আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ০৭.

0
746

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৭.
সবে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে ধরণীতে।গগণে মৃদু কালচে এবং কমলাটে ভাব বিদ্যমান।মৃদু হিমশীতল বাতাসও বইছে চারিপাশজুড়ে।পাখির কিচিরমিচির হয়তোবা দু’একটা ভেসে আসছে কর্ণকুহরে সঙ্গে ফজরের আযানের সুমধুর ধ্বনি।চট করেই ঘুম উবে যায় চাঁদের।সে অস্থির মনা হয়ে উঠেছে নিমিষে।মৃদু ঘেমেও গিয়েছে।তাই দ্রুত উঠে বসে ওড়না দ্বারা চোখমুখের ঘাম মুছে বিছানা ছেড়ে উঠে আসে বারান্দায়।অতঃপর কিয়ৎক্ষণ সেখানে থেকে ওযু করে নামাজের জন্য দাড়াতে গিয়েও তার মস্তিষ্ক তাকে স্মৃতিচারণ করায় তার আর প্রণয়ের একইসঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ার মুহুর্তসমূহ।অতঃপর চোখজোড়া বুজে লম্বা শ্বাস ফেলে নামাজের জন্য দাঁড়ায় সে।

সকাল সাতটা,
রুবার চেচানোর দরুন পুরো বাড়ির সকলে একত্রিত হয়েছে চৌধুরী বাড়ির হলরুমে।খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়েছে চৈত্রও।চাঁদকে পাওয়া যাচ্ছেনা জানার পরপরই এসেছে মির,রিহা এবং মিরাও।তাদের সকলের আলোচনার মধ্যমণি রূপে বসে আছে রুবা।সকলে তাকে একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুবা তার মৌনতা ভেঙে মুখ খুলে,

“ভোরের দিকে একবার দেখেছিলাম ভাবি নামাজ পড়ছে।এর ঘন্টাখানেকের মাঝেই চোখ লেগে গিয়েছিলো উঠে দেখি ভাবি কোথাও নেই।পুরো বাড়ি খুঁজেছি আমি কোথাও পাইনি”

শেষের কথাটুকু বলে হতাশার শ্বাস ফেলে রুবা।আর গম্ভীরভাবে মির বলে,

“কিন্তু এত ভোরে যাবেই বা কোথায়?প্রণয়ের সাথে দেখা করতে?”

জবাব আসে চৈত্রের কাছ হতে,

“খবর নিয়েছি থানায়ও যায়নি”

“তাহলে?”

তখনই দরজার কাছ হতে ভেসে আসে অরণের ভাবুক কন্ঠস্বর,

“আমি জানি কোথায় গিয়েছে অথবা যেতে পারে।তবে তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে তাই ভাবছি”

অরণের কন্ঠস্বর কর্ণগোচর হতেই তার পানে তাকায় সকলে।চাহনী নিক্ষেপ করে মিরাও।অতঃপর পরক্ষণেই দৃষ্টি নত করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।আর অরণের কথার প্রেক্ষিতে তার নিকট প্রশ্ন ছুড়ে চৈত্র,

“কোথায় গিয়েছে বলে ভাবছো?”

তৎক্ষণাৎ আশেপাশে নজর বুলিয়ে কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে মিরের পানে চেয়ে অরণ বলে,

“রিদি কোথায় মির?ওকে একা রেখে এসেছিস তোরা?”

“না,মা আছেন ওর সাথে।তাছাড়া ও তো কলেজে যাবে সেজন্যই আমি আর ডাকিনি।এমনিতেই প্রণয়কে নিয়ে চিন্তিত”

দ্রুতগতিতে মিরের নিকট এগিয়ে এসে তার কাধে হাত রেখে অরণ বলে,

“তোর বাড়ি চল।কিন্তু রিদি কি জানবে?আচ্ছা ফায়ান কোথায়?ওর তো জানার কথা।কোথায় ও?”

রিহা জবাব দেয়,

“এই মুহুর্তে অবশ্যই ওর বাসায় থাকবে”

“তোরা কেউ চাঁদের কথা ওকে বলিস নি?”

মিরের সোজাসাপটা জবাব,

“মনে ছিলোনা”

এবারে অরণ চৈত্রের দিকে চেয়ে বলে,

“ভাইয়া আপনি একটু কষ্ট করে ফায়ানকে নিয়ে ইমিডিয়েট আমাদের কলেজে আসতে বলবেন প্লিজ”

চৈত্রের প্রশ্ন,

“কলেজে কিন্তু কেনো?”

“ওকে নিয়ে আসুন আগে।এই রিহা,মির,মিরু চল”

বলেই দ্রুত পা চালায় অরণ।আর অরণের মুখে বহুবছর পর ‘মিরু’ ডাক শুনে হৃদস্পন্দন হঠাৎ ই তীব্র হয় মিরার।সে কোনোকিছু ভাবার অপেক্ষাটুকুও করতে পারলোনা তার চরণ যুগোল যেনো তার মনের উপর কর্তৃত্ব দখল করেছে।একা একাই ছুটে চলেছে বন্ধুদের পিছু।আর অপরদিকে চৈত্রও যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে নিলে তার ঢিলেঢালা টি-শার্টের এক কোনায় টান লাগে।বিরক্তিতে কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে সে পানে তাকাতেই চৈত্র দেখতে পায় রুবা তার টি-শার্টের কোনা ধরে রেখেছে।সহসাই বিরক্তিসহ রাগও উঠলো চৈত্রের।তবে নিজেকে যথেষ্ট সামলে গম্ভীরকন্ঠে সে বললো,

“আমার গায়ে কারো স্পর্শ আমি পছন্দ করিনা মিস রুবা।বিশেষ করে মেয়ে মানুষের”

রুবাও বেশ ধীর কন্ঠে দৃষ্টি নত রেখেই বললো,

“কিন্তু আমিতো আপনার গা ছুইনি।টি-শার্ট ধরেছি”

আকস্মিক রুবার হাত নিজের টি-শার্ট হতে ঝাপটিয়ে ছেড়ে অতি রুক্ষ কন্ঠে চৈত্র বললো,

“তর্ক-বিতর্কও আমার অপছন্দের তালিকায়”

অতঃপর চলে যেতে নিলেই বেশ করুন কন্ঠে রুবা বলে,

“প্লিজ যাবেন না”

কপাল কুচকে ফের রুবার পানে চৈত্রের তাকাতেই রুবা দৃষ্টি এবং মস্তক দু’টোই নত রেখে বললো,

“আমিও আপনার সাথে যাবো মিস্টার চৈত্র”

তৎক্ষণাৎ ভড়কায় চৈত্র,

“আর ইউ ইনসেন অর হোয়াট?”

এবারে হঠাৎ রুবার দাঁড়িয়ে চৈত্রের বেশ সন্নিকটে থাকায় হকচকিয়ে পিছু চাপে চৈত্র।আর রুবা তার চোখে চোখ রেখে তেজী কন্ঠে বলে,

“চাঁদ ভাবি কেবল আপনারই বোন হয়না।সে আমারও কিছু লাগে।সে আমার ভাবি এবং আমার বড় বোনের চেয়েও বেশি।তাই হয় আপনি আমায় আপনার সাথে নেবেন নয়তো আমি নিজেই কলেজে যেতে পারি।আয় ডোন্ট নিড ইউ”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সকলের দ্বারে দ্বারে খোঁজার চেষ্টা করেও কোথাও একটা ভরসার স্থল খুঁজে পায়না চাঁদ।হতাশ ভঙ্গিতে ক্যাম্পাসের একপাশে ধপ করে বসতেই তার মনে হয় দুনিয়াটা সত্যিই বড্ড নিঠুর,সেইসঙ্গে নিঠুর এই ধরণীর মানুষগুলো।বিধাতাও বা কি কম নিঠুর?তিনি যদি নিঠুর না হতেন তবে তার অতীত কি এতটাই বি!শ্রী হতো?আর সেই অতীতের প্রভাব বর্তমানে কেনোই বা পড়তে হলো?এরূপ নানান কিছু চিন্তা করতে করতেই তার স্মরণে আসে এখন সে আর একা নয়,তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আরেকটি প্রাণ।তার প্রণয় আর তার ছোট্ট অংশ তার মাঝেই বেড়ে উঠছে।তাকে কি করে কষ্ট দেবে সে?অতঃপর চট করেই পেটে হাত রেখে আকাশপানে দৃষ্টি রেখে দাঁত দ্বারা ঠোট কামড়ে ধরতেই বুক চি!ড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে চাঁদের।এবং মনে পড়ে সেই যে ভোরে বেরিয়েছে দুপুরের আযান দিয়ে দিয়েছে এখন পর্যন্ত সে কিছু খায়নি।তার জন্য বাচ্চাটাও না খেয়ে আছে ভাবতেই নিজেকে শক্ত করে উঠে দাড়াতে চাইলো চাঁদ।তবে মাথা চক্কর দিতেই সে বসে পড়লো আবারও।কিয়ৎক্ষণ বসে থেকে নিজেকে সামলাতে সামলাতে পাশে কেউ এসে বসলো।সে স্পষ্ট টের পেলো কেউ এসেছে তবে সে পানে চাইলো না।হঠাৎ করেই পেটে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হচ্ছে।চাঁদ কেবলই দাঁত খিচে পরনের কামিজের দুইপাশ দুই হাত দ্বারা চেপে ধরলো।আর চোখ খুললো কোনো মেয়েলি কন্ঠস্বরে,

“কী হয়েছে আপু?আপনি কি অসুস্থ?”

বেশ কষ্ট করেই চাঁদ বললো,

“না তেমন কিছুনা”

“কিন্তু আমিতো তাই দেখছি।আপনি আমায় বলুন যদি হেল্প করতেই পারি”

এবারে চাঁদ তার পানে চেয়ে থেকে প্রশ্ন করলো,

“আপনি কোন ইয়ার?”

মেয়েটা মৃদু হেসে বললো,

“ফাইনাল ইয়ার আপু।কিন্তু আপনি এখানে কী করছেন?”

চাঁদের চোখজোড়া চকচক করে উঠলো এবং সে দ্রুতই জিজ্ঞেস করে বসলো,

“ফাইনাল ইয়ার?আচ্ছা আপনি কি লিমা কে চেনেন?ব্যাচ ‘তেরো এর?খুব সম্ভবত ডাক্তার হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে”

মেয়েটা ভাবুক হয়ে বলে,

“ব্যাচ ‘তেরো?ইম……..আমি যখন ফার্স্ট ইয়ারে তখনই ব্যাচ ‘তেরোর বিদায় হয়েছিলো তবে লিমা?চিনতে পারছিনা।একটু ডিটেইলে বললে হয়তো হেল্প করতে পারতাম”

অতঃপর চাঁদ তাকে লিমার গড়নসহ যা যা জানতো সমস্ত কিছুই বর্ণিত করার পরেও যখন মেয়েটা লিমাকে চিনতে পারেনা তখন হতাশ হয়ে ফের আশাহত হয় চাঁদ।চাঁদের মলিন মুখশ্রী দেখে মেয়েটা তাকে প্রশ্ন করে,

“আপনি কি কোনোকিছু নিয়ে ডিপ্রেসড আপু?”

নিজেকে সামলে চাঁদ বলে,

“না তেমন কিছু না।থ্যাংক ইউ”

বলেই উঠে চলে যেতে নিলে মেয়েটা ফের জিজ্ঞেস করে,

“লিমা মেয়েটার ছবি আছে আপনার কাছে?বেশ কয়েকজনকেই চিনতাম।হয়তো হেল্প করতেও পারি”

চাঁদ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,

“দাড়ান”

অতঃপর মোবাইল বের করে মিনিট দশেকের ন্যায় ঘাটাঘাটি করে হঠাৎ চেচিয়ে বলে,

“হ্যা হ্যা!পেয়েছি।এই যে এই মেয়েটা”

চাঁদের ফোনে লিমার ছবি দেখে মেয়েটা ভাবুক হয়ে বলে,

“হ্যা এই আপুটাকে তেমনভাবে চিনিনা তবে আমার পরিচিত এক আপুরই ফ্রেন্ড হয়”

চাঁদ মেয়েটাকে অনুরোধ করে,

“প্লিজ আপনার ফ্রেন্ডের নাম্বারটা দিন অথবা একটু লিমার নাম্বার অথবা এড্রেসটা একটু মানে…..”

“আচ্ছা দাড়ান আমি দেখছি।হাইপার হবেন না”

“আমাকে একটু ক্যান্টিনে নিয়ে যাবেন প্লিজ?”

“হ্যা অবশ্যই”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“আগামীকাল বাদ জুমা আপনার ফা*সি কার্যকর হবে মিস্টার প্রণয়।আপনার কী অভিমত?আই মিন শেষ ইচ্ছা?কারো সাথে দেখা করতে চান?বিশেষ কেউ?”

হাজতের বাইরে থাকা লোকটার কথা শুনে মৃদু হেসে তার পানে এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর হাজতের এবং লোকটার দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে শিক গুলোর সঙ্গে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দৃষ্টি পাকাতে সীমাবদ্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরকন্ঠে বলে,

“বিশেষ কারো সাথে বিশেষভাবে দেখা করার ইচ্ছা নেই স্যার।একচুয়ালি কারো সাথেই কোনোপ্রকার দেখা-সাক্ষাৎ এর ইচ্ছা নেই।বরং খুশি হবো যদি কেউ আমার সাথে দেখা করতে চাইলে তাকে যেনো আসতে দেয়া না হয়।এবং এটা আমার বিশেষ নিবেদন অথবা অনুরোধই ধরতে পারেন”

To be continued…..

[বিঃদ্রঃপর্ব হয়তোবা ছোট হয়েছে,দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here