আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৮৩.

0
789

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮৩.
দিন দুয়েক বাদে,
সকাল সকাল খুব দ্রুতই হাসপাতালে চলে এসেছে চাঁদ।মূলত আজই তনিমার সাথে মানসিক হাসপাতালে যাওয়ার কথা।যার দরুন তাকে দ্রুতই সব কাজ সামাল দিতে হবে।সকলের সাথে আলোচনা করেই মেইন সার্জারীর সময় সকাল নয়টার নাগাদ রেখেছে সে।এই দুইদিনের একদিনও সে আসতে পারেনি তাই সকলেই বেশ রুক্ষ তার সঙ্গে।তবে অধ্যাপককে বুঝিয়ে বলায় খুব বেশি একটা কষ্ট হয়নি।শুরু থেকেই অধ্যাপকের প্রিয় শিক্ষার্থী ছিলো।মূলত এজন্যই চাঁদের কথাকেই তিনি সায় জানিয়েছেন।বুকের ভেতরটা দুরুদুরু করে কাপছে,কাপছে হাত-পা ও।ঘেমে গেছে খানিকটা।এর আগে সার্জারী দেখলেও বর্তমানে তাকে সবটা করতে হবে ভেবেই বারংবার ঘামছে সে।অতঃপর চোখের চশমা খুলে রুমাল দ্বারা ঘামসমূহ মুছে ফের চোখে চশমা আঁটে চাঁদ।চশমা ঠিকঠাক করে অপারেশন থিয়েটারে কয়েক রকমের সূরাহ পড়ে ডান পা দিয়েই প্রবেশ করে।ভেতরে এসে পাঁচ-ছয়জন ডাক্তারকে দেখতে পেতেই তার খেয়ালে আসে সে তার সবুজ রঙা ডাক্তারী পোশাক পরিধান করেনি।তাই চটজলদি নার্সদের কাছে চাইতেই তারা তাকে তা দিয়ে দেয়।অতঃপর সমস্ত কিছু পরা শেষে মুখে মাস্ক লাগিয়ে এগিয়ে আসে সে রোগীর বেডের দিকে।চাঁদের ডান হাত কিঞ্চিৎ কাপছে দেখতে পেয়ে তাদের অধ্যাপক বললেন,

“বি ব্রেভ মাই গার্ল।তোমার মতো সাহসী মেয়ের এভাবে কাপলে চলবেনা।এরকম বহু সার্জারী জীবনে আসবে,সবগুলোতে বিজয় অর্জন করতে হবে মামনি।আর আমার বিশ্বাস ডক্টর মুহাইমা বিনতে চাঁদ অবশ্যই তাতে সফল হবে।অ্যাম আয় রাইট এভ্রিবডি?”

সকলে সমস্বরে বলে উঠে,

“ইয়েস স্যার”

অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে সকলের সাহায্য আর বিভিন্ন পরামর্শের সহিত চাঁদ তার জীবনের সর্বপ্রথম সার্জারী শুরু করে সংকিত মন আর মস্তিষ্ক নিয়েই।আর তারই বরাবর দাঁড়িয়ে থেকে তার প্রিয় মানব তাকে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত।তার নিজেরও ওপেন হেড সার্জারী বলতে কোনো ধারণা নেই।তবে সে মনে করে ওপেন হার্ট সার্জারীর ন্যায়ই বোধহয় এটাও।তাই আগ বাড়িয়ে কোনোপ্রকার কথা বা কাজ সে করলোনা।হিতে বিপরীত হয় যদি?তাছাড়া কথা বললেই চাঁদ তাকে চিনে ফেলবে।চাঁদ যেনো তাকে চিনতে না পারে সেজন্যই কালো রঙের লেন্স তাকে পরতে হয়েছে।নাহয় তার ধূসর বর্ণের বিড়ালাক্ষীজোড়া একপলক নজরে আসলে বিন্দুমাত্র বিলম্ব হবেনা তাকে চিনতে।যা সে আপাতত হতে দিতে চাচ্ছেনা।এমনিতেই মেয়েটাকে সে তিনদিনের বেশি হয়েছে দেখেনা।তাই পলকহীন তার দিকে চেয়ে থেকে আঁখি জোড়ার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।মাঝেমাঝে এটা ওটা করেও দিচ্ছে যদিও।কিন্তু বারংবার আঁখিদ্বয় সবুজ রঙা ডাক্তারী পোশাকে আবৃত চাঁদপানেই নিবদ্ধ হচ্ছে।সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে চাঁদের সকল কর্মকান্ড।ডাক্তারী পোশাকে যেনো আরও বেশি স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের।এই এক মেয়ের জন্য এত এত অনুভূতি কেনো জাগ্রত হয় সর্বদা?কী এমন আছে তাতে?কোনো উত্তর মেলেনা প্রণয়ের।অতঃপর এক ধ্যানে চাঁদের অপারেশনের প্রতিটা ধরণ সে তার মস্তিষ্কে গাথা আরম্ভ করে।

ঠিক তিন ঘন্টা এগারো মিনিটের মাথায় অপারেশন শেষ হয় এবং সকলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়ে।চাঁদের চোখ অশ্রুতে টলমল করছে।বুকের ভেতরে থাকা হৃদযন্ত্রটা তড়িৎ বেগে উঠানামা করছে তার।হাত কাপছে খানিক।শরীরের সমস্ত লোমকূপ দাঁড়িয়ে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।অতঃপর দু’হাত দ্বারা মুখ চেপে ধরে নেত্রদ্বয় বন্ধ করে মনে মনে বার তিনেক আওড়ায়,

“আমি পেরেছি!আমি পেরেছি!আমি পেরেছি আম্মু!”

অতঃপর উপরের দিকে চেয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সৃষ্টিকর্তার নিকট।চাঁদের অবস্থা বুঝতে পেরে অধ্যাপক তার সামনে এসে চাঁদের মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলেন,

“ভেরি ওয়েল জব চাঁদ।তোমার প্রথম সার্জারী আলহামদুলিল্লাহ সাকসেসফুল!অ্যান্ড আই আম মাচ হ্যাপি বিকজ নতুনদের চার ঘন্টারও বেশি সময় লাগে আর তুমি সেটা তিন ঘন্টা এগারো মিনিটেই সমাপ্ত করেছো।দ্যাটস অবভিউয়াসলি এডমাইরেবল মাই গার্ল।ইউ ডিজার্ভ টু বি আ গ্রেট নিউরো সার্জন।এবং আমি তোমার অদূর সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পারছি।মে আল্লাহ ব্লেস ইউ মাই গার্ল।যাও বাইরে গিয়ে তুমিই পেশেন্টের রিলেটিভদের সুন্দর সংবাদটা দিয়ে আসো।আর হ্যা এসব কেসে একদিনের বেশি সময় লাগে জ্ঞান ফিরতে তাও বলে দেবে”

ঘনঘন শ্বাস ফেলে র*ক্তাক্ত হাতের সুচটা স্টিলের প্লেটে শব্দ করেই রাখে চাঁদ।অতঃপর বলে,

“ওকে……ওকে স্যার”

চাঁদ যেতে নিলেই অধ্যাপক বাঁধা দিয়ে বলেন,

“ওয়েইট আ মোমেন্ট চাঁদ।এভ্রিবডি,লেটস সেলিব্রেট দিজ বিউটিফুল মোমেন্ট।পুট অল অফ ইওর হ্যান্ডস টুগেদার” [কিয়ৎক্ষণ দাড়াও চাঁদ।সকলে একসঙ্গে এই সুন্দর মুহুর্তটা উদযাপন করবো।সকলের হাত সমস্বরে মিলিত করুন]

বলার সঙ্গে সঙ্গে করোতালিতে মেতে উঠলো অপারেশন থিয়েটারের বদ্ধ কামড়াটা।হাততালির ধ্বনি কর্ণগোচর হতেই চোখ চকচক করে উঠলো চাঁদের।চোখের কার্নিশে থাকা বিন্দুকণা চিকচিক করতে লাগলো মুক্তার ন্যায়।মুখে ফুটে উঠলো কিঞ্চিৎ হাসির রেখা।এই হাসি প্রাপ্তির,এই হাসি জীবনে বহুকিছু না পাওয়ার মাঝেও একটুখানি সুখ পাওয়ার সুন্দর অনুভূতির।সকলে থেমে যাওয়ার পরেও একজন লোককে নিজের দিকে একধ্যানে চেয়ে ধীরে ধীরে হাততালি দিতে দেখে কপাল খানিক কুচকায় চাঁদের।অতঃপর অধ্যাপক যখন লোকটার বাহু চাপলেন তখনই সে থেমে যায়।আর অধ্যাপক চাঁদকে বের হতে বলেন।কিন্তু চাঁদের তীক্ষ্ণ নজর লোকটার আপাদমস্তক অবলোকন করে।কেনো যেনো তার মন অন্য কিছু ভাবছে।পরবর্তীতে সর্বদা একই জিনিস ভাবায় নিজেকেই নিজে গালমন্দ করে বিরক্ত হয় চাঁদ।আর বাইরে বেরিয়ে আসে ওটির।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আধঘন্টা বাদে,
ফ্রেশ হয়ে হাসপাতালের নিরিবিলি,জনমানবের আনাগোনা কম এরূপ জায়গায় খালি চেয়ারে বসে মাথাটা দেয়ালের দিকে এলিয়ে দিয়ে আঁখি জোড়া বদ্ধ করে চাঁদ।অতঃপর লম্বা শ্বাস টানে কিছুক্ষণ।তৎক্ষনাৎ তার স্মরণে আসে তনিমার সাথে দেখা করার কথা।পরবর্তীতে সে ভাবে যদি ছেলেটা অ্যালেন না হয় তখন?তাহলে কি তার সকল প্রশ্নের উত্তর ধামাচাপায় রয়ে যাবে?সে রাতের পর কার সাথে কী হয়েছিলো কী করে জানবে সে?অথবা অ্যালেনকে কোথায় খুঁজবে?ছেলেটা আদোতে জীবিত আছে তো?সেদিন যেভাবে তার নিজেরই বাবা তাকে গু*লি করলেন ছেলেটা সহিহ সালামত থাকবে?এসবকিছু ভাবতে ভাবতেই সে ভাবে একবার গেলে তেমন ক্ষ*তি তো হবেনা।এখানে তো কাজেই এসেছে।যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তবে তার দেখা মিলবে আর যদি না হয় তবে আগের ন্যায়ই জীবন অতিবাহিত করতে হবে।অতঃপর চট করেই চোখজোড়া খুলে তনিমাকে কল দেয় সে।কিয়ৎক্ষণ কথা বলে হুড়মুড়িয়েই বেশ তাড়াহুড়ায় ছুটে চলে চাঁদ মেডিকেলের বাইরে।আর অতি সূক্ষ্মভাবে চাঁদকে নজরে রেখেছিলো প্রণয়।মেয়েটা কখন কী করে কোনোকিছুরই ঠিক নেই।মূলত তাকেই লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছিলো সে,কিন্তু ফোনে কারো সাথে কথা বলে এভাবে ক্ষীপ্র গতিতে তাকে যেতে দেখে প্রণয় নিজেও চাঁদের পিছু নিলো।অতঃপর তার পিছু আসতে আসতে থামলো মানসিক হাসপাতালের সামনে।মাথার উপরেই বেশ বড়সড় করেই লিখা আছে ‘মানসিক হাসপাতাল,পাবনা’।কপাল কুচকালো তার।এখানে আসার মানে খুঁজে না পেয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো প্রণয়।অতঃপর চাঁদের ন্যায় সেও এগোলো ভেতরে।ভেতরে এসে একজন মহিলা ডাক্তারের সাথে চাঁদকে কথা বলতে দেখে সে পানেই তাকিয়ে থাকলো।মেয়েটাকে সে কোথায় যেনো দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছেনা।এসব ভাবার মাঝেই তার নজরে এলো চাঁদ বেশ দ্রুত গতিতেই মেয়েটার সাথে একটা কেবিনের দিকে ঢুকলো।ঢোকার পূর্বে মেয়েটাকে কিছু বলে তারপর সে ভেতরে গেলো।প্রণয়ের কপাল অতিরিক্ত মাত্রায় কুঞ্চিত হলো।সে সামনে এগুতে এগুতেই ভাবলো চাঁদ কেনো কোনো পাগলের রুমে ঢুকলো?কী কাজ তার?যদি সে তাকে আঘা!ত করে ফেলে তখন?তাই নিজেও ক্ষীপ্র গতিতে এসে ভেতরে ঢুকতে নিলে মেয়েটা তার হাত ধরে টান দিলেই ঝট করে নিজের হাত সরালো প্রণয়।অতঃপর মেয়েটার নিকট চাইতেই মেয়েটা ভদ্রতার খাতিরে বললো,

“সরি স্যার বাট আপনি ভেতরে যেতে পারবেন না”

“কিন্তু কেনো?ভেতরে তো একজন গেলো।আমি গেলে প্রবলেম কোথায়?”

“তিনি তার পূর্বপরিচিত তাই গিয়েছেন”

“কোনো পাগল চাঁদের পূর্বপরিচিত?হাউ ক্যান ইট বি পসিবল?”

কপাল কুচকে তনিমা বলে,

“আপনি চাঁদভাবির নাম জানেন কী করে?”

মেয়েটা চাঁদকে ভাবি ডাকায় প্রণয় সুনিশ্চিত হয় মেয়েটা তার অথবা চাঁদের পরিচিত ঠিকই কিন্তু পাগল কেউ চাঁদের পরিচিত কী করে হতে পারে?ভাবতে ভাবতেই মুখের মাস্ক খুলে গম্ভীরভাবে প্রণয় বলে,

“আমি চাঁদের হাজবেন্ড”

প্রণয়কে দেখে বিস্মিত হয়ে তনিমা বলে,

“প্রণয় ভাইয়া আপনি?”

প্রণয়ও কিঞ্চিৎ অবাক হয় তবে তা প্রকাশ না করে থমথমেভাবে বলে,

“আপনি আমায় চেনেন?”

“জ্বি ভাইয়া,আপনার হয়তো মনে নেই।আমি আলফির গার্লফ্রেন্ড।উশ্মির এনগেজমেন্টের দিন আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছিলো”

প্রণয় ধীরকন্ঠেই বললো,

“ওহ সরি আই হ্যাভ ফরগোটেন।আপনি কাইন্ডলি আমায় ভেতরে যেতে দিন আপু”

“কিন্তু ভাইয়া ভাবি আমায় নিষেধ করেছে”

“পাগল লোকটা আমার ওয়াইফের ক্ষ*তি করলে তার দায়ভার কী আপনি নেবেন?”

“না সে ক্ষ*তি করবেনা।মোটামুটি ভালো।তাছাড়া যদি ভাবি চেনে?”

“সেসব পরে।আমি ভেতরে যাবো।লেট মি গো ইনসাইড”

গম্ভীরভাবে তনিমা বলে,

“আ’ম সরি ভাইয়া”

“প্লিজ আপু আমার যাওয়াটা জরুরী।মানা করবেন না”

এরূপ বারকয়েক আকুতি মিনুতি করার পরে তনিমা রাজি হয় প্রণয়কে ভেতরে যেতে দিতে তবে সে যেনো খুব সাবধানে যায় আর চাঁদ টের না পায় সেভাবেই তাকে যেতে বললো তনিমা।প্রণয়ও তাই করলো।অতঃপর ভেতরে আসার পর কানে ভেসে এলো চাঁদের মৃদু কন্ঠস্বর,

“আমি আপনার চাঁদ নই মি.অ্যালেন।ডোন্ট কল মি ইওর চাঁদ।আমি কেবলই আমার শুদ্ধ পুরুষ,আমার প্রণয়ের চন্দ্রময়ী”

চাঁদের কথা শুনে বেডের কাছে চাঁদের দিকে পিঠ দেওয়া ছেলেটা তার দিকে ঘুরে দাড়াবার পূর্বেই প্রণয় অতি সন্তপর্নে লুকিয়ে পড়ে রুমের এক কোনায়,যাতে করে তাকে কেউই দেখতে না পারে।অতঃপর শুনতে লাগে দুইজনেরই কথোপকথন।এবং ছেলেটাকে দেখে কোনোভাবেই পাগল লাগছেনা,সুস্থ-স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।যার দরুন আরও বেশি অবাক হচ্ছে প্রণয়।সে এবার শুনতে পায় ছেলেটার বিস্মিয় হওয়া কন্ঠস্বর,

“প্রণয়?হু ইজ দ্যাট গায় চাঁদ?তোমার বয়ফ্রেন্ড?”

থমথমেভাবে চাঁদ জবাব দেয়,

“না।সে আমার প্রেম,প্রণয়,প্রেমিকপুরুষ এবং সর্বোপরি আমার একমাত্র হাজবেন্ড”

কপাল বেশ কুচকে অ্যালেন জিজ্ঞেস করে,

“তুমি বিবাহিতা চাঁদ?”

“আপনার সাথে যখন পরিচয় হয় তখন বিবাহিতা না থাকলেও তাকে আমি ভালোবাসতাম অ্যালেন।আপনি নিশ্চয়ই আহিনের ব্যাপারে জানেন?বলেছিলেন তো একদিন।এই প্রণয়ই সেই প্রণয় যাকে হৃদয়ে স্থান দেয়ার পর আর কোনো পুরুষই সেখানে জায়গা পায়নি।আর তার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় দেড় বছর”

“ওয়াও গ্রেট!তা তারপর তুমি সেখান থেকে কী করে পালালে বললেনা?”

“আপনিও তো বলেননি আপনার এ অবস্থা কী করে হয়েছে?আর আপনাকে দেখে সুস্থ স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে”

চাঁদের কথা শুনে অ্যালেন খানিক কেশে বিছানায় বসে পাশে চাঁদকে বসতে বললে চাঁদ জবাবে বলে,

“সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি।বলুন আপনি”

“অথচ তুমি সে রাতে আমার কত সন্নিকটে ছিলে।এখন পালাচ্ছো?”

ছেলেটার কথা শুনে প্রণয়ের নিশ্বাস ভারী হয়।সে নিজেকে সামলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সম্পূর্ণ কথা শোনার অপেক্ষায় মত্ত হয়।অতঃপর শুনতে পায় চাঁদের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“আমি সেদিন মোটেও আপনার পাশে ছিলাম না।আপনি যখন ঘুম থেকে উঠেছেন তখনই একটু শুয়েছিলাম যাতে করে ভাবেন আমাদের মাঝে কিছু একটা হয়েছে”

হাসতে হাসতেই অ্যালেন বলে,

“ইউ আর সাচ আ ফুল চাঁদ!তুমি এত বোকা কেনো?যেই মেয়ে তার মান সম্মানের জন্য গগণবিদারী আকুতি করতে পারে সে যে আমার সাথে কিছু করবে তা আমি ভাববোই বা কেনো?সো রিল্যাক্স,আমি মজা করেছি”

“এখনও কিন্তু বললেন না?আর আপনার নাম আরিয়ান দেওয়া কেনো?”

“বলছি বলছি,সবই বলছি ওয়েইট!তার আগে তুমি বলো।আফটার অল লেডিস ফার্স্ট রাইট?”

কপাল বেশ কুচকে চাঁদ জিজ্ঞেস করলো,

“কী শুনবেন?অথবা কী শুনতে চান আসলে?”

“এই যে,এটাই যে সেদিন সেই ডাক্তার ছেলেটার সাথে পালাতে সক্ষম হলে কিনা বা কোনো সমস্যায় পড়েছিলে কিনা?”

চাঁদ আর অ্যালেনের কথোপকথন শুনে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে প্রণয়ের।আজ কি তবে সেইদিন যখন সে সমস্ত সত্য জানতে পারবে?হুট করেই হৃদযন্ত্রটা এত দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে কেনো?শ্বাস এত বেশি ভারই বা হচ্ছে কেনো?ভাবতে ভাবতেই মুখ দিয়ে শ্বাস ফেলে প্রণয়।অতঃপর শোনে চাঁদের শান্ত কন্ঠস্বর,

“হ্যা।সেদিন আমি পালাতে সক্ষম হলেও যার কথা বলছেন সে পালাতে পারেনি।এবং বর্তমানে তার অবস্থা বেশ করুন”

বেশ চিন্তিত হয়ে অ্যালেন বলে,

“কী হয়েছে তার?খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলো।তুমি বিপদে জেনেও আগে আমার ট্রিটমেন্ট করে পরেই তোমার কাছে গিয়েছিলো”

“হিম।তার মতো মানুষই হয়না আসলে”

“ছেলেটার এখন কী অবস্থা?”

“সে বিগত ছয় বছর যাবৎ কোমাতে আছে।আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি তাকে সুস্থ করে তোলার।জানিনা কতদূর পারবো”

“চিন্তা করোনা।সব ঠিক হয়ে যাবে”

হতাশার শ্বাস ফেলে মলিন কন্ঠে চাঁদ বললো,

“কী ঠিক হবে আর অ্যালেন?কিছুই যে ঠিক হবার নয়।আমি আমার পুরোনো আমি টাকে আর ফিরে পাবোনা।না পাবো আমার প্রণয়কে,না পাবো অন্যকিছু।তবে হ্যা আর কয়েকমাস বাদেই গ্র‍্যাজুয়েশন কমপ্লিট হবে।অ্যান্ড হোপফুলি আয় উইল বি আ বেটার সার্জন”

“সার্জন?তুমি…..তুমিও ডাক্তার?”

মৃদু হেসে চাঁদ বলে,

“এখনও হইনি।ইন্টার্ন ডাক্তার বলতে পারেন”

“কীসের সার্জন তুমি?আই মিন কী নিয়ে?”

“নিউরোলজি”

“ওহ আই সি।তাহলে আমার মানসিক অবস্থাও ঠিক করে দিও কেমন?”

বাকা চোখে চেয়ে চাঁদ বলে,

“আপনিতো সুস্থ স্বাভাবিক।আপনার ব্যাপারে এখনও বললেন না”

“এত বিচলিত হচ্ছো কেনো?তুমি না তোমার ঐ প্রণয় না কাকে ভালোবাসো?দেন হোয়াই সো মাচ ইন্টারেস্টেড আবাউট মি?হিম হিম?”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“আয় অবভিউয়াসলি নট ইন্টারেস্টেড অন ইউ অ্যাট অল মি.অ্যালেন।আমি জাস্ট জানতে চেয়েছি আপনি এখানে কী করে?আপনাকেতো সেদিন আপনার বাবা গু*লি করেছিলো”

এবারে অ্যালেনের মুখ বেশ গম্ভীর হয়।সে লম্বা শ্বাস ফেলে বলে,

“হিম বাবাই গু*লি করেছিলো।তবে তা কাধ ছুয়ে গিয়েছিলো বলে বেঁচে ফিরেছি।কিন্তু তোমার হেল্প করার অ!পরাধে বাবা,অহনা ওরা সবাই আমায় বেশ ট!র্চার করেছে।এক পর্যায়ে আর না পেরে আমি মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তি হয়ে উঠি।তবে আমার সেন্স ছিলো।আমি চেয়েছিলাম তাদের থেকে দূরে থাকতে।বছর দুয়েক ইচ্ছে করেই পাগল হওয়ার অভিনয় করি।পরে না পেরে এখানে ভর্তি করিয়ে যায়।আর তারাই হয়তো আরিয়ান নাম দিয়েছে।আসল নামতো আর দেয়া যায়না তাইনা?তো এরপর আর কেউই আসেনি।একা একাই থাকি।তোমার কথা মনে পড়তো খুব।জানতামও না তুমি ঠিক আছো কিনা।তবে কেনো যেনো মনে হতো একদিন আমাদের আবার দেখা হবে।আর দেখো আজ সেই দিন”

শেষের কথা বেশ প্রফুল্লতার সহিতই বলে অ্যালেন।সব শুনে চাঁদ বলে,

“আপনার সেই বোন!মেয়ে হয়েও কোনো মেয়ের সম্ভ্রম কাড়তে তার বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করলোনা?একটুও হাত কাপেনি?যখন যখন সে…..সে!”

“থামো!আমি আর শুনতে চাইনা সেদিনের কথা”

“কেনো শুনতে চান না?সত্য সবসময়ই তিক্ত মি.অ্যালেন”

“কারণ আমি তোমায় ভালোবাসি চাঁদ।আর তোমায় সেভাবে আমি জাস্ট দেখতে পারছিলাম না।মনে হচ্ছিলো কেউ আমারই গলা চেপে রেখেছে”

“ওহ তাই?কিন্তু আপনারা অথবা আপনি কখনো ভেবেছেন যে আমার মতো কতশত মেয়ের সাথে একই কাজ আপনারা করছেন?আমি জানিও না আদোতে আপনি কোনো মেয়েকে ছুয়েছেন কিনা।কিন্তু সবকিছুতে সায় তো আপনি দিয়েছেন।দিয়েছেন মি.অ্যালেন!এমনকি মেয়েদের নিয়ে উপভোগও করেছেন”

অ্যালেন কেবলই চুপ করে থাকে।তা দেখে চাঁদ রুক্ষ কন্ঠে বলে,

“এখন কেনো চুপ করে আছেন?কোনো উত্তর নেই তাইতো?থাকবে কী করে?থাকার তো কথাও নয়”

“আর কিছু বলবে?যা বলার বলো,শুনছি”

“আর কীই বা শুনবেন?তবে আমি আপনার কাছে চির ঋণী।কেনোনা সেদিন শুধুমাত্র আপনার সাহায্যের বদৌলতেই আমি আর অরণ বেঁচে ফিরতে পেরেছিলাম।কিন্তু বেঁচেও কী হলো অ্যালেন?না অরণ স্বাভাবিক আছে আর না আমি।আমার তো নিজের ঝোলাতে কিছু নেই ই!কেবলই খোলস টা রয়ে গেছে।আর অরণ?সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে”

মাথা নিচু করে অ্যালেন বলে,

“তুমি সেসব ভেবোনা চাঁদ।দুঃখ বাড়বে বৈ কমবেনা”

তাচ্ছিল্যের সুরে চাঁদ বলে,

“না ভেবেও কি উপায় আছে?আপনার বাবা অথবা বোন কি কোনো উপায় রেখেছেন?রাখেন নি তো।এখনও সেই লোমহর্ষকপূর্ণ সন্ধ্যার কথা ভাবলে আমার দম বন্ধ লাগে অ্যালেন!ভাবতে পারিনা আমি!আপনারা সকলে একেক টা কী*ট।প্রমাণও ছিলো আমার কাছে।শুধু পারিনি সবকিছু সরকারের কাছে সাব্যস্ত করতে।নাহয় এতদিনে সবকিছু থেকে পরিত্রাণ পেতাম”

সামান্য হেসে অ্যালেন বলে,

“আমার বাবাকে তো তুমি চেনোনা চাঁদ।আর আমার বোনকে আরও আগে চেনোনা।বাবার তুলনায় বোন অতি নিকৃষ্ট এক প্রাণী।ওর ভেতর কোনো মায়া মহব্বাত নেই।যাকে টার্গেট করে তাকে নিজের মুখ দিয়েই স্বীকার করায় জান নিয়ে নেওয়ার জন্য।বাধ্য করায় নিজেকেই নিজে মৃ*ত্যুবরণে আলিঙ্গণ করার জন্য।শি ইজ সাচ আ বুলশি!ট!”

“সে আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছি”

অতঃপর তাদের মাঝে কিছুক্ষণ ছেয়ে যায় নীরবতায়।নীরবতা ভেঙে অ্যালেনই প্রথমে বলে,

“তোমার হাজবেন্ডের ছবি আছে?সে কি আমার চেয়েও খুব হ্যান্ডসাম আর ড্যাশিং?”

অ্যালেনের এবারের কথায় বেশ শব্দ করেই হাসে চাঁদ।অতঃপর হাসতে হাসতেই বলে,

“যারযার দিক দিয়ে সকলেই সুন্দর।আর আল্লাহর সৃষ্টি কোনোকিছুই অসুন্দর হয়না।আপনি,আহিন অথবা প্রণয়।যার কথাই বলুন না কেনো আপনারা তিনজনই সুন্দর।তবে হৃদয় আমি কেবল আমার শুদ্ধ পুরুষ,আমার বিড়ালাক্ষী মানবকেই দিয়েছি।এবং সেদিনই দিয়েছি যেদিন তার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়।এবং সে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই আমার গালে চুমু খায়।আর মজার ব্যাপার হলো আয় ওয়াজ ড্যাম লাকি বিকজ সে একজন মেয়ে এলার্জেটিক ছেলে।যার প্রথম নারী ছিলাম কেবলই আমি।তবে এখন আর কিছুই আগের ন্যায় নেই”

“মানে?তোমাদের কি প্রেমের বিয়ে?”

“না তেমন না।আমাদের প্রেমকাহিনী বেশ লম্বা আহান!অন্য একদিন শোনাবো আপনায়।যদি সুযোগ পাই”

“তোমার বিড়ালাক্ষী মানবকে দেখার বেশ শখ জাগছে চাঁদ!ফোনে তার ছবি আছে?”

“ছবি লাগবে কেনো?সচক্ষেই দেখে নিন।হেয়ার আয় আম”

বলেই চাঁদ আর অ্যালেনের সম্মুখে আসে প্রণয়।প্রণয়কে দেখে ভড়কায় চাঁদ!অবাক হয় অ্যালেনও।প্রণয় দ্রুতগতিতে এসে চাঁদের কব্জি ধরে অ্যালেনের পাশ থেকে তাকে সরিয়ে নিজের কাছে এনে অ্যালেনকে বলে,

“কেমন দেখলেন?আমি অতি সাধারণ এক ছেলে।আপনার ধারের কাছেও নেই বলতে পারেন।তবে এই চন্দ্রময়ী নারী কেবলই প্রণয়ের।তাকে পাওয়ার সাধ্যি আমি ব্যতীত বিধাতা আর কাউকে দেননি,যার দরুন বর্তমানে সে আমার স্ত্রী”

প্রণয়ের কথায় তার পানে কপাল কুচকে তাকায় অ্যালেন।অতঃপর চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,

“এই ছেলেটা কে চাঁদ?”

“তাকে কী জিজ্ঞেস করছেন?লুক অ্যাট মি।আই আম প্রণয়।ড.রুহায়ের প্রণয়।অর ইউ ক্যান সে কার্ডিয়াক সার্জন প্রণয়।আর অন্যতম পরিচয় হলো আমি চাঁদের হাজবেন্ড প্রণয়।যাকে একটু আগেই ফোনে দেখতে চাইলেন”

বিছানা থেকে উঠে চাঁদের কাছে অ্যালেন যেতে নিলেই চাঁদকে এক ঝটকায় নিজের বুকের উপর ফেলে বাম বাহু দ্বারা আলিঙ্গণ করে প্রণয়।অতঃপর বলে,

“ডোন্ট ইউ ডেয়ার মিস্টার অ্যালেন।আমার চাঁদের আশেপাশেও কাউকে চাইনা”

কপাল কুচকে গম্ভীর কন্ঠে অ্যালেন বলে,

“মজা নিচ্ছেন আমার সাথে?একেতো লুকিয়ে থেকে মানুষের পার্সোনাল কথা শোনেন।তার উপর আবার অপরিচিত এক মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে রেখেছেন?স্টে আওয়ে।ছাড়ুন চাঁদকে”

বলেই কাছে আসতে নিলে চাঁদ বাঁধা দিয়ে বলে,

“ওয়েইট অ্যালেন,থামুন।আর আপনি?আপনার চোখ কালো কেনো?আর এখানেই বা কী করছেন?পিছু নিতে নিতে এখানেও এসেছেন?আর ইউ সিক?”

প্রণয় শান্ত কন্ঠে শুধায়,

“বউয়ের পিছুই তো নিয়েছি হোয়াট’স দ্যা বিগ ডিল মিসেস রুহায়ের?ওহ সরি।লেন্স পরেছিতো।নাহয় আপনি আবার চিনে নিতেন।ওয়েইট খুলছি”

বলেই এক হাতে চাঁদকে জড়িয়ে রেখে অপর হাতের তর্জনী দ্বারা দু’চোখের লেন্স খুলে প্যান্টের পকেটে পুড়ে প্রণয় ফের অ্যালেনের দিকে চেয়ে বলে,

“এখন বিশ্বাস হচ্ছে মিস্টার অ্যালেন?আই আম দি রুহায়ের প্রণয়,হাজবেন্ড অফ মিসেস মুহাইমা বিনতে চাঁদ ওরফে মিসেস রুহায়ের”

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here