#দহন
#রিয়া_জান্নাত
#পর্ব_১৮
” কি হয়েছে নীলা? কোনো সুখবর আছে। আরে বৃষ্টি তোমরা এই বাসায়। যাক ভালো হয়েছে, সন্ধ্যায় তোমাদের কাছেই যেতে চেয়েছিলাম? সাফা মামুনি কেমন আছো তুমি? এতদিন পর পাপাকে মনে পড়লো। এসো আমার কোলে। ”
” তোমার সাথে আড়ি পাপা। পাপা খুব ব্যস্ত লোক। মামুণির খোজ রাখেনা এখন? ”
” আহারে আমার মামুণি টা এভাবে রাগ করছে? আই এম সরি মামুনি। সাফাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে তোমাকে প্রচুর খেলনা কিনে দিবো মামুনি। আমার উপর রাগ করিয়ো না। ”
” সত্যি বলছো পাপা। ”
” পাপা কখনো মিথ্যা বলে। বিকালে মার্কেটে যেয়ে আমরা প্রচুর খেলনা কিনবো। এবার একটু হাসো। ”
” হি হি হি ”
” যাও তুমি খেলা করো। আমি একটু কথা বলি তোমার আম্মুর সাথে।”
” হুম ”
” কি ব্যাপার বৃষ্টি কিছু হয়েছে তোমার? মন খারাপ কেনো, চোখে পানি কেনো? কি ব্যাপার মা তোমার চোখেও পানি কেনো? বলো কি হয়েছে তোমাদের। বাড়িতে কিছু হয়েছে কারো। আরে তোমরা সবাই চুপ কেনো ? আমারতো এখন টেনশন হচ্ছে। ”
” আমি বলছি আকাশ। ”
” হুম! নীলা দ্রুত বলো। মিষ্টি আনতে বললা, বাড়িতে এসে মনে হচ্ছে শোকের বাড়ি। সকালেই তো ভালো দেখে গেছিলাম হঠাৎ কি এমন হলো? ”
” আসলে আকাশ চোখের পানি টা আনন্দের। বৃষ্টি তার বাবা – মায়ের পরিচয় জানতে পেরেছে? ”
” ওয়াও দারুণ সুখবর তো! এইখানে কাঁদার কি আছে বৃষ্টি? তাদের সাথে তোমার দেখা হয়েছে? ”
বৃষ্টি কিছু বলতে পারছেনা। বুকটায় মনে হয় কেউ পাথর ঠেকে রাখছে।
তখন নীলা বললো __
” বৃষ্টি হলো রেহেনা মায়ের প্রথম কন্যা। রেহেনা মা ও রায়হান আঙ্কেলের প্রথম স্মৃতি। মায়ের হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়ে। ”
” এটা তুমি কি বলছো নীলা? এটা কি করে সম্ভব? ”
” সবই সম্ভব আকাশ। আইনের কাছে সত্যি কখনো চাপা থাকেনা। আমার চেষ্টা এসআইয়ের প্রচেষ্টায় মায়ের হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েকে মায়ের বুকে তুলে দিলাম! ”
” এটা কি সত্যি! বৃষ্টি আমার বোন? ”
” হুম! আকাশ ”
” এরজন্য বৃষ্টির কাছে যতবার যাই। বড়বোনের সেহ্ন পেতাম। ”
সবাই এক মূহুর্তে মিলেমিশে একাকার। নীলা এই মূহুর্ত দেখে নিজের উপর গর্বিত বোধ করলো।
” এই বৃষ্টি এখন থেকে তুৃমি আমাকে আপনি আঙ্গে করবা না। কারণ আমি তোমার ছোট ভাই। ঠিক আছে ”
” বৃষ্টি মুচকি হেসে বললো। সেকি কথা আপনি আমার আশ্রয়দাতা। আপনার জন্য পেয়েছিলাম নতুন ভবিষ্যত। এক মূহুর্তে এগুলা কি ভূলা সম্ভব। ”
” সবই সম্ভব। মন থেকে একবার ছোটভাই ভাবলে। এরপরেও যদি তুমি আমাকে আপনি করে সম্বোধন করো। তাহলে অপমানিত বোধ ফিল করবো। ”
” আচ্ছা ভাই! কিছুদিন সময় লাগবে। পুরনো দিনের অভ্যাস তো। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
” আচ্ছা তুমি সুজনের বাবার কাছে নিজ পরিচয় জানাতে চাও? ওরাতো তোমাকে পরিচয়হীন এক জারজ কন্যা বলে সম্বোধন করেছে। সাফাকে তার দাদু বাড়ি নিতে চাও কি? ”
” না! সেইটা আমি পারবো না। পুরনো ক্ষত আর তাজা করতে চাইনা। কে কি ভাবলো তাতে আমার যায় আসেনা? এই সমাজ আগেও অন্ধ ছিলো পরেও থাকবে। আজকে আমার সাথে যা হয়েছে, আগামীদিন গুলোতে অন্য কারো সঙ্গে তা হবে! অতএব এদের বুঝানোর দায়ভার নেওয়া বোকামো। সুজনের বাবা-মায়ের মনুষ্যত্ব নেই। ওরা যদি ওদের বংশকে স্বীকার করতো তাহলে সেদিনেই তাকে সঙ্গে ঘরে তুলতো। যারা নিজের ছেলেকে আপন করতে পারলো না। তারা কখনে তার অংশকে আপন মনে করবে না। ”
” ঠিক বলেছো! সাফার জন্য আমরা আছি। তুমি টেনশন করিয়ো না। আজ থেকে মন যা চায় তাই করো। নতুন করে বাঁচার চেষ্টা করো। ডিপ্রেশন গুলো ছেড়ে নিজের মন যা চায় তাই করো। সবার কাছে দেখাও নিজের প্রায়োরিটি আগে। সাফার জন্য চিন্তা কখনো করবা না। সাফার জন্য পাপা_মাম্মি ও সাফার নানি আছে। যদিও আমি সাফার মামা কিন্তু সাফার কাছ থেকে পাপা ডাকটাই বেটার লাগে। যেইটা আমি মুছতে পারবো না কোনোদিন। ”
” হুম ধন্যবাদ আকাশ! মানসিক ভাবে সবসময় আমার পাশে দাড়ানোর জন্য। ”
“আচ্ছা এখন সবাই মিষ্টিমুখ করো। ”
এরপরে আকাশের আনা মিষ্টি সবাই গপগপ করে খেতে থাকে।
” ৬ ঘন্টা পর ”
” আজ অনেক খুশি লাগছে নীলা? তুমি জানো না কি করছো তুমি? আমার বাবার একটা অপরাধ আজকে কমে গেলো? বৃষ্টিকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রমাণ করলে আমার বাবার সন্তানের প্রতি একটু হলেও মনুষ্যত্ব ছিলো। ”
” আপনার এইবার মায়ের সাথে কথা বলা উচিত! আমি একজন লইয়্যার মা যদি বাবার কেইসটি তুলে নেয় তাহলে বাবাকে আমি মুক্তি করে নিয়ে আসতে পারবো। ”
” কি বলছো তুমি বাবা ২৮ জন সাংবাদিক কে খুন করেছে। ২৮ টি পরিবারের বুক খালি করেছে। কিসের জন্য করেছে। সব টাকার জন্য করেছে? অবৈধ ব্যবসা কম কথা না। এতগুলো অপরাধ কিভাবে মাফ করি তার। ”
” সে মন থেকে আসলেই অনুতপ্ত। সে কিন্তু আমাদের সাথে বাকা পথে যেয়ে খেলতে পারতো। কিন্তু তা করে নাই স্বইচ্ছায় আমাদের কাছে আত্নসমর্পণ করেছে। জেলে যেয়ে বাবার সাথে দেখা হয়। বাবার করুণ মুখটা দেখলে অসহায় লাগে। প্রতিদিন আপনাদের খোঁজ নেয় আমার কাছে। অনেক কান্নাকাটি করে আপনাকে দেখার জন্য। কিন্তু আমি ভয়ে আপনাকে কিছু বলি নাই। ”
” আমি তাকে ঘৃণা করেও করতে পারছি না নীলা। সে যে আমার জন্মদাতা। কিন্তু মা ও বৃষ্টি কখনো তাকে ক্ষমা করবে না। বাবার জন্য বৃষ্টি ত্রিশ বছর সহ্য করেছে অভিশাপ জীবন। সেই কষ্টের কাছে এই কষ্ট কিছুই না নীলা। ওরা স্মোথলি এইটা নিতে পারবে না। মা তার ভালোবাসাকে হারিয়েছে। আমার বাবা বিশ্বাসঘাতক মা এইটা মেনে নিতেও পারে নাই। কারণ দ্বিতীয়বার কাছের মানুষের থেকে বড় ধোঁকা পেয়েছে। কিছুদিন সময় যাক। ধীরে ধীরে সবাই মেনে নিতে শিখবে। আমি কালকেই বাবার সাথে দেখা করবো। ”
” সত্যি বলছেন আপনি কাল আমার সাথে কোর্টে যাবেন । ওয়াও কি দারুণ কপাল আমার। জামাইকে নিয়ে কোর্টে যাবো। ”
” সেইটা কালকের কথা। এখন আমার প্রেম পাচ্ছে বউ? ”
” আপনার তো যখন তখন প্রেম পায়। শুনুন না মা বলছিলো আজকে তার নাকি ভাইবোন লাগবে? আমি অনেক লজ্জা পেয়েছিলাম এই কথা শুনে। ”
” লজ্জার কি আছে বউ? চলো না তাহলে শুরু করি মায়ের প্রসেসিং এর কাজ? ”
” না আমি এখন বাচ্চা নিতে চাইনা আকাশ! তাহলে আমার কোর্টে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে? সাফাতো আছে এখন! ”
” আমার মা বলেছে তার ভাইবোন লাগবে তারমানে ডিসিশন ফাইনাল বুঝলা। তোমাকে চাকরি করতে বলেছে কে? এখন আমার বাচ্চার বাবা হওয়ার বয়স হয়েছে। আমার বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনো, ওসব চাকরির চিন্তা বাদ দাও। বাবা ডাকটা কতোটা মধূর লাগে। আহা একবার বাবা হয়ে তার ফিল নিতে চাই। ”
নীলা মনে মনে বললো কোন লুচ্ছাকে কি বললাম? আজকে আমার রেহাই নাই। জানিনা প্রসেসিং সম্ভবত আজকে শুরু করে দেয়।
” এই বউ মনে মনে কি ভাবছো? তোমার হঠাৎ শান্ত হয়ে যাওয়া আমার ভালো লাগেনা। বললাম না আমার প্রেম পাচ্ছে। ”
” নীলা ভ্রু কুচকে বলে, কোনোদিন আমার বাধা শুনছেন। তাহলে আজকে জিজ্ঞেস করছেন ক্যানো ঢং করে। ”
” এই বউ স্বামীদের রাগ দেখাতে নেই। স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেশত। আমি তোমাকে বেহেশতের সুখ দিতে চাই। কারণ আমার শূন্য বুকটাই তোমার বেহেশত। বুকে আসো বউ আলিঙ্গন করি। ”
” অসহ্য লোক একটা। মনডা যাচ্ছে এক লাথিতে ড্রয়িংরুমে পাঠিয়ে দিই। ”
আকাশ নীলাকে বুকের সঙ্গে লিফটে নিলো। এরপরে নীলার একজোড়া ঠোঁট দখল করে নিলো। ২মিনিট সেই ঠোঁটকে দখল করে নিলো তার মুখে। এরপরে বাতি নিভিয়ে দিয়ে বেশকিছুক্ষণ নীলাকে ভালোবাসতে লাগলো। একটা সময়ের পর দুজনেই একটা বুকে লেপ্টে গেলো। সকাল হয়ে গেলো। সকালের নাস্তা শেষ করলো।
” মা! আমি কোর্টে যাচ্ছি নীলার সঙ্গে। তাই তুমি আজকে অফিসে যাও। বৃষ্টিকে অফিসটা ঘুড়িয়ে দেখিয়ে নিয়ে আসো। মনটা ভালো হয়ে যাবে তোমাদের। ”
” কোর্টে কেনো যাবে তুমি আকাশ? কিছু দরকার? ”
” মা অফিসের কিছু কাজের লিগ্যাল নোটিশপত্র আনতে। সাফা মামুনি আমাকে মিস করিয়ো না ঠিক আছে। আফা আর তোমার আম্মু যা যা বলে সব শুনবা ঠিক আছে? ”
” ঠিক আছে পাপা। ”
নীলা মুচকি মুচকি হেসে কোর্টের ফাইল নিয়ে আকাশের আগে আগে যাচ্ছে । আকাশ নীলার পেছনে পেছনে আসতেছে। দেখে মনে হচ্ছে ভালোবাসার টানে ছুটছে নীলার পানে।
” এতদিন পর আমার সাথে আসতেছেন। বিশ্বাস হচ্ছে না। কত আশা ছিলো জামাইকে নিয়ে অফিসে যাবো। আজকে সেই আশাটা অবশেষে পূরণ হচ্ছে ! ”
” কি এতো বাজে আশা তোমার ছিলো? কোনোদিন তো বলেও নাই এরকম জঘন্য আশা তোমার মনে ছিলো। তাহলে আমি সাথে সাথে পূরণ করে দিতাম। প্রতিদিন তোমাকে কোর্টে নামিয়ে দিয়ে উল্টোদিকে গাড়ি নিয়ে অফিসে যেতাম। ”
” এর জন্যই বলিনাই। অতিরিক্ত ভালোবাসা সব কিছু নষ্ট করে।
” এই গাড়িতে এসব কি বলছো আমার আবারো প্রেম পাচ্ছে। ”
” ছি! কি নষ্ট মুড আপনার। যখন তখন প্রেম পায়। ”
” আকাশ এবার গাড়ি থামিয়ে নীলাকে কিস করতে এগিয়ে আসে। ”
” আকাশ কি করছেন? এইটা বাড়ি না আকাশ। রাস্তার লোকজন দেখছে। কাছে আসবেন না। ”
” মানুষ দেখুক আর জ্বলুক। আমিতো মানুষের বউয়ের সাথে প্রেম করছি না আমার বউয়ের সাথে প্রেম করছি। নীলার ঠোঁট আবার নিজের মুখে পুড়ে নিলো! ”
নীলা বিরক্ত হয়ে গেলো। চারদিকে প্রচুর লোক। সবাই গরুর মতো ড্যাবড্যাব করে চেয়ে রইছে। নীলা ধাক্কা দিয়ে আকাশকে সড়িয়ে দেয়।
” কি হলো এটা? ”
” কি শুরু করছেন আপনি গাড়ি কি বেডরুম। চারদিকে লোক দেখেছেন? আমাদের নিয়ে কত হাসি তামাশা করছে? ”
” এই ওদের শরম নাই তাই কাপলদের ভালেবাসা দেখছে। আকাশ গাড়ির লুকিং গ্লাস নামিয়ে বলে এই আপনাদের ঘরে বউ নাই। আমি আমার বউয়ের সাথে কি করছি তা হাম্বার মতে চেয়ে রইছেন ক্যানো। আপনাদের ভালেবাসার টাইমে কেউ ডিস্টার্ব করলে আপনাদের কি ভালো লাগবে? নির্লজ্জ লোক কোথাকার চলে যান এখান থেকে। ”
আকাশের কথা শুনে চারদিকের লোক হেসে কুটিকুটি করছিলো। নীলা প্রচন্ড রেগে যায়। আকাশ আর কিছু না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কোর্টে আসে। নীলা ডিরেক্ট নিজের চেম্বারে চলে যায়। আকাশ শিকদার তার বাবার সাথে দেখা করতে যায়?
” কেমন আছো বাবা? ”
আকাশের কথা শুনে আমজাদ শিকদার দৌড়ে আসে। এরপরে আকাশের গাল দুটি স্পর্শ করে বলে___
” এতদিন পর এই খুনী বাবাকে মনে পড়লো। ”
” মনে তো পড়ে বাবা! কিন্তু দ্বিতীয় রুপ এতোটাই জঘন্য সেই রুপের কাছে আমার মনুষ্যত্ব বারবার হাড় মেনে যায় । তাই আসতে পারি নাই বাবা। নীলার কথা শুনে মনে হয়েছিলো আমার আসা দরকার তাই এসেছি।”
“মানুষ, মানুষকে ” ঠকিয়ে কখনো ভালো থাকতে পারেনা।
কক্ষণেই না! একটা সময় আসবে।
” _তুমি নিজেই হাটু গেড়ে বসবে_! ”
_আর তুমি যত বড় খেলোয়াড় হও না কেনো_
__ একটা জায়গাতেই তোমাকে হাটু গেড়ে বসে থাকতে হবে __
” অবশেষে বুঝলে তুমি। কিন্তু তোমার লোভ তোমাকে কতদূরে নিয়ে গেলো বাবা। ঘৃণা হয় তোমাকে দেখলে। ”
” আমাকে ঘৃণা করিস আর যাই করিস। একটা কথা শুনে রাখে তোর সৎ চাচা আরমান শিকদার থেকে দূরে থাকিস। তুই তাকে চিনিস না কিন্তু রেহেনা তাকে চিনে। তোর যদি তাকে দেখতে ইচ্ছে হয় তাহলে আমার আলমারিতে তার ছবি রয়েছে দেখিস। জেইল থেকে ছাড়া পেয়েছে গতকাল শুনলাম সাবধানে থাকিস। ”
” যেখানে তুমিই একজন হত্যা কারী তোমার ভাইয়ো তাই হবে আমি শিউর? তাই এসব গল্প শোনার টাইম নাই আমার। আল্লাহ হাফেজ ভালো থেকো তুমি? ”
#চলবে,,,,