#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭৩.
“তোমার ভাই আর আমার মাঝে কী হয়েছে তা জানার প্রয়োজন নেই।তুমি ভাইয়াদের নিয়ে চলে যাও,ঠিক আছি আমি”
চাঁদের স্পষ্ট মতবাদে ভ্রুযুগোল কুঞ্চিত হয় উশ্মির।সে কিছু বলতে নিলেই চাঁদ তাকে বাঁধা প্রদান করে বলে,
“দেখো উশ্মি,তোমাদের বিয়ের ঠিকঠাক একমাসও বোধহয় হয়নি।আগে নিজের লাইফ সেটেল করো,এসব পরেও দেখা যাবে”
“কিন্তু কী নিয়ে এসব হয়েছে আর ভাই ই বা কেনো তোমার বিরুদ্ধে এসব প্রমাণ দিয়েছে?তুমি কি সত্যি সত্যি?”
“অতীতে এমন কিছুই করেছিলাম যার রেশ এখনও রয়ে গেছে।আর কিছু জানতে চাবেনা,যাও তোমরা”
উশ্মি চাঁদের অস্বস্তি বুঝতে পেরে আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে রামিম আর চৈত্রের সহিত বের হয়ে যায় থানা থেকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“আমি কেবলই তাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।একজন শিশুর মৃ*ত্যু কখনোই কামনা করিনি”
বলেই হতাশার শ্বাস ফেলে হাসপাতাল থেকে বের হয় প্রণয়।আজ আর গাড়িতে করে সে যায়না।হেটেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।সাথে মস্তিষ্কে কিছু জিনিসের গরমিল হিসাবনিকাশ চলছে।অতঃপর তার মস্তিষ্ক তাকে ঠিক সেদিন টায় নিয়ে যায় যেদিন চাঁদ তার থেকে পালিয়েছিলো মাইলের পর মাইল দূরে,বহুদূরে।প্রণয়ের সর্বপ্রথম স্মরণে আসে সে যখন হাসপাতালে বসে ছিলো আর তার ফোনে কিছু বার্তাসহ ছবি আর ভিডিও আসে এবং দ্রুতগতিতেই সে তার মুঠোফোনটাকে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে আছরে মা!রে সেই দৃশ্যসমূহ।অতঃপর ভাবে যা পাওয়ার সে তাতেই পাবে,কিন্তু কীভাবে?এতবছর আগের ফোন এখন কি রিপেয়ার করা যাবে?আর যদি যেসব সে দেখেছে সেগুলো সত্যি না হয়?তবে?কিন্তু সেতো স্পষ্ট অরণ আর চাঁদকে দেখেছে।আর যেসব সে শুনেছে দেখেছে সেগুলোই বা কী করে মিথ্যা হিসেবে মানবে?চাঁদ কি আসলেই নিরাপরাধ?নাকি অন্য কিছু?এসব ভাবতে ভাবতেই ঘাম ছুটে যায় তার আর মাথায় অসহনীয় যন্ত্রণায় ফে!টে যাবার উপক্রম।আর কিছু ভাবতে না পেরে রিক্সা নিয়ে সে সোজা বাড়ি চলে আসে।এসেই তার নিজস্ব ছোট আলমারি খুলে তার ভেতরে থাকা পুরোনো সব জিনিস খতিয়ে দেখতে লাগে।যেখানে সে চাঁদের সাথে কাটানো মুহুর্তের সাক্ষীস্বরূপ রেখে দেওয়া স্মৃতিসমূহ খুঁজে পায়।চাঁদের ছোটখাটো জিনিস সেখানে বিদ্যমান।অতঃপর চাঁদের নীলরঙা চুড়িসহ আরও বিভিন্ন সাজসজ্জার জিনিসপত্র দেখে প্রথম প্রথম যখন চাঁদ নামক তার একান্ত চন্দ্রময়ীকে সে তার মন দিয়ে বসেছিলো সেসব জিনিস স্মরণে আসে।অল্প বিস্তর হতাশার শ্বাস ত্যাগ করে সে আলমারির বেশ ভেতর দিকটায় লুকিয়ে রাখা বাক্সটা নিতে গেলেই নজরে আসে একটা ডায়েরী।ডায়েরীটা চোখে পড়তেই তার মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন ডায়েরীটা হারিয়ে যাওয়ায় উন্মাদের মতোন হয়েছিলো চাঁদ।কী আছে এই ডায়েরীতে?বিশেষ কিছু?নাকি চাঁদের লুক্কায়িত সত্যসমূহ?বেশ উদগ্রীব হয়ে উঠে প্রণয়।তার মস্তিষ্কে এতকিছুর ভার একসাথে বহন করা সম্ভব হচ্ছেনা।তবে সর্বপ্রথম ফোনটা থেকে সত্যিসমূহ উদঘাটিত করতে হবে তাকে।এই ভেবে বাক্সটা খুলতেই ভাঙাচুরা,পচে যাওয়া পুরোনো কিছু জিনিস তার নজরে আসে।তাতে বিদ্যমান একটা শুকিয়ে আসা পচা লালগোলাপ,একটা জং ধরে যাওয়া হাতের আংটি,পুরোনো লালচে হলুদ কাগজের ভাজ করা এক পত্র,ডান পাশে সেই ভাঙা পুরোনো ফোনটা,বাম পাশে শুকিয়ে যাওয়া র*ক্তেমাখা একটা পাতলা ওড়না বেশ কুচকানো অবস্থায় আর ফোনটার নিচে এক এলোকেশী রমনীর হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রীর ছবি। যখন বিকেলবেলার রোদ এসে তার হলদে ফর্সা ত্বক আরও উজ্জ্বলতা আর লাবণ্যময়তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে বাধ্য করেছিলো,পরণে তার বেশ পাতলা আর ছোট হাতার একটা টি-শার্ট,পাতলা এক ওড়না গলায় পেচানো এবং দূরদৃষ্টি কেবলই একজনের পানে,গালজুড়ে লজ্জার র*ক্তিম আভা,চোখজুড়ে মুগ্ধতার রেশ।সে এক অভূতপূর্ব মুহুর্তের প্রতিচ্ছবি!ফোনের নিচ থেকে ছবিখানা নিয়ে দৃশ্যসমূহ স্মরণ করতেই প্রণয়ের মনে পড়ে সেদিনের কথা যেদিন প্রথম অরণের সহিত চাঁদকে কেবল একটিবার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে চোরের ন্যায় তার প্রিয় রমণীর বাড়ির পাশের ছাদে হাজির হয়েছিলো আর সেই প্রথমবারের ন্যায় মেয়েটাকে সে অপরূপ রূপে বিমোহিত নয়নে দেখতে দেখতে অজান্তেই নিজ মুঠোফোনে সেই সুন্দরতম দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দী করেছিলো।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ছবিটা সেভাবে রেখেই র*ক্তেমাখা ওড়নায় হাত দেয় সে।ওড়নাটা হাতে নিয়ে পলকহীন তার পানে চেয়ে মনে মনে সে বলে,
“এমনটা কেনো করলেন চাঁদ?অরণের সাথে আপনি কেনো এমন করলেন?সেদিন ওভাবে না পালালেই কি পারতেন না?যদি কিছু থেকেই ছিলো কেনো বলেননি আমায়?আপনার ঐ সুন্দরতম মুখশ্রীর আড়ালে আসলে কোন রূপ লুক্কায়িত বলবেন?রূপটা কি বেশ কুৎসিত?নাকি সহজ-সরলা কোনো রমণীর গোছানো কোনো মিথ্যে?”
কথাগুলো মনে মনে আওড়াতেই তার স্মরণে আসে মিরের বলা চাঁদের প্রাণ বাঁচানোর কথাগুলো আর সেইসাথে মনে পড়ে চৈত্রের বলা তার বোনের জন্য এ শহর অভিশপ্ত বাক্যখানা।কিন্তু কেনো?কেনোই বা অভিশপ্ত হবে?কেনোই বা প্রাণ বাঁচানোর কথা আসবে?যে নিজেই কারো জীবননা*শের কারণ তার প্রাণ কী করে সংকটে আসে?কোনোকিছুতেই কিছু মেলাতে পারছেনা প্রণয়।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে ফোনটা হাতে নিতেই তার আরেকবার মনে পড়ে চাঁদের দুইবছর গ্যাপ গিয়েছে,কিন্তু সেটা কেনো?আহ!আর কিছু তার মস্তিষ্ক নিতে পারছেনা।সে তৎক্ষনাৎ মোবাইলটা বাদে বাকিসব আলমারিতে রাখতে রাখতে আবারও নজরে আসে আধখোলা সেই ডায়েরীটা।যা ধপ করে দুপুরবেলা তারই পায়ের কাছে পড়েছিলো ছাদের উপর হতে।যাকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কেউ পায়নি।যার জন্য অসুস্থতায় মূর্ছা গেছিলো চাঁদ নামক তার একান্ত এবং একমাত্র অর্ধাঙ্গিনীরূপী নিজস্ব নারী।কপাল তার কুচকে আসে সেদিনটা মনে করতেই।সে ডায়েরীটার কথা বেমালুম ভুলে বসেছিলো।তবে আপাতত ডায়েরী পড়ার সময় তার নেই।আগে যেতে হবে চাঁদের কাছে।সত্যিটা তার জানা ভীষণ প্রয়োজন।সেইসাথে বছর পাঁচেক আগের অরণ আর তার এত মেলামেশার কারণসমূহও।আলমারিটা ভালোভাবে তালাবদ্ধ করে ভাঙা ফোনটা পকেটে পুরে অস্থিরচিত্তেই ছুট লাগায় সে রিপেয়ারিং অফিসে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিকাল তখন চারটা বেজে দশ মিনিট,
মোবাইল ঠিক করিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছিলো প্রণয়।এমতাবস্থায় ভাঙা ফোনটা সে চালু করতেই কয়েকটা মেসেজের টুংটাং শব্দ ভেসে আসে কানে।সাথে সাথে ধুক করে উঠে বুকটা তার।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে ফোনের লক খুলে নোটিফিকেশন বার চেক করতেই ‘চন্দ্রময়ী’ লিখা নম্বর হতে প্রায় বছর ছয়েক পূর্বের কয়েকটা বার্তা লক্ষ্য করে সে।মেসেজ অপশনে যেতেই তার চোখে পড়ে সবগুলো বার্তা,
“আমায় বাঁচান প্লিজ!”
“প্লিজ প্রণয় জলদি আসুন।ওরা আমায় মে!রে ফেললো”
“দয়া করে আর রেগে থাকবেন না।বাঁচান আমায়”
“শু!করগুলো আমায় বাঁচতে দেবেনা প্রণয়”
“আসুন না প্লিজ!”
“আমি…..শহিদুল্লাহ হলের পাশের ঝোপটায় লুকিয়ে আছি।তাড়াতাড়ি আসুন”
“প্লিজ!”
অতঃপর আর কোনো বার্তা সে নম্বর থেকে আসেনি।হৃদয় খাঁ খাঁ করে উঠলো প্রণয়ের।বেশ শব্দ করেই হৃদয় বুঝি তার ভেঙে গেলো?নিশ্বাসের গতি বাড়লো তার।বিড়ালাক্ষীজোড়া ঝাপসা হয়ে এলো।শক্ত,তথাকথিত পাষাণ হৃদয়ের অধিকারী প্রণয় নামক হৃদয়হীন ব্যক্তির আঁখিদ্বয়ও কি সিক্ত হলো?বুকের ভেতর এত জ্বালা পো!ড়া করছে কেনো?প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়?নাকি আর কখনোই তাকে না পাবার তীব্র যন্ত্রণা?অতঃপর শুষ্ক কপোল বেয়ে বুঝি গড়িয়ে পড়লো এক ফোটা নোনাজলও?পুরুষ মানুষের না কাদতে নেই?তাদের না কাদা বারণ?তবে শক্তপোক্ত এই মানবের বিড়ালাক্ষীজোড়া তা মানছেনা কেনো?কেনো হৃদয়সহ আঁখিদ্বয়ও জ্ব!লেপু!ড়ে ছাড়খাড় হচ্ছে তার?উহ!এ কেমন অসহনীয় যন্ত্রণা?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যাবেলা,
উশ্মি ফের এসেছে চাঁদের সাথে দেখা করতে।আর এবার বাকি আসামীদের অন্যপাশে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।সেখানে কেবলই চাঁদ আর উশ্মি বিদ্যমান।চাঁদের পাশে বসে উশ্মি বলে,
“বিনা সংকোচে বলো ভাবি।এই দেখো তোমার আর ভাইয়ার ডিভো!র্স পেপার।আমি সব রেডি করে রেখেছি।যেভাবেই হোক তোমাদের ডি!ভোর্স আমি দেওয়াবোই!ভাইয়ের আর সবকিছু মানতে পারলেও এই মিথ্যা জিনিসটা জাস্ট মানতে পারছিনা আমি।তুমি বলো কেনো ভাইয়া এমন করলো তোমার সাথে?দুজন নাকি দুজনকে অসম্ভব ভালোবাসতে?”
To be continued…..