#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৮২.
সময় অতিবাহিত হয়েছে।কেটে গিয়েছে মাস তিনেক।শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের আনাগোনা শুরু হয়েছে ধরণীতে।কার্তিকের আজ সপ্তম দিন।মৃদু হিমশীতল হাওয়া বইছে চারিপাশ জুড়ে।এ মাসে যদিও বৃষ্টির সেই প্রকোপ নেই তবুও গগণ কালো মেঘে আচ্ছাদিত হয়ে আছে।কখন যেনো আকাশের বুক চি!ড়ে নেমে পড়বে ধরণী বেয়ে।অতঃপর শুষ্ক রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হবে।হাটতে খানিক অসুবিধাও হবে।একটু বাদে বাদে অস্বস্তি নিয়ে সকলকে পরণের কাপড় উঁচু করেই হাটা লাগবে।চরণযুগোল চিটচিটে হয়ে থাকবে কাদায়।কি বি!শ্রী এক অবস্থা!এসব ভাবতে ভাবতেই বারান্দার দিকে এগিয়ে আসে চাঁদ।অতঃপর আকাশের দিকে চাইতেই আকস্মিক তা পরিষ্কার হতে দেখে কপাল তার কুঞ্চিত হয়,বিস্মিত হয় সে।এখনই না কালো ছিলো?হঠাৎ পরিষ্কার হলো কী করে?এ কীভাবে সম্ভব?অবশ্য অসম্ভবের কিছুই নেই।এ জগতে অসম্ভবটাই মূলত বেশি করে সম্ভবিত হয়।হতাশার শ্বাস ফেলে ফের রুমে গিয়ে নিজের ব্যাগ গুছাতে আরম্ভ করলো চাঁদ।অতঃপর ব্যাগ গোছানো শেষ হলে ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে হিজাব পরিধান করলো।হিজাব পরা শেষে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাতঘড়ি পরে রুম থেকে বেরিয়ে সকলের নিকট হতে বিদায় নিয়ে হাটা ধরলো বাইরের উদ্দেশ্যে।গন্তব্য তার ইপ্সির শ্বশুরবাড়ি।
হাসপাতালে এসে এদিক ওদিক চাঁদকে খুঁজে চলেছে প্রণয়।তবে তাকে দেখতে না পেয়ে অভিজ্ঞ এক নিউরো সার্জনকে সে জিজ্ঞেস করে,
“ইন্টার্ন ডক্টর চাঁদ কোথায় স্যার?আপনাদের সাথেই না যাওয়ার কথা ছিলো?”
মৃদু হেসে সার্জন বললেন,
“ইন্টার্ন ডক্টর নাকি আপনার মিসেস চাঁদ,ডক্টর প্রণয়?”
খানিক কেশে গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বলে,
“জ্বি চাঁদ আসেনি?যাবেনা আপনাদের সাথে?”
আরেকজন ডাক্তার তাদের সামনে এসে বললেন,
“মিসেস চাঁদকে আমিও এখন পর্যন্ত দেখিনি।তবে সে বেশ উৎসুক ছিলো যাওয়ার জন্য।এতসময় কেবল সার্জারী দেখেছে।এখন তো করার সুযোগ পেতো আসবেনা নাকি?”
একজন অধ্যাপক প্রণয়ের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলেন,
“চাঁদের ফোন এসেছিলো প্রণয়।ও বলেছে ও সেখানে পৌঁছে যাবে।পরবর্তীতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে।এখন কি তুমিও যাবেনা নাকি বউয়ের মতো একাই যাবে?”
বারংবার কলিগ আর স্যারদের চাঁদকে নিয়ে লজ্জা দেওয়ায় এবার প্রণয়েরও খানিক অস্বস্তি হওয়া আরম্ভ হয়।তাই সে কোনোমতে বলে,
“যাবোনা কেনো স্যার?বউতো আমার সাথে বেজায় নারাজ”
প্রণয়ের কাধে চাপড় মেরে হাসতে হাসতে অধ্যাপক বলেন,
“তোমাদের দুজনের কেমিস্ট্রি সেই তোমরা কলেজ থাকাকালীন হতে দেখে আসছি প্রণয়।দুআ করি তোমাদের মাঝেকার সমস্যা দ্রুতই মিটমাট হোক।এবং এই ট্রিপেই তা হোক।তোমাদের প্রেম দেখতে পুরো কলেজ তো মুখিয়ে আছেই সেইসাথে হাসপাতালের প্রায় প্রতিটা ডাক্তার চাঁদ-প্রণয়ের প্রেমিক-প্রেমিকা রূপের প্রেমতো দেখেছেই।এবারে হাজবেন্ড-ওয়াইফ হিসেবে দুজনে কীরূপ প্রেমের হাওয়া লাগাও তা দেখতেই ব্যাকুল!”
প্রণয় এবারে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে।ছেলেরাও যে লজ্জা পেতে পারে তা এতে করে ভালোভাবেই বুঝতে পারলো প্রণয়।তাই ‘এক্সকিউজ মি’ বলে প্রস্থান নিলো সে জায়গা।গিয়ে দাড়ালো তার অন্য কলিগদের সঙ্গে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পাবনা মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে চাঁদ।অপেক্ষা করছে ইপ্সির আসার।এই মেডিকেলেই ইপ্সি কর্মরত।কিয়ৎক্ষণ বাদে ইপ্সিকে আসতে দেখে দু’বাহু মেলে বান্ধবীকে আলিঙ্গন করলো সে।অতঃপর কথা বলতে বলতেই ইপ্সির শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।বেশিক্ষণ লাগলোনা আসতে।রিক্সা করে বিশ মিনিটের মাঝেই তারা এসে নামলো ইপ্সির বাড়িতে।সাদা আর খয়েরীর মাঝে চারতলা বিশিষ্ট বাড়িটাই ইপ্সির শ্বশুরবাড়ি জানতে পেরে এক হাত দ্বারা ইপ্সির বাহু জাপটে চাঁদ বললো,
“বাবারে!সেই বড়লোক জামাই পেয়েছিসতো দোস্ত!”
ইপ্সি বাকা চোখে চেয়ে চাঁদকে খোচা মেরে বললো,
“তুমি তাহলে ডাবল,ট্রিপল বড়লোক জামাই পেয়েছো খালা”
ইপ্সির কথায় চাঁদ কপাল সামান্য কুঞ্চিত করতেই ইপ্সি ফের বলে,
“প্রণয় ভাইয়াতো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে চাঁদ।লোকটাকে আর কত কষ্ট দিবি তুই?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“এখানে কষ্ট পাবার মতো কিছু নেই ইপ্সু।আমি তার জীবনে আর যেতে চাইনা।সে ডিভো!র্স দিচ্ছেনা এতে আমি কী করতে পারি?”
ভেতরে যেতে যেতেই চাঁদপানে তাকিয়ে ইপ্সি বলে,
“কষ্ট পাবার মতো কিছুই নেই বলছিস?লোকটা তোকে ভালোবাসে চাঁদ।কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।এবং এর জন্য যে কেবল ভাইয়া দায়ী তা কিন্তু নয়।তুই নিজেও এর জন্য দায়ী।একহাতে কখনোই তালি বাজেনা……”
আরও কিছু বলতে নিলে চাঁদ তাকে থামিয়ে বলে,
“হ্যা আমি জানি এখানে আমরা দু’জনই সমান দোষী তবে এখন আর তার জীবনে সত্যিই ফিরতে চাইনা।তাকে আমি কিছুই দিতে পারবোনা রে।হি ডিজার্ভস বেটার দোস্ত।আমি মনেপ্রাণে চাই সে ভালো কাউকে পেয়ে জীবনকে নতুনভাবে শুরু করুক।আমার মাঝে যে কিছুই নেই”
কপাল কুচকে ইপ্সি বলে,
“মানে?কীসব বলছিস?আর তোরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ চাঁদ।নিজের স্বামীকে অন্যের কাছে তুলে দিতে চাস?পাগল তুই?”
“তাকে অন্যের সাথে দেখার মতো ক্ষমতা বিধাতা আমায় দেননি।তবুও চাইছি কেনোনা আমি বাধ্য।আমার মাঝে তার সুখ নিহিত নয়।আমি কেবলই এক ধ্বংসাত্মক বস্তু”
“মানে?”
ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে সোফায় বসে প্রসঙ্গ এড়াতে চাঁদ বলে,
“তনিমা কোথায় ইপ্সু?”
“হাসপাতালে আছে।তুই বস আমি তোর জন্য পানি নিয়ে আসছি”
ইপ্সির হাত ধরে তাকে পাশে বসিয়ে চাঁদ বলে,
“পানি লাগবেনা।আমার ব্যাগেই আছে।তুই বস কথা বলি”
“কথা পরেও বলা যাবে।কিছুই খাস নি।আমি মা কে বলে আসছি তুই এসেছিস।তোর জন্য কত পদ যে তিনি তৈরি করলেন!”
অবাক হয়ে চাঁদ বলে,
“মাওই মা আমি আসবো বলে আপসেট হন নি?”
কপাল কুচকে ইপ্সি বলে,
“আপসেট কেনো হবেন?এখানের সকলেই বেশ খুশি বিশেষ করে তোর দুলাভাইয়া।সে তো পারেনা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বসে থাকে তোকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরবে বলে”
চাঁদ হাসিমুখে বলে,
“তাই নাকি?জিজু আমার এতই শালীভক্ত?”
“শালীভক্ত বলতে কেবল তোর ভক্তই বলতে পারিস।তোর সম্পর্কে এতবছরে শুধু শুনেই এসেছে দেখেনিতো তাই আরকি।আর অবুকে সে বেশ ভয় পায়!”
বলেই কিঞ্চিৎ হাসে ইপ্সি।চাঁদও হেসে দিয়ে বলে,
“অবু আসলে একটা চিজই রে।ওর ছেলে হয়েছে শুনেছিস?সেদিন দেখে আসলাম”
“হ্যা ভিডিও কলে দেখেছি।যাইনি বলে সে কী রাগ!দেখি তূর্ণকে নিয়ে দেখে আসবো”
“তনিমা কখন আসবে?”
“তুইতো দেখছি বান্ধবীর চেয়ে বেশি বান্ধবীর ননদকে নিয়ে এক্সাইটেড”
ইপ্সির কথায় মিথ্যে হাসার চেষ্টা করে চাঁদ বলে,
“আরেএ না তেমন কিছুনা।আসলে তনিমার সাথে আমার একটা কাজ ছিলো।আর তুইতো জানিস এখানে সার্জারীর জন্য এসেছি”
“হ্যা হ্যা জানি।বস একসাথে খাবো সকলে”
“তনিমা?”
“তনির আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।তুই টেবিলে বস আমি মা আর অনিকে নিয়ে আসছি”
“আংকেল আর ভাইয়া?ওহ সরি ভাইয়াতো অফিসে”
“বাবা মার্কেটে গেছেন”
“মার্কেট?”
“আরেহ আমাদের মার্কেট।বলেছিলাম না থ্রিপিসের ব্যবসা ওদের?”
“ওহ হ্যা সরি!ভুলেই গিয়েছিলাম”
“প্রণয় ভাইয়া বাদে আর কী মনে থাকে তোমার?”
বলেই উঠে আসে ইপ্সি আর চাঁদ কপাল কুচকে তাকিয়ে থাকে তার যাওয়ার পানে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা তখন ছয়টা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট,
সবেমাত্র বাসার ভেতরে প্রবেশ করেছে তনিমা।এমতাবস্থায় সোফায় ফোনে কারো সাথে চাঁদকে আলাপ করতে দেখে দৌড়ে আসে তার দিকে।অতঃপর পেছন হতে চাঁদকে জড়িয়ে ধরতেই হকচকিয়ে উঠে চাঁদ।মৃদু শ্বাস ফেলে ‘রাখছি,জ্বি কাল সকালেই দেখা হচ্ছে’ বলেই কল কেটে দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে তনিমাকে দেখে নিজেও তনিমার দু’বাহু দুই হাত দ্বারা স্পর্শ করে বলে,
“ফ্রেশ হয়ে আসো অনেক গল্প হবে।কাল থেকে ডিউটি আছে আমার”
“ঠিক আছে ভাবি।তুমি বসো আমি এক্ষুনি আসছি”
বলেই নিজের রুমের দিকে এগোয় তনিমা।অতঃপর মিনিট দশেকের মাঝেই ড্রয়িংরুমে হাজির হয় সে।চাঁদের পাশে গিয়ে বসতেই চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছো তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভাবি।তুমি কেমন আছো?”
“আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ।তা আলফি ভাইয়া আর তোমার বিয়ে কবে খাচ্ছি?”
“খুব শীঘ্রই ভাবি।আলফি ওর ফ্যামিলিতে কথা বলছে আর আমাকে যদিও কেউ চাপ দেয়না বাট ইদানীং বিয়ের জন্য তোরঘোর করছে”
“আলফি ভাইয়ার ব্যাপারে জানে কেউ?”
ফিসফিসিয়ে চাঁদের আরও সন্নিকটে এসে কানে কানে তনিমা বলে,
“হ্যা,অনি আর ভাবি জানে শুধু”
“ইপ্সি জানে?”
“হ্যা সেদিনই বললাম।বারবার বলছিলো বিয়েতে মত দিচ্ছিনা কেনো”
“যাক ভালো করেছো।তো তোমার সাথে তো এরপর আর কথা হলোনা আমার।বেশ ধকলের মধ্যে ছিলাম”
“হ্যা ভাবি জানি।শুনেছি আলফি আর ভাবির থেকে”
“হিম।কাল থেকে অতো টাইম পাবো কিনা জানিনা।তোমার হাসপাতালে নেবেনা আমায়?”
“হ্যা ভাবি নেবো বাট ঐ কথা শোনার পর থেকে এত এক্সাইটেড কেনো?”
“এমনিতেই।সেই পাগল ছেলেটার নাম কী?”
“পাগল বলোও না ভাবি।তাকে দেখলে মোটেও পাগল মনে হয়না।বেশ সুস্থ স্বাভাবিক।কয়েক মাস ধরেই নরমাল বিহেভ করে।বাট সন্ধ্যা হলে একটু কেমন যেনো করে”
লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“নাম কী তার?”
“আরিয়ান”
কপাল কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“শিওর আরিয়ান ই?পুরো নাম কী?”
“রেজিস্ট্রি পেপারে শুধু আরিয়ানই ছিলো।পুরো নামতো আমি জানিনা”
“তাকে দেখতে আসেনা কেউ?”
“সেই যে ভর্তি করিয়েছে এরপর নাকি কেউ আসেনি আর দেখতে”
“আচ্ছা এখন চলো যাওয়া যাক?আই মিন তুমি একটু রেস্ট নেওয়ার পর”
“আজতো আর ভালো লাগছেনা ভাবি।তুমিও টায়ার্ড হয়েই নিশ্চয়ই এসেছো।কাল যাই?”
“কাল থেকে অতো টাইম পাবো কিনা শিওর নাতো”
“আচ্ছা যখনই সময় পাও আমায় কল দিলেই হবে।আমি নিয়ে যাবো”
“আচ্ছা ঠিক আছে”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত এগারোটা,
বারান্দা হতে আকাশপানে চেয়ে আছে প্রণয়।নিকষকালো রাত্রি।ঘন মেঘে আচ্ছাদিত হয়ে আছে গগণ।সেইসাথে প্রণয়ের হৃদমহল হয়ে আছে ভারাক্রান্ত।কেনোনা আজ সারাদিনে একবারের জন্যও চাঁদের দেখা মেলেনি।রোজ একবার হলেও লুকিয়ে চুরিয়ে সে চাঁদকে দেখে।তাকে ছাড়া একেকটা দিন তার কীভাবে যে কাটে তা কেবল সে ই জানে।হৃদয় পো*ড়ে অথচ সে কিছুই করতে পারেনা।কিছু যে করার নেই।কবে এসবের সমাপ্তি ঘটবে?কবে একটা সুন্দর,স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে তারা?তার সুখের সকল উৎস তো এই মেয়েকে ঘিরেই।জীবনে রঙ এনে সবকিছু সাদাকালো করে দিয়ে না গেলেই কি হতোনা?অতঃপর আকাশপানে চেয়ে থাকতে থাকতে হুট করেই তার মনে পড়ে চাঁদের বিশতম জন্মদিনের কথা।সে রাতেও আকাশের অবস্থা এমনই ছিলো।কী অপরূপ সৌন্দর্যে মন্ডিত ছিলো সে রাত!নিজের মনের কথা চাঁদকে তো সে বলেছিলো।হ্যা বলেছিলো তো!উপমার মাধ্যমে বললেও,প্রকাশ তো সে ঠিকই করেছিলো।কিন্তু তার ফোনে পাঠানো আকস্মিক ছবিগুলো দেখে মন বিষিয়েও গিয়েছিলো।অতঃপর ‘ভালোবাসি’ উপমাটাকে নিছকই প্রশংসা বলে চালিয়ে দিয়েছিলো।চাঁদকে সুন্দর লাগছিলো বিধায় তাকে কমপ্লিমেন্ট দিয়েছিলো কিনা।একে একে সব ভাবতে লাগে প্রণয়।অরণের সাথে আগেতো এত ঘনিষ্ঠ ছিলোনা।তবে?তবে সবকিছুর মূলে আসলে কে?যেই থাকুক সে কি চাইতো প্রণয় যেনো চাঁদের থেকে সরে আসুক?তাদের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হোক?আর ‘রাজ ভিলা’ সম্পর্কেতো আরও বহু পরে চাঁদ জানতে পেরেছে।কিন্তু তার প্রণয়ের দূরত্ব তো এর আগেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিলো।তার মানে?তার মানে কেউ আগে থেকেই চাইতো তারা আলাদা হোক!কিন্তু কেনো চাইতো?আর কেই বা চাইতো?কাছের কেউ?নাকি চাঁদের কোনো শত্রু?অথবা তার?নাকি অরণের?আর সে সন্ধ্যায় তার হাতে যেই মোবাইলটা দেওয়া হয়েছিলো সেই লোকটাই বা কে ছিলো?হুট করে তার হাতেই কেনো দিলো?চাঁদকে ভুল বোঝানোর জন্য?হ্যা চাঁদকে ভুল বোঝানোর জন্যই হয়তো দেওয়া হয়েছিলো।কিন্তু তার আগেইতো চাঁদ অরণকে আ!ঘা!ত করে চলে গিয়েছিলো।ইশ!মস্তিস্ক আর চাপ নিতে পারছেনা।সকল কিছুর উত্তর কেবল চাঁদই দিতে পারে।কিন্তু চাঁদকেতো সে কোনোভাবেই একা পাচ্ছেনা।না চাঁদ তার নিকটে আসছে।কীভাবে সবটা সমাধান করবে সে?নাকি জীবনটা এভাবেই ঝুলে থাকবে?আকস্মিক মাথায় যন্ত্রণা সৃষ্টি হতে লাগে প্রণয়ের।বুকে অসহনীয় যন্ত্রণা।হৃদয় তার ভার হয়ে আসছে,যেনো কত ওজনের পাথর তার বুকটায় গেথে রয়েছে!কীভাবে এসবের থেকে পরিত্রাণ পাবে?অতঃপর চট করেই আঁখিদ্বয় খোলে সে।খুলে পকেট থেকে ফোন বের করে গুগল ড্রাইভে গিয়ে ‘আমার চন্দ্রময়ী’ লিখা একটা ফোল্ডারে গিয়ে চাঁদের ছবি খুব মনোযোগ সহকারে একের পর এক দেখতে লাগে।একেক টা ছবি বেশ নিখুঁতভাবে মিনিটের পর মিনিট পলকহীনভাবে দেখতে দেখতেই কাধে কারো স্পর্শ পেতেই হকচকায় সে।তাৎক্ষনিক পাওয়ার বাটনে ক্লিক করতেই ফোন লক হয় তার।মৃদু শ্বাস ফেলে সে।তা দেখে পেছনের লোকটা বলে,
“কী হয়েছে প্রণয়?এভাবে মনমরা হয়ে আকাশে কী দেখো?ভাবিকে মনে পড়ছে?মন কি বেশি খারাপ?বলো আমায়”
পিছু ঘুরে নিজের এক কলিগকে দেখে মৃদু হাসার চেষ্টা করে দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে সুর তুলে প্রণয় গায়,
“আমি কী বলিবোয় আর?
বিচ্ছেদের আগুনে পুড়ে কলিজায় আঙ্গার!”
বেশ করুন শোনালো প্রণয়ের সঙ্গীতধ্বনি।বুক চি!ড়ে প্রণয়ের পাশে দাড়ানো ছেলেটারও দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।সে প্রণয়কে বললো,
“ভালোবাসায় খুব দুঃখ তাইনা প্রণয়?”
ধীরকন্ঠে প্রণয় বলে,
“ভালোবাসায় স্বেচ্ছায় যদি তুমি দুঃখ নাও তবে হ্যা ভালোবাসা দুঃখময়।কিন্তু আমার কাছে ভালোবাসা মানে কষ্টকর এক সুখানুভূতি,যা আমার জীবনে প্রথমবারের ন্যায় চাঁদ নামক এক লালগোলাপের আগমণে ধরা দিয়েছিলো”
“চাঁদ ভাবিই তোমার ফার্স্ট?”
“হ্যা।আমার প্রথম আর শেষ প্রেম আমার চন্দ্রময়ী ই।না তার আগে কেউ এসেছিলো,না তার পরে কেউ এসেছে আর না কখনো কেউ আসবে।আয় উইল লাভ দ্যাট গার্ল টিল মাই ব্রেথ।ইভেন ইফ আয় উইল ডায়,কিয়ামতের পর হাশরের ময়দানেও আমি তাকে চাইবো।বারংবার,হাজারবার কেবল তাকেই চাইবো,তার ভালোবাসা চাইবো।ইহজন্মে যদি তার ভালোবাসা পাওয়া না হয় তবে পরকালে চাঁদ নামক চন্দ্রময়ীকে আল্লাহর নিকট চেয়ে নেবো।আমারই তো স্ত্রী,আমার অর্ধাঙ্গিনী তাকে চাইলে অবশ্যই বিধাতা আমায় তাকে দেবেন?তখন দেখবো কী করে সে আমার কাছে ধরা না দিয়ে পারে”
প্রণয়ের সমস্ত কথা শুনে লম্বা শ্বাস ফেলে ছেলেটা বলে,
“খুব ভালোবাসো ভাবিকে?”
“কতটা ভালোবাসি জানিনা অথবা কীভাবে,কীরূপে তাকে ভালোবাসি সেও জানিনা।তবে তাকে ছাড়া শ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হয় আমার।চাঁদহীন প্রণয় কেবলই এক মরিচিকার আস্তরণে মুড়িয়ে যাওয়া সামান্য এক ধাতু”
“তোমাদের দুজনকে কলেজ লাইফ থেকেই দেখছি প্রণয় তবে তোমার মতো এত গম্ভীর,এরোগেন্ট এক ছেলে কোনো মেয়ের জন্য এত পাগল হতে পারে ভাবিনি।কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে তাও আমার জানা ছিলোনা।অন্তত তোমায় দেখলে কেউই বলতে পারবেনা।এতবছর তোমরা কাছে ছিলেনা।তবুও কী করে ভালোবেসেছো ভাবিকে?এত বছরের পরও তাকে মনের ভেতর সন্তপর্ণে পুষে রেখেছো কী করে?”
লম্বা শ্বাস ফেলে আকাশপানে চেয়ে প্রণয় শুধায়,
“তাকে ভুলবার মতো সাধ্যি কখনোই আমার ছিলোনা।তাই মনের অন্তরালে বছরের পর বছর লালিত করেছি নিজ স্বার্থে,নিজ ভালোলাগা,ভালো থাকার উর্ধ্বে”
“এক নারীতে আসক্ত পুরুষ সত্যিই চমৎকার!তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ তুমি প্রণয়”
To be continued……