❤️(38_39)❤️
38-FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:38
………সকালের দিকে হিয়ার প্রচন্ড গা কাপা জ্বর এসে যায়।হিয়ার জ্বরের কুকানির শব্দে উজানের ঘুম ভেঙ্গে গেলে উজান উঠে বসে…..
উজান:হিয়া…হিয়া..কি হচ্ছে কষ্ট হচ্ছে…হিয়া……….(হিয়ার গায়ে হাত দিয়)……হিয়ার তো জ্বর এসে গেছে….রাতে বললাম গায়ে হালকা জ্বর আর উনি উনি কি বললেন না জ্বর না….আমারি বোঝা উচিৎ ছিলো আমি কিভাবে হিয়ার কথায়…..হিয়া…
হিয়া:(কথা বলার শক্তি নেই…তখনো কাঁপতে আর কুকাতে থাকে…..)
উজান:কিচ্ছু হবে না হিয়া আপনার…আমি আছি তো….কেনো শুনলেন না আপনি আমার কথা…কি হতো শুনলে…(উজান চিন্তায় হাপিয়ে ওঠে…)….মাকে মাকে ফোন দিতে হবে…
বাসবি:কি রে রাজা এতো সকাল সকাল।আমি তো ভাবলাম তোদের দুজনের আজও কোনো খবর পাওয়া যাবে না…
উজান:মা…মা ওসব কথা পড়ে হবে তুমি প্লিজ ইমিডিয়েট এ বাড়িতে আসো।হিয়ার ভীষন জ্বর এসেছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না…
বাসবি:সেকি কথা রাজা…হিয়া হিয়া ঠিক আছে তো…কীভাবে আসলো জ্বর আমি তো কালকেই মেয়ে টাকে ভালো দেখে আসলাম….কি যে করিস না তোরা দুজন…আমি আসছি জিনি কে নিয়ে আমি এক্ষুনি আসছি….
উজান:তুমি তাড়াতাড়ি এসো প্লিজ….(চিন্তিত)
………..উজান ফোন রেখে বাটিতে করে পানি এনে কাপড় দিয়ে হিয়াকে ওর কোলে শুইয়ে দিয়ে হিয়ার কপালে জ্বর পট্টি দিতে দিতে…
উজান:খুব কষ্ট হচ্ছে হিয়া….আমি আছি তো দেখুন, একটু পর একটু পর আপনার আর জ্বর থাকবে না…
হিয়া:(তখনো কিছুটা অচেতন)….জল…
উজান:জল দিবো খাবেন।আমি আনছি আমি এক্ষুনি আনছি….
……উজান হিয়াকে বালিশে হেলান দিয়ে পানি এনে হিয়াকে ধরে খাইয়ে দেয়…..
উজান:আর একটু আর একটু দেই..
হিয়া:(হিয়া হাতের ইশারায় বলে না)
উজান:ঠিক আছে আর খেতে হবে না…..
……উজান আবার হিয়ার পাশে গিয়ে হিয়াকে শুইয়ে দিয়ে আবার জ্বর পট্টি দিতে থাকে…হিয়ার গায়ে পর পর দুটো চাদর গায়ে দিয়ে দেয়…কিছুক্ষণ পর হিয়া হালকা সচেতন হলে…..
উজান:হিয়া…..কিছু এনে দেই অনেক সকাল হলো না খেয়ে আছেন…ক্ষুদা পায়নি….আপনার না খিদে হয়েছে এখন খুব….কিছু আনবো….
হিয়া:(হিয়ার খিদে পাইছে কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না..)…..না ভালো লাগছে না..
উজান:ঠিক আছে….আর একটু জ্বর পট্টি দেই..
হিয়া:নাহ ভালো লাগছে না😣..(হিয়ার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়….)
উজান:আচ্ছা ঠিক আছে দিবো না এই যে রাখছি__আর দিবো না
……..উজান হিয়াকে জ্বরিয়ে ধরে কিছুক্ষণ থাকার পর….
হিয়া:খাবো…খিদে পাচ্ছে ভীষন😢….
উজান:খাবেন আপনি…আনবো কিছু….
হিয়া:হুম….
উজান:আনছি এক্ষুনি আনছি…আপনি একটু শুয়ে থাকুন আমি আনছি….থাকতে পারবেন তো একা..
হিয়া:(মাথা নাড়ায়)
…….উজান হিয়াকে ভালোকরে চাদর দিয়ে মুড়ে দিয়ে রান্না ঘরে গিয়ে কোনোরকমে হিয়ার জন্য একটা রুটি আর একটা ডিম পোস করে নিয়ে আসে…….
উজান:(হিয়ার মাথায় হাত বুলায় দিয়ে)…হিয়া….দিবো এখন খাবেন….
হিয়া:হুম…(ইচ্ছে নেই তবু তো পুচকুর জন্য খেতে হবে)
……উজান হিয়াকে ধরে বালিশে হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে…..
উজান:নিন…হা…
হিয়া:ডিমের কি বিশ্রী গন্ধ।আর খাবো না😢😢😡..(হিয়ার মেজাজ আরো বিরক্তিকর হয়ে ওঠে)
উজান:আর একটু।আচ্ছা আর একবার…
হিয়া:না…ভালো লাগছে না…মা কখন আসবে…(কান্নাকান্না ভাব)
উজান:আসছে মা।মা এলেই আমি দোকান এ গিয়ে মেডিসিন কিনে আনছি…তার আগে একটু খান….
হিয়া:ডিম খাবো না😡
উজান:আচ্ছা বেশ ফ্রিজে মিষ্টি আছে এনে ওটা দিয়ে দেই…
হিয়া:ভালো লাগছে না তো খেতে আর কতো বলবো😡😡….
উজান:(মিস্টি এনে)…অর্ধেক টা তো শেষ করুন হিয়া…আপনি তো বললেন খিদে পেয়েছে…আমি এখন মেডিসিন আনলে কিভাবে আপনাকে ওগুলো খালি পেটে দিবো বলুন
(উজান চিন্তায় হিয়াকে কি বলবে না বলবে বুঝে উঠতে পারে না…)
হিয়া:দিন….
উজান: আর একটু হিয়া……..এটাই লাস্ট….আর দিবো না দেখুন এটাই শেষ….
হিয়া:আর না😡😡….(বিরক্ত হয়ে)
উজান:ঠিক আছে আর দিবো না পানি টা নিন একটু……..আমি আসছি…
…….উজান আবার হিয়াকে শুইয়ে দিয়ে রুটির প্লেট টা রান্না ঘরে রেখে এসে বাসবি কে ফোন দেয়….
উজান:আর কতোক্ষন লাগবে মা তোমার।আমাকে মেডিসিন কিনতে বের হতে হবে….
বাসবি:আসছি রাজা এসেই গেছি আর ১০মিনিট…হিয়ার কেমন অবস্থা এখন…জ্বর কমলো কিছুটা….
উজান:না মা সকালে মাপলাম তখন ১০১ছিলো এখন একটু কমছে ১০০….তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমার এভাবে ওনাকে দেখতে ভালো লাগছে না….
বাসবি:আসছি তুই হিয়ার কাছে যা…
……..হিয়ার বমি পেলে হিয়া বিছানা থেকে উঠতে ধরলে উজান এসে হিয়াকে দেখে…..
উজান:হিয়া কি করছেন কি…?কোথায় কোথায় যাবেন আমাকে বলুন….
হিয়া:সারুন আপনি আমার বমি আসছে..😡
উজান:ওয়াশরুমে যাবেন আমি নিয়ে যাচ্ছি
হিয়া:আমি বমি করে দিবো সারুন না….😡
……..হিয়া বিছানা থেকে উঠতে না উঠতে বমি করে দেয় মেঝেতে।উজান হিয়াকে ধরে হিয়ার পিঠে হাত বুলাতে থাকে…..
হিয়া:আপনাকে বললাম সারুন।দেখলেন তো কি হলো….ঘরটা তে….ইসস…ভালো লাগে না আমার…(খিটখিটে মেজাজে)😡😡
উজান:আবার কোথায় যাচ্ছেন (রাগে)😠😠
হিয়া:সারুন না….এগুলো পরিষ্কার করতে হবে না….
…(দুজনে দুজন কে রাগ দেখায়…)😡😠
উজান:আপনাকে কিচ্ছু করতে হবে না।কালকে থেকে অনেক কিছু করেছেন আপনি….
হিয়া:মা কোথায় মা কখন আসবে….
উজান:এরকম করছেন কেনো।মা নাই তো কি হয়েছে আমি কি নাই……..আর আর আর একটা কথা যদি না বলা দেখি…শুইয়ে পড়ুন তো এবার এসে।প্লিজ হিয়া।সবসময় জেদ ভালো লাগে না….(হিয়ার পেছনে বালিশ ঠিক করতে করতে….)
…….হিয়া শুইয়ে পড়লে উজান ওগুলো পরিষ্কার করে ফ্রেশ হয়ে এসে হিয়ার কাছে গিয়ে বসে হিয়ার চুল গুলো বুলাতে থাকে….তোতোক্ষনে বাসবি জিনি ঠাম্মি চলে আসে……বাসবি গিয়ে হিয়ার মাথার কাছে আসলে।হিয়া বাচ্চা দের মতো বাসবির কোলে শুইয়ে পড়ে…..
বাসবি:হিয়া….মা কি হইছে…কষ্ট হচ্ছে….কালকেই না তোকে ভালো রেখে গেলাম।কি হলো একদিনে আবার……রাজা এই রাজা ওকে কি নিবি টিউলিপে একবার…গায়ে অবশ্য জ্বর টা কম লাগছে একটু মনে হচ্ছে….খেয়েছে কিছু সকালে….?
উজান:না মা একটু রুটি করে দিয়েছিলাম।যেটুকু খেয়েছে একটু আগে সব বের করে দিলো….আর টিউলিপে নিতে হবে না।জ্বর টা তো কালকে রাতে বৃষ্টিতে ভেজার কারনে আসছে আমি কয়েকটা ঔষধ এনে দিচ্ছি তুমি বসো ওর কাছে…..
বাসবি:না থাক তোকে আর কিছু করতে হবে না।তুই তৃনা কে ফোন কর।তুই বললে ঠিক তৃনা এ বাড়িতে আসতে রাজি হবে….
ঠাম্মি:হ্যা উজান ওটাই ভালো হবে।হিয়া তো ওর আন্ডার এই আছে ওহ একবার দেখে গেলে ভালো হয়….
উজান:ঠাম্মি আমিও একজন ডক্টর হ্যা।আর এ অবস্থায় কি লাগবে আমার ওটুকু জানা আছে….
বাসবি:তোর ডক্টরি রাজা তুই না তোর কাছে রাখ…তোর আর তোর ডাক্তারি দুটোর একটার উপর আমার আর ভরসা নেই…(বুম বুম বুম)
জিনিয়া:কি দিন আসলো তোমার দাদাভাই। তুমি এতো বড়ো একজন ডক্টর কিন্তু বড়মার তোমার ডক্টরির উপর কোনো ভরসা নেই…হিয়াদি শুনলে…(জিনি হেসে ফেলে😂😂…)
উজান:মা আমি😡
বাসবি:একবার ভরসা করে তো দেখলাম তোকে,তোকে কি বলে গেলাম হিয়ার খেয়াল রাখতে আর তুই।এটা নমুনা খেয়াল রাখার।মেয়েটা হাত কাটছে পা কাটছে কোথায় ছিলি তুই ওসময়।নাকি দুজনে মিলে কাল মারামারি করছিলি……আর হিয়া বৃষ্টিতে ভিজবে বলে বায়না করলো বলে তুই ও রাজি হয়ে গেলি সত্যি অদ্ভুত রাজা তুই….
উজান:মা তুমি সবটা না জেনে কেনো আমাকেই বলছো।হিয়া আমার কথা শোনার মেয়ে চিনো না তুমি ওকে..
…….বাসবি উজান কে বকছে দেখে হিয়া জ্বরের মধ্যেও মিটিমিটি হাসি দেয়😊😊….
উজান:আর এই যে আপনি খুব হাসি পাচ্ছে না এখন।দোষ টা কিন্তু আপনার একার হ্যা।একবার খালি সুস্থ হোন😠😠…
বাসবি:ওকে কেনো বলছিস…আর এমনিতেও তুই তো হার্টের ডক্টর গাইনোকোলজিস্ট তো আর না….তাই আমি যা বলছি এখনি তা কর…..
উজান:ডিসগাস্টিং😠….
……..উজানের রিকুয়েস্ট এ তৃনা হিয়াদের বাসায় হিয়াকে দেখতে রাজি হয়…..
তৃনা:বৃষ্টিতে ভিজেছে দেখে জ্বরটা এসেছে।আর টেম্পেরেচার ও এখন খুব একটা বেশি নেই…আমি তবুও দুটো টেস্ট দিচ্ছি উজান তুমি টিউলিপ থেকে কাউকে বলে হিয়ার ব্লাড সেম্পেল গুলো নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেও…আর এখানে দুটো মেডিসিন লিখে দিচ্ছি ওগুলো ভরা পেটে খাইয়ে দিও…..
উজান:ঠিক আছে ম্যাম।আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি
তৃনা:এমনি কিছু খেয়েছে ওহ সকালে…?
উজান:নাহ কিছু খেতে তো চাইছে না।অর্ধেক রুটি দিয়েছিলাম বমি করে ফেলে দিছে….
তৃনা:কিন্তু আমি যেগুলো দিলাম ওগুলো তো হায়ার এ্যান্টিবায়োটিক ওগুলো তো খালি পেটে খাওয়া যাবে না বাবা…আর তাছাড়াও ওহ তো এখন একা না ওর বেবি কেউ ইফেক্ট করতে পারে…কিছু খাইয়ে তারপর দিও….
উজান:ওকে ম্যাম….
তৃনা:আজ আমি আসি তাহলে আর হ্যা হিয়া সুস্থ হলে আমার চেম্বার এ একবার নিয়ে আসো আরো কিছু পরীক্ষা করতে দিবো তবে আজকেই না ওহ আগে সুস্থ হোক……..হিয়া আসি কেমন…আর কিছু দরকার হলে ফোন দিও…..
……তৃনা চলে গেলে উজান মেডিসিন গুলো আনতে বের হয়……দুপুরের দিকে টিউলিপ থেকে লোক এসে হিয়ার ব্ল্যাড সেম্পেল গুলো নিয়ে যায়….
হিয়া কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে গেলে উজান ওর পাশে গিয়ে বসে থাকে…হিয়ার হালকা ঘুম ভাঙ্গলে..
উজান:ঘুম ভাঙ্গলো…..হেলান দিয়ে দিবো বালিশে
হিয়া:হুম😢
বাসবি:হিয়া উঠেছে রাজা…হিয়া মা এখন একটু খাইয়ে দেই তোকে কিছু ।ঔষধ গুলো খেতে হবে যে…
হিয়া:দেও😢
…..বাসবি হিয়ার জন্য হালকা নরম ভাত করে আনে….
বাসবি:রাজা দে দেখি খাইয়ে দে…
উজান:হুম….হিয়া দিবো
হিয়া:দিন
……উজান হিয়াকে কয়েক লোকমা খাইয়ে দেওয়ার পর হিয়ার আর খেতে ইচ্ছে করে না….
হিয়া:আর না😢
উজান:এটাই শেষ
হিয়া:ভালো লাগে না😢😡
উজান:আচ্ছা আর একবার
হিয়া:বমি পাচ্ছে।খাবো না আর😡
উজান:ঠিক আছে আর দিচ্ছি না।এবার এ দুটো ঔষধ নিন তো….
হিয়া:বমি করে দিবো😢😢
উজান:পরে বমি হলে হবে এখন আগে খেয়ে নিন…পেট টা একটু ভরা আছে এসময়….
হিয়া:(বিরক্ত মেজাজ খুব খিটখিটে…)😡😡
উজান:এবার কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন আমি আসছি…
……
বাসবি:রাজা হিয়া খেলো
উজান:ওনার খাওয়া না খাওয়া দুটোই এক…
বাসবি:তোকে দেই…
উজান:না হিয়া কে এ অবস্থায় দেখে আমার ভালো লাগছে না কিছু…..মনেমনে(কালকেই হিয়া আমার সাথে কতো ভালো ছিলো,কতো ছোটাছুটি করলো আর আজ এভাবে পড়ে আছে সব আমার জন্য সব..তাড়াতাড়ি সুস্থ হও হিয়া তোমাকে এভাবে চুপচাপ আমার দেখতে একদম ইচ্ছে করছে না😢😢…)
…….হিয়া উঠে বাথরুমে গিয়ে গেট লাগাতে ধরলে উজান এসে হিয়াকে আটকিয়ে দেয়…..
হিয়া:আরে কি করছেন কি আমার বমি পাচ্ছে সারুন তো😡
উজান:আমিও আপনার সাথে বাথরুমে যাবো..
হিয়া:হ্যা…আপনার মাথা কি ঠিক আছে…আমার আরো কাজ আছে বাথরুমে আপনি যান তো…
উজান:না আমি আপনাকে একা ছাড়বো না..আমিও যাবো ভেতরে…
হিয়া:মা মা…দেখো তো তোমার ছেলে কি করছে😡
উজান:মাকে ডাকছেন কেনো।ঔষধ খেয়ে গায়ে জোর আসলো মনে হচ্ছে…..ঠিকআছে যান গিয়ে ১০মিনিটের মধ্যে বের হবেন….
…উজান হিয়াকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে ঠাস করে দরজা টা লাগায় দেয়….
উজান:যা মন চায় করুন গিয়ে😡
হিয়া:দেখলি তো পুচকু কেমন ব্যবহার করলো।আমি অসুস্থ দূর্বল খেতে পারছি না আর এই লোক টাকে দেখ সকাল থেকে মেজাজ দেখাচ্ছে😒😒
উজান:হলো আপনার😠
হিয়া:আপনাকে কেউ বলছে দাড়ায় থাকতে আপনি যান তো……
…….হিয়া বের হলে উজান ওকে ধরে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়…..
বাসবি:আবার বমি হলো নাকি হিয়ার….?
হিয়া:হ্যা ঔ একটু…
বাসবি:কেনো যে আমি তোদের কে কাল একা রেখে গেলাম….বিকাশবাবু ভাবলো কি।উনি আমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেলো হিয়ার আর আমি…কি বলবো উনি আসলে..
হিয়া:বাবা আসছে…?
বাসবি:তোমার এ অবস্থা আর না এসে পারে উনি।রাত হবে আসতে….মা জিনিয়াও তো বাড়ি চলে গেলো….হিয়া আর একটু কিছু খেতে দিবো তোমায়….
হিয়া:না খালি বমি পায়…ভালো লাগে না…
……হিয়া আর কিচ্ছু খাচ্ছে না দুপুর থেকে।রাতে ৮টার দিক উজান জোর করে হালকা সুজি দিলেও ওগুলোও হিয়া বমি করে ফেলে দেয়….
…..উজান বাসবির কথা শুনে আবার তৃনা কে ফোন দেয়…
তৃনা:হ্যা উজান বলো কোনো সমস্যা হিয়া ঠিক আছে তো..
উজান:হিয়া ঠিক আছে।কিন্তু ওহ সকাল থেকে কিচ্ছু খেতে পারছে না।যা খাচ্ছে বমি করে দিচ্ছে।এভাবে তো উনি আরো উইক হয়ে পড়বেন..
তৃনা:তাহলে তুমি ওকে একটা স্যালাইন দেওয়ার ব্যবস্থা করো।না খেয়ে থাকলে তো ওর বেবির ও সমস্যা হবে।বোঝো নি….আর কি উজান তুমি নিজে একজন এতো বড়ো ডক্টর তারপরো এসব ছোট ছোট ব্যাপার তোমাকে আমার কাছ থেকে শুনে নিতে হচ্ছে কেনো…
উজান:না আসলে মা আমাকে ঠিক ভরসা করতে পারছে না তাই বারবার আপনার কথা বলছে..
তৃনা:(হেসে ফেলে)তোমার মা বুঝি হিয়াকে খুব ভালোবাসে..
উজান:হুমম নিজের মেয়ের মতো..
তৃনা:ঠিক আছে যেটা বললাম ওটা করো আর রাতে কোনো সমস্যা হলো আমাকে ফোন দিও….
উজান:থ্যাংকস ম্যাম..
……উজান রাতে টিউলিপ থেকে লোক এনে হিয়ার হাতে ক্যানুলা পড়িয়ে স্যালাইন এর ব্যবস্থা করে দেয়…..
….হিয়ার বা হাতে ক্যানুলা পড়া পাশে উপরে স্যালাইন ব্যাগ ঝুলছে….হিয়ার ডান পাশে উজান হেলান দিয়ে আছে….
হিয়া:আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন
উজান:না…আপনি ঘুমোন আগে
বুলি:উজান দা আসবো?
উজান:(একটু ঠিক হয়ে বসে নেয়)….হ্যা বুলি এসো….
বুলি:তুমি ডাকছিলে তখন আমি ওয়াশরুমে ছিলাম বলো কি বলবে
উজান:আমাকে এক কাপ কফি করে দিতে পারবে?
বুলি:কফি খাবে তুমি।আমি এক্ষুনি করে আনছি…
উজান:হ্যা তবে একটু বেশি করে করতে পারবে
বুলি:হ্যা বেশি করা কম করা দুটোই তো এক কেনো পারবো না
উজান:ঠিক আছে তুমি করে একটা ফ্ল্যাক্সে ঢেলে আমাকে একটা মগ সহ দিয়ে যাও
বুলি:ঠিক আছে আমি করে আনছি…দিদি ঘুমালো..
উজান:না এমনি চোখ বন্ধ করে আছে..
বুলি:আচ্ছা..
…..বুলি কফি করে এনে বিছানার পাশে সাইড টেবিলে রেখে চলে যায়….
হিয়া:আপনি এতোগুলো কফি কেনো করতে বললেন..
উজান:কফি খেলে ঘুম আসবে না তাই..
হিয়া:তো আপনি না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে থাকবেন নাকি😮
উজান:হুম…(হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
হিয়া:কেনো..?
উজান:হিয়া আপনার হাতে ক্যানুলা পড়া আর আপনি রাতে যে নড়াচড়া করেন কোনো ভাবে ওটা নড়ে গিয়ে স্যালাইন এ ব্ল্যাড উঠে আসলে তখন..
হিয়া:তাই বলে আপনি সারারাত জেগে থাকবে😡
উজান:না সারারাত জাগবো না যতোক্ষন না স্যালাইন টা শেষ হচ্ছে তোতোক্ষন আছি…
হিয়া:আপনি ঘুমোন না আমি নড়বো না সত্যি.
উজান:তাই….আমি না আপনার সাথে ঘুমিয়েছি হিয়া আমার জানা আছে আপনি রাতে ঘুমোন কম নড়েন বেশি😏
হিয়া:তাই না😒
উজান:এখন কিন্তু আর একটা কথা বললে আমি আবার রেগে যাবো…চুপচাপ একদম ঘুম দিন এখন…
…..উজান হিয়ার গায়ে চাদর দুটো ভালো করে গায় দিয়ে হিয়ার মাথায় হাত বুলালে হিয়া ঘুমিয়ে পড়ে…উজান সারারাত একটু করে কফি খায় ফোন ঘাটে আর হিয়াকে একটু পর পর দেখে নেয়….তিনটের ওদিক স্যালাইন শেষ হলে উজান ওটা খুলে রেখে দিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে শুইয়ে পড়ে…উজানের আজ খাওয়া দাওয়া কিচ্ছু নেই এই দু তিন কাপ কফি ছাড়া..
“””আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে”””
“””পাইনি তোমায় চিনতে আমি পাই নি তোমায় চিনতে❤💜💚🐽”””
……দুদিন পর হিয়া পুরোপুরি সুস্থ হলে হিয়া তৃনার চেম্বারে যাওয়ার জন্য বের হয়…..
হিয়া:উজান স্যার আপনি এসময়….
উজান:মার কাছে এসেছি…
হিয়া:ওহ কাকিমা ভেতরে আছে আপনি যান গিয়ে কথা বলুন..
উজান:আপনি কোথাও বের হচ্ছেন..
হিয়া:হ্যা ঔ একটু টিউলিপে যাচ্ছি।তৃনা ম্যাম এর আজ এ্যাপোয়ন্টমেন্ট আছে..
উজান:আচ্ছা চলুন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে..
হিয়া:না না আমি পারবো যেতে আপনি আসুন না কাকিমা আছে ভেতরে….ঔ তো মা…কাকিমা উজান স্যার তোমার খোজেঁ এসেছে….আপনারা কথা বলুন আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে
…….উজান বাসবিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে…বাসবিই উজান কে ডেকেছে হিয়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য….
বাসবি:হিয়া থামো…এই রাজা তুই তো এখন টিউলিপে যাবি হিয়াকে নিয়ে যা না…
হিয়া:না না আমি পারবো।এমনিতে সেদিন ওনার গাড়িতে উঠে আমার মাথা ঘুরছিলো….
……হিয়া বের হয়ে অটো খুঁজতে ধরলে উজান ওর পিছন পিছন আসে….
উজান:হিয়া হিয়া
হিয়া:আপনি আবার এলেন কেনো কথা শেষ হলে
উজান:হ্যা শেষ।আপনি এখন আমার গাড়িতে গিয়ে উঠুন
হিয়া:আমি তো বললাম আমি পারবো একা যেতে
উজান:আপনাকে আমি যা বলছি আপনি ওটা করুন😡
হিয়া:আমি পারবো একা যেতে।এতোদিন তো একাই গিয়েছি তাহলে আজ কেনো আপনাকে লাগবে..
উজান:এতোদিন আমি ছিলাম না তাই একা গিয়েছিলেন এখন আমি আছি এখন আমার সাথে যেতে হবে😠
হিয়া:আমি যাবো না কে হোন আপনি আমার…এ দুদিন আপনি অনেক করেছেন আমার জন্য আমি আর চাই না আপনি কিছু করুন আমার জন্য……….অটো এই অটো….কাকু এই টিউলিপ হসপিটালে যাবো যাবেন আপনি
অটোকাকু:আসুন…ভাড়া কিন্তু ৬০টাকা নিবো
হিয়া:আচ্ছা চলুন…
…..হিয়া অটোতে গিয়ে উঠলে উজান হিয়ার পিছুপিছু অটোতে গিয়ে ওঠে….
হিয়া:আরে আরে আরে কি করছেন কি আপনি..
উজান:মামা চলুন..
হিয়া:আরে….আমি একা যাবো আপনি নামুন তো…না হলে কিন্তু আমি নেমে যাবো….
উজান:জাস্ট স্টপ ইট হিয়া।অনেক ধরে আপনার নাটক গুলো সহ্য করছি এর পর আর একটা কথা বললে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম😡😡
…..হিয়া আর কিচ্ছু বলে না…দুজনে চুপচাপ..
উজান:লাস্ট কবে আপনার সাথে অটোতে উঠেছিলাম মনে আছে আপনার..
হিয়ার ঝড়ের রাতের কথা মনে পড়ে গেলে মুখে এক বালতি হাসি জমা হয় আর ও লাফিয়ে ওঠে😊😊
হিয়া:কেনো মনে থাকবে না..ইসস কতো ভালো ছিলো দিন টা…সেদিনের ঝড়,গাড়ি নষ্ট,তারপর অটোর জন্য আমার ব্যাগ টাকে পুচকু বানিয়ে ইসস….তারপর তারপর ঔ গ্যারেজে আমরা দুজন…কতো সুন্দর ছিলো..
উজান:তবে একটা জিনিস দেখুন…সেদিনের অটোতে আমরা দুজন হ্যাসবেন্ড ওয়াইফ এর অভিনয় করেছিলাম আর সাথে আপনার পুচকু……আর আজ আবার এতোদিন পর আপনি আমি একসাথে অটোতে আর আজ সত্যি সত্যি আপনি আর পুচকু😊
হিয়া:হুম এটা তো আমি ভাবি ই নেই..দিন গুলো কেমন জানি ভাবতে ভাবতে পার হয়ে গেলো তাই না
উজান:আর দেখুন কয়েনসিডেন্টলি আপনি আজকেও এই জামা টা পড়ে আসছেন😊
হিয়া:তাই তো…তবে জামার কথা শুনে একটা জিনিস মনে পড়লো আমাকে না কয়েকটা নতুন জামা বানাতে হবে পুচকু বড়ো হচ্ছে না এসব এখন আর হয় না…আর এটা না অনেকদিনের জামা পড়তাম না একটু ঢোলা হয় দেখে পড়ে নিলাম..
অটোকাকু:স্যার এসে গেছি..
……দুজনে অটো থেকে নেমে উজান ভাড়া দিতে গেলে হিয়া দিতে দেয় না….
হিয়া:আপনি কেনো দিচ্ছেন।আমি অটো ঠিক করেছি আমি দিবো..
উজান:অটোতে তো আমিও আসলাম তাই আমি দিবো😡
হিয়া:ঠিক আছে ৬০টাকা ভাড়া তো।আপনি ৩০দিন আমি ৩০দিচ্ছি… (বুম বুম বুম)
উজান:হোয়াট😡😡আপনি…আমার কাছে ৩০ টাকা খুচরো নেই….
হিয়া:১০০টাকা আছে..
উজান:আছে
হিয়া:দিন
হিয়া:কাকু ১০০টাকা ভাংতি হবে তো।আপনি ৬০টাকা নিয়ে আমাকে বাকি টা দিন…
……হিয়া ওর ব্যাগ থেকে ৩০টাকা এ্যাড করে উজান কে ৭০টাকা মিল করে দেয়….
হিয়া:এই যে নিন…হিসাব কাটাকাটি হয়ে গেলো😘
উজান:ডিসগাস্টিং😠😠😠
উজান হিয়ার উপর রাগ করে গটগট করে হেটে টিউলিপে ঢুকে….হিয়া তৃনার চেম্বারে যাওয়ার আগে তৃনার ভিজিট দিতে গেলে উজান আসে..
হিয়া:আরে আপনি কি করছেন…এটা বাড়ি না উজান স্যার এটা টিউলিপ প্লিজ আপনি এভাবে আমার পিছন পিছন ঘুরবেন না…সবাই খারাপ ভাবে নিবে…আর আপনি কেনো ভিজিট দিতে যাচ্ছেন…কেউ বলেছে আপনাকে দিতে😒😒….
……..হিয়া তৃনার ভিজিট দিয়ে চেম্বারে ঢুকে।তৃনা ওকে দেখে কিছু পরীক্ষা করতে দেয়…হিয়া বের হলে….
হিয়া:আপনি এখনো এখানে কি করছেন😡
উজান:তৃনা ম্যাম কি বললো?
হিয়া:বললো সব ঠিক আছে..আর এই কিছু টেস্ট দিলো ওগুলো করে নিতে বললো….
উজান:আর সেদিন যে ব্লাড সেম্পল নিয়ে টেস্ট করতে দিলো ওটার রিপোর্ট দেখে কি বললো?
হিয়া:সব নরমাল আছে রিপোর্ট এ😊
উজান:আচ্ছা চলুন আপনাকে টেস্ট গুলো করায় নিয়ে আসি
হিয়া:আমি পারবো আপনাকে লাগবে না😏
…….হিয়া একাই গিয়ে টেস্ট গুলো করে এনে কাউন্টারে পেমেন্ট করতে গেলে উজান ওর পিছনপিছন এসে….
উজান:দিন আমাকে আমি পেমেন্ট করে দিচ্ছি
হিয়া:প্লিজ উজান স্যার😡…এসব আমার একদম ভালো লাগছে না…কে হোন আপনি আমার যে আপনি আমার সব বিল পেমেন্ট করবেন…লোকে খারাপ ভাবছে আপনি প্লিজ আপনার চেম্বার এ যাব😠
উজান:হিয়া😡
হিয়া:স্যার কতো হলো..?
…..বিল ৬০০০হলেও উজান বিল নেওয়ার লোকটিকে ইশারায় ৩০০০নিতে বলে…
বিল কাউন্টার:মা বেশি না ৩০০০দেও
হিয়া:হ্যা😮৩০০০কেনো…এর আগেও তো আমি এই পরীক্ষা গুলোই করলাম তখন তো ৭০০০হাজার এর মতো নিলেন আপনি ই তো নিলেন তাহলে এখন এতো কম কেনো…
উজান:হ্যা কারন তখন এগুলো বাহির থেকে করে আনতে হতো আর এখন টিউলিপেই এগুলো করানো হয় তাই….
হিয়া:ওহ আচ্ছা….এই যে নিন….
উজান:বাসা যাবেন আপনি এখন….
হিয়া:না আমার আরো কিছু কাজ আছে…এই প্যাক্টিকেল গুলো লিলি ম্যাম এর কাছ থেকে সাইন করে নিতে হবে…এমনি তে আমি আসতে পারি না…আর সব কি ওন লাইনে করা যায় বলুন…
উজান:আচ্ছা ঠিক আছে যাওয়াও আগে আমাকে বলবেন মা ফোন করে বলেছে আপনাকে নিয়ে যেতে।আমি একটু চেম্বারে যাচ্ছি
…..হিয়া উজান কে ভেংচি কেটে চলে যায়….
উজান:(মনেমনে)ইডিয়ট……আর কতো বাকি থাকলো আপনার
বিল কাউন্টার:স্যার আরো ৩০০০
উজান:নিন….
……উজান বাকি টাকা টা পরিশোধ করে চেম্বারের দিকে যায়।এদিকে হিয়া লিলি ম্যাম এর সাথে দেখা করতে গেলে নিলীমার সাথে ওর দেখা হয়….
নিলীমা:হিয়া তুমি এখানে চেকআপ শেষ হয়নি?
হিয়া:হয়ে গেছে ম্যাম এই প্রাক্টিকেল গুলো সাইন করতেই লিলি ম্যাম এর কাছে যাচ্ছিলাম
নিলীম:বেশ তা উজান কে দেখলাম তোমার সাথে একসাথে এলে বুঝি
হিয়া:হ্যা দুজনে টিউলিপেই আসছিলাম তাই উনি বললো একসাথে যাই😊
নিলীমা:আর কতোদিন এভাবে উজানের দয়া নিয়ে চলবে হিয়া
হিয়া:আপনি এভাবে কেনো বলছেন😒
নিলীমা:না হিয়া কিছু জিনিস তো আর মাঝেমাঝে গোপন থাকে না
হিয়া:মানে
নিলীমা:না সেদিন পরীক্ষার জন্য যে দু লাখ টাকা জমা দিলে তা ওটা কি তুমি দিয়েছিলে
হিয়া:বলতেন পারেন ওটা আমারি টাকা।ঠাম্মির একজন বন্ধু ওনার একটা এনজিও আছে মেয়েদের পড়াশুনো এসব দেখে…তো যারা ভালো রেজাল্ট করে তাদের এভাবে স্কলারশিপ দেয়…আর থার্ড ইয়ের এ তো আমি সেকেন্ড হয়েছিলাম তাই ঠাম্মি আমার কথা বলে এটার ব্যবস্থা করে দিয়েছে
নিলীমা:এটা হলে তো ভালোই হয়….আচ্ছা আজ আসি তাহলে
হিয়া:(মনেমনে)নিলীমা ম্যাম এভাবে কেনো বললো।ঠাম্মি তো এটা বলেই আমাকে দিয়েছে টাকা টা আর ঠাম্মির বন্ধুই বা মিথ্যে কেনো বলতে যাবে…..
39-FF: # মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:39
……হিয়ার সেদিন নিলীমার কথা গুলো খুব গায়ে লাগে।হিয়ার মতে তো উজান আর ও এখন আলাদা।আর ঔ ই বা কেনো উজানের দয়া নিতে যাবে।হিয়ার খানিকটা খারাপ লাগা কাজ করে তাই ও লিলি ম্যাম এর কাছে থেকে খাতা গুলো সাইন করে উজান কে কিছু না বলে বাসায় চলে যায়।আর এদিকে উজান হিয়াকে সারা টিউলিপ খুজেঁ শেষ….
উজান:মিসেস দাশগুপ্তা….ম্যাম….লিলি ম্যাম…
লিলি ম্যাম:(পিছন ফিরে) উজান না…ডাকছিলে…?
উজান:হ্যা ম্যাম।মানে হিয়া কি এসেছিলো আপনার কাছে ওর কি জানি প্র্যাক্টিকেল সাইন করানোর ছিলো….
লিলি ম্যাম:হ্যা তো এসেছিলো তো।আর সাইন ওটা তো অনেক্ষন আগেই ও করে আমার চেম্বার থেকে বের হয়ে গেছে….
উজান:(মনেমনে)বের হয়ে গেছে!কোথায় আমার কেবিনে তো আসলো না….ঠিক আছে ম্যাম থ্যাংকস
লিলি:আসি তাহলে
উজান:হুম….কোথায় গেলো উনি।লাইব্রেরি তে যাননি তো আবার…
….উজান গিয়ে লাইব্রেরি চেক করে আসে কিন্তু হিয়াকে পায় না।পরে ও বাসবি কে ফোন করে….
উজান:হ্যালো মা হিয়া কি বাসায় গিয়েছে।ওনাকে আমি সারা টিউলিপে খুজলাম কিন্তু পেলাম না…আমার খুব টেনশন হচ্ছে ওনাকে নিয়ে….
বাসবি:হিয়া তো প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো বাসায় এসে পৌঁছেছে।কেনো তোকে আসার সময় কিছু বলে আসে নি?
উজান:না….হিয়াকে ফোন টা দেও তো….
বাসবি:দ্বারা দিচ্ছি ধোর ফোন টা….হিয়া হিয়া মা হিয়া..
হিয়া:হ্যা কাকিমা বলো ডাকছিলে
বাসবি:ফোন টা নে তো উজান তোর সাথে কথা বলবে….
হিয়া:উজান স্যার আমার সাথে কি কথা বলবে….আচ্ছা দেও….
হিয়া:হ্যালো স্যার বলুন…
উজান:আপনাকে আমি তখন কি বলেছিলাম হিয়া যে যাওয়ার আগে আমাকে একবার জানাবেন।আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো…আপনি তার পরো আমাকে না বলে।এতো সাহস হয় আপনার কি করে….
হিয়া:আরে এতে সাহসের কি আছে।আর আমিই বা আপনার সাথে আসতে যাবো কেনো।দুদিন পর যখন আপনি আবার ইউএস এ ফিরে যাবেন তখন ও কি ওখান থেকে এসে এসে আমাকে ড্রপ করে দিয়ে যাবেন নাকি….
উজান:ডিসগাস্টিং…আপনাকে না আমার সত্যি কিছু বলার নেই….
……..উজান টাস করে হিয়ার মুখের উপর ফোন টা কেটে দেয়……….
হিয়া:যাহ কেটে দিলো
….পরের দিন….
উজান:হ্যালো মা একটা কথা ছিলো….
বাসবি:হ্যা বল
উজান:মা আমাকে একবার এর জন্য হলেও আবার একবার ইউ এস এ তে যেতে হবে
বাসবি:সেকি কথা রাজা কেনো?
উজান:আমি তো ছুটি নিয়ে এসেছিলাম কিছুদিন এর জন্য।ওফিসিয়ালি তো ওদের কে কিছু জানানো হয়নি আর অনেক কাগজ পএের ব্যাপার আছে ওগুলো মেটাতে হবে।আর আমার অনেক জিনিস ও তো আমি রেখো এসেছি ওগুলো নিয়ে আসা দরকার।
বাসবি:বুঝলাম…কিন্তু
উজান:আমার পরশু সকালের ফ্লাইট আমি চাই কালকে রাতটা আমি হিয়াদের বাড়িতে থেকে ও দিক দিয়ে এ্যায়ারপোর্ট এ চলে যাবো
বাসবি:ঠিক আছে আয় তাহলে তুই আমি তো এ বাড়িতেই আছি
উজান:আর মা তুমি প্লিজ হিয়াকে বলো না আমি কিছুদিন এর জন্য যাচ্ছি ওকে বলবে আমি একবারের জন্য চলে যাচ্ছি
বাসবি:সেকি কথা এমন মিথ্যে কেনো বলতে যাবো
উজান:আমি কালকে দিনটে একটু ওনার সাথে কাটাতে চাই আর আমি আবার আসবো শুনলে হয়তো হিয়া নাও থাকতে পারে আমার সাথে তাই….
বাসবি:আচ্ছা বেশ বলবো না….
……পরের দিন রাত ১২টা…..
হিয়া:আপনি কালকেই চলে যাবেন(হালকা মন খারাপ)
উজান:হুম
হিয়া:কটার ফ্লাইট😥
উজান:এই ১০টে
হিয়া:আর আসবেন না😥
উজান:তাই তো মনে হচ্ছে।আসতেও পারি বলা তো যায় না এবার যেমন এলাম…
হিয়া:ওহ….সব প্যাকিং শেষ
উজান:প্যাকিং আর কি একটাই তো লাগেজ নিয়ে এসেছিলাম ওটাই গোছানো আছে….
হিয়া:ওহ…কফি খাবেন
উজান:না…কিছু বলবেন আপনি…?
হিয়া:ইয়ে মানে না কিছু না
উজান:বাহিরে বের হবেন।চলুন আজ আপনাকে আর পুচকু কে আইসক্রিম খাওয়াও নিয়ে আসি
হিয়া:এখন এতো রাতে?
উজান:হুম চলো। আবার কবে আসবো না আসবো?চলো রেডি হোও
হিয়া:কিন্তু
উজান:কিন্তু কি এতো ভালো সুযোগ দিচ্ছি তুমি তারপরো না করছো…?
হিয়া:মনেমনে(একটা রাত ই তো তার পর তো উনি)….আচ্ছা আপনি বের হোন আমি দু মিনিটে আসছি….
গাড়িতেঃ
হিয়া:কেমন একটা শীত শীত করছে তাই না…?
উজান:এসি টা কমিয়ে দিবো…
হিয়া:দিন আমি জানালা খুলবো
…..হিয়া জানালা খুলে শীতের রাতের বাতাস মুখে মাখে…
উজান:আপনাকে তো আইসক্রিম খাওয়াবো বলে নিয়ে এলাম কিন্তু কোনো দোকানি তো মনে হচ্ছে না খোলা পাবো আজ
হিয়া:আমি ওসব বুঝি না আপনি যখন বলেছেন তখন আপনাকে খাওয়াতেই হবে….
উজান:হুম……….আচ্ছা অন্য কিছু কিনে দেই..
হিয়া:না আমি আইসক্রিম ই খাবো আইসক্রিম ই খাবো আইসক্রিম ই খাবো..
উজান:জেদ কেনো করছো তুমি…দেখতেই তো পাচ্ছো সব দোকান গুলো বন্ধ হয়ে গেছে..
হিয়া:সেটা তো এতো রাতে আমাকে নিয়ে বের হওয়ার সময় ভাবা উচিৎ ছিলো আপনার..
উজান:পুচকু আসার পর না আপনার এই জেদ গুলো বেশি বাড়ছে….
হিয়া:আচ্ছা আগে আমার একটা কথা শুনুন আপনি আমাকে ঠিক কি বলে ডাকবেন তুমি না আপনি তা ঠিক করুন।তখন থেকে দেখছি একবার তুমি একবার আপনি..
উজান:তো কি হয়েছে ওটা তো হয়ে যায় তাই না
হিয়া:তাই…আর শুনুন আমার জেদ আগে থেকেই এমনি ছিলো।শুধু দেখাইনি এই যা…
…..উজান একটা দোকান খোলা পেলে হিয়াকে নিয়ে আইসক্রিম কিনে আনে….
উজান:নিন এবার খান খেয়ে আমায় উদ্ধার করুন..
হিয়া:ইসস কেমন জানি শীত শীত তার উপর এই ঠান্ডা আইসক্রিম উফফ..
উজান:হ্যা এরপর এটা খেয়ে আপনার আবার জ্বর আসুক..
হিয়া:আরে কিচ্ছু হবে না..
উজান:হয়েছে আপনার এবার বাড়ি চলুন..মা ফোন দিয়েছিলো রাগ হয়েছে খুব।এ অবস্থায় এতো রাতে আপনাকে নিয়ে বের হয়েছি ওসব হাওয়া বাতাস না কি যেনো লাগে নাকি তাই
হিয়া:কটা বাজে কেবল তো দুটো এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাবো..
উজান:তো আর কি করতে চান..
হিয়া:এই বলছি কি একটু গাড়ি করে শহর টা ঘুরে নিয়ে আসুন না…
উজান:হোয়াট
হিয়া:এতো হোয়াট হোয়াট করেন কেনো বাংলা বোঝেন না নাকি..
উজান:আমার গাড়িতে ওতো তেল নেই
হিয়া:তো কোথাও একটা দাড়িয়ে ভরে নিবেন..রাতে তো আর তেল পাম্প ওফ থাকে না..
উজান:ডিসগাস্টিং…..আসুন
হিয়া:হ্যা ওটাই তো পারেন
……উজান গাড়িতে গিয়ে উঠতে ধরলে…
হিয়া:উজান স্যার
উজান:আবার কি হিয়া
হিয়া:দেখুন কার যেনো একটা সাইকেল
উজান:তো
হিয়া:তো মানে বলছি কি এই রাস্তা টা তে আমাকে এক চক্কর ঘুরিয়ে আনুন না..
উজান:হোয়াট….আমি পারবো না
হিয়া:আমিও তাহলে গাড়িতে উঠবো না..
উজান:এটা কি ছেলেমানুষি হিয়া?
হিয়া:ঠিক আছে আপনাকে চালাতে হবে না আমি পারি সাইকেল চালাতে।আপনি আমার সামনে বসবেন আমি আপনাকে নিয়ে এক চক্কর ঘুরে আসবো……(বুম বুম বুম)
উজান:হ্যা…আমি সামনে আর আপনি এই শরীর নিয়ে সাইকেল চালাবেন…সিরিয়াসলি হিয়া..
……হিয়া কোনো কথা না শুনে সাইকেলে দিকে দৌড় দেয়।উজানো ওর পিছন পিছন যায়….
হিয়া:যা সাইকেলে তো তালা দেওয়া…(মাথায় হাত দিয়ে)
উজান:তো তোমার কি মনে হলো কেউ মাঝরাতে এভাবে নিজের সাইকেল ফেলে রাখবে…ইডিয়ট…..এবার যাও গিয়ে গাড়িতে বসো…
হিয়া:হিয়া উজানকে একটা ভেংচি কেটে গাড়িতে গিয়ে বসে….
উজান:কেনো যে এনাকে নিয়ে বের হতে গেলাম….
……গাড়িতে রাত তিনটে…..
উজান:হয়েছে আপনার শহর ঘোরা….এবার বাড়িতে যাবো আমরা…
হিয়া:না না স্যার আর একটু….
উজান:হিয়া কোনো ধারনা আছে তোমার কটা বাজে….
হিয়া:আ হা বাজুক না……আচ্ছা একটা গান ছেড়ে দিন না কেমন যেনো ফ্যাকাসে লাগছে সময়টা….
উজান:তোমার হাত নেই….
হিয়া:উজান কে আবার একটা ভেংচি কেটে গান ওন করে….
“”””এসেছে রাত ভিজে হাওয়া”””
“””খোলা চিঠির পাশে থাক”””
“””খেয়ালি খাম
“””তোকে হঠাৎ ভুল করে ছুইয়ে দিলাম”””
“””সে আদরের অন্য নাম””””
….সকাল ৮টা….
হিয়ার মন টা ভীষন খারাপ।সম্পর্ক টা যাই হোক এ কদিন তো উজান কে ও ওর পাশে পেয়েছিলো।হিয়ার মন যেনো কিছু তে উজান কে যেতে দিতে চায় না……উজান ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে ধরলো হিয়া ওর পিছন পিছন ঘুরঘুর করে….
উজান:কি হলো এক জায়গাই গিয়ে বসুন।এভাবে এপাশ ওপাশ ছেটাছুটি কেনো করছেন….
হিয়া:না এমনি…….আবার কবে আসবেন
উজান:ইচ্ছে তো নেই আসার।তাও দেখি দু তিন বছর
হিয়া:(হিয়ার দম টা আটকে যায়..)…কাকিমা কে না দেখে আপনি এতোদিন থাকতে পারবেন..
উজান:কেনো পারবো না।আর ফোন তো আছে ভিডিও কল করে দেখে নিবো..
হিয়া:ভিডিও কল এ কিছু হয় নাকি
উজান:ওহ একটা কথা তোমার বেবি হলে একবার আমাকে ভিডিও কল করো যদি তোমার হাসবেন্ড অনুমিত দেয় তাহলে….তোমার পুচকু কে তো আর আমি এসে দেখতে পারবো না তাই আর কি বললাম
হিয়া:(এবার এক ফোটা দু ফোটা পানি পড়তে শুরু করে…কিন্তু উজান রেডি হচ্ছিলো খেয়াল করে না…)
উজান:আর ভাবছি আমিও এবার কাউকে বিয়ে টা করে নিবো কি বলো।এভাবে তো আর একা একা থাকা যায় না…লাইফে একজন পার্টনার এর দরকার তো আছেই…
…..হিয়ার এবার ওয়াটার সিস্টেম চালু হয়ে যায়…উজান পিছন ফিরে….
উজান:আপনি কাঁদছেন?…. হিয়া…কি হলো আবার….
হিয়া:(এবার ফুসফুসিয়ে কেঁদে ফেলে…)…..
উজান:(হিয়ার কাছে গিয়ে)….আপনি কাঁদছেন কেনো হিয়া…..
…..হিয়া উজান কে সপাটে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে…হিয়ার কান্নায় উজানের শার্ট এর বাম পাশ টা ভিজে যায়..
উজান:আপনার হাসবেন্ড যদি এসে দেখে আমি যাবো বলে আপনি এভাবে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন উনি খারাপ ভাববে না..
হিয়া:আমার হাসবেন্ড আপনার মতো খারাপ না..
উজান:আমি খারাপ?
হিয়া:হ্যা আপনি খুব খারাপ..
উজান:তাই তো চলে যাচ্ছি।আমি তো খারাপ তাই না..
…..হিয়া উজান কে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে….মনেমনে(থেকে যান না আপনি।আপনাকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।আর কবে পাবো আপনাকে এভাবে)
…..হিয়া এবার মুখ টা তুলে ওর দুহাত দিয়ে উজানের মুখ টা কাছে টেনে এনে উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়……অনেকক্ষণ পর হিয়া উজান কে ছেড়ে দিয়ে…
হিয়া:সরি
উজান:(হিয়াকে ওর কাছে টেনে এনে হিয়ার পেটে ওর হাত টা বুলায় কিছুক্ষণ )….পুচকুর খেয়াল রাখবেন।আমি ফোন দিবো গিয়ে……
……..উজান সেদিন সকালের ফ্লাইট এ ইউ এস তে চলে যায়….এক সপ্তাহ এ আসার কথা থাকলেও ফর্মালিটি গুলো শেষ করতে আর বাকি এ্যাপোয়ন্টমেন্ট গুলো শেষ করতে ১মাসের মতো লেগে যায়।আজ প্রায় ১মাস পর উজান ফিরে সাথে সবার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসে আর পুচকুর জন্য তো এক লাগেজ জিনিসপত আলাদা….
…..
মেট্রন:হিয়া
হিয়া:মিরাদী
মেট্রন:ক্লাস ছিলো আজ
হিয়া:হুম এর পর তো পুচকু বড়ো হয়ে যাচ্ছে না তখন তো নাও আসতে পারি।আর লাইভে কি সবটা করা যায় বলো
মেট্রন:হুম সেটা ঠিক….তা উজান স্যার এর সাথে দেখা করেছো আজ তো উনি এলেন সকালে
হিয়া:উজান স্যার এখানে…আসার কথা ছিলো ওনার…কই কাকিমা বা বুলি কেউ তো কিছু বললো না
মেট্রন:সেকি কথা আর উজান স্যার তো একবারেই চলে আসছে ইউ এস থেকে তুমি জানতে না
হিয়া:না
মেট্রন:এখন তো জানলে।স্যার ওনার গেস্টরুমে আছে আর বাসবি ম্যাম স্যারের ঠাম্মি ওরাও তো এসেছে আজ
হিয়া:তাই…আচ্ছা আমি দেখি সময় পেলে যাবো
মেট্রন:ঠিক আছে আসছি….
….হিয়া আসবে উজান বাসবি কারো ই আন্দাজ ছিলো না…হিয়া এসে গেটে দাড়াতেই ঠাম্মি উজান আর বাসবির কিছু কথা শুনতে পায় যেগুলো হিয়াকে খুব কষ্ট দেয়……
উজান:আমি যখন এসেই পড়েছি আমি আর দেড়ি করতে চাই না মা।আমি কালকেই প্রেস মিট এর ব্যবস্থা করে হিয়াকে সবার সামনে নিজের ওয়াইফ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে চাই…
বাসবি:ঠিক আছে তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর।এখন তো আর কোনো দোটানা নেই তাই না….
ঠাম্মি:কিন্তু তুই হিয়াকে কবে বলবি যে তুই অনেক আগেই সবটা জেনে ছিলি আর এতোদিন ওর সাথে অভিনয় করে গেলি।ওকেও তো জানাতে হবে সবটা….
বাসবি:না মা হিয়াকে এখন এসব বলা যাবে না যে রাজা সব জানতো।হিয়া যে মেয়ে ওহ আমাকে যে কথা গুলো বলেছে আমার ভয় করে সবটা সামনে আসলে না ওহ আবার বেকে বসে….এমনি তে তো ওহ ওর সন্তান এর দিব্যি দিয়েছিলো এখন যদি জানতে পারে আমি ওটা না মেনে রাজা কে সব বলে দিয়েছি তাহলে…..
উজান:কিন্তু মা তাই বলে তো আমি সবসময় এভাবে অভিনয় করতে পারবো না ওর সামনে…
ঠাম্মি:তাই না…আর তুই যে আমাকে যাওয়ার সময় ঔ ওতোগুলো টাকা দিয়ে গিয়ে বললি হিয়াকে দেওয়ার জন্য জানিস তখন আমাকে কতো অভিনয় করতে হয়েছে হিয়ার সামনে। ভাগ্যিস আমার বন্ধু মৌনাক্ষী ছিলো ওহ ছিলো বলেই তো মিথ্যে মিথ্যাে ঔ এনজিওর বাহানা করে টাকা টা ওকে দিতে পারলাম।না হলে হিয়া যে মেয়ে যদি জানতো তুই ওকে টাকা গুলো দিয়েছিস কি কেলেঙ্কারি টাই না হতো।এই বুড়ো বয়সে যে আর কতো কি দেখতে হবে তোদের….
…..বাসবি আর ঠাম্মি হেসে ফেলে…..
বাসবি:শুধু কি মা আপনি,সমরেশ এর কথা টা ভাবুন তো কিভাবে রাজা যেই বই গুলো দিতে বললো ওগুলো দিবে বলে মিথ্যে লাইব্রেরি র বাহানা করে হিয়াকে দিলো….সেদিন যে হিয়ার কতো প্রশ্নের উওর দিতে হয়েছিলো উফফ….
উজান:শুধু কি ওটা ওনার জেদ তো যেনো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে ।সেদিন বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে কি রাগ টাই না দেখালো আমাকে।কেউ বলবে আমি ওনার টিচার হই…কিন্তু উনিও তো আমাকে চিনে না আমি বিল যে নেয় তাকে বলে ওনাকে কম করে নিতে বললাম
ঠাম্মি:ওমা তারপর
উজান:তারপর আরকি …..নিজেকে খুব চালাক ভাবে….
……..উজান আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই নজর যায় গেট এ দাড়ানো হিয়ার উপর….
উজান:হিয়া আপনি….!!
……..হিয়া ভেতরে এসে…
হিয়া:এসব কি মা…তার মানে নিলীমা ম্যাম যা বলেছিলো সব ঠিকি বলেছে….এতোদিন তাহলে আমি ওনার দয়াতেই….ঠাম্মি তুমিও আমাকে মিথ্যে বললে….
বাসবি:হিয়া মা শোন..
হিয়া:না মা অনেক শুনেছি তোমাদের।তুমি না বলতে তুমি আমাকে নিজের মেয়ের মতো ভাবো।তাহলে এসব কি।তুমিও তোমার ছেলের সাথে মিলে
বাসবি:না মা আমার কথা টা তো শোন
হিয়া:(কাঁদতে কাঁদতে)….তুমি আজ প্রমাণ করে দিলে তোমার মেয়ে বলে কেউ নেই।তুমি আমাকে না তুমি শুধু তোমার ছেলেকে ভালোবাসো….
উজান:হিয়া
হিয়া:প্লিজ উজান স্যার।অনেক হয়েছে আর কতো আর কতো ঠকাবেন আপনি আমাকে….কি পান আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে আপনি….আমি কোনোদিন আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না কোনোদিন না….
……হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যায়।উজান ওর পিছু নেয়….
বাসবি:এই ভয় টাই আমি পেয়েছিলাম মা।এই ভয় টাই…..জানি না আমি এখন এসব কিভাবে সামলাবো….
ঠাম্মি:কিছু হবে না বৌমা।তুমি এতো ভেবো না দেখো উজান ঠিক হিয়াকে মানিয়ে নিবে….
….হিয়াদের বাড়ি….
হিয়া কাঁদতে কাঁদতে হন্তদন্ত হয়ে ওর রুমে ঢুকে…
বিকাশবাবু:হিয়া মা…হিয়া….এই বুলি কি হলো রে মেয়েটার।এভাবে কাঁদতে কাঁদতে কেনো….
উজান:হিয়া হিয়া..
বুলি:উজান দা তুমি..!
উজান:হিয়া কোথায় গেলো?
বুলি:দিদি তো ওর রুমেই এসে কেমন হন হন করে ঢুকে পড়লো
উজান:হিয়া….
…..হিয়া এসে সমরেশ উজানের হয়ে যেই বই গুলো হিয়াকে দিয়েছিলো ওগুলো খুঁজতে থাকে….
উজান:হিয়া…হিয়া লিসেন্ট টু মি হিয়া…
হিয়া:আপনি এসেছেন ভালোই হয়েছে।আপনার দেওয়া এই বই গুলো ওহ সরি দানের বই গুলো নিয়ে যান…
উজান:হিয়া আমার কথা টা একবার শুনুন প্লিজ।হিয়া…
হিয়া:একটু দাড়ান কেমন।অনেক গুলো বই তো সময় লাগছে একটু….
উজান:হিয়া…লিসেন্ট…জাস্ট স্টপ ইট হিয়া….
হিয়া:আর আমি আমি শুধু আপনার টাকা গুলো থেকে দু লক্ষ টাকা নিয়েছি….আমি আমি ওগুলো আপনাকে হ্যা একমাসের মধ্যেই দিয়ে দিবো…বুলি এই বুলি এদিকে আয় তো জলদি…বুলি
…..উজান এবার রেগে গিয়ে হিয়ার বাহু দুটো ধরে হিয়াকে টেনে ওর কাছে নিয়ে আসে…
উজান:অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে আমি থামতে বলছি আপনি থামছেন না….কি হয়েছে হ্যা কি হয়েছে কিসের এতো জেদ আপনার।ইদানীং একটু বেশি বাড় বেড়েছেন আপনি….
হিয়া:তাই…যদি আমি বেশি বাড় বেড়েই থাকি তাতে আপনার কি।আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমার আর আপনার এখন আর কোনো সম্পর্ক নেই…তাই আমার কোনো বিষয়ে ইন্টায়ফেআর করার রাইট আপনার নেই…..
……উজান হিয়ার একটা হাত পিছন দিয়ে মোছড়ে ধরে।আরো শক্ত করে হিয়াকে ওর কাছে টেনে এনে….
উজান:আমার কিসে রাইট আছে আর না আছে তা আমি আপনার কাছ থেকে শিখবো না মিসেস হিয়া চ্যাটার্জি…
হিয়া:মিসেস হিয়া চ্যাটার্জি…হাসালেন উজান স্যার আপনি।তা এতো দিন পর আপনার রিয়েলাইজ হলো আমি মিসেস চ্যাটার্জি।আমাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে ছিলো না আপনার…তখন তো হাতে ঔ ডিভোর্স পেপার দিয়ে কতো সহজে বলে দিলেন সব টা শেষ।আর আজ কি হলো আপনার
উজান:এনাফ ইস এনাফ হিয়া..
হিয়া:আমার হাত ছাড়ুন লাগছে আমার……বুলি বুলি….
উজান:হিয়া এবার কিন্তু আমি ভীষন রেগে যাবো
হিয়া:ওটাই তো করতে পারেন আপনি….
….বাসবি ও ওদের পিছন পিছন আসে..
বাসবি:রাজা…হিয়া….
….উজান হিয়াকে ছেড়ে দেয়…..
বাসবি:হিয়া মা
হিয়া:কাকিমা প্লিজ তুমি এর মধ্যে এসো না
বিকাশবাবু:হিয়া এমন করে না মা।আগে সব টা একটু শুনে নে…
হিয়া:তুমি বুলি তোমারও সবটা জানতে তাই না বাবা….
বিকাশবাবু:এতে জানা না জানার কি আছে রে মা।সব যখন জানা হয়ে গেলো তুই এভাবে রাগ করে থাকিস না মা।সবটা মিটিয়ে নে..
হিয়া:এতো সহজ সবটা…কি মিটাবো বলতে পারো।কিছু কি আছে মেটানোর।আমার তো মনে হয় না।আর ডিভোর্স পেপারে সাইন করা নিয়ে কথা তো হ্যা দুজনের কেউ ই করি নাই সাইন,হয়নি ডিভোর্স তো…তাই বলে এই ৬টা মাস আমার সাথে যেই অন্যায় টা করা হলো সেটা মাফ….
উজান:হিয়া কষ্ট কিন্তু আপনার একার হয়নি কষ্ট আমারো হয়েছিলো।আপনাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট আমারো হয়েছিলো..
হিয়া:বিশ্বাস করতে পারলাম না উজান স্যার আপনাকে এবার..
বাসবি:তুমি কি বলছো হিয়া রাজার কষ্ট না হলে ওহ কি ফিরে আসে বলো আবার..
হিয়া:তুমি তো এখন তোমার ছেলের হয়েই বলবে তাই না মা…..
…..হিয়ার কথায় উজানের রাগ গটগট করে বেড়েই যাচ্ছিলো।শুধু পুচকুর কথা ভেবে উজান ওর রাগ টাকে কন্ট্রোল করে….রাগে উজানের লাল লাল গাল আর কান গুলো আরো লাল হয়ে যাচ্ছিলো….
বিকাশবাবু:না মা তা কেনো হতে যাবে।তোর কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে…
হিয়া:তাই তো আমারি ভুল সবটা….
……হিয়া আলমারি থেকে বুলির প্রজেক্ট এর ১লাখ টাকা বের করে এনে উজানের হাতে দিয়ে….
হিয়া:এটা নিন…এতে ১লাখের মতো আছে…আর আমি তো বললাম বাকিটা নিয়ে আপনি ভাববেন না।আমি ১মাসের মধ্যে আপনাকে দিয়ে দিবো….
উজান:হিয়া তুমি কিন্তু এবার তোমার সব লিমিট ক্রশ করে ফেলছো😡
হিয়া:এটা আমার অনেক আগেই করা উচিৎ ছিলো😡
বিকাশবাবু:হিয়া…আমি তোকে এই শিক্ষা দিয়েছি রে মা।তুই কিন্তু এবার সত্যি অনেক বাড়াবাড়ি করছিস….ভুলে যাস না উজান কিন্তু এখনো তোর হাডবেন্ড…
হিয়া:আমি মানি না।আমি ওনাকে আর আমার হাসবেন্ড মানি না😡
বাসবি:হিয়া
হিয়া:আর বাড়াবাড়ি বলছো…..তুমি তো নিজে সাক্ষী ছিলে বাবা আমার সব কিছুর….আজকে আমি ৪ ৫ ধরে আমার গ্রামের বাড়িতে যেতে পারি না কার জন্য এনার জন্য…পুরো টিউলিপ যখন আমাকে নিয়ে চারটে খারাপ কথা বলছিলো তখন উনি কোথায় ছিলো তখন তো উনি এসে একবারো বলে নি হিয়া আমার ওয়াইফ এটা আমার সন্তান।আমি আমি বারে কেনো গিয়েছিলাম সেদিন জানতে চেয়েছিলো উনি একবারো। যখন উনি ইউ এস এ তে ছিলেন তখন একবারো জানতে চেয়েছিলেন আমি কেমন আছি…..আর তুমি বলছো আমি বাড়াবাড়ি করছি আমার ওনাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ
উজান:হিয়া আমি সেসময় জানতাম না যে আপনি
হিয়া:কখনো কি চেয়েছিলেন জানতে।সেদিন যখন এ্যায়ারপোর্টে আমি আপনাকে কিছু বলার জন্য গিয়েছিলাম আপনি একবারো শুনতে চেয়েছিলেন আমি কি বলতে চাই….চান নি…তাই দয়া করে আপনি আর কখনো আমার সাথে বা আমার ফ্যামিলির কারো সাথে কোনোরকম যোগাযোগ করার ট্রাই করবেন না….
উজান:তাহলে আমাদের সন্তান আমাদের পুচকু তার কি হবে…
হিয়া:পুচকু শুধু আমার।আমি ওর সবকিছু..আমি যখন এই ছটা মাস আপনাকে ছাড়া সব সামলে নিয়েছি বাকি সময় গুলোও আমি পারবো নিজেকে আর পুচকু কে একা সামলাতে…
উজান:হিয়া…….
……হিয়া কিছু বলতে যাওয়ার আগেই হিয়ার শরীর টা খারাপ হয়ে পড়ে।মাথা ঘুরতে থাকে….
উজান:মা তুমি ছাড়ো আমাকে দেখতে দেও
হিয়া:তুমি ওনাকে চলে যেতে বলো মা।উনি থাকলে আমার আরো খারাপ লাগবে…প্লিজ তুমি ওনাকে যেতে বলো
বাসবি:রাজা তুই এখন যা।হিয়া আগে একটু শান্ত হোক তুই তার পর আসিস…..দাড়িয়ে দেখছিস কি যা না…..
…….উজান গাড়িতে গিয়ে টিউলিপের জন্য বেরিয়ে পড়ে…হিয়ার কথা গুলো উজানের তখনো কানে বাজে…উজান ওর রুমে গিয়ে ড্রিংক করে আর হিয়ার কথা গুলো ভাবে…..
উজান:আপনি কেনো এমন করছেন হিয়া।করেছি না হয় আমি ভুল।কিন্তু আপনি তো ঠিক ছিলেন আপনি কেনো সব টা লুকোলেন আমার কাছে…আর আজ সব দোষ আমাকে দিয়ে আপনি…আমি আপনার সাথে থাকতে চাই হিয়া…আপনাকে আমার কাছে চাই…খুব দরকার আপনাকে আমার…(ড্রিংক করতে করতে)