওর কথা শুনেও শুনলো না। চুপচাপ ঔষুধ গুলো নেড়েচেড়ে দেখছে। রাতের খাবারের আগে যেই ঔষধটা আছে সেটা নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে বলল,
> খাওয়া দাওয়া শেষ করে মাথা ঠান্ডা হলে দুটো কথা বলতাম। ঝগড়া ঝামেলা আমাদের ব্যক্তিগত বিষয় সেটা যখন বিয়ে করেছি তখন থেকেই কবুল করে নিয়েছি। হাড়ি পাতিল ছুড়ে মারা বউ আমার। এইটুকু সহ্য করার ধৈর্য্য আল্লাহ আমাকে যথেষ্ট পরিমাণ দিয়েছেন।
জাহান রাগে ফুলছে। একবার বাটি ছুড়েছে বলে কি ও হাড়ি পাতিল ছুড়ে মারা বউ হয়ে গেলো? বদ লোক। কিছুতেই ও এই লোকের হাতের খাবার খাবে না। ওকে চুপচাপ ভাবতে দেখে আরিয়ান অপেক্ষা করলোনা। গাল চেপে ধরে পানি ঢেলে ওষুধ দিয়ে দিলো। যতক্ষণ না গিলে নিলো ছাড়লো না। জাহানের রাগে দুঃখে চোখে পানি এসে গেলো। আরিয়ান ওকে কাঁদতে দেখে পাশে এসে বসলো। ডান হাত ওর মাথার পেছনে রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো। জাহান বাঁধা দিতে চাইলো চিন্তা ও শুনলোনা। জোর করে বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিলো। মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। কান্নাকাটি করলে দুঃখ কমে। বুকের মধ্যে চেপে রাখা কষ্ট অশ্রু হয়ে ঝরে। আরিয়ান বাঁধা দিলোনা। ছোট করে ওর চুলের মাঝে চুমু দিয়ে বলল,
> সরি এরকম আর হবে না। প্লিজ এবারের মতো ক্ষমা করে দিন। আপনাকে কাঁদাতে চাইনি। কিন্তু আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলাম না। আমিতো জানি ব্যারিষ্টার হবার জন্য আপনি কতটা মরিয়া ছিলেন তাহলে হঠাৎ কেনো সেই ইচ্ছাটা দমন করলেন? আচ্ছা বাদ দিন যা হয়েছে সে আর ফিরানো যাবে না। আপনি বরং আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা শুনুন। কমোলিনির বেল হয়েছে গতকাল। সেই রাতে আপনি কাকে একটা দেখে পিছু নিয়েছিলেন মনে আছে? ওই বিষয়ে কিছু বলার আছে।
আরিয়ানের শেষের কথায় কাজ হলো। জাহান থেমে গেলো। রহস্য ওকে টানে। সেই রাতে কে ছিলো জানার জন্য আগ্রহ নিয়ে ভেজা কন্ঠে নাক টেনে বলল,
> কে ছিলো? আর বেল করিয়েছে কে?
> ওর ভাই করিয়েছে।কিন্তু এতো টাকা ওরা কোথায় পাচ্ছে? সন্দেহ হচ্ছে না? আচ্ছা আপনার মনে সন্দেহ হয়নি ভদ্রমহিলার দুই দুটো বাচ্চার বাবা কে? আমার মনে হচ্ছে যাকে আমরা দেখেছিলাম ওইটা কমোলিনি ছিল। আর যে দেখা করতে এসেছিলো ওইটা উনার বাচ্চার বাবা।
জাহান সোজা হয়ে বসলো। ঠোঁট কামড়ে ভাবতে ভাবতে বলল,
> কিন্তু বাইরের কেউ কিভাবে দেখা করতে আসবে? উঁচু প্রাচিল সঙ্গে গেটের কাছে দারোয়ান ছিল। পেছনের দিক থেকে আসতে হলে পুকুরের পানিতে নামতে হবে। আচ্ছা বাড়ির কেউ কি ওর সঙ্গে জড়িত? নয়তো ভদ্রমহিলার একার পক্ষে কি সবটা করা সম্ভব? আমাদের দেশের নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে মানছি কিন্তু এতোটাও না যে বছরের পর বছর একজন মানুষকে আটকে রেখে তার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করা। গণ্ডগোল একটা আছে। আপনি বরং বাড়ির প্রতিটা পুরুষের ডিএনএ টেস্ট করিয়ে ফেলুন। সমাধান ঠিক পেয়ে যাবেন।
জাহানের কথা শুনে আরিয়ান চোখ গোলগাল করে চাইলো। ভ্রু কুটি করে বলল,
> কথায় কথায় ডিএনএ টেস্ট করানো আপনার মুদ্রা দোষে পরিণত হয়েছে। মাথায় শুধু বদ বুদ্ধি ঘুরে। প্রথমদিন আলেয়া যেভাবে আমাকে বাঁশ দিয়েছিলো মনে আছে। মাশাআল্লাহ কপাল করে বউ আর শালিকা পেয়েছি। দুটোর কেউ কারো থেকে কম না।
আরিয়ানের বলার ধরণ দেখে জাহানের হাসি পেলো চিন্তা মাথার মধ্যে বারবার প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে ওই ব্যক্তি কে ছিল? বাইরের নাকি চৌধুরী বাড়ির কেউ?
চলবে