#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১৯.
“পা….পূর..পূর্ণ!পূর্ণ…”
অতঃপর চাঁদের হাত ধরে রাখাবস্থায়ই রিহার পলক থামে,স্তব্ধ হয় শ্বাস।বুকের ওঠানামাও বন্ধ হয়েছে ইতোমধ্যেই।চাঁদের পানেই দৃষ্টি তার এখনো স্থির।হৃদয় থমকায় সকলের।দৃষ্টি হয় ঘোলাটে।রিহার হাত ধরে রেখেই অপরহাতে তার বাহু ঝাকিয়ে ভাঙা কন্ঠে চাঁদ আওড়ায়,
“আপ….আপু?এই আপু?আপু?থা…থামলে কেনো?ও আপু?কথা বলো।আপু?এই আপু?”
তৎক্ষনাৎ কাছে এসে রিহার হিম হওয়া শরীর আলতো ঝাকিয়ে মিরাও ডাকে কিয়ৎক্ষণ অথচ মেয়েটা আর সাড়া দেয়না।স্তব্ধ হয়ে পড়ে থাকে তার প্রাণহীন দেহখানা।চোখ ফেটে কান্নারা যখন উপচে পড়তে আরম্ভ করে তখনই অপরপাশে এসে দাঁড়ায় মির।অতঃপর রিহার দিকে ঝুঁকে বরফের ন্যায় হিমশীতল গালে আলতো থাপড়িয়ে অবুঝের ন্যায় ডাকে সেও,
“রি….রিহু।এই রিহু?এদিকে তাকা।আমার দিকে তাকা।কীরে রিহু?”
বলতে বলতেই বারিধারা গড়ায় টপটপিয়ে।ভিজে যায় রিহার কপাল,গাল,সমস্ত মুখশ্রী।থামেনা সেই অশ্রুবর্ষণ।ফের আওড়ায় মির,
“রি….রিহু রিহু?এই রিহা?দা….দেখ কথা বল।মজা করিস কেন?রিহু?এ….এই?কথ……”
আর কিছু বলতে নিলেই মিরের কানে ভাসে ফায়ানের গম্ভীর,মূর্ছাস্বর,
“আপুর সময় শেষ ভাইয়া।শি ইজেন্ট এনিমোর”
অতঃপর রিহার পানে নজর যেতেই দৃষ্টি ভাঙে ফায়ানের।এতক্ষণের তীক্ষ্ণ নজর মলিন হয়।আঁখিজোড়া তারও জ্বলে।মিরের পানে দৃষ্টি যেতেই হৃদয় থমকায় তার।এলোমেলো লাগছে ছেলেটাকে।পরিস্থিতি সামলাতে জানা ছেলেটাও এই পরিস্থিতিতে এসে নিজেই নিজেকে হারাচ্ছে,হারাচ্ছে নিজ দৃঢ় সত্তাকে।শেষবার রিহার গালে আলতো থাপড়িয়ে ধীরকন্ঠে মির বলে,
“রিহা?”
অতঃপর চট করেই বাচ্চাসুলভ আচরণ করে বসে মির।ফুপিয়ে রিহার বুকের কাছে মাথা চেপে তার উপরই দেহের ভার ছেড়ে দুই হাতে দুই বাহু ঝাকিয়ে উচ্চস্বরে ডেকে উঠে,
“রিহারে!ওঠনা”
মিরের ধীরস্বরের আ!র্তনাদেও যেনো হৃদয় চে*ড়ে সেখানে উপস্থিত প্রতিটা মানবসত্তার।ভার হয় মন,আঁখিজোড়া ভিজে।বুকে জ্বলন সৃষ্টি হয়।প্রিয় ব্যক্তি হারানোর যন্ত্রণা সহ্যসীমার এতটা বাইরে কেনো?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিছানার উপর সোজা হয়ে সিলিংফ্যানের দিকে একধ্যানে চেয়ে আছে চাঁদ।পলক তার পড়ছেনা।হৃদয় ভার,অসহ যন্ত্রণা সেথায়।চোখের দুই পাশ হতে অশ্রু গড়ায় অবিরাম।ভিজে চাঁদের কান হতে কেশরাজি সহ বালিশের দুইপাশও।ঠোটের চামড়া শুকিয়ে ফেটে আছে ওষ্ঠদ্বয়।ঘন্টার পর ঘন্টা একইভাবে অশ্রু বিসর্জনে তৃষ্ণা কি তার পেয়েছে?হৃদয়ের ব্যথা উপশমের চিন্তাও কি মস্তিষ্কে হানা দিয়েছে কিয়ৎক্ষণের?সমস্ত ভাবনাকে উপেক্ষিত করে পলকহীনই সে ব্যস্ত হয় কিছু স্মৃতিচারণে,
নিজের শেষ সময়ে সর্বাধিক প্রিয় বন্ধুকে মনে পড়ে রিহার।প্রণয় যদি জানতো সে আর কিয়ৎক্ষণের অতিথি ধরণীতে তখন ছেলেটার প্রতিক্রিয়া কী হতো?আর যখন সে সর্ব তিক্ত সত্যটা জানবে?তখনই বা প্রণয়ের অনুভূতি হবে কীরূপ?জানেনা রিহা।অতঃপর পূর্ণতার কথা স্মরণে আসতেই ঘেমে উঠে রিহা।মাথায় চাপ বাড়ে তার।স্মরণে আসে পূর্ণতার সাথে কাটানো কিছু বিদঘুটে স্মৃতি।অতঃপর নিজেকে সামলে ঘনঘন শ্বাস নিতে আরম্ভ করে।চোখজোড়া বড় বড় হয় তার।দম বন্ধকর অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে।শরীরে ঘাম ছুটে গিয়েছে।সবেই রিহাকে চেক করতে এসেছিলো ফায়ান।তৎক্ষনাৎ রিহাকে ছটফটাতে দেখে ছুটে আসে তার পানে।অতঃপর রিহাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে নজরে আসে রিহার হাতের আঙুলসমূহ নীলচে বর্ণ ধারণ করছে।বরফের ন্যায় হিমশীতল মেয়েটার শরীর।শরীরে পানি ছেড়ে দিয়েছে,ঘেমে ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে সমস্ত শরীর।আর যে তার হাতে সময় নেই ফায়ানের অবচেতন মনে স্মরণে আসতেই ধ্যান ভাঙে তার রিহার অস্থির কন্ঠের অস্ফুট বাক্যে,
“ফা..ফায়ান…ফায়ান প্লিজ চাঁদকে…চাঁ……আদ…”
“ডাকছি আপু”
অতঃপর চাঁদসহ বাকিদের ভীড় জমে রিহার কেবিনে।নিজ বন্ধুবান্ধবদের শেষবারের ন্যায় দেখে সিক্ত হয় রিহার আঁখিজোড়া।ফের তার শ্বাস আটকায়।হৃদস্পন্দন ঊর্ধ্বগতিতে বেড়েছে।মাথা বারকয়েক তার ঘুরে উঠছে।তবুও সে চাঁদের পানে চেয়ে চাঁদকে হাতের ইশারায় ডাকে,
“চাঁ…..চাঁদ….”
রিহার কথায় তৎক্ষণাৎ তার পানে এগিয়ে রিহার হাতজোড়া নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে চাঁদ বলে,
“কী হয়েছে আপু?হঠাৎ কী হলো?তুমিতো ঠিক ছিলে!”
ঊর্ধ্ব মাত্রায় শ্বাস বাড়ে রিহার।অশ্রু গড়ায় বিরামহীন।সেভাবে থেকেই চাঁদপানে চেয়ে ঘনঘন শ্বাস মুখ দ্বারা নিক্ষেপ করতে করতেই সে আওড়ায় তার সর্বশেষ বাক্য,
“হাতে সম….অয় নেই চাঁ…..আদ।পা….পূর..পূর্ণ!পূর্ণ…”
শেষ কথোপকথনে বুলি ফুরোয় রিহার,দৃষ্টি হয় স্থির।অতঃপর ধ্যান ভাঙতেই স্মৃতির পাতা সশব্দে বন্ধ হয় চাঁদের।সেও নিজ স্থির পলক ঝাপটায় অবশেষে।আঁখি জোড়া জ্বলে তার।বুকে অসহনীয় যাতনা নিয়েই দাঁত দ্বারা ঠোট চেপে মনে মনে সে আওড়ায়,
“কেন তোমার জীবনটা আমায় দিয়ে গেলে আপু?এই ঋণের বোঝা আমি টানি কী করে?প্রণয়কেই বা কী বলবো?তার বউ,বাচ্চা বাঁচাতে তুমি প্রাণ হারালে?কেনো করলে আপু?এই বোঝার ভার তো আমি সইতে পারি না আপু।সত্যিই পারি না গো!তুমি ফেরত আসো না প্লিজ!ও আপু?আপুগো!”
তৎক্ষণাৎ বারিধারা গড়ায় চাঁদের নেত্র হতে।হৃদয় ফের তার ভাঙে,শ্বাস বাড়ে।অতঃপর ফোনের রিংটোনে বন্ধ চোখ খোলে চাঁদ।সে পানে তাকিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোন হাতে নিতেই নজরে আসে এক অপরিচিত নাম্বার।তবুও ফোন কানে লাগায় সে।অতঃপর ভেসে আসে গম্ভীর এক পুরুষালি কন্ঠস্বর,
“হ্যালো?আপনি কি চাঁদ?আসলে ডাক্তার পূর্ণতা দুইদিন যাবৎ সেন্সলেস,তার এক্সিডেন্ট হয়েছে।লাস্ট নম্বর আপনার ছিলো বিধায় আপনাকেই কল দেওয়া”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিহার জানাযা পড়িয়ে তাকে মাটি দিয়ে আসতে না আসতেই খবর আসে পূর্ণতার এক্সিডেন্টের।তৎক্ষনাৎ সে অবস্থায়ই মির,রবিন আর অরণ ছুটে যায় পূর্ণতাকে ভর্তি করানো হাসপাতালে।সাথে তাদের চৈত্রও।সেখানে গিয়ে জানতে পারে রিহার যেদিন এক্সিডেন্ট হলো সেদিনই পূর্ণতারও বেশ মা*রাত্মক এক্সিডেন্ট হয়েছে।ইতোপূর্বে একজনকে হারিয়ে নতুন করে আবার আরেকজনকে হারানোর মতো সাহস বা ইচ্ছে শক্তি কোনোটাই কারো মাঝে নেই।সকলের দোয়া কেবল এটাই অন্তত পূর্ণতার কিছু না হোক!পূর্ণতার খবর শোনার পর থেকেই নিজের মধ্যেই কেমন এক অপরাধবোধ কাজ করে চৈত্রের।সেও প্রার্থনা করে পূর্ণতা অন্তত সুস্থ হোক।রিহার ন্যায় পরিণতি তার না হোক!রিহার কথা স্মরণে আসতেই রিহার সাথে অতিবাহিত করা শেষ মুহুর্ত এবং শেষ কথোপকথন স্মৃতিপটে ভাসে চৈত্রের,
চৈত্রকে নিজের পাশে দেখে খানিক হাসার চেষ্টা করলে চৈত্র বলে,
“হাসতে হবেনা।আপনি না হাসলেও আমি জানি আপনি বিনয়ী”
চৈত্রের কথায় বেশ অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার পানে রিহা।অতঃপর অস্থির ভঙ্গিমায় বলে,
“শা….শেষ একটা প্রশ্ন করবো চৈত্র”
“জ্বি”
অতঃপর রিহা কিছু বলতে চাইলে তার চোখ বরাবর নজর যায় চৈত্রের।অতঃপর সে উপলব্ধি করে সেথাকার কিছু অব্যক্ত অনুভূতি।তৎক্ষণাৎ দৃষ্টি এলোমেলো হয় চৈত্রের।সে রিহাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“কষ্ট করার প্রয়োজন নেই।আমি জানি আপনি কী বলবেন অথবা ভাবছেন।তবে আমার পক্ষে সত্যিই তা সম্ভব না।আমি আপনার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।এখন রেস্টের প্রয়োজন।একটু ঘুমান।বাইরে সবাই আছে,আমিও আছি।প্রয়োজন হলে ডাকবেন।রেস্ট করুন।আসি”
অতঃপর বাস্তবে ফিরতেই বুক চি!ড়ে বেরিয়ে আসে এক লম্বা দীর্ঘশ্বাস!নিজের প্রতিই নিজের বিরক্তি আসে চৈত্রের।বিরক্ত হয় সে তার খিটখিটে স্বভাবের প্রতিও।কপাল কুচকে রেখেই মনে মনে ভাবে হয়তো শেষবার মেয়েটাকে কথা বলার সুযোগ দিলে মন টা হালকা হতো।মেয়েটা কি তার জন্য এক বুক কষ্ট নিয়ে দুনিয়া ছেড়েছে?তবে সে তো সুস্থ ছিলো।অপারেশনও সাকসেসফুল হলো।হঠাৎ কী এমন হলো যার দরুন আকস্মিক মেয়েটার জীবন নামক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো?সে পাঁচদিনের জন্য নিখোঁজই বা কোথায় ছিলো?ফেরতই বা কী করে এলো?পূর্ণতাই বা তাকে পেলো কোথায়?তারও কেনো এক্সিডেন্ট হলো?এত এত প্রশ্ন মনে অথচ জবাব দেয়ার মতো কেউ নেই।মাথা চেপে চোখজোড়া বন্ধ করে হাসপাতালের চেয়ারেই বসে থাকে চৈত্র।সবকিছু এলোমেলো লাগছে।তার বোনের জীবনে এইটুকু পরিমাণ সুখ কেনো আসেনা?কী দোষ করেছিলো মেয়েটা?এত এত দুঃখ তার বোনের কপালেই কেনো?ভাবতে ভাবতেই মেজাজ তার ধৈর্যসীমা হারায় চৈত্রের।উঠে গিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রস্থান নেয় সে জায়গা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরপর দু’বার অরণের মাথায় মাঝারী আকারের ইট দ্বারা আ!ঘা!ত করে প্রাণপণে ছুটে চলেছে চাঁদ।অরণের কপাল ফেটে র*ক্তের ধারা গাল বেয়ে গড়িয়ে গলার কাছে আসতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে।তৎক্ষনাৎ অরণের পানে দৌড়ে আসে প্রণয়।পিছু আসে প্রণয়ের বন্ধুমহলের সকলেই।প্রণয় অরণের র*ক্তে রঞ্জিত দেহ উরুর উপর তুলতেই অরণকে ঘেড়াও করে বসে তারা।আর অরণকে ধরে রেখেই প্রণয় চেয়ে থাকে নির্নিমেষ চাঁদের দৌড়ে দূর হতে দূরান্তের দৃশ্যে।তবে বেশিক্ষণ সে পানে চেয়ে থাকতে পারেনা।হৃদয় তার ভাঙে,বিড়ালাক্ষীদ্বয় ঘোলাটে হয়।দহন যন্ত্রণা সে অনুভব করে তার অন্তরমহলে।কপোল বেয়ে অশ্রু গড়াবার পূর্বেই চিৎকার ভাসে মিরার।সে নিজ ওড়নার একপাশ অরণের মাথায় চেপে ধরেই ডাকে অরণকে,
“এ….এই অরণ তোর মাথায় চাঁদ মা*রলো কেন রে?কী করেছিস তুই?তো….. তোকে…”
বাকিটুকু সম্পূর্ণ করে ক্রন্দনরত রিহা,
“দোস্ত?এই দোস্ত?তোর গায়ে এত কা*টাছেড়া কেন?”
নিজ গায়ের এপ্রোণ খুলে অরণের মাথায় পেচাতে পেচাতে মির বলে,
“অরণকে হাসপাতালে নিতে হবে।এসব ব্যাপার পরেও জানা যাবে।রবিন,প্রণয় ধর”
পাশ হতে রবিন অরণের বাহুতে ধরতে নিলেই ‘আহ’ শব্দ উচ্চারিত করে ভাঙা গলায় অরণ বলে,
“আমার হাতে বেশি সম….সময় নেই।তোরা প্লিজ চাঁ……”
তৎক্ষণাৎ তাকে থামায় প্রণয়।অতঃপর কিছু বলতে নিলেই পূর্ণতা অরণের ফেটে যাওয়া কপাল হতে র*ক্ত গড়াতে দেখে সেখানে চেপে ধরে দাঁত দ্বারা ঠোট কামড়ে নিজের ফোপানো থামায়।অতঃপর অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে বলে,
“প্লি….প্লিজ কিছু বলিস না অরণ।তোরা একটু জলদি কর।আমি আর র*ক্ত দেখতে পারছিনা।মির,রবিন…..”
পূর্ণতার কান্নাভেজা কন্ঠ কর্ণকুহর হতেই ডান পাশে ঘাড় ঘুরিয়ে কিয়ৎক্ষণ তার পানে চায় অরণ।অতঃপর ফের দৃষ্টি ঘোরায় মিরার পানে।চেয়ে থাকে সেথায় নির্নিমেষ।তখনই প্রণয় নিজ উরু হতে মিরার কোলের কাছে অরণকে রেখে উঠে দাঁড়ায়।অতঃপর মিরকে সেখানে রেখেই রবিনের সহিত গাড়ি আনতে উদ্যত হয়।তৎক্ষনাৎ পূর্ণতা রিহাকে ধরে বলে,
“রি….রিহু?ওরা এই নীরব রাস্তায় গাড়ি পাবে?আয় রিক….রিক্সা দেখি”
জলে টইটম্বুর আঁখিসহিতই রিহা বলে,
“তু……তুই যা।আমি অরণকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা”
রিহার বুকে হামলে পড়ে পূর্ণতা কাদতে কাদতেই বলে,
“আমিতো অরণকে এভাবে দেখতে পারছিনা রে!বুকে যে কি জ্বলন হচ্ছে!তুই ভাবিস আমি এভাবে ওকে ছেড়ে যাবো?না রে,ও তো ডাফার!ডাফারটাকে হাসপাতালে না নিতে পারলে ও…..ও……”
বলতে বলতেই কথা আটকায় পূর্ণতার।রিহা নিজেকে আর পূর্ণতাকে সামলে দাড়াতে দাড়াতে বলে,
“চল”
মিরও উদ্যত হয় পূর্ণতা আর রিহার সাথে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।তারা যেতেই কান্না আটকে মিরা বলে,
“তো….তোর কিছু হবেনা তাইনা?দা……দেখ প্রণ….প্রণয়,রিহুরা তোর জন্য গাড়ি ঠিক করতে গেছে।আমরা তাড়াতাড়িই হাসপাতালে যাবো।তু……তুই টেনশন করিস না।দা….দেখ মামা আমি আমি আছিতো।ঘাবড়াস না।তোর…..তোর কিছু হবেনা ট্রাস্ট মি!তোর কিছু হলে আমায় ডাকিনী কে ডাকবে?আমি তোর কিছু হতে দেবোনা।তুই শুধু চোখ খুলে রাখ”
মিরার পানে পলকহীন চেয়ে মৃদু হাসে অরণ।অতঃপর র*ক্তে আবৃত হাত মিরার গালে ছুইয়ে আস্তে আস্তেই বলে,
“চোখের সামনে এক সমুদ্র ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও অন্ধের ন্যায় এক ফোটা ভালোবাসার আশায় সারাটা জীবন বৃথা করে দিলাম রে ডাকিনী!আমার বোধহয় এ জী…জীবনে আর ভালোবাসা পাওয়াটা হবেনা।ভালোবাসাহীনই ম*রতে হবে।প্রেমটা যে আমার হয়েও হলোনা বাঘিনী।বলা হলোনা আমি…..”
আর বলতে পারলোনা অরণ।মিরার কোলেই মাথাটা শব্দ করে পড়ে গেলো।হাতটা হয়ে গেলো অসাড়!বুলি তার এলো ফুরিয়ে।অতঃপর শব্দ করেই ছিটকে পড়লো অরণের হাতখানা মিরার কোল ছুয়ে মাটিতে।র!ক্তে মাখোমাখো হয়ে গেলো মিরার সারা বদন!বুকে সেই অসহ যন্ত্রণা সহ্য হলোনা মিরার।দিন দুনিয়া ভুলে গিয়ে অরণের সারামুখে হাত বুলিয়ে সে বললো,
“অরণ?এই অরণ?ওঠনা।অরণ?অরণরে?”
“অরনের বাচ্চা!ওঠ বলছি।ওঠনারে!”
আরও অনেক্ক্ষণ ডাকার পরেও যখন অরণ উঠেনা তখন কান্নায় ভে!ঙে পড়ে মিরা বলে,
“অরণ?এই অরণ!শোননা।আমি না তোকে ভালোবাসি রে।অনেক ভালোবাসি অরণ!কেনো আমায় ভালোবাসলিনা?কেনো তোকে অন্য কাউকে ভালোবাসতে হলো?কেনো তুই আমার হলিনা?”
অতঃপর দু’হাতে জাপটে বুকের মাঝে আলিঙ্গন করে সে অরণকে।অরণকে জড়িয়ে ধরতেই আকস্মিক সমস্ত কিছু ঘোলাটে হয় সম্মুখে।পরপরই মিরার নজরে আসে রিহার র*ক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে আছে পাকা সড়কে।তৎক্ষনাৎ রিহাকে বুকের মাঝে জাপটে ধরে উচ্চস্বরে ডাকে মিরা,
“রিহা!
“রিহারে!”
“এই রিহা?”
“রিহা?রিহা,বোন?”
“ও রিহা!”
“রিহা!রিহা!রিহারে!”
অতঃপর রিহাকে জাপটে ধরে নিজেও জ্ঞান হারায় মিরা।সঙ্গে সঙ্গে তাকে জাপটে ধরে পাকা সড়কে গা এলিয়ে দেয় সে নিজের।
পরপর দু’টো তিক্ত দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ঘাম ছুটে যায় মিরার।বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠে সে।অতঃপর পাশেই বসে থাকা মলিন মুখশ্রীর রিদিকে দেখে মিরা বলে,
“রি…রিহু কোথায় রিদু?”
লম্বা শ্বাস টেনে অতি কষ্টে রিদি আওড়ায়,
“আপুকে জানাযা দিতে নেওয়া হয়েছিলো আপু!”
কপাল কুচকে অস্থির হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে মিরা বলে,
“ইম….রিহু রিহুকে ওরা নিয়ে গেছে?কেনো নিয়েছে?আমার রিহুর তো কিছু হয়নি।দেখি সরো,ওরা কি পাগল?”
মিরার দিকে ঘুরে তাকে ধরে শান্ত করার চেষ্টায় রিদি বলে,
“শান্ত হও আপু,তুমি শান্ত হও”
তৎক্ষনাৎ রিদির ফোনের রিংটোন বেজে উঠতেই পাশে রাখা ফোন হাতে নেয় সে।অতঃপর নজরে আসে ফায়ানের নাম্বার।রিদি তা রিসিভ করতেই অপরপাশের কথা শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“জ্ঞান ফিরেছে আপুর?”
রিদিকে অস্থির দেখে কপাল কুচকে তার পানে চেয়ে থাকে মিরা।অতঃপর রিদির অস্থির মুখশ্রী হঠাৎ মলিন হতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে রিদি?কার ফোন?”
লম্বা শ্বাস ফেলে রিদি বলে,
“আগে বলো হাইপার হবেনা প্লিজ!”
“কী হয়েছে?”
“প্লিজ তুমি নিজেই উইক আপু।অস্থির হবেনা প্লিজ”
বিরক্তিকর দৃষ্টি রিদির পানে নিক্ষেপ করে মিরা প্রশ্ন করে,
“বলবে তুমি?”
দৃষ্টি নত রেখে মিরার প্রশ্নের জবাব দেয় রিদি,
“পূর্ণ আপুর এক্সিডেন্ট হয়েছে।আপু হাসপাতালে,দুইদিন ধরে সেন্সলেস”
To be continued……
[বিঃদ্রঃএটা সম্পূর্ণ পর্ব নয়।পরবর্তীতে এর বর্ধিতাংশ দেবো।পর্বটা গতকাল রাতেই দেওয়ার ছিলাম তবে রিচেক দিতে গিয়ে মোবাইল হাতে নিই ঘুমিয়ে পড়ার দরুন দিতে পারিনি।অনেকেই অপেক্ষা করেছেন হয়তো।দুঃখিত!গল্পটা কাল্পনিক।ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]