দহন_দ্বিতীয়খন্ড #পর্ব_০৬

0
220

#দহন_দ্বিতীয়খন্ড
#পর্ব_০৬

হসপিটালের কেবিনে বসে আছে আকাশ। শান্ত মুখে পরাজয়ের ছাপ স্পষ্ট। তার সামনে বসে আছে নীলা খান শিকদার। স্বামীর মনোভাব বুঝার চেষ্টা করতেছে।

” কি ব্যাপার আকাশ আপনি চুপচাপ হয়ে গেলেন হঠাৎ করে? কিছু ভাবতেছেন? ”

” আমি তোমাকে প্রশ্ন করতে চাই? ”
” স্বইচ্ছায় করতে পারেন। ”

” আচ্ছা নীলা সেইদিন অগ্নিদহনের আগুন থেকে ১৮ জনের মধ্যে ১৩ জন আহত হয়েছিলো? ০৫ জন মারা গিয়েছিলো। সবারই কিছু না কিছু না কিছু হয়েছে তোমার কিছু হলোনা কিভাবে? যদিও আল্লাহ পাকের কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া তোমার কিছু হয়নাই। ”

” সেইদিন আমি আপনার বার্থডে সেলিব্রেট করার জন্য অফিসে যাই।আপনার কেবিনে যেয়ে দেখতে পারি আপনি অফিসে নেই। এরপরে আমি ওয়ার্কারদের সঙ্গে কথা বলি। ওয়ার্কাররা বলে স্যার কোথায় আছে ম্যানেজার সাহেব জানে। আমি ম্যানেজারের কাছে যাই। ম্যানেজার বলে, স্যার ০৫ মিনিট আগে বায়ারের সঙ্গে মিটিং শেষ করে বায়ারদের গাড়িতে তুলে দিতে গেছে। আমি আবার আপনার কেবিনে ঢুকে আপনার জন্য অপেক্ষা করি। সেইসময় আপনার কেবিনে আপনার পার্সোনাল পিয়ে নয়না ঢুকে। আমি নয়নার সঙ্গে ভালোমন্দ কথা বলছিলাম। আপনি অফিসে কি করে বেড়ান খবর নিচ্ছিলাম। হঠাৎ নয়নার নাকে পোড়া পোড়া গন্ধ লাগে। নয়না আপনার কেবিনের গ্লাস খুলে দেখতে পায় শিকদার কোম্পানির চারপাশে আগুন দাউদাউ করছে। সিড়ি দিয়ে ততক্ষণে নামা সম্ভব নয়।নয়না আমাকে বলে ম্যাম মালবাহী ট্রাক নিচে, আপনাকে ধাক্কা দিচ্ছি ভালোমতে ওইখানে যেয়ে পড়লে আমরা বেচে যাবো। আমি নয়নাকে বলি বাকিদের রেখে আমরা এভাবে পালাতে পারিনা। নয়না বলে আমি সব দেখে নিবো। আপনার কিছু হলে আকাশ স্যার বাঁচবে না। কিন্তু আমি নয়নার কথা শুনে ওয়ার্কারদের কাছে যেতে চাই। কিন্তু নয়না আমার হাত ধরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি মালবাহী ট্রাকে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আমি যখন জ্ঞান ফিরে পাই তখন নিজেকে হসপিটালের কেবিনে আবিস্কার করি। আমাকে জয় ভাইয়া ভর্তি করাইছে। জ্ঞান ফিরেই অগ্নিদহনের কথা মনে পড়ে। আমি ছুটে আসতে চাই তখন জয় ভাইয়া বলে, আমাদের কোম্পানির দহনের ঘটনা হেডলাইনে খবর দেখাচ্ছে। ওইখান থেকে যে ব্যাক্তি নিখোঁজ সেই এই আগুন লাগিয়েছে। আমার মাথার উপর যেনো বাজ পড়া শুরু করলো। আমি জয় ভাইয়াকে দিয়ে আমাদের বাড়িতে আপনাকে জানানোর জন্য পাঠাই। যে আমি বেচে আছি। কিন্তু জয় ভাইয়া যেয়ে দেখতে পায় আপনারা আমাকে লাশ মনে করে দাফন করে দিচ্ছেন। মনের রাগে আর শিকদার বাড়িতে ফিরিনা। কারণ আমি ফিরলেও আপনার কাছে নয়, জেলে থাকতে হতো। তাই জয় ভাইয়ার সাহায্যে রহস্য উদঘাটনের পথে নেমে পড়ি। আর আজকে আমি সাকসেস হয়েছি। সত্যির সাথে লড়াই করতে পারছি। ”

” কিন্তু তোমার হাতের আংটি তাহলে লাশের হাতে আসলো কি করে? ”

” সবটাই আল্লাহর ইচ্ছে। আমার মন বলছে সেইদিন আপনারা যাকে দাফন করেছেন সে আসলে নয়না। কারণ আমাকে ধাক্কা দেওয়ার সময় সম্ভবত আমার রিংটি হাত থেকে পড়ে যায়। নয়না বোধহয় সেই রিং পড়ে নিয়েছিলো! সবটা আল্লাহর নির্দেশ আকাশ। আল্লাহ তালা আমাদের সব কিছু কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেও ধৈর্য নামক পরীক্ষা নিয়েছে। ”

” হুম নীলা দুঃখের পরে সুখ আসে। যা আমাদের জীবনে আংশিক স্থায়ী হয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে নতুন ভাবে নেমে যাই। সবটাই তার বান্দার পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। ”

” এখন আপনি বলেন আমি কি কোনো ভূল করেছি। ”
” না নীলা! কিন্তু মনের সাথে যুদ্ধ করতে পারিনাই আমি। আল্লাহ তালা তোমার মতো শক্তিশালী হওয়ার কিছু গুণ আমাকেও দিক।

এইবার নীলা আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমি জানতাম আপনি আমাকে ভূল বুঝবেন না। কারণ আপনি মানুষটা অনেক ভালো।

এমন সময় চেম্বারে ডক্টর প্রবেশ করে ___

” পেসেন্টের জ্ঞান ফিরছে। কি অবস্থা আকাশ শিকদার কেমন লাগছে? ”
” ডক্টর আমার তেমন কিছু হয় নাই। তাই ফিলিংস বেটার। আমরা এখান থেকে কখন বাড়িতে যেতে পারবো। ”
” আপনার একমাস বেড রেস্ট দরকার। তাই দুইদিন পর এখান থেকে যেতে পারবেন। আর নিয়মমতো ঔষধ গুলো খেয়ে নিবেন। তাহলে আর কোনো সমস্যা নাই। ”
” ডক্টর আমি এখানে আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট করতে পারবোনা। আমার শরীর এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাই এখান থেকে আমি এক্ষুনি যেতে চাই। ”

” আকাশ আপনি পাগল হয়েছেন। ডক্টর যা বলছে তাই শুনুন। ”
” স্যার আপনার সার্জারী হয়েছে বিষয়টা খুবই ক্রিটিকাল ছিলো। এতো সহজ ভাবে নিলে হয়না। আপনারা টোটালি বেড রেস্ট দরকার।”

” ডক্টর সাহেব আপনার হাগু পেলে তবেই না হাগু করতে যান। নাকি সারাক্ষণ টয়লেটে অপেক্ষা করেন ? ”

” এসব কি রকম কথা স্যার। আপনার ভালোর জন্যই বলছি। ”
” আমার জন্য আর ভাবতে হবেনা। নীলাকে সবটা বুঝিয়ে দেন। আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই হসপিটাল ত্যাগ করতে চাই। কারণ আমি ফুললি সুস্থ।

” ম্যাডাম শিকদার যেহেতু বলছে আমার কিছু করার নাই। ডক্টর পেসেন্টকে শুধু নিয়ম বলে দিবে বাকিটা পেসেন্ট করবে। ডক্টর কখনো পেসেন্টের খারাপ চায়না! ডক্টর সাহেব কেবিন ত্যাগ করে অন্য রুমে চলে যায়। ”

” ডক্টরকে আপনার এভাবে বলা উচিত হয়নাই আকাশ। ”
” আরে ডক্টর আমাকে আরো পেসেন্ট বানাতে চাইছে। আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধু তুমি। তুমি আমার কাছে থাকলে কোনো নিয়ম লাগবেনা। তুমি আমার বেঁচে থাকার ঔষধ। এতদিন পর বউয়ের সাথে দেখা হয়েছে ঠিকমতো আদর করতে পারছিনা। আর আমি নাকি এখন এই হসপিটালের কেবিনে পড়ে থাকবে। ”

” নীলা আর আকাশকে কিছু বলেনা। কারণ আকাশ যেইটা একবার মুখ দিয়ে বের করে তা করেই ছাড়ে। নীলা হসপিটালের সব বিল পেমেন্ট করে গাড়ি করে আকাশকে নিয়ে সকালেই বাড়িতে রওনা হয়। ”
_____

শিকদার ফ্ল্যাট পুরো ফাঁকা । সবাই খান ম্যানশনে রয়েছে। তাই গাড়ি করে আকাশ ও নীলা খান ম্যানশনে আসে। আকাশকে সুস্থ অবস্থায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে সবাই খুশি।

আকাশের নানুভাই তপ্ত শ্বাস ছেড়ে আকাশকে এসে জড়িয়ে ধরে। আমি জানতাম আমার নানাভাইয়ের কিছু হবেনা। নানাভাই খুবই স্ট্রং। নানাভাইয়ের কাছে এখন নীলপাখি আছে। সো ডক্টরের কোনো ঔষধের দরকার নেই। আকাশ তার নানুভাইকে উত্তেজিত হতে মানা করলো। এরপরে ধরে ধরে সোফায় বসালো। নানুভাই কোনো চিন্তা করিয়ো না আমি একদম সুস্থ। তুমি হার্টের পেসেন্ট একদম এসব চিন্তা করবে না। শেষে না তোমাকে নিয়ে আবার হসপিটালে যেতে হয়। রেহেনা শিকদার নীলার কাছে এসে বললো। তোমরা চলে আসলা যে, ডক্টর আসতে দিলো?

না মা ডক্টর মানা করছিলো। কিন্তু আপনার ছেলে কার কথা শুনে। ডক্টর সম্পূর্ণ বেডরেস্ট দিছে একমাসের জন্য।দুইদিন কেবিনে থাকতে বলেছিলো। বিছানা থেকে উঠা বারণ। তোমরা কোনো চিন্তা করিয়ো না আকাশ একদম আগের মতো হয়ে যাবে। আকাশের আর কোনো সমস্যা নাই। আমি বলেছিলাম না আকাশ খুবই স্ট্রং। কিছু হবেনা আকাশের।

আশফাকুল দিলারা খানকে বললো এই তুমি সবকিছু রান্না করো আজকে। অনেকদিনপর মেয়ে ও মেয়ে জামাই আমাদের বাড়িতে আসছে। জামাইয়ের যা যা পছন্দের খাবার সব তৈরি করে ফেলো। আমি বাজারে যাচ্ছি সব কিনে আসি। যেগুলো যেগুলো বাড়িতে নাই।

বাবা আমি খাবার খাওয়ার জন্য আসছি কি? সম্পর্ক দুইটা তোমার সাথে, মামাও হয় সাথে সাথে বাবা। তাই কখনো জামাই হিসাবে ট্রিট করবা না আগেই বলেছি। আর এইটা আমাদের বাড়ি তোমার একার বাড়ি না। তুমি আমাকে রক্ত ডোনেট করছো নীলার কাছে শুনলাম। বেড রেস্ট টা তোমার দরকার আমার নয়। তাই বাজার যদি করতেই হয় আমি করবো।

দেখছিস নীলা জামাই কি বলে এসব? কতদিনপর শশুড়বাড়ি আসছে বল, জামাইকে ভালোমন্দ না খাওয়ালে হয়।

” বাবা রসিকতা বাদ দাও? কখনো ওকে জামাই মনে করবেনা ও খুব কষ্ট পায়। কাউকে বাজার যেতে হবেনা। অনেকদিনপর সবাইকে একসঙ্গে পাইছি। বাড়িতে যা আছে তাই রান্না হবে। খাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দিবো ড্রয়িংরুমে ঠিক আগের মতো? ”

” এটা আমিয়ো বলতে চাইছিলাম নীলা। ধন্যবাদ তোমাকে আমি কিছু বলার আগেই তুমি বুঝে যাওয়ার জন্য। ”

এরপরে দিলারা খান রান্না করে ডাইনিং খাবার রেডি করে। সবাই সকালের খাবার শেষ করে সকাল ১১.০০ টায়। এরপরে যার যার মতো রুমে যায়। কয়েকদিন থেকে দুই পরিবারের উপর মানসিক চাপ যাওয়াতে সবাই মানসিক ভাবে দুর্বল। সবাই ঘুৃম যায় দুপুর বেলায়। আকাশের উপর ঔষধের প্রভাব পড়ার জন্য ঘুম যায় টানা ৪.০০ ঘন্টা। শেষে নীলা ডাক দিয়ে তুলে আকাশকে গোসল করিয়ে দেয়। নীলা গোসলের পানি ঢালতেই ফিক ফিক করে হেসে দেয় আকাশের মাথা দেখে। কি ব্যাপার নীলা তুমি হাসছো ক্যানো? আপনার মাথার ঘনচুল গুলো নেই। এরজন্য খুব হাসি পাচ্ছে দেখতে কেমন জানি বাংলা সিনেমার ভিলেন ডিপজলর মতো লাগছে।

আকাশ মনে মনে সত্যি তো আমার সার্জারী হওয়ার পর এখনো আমার মুখ দেখি নাই আয়নাতে। সত্যি কি আমাকে এতো বাজে লাগছে। এরপরে নীলার দিকে তাকায়। নীলা আর কিছু না বলে গোসলখানা থেকে বের হয়ে আসে। আকাশ গোসল শেষ করে কাপড় চেঞ্জ করে বেসিনের সামনে আসে। বেসিনে এসে নিজেই নিজেকে চিনতে পারেনা। নীলাকে বলে আমাকে এতো বাজে লাগছে নীলা। আগে বলো নাই কেনো? আগে বললো কি হতো? সবকিছু পরিস্থিতির স্বীকার। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে আকাশ ১৫ টা দিন সময় দিন নতুন চুল গোজাবে ঠিক আগের মতো। নিজের বউ আমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করতেছে। না জানি মানুষ কিভাবে দেখবে আমাকে।

চলবে,,,,
®️ রিয়া জান্নাত
রেসপন্স করার অনুরোধ রইলো🙏

একসঙ্গে দুই পর্ব কেমন লাগলো সারপ্রাইজটা 😐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here