আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ২৫.

2
1616

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৫.
“আমি এখনো একটা ছেলেকে অসম্ভবরকম ভালোবাসি”

বাক্যখানা কর্ণপাত হতেই পাশে বসা রুবা অরিনের পানে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিসহিতই চাইতে বাধ্য হয়।অতঃপর মৃদুশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করে,

“কাকে ভালোবাসতে আপু?”

দৃষ্টি দেয়ালে ঝুলন্ত সিলিং ফ্যানে নিবদ্ধ করে পা দু’টো বিছানায় মেলে ঠোটজোড়ায় মৃদু হাসি এঁকে জবাব দেয় অরিন,

“সে আমার হৃদয় হরণকারী প্রথম পুরুষ।প্রথম আর শেষ ভালোবাসা আমার সে ই”

“খুব ভালোবাসো তাকে?”

রুবার প্রশ্নে তার পানে খানিকের জন্য চেয়ে বালিশে হেলান দিতে দিতে অরিন বলে,

“তাকে ভালো না বাসলে দম বন্ধ লাগে রুবা”

“সে কি তোমায় ভালোবাসেনি?”

রুবার মলিনস্বরের বাক্যে তার পানে ফের চেয়ে হাসিমুখে অরিন বলে,

“আগে বেশ পাগলামি করেছি রুবা,ঠিক তোমার মতোই।তবে আমি ভুল ছিলাম।সে আমার জন্য কখনো তৈরিই হয়নি।যদি হতো অবশ্যই ভালোবাসতো আমায়।তবে সে ভালোবেসেছে তার অতি প্রিয় নারীকে।এবং এতটাই ভালোবেসেছে যে আমার পক্ষেও ততটা তাকে ভালোবাসা সম্ভব হয়নি।তবুও আমি তাকে ভালোবাসি।তার মতো প্রেমিক পুরুষকে ভালোবাসতে পেরেছি এইতো ঢেড়।নাইবা পেলাম তার ভালোবাসা।আমার ভালোবাসা,তার ভালোবাসার সাথে সুখে আছে আমি তাতেই তৃপ্ত”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে দৃষ্টি অরিন হতে সরিয়ে সম্মুখপানে করে রুবা বলে,

“আসলে আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমরা সর্বদা যা চাই তা পাইনা।সবসময় যা চেয়েছি সর্বচেষ্টায় পেয়েছিতো সেজন্যই পাগলামিগুলো বেড়ে গিয়েছিলো।মিস্টার চৈত্রের ভালোবাসাকে আমি সম্মান করি।সে অন্য কাউকে ভালোবাসলেও তার জীবনী টা ভিন্ন।এবং আমায় যে অতি যত্নের সহিত তা বুঝিয়েছে মুগ্ধ হয়ে শুনেছিলাম কেবল।এভাবেও বুঝি কাউকে ভালোবাসা যায়?তার প্রতি থাকা ভালোলাগাটা কবে যে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হলো বুঝতেই পারিনি।তোমার ন্যায় আমিও এক যুগ পর বলতে চাই ‘আমি এখনো একটা ছেলেকে অসম্ভবরকম ভালোবাসি’।তাকে ভালো না বাসার কতশত বাহানা খুঁজেছি।জানো আপু?আমার চৈত্র যেই মেয়েটাকে ভালোবাসে,সে মাত্রাতিরিক্ত লাকি।আমি যদি তার জায়গায় মিস্টার চৈত্রের জীবনে প্রথমে যেতাম কখনোই নিজ হতে তাকে দূর হতে দিতাম না।তার ভালোবাসা এতটাই স্নিগ্ধ যে বছরের পর বছর গড়ায় অথচ মেয়েটার প্রতি তার ভালোবাসা কমেনা।ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা না পাওয়া সত্ত্বেও সে তার রূপন্তিকাকেই ভালোবাসে।ইশ!আমি যদি তার প্রথম হতাম!শেষটা আমিই থেকে যেতাম আপু।মেয়েটা স্বেচ্ছায় এক আকাশ ভালোবাসা,বিশাল সুখের সমুদ্র হারিয়েছে।আমার মানতেও বেশ কষ্ট হয় কেউ কাউকে এতটা ভালোবাসার পরেও ভালো কী করে না বেসে বিনিময়ে দুঃখ দিতে পারে?রূপ মেয়েটা সত্যিই অভাগী,আবার ভাগ্যবতীও।চৈত্রের ন্যায় প্রেমিক পুরুষ সে পেয়েছে।যদি আমি সত্যিই তার হতাম‌!”

অতঃপর বুক চি*ড়ে রুবার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই শুনতে পায় অরিনের শীতল কন্ঠস্বর,

“রূপন্তিকা হা?”

মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেয় রুবা,

“হিম।ভালোবেসে তাকে রূপন্তিকা বলেই সম্বোধন করে সে।ভালো নাম রূপা”

“রূপার বদলে সত্যিই রুবা তার জীবনে প্রথম আসা উচিত ছিলো।তবে তুমি কেনো এতদূর চলে এলে?ভাইয়াকে ভালোবাসো না?”

ফের হতাশার শ্বাস ফেলে রুবা বলে,

“বাসি।তবে সে আমায় বাসেনা,হয়তো কখনো বাসতে পারবেও না।আমি চাইনি তার ভালোবাসার বদলে ঘৃণা অথবা বিরক্তির কারণ হতে।সে আমায় ভালো নাই বাসুক।সমস্তকিছু বাচ্চামেয়ের পাগলামি ভেবে ভুলেই যাক!সে নাহয় নাই জানুক তাকেও কেউ খুব করে চায়,ভালোবাসে।সেও যে কারো হৃদয়জুড়ে বসবাস করে তা হতে আজন্ম সে আড়ালেই থাকুক”

“মাসের পর মাস তাকে দেখোনা কষ্ট হয়না?”

“তুমিও তো দেখোনা,তোমার হয়না?”

“সেথায় অন্যের সাথে দেখার তুলনায় এখানে ঢেড় ভালো আছি।তারা সুখী হোক আমি তাই চাই”

“তুমি প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসো,আমি কি ঠিক?”

ঘাড় বাকিয়ে দৃষ্টি রুবার পানে স্থির করতেই কর্ণগোচর হয় ধীরস্বরের অপ্রত্যাশিত বাক্য,

“আমি জানি,লুকোতে হবেনা।বুঝি আপু”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরিন বলে,

“চাঁদ আপুই কেবল প্রণয়কে ডিজার্ভ করে।অন্য কেউ না রুবা”

“সে জানি আপু।তাদের দু’জনকে দেখলে যুগযুগ ধরে কেবল একজনকেই ভালোবেসে যেতে ইচ্ছা করে।তারাও তো বছরের পর বছর আলাদা থেকে,এত বাঁধা বিপত্তি পেরিয়েও একে অপরকে ভালোবেসেছে”

“হিম।তবে তুমি আমার সাথে এতদূর থাকার ডিসিশন না নিলেই পারতে।সেখানে থেকেও সুন্দর ক্যারিয়ার হতো তোমার”

লম্বা শ্বাস টেনে রুবা বলে,

“তার আশেপাশে থাকলে লুকিয়ে চুরিয়ে তাকে দেখার তীব্র বাসনা আজন্মই থেকে যেতো আপু।তাছাড়া আমার উপস্থিতি সে পছন্দ করেনা”

অতঃপর খানিক থেমে ফের বলে,

“তোমার আর আমার গন্তব্যতো একই।তোমার থেকে বেশকিছু শেখার আছে আমার।তুমি আমার আইডল আপু।জীবনের বাকি সময়টুকু তোমার সাথেই নাহয় কাটাই?”

রুবার গালে হাত রেখে মৃদু হেসে অরিন বলে,

“বোকা মেয়ে।জীবন থেমে থাকেনা”

“তোমারটা কেনো প্রণয় ভাইয়াতেই আটকে আছে?”

রুবার কথায় গাল হতে হাত আলগা হয় অরিনের।মুখশ্রী হয় থমথমে।দৃষ্টি নত করে অন্যপানে চাইতেই ফের শোনে রুবার শান্তস্বর,

“যা নিজের জন্য অসাধ্য,অন্যের জন্য সাধিত করতে চেও না”

অতঃপর নজরাবন্দী হয় কানে ইয়ারফোন গুজে বালিশে হেলান দেওয়া রুবাকে।রুবার চোখ বোজা দেখে তাকে আর বিরক্ত করতে ইচ্ছা হয়না অরিনের।ধীরপায়ে সে এগিয়ে যায় বারান্দার পাশের জানালা ধারে।অতঃপর লম্বা শ্বাস টেনে জানালা হতেই দূর হতে দূরান্তে কেবলই চেয়ে থাকে পলকহীন।পেরিয়ে গেছে মাস ছয়েকের বেশি সময়।যখন রুবাসহিত নিজেও রাঙামাটি বদলি হয়ে অরিন চলে আসে তার মাসখানেক পরেই জানতে পারে রিদির প্রেগন্যান্সি সম্পর্কে।তখন প্রথমবারের ন্যায় অবাক হয়েছিলো অরিন,যখন সে উপলব্ধি করতে পেরেছিলো বোকা রুবা সত্যিই বড় হয়ে গিয়েছে।নিজের সর্বপ্রিয় বান্ধবীর বিশেষ মুহুর্তে তার পাশে যাওয়ার ইচ্ছেটুকু বিন্দুমাত্র পোষণ করেনি।মেয়েটা কি ভয় পায়?ফের সেই মানবের সম্মুখে দাড়ালে শক্তপোক্ত সত্তাটা তার নড়ে যাবে বলে?নাকি দুর্বল হয়ে ফের কোনো ভুল কান্ড সে করে ফেলবে বলে?অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালার রেলিং ধরে মনে মনে অরিন শুধায়,

“ভালোবাসার বিনিময়ে কেনো ভালোবাসা পাওয়া যায়না?আমরা যাকে ভালোবাসি কেনো তারা সর্বদাই অন্যের ভালোবাসায় মত্ত হয়?”

কোনো জবাব মেলেনা অরিনের।বুক চি*ড়ে কেবলই তার দীর্ঘশ্বাসের মেলা বয়।অপরদিকে তারই বিপরীতে বিছানায় হেলান দেয়া রুবারও একই প্রশ্ন,

“ভালোবাসায় এত বিরহ কেনো?”

অতঃপর আঁখি বদ্ধবস্থায়ই কানের কাছে গুজে তার কিছু বিষাদময় পঙক্তি,

♪♪♪…দূর হতে আমি তারে সাধিব,
গোপনে বিরহডোরে বাধিব…♪♪♪

নিত্যদিনকার ন্যায় আজও চাঁদ হাসপাতালের ডিউটি শেষে কলেজে এসেছে সেকেন্ড আর থার্ড ইয়ারের ক্লাস দরুন।প্রথমে তার থার্ড ইয়ারের ক্লাসই থাকে।অতঃপর সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাস শেষে প্রণয়ের সাথেই ফেরত আসে চাঁদ।বর্তমানে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসেই সে বিদ্যমান।নিজ স্টুডেন্টদের লেকচার দিতে দিতেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় খানিকক্ষণ বসে থেকে হোয়াইটবোর্ডে লেখা লেকচারগুলো নোট করতে নির্দেশনা দিয়েছে তাদের।এরই মাঝে হঠাৎ সে প্রশ্ন করে,

“তোমাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কবে থেকে?ডাক্তার ব্যতীত অন্যকিছু হওয়া যেতো না?”

তার কথার প্রেক্ষিতে লেখা রেখে অনেকেই তার জবাব দিতে উদ্যত হতেই খানিক সোরগোলের আওয়াজ ভাসে কানে।মৃদু হেসে হাত উঁচিয়ে চাঁদ বলে,

“সাইলেন্ট।তোমরা কি এখনো বাচ্চা?একজন একজন বলো”

অতঃপর এক ছেলে হাত তুলে বলছে,

“ম্যা’ম আয় হ্যাভ আ কুয়েশ্চন”

চেয়ারে বসে থেকেই চাঁদ প্রতিত্তোর করে,

“ইয়েস,শিওর”

ছেলেটা বেঞ্চ হতে উঠতে গেলে চাঁদ বলে,

“দাড়াতে হবেনা,বসো”

“থ্যাংক ইউ ম্যা’ম”

বলেই ছেলেটা ফের বেঞ্চে বসে আমতা আমতা করে,

“আসলে ম্যা’ম আপনি কথাটা কীভাবে নেন বুঝতে পারছিনা!”

কপাল কুচকে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“কেনো কী বলবে?”

ছেলেটা হকচকিয়ে আমতা আমতা করেই বলে,

“আ….আসলে!আসলে ম্যা’ম….ম্যা’ম আপনি…..আপনি আমার…আপনি আমার ক্রাশ ম্যা’ম!”

শেষের বাক্যখানা বেশ তাড়াহুড়োয়ই আওড়ায় ছেলেটা।সঙ্গে সঙ্গে হাসির রোল পড়ে সেথায়।তবে নিমিষেই তা থেমেও যায়।ছেলের কথা শেষে হাসির উচ্চস্বর কর্ণগোচর হতেই বসা হতে দাঁড়িয়ে টেবিলের উপর কালোরঙা ডাস্টার দিয়েই শব্দ তুলে উচ্চস্বরে চাঁদ আওড়ায়,

“সাইলেন্ট!আয় সেইড সাইলেন্ট!”

তৎক্ষনাৎ নিস্তব্ধ হয় কামড়া।ছেলেটা নিজেও বেশ ভয় পাচ্ছে।দৃষ্টি তুলে চাঁদপানে দূর কোনোদিকেই তাকাতে সে সক্ষম হচ্ছেনা।অতঃপর চাঁদের গম্ভীরস্বর কানে ভাসতেই ঢোক গিলে ছেলেটা,

“নাম কী তোমার?”

“রা…রাফি রাফি ম্যা’ম”

“আমি তোমার ক্রাশ?”

মাথা তুলে হকচকিয়ে রাফি বলে,

“জা….জ্বি….না।না মানে….না….না আসলে…ম্যা’ম ম্যা’ম…..”

কথার মাঝেই কথা বলে চাঁদ,

“তো রাফি,তুমি কি জানো আমি কার ওয়াইফ?”

“জা…জ্বি ম্যাম!প্রণয় স্যারের….আই মিন ভাইয়ার!”

“এক্সেক্টলি‌!আর প্রণয় যদি জানে তুমি তারই ওয়াইফের উপর ক্রাশ খেয়েছো এবং তা কনফেজডও করেছো কী হবে তোমার বলোতো?”

ছেলেটা মাত্রাতিরিক্ত ভয়ে তুতলিয়ে বলে,

“সা…সা..সরি ম্যা’ম!ভেরি সর….”

অতঃপর কর্ণগোচর হয় চাঁদের উচ্চশব্দের হাসির স্বর,

“কিছুই হবেনা!ক্রাশ খেতেই পারো নট আ বিগ ডিল।তবে আমি তোমার তুলনায় একটু বেশিই সিনিয়র।বসো,ভয়ের কিছু নেই”

অতঃপর তৎক্ষনাৎ কিছু মেয়েলি স্বর ভাসে চাঁদের কানে,

“ম্যা’ম আপনি কিন্তু তত বড় নন যতটা বোঝাচ্ছেন।যথেষ্ট ইয়াং আপনি,আর প্রণয় স্যারতো উফ!”

মেয়েদের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীরস্বরে আওড়ায় চাঁদ,

“প্রণয় স্যার কী?”

“কা…কিছুনাতো ম্যা’ম!”

“নজর সঠিক করবে।বিশেষ করে আমার প্রণয় হতে নজর যথেষ্ট বাঁচিয়ে রাখবে।ভুলবশতও যদি তার দিকে নজর চলেও যায় দশবারের বেশি ‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া,আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া’ বলে স্মরণ করবে।ওয়েল,অনেক আউট টপিকে কথা চলেছে।ফারদার কারো কাছ থেকে অদ্ভুত কোনো কথা শুনতে ইচ্ছুক নই।লেকচার নোটেড রাখবে।মঙ্গলবার টেস্ট নেবো।আসছি”

বলেই হাতে ব্যাগ সহিত ক্লাস হতে বেরুতে নিলে আকস্মিক মাথা চক্কর দেয় চাঁদের।সেথায়ই সে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে অবচেতন হয়।হঠাৎ চাঁদের সেন্সলেস হওয়ায় সকলেই হকচকায়,ভয় পায়।অতঃপর ধরাধরি করে রেস্টরুমে চাঁদকে নিয়ে আসতেই খবর পেয়ে ছুটে আসে হাসপাতাল হতে প্রণয়।আসে অরণ আর মিরাও।দু’জনই হাসপাতালে ছিলো।অগ্যতা তাদের কানেও খবর গিয়েছে।

বর্তমানে চাঁদ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে গাইনী সেক্টরেই কেবিনের ভেতর শোয়াবস্থায় সেন্সলেস রয়েছে।এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।প্রণয় আর মিরাই কথা বলছে ডাক্তারসহিত।অরণ বাইরে বসে তাদের অপেক্ষারত।ডাক্তারের সাথে কিছু কথা শেষে মিরাকে বাইরে পাঠিয়ে নিজেই ডাক্তার সহিত আলোচনা করে প্রণয়,

“চাঁদের বেশ কয়েক মাস ধরেই প্রবলেম হচ্ছে।তাছাড়া আপনাকেতো ইনফর্ম করা হয়েছে মিসক্যারেজের সময় অপারেশনে তার গর্ভাশয়টা ফে!লে দেয়া হয়েছিলো।আপনি বলেছিলেন বিশেষ কোনো প্রবলেম হবেনা।তাহলে এত সমস্যা দেখা দিচ্ছে কেনো?স্টিল তার জ্ঞান ফেরেনি,কাইন্ডলি চেক করুন।আদারওয়াইজ অন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে”

“ডোন্ট বি হাইপার ডক্টর প্রণয়।দেখছি,চিন্তা করবেন না।গ*র্ভাশয় না থাকলে বাচ্চা প্রাসঙ্গিক বিষয় ব্যতীত অন্য কোনো প্রবলেম তো আদোতে হওয়ার কথা না।তবুও আমরা চেষ্টা করবো।আপনি চিন্তিত হবেন না”

“চিন্তামুক্তও হতে পারছিনা।চেষ্টা না,যা করার দ্রুত করুন”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদের প্রেগন্যান্সির খবরে বাকিসবাই খুশিতে পুলকিত হলেও চাঁদ আর প্রণয় নিজেই গম্ভীর।তাদের ধারণামতে এমনটা হওয়ার কথা না,কস্মিনকালেও তা সম্ভব না।চিন্তিত তাদের সহিত অরণও।কোনোভাবেই কোনোকিছুর গরমিল মেলানো যাচ্ছেনা।পূর্ণতা যদি চাঁদের গর্ভাশয় ফে!লেই দেয় তবে চাঁদ প্রেগন্যান্ট হয় কী করে?ভুলবশত প্রণয় কি ফের চাঁদকে সন্দেহ করবে?অথবা তাদের সাংসারিক জীবনে আর কোনো সমস্যা হানা দেবে কি?নানান কিছু চিন্তার দরুনই সে চৌধুরী বাড়ি প্রণয়ের সাথে দেখা করার তাগিদে হাজির হয়েছে।আপাতত প্রণয়ের থেকে কোনোপ্রকার ভুলভাল সিদ্ধান্ত সে মানতে ইচ্ছুক নয়।

হলরুমে সোফার উপর বসেছিলো অরণ।বেশকিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খানিক বিরক্ত হয়েই এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতেই বাগানের দিকে হঠাৎ মন টানে তার।অগ্যতা বাগানপানে ছোটে সে।অতঃপর খালি পায়ে কিয়ৎক্ষণ সেথায় হাটতে হাটতেই পায়ে কিছু বিধলে পা উঁচাতেই নজরে আসে পায়ে তার কাচ বিধে কে*টে গিয়েছে।কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে আশপাশ খুঁজে ঝোপের আড়াল হতে ভাঙা এক ফটোফ্রেম নজরাবন্দী হয় অরণের।এবং সে তা হাতে নিতেই পূর্ণতার হাস্যোজ্জ্বল এক ছবি দৃষ্টি সম্মুখ ভাসে।খানিকের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরের দিকে চাইতেই দৃষ্টি যায় প্রণয়ের বারান্দা পানে এবং কোনোপ্রকার অসুবিধা তার হয়না ছবিটা যে আক্রোশে প্রণয়ই ফেলে দিয়েছে।সযত্নে ভেঙে গুড়ো হওয়া ফ্রেমটা হাতে তোলে অরণ।কাদামাটি ছবিতে যদিও বা পড়েছে,সে সেটা নিয়েই ফের হলরুমে ফেরত আসে।অতঃপর সোফায় বসে হাত দ্বারাই তা পরিষ্কার করতে আরম্ভ করে।

রিদির ডেলিভারি ডেট দিন পঁচিশেক পরে দেওয়া হয়েছে বিধায় মিরের বদলে রিদির সহিত এখন মিরাই থাকছে।এতদিন বন্ধুর বাসায় পড়ে থাকা বেশ দৃষ্টিকটুই ঠেকে মিরের নিকট।মূলত ভাইয়ের জন্যই মিরার চৌধুরী বাড়ি আসা।চাঁদ আর প্রণয়ের জন্যও বেজায় খুশি সে।সেদিন হাসপাতাল হতে ফেরত এসে মিরাই চাঁদের প্রেগন্যান্সির বিষয়টা সকলকে জানিয়েছিলো।তবে বাকিরা খুশি হলেও খুশি ছিলোনা প্রণয় আর চাঁদ।বেশ গম্ভীরই নজরে এসেছে তাদের।রিদির জন্য দুধ গরম করতে গিয়ে চাঁদের জন্যও করে মিরা।অতঃপর এক গ্লাস চাঁদকে দিয়ে নিচে এসে রিদির রুমের দিকে এগোতে নিলে নজরে আসে হলরুমে বসে থাকা অরণপানে।হাত দিয়ে কিছু একটা করছে সে।কপাল কুচকে অরণের পিছু হতে উঁকি দিতেই নজরে আসে অতি সাবধানে পূর্ণতার ছবিতে হাত বুলাচ্ছে অরণ।বুকের ভেতর হঠাৎ করেই যন্ত্রণার উৎপাত হয় মিরার।হঠাৎ ই হৃদয় অশান্ত হয় তার।আজও ছেলেটা এই এক মেয়েকেই ভালোবেসে হৃদয়ে আগলে রাখে স্মৃতি,ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ভাসে মিরার।খানিকের জন্য টলমলায় সে।হাতে থাকা গ্লাসদু’টো পড়ে যেতে নিলে ট্রেতেই সামলে নেয় মিরা।কোনোকিছুর আওয়াজ পেয়ে পিছু ঘুরে চাইলেই মিরার অবয়ব নজরে আসে অরণের।অতঃপর ভালো করে সে পানে তাকাতেই মিরার সিক্ত আঁখিজোড়া এড়ায় না তার।হকচকিয়ে পিছু ঘুরে মিরাকে সে বলে,

“তুই যেরকম ভাবছিস সেরকম কিছু না মিরু”

সামান্য হেসে মিরা বলে,

“কোথায় কিছু ভাবছি?কিছুই ভাবছিনা।তুই বস আমি আসি,রিদুকে গ্লাসটা দিয়ে আসি”

বলেই পিছু ঘুরে যেতে নিলে সোফার অপরপাশ দিয়েই হাত ধরে মিরার অরণ।কপাল কুচকে মিরা বলে,

“গ্লাসদু’টো পড়ে যাবে।বললাম তো আসছি,তুই বস”

“কোথাও যেতে হবেনা।এদিকে দে”

বলেই অপরহাতে ট্রে নিয়ে সোফার উপর রেখে মিরার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার কব্জি ধরাবস্থায়ই অরণ বলে,

“কাদছিস কেনো বোকা?”

দৃষ্টি আড়ালের চেষ্টায় ইতস্তত করে মিরা বলে,

“কোথায় কাদছি?কাদবো কেনো আমি?ছাড়,যাবো”

বলেই অরণ হতে হাত ছাড়াতে চাইলে বাম হাতের তর্জনী এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মিরার থুতনী চেপে তা উঁচিয়ে চোখে চোখ রেখে অরণ বলে,

“এদিকে তাকা,তাকা বলছি।দেখ মিরু আমি পূর্ণকে ভালোবাসিনা।তুই….. ”

অপর হাত দিয়ে অরণের হাত থুতনী হতে সরিয়ে মিরা বলে,

“আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি?তুই কী করিস না করিস আমি তা জানতে ইচ্ছুক নই।ছাড়”

“এদিকে তাকা।তাকাতে বলেছি মিরা”

অরণের গম্ভীরস্বরে তার পানে না চাইতেও দৃষ্টি স্থির হয় মিরার।অতঃপর শান্তস্বরে অরণ বলে,

“পূর্ণর ছবিটা আমি বাগানে পেয়েছি,ভাঙাবস্থায়।সেখান থেকেই তুলেছি।এর বেশি কিছুনা মিরু”

“আমি এক্সপ্লেনেশন চেয়েছি?”

“কথা শেষ হতে দে।তোর মতো বোকাপ্রাণী আদোতে আমি দেখিনি।ডাকিনী হতে ভেজা বিড়ালিনী হয়ে গেছিস পুরোই!”

“অযথা বাজে বকবিনা।হাত ছাড়তে বলেছি আমি”

“আমার শোকে কি তুই এই আট বছরে সত্যিই বোকা হয়ে গিয়েছিস মিরু?”

কপাল কুচকে অরণপানে চেয়ে মিরা বলে,

“তোর জন্য শোকাহত হতে আমি বসে রয়েছি তো”

“তাই ই মনে হচ্ছে।এতটাই বোকা হয়েছিস যে এখনো অব্দি কিছুই বুঝতে পারিস নি”

“কী বুঝিনি আমি?”

“তোকে যা বোঝানোর চেষ্টা করেছি”

“দেখ অরণ,মেজাজ এমনিতেই ভালো নেই।ছাড় ভালো লাগছেনা”

“ছেড়ে দেবো তবে শেষবারের ন্যায় তোকে কিছু বাক্য আওড়িয়েছিলাম আমি।মনে আছে?নাকি আমার ম*রণশোকে সব ভুলে বসেছিলি?”

মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় মিরা,

“তুই ছাড়তো অরণ”

বলেই হাত ছাড়াতে নিলে অরণও মিরার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,

“নে ছেড়ে দিলাম”

অতঃপর সত্যি সত্যি মিরা চলে যেতে নিলে একহাতে ফের তার কব্জি চেপে নিজের দিকে টেনে অপরহাত কোমড়ের কাছে রেখে আলতো চেপে বুকের কাছে ঠেকিয়ে মিরার চোখে চোখ রেখে শীতলস্বরে অরণ আওড়ায়,

“এই মিরু,প্রণয়ের মামি হবি তুই?”

To be continued……

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here