#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
০৮.
“আই আম সরি।আমি তোমার কোনো হেল্পই করতে পারবোনা”
লিমার গুরুগম্ভীর ভঙ্গি মোটেও পছন্দ হয়না চাঁদের।তাই সেও বেশ গম্ভীরভাবে বলে,
“তুমিতো ‘রাজ ভিলা’ সম্পর্কে সব জানো।তাহলে হেল্প করতে সমস্যাটা কোথায়?নাকি তোমার সত্যিটা সামনে আসবে বলে এমন করছো?”
চাঁদের মুখে এরূপ কথা শুনে কিয়ৎক্ষণ তার পানে চেয়ে থেকে লিমা বলে,
“হ্যা সেজন্যই চাচ্ছিনা।আর আমি সবকিছু বললেও বা কী হবে?তোমার কি মনে হয় প্রণয় ভাইয়াকে ওরা ছেড়ে দেবে?যত যাই হয়ে যাক তারা তাকে ছাড়বে না,হতে পারে ফা*সির বিষয়টা বহালই……. ”
তৎক্ষনাৎ চেচায় চাঁদ,
“শাট ইওর মাউথ!”
ধীরকন্ঠে লিমা বলে,
“এটা তোমার বাড়ি না,হাসপাতাল এবং আমার কেবিন সো চিল্লিয়ো না।আর চেচালেই সত্যিটা বদলে যাবেনা যে তোমার স্বামী একজন খু*নী।আর আমিই বা কেনো শুধু শুধু নিজের অতীতসমূহ এমন ঠুনকো এক পরিস্থিতির জন্য সামনে এনে নিজের ক্ষ!তি করবো?”
“ছিহ!”
ব্যাস এইটুকু বলেই সেখান থেকে দ্রুতগতিতে উঠে আসে চাঁদ।আর তার পানে একধ্যানে চেয়ে থাকে লিমা।নিজেকে তার বেশ অসহায় মনে হয়।সে কেবলই হতাশার শ্বাস ফেলে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
চাঁদকে কোথাও না পেয়ে বেশ অস্থির চিত্ত হয়ে উঠেছে সকলে।একেক জন একেক দিকে খুঁজে চলেছে।ফায়ান আর অরণ গিয়েছে লিমার হাসপাতালে কেনোনা সন্দেহটা সেখানেই প্রগাঢ়।মির,মিরা কলেজেই খোঁজাখুঁজি চালাচ্ছে।অপরদিকে চৈত্র আর রিহা সিদ্ধান্ত নেয় তারা থানার দিকটায় যাবে।তারা রওয়ানা হতে নিলেই রুবা বাঁধা প্রদান করে বলে,
“আমিও যাবো আপনাদের সাথে”
এবারে মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় চৈত্র।অগ্যতা রূঢ় আচরণ করে বসে সে রুবার সঙ্গে,
“বেয়াদবির একটা সীমা থাকা উচিত মিস রুবা”
কথাখানা শেষ করতে করতেই রুবার পাশে দাঁড়ানো রিহার কব্জি ধরে পা চালিয়ে বলে,
“চলুনতো রিহা”
রিহাকে টানার সময় রিহার বাহুর সঙ্গে ধাক্কা লেগে রুবা পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলায়।অতঃপর রিহা আর চৈত্রকে একসাথে যেতে দেখে থমকায় রুবা।চোখের পলক থামে,দৃষ্টি তার স্থির হয় রিহার কব্জিতে চৈত্রের হাত ধরার দৃশ্যে।সে পানে তাকাতে তাকাতেই হঠাৎ তার দৃষ্টি যায় রিহার আঁখিজোড়ায়।তারও পলক থেমেছে,আঁখিপল্লব সীমাবদ্ধ হয়েছে চৈত্রের মুখশ্রীপানে।হঠাৎ করেই রুবার হৃদয় কেউ খা!মচে ধরলো।চাপা এক ব্যথা অনুভূত হচ্ছে সেথায়,নেত্রদ্বয় খানিক জ্বলছেও।অতঃপর দৃষ্টি তার ঘোলাটে হয়ে আসলো।তাৎক্ষণিক নিজ দেহখানা ঘুরিয়ে অপরদিকে মুখ করলো রুবা,দৃষ্টি তার গিয়ে ঠেকলো দূর ঐ ঘাস পানে।
ফায়ান আর অরণ এসেছে লিমার হাসপাতালে।তার কেবিনের কাছে এসে বারদু’য়েক দরজায় ঠকঠক আওয়াজ তুলতেই ভেতর থেকে লিমার শান্ত কন্ঠস্বর ভেসে আসে,
“কাম”
অতঃপর প্রথমে ফায়ানই এগোয়।ফায়ানের পিছু আসে অরণও।ফায়ানকে দেখে লিমা খানিক কেশে বলে,
“ডক্টর ফায়ান?”
“জ্বি ডক্টর লিমা”
“হঠাৎ এখানে?”
তখনই পেছন থেকে অরণ সামনে আসতে আসতে বলে,
“তোমার একটা ফেভার লাগবে লিমা”
অরণকে দেখে আঁখিজোড়া থমকায় লিমার।চোখ তার বড় বড় হয়ে আসে।অতঃপর সে বলেই বসে,
“ভাইয়া আপনি?আপনি ঠিক আছেন?”
অরণ মৃদু হেসে বলে,
“কেন?ঠিক না থাকার কথা ছিলো নাকি?”
“না,না।সেটা বলিনি”
কপাল কুচকে অরণ বলে,
“এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি বসতে বলবেও?”
“হ্যা,জ্বি জ্বি বসুন ভাইয়া”
লিমার সম্মতিতে অরণ,ফায়ান দু’জনই লিমার সামনাসামনি রাখা দু’টো চেয়ারে বসে।অতঃপর লিমা প্রশ্ন করে,
“কীসের ফেভার ভাইয়া?”
ফায়ান জবাব দেয়,
“তার আগে বলুন চাঁদ এখানে এসেছিলো কিনা?”
কপাল খানিক কুচকে উত্তর দেয় লিমা,
“হ্যা এসেছিলো তো”
“কখন?”
“এইতো আপনারা আসার ঘন্টাখানেক আগেই।অথবা তারও কম”
হঠাৎ ই অরণ লিমার টেবিলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বারি দিয়ে বলে,
“শিট!”
অতঃপর দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
“কোথায় গিয়েছে জানো?”
“সেটাতো জানিনা।কিন্তু কী হয়েছে ভাইয়া?”
ফায়ান বলে,
“প্রণয় ভাইয়ার কথাতো জানেনই।চাঁদ সেই ভোরে বের হয়েছে।কোথায় যাচ্ছে,কী করছে কিছুই বুঝতে পারছিনা”
গম্ভীরভাবে লিমা বলে,
“আই গেস প্রণয় ভাইয়াকে ছাড়ানোর পথ খুঁজছে।বাট ইটস টোটালি ইউজলেস।আই মিন খু*নের আসামীকে কি মাফ করে?এরকম নিয়ম আমি হয়তোবা শুনিনি”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,
“ও হয়তো ভেবেছিলো তুমি সত্যিটা স্বীকার করলে প্রণয়ের ফা*সিটা হতোনা”
“এমনটা সত্যিই যদি হতো আমি অবশ্যই করতাম ভাইয়া।তবে আজই শেষদিন।এখন আসলে কিছু থেকেই কিছু সম্ভব না।আমি সত্যিই দুঃখিত”
“ইটস ওকে”
অতঃপর ফায়ানকে নিয়ে বের হয়ে আসে অরণ সেখান হতে।হাসপাতাল থেকে বের হতে হতেই রাস্তার দিকে দৃষ্টি রেখে বেশ করুন কন্ঠে অরণ বলে,
“আমি কী করবো ফায়ান বলতে পারো?”
অরণের কথা শুনে তার পানে বেশ অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় ফায়ান।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
হাটতে হাটতেই অরিনের থানার ভেতর প্রবেশ করে চাঁদ।মুখ তার মলিন,শুকনো।চুলগুলো বেশ অগোছালো হয়ে আছে।দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব স্পষ্ট।চাঁদকে দেখে দ্রুত তার নিকট এগিয়ে আসে অরিন।অতঃপর নিজের চেয়ারে হেলান দিইয়ে চাঁদকে বসিয়ে তার দিকে ঝুঁকে বলে,
“কী হয়েছে তোমার আপু?এই অবস্থায় বেরিয়েছো কেনো?”
অরিনের পানে এক দৃষ্টিতে বেশকিছুক্ষণ চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেশ অসহায় মিশ্রিত কন্ঠে চাঁদ বলে,
“আমার কী হয়নি বলোতো?আমার মানুষটা স্বেচ্ছায় আমায় ছেড়ে যাচ্ছে।শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করতে পারছিনা!আচ্ছা বাচ্চাটা না হলে কী হতো বলোতো?আমি প্রণয়ের সঙ্গে অনায়াসে চলে যেতে পারতাম।আমি তো এখন ম*রতেও পারছিনা অরিন”
সঙ্গে সঙ্গে চাঁদের ঠোটে হাত রেখে অরিন বলে,
“হিশ!এভাবে বলেনা।বাচ্চাটাতো তোমার আর প্রণয়েরই অংশ আপু।তার মাঝেইতো তুমি প্রণয়কে দেখতে পাবে”
“এমন দেখতে তো আমি চাইনি।আমার প্রণয়কে আমি সর্বদা,সর্বক্ষণ পাশে চেয়েছি কিন্তু অন্যকারো মাঝেতো তাকে দেখতে চাইনি।আমার প্রণয়তো কেবল একজনই হয় রে অরিন!আমি কেবল আমার প্রণয়কেই চেয়েছি।আমার প্রণয়ের এক বিন্দু পরিমাণ হওয়ার সাধ্যিও কেউ রাখেনা।কেউই রাখেনা অরিন।তার নিজের সন্তানও না।আমি আমার প্রণয়ের সাথে বাঁচতে চেয়েছি।সেটা যদি নাইবা পারি।তার সাথে ম*রতেটুকুও পারবোনা?কেনো পারবোনা?বিধাতা আমার ভাগ্যেই কেনো নি!র্মমতা লিখেন কেবল?আচ্ছা তুমি কি বলতে পারো আমি কেনো বেঁচে আছি?আমার বাচ্চাটা বাবাহীন কী করে বড় হবে?আমিই বা আমার প্রণয়কে ছাড়া কী করে বাঁচবো?তাকে ছাড়া কি আমার আত্মাটা ম*রে যাবেনা?তার সাথে কল্পিত কল্পনাগুলো বাস্তবিত কেনো হবেনা অরিন?এই যে আমার বাচ্চাটা তাকে কি দু’জনে একইসঙ্গে বেড়ে উঠতে দেখতে চাইনি?তুমিই বলো আমি কী করবো!এই ধরণীতে শ্বাস নিতেও আমার কষ্ট হয় অরিন।বাতাসে কেবলই বিষাদতার লেশ”
চাঁদকে নিজের সাথে মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে অরিন বলে,
“এতটা ডিপ্রেসড হলে হবেনা আপু।তুমি কেনো বাচ্চাটার ক্ষ*তি করছো বলবে?তোমাদের দু’জনের মধ্যকার দ্বন্দে বাচ্চাটা কী দোষ করেছে তাই বুঝছিনা।আর প্রণয়ই বা কেনো এরকম একটা কাজ করলো?আমি মানছি অধিরাজ শেখ পলিটিক্সে খারাপ ছিলেন কিন্তু মানে এরকম টা কেনো?আর প্রণয়তো এমনি এমনি কিছু করবেনা।তাও এত বড় একটা ইন্সিডেন্ট।আসলে কী হয়েছে তুমি কি আমায় বলবে?”
“বলবো”
অতঃপর সেভাবেই অরিনের কোমড় দু’হাতে জড়িয়ে রেখে একে একে সমস্ত ঘটনা তাকে বিবৃত করে চাঁদ।শুরু থেকে শেষ অব্দি পুঙ্খাতিপুঙ্খভাবে বর্ণনা দিয়ে বেশ শক্তপোক্তভাবেই অরিনকে আলিঙ্গন করে।তার পেটের কাছে মুখ গুজে বিসর্জন করে কয়েকফোটা অশ্রুকণাও।আর অরিন দাঁড়িয়ে থেকেই এক ধ্যানে পলকহীন সমস্তকিছু শুনতে শুনতেই চাঁদকে নিজের সাথে মিশিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে।গা তার শিরশিরায়,লোমকূপ দাড়ানোর সহিত বুকের ধুকপুকানিও বেড়েছে।লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে অরিন বলে,
“থামো।তবে আমার প্রশ্ন,যেই মেয়ে জীবনের সর্বোচ্চ ধাক্কা কাটিয়ে ঘুরে দাড়াতে পেরেছে।সে কি পারবেনা আরেকবার ভুলের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে?তোমার সেই পথটুকু প্রণয় সহজ করে দিলেও এখনো কিন্তু তার ভ্রমণ শেষ হয়নি আপু।তোমায় তা পূরণ করতে হবে।প্রণয়েরতো কোনো ভুল আমি দেখছিনা।বরং সে যা করেছে তার চাইতেও নিকৃষ্ট কিছু থাকলে তা করা উচিত ছিলো।একজন ধ!র্ষকের শাস্তি মৃ*ত্যু ব্যতীত আর কিছু হতে পারেনা।আমি প্রণয়কে সমর্থন করি”
অরিনকে ছেড়ে তার পানে ঘাড় উঁচু করে চেয়ে চাঁদ বলে,
“তাহলে প্রণয়কে কেনো ওরা শাস্তি দিচ্ছে আর প্রণয়ই বা কেনো হাল ছেড়েছে বলতে পারো?সে কেনো আমার কথা ভাবছেনা?”
“প্রণয়তো হাল ছাড়েনি আপু।সে তোমায় এক সুরক্ষা কবচে বেঁধে দিতে চায়।এখন এটাকে যদি তুমি হাল ছাড়া ভাবো তাহলে বলবো তুমি বোকা।প্রণয়ের ভালোবাসা কখনোই বোঝার চেষ্টা করোনি।এবং এও বলবো তুমি আসলেই বোকা।প্রণয় তোমার সত্যিটা জেনে তোমায় ঘৃণা করবে ভেবে অতদূর পারি জমিয়ে সর্বোচ্চ ভুলটা তুমি করেছো।তোমার উচিত ছিলো প্রণয়ের কাছে থেকে তাকে সমস্ত সত্যিটুকু বলা।ভাইকে যতটা ভরসা তুমি করেছো তার চাইতে বেশিনা সমান ভরসাও যদি তুমি প্রণয়কে করতে তোমাদের কাহিনী আরেকটু ভিন্নই হতো আপু।প্রণয় এমন এক পুরুষ যাকে কেবলই ভালোবাসা যায়,ঘৃণা করা যায়না।আর তুমি সেই পুরুষকে ভালো তো ঠিকই বেসেছো,বিশ্বাস করতে পারোনি।তুমি তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাস করো আপু।তোমার জন্য,শুধুমাত্র তোমার জন্য যদি পুরো ব্রহ্মাণ্ডেও প্রলয় ছড়িয়ে দিতে হয় সে তোমার জন্য তাও ঘটিয়ে ছাড়বে।তুমি তার জীবনের একমাত্র নারী যার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতেও সে দু’বার ভাববেনা,ভাবেনিও।তোমার ন্যায় ভাগ্য সবার থাকেনা,বিধাতা সবাইকে দেননা।সবাইকে তিনি এমন পুরুষের দেখাও মেলান না।সবাই কেনো?কাউকেই মেলাবেন না।প্রণয় সত্যিই একজন হয়,কেবলই একজন।তার ন্যায় হওয়ার সাধ্যি সত্যিই কেউ রাখেনা।রাখতে চাইলেও পারবেনা।তবে সে তোমার পুরুষ,কেবলই তোমার”
অতঃপর চোখজোড়া বুজে লম্বা শ্বাস ফেলে মনে মনে অরিন বলে,
“আর সেই পুরুষকেই আমি ভালোবাসি।তাকে ভালোবেসে নিজেকে আ!ঙ্গার করে দিতেও আমার কোনো দ্বিধা নাই”
অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের সে চিন্তা করে,
“চাঁদরূপে কেনো আমি জন্মালাম না?তবে তোমার কলঙ্কটুকুও আমার ভাগ্যে জুটতো,প্রণয় নামক সেই মহাপ্রেমিকটাও কেবলই আমার হতো”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
শুক্রবার ভরদুপুর,
কয়েকজন মহিলা পুলিশ মিলে টেনে ধরে রেখেছে চাঁদকে।পাশেই দাঁড়ানো অরণ,তাকেও ধরে রেখেছে অরিনসহ কয়েকজন পুলিশ।চাঁদ প্রাণপনে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছে প্রণয়ের দিকে।তবে তার দু’হাত বাঁধা।দু’পাশ থেকে ধরে রাখা হয়েছে তাকে।গলা ফাটিয়ে আ!র্তনা!দ করার পরেও তাকে ছাড়া হচ্ছেনা।শেষবারের ন্যায় প্রণয় নামক তার প্রেমিক পুরুষটাকে আলিঙ্গন করার সুযোগটুকুও দেয়া হচ্ছেনা।বারিধারা গড়িয়ে পড়ছে কপোল বেয়ে।ঠোট কাম!ড়ে উন্মাদের ন্যায় সে ছোটাছুটি করছে।তবে সে ব্যর্থ,সে একজন ব্যর্থ প্রেমিকা।এক ব্যর্থ স্ত্রী এবং ব্যর্থ এক মা ও হয়তোবা হবে!অপরদিকে চাঁদের পানেই এক ধ্যানে চেয়েছিলো প্রণয়।বিড়ালাক্ষীজোড়ায় তার অসহায়ত্ব,ঠোটে সেই নজরকাড়া হাসি।চাঁদের হৃদয় কে!ড়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে কেনো চলে যাচ্ছে মানুষটা?কেনো একটিবারের জন্যও বলছেনা ‘আমাকে ছেড়ে দিন!আমায় বাঁচতে দিন!’ ভাবতে ভাবতেই চোখের পলকে তার বিড়ালাক্ষী মানবের হাসিমুখখানা ঢাকা পড়ে যায় কালো কাপড়ের আড়ালে।বেঁধে দেয়া হলো তা গলার সঙ্গে।গলায় ঝুলানো হলো মোটা দ*ড়ি।অতঃপর যখনই সাদা রুমালটা মাটিতে পড়লো সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদ তার কার্য চালালো।প্রণয়ের পায়ের কাছে থাকা পাটাতনটা সড়ে গেলো নিমিষে,নিচে পড়ে যেতে চাইলো চাঁদের সেই প্রিয় মানব,তার হৃদয়েশ্বর।তার একমাত্র স্বামী।দৃশ্যখানা সহ্য হলোনা চাঁদের!তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া বুজে ধপ করে হাটু গেরে মাটিতে বসে চেচালো সে,
“প্রণয়!”
অতঃপর ঘুম ছুটে গেলো চাঁদের।ঘেমে নেয়ে সে একাকার।বুকের ভেতর থাকা হৃদযন্ত্রটা এইতো বেরিয়ে এলো যেনো!বারংবার ঢোক গিলছে সে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে,বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে তার।মন বড্ড বেশিই কু গাইছে।খুব ভয়ঙ্কর কিছু হচ্ছে অথবা হবে যা তার ধারণাতীত।নিজেকে কিছুতেই সে আশ্বাস দিতে পারছেনা।ক’টা বাজে এখন?প্রণয়ের কি সত্যি সত্যি?নাহ,আর ভাবা যাচ্ছেনা।দ্রুতগতিতে বিছানা ছেড়ে সে নেমে এলো নিচে।তবে এটাতো তার বাসা নয়।তার আর প্রণয়ের রুমও তো এটা না।কোথায় সে?তখনই দেখতে পায় হুড়মুড়িয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে রুবা,রিদি আর শিফা।রুবাকে দেখে চাঁদ দৌড়ে এসে বলে,
“এই রুবা কয়টা বাজে?হ্যা সকাল হয়ে গিয়েছে?জু’মার আযান কি দিয়ে দিয়েছে?অরণ কোথায়?প্রণয়ের কাছে গিয়েছে?হ্যা?কয়টা বাজে বলো!”
চাঁদকে ধরে তিনজনই বিছানায় বসায়।রিদি চাঁদের দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,
“বিকাল পাঁচটা বাজে ভাবি।সকাল কেনো হবে?”
“মানে?তাহলে আমি বিছানায় কেনো?আমার তো এখন প্রণয়ের কাছে থাকার কথা।দেখি সরো”
বলেই উঠতে নিলে তিনজন তাকে চে!পে ধরতেই চাঁদ ছোটাছুটি করে বলে,
“দেখো আমায় ছেড়ে দাও।নাহলে সত্যিই ভালো কিছু হবেনা।ছাড়ো”
শিফা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“সরি ভাবি”
সঙ্গে সঙ্গে চেচায় চাঁদ,
“সরি!আই আম সরি!ছাড়ো আদারওয়াইজ সত্যিই ভালো হবেনা শিফা,রুবা,রিদি”
অতঃপর দাঁত দ্বারা ঠোট কামড়ে লম্বা শ্বাস ফেলে হাল ছেড়ে দিয়ে চাঁদ বলে,
“একটাবার নিজেকে আমার জায়গায় দাড় করালে এসব সিমপ্যাথি কোথায় থাকবে তোমাদের ভেবেছো?আজ প্রণয় যেখানে আছে যেই পরিস্থিতিতে আছে তোমরা যাদের ভালোবাসো তারা যদি থাকতো?তখনও কি এভাবেই বুক ফুলিয়ে গর্বের সহিত নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখতে পারতে?যদি তা না পারো তবে আমায় ধরে রাখার অধিকারটুকুও তোমাদের নেই।অন্তত আমি তা দেইনা।আমি কারো কর্তৃত্বে চলি না।আর ভুলে যাবেনা আমি তোমাদের ভাবি,তোমাদের বড়।আর সর্বসত্য আমি আমার প্রণয়ের স্ত্রী”
তৎক্ষণাৎ চাঁদকে ছাড়ে রিদি।রিদিকে ছাড়তে দেখে চোখজোড়া বুজে ছেড়ে দেয় শিফাও।সর্বশেষে একধ্যানে কোথাও চেয়ে থেকে চাঁদের হাত ছাড়ে রুবাও।ছাড়া পেয়ে তৎক্ষনাৎ দ্রুতগতিতে পা চালায় চাঁদ।এক মুহুর্ত দাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনা সেখানে।
চাঁদ যতক্ষণে থানার নিকটেও পৌঁছায় ততক্ষণে প্রণয়কে কয়েকজন পুলিশ ঘেড়াও করে কোথাও নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়।থানার কাছে এসে এরূপ দৃশ্য দেখে এক পলকের জন্য থমকায় চাঁদ।অতঃপর কোনোকিছু না ভেবেই দৌড়ে সেখানে আসতে চাইলে কয়েকজন মহিলা পুলিশ তাকে জেকে ধরে।সেভাবে দাড়িয়েই ছুটার চেষ্টা করে বারংবার প্রণয়ের নাম ধরে উচ্চস্বরে ডাকে চাঁদ।তবে প্রণয়ের কোনো সাড়া নেই।একটিবারের জন্যও সে তার প্রিয়,অতি প্রিয় নারীর দিকে তাকানোর চেষ্টাটুকুও করেনা।গুরুগম্ভীরভাবেই পুলিশ জিপে উঠে বসে।অতঃপর ততক্ষণ পর্যন্ত সে পানে চাঁদ চেয়ে থাকে যতক্ষণ না জিপ টি তার দৃষ্টিসীমা অতিক্রম করে।কিয়ৎক্ষণের মধ্যেই চাঁদ ঢলে পড়ে মহিলা পুলিশগুলোর উপরেই।হঠাৎ পাশে এসে দাঁড়ায় অরিন।দাড়িয়েই মহিলাগুলোর থেকে ছিনিয়ে নেয় চাঁদকে।ততক্ষণে সেখানে হাজির হয় অরণ আর ফায়ানও।অতঃপর তিনজনই চাঁদকে নিয়ে রওয়ানা হয় অরণের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
To be continued…..
[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার অনুরোধ রইলো]