#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৭৩.(বর্ধিতাংশ)
“একজন ধর্ষি!তাকে কি কেউ ভালোবাসে উশ্মি?বাসতে পারে কি?”
জেল হাজতের পাকায় দৃষ্টি সীমাবদ্ধ করে বাক্যখানা আওড়িয়ে দাঁত দ্বারা ঠোট কা!মড়ে ধরে চাঁদ।চোখ তার জলে টইটম্বুর।বুকের ভেতর দহন যন্ত্রণা হচ্ছে।এর তুলনায় ম!রণ যন্ত্রণাও ঢের সুখের হতো।এরূপ ভাবনাই আপাতত চাঁদের মস্তিষ্কে ঘুরপাক খাচ্ছে।তবুও সে নিজেকে সামলে লম্বা শ্বাস ফেলে দুচোখের পাতা এক করে বর্ষণ ঝড়ায় তার শুষ্ক কপোল গড়িয়ে।বাঁচতে আর ইচ্ছে করছেনা।এই জেলখানা থেকে বেরুতেও ইচ্ছে হচ্ছেনা।বড়ো ইচ্ছে জাগছে এখানেই থেকে সে পচুক,পচে গলে ম!রে যাক।নাহয় তার খুব কঠিন সাজা হোক।সেই সাজার দরুন তার প্রাকৃতিক এক মৃ!ত্যু ঘটুক।আ!ত্মহ!ত্যার পথ না সে পেরেছিলো তখন নিতে,না পারছে এখন।এখন যেনো তখনকার তুলনায়ও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে।এ যন্ত্রণা ভালোবাসার বিনিময়ে কেবলই সন্দেহ আর অবিশ্বাস পাওয়ার।এ যন্ত্রণা ভালোবাসার মানুষের থেকে কেবলই অপমান আর লাঞ্চণা-বঞ্চণার।এ যন্ত্রণা কাউকে সত্যিগুলো বলতে না পারার।তবুও আজ সে উশ্মিকে বলবে,পুরো সত্যটা সে উশ্মিকে জানাবে।অতঃপর আবার পালিয়ে যাবে সকলের দৃষ্টির বাইরে।দূরে,বহুদূরে।আর যে সে পারছেনা।এত দুঃখ,কষ্ট আর সহ্য করার মতো ক্ষমতা চাঁদের নেই।তার ভাবনায় সুতো কাটে উশ্মির অবাক কন্ঠে চেচানোতে,
“কী বলছো ভাবি?মাথা ঠিক আছে?”
লম্বা শ্বাস ফেলে লাল হয়ে আসা দৃষ্টি নিয়েই উশ্মির পানে তাকায় চাঁদ।অতঃপর কিঞ্চিৎ হেসে বলে,
“আমার মাথা ঠিকই আছে উশ্মি।যে সত্যি সকলে জানতে চেয়েছে।যে সত্যি এতবছর আমি কেবলই আমার হৃদয়জুড়ে লুক্কায়িত রেখেছি,তা আমি তোমায় বলছি।আর যে ভার নিতে পারছিনা রে!মনে হচ্ছে কেউ আমার হৃদয় চি!ড়ে দিচ্ছে!”
“পাগল হয়েছো?কিসব বলছো ভাবি?”
“কেবলই সেই সত্যিটুকুই তোমায় বলবো,যতটুকু জানা তোমার প্রয়োজন।এর বেশি জানতে চাইবেনা তো?”
বলে অসহায় দৃষ্টি উশ্মির পানে নিক্ষেপ করতেই উশ্মি বলে,
“চাইবোনা,বলো”
লম্বা শ্বাস ফেলে হাজতের শোয়ার উঁচু জায়গায় পা গুটিয়ে বসে দৃষ্টি ফ্লোরপানে রেখে বেশ ধীর কন্ঠে মলিনভাবে চাঁদ বলতে আরম্ভ করে,
“তোমার ভাই আদোতে আমায় ভালোবাসতো কিনা জানিনা উশ্মি।তবে এখন কেবলই ঘৃ!ণা করে।আর তার কারণ হলো সে মনে করে অরণের এ অবস্থার জন্য আমি দায়ী।কিন্তু আমি অরণকে কস্মিনকালেও মা!রার মতো জঘন্য কাজ চিন্তায়ও আনতে পারিনা,পারিনি।হ্যা সেদিন অরণের মাথায় আ!ঘা!ত আমি অবশ্যই করেছিলাম তবে তা কেবলই তাকে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচাতে,মা!রতে নয়।আর সেদিন পালিয়েছিলাম এইজন্যই যে আমার মতো একজন ধ!র্ষি!তা কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।কেউ তাকে ভালোবাসতে পারেনা,প্রণয়ও কখনো বাসবেনা।সে বাসলেও আমি চাইনা তার জীবনে আমি আর থাকি।কেনোই বা থাকবো?কীই বা আছে আমার মাঝে?সবতো বিলীনই হয়ে গেছে।বর্তমানে আমি কেবলই এক মিথ্যে খোলসে আবৃত মানবমূর্তি।আর আমার ধ……ধর্ষ!ণের কথা আমার ভাই আর অরণ ব্যতীত আর কেউ জানেনা।আমার নিজ মা-বাবাও না।আর আমি আশা করবো এ সত্যিটা তুমি যেভাবে জেনেছো সেভাবেই সবটা গিলে হজম করে ফেলবে”
বলেই আড়চোখে উশ্মির পানে তাকায় চাঁদ।তাকিয়ে দেখতে পায় উশ্মির চোখভর্তি পানি।তা দেখামাত্র হকচকিয়ে উঠে উশ্মির বাহু ছুয়ে চাঁদ বিচলিত হয়ে বলে,
“এই মেয়ে কাদছো কেনো?কী হয়েছে?”
ঠোট কা!মড়ে দীর্ঘ শ্বাস ভেতরে নিয়ে উশ্মি বলে,
“এতটা কষ্টদায়ক বিষয় এতটা সাবলীলভাবে কী করে বলছো ভাবি?”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হেসে চাঁদ বলে,
“একবছরেরও বেশি সময় ধরে ট্রমায় ছিলাম।পরে আস্তে আস্তে ঠিক হয়েছি,নিজেকে ঠিক করতে হয়েছে।নিজের মা-বাবা,ভাই,পুরো পরিবারটার জন্য।চাইলেই আ!ত্মহ!ত্যার পথ বেছে নিতে পারতাম তবে আল্লাহ যে আমায় কখনো ক্ষমা করবেন না।আর না পারবো আম্মু আব্বু আর আমার একমাত্র প্রাণের চেয়েও প্রিয় ভাইটার দীর্ঘশ্বাস আর অভ্যন্তরীণ কান্নার কারণ হতে।আম্মু হয়তো চেচিয়েই কান্না করতে পারবে।কিন্তু আমার ভাই?আর আমার আব্বু?তারাতো কাদতেও পারবেনা,সইতেও পারবেনা।আমার পুরো পরিবারটা এক নিমিষেই ধ্বং!স হয়ে যাবে।না পারবে কেউ ভালোভাবে বাঁচতে,না পারবে ম!রতে।সকলের মনে কেবলই এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে বাঁচতে চাইনি উশ্মি।নিজেকে ভুলে পরিবারটার জন্যই বেঁচে আছি।আর চির ঋণী হয়ে আছি অরণ নামক সেই পবিত্র আত্মার অধিকারী মানবটার প্রতি।সে যদি সেদিন না থাকতো জা!নোয়ারগুলো…….জা!নোয়ারগুলো আত্মাটাকেতো আমার মে!রে ছিলোই,রুহটাকেও মে!রে দিতো।কেবল তার জন্যই বেঁচে ফিরতে পেরেছিলাম।আর পশুগুলোর নি!র্মম সেই অত্যাচারগুলো মনে পড়লে এখনও আমার গা শিউরে উঠে উশ্মি!তাদের সেই বি!শ্রী ছোয়াগুলোয় গা ঘিনঘিন করে উঠে আমার।ইচ্ছা করে নিজ দেহকেই কে!টেকু!টে নষ্ট করে দেই।ঘষেমেজে আগের মতো চকচকে করে ফেলি।কিন্তু আমি যে পারিনা উশ্মি।পারিনাতো!যখনই সেই দৃশ্যগুলো মনে পড়ে তখন যেনো একবার করে বিশ্রীভাবে ম*রে যাই আমি!বড্ড পীড়াদায়ক এ যন্ত্রণা।নিজেকে জ্বালি!য়েপু!ড়িয়ে দিতে ইচ্ছা হয়”
অতঃপর ফের সেদিনে ফিরে যায় যেদিন নিজের সর্বস্ব খুইয়েছিলো চাঁদ।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বাড়িতে এসে নিজ রুম ভেতর থেকে আটকে দিয়ে উন্মাদের ন্যায় ঘর্মাক্ত শরীর নিয়েই আলমারি খুলে আধখোলা ডায়েরীটা বের করে সেভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে পড়া আরম্ভ করে প্রণয়।প্রথম পাতা,
‘আজ আমার সতেরোতম জন্মদিন।তো সেই উপলক্ষেই নিজেকেই নিজে দু’টো ডায়েরী গিফট করলাম।তন্মধ্যে তুমি একটা।তোমার প্রতিটা পাতায় নিজের সুখ,দুখের আলাপন করবো প্রিয়ংবদা।হ্যা,তোমায় প্রিয়ংবদা বলেই আখ্যায়িত করলাম।কেনোনা আমায়তো কেউই কখনো কিছু বলে আখ্যান দিলোনা।আমিই নাহয় দেই?আজ আর লিখবোনা তবে শেষে এইটুকুই বলছি আজ আমি ভীষণ খুশি!ভীষণ!কেনো খুশি তাই জানতে চাচ্ছো না?বলছি বলছি সবুর করো!জানোনা?সবুরে মেওয়া ফল?আমার প্রাণের প্রিয় ডিএমসি নিয়ে এক বুকভরা স্বপ্ন গেথেছি মনে।যে করেই হোক এইচএসসিতে আমায় প্লাস পেতেই হবে।এসএসসিতে ছুটে গেছে তাতে কী?এইচএসসিতে পেয়ে আমার মেডিকেল জয়ের আরও একধাপ এগিয়ে যাবো আমি!তুমি তাতে সাথে থাকবেতো?দেখবেনা আমার স্বপ্নজয়ের সেই সুন্দরতম মুহুর্তটা?যেদিন আমি পদার্পন করবো আমার স্বপ্নের ঢামেকে?কী দেখবেতো?তোমাকে দেখতেই হবে!আমি দেখাবো।হোহোহোহোহোওওওও!’
০৭.০২.২০০৭
আর কিছু লিখা নেই সেথায়।পরবর্তী পাতা উল্টাতেই প্রণয়ের নজরে আসে,
‘প্রিয়ংবদা,
জানো?আজ আমার ভীষণ মন খারাপ।এতটাই খারাপ যে কাউকে বলে বোঝাবার মত ক্ষমতা আমার নেই।স্বপ্ন আমার এভাবে চূর্ণ না হলে কি পারতোনা বলো?আল্লাহ আমার সাথে এমন করলেন কেনো?কী দোষ ছিলো আমার?চেষ্টাতো কম করিনি।এ প্লাসটা আমার ছুটে গেলো কেনো?এবার কী করে আমি আমার স্বপ্নকে জয় করবো?কীভাবে আমার ঢামেক আমার হবে বলবে?উহ!এত যন্ত্রণা হচ্ছে!পারছিনা আর’
১৭.০৬.২০০৮
প্রতিটা পাতা পড়তে পড়তেই আলমারির সাথে ঠেস মেরে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে প্রণয়।অতঃপর ফের পাতা উল্টায়,
‘আমার শেষ চেষ্টাটুকু করতে হবে প্রিয়ংবদা।আমি আমার স্বপ্নকে নিজের কাছে ছিনিয়ে আনবোই!আমাকে পারতেই হবে।এভাবে নিজ স্বপ্নকে বিলীন হতে দেবোনা আমি।আব্বুর সেই ছোট্ট বাঘিনীটাকে আজ বড় হতে হবে।বাঘিনীতো হারতে পারেনা তাইনা?সেতো হারা শেখেই নি!সে কেবলই থাবা মে!রে সবটা ছিনিয়ে আনতে জানে।এই ভূমিতে বিদ্যমান চাঁদও তাই করবে।ছিনিয়ে আনবে তার স্বপ্ন,তার স্বপ্নের ঢামেক’
০৭.০৭.২০০৮
অতঃপর আবারও পাতা পাল্টায় প্রণয়,
‘আলহামদুলিল্লাহ!আলহামদুলিল্লাহ!নিজ স্বপ্নকে জয় করেছি আমি!এইতো স্বপ্নটাকে নিজের করে পেলাম।এভাবেই সব স্বপ্নকে জয় করে নেবো ইনশাআল্লাহ।তবে এতটা অবিশ্বাস্যনীয় রেজাল্ট হবে ভাবতেই পারিনি একদম!মাসখানেক বাদে যাবো।যাবো আমার স্বপ্নের ঢামেকে।উহুউউউ!কি যে খুশি আমি’
২৯.০৯.২০০৮
পরবর্তী পাতায় লিখা,
‘কেউ কখনোই জানতে পারবেনা এডমিশনে ৯৮ টার্গেট রেখে ৯৮ পাওয়াটা কতটা দুঃসাধ্য ছিলো!কেউ কখনোই জানবেনা ঠিক কি কি’র মধ্য দিয়ে আমি গিয়েছি।কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধও করিনা।যার যা ভাবার ভাবুক আই জাস্ট হার্ডলি কেয়ার!’
৩১.১০.২০০৮
ডান পাশে লিখা তারিখটায় চোখ পড়তেই প্রণয়ের স্মরণে আসে ঠিক এ দিনটায়ই চাঁদের সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ।এদিনেইতো হৃদয় তার হরণ করেছিলো সেই চন্দ্রময়ী নারী!অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে পাতা উল্টায় প্রণয়।আর তার নজরে আসে,
‘কী মনে করে সেই বিড়ালাক্ষীমানব নিজেকে?তার খুব দেমাগ?আমি তার সাথে কথা বলতে কি ম*রে যাচ্ছিলাম?নাকি তাকে একনজর না দেখলে চোখ খ!সে পড়বে আমার?আমিও তাকে দেখিয়ে দেবো চাঁদ কী জিনিস!আবার নাকি সেই বেয়াদবটার উপর ক্রাশও খেয়েছি ভাবলেই গা জ্ব!লে যায় আমার’
০৯.১২.২০০৮
পুরো পাতাটা পড়তেই কন্ঠনালী কেপে উঠে প্রণয়ের।ঠোটজোড়া সামান্য প্রসারিত হয়।সেইসাথে চোখজোড়াও হাসতে বাধ্য হয় তার।
To be continued…..