#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম
৮৪.
“একজন ধ!র্ষিতা কারো স্ত্রী অথবা কারো বাড়ির বউ হতে পারেনা প্রণয়,ছাড়ুন আমায়”
চাঁদের বলা বাক্যে হৃদয় ক্ষ*তবি*ক্ষ*ত হয়ে যায় প্রণয়ের তবুও সে চাঁদকে ছাড়েনা।বক্ষপটে জাপটে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“হিশ!হিশ!শান্ত হন,শান্ত হন চাঁদ।এই যে কিচ্ছু হয়নি।কিচ্ছু হয়নি।আমি আছিতো আপনার পাশে,আপনার কাছে সর্বদা,সর্বক্ষণ”
কথাগুলো বলে চাঁদকে নিজের সঙ্গে বেশ শক্তপোক্তভাবেই জড়িয়ে রাখে প্রণয়।কিয়ৎক্ষণ বাদে চাঁদ মৃদু কন্ঠে প্রশ্ন করে,
“আমার করুন পরিণতি জেনে দয়া দেখাচ্ছেন প্রণয়?”
চাঁদের করা প্রশ্নে তৎক্ষণাৎ চাঁদকে ছেড়ে বুকের কাছ হতে সরিয়ে তার পানে কপাল কুঞ্চিত করে পলকহীন চায় প্রণয়।দুজনের দৃষ্টি মিলিত হয়।এবং চাঁদ দেখতে পায় প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীজোড়ার আশপাশে কেমন এক কমলাটে ভাব!চোখে যে শিরা-উপশিরা বিদ্যমান,সেগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় লাল।এমনটা কেনো?কেনোই বা চোখের সাদাংশসমূহ ধীরগতিতে লালচে বর্ণ ধারণ করছে?কিয়ৎক্ষণ পূর্বে চাঁদ তাকে তার যে ভয়ংকর অতীত শুনিয়েছি এ কি তার ফল?যে অতীতকে বছরের পর বছর হৃদয়ে লালিত করেছে,যার জন্য পাড়ি জমিয়েছিলো মাইলের পর মাইল দূরে সেই অতীত আজ অবশেষে সামনে এলো তার?কীভাবেই বা একই জিনিস তৃতীয়বারের ন্যায় উপলব্ধি করলো চাঁদ?কি দমবন্ধকর পরিস্থিতি!এখনও শরীর কাপছে,আঁখি জোড়া ফুলে উঠেছে।ফর্সা মুখশ্রী হয়েছে লালচে,চোখের পাপড়িসমূহ এখনও ভেজা।প্রণয়ও বেশিক্ষণ চাঁদকে এরূপ বিধ্বংসী রূপে দেখতে পারলোনা।অতঃপর তার স্মরণে এলো সে যা কস্মিনকালেও চিন্তা করতে পারেনা তা তার হৃদমানবী কী করে সহ্য করলো?কতটা আক্ষেপ নিয়ে বছরের পর বছর এ ধরণীতে শ্বাস নিচ্ছে সে?পরক্ষণেই হুট করে চাঁদকে আরও একবার কাছে টেনে বক্ষস্থলে জাপটে ধরলো প্রণয়।অতঃপর অস্থির কন্ঠে বললো,
“কোনো করুনা না কোনো করুনা না!যার জন্য হৃদয় সর্বদা ব্যাকুল থাকে তাকে কি করে করুনা করা যায় চন্দ্র?আপনি সর্বদা,সর্বক্ষণ আমরণ প্রণয়ের হৃদরাণী হয়েই বেঁচে থাকবেন”
লম্বা শ্বাস ফেলে ঠোট কামড়ে প্রণয়কে না ছুয়েই চাঁদ বলে,
“অথচ!……..অথচ!…..অথচ আমি কলঙ্কিনী প্রণয়!”
চাঁদের কথায় ফের চাঁদকে আলগা করে মাথাটা বুক হতে সরিয়ে কপালের দুই পাশ দিয়ে দু’গাল জুড়ে দুই হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে প্রণয় শুধায়,
“গোটা আপনিটাও যদি কলঙ্কের সাগরে ভেসে বেড়ান, আমি স্বেচ্ছায় সেথায় ডুবে মৃ*ত্যুকে আলিঙ্গণ করবো আমার প্রাণেশ্বরী,আমার চন্দ্রময়ী!”
অতঃপর প্রথমবারের ন্যায় শুষ্ক ললাটে আলতো করে চুম্বন করতেই ভেতরে চেপে রাখা সকল কষ্ট-দুঃখ দু’চোখ বেয়ে উপচে পড়ে চাঁদের।কেবিনের বেডে বসে থাকা প্রণয়কে জাপটে ধরে আহাজারি করে সে বলে,
“আমি কত আকুতি করলাম প্রণয়!কত দোহাই দিলাম!অথচ…..অথচ পাষাণ-ব!র্বর,নিকৃষ্ট প্রাণীটা আমায় ছাড়লোনা!”
বাক্যসমূহ প্রণয়ের কর্ণকুহর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই হৃদয় তার কেউ খাম!চে ধরলো।হৃদযন্ত্রটা বুঝি তার চি!ড়ে যাচ্ছে!কি অসহনীয় যন্ত্রণা!চাঁদকে আষ্টেপৃষ্টে ফের বক্ষপটে স্থান দিলো প্রণয়।আজ যেনো চোখজোড়া বাঁধ মানছেনা চাঁদের।আহাজারি করে বেশ শব্দ করেই কান্নার বেগ বাড়লো তার।বহু অপেক্ষার পর কাঙ্ক্ষিত ভরসাস্থল পেতেই হাউমাউ করে কেদে উঠলো চাঁদ!কি যে যাতনা,কি যে পীড়া!অবশেষে তা থেকে কি সে মুক্তি পেলো?
কিয়ৎক্ষণ পূর্বে,
প্রণয় যখন চোখের লেন্স খুলে চাঁদের একহাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো,প্রায় মিনিট তিনেকের ন্যায় অ্যালেন তাকে অবলোকনই করলো।অতঃপর খানিক কেশে চাঁদকে বললো,
“গুড চয়েজ চাঁদ!আ ভেরি গুড চয়েজ!অ্যান্ড মিস্টার প্রণয়,হাজবেন্ড অফ চাঁদ?ইওর চয়েজ ইজ অ্যাবসোলুটলি আমেজিং!”
প্রণয় শান্তকন্ঠে শুধায়,
“ইয়েস,অবভিউয়াসলি।থ্যাংক ইউ।বাট আমার কিছু প্রশ্ন আছে,যদি উত্তর দিতেন?”
“জ্বি বলুন”
প্রণয়ের কিছু বলার পূর্বে চাঁদ কপাল কুচকে নিজের হাত প্রণয়ের থেকে ছাড়িয়ে বললো,
“সমস্যা কী আপনার?এরকম বেহায়ার মতো শুরু করেছেন কেনো?একবারতো বলেছি আপনাকে আর চাইনা।তবুও আমার পিছু কেনো নিচ্ছেন?আর কোন সাহসে আপনি এই কেবিনে লুকিয়ে চো!রের মতো মানুষের কথা শোনেন?”
প্রণয় বেশ শান্তভাবে জবাব দিলো,
“আমার নিজের মানুষের কথাইতো শুনলাম।আর সে যদি আমায় চু!রির অপবাদ দেয় তবে হ্যা আমি চোরই”
কপাল অতিরিক্ত কুঞ্চিত করে চাঁদ বলে,
“দেখুন সবসময় এসব জিনিস ভালো লাগেনা।প্রথমে তো বেশ অপমান অবমাননা করেছেন।এখন এত ভালোবাসা উতলে পড়ছে কেনো?আপনাকে অনেক মাস ধরেই দেখছি।সে রাতের পর এত পরিবর্তন কী করে?রাতারাতি কী করে পাল্টালেন?”
“আপনার জন্য সর্বদা আমি এমনই ছিলাম।শুধু প্রকাশটুকু করিনি”
“তো আপনাকে আমি এখন বলেছি প্রকাশ করুন?বলিনিতো।আমার কাজে বাগড়া দিচ্ছেন কেনো?”
হঠাৎ করে অ্যালেন খানিক কেশে বলে,
“আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা?একটু আগেই দুজন দুজনের নামে কতধরণের গুনগান করলে এখন সমানে সমানে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে গেলে?বিষয়টা একদমই বুঝলাম না চাঁদ?”
অ্যালেনের পানে তীক্ষ্ণ চাহনী নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,
“আপনি চুপ থাকুন।আপনাকে বলেছি?আমি কী করেছি কী করিনি সেগুলো শোনান?”
অ্যালেন অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলেই শুনতে প্রায় প্রণয়ের প্রাণোচ্ছল স্বর,
“কারো কিছু বলার প্রয়োজন নেই।আমি সবই শুনেছি মিসেস রুহায়ের!”
চাঁদ অত্যন্ত রেগে কপাল কুচকে বললো,
“এই বাজে আর বিদঘু!টে স্বভাব কি আপনার কখনোই যাবেনা?”
“আপনিজড়িত যেকোনো স্বভাব সর্বদা বহাল থাকবে মিস রেডরোজ”
“আপনার প্রেমপূর্ণ কথা শুনতে আমি মোটেও এখানে আসিনি!কাজে এসেছি।নাটক করা বন্ধ করুন।এবার নিশ্চয়ই ফা!সিতে চড়ানোর বন্দবস্ত করে রেখেছেন তাইনা?তবে শুনে রাখুন…..”
চাঁদকে বলার সুযোগ না দিয়ে প্রণয়ই বলে,
“চাঁদ এক ভুল একবার করে,দুইবারও করে তবে তৃতীয় বারের ন্যায় সেই ভুল আর কস্মিনকালেও করেনা,করবেওনা।তাইতো?”
প্রণয়ের কথায় অতিরিক্ত মাত্রায় অবাক হয় চাঁদ।ঠোটজোড়ার মাঝে কিঞ্চিৎ ফাকও বোধহয় দেখা যায়।চাঁদের স্মরণে আসে তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাৎ এ প্রণয় যখন একই ভঙ্গিমায় চাঁদকে অবিকল নকল করেছিলো।চাঁদের বিস্মিত নজর দেখে কিঞ্চিৎ বাকা হয় প্রণয়ের ঠোটের ডানপাশ।অতঃপর চাঁদ কিছু বলতে নিলে তাকে আটকে দিয়ে প্রণয় বলে,
“ওসব আপনার ভাবা লাগবেনা।এবার বলুন ‘রাজ ভিলা’ থেকে কী করে পালিয়েছেন?আর আমার সাথে ঝগড়ার পর আপনার আর অরণের মাঝে হয়েছিলো টা আসলে কী?”
প্রণয়ের প্রথম কথা শুনে যতটা না অবাক হয়েছে চাঁদ তার তুলনায় দ্বিগুন শ্বাস রুদ্ধ হয়েছে শেষের কথায়।ঘনঘন শ্বাস নিয়ে প্রণয়ের পানে নিষ্পলক চাইতেই শুনতে পায় অ্যালেনের বিস্মিত কন্ঠস্বর,
“আপনি না চাঁদের হাজবেন্ড তার উপর তারই পুরোনো প্রেমিক?তো ওয়াইফের এত বড় রহস্য আপনি জানেন না?চাঁদ তুমি কি তাকে বলোনি?”
প্রণয় অ্যালেনের পানে চেয়ে বলে,
“আপনি জানেন?জানেন সে সন্ধ্যায় কী হয়েছিলো?”
অতঃপর চাঁদের পানে চেয়ে খানিক হাসার চেষ্টা করে বললো,
“এই ছেলেটাও সব জানে?অরণকেও সকল রহস্য বললেন।তার সাথে মিলে কত ধরণের বিপদে পড়লেন, বিপদ থেকে বাঁচলেন।অথচ আমায় একটা বার কিছু বলতে পারলেন না?আমায় বললে কি খুব বেশি ক্ষ*তি হয়ে যেতো?”
অতঃপর দৃষ্টি অন্যপানে করলো প্রণয়।বেশ করুন শোনালো তার কন্ঠস্বর।চাঁদের বদলে অ্যালেন প্রতিত্তোর করলো,
“আপনি ভুল বুঝছেন মিস্টার প্রণয়।আমি সব জানি বিষয়টা তেমন নয়।এর সাথে আমি জড়িত এজন্যই সবটা জানি আমি”
প্রণয়ের প্রশ্ন,
“অথচ আমি জানিনা কেনো?”
“আমি বলছি শুনুন”
অ্যালেনের কথার প্রেক্ষিতে তৎক্ষনাৎ চাঁদ বলে,
“থামুন অ্যালেন।আর আপনি?’রাজ ভিলা’ সম্পর্কে আপনি কী করে জানেন?এসব বিষয় সম্পর্কে আমি আর অরণ ব্যতীত আর কেউ জানতোনা”
সোজাসাপটাভাবে প্রণয় বলে,
“আপনিতো আর বলেননি।আপনার ডায়েরী হতে জেনেছি।সেখানে সবকিছু অল্প অল্প বিবৃত থাকলেও সে সন্ধ্যা অথবা রাতের কোনো ঘটনাই বিবৃত নেই চাঁদ।এমনটা কেনো?”
“সেসব আপনার জানার প্রয়োজনও নেই।আর এজন্যই বুঝি ভালোবাসা উতলে পড়ছে আপনার?কই তখন আপনার ভালোবাসা কোথায় ছিলো?তখন বিশ্বাসগুলো কোথায় ছিলো যখন আমায় আর…..”
বলতে গিয়েও থেমে যায় চাঁদ।অতঃপর অ্যালেনের দিকে চেয়ে বলে,
“একটু স্পেস দেওয়া যাবে অ্যালেন?”
“হ্যা অবশ্যই।তোমরা একটু কষ্ট করে ডক্টর তনিকে ডেকে দাও আমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য।আর কাউকে বলবেনা আমি যে সম্পূর্ণ সুস্থ”
চাঁদ বলে,
“চিন্তা করবেন না”
অতঃপর তনিমাকে ডেকে অ্যালেনকে কেবিন হতে নিয়ে যেতেই চাঁদ ফের প্রণয়কে বলে,
“আপনি আমার ডায়েরী পেয়েছেন অথচ আমার এতটা খারাপ অবস্থা দেখেও সেটা আমায় দেননি?কেনো?নাকি জানতে চাচ্ছিলেন কতজন পুরুষের সাথে শুয়েছি হা?”
“জাস্ট শাট আপ চাঁদ!”
প্রণয়ের দিকে তে!তে এসে তার দিকে তর্জনী তাক করে চাঁদ উচ্চস্বরে বলে,
“ইউ শাট আপ মি.প্রণয়!আপনার অনেক কথাই শুনেছি কিন্তু কিছু বলিনি।আজ আমি বলবো আর আপনি শুনবেন!”
প্রণয় কেবলই শান্তভাবে চাঁদের দিকে চায়।তা দেখে চাঁদ বলে,
“সেই বছর ছয়েক আগেও আপনি আমায় শতশত অপমান করেছেন এবং বিয়ের পরেও যাচ্ছেতাই বলেছেন।এতই যখন ছেলেবাজ মনে হয় তবে এরকম মেয়েকে জীবনে রাখতে চাচ্ছেন কেনো?নিশ্চয়ই কোনো পলিটিক্স আছে আপনার?আমি নিশ্চিত এবার ফা!সিতেই চড়াতে চান”
“বারবার একই কথা বলবেন না!মানুষেরই ভুল হ…..”
প্রণয়ের কথাকে সম্পূর্ণ করার পূর্বেই চাঁদ বলে,
“আপনিই শুধু মানুষ?আর আমি মানুষ নই?”
“আমিতো তা বলছিনা”
“তাহলে অরণের সাথে আমায় দেখে যেই সন্দেহটা আপনি করেছেন তা কতটুকু যৌক্তিক?”
“সেসব বিষয়ে কথা বলতে চাইনা আমি”
“কেনো বলবেন না?শুরুটাতো সেখান থেকেই হয়েছে তাইনা?আপনি সবকিছুই জানবেন অথচ আমি কিছুই জানবোনা তাতো হয়না”
“ওসব বিষয় বলবার মতো নয়।আমি বলতে চাচ্ছিনা”
“তাহলে আমিও কোনোকিছুই বলতে চাচ্ছিনা।এবার দোহাই লাগে!ডিভো!র্সটা আমা…..”
চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই চাঁদের ঠোটজোড়ায় আলতো হাত রাখে প্রণয়।অতঃপর বলে,
“সেসব শুনলে সহ্য করতে পারবেন না”
প্রণয়ের হাত সরিয়ে দৃষ্টি নত করে চাঁদও একইভাবে বলে,
“সে সন্ধ্যার ঘটনা শুনলে আপনিও সহ্য করতে পারবেন না প্রণয়”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় শুধায়,
“তবুও আমি জানতে চাই”
এবার দৃষ্টি প্রণয়ের পানে দিয়ে চাঁদ বলে,
“আমিও জানতে চাই।কেনো সেদিন আপনি অতোটা ভড়কালেন?কী করেছিলাম আমি অথবা অরণ?আমি নাহয় দুইদিনের মেয়ে ছিলাম কিন্তু অরণ?সেতো আপনার প্রাণের বন্ধু।তাকে কী করে সন্দেহ করেন?”
“আমিতো বললাম সেসব বলতে চাইনা।মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিলো।যেটা এখন এসে আমি বুঝতে পেরেছি”
“এখন বুঝেও কী লাভ?অরণ ঠিক হয়ে যাবে?নাকি আপনার সাথে বাকিদের সম্পর্কটা ঠিক হবে?দেখুন ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা পছন্দের নয়।আপনার বন্ধুর সাথে নাহয় দু’একটা কথা বলেছিই আমি।আপনিওতো জানতেন অরণ পূর্ণপুকে ভালোবাসতো তবুও সন্দেহ করেন কেমন করে?আসলে আপনার মতো মানুষ যেকোনো কিছুই করতে পারে।আপনাকে ভালোবাসা ছিলো আমার জীবনের বৃহৎ ভুল।তার চাইতেও বড় ভুল ছিলো আপনার সাথে আমার সাক্ষা…….”
অতিরিক্ত মাত্রায় রেগে গিয়ে ডান হাতের তালু দ্বারা চাঁদকে বাধা দিয়ে প্রণয় বলে,
“স্টপ!সবার কাছেতো খারাপ হয়েছিই।নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতেও ইচ্ছুক নই।তবে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো নেগেটিভ মন্তব্য আমি শুনবোনা।আচ্ছা বলুন,হোয়াট ইফ?আমায় আপনি ইপ্সি অথবা অবনীর সাথে অ!ন্তরঙ্গবস্থায় দেখতেন?নিজ চক্ষের সামনে তাদের যেকোনো একজনের সাথে লঙ টাইম লিপ কিস করতে দেখতেন?আপনার অনুভূতি কেমন হতো?খুব ভালো লাগ…….”
প্রণয়ের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই চাঁদ প্রণয়ের দিকে তেড়ে এসে তার চোয়াল চে!পে উচ্চস্বরে বললো,
“মুখ সামলে কথা বলুন ছিহ!”
প্রণয় সেভাবে থেকেই শরীর মৃদু দুলিয়ে হাসতে হাসতে বলে,
“যে জিনিস আপনি শুনতেই পারছেন না তা সচক্ষে দেখেছি আমি।আর কিছু শুনবেন অথবা শুনতে চান?”
প্রণয়ের পানে চেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে চাঁদ বলে,
“কী বোঝাতে চাইছেন?আমি?”
“আমি সেসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনা”
“বারবার একই কথা বলবেন না,ভালো লাগছেনা।আর কী দেখেছেন আপনি?আমি ওসব করেছি?তাও আবার অরণের সাথে?সিরিয়াসলি?কবে দেখেছেন?”
“কেনো সেসব টানছেন?”
“আমার চরিত্রে দাগ লাগছে আমি অবশ্যই সেটা জানতে চাইবো।যা আমি কস্মিনকালেও করিনি সেসব বলছেন আপনি”
“বলছিনাতো চাঁদ।হয়তো চোখের ভ্রম ছিলো”
“চোখের ভ্রমই বা হবে কী করে?কী যা তা বলছেন?আমি কেনো কারো সাথে ওসব করবো?আপনি কি পাগল?”
“নিজের চোখে দেখা জিনিসও বিশ্বাস করতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু কী করবো বলুন?আপনার সাথে অন্য কারো ছায়া পর্যন্ত সহ্য হয়না।আপনি কী করতেন যদি আমায় এরূপ অবস্থায় দেখতেন?”
“আপনি সত্যি সত্যি আমায় দেখেছিলেন?”
“বিশ্বাস হচ্ছে না তো?তবে যা দেখেছি তাই বলেছি।আর কিস করার বিষয়টা অনেকবারই দেখেছি তবুও মানতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু সেদিন যখন ওসব দেখলাম গা গুলিয়ে গিয়েছিলো আমার বিশ্বাস করুন!এবং এর জন্যই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে আপনাদের দুজনের সাথে মারাত্মক খারাপ ব্যবহার করেছিলাম।কেউ আমার দিকটা জানার চেষ্টা করেনি।এমনকি আপনিও না!ভেবেছিলাম সব ক্লিয়ার করবো,সরাসরি সবটা আপনায় বলবো কিন্তু তার আগেই সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।আর সে সন্ধ্যায় এক কালো পোশাকে কে যেনো এসে আমার হাতে একটা ফোন দেয়”
“ফোন?কিসের ফোন?”
“জানিনা।ফোন দিয়েই সে দ্রুত গায়েব হয়।সেখানেই দেখি এবং শুনি আপনি অরণকে ব্ল্যাকমেইল করছেন ওসবকিছু ফাস করে তার ক্যারিয়ার নষ্ট করবেন আর নাহয় তাকে আপনি মে*রে ফেলবেন।সেইসাথে অরণের সাথে আপনাকে দৌড়াতেও দেখছিলাম।তখন কোনোকিছুই ভাবতে পারছিলাম না।বন্ধুকে বাঁচাতে হতো আমায়।এবং পৌঁছালামও কিন্তু আপনি ততক্ষণে তাকে আ!ঘা!ত করে চলে গেলেন।আর নিয়ে গেলেন আমার হৃদয়,আমার বিশ্বাস-ভরসা সকলকিছুই।তারপর এরকম আপনার আরও অনেক ছবি,ভিডিওই দেখেছি কিন্তু বিশ্বাস করতে পারতাম না।এবং এটা তখন থেকে নয় কিন্তু চাঁদ।প্রথম হয়েছিলো সেদিন যেদিন আপনার বিশতম জন্মদিন ছিলো”
সমস্তকিছু শুনে বিস্ময় নিয়ে চাঁদ জিজ্ঞেস করে,
“সেদিন থেকে?কিন্তু আমিতো তখন ‘রাজ ভিলা’ সম্পর্কে জানতামও না”
“আমিও তাই ভেবেছিলাম এরপর বুঝলাম কেউ হয়তো চাইতো আমাদের আলাদা করতে”
বেশ থমথমেভাবে চাঁদ বলে,
“আপনি সত্যি সত্যি আমায় দেখেছেন এসব করতে?”
“বিশ্বাস করছেন না তাইনা?কিন্তু এটাই সত্যি।আপনি জানেন আমি মিথ্যা পছন্দ করিনা,বলিওনা”
“জানি।কিন্তু আপনি যা বলছেন তা কখনোই সম্ভব না।আমি এমন মেয়েই নই প্রণয়।আপনি এসব বিশ্বাসও করলেন কী করে?”
“কী বললাম নিজ চোখে আপনায় দেখেছি সরাসরি সামনাসামনি।শুধু অরণ না।অন্য অনেক পুরুষের সাথেই ভিডিও দেখেছি কিন্তু বিশ্বাস করিনি।কিন্তু সেদিন যখন সত্যি সত্যি দেখলাম তাও আবার অরণ!আমি জাস্ট মানতে পারিনি বিশ্বাস করুন!”
প্রণয়ের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসে লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“কবে দেখেছেন আর কখন দেখেছেন?”
“সেদিনই যেদিন আপনি ঢাকা ছাড়লেন।সকাল আর দুপুরের মাঝামাঝি সময় ছিলো।একটা হোটেলের ভেতর”
“অথচ সেদিন পুরোটা সময় আমি ‘রাজ ভিলা’ য় ছিলাম।আর অরণ ছিলো হাসপাতালে।আমার কথা বাদ দিলাম।অরণকে আপনি দেখেননি?”
“অরণ কয়েক ঘন্টার জন্য হাসপাতালে ছিলোনা”
“আপনি ঐ হোটেলে কেনো গিয়েছিলেন?”
“আমার ফোনে ভিডিওসহ মেসেজ আসে।আর অরণকেও যেতে দেখেছিলাম।মনে তখন নানান কিছুই গাইছিলো।আপনি আমার জায়গায় হলে এক্সেক্টলি কী করতেন?”
“বলতে হবেনা বুঝতে পারছি।তবে আমি সত্যিই সেদিন ওখানে ছিলাম না।’রাজ ভিলা’ থেকে সব প্রমাণ জোগাড় করছিলাম এবং পেয়েছিলামও।ভিডিও ও করেছি আর সেটা অরণকে দিয়েছিলামও।আচ্ছা সত্যি সত্যি আমি ছিলাম?আমার চেহারাই দেখেছেন?নাকি শুধু পোশাক?”
“অবিকল আপনি তবে আমার সেসব দেখতে কষ্ট হচ্ছিলো আমি আসলে বোঝাতে পারবোনা চাঁদ।প্লিজ এ বিষয়ে আর কথা বলবেন না”
“বলতে হচ্ছে আমায়।আপনি আমায় সেই নাম্বারটা দেবেন।আমি দেখতে চাই কার এত সাহস যে এতকিছু করলো।ওয়েইট!আমি….আমি হয়তো জানি”
“কী?”
“অহনা!অহনা করেছে।হ্যা!সে ই করেছে।যে আম্বিয়া আপুর রূপ নিতে পারে।সে যে আমারটা পারবেনা তা হতেই পারেনা”
কপাল কুচকে প্রণয় বলে,
“অহনা?কে সে?আর অ্যালেন ছেলেটা কে চাঁদ?তার বাবার কথা বলছিলেন বোনের কথা বলছিলেন?”
“অ্যালেনই সেই ছেলে যে আমায় পছন্দ করেছিলো।আর তার বাবা হলেন অধিরাজ শেখ আর বোনই অহনা।যদিও সৎ বোন”
“অ্যালেন?অ্যালেন আহিনের ভাই?আবার সৎ বোন?আহিনের বোনও আছে?”
“আহিন আর অ্যালেন দুই ভাই।এটা আমি ‘রাজ ভিলা’ যাওয়ার পর জানি।অ্যালেনের নাম আহানও।অ্যালেনের মা ক্যানাডাবাসী।তার চেহারায় বিদেশীভাব দেখেছেন না?”
“হ্যা।আর অহনা?”
“অহনা হলো আহিন,আহানের সৎ বোন মানে অধিরাজ শেখের দুই ঘরের সন্তান তারা।এবং অহনা মাত্রাতিরিক্ত নিকৃষ্ট।ডায়েরী যেহেতু পড়েছেন তাতে এয়ো লেখা ছিলো আম্বিয়া আপুর বেশে এক মেয়ের কথা অথচ আমি আর অরণ আম্বিয়া আপুর লা*শ পেয়েছিলাম এবং সেটা খুবই জঘন্যরূপে ছিলো”
“পড়েছি আমি।তাহলে এই অহনাই মেইন কা!লপ্রিট?”
“কেবল অহনা নয়।অহনা,তার বাবা অধিরাজ,মাহতিম,অনিন্দ্য ঘোষ,কাশেম বাবুর্চিসহ আরও অনেকে”
“মেইন তো অহনা আর অধিরাজ শেখ?আর অ্যালেন ছেলেটাও তো এসবে জড়িত?”
“হ্যা জড়িত।সেও সমান অপরাধী তবে সে আমার জান বাচ….”
“থামলেন কেনো?আমি,আমি শুনেছি আপনি তাকে বলছিলেন আপনার আর অরণের জান সে বাঁচিয়েছে?আর অরণও আপনার জান বাঁচিয়েছে?এবার অন্তত আমায় সবটা বলুন প্লিজ!”
“আপনি সহ্য করতে পারবেন না!আর না সেসব আরও একবার বলতে গিয়ে ফের নিজেকে সেইদিনে উপস্থিত পেতে চাই আমি”
“মানে?আর কে জানে?কাকে বলেছেন?”
“উশ্মিকে বলেছিলাম”
“উশ্মিও জানে?অথচ আমি জানিনা!হায়রে!”
নিজের বামপাশে প্রণয়ের পানে কিছুক্ষণ চেয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলতে আরম্ভ করে,
“সে রাতে যখন ধরা পড়ি।সর্বপ্রথম আমি আপনায়ই মেসেজ করেছিলাম প্রণয়।সেদিন প্রথমবারের ন্যায় বাঁচতে চাওয়ার প্রবল অনুভূতি উপলব্ধি করি।খুব করে বাঁচতে চাইছিলাম প্রণয়।আপনাকে টেক্সট করার পর অরণ আর আমার ভাইকেও করেছিলাম।তারা আগে হোক পরে হোক!সকলেই এলো।অথচ আপনি আসলেন না!আসলেন না আপনি।সেদিন আপনার এত অপমান পাওয়ার পরও আপনাকেই হৃদয় প্রথম ডেকেছিলো।অথচ আপনিতো আসলেন না!কেনো আসলেন না বলুন না?এতটাই রেগে ছিলেন যে মৃ*ত্যু খবর শুনেও আসলেন না?কেনো আসলেন না?আপনি আসলেতো আমি বেঁচে যেতাম প্রণয়!আমার আত্মাটাতো ম*রতোনা!কেনো আসেননি?”
চাঁদের কথাগুলো শুনে ডানপাশে তার পানে চাইতেই প্রণয় দেখলো চশমার আড়ালে ডুবন্ত চোখজোড়ায় অশ্রুরা ভীড় জমিয়েছে।গাল বেয়ে পড়েও গিয়েছে কয়েকফোটা।বারিধারা থামছেনা কেনো?স্রোতের ন্যায় বহমিত কেনো তারা?প্রণয়ের হৃদয় ছলাৎ করে উঠলো!সে চাঁদের পানে চেয়ে থেকেই বিচলিত হয়ে বললো,
“বিশ্বাস করুন সেদিন আমার ফোন আমার কাছে ছিলোনা।আমি আপনার টেক্সট পাইনি চাঁদ!সেদিন সেসব দেখে আসার পর বিকালে যখন আমার ফোনে আরও কিছু ভিডিও,ছবি আসে ক্ষোভে ফোন ভেঙে ফেলি আমি।এরপরই অরণের পিছু গিয়ে দেখি আপনি আর সে একসাথে কথা বলছেন।ফোনে কি যেনো দেখাচ্ছিলেন,তারপরতো সব আপনি জানেনই।আমি সেই ফোনটা রিপেয়ার করার পর সেসব মেসেজ এসেছিলো চাঁদ।আর সেটাও আপনি জেলে থাকাকালীন।এরপরই ভয় জাগে মনে যার দরুন আপনার ডায়েরীটাও আমি সেদিন পড়ি।তারপরই সব জানতে পারি কিন্তু ভালোভাবে বুঝিনি।তবে অধিরাজ শেখের কুকীর্তি জেনেছিলাম।তাকে আগে থেকেই অপছন্দ আমার।সে খারাপভাবে পলিটিক্স করতো”
বেশ আক্ষেপ নিয়ে চাঁদ বললো,
“আপনি যদি সেদিন আসতেন আমি খুব করে বেঁচে যেতাম প্রণয়!হয়তো ভাগ্যে লেখা ছিলোনা।এভাবেই ম*রন ছিলো তাই হলো”
লম্বা শ্বাস নিয়ে চাঁদের দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রণয় বললো,
“এভাবে বলবেন না!প্লিজ বলবেন না!খুব অল্পস্বল্প করেই সে সন্ধ্যার কথা বলবেন প্লিজ?আমি বেশ সংকিত তবে না জানতে চেয়েও পারছিনা।অরণের এ দশা কী করে হলো আমি জানতে চাই।আপনিই বা কেনো ওরূপ মেসেজ দিয়েছেন?তারপর কী হলো?অরণকে কেনো আ!ঘা!ত করে পালালেন?পালালেন তো পালালেন অতদূর কেনো গেলেন?কেনোই বা আপনাকে পালাতে হলো চাঁদ?পালানোটা কি খুব…..”
লম্বা শ্বাস ফেলে প্রণয়ের থেকে নিজের হাত সরিয়ে পা দু’টো বেডের উপর উঠিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে ফ্লোরপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আঁখি জোড়া বদ্ধ করে চাঁদ বলে,
“সেদিন আপনার সাথে ঝগড়ার পর যখন আমি দৌড়ে যাই।হয়তো আমার সেটা উচিত হয়নি।অথবা আমার উচিত হয়নি অধিরাজ শেখের মহলে প্রবেশ করাটা।অথবা এসবকিছুতে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া।ভালো করতে যাওয়াটাই বোধহয় ভুল!কতশত ভুল যে করলাম!সবচাইতে বড় ভুল ছিলো বুকের ভেতর অদম্য সাহস রাখা।একটু কম সাহসী হলে বোধহয় ভালো হতো প্রণয়।সব মেয়েদের ন্যায় বেশি না,অল্প একটু ভীতু হলেও বোধহয় ভালো হতো!সে যাইহোক!এসবকিছু শুরু হয় আমার সেকেন্ড প্রফের সময়।আপনি হয়তো খেয়াল করেননি তবে কলেজের অধিকাংশ মেয়ে গায়েব হচ্ছিলো।এসবকিছুর রহস্য উদঘাটনেই নিজেকে জড়াই আমি।আপনার সাথেও তখন কথা হতোনা আপনি আমায় বরাবরই উপেক্ষা করেছিলেন।আমি বেশ ডিপ্রেশনেই ছিলাম মূলত……”
“আর ক’দিন বাদেই আপনার জন্মদিন ছিলো।সেজন্যই এসব নিয়ে পরিকল্পনা ছিলো আমার।আর সেজন্যই আপনার থেকে দূরে ছিলাম।তবে এরজন্য জীবন এভাবে ঘুরবে জানলে তা কখনোই করতাম না”
প্রণয়ের পানে চেয়ে তার কথা শোনা শেষে ফের একই ভঙ্গিমায় ফ্লোরপানে চেয়ে চাঁদ বলে,
“তারপরই অরণের কাছে আপনার বিষয়ে জানতে চাই।এভাবে করেই তাকে সকলকিছু বলি।যেহেতু আপনার সাথে কথা হতোনা।কিন্তু আমিতো আর জানতাম না!আমারই আড়ালে অগোচরে এতকিছু চলছিলো।জন্মদিন পর্যন্তও সব ঠিক ছিলো।এরপরই আপনার বদলানো ব্যবহার মানতে কষ্ট হতো।অরণের সাথে শেয়ার করতাম কেনোনা তাকে একজন বড় ভাই,বন্ধু হিসেবে দেখতাম।বিভিন্ন পরামর্শ নিতাম।এমনকি সে কী বলতো জানেন?আমি আপনার আমানত তার নিকট।সে আমার কিছু হতে দেবেনা।এবং সত্যিই সেদিন সে আমায় বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ সংক!টে ফেলে…..”
অতঃপর একে একে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে কোনোকিছু বাদ না দিয়ে ছোট ছোট বিষয় পর্যন্ত প্রণয়কে বলা আরম্ভ করে চাঁদ।কখন,কোথায় কীভাবে কী করেছে কেনো করেছে সকল কিছুই।এবং বিভৎসক!র সে সন্ধ্যার কালো অধ্যায়ের প্রতিটা পাতা নিখুঁতভাবে বিবৃত করতে গিয়ে শ্বাস রুদ্ধ হলেও চাঁদ কেপে কেপেই সকলকিছু বর্ণিত করে।সে রাতে কে কী করেছে!কীভাবে করেছে,কার মুখে কী শুনেছে সকলকিছুই!বলতে গিয়ে নিশ্বাস বেগতিক বাড়ে চাঁদের।তবুও সে বলে।সকলকিছুই প্রণয়কে সে শোনায়।আর কোনোকিছুই সে লুকায় না।নিজের সহ্য করা অমানবিক যন্ত্র!ণা পুঙ্খাঅনুপুঙ্খভাবেই বর্ণিত করে প্রণয়ের নিকট চাঁদ।অতঃপর আরও একবার সকলকিছু সে নিজের সাথে ঘটতে উপলব্ধি করে।কিন্তু এবার সে বিড়ালছানার ন্যায় হাত পা গুটিয়ে ছিলো প্রণয়ের বক্ষপটে।প্রণয়ের প্রতিটা হৃদস্পন্দন সে শুনেছে,হয়তোবা গুনেছেও?কীরূপে তারা বেগতিক বেড়েছে তাও উপলব্ধি করেছে।আর প্রণয়?সে চাঁদকে জড়িয়ে রেখেই প্রত্যেকটা কথা,প্রতিটা শব্দ পলকহীন একধ্যানে চেয়ে থেকে শুনেছে।এবং তারই চোখের সামনে সকলকিছু ঘটতে দেখেছে।কী যে এক যন্ত্রণা!মেয়েটা এতকিছু সহ্য করেছে কীরূপে?মনে প্রশ্ন জাগলেও করার মতো সাহস হয়না তার।সে কেবলই শোনে,শুনতে শুনতেই শ্বাস বাড়ে তার,হৃদয় থমকায়।থমকায় সে নিজেও।অতঃপর চাঁদের করা অধিরাজ শেখের নিকট সে সন্ধ্যার আহাজারি কানে শ্রবণ হতেই সে চাঁদকে থামতে বলে।আর শোনা সম্ভব হচ্ছেনা।সে পারছেনা তার হৃদমানবীর হৃদয় ভাঙা বিধ্বং*সী সত্য তারই মুখে শুনতে।তবুও চাঁদ থামেনা,সে বলে।এবং শেষ পর্যন্ত সে বলে।বলতে বলতে এবং চোখের জল একাধারে ফেলার পর ক্লান্ত হয়ে সে প্রণয়ের বুকে মাথা রেখে হেলান দিয়ে তপ্তশ্বাস ফেলে এক ধ্যানে সামনের দিকে চেয়ে প্রণয়ের সাথে লেপ্টে থেকে খানিক থেমে ফের বলে,
“কতটা বিধ্বংসী রূপে আমি অরণের আড়ালে দাঁড়িয়ে নিজ বস্ত্র পরিধান করি আপনি কেনো কেউই কখনো বুঝবেনা প্রণয়!অরণের দেয়া এপ্রোণ গায়ে…..”
চাঁদকে বুকে রেখেই ঘনঘন শ্বাস নিয়ে প্রণয় বলে,
“হিশ!আয় কান্ট টলারেট,প্লিজ স্টপ চাঁদ” [হিশ!আমি সহ্য করতে পারছিনা,দয়া করে থামুন চাঁদ]
তবুও চাঁদ থামেনা,সে বলে এবং শেষবারের ন্যায় বলে,
“তারপর…..তারপর সেভাবেই এ শহর ছেড়ে আমি পালাই প্রণয়।পালাই আমার ভাইয়ের সঙ্গে।জানেন?আমার ভাইটা না আমার সেই অবস্থা সহ্য করতে পারছিলোনা।বাঘিনী সেই চাঁদ সত্যি সত্যি বিড়ালিনী হয়ে যায় প্রণয়।ভেঙে যায় একদম!এক বছরের মতো বো*বা হয়ে গিয়েছিলাম।কথা বেরুতো না মুখ দিয়ে।কী যে যাতনা!কী করে বোঝাই আপনায়?কেউ তা বুঝবেনা।কখনো বুঝবেনা”
অতঃপর চট করেই প্রণয়ের থেকে সরতে গিয়ে বলে,
“একজন ধ!র্ষিতা কারো স্ত্রী অথবা কারো বাড়ির বউ হতে পারেনা প্রণয়,ছাড়ুন আমায়”
আর প্রণয় তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখে নিজ বক্ষস্থলে।
মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করে গম্ভীরভাবে প্রণয় বলে,
“না থাকবে অধিরাজ শেখ আর না থাকবে তার সেই মহল।বিধাতা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না চন্দ্র।আপনিতো আমার বাঘিনী চন্দ্রময়ী।আমি আমার বাঘিনীকে আরও একবার বাঘিনীরূপে দেখতে চাই।তার তেজী,প্রলয়ঙ্কারী রূপ দেখতে চাই চাঁদ”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“আমিও চাই এসবের দ্রুতই পরিসমাপ্তি ঘটুক।আর যে নিতে পারিনা,কি যে বোঝা!কী করে বোঝাই কাউকে?জানেন?যখন টিভিতে অথবা কোনো খবরের কাগজে দেখতাম অমুক জায়গায় ধ!র্ষণ হয়েছে,তমুক জায়গার মেয়ে ধ!র্ষণের স্বীকার হয়ে আ!ত্মহ!ত্যা করেছে বুঝতে পারতাম না দুঃখগুলো,শুধু আফসোস হতো।তবে সেদিন খুব করে বুঝতে সক্ষম হলাম!উপলব্ধি করলাম প্রণয়!এ দুঃখ বোঝবার মতো ক্ষমতা কারো নেই,কারো নেই”
চাঁদকে আগলে নিয়ে ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,
“হিশ!হিশ!আর ভাবেনা”
প্রণয়কে জড়িয়ে রেখেই চাঁদ বলে,
“আপনি আরও অনেক কিছু জানেন না প্রণয়”
“আর কিছু জানতে চাইনা”
“জানা টা জরুরী।অরণের ব্রেইনের পাশ ঘেষে কি!ল আছে প্রণয়।তাকে অপারেশন করিয়ে এটা প্রবেশ করানো হয়েছে।এবং এটা করানো হয়েছে সেই শুরু থেকেই”
চাঁদের পানে দৃষ্টি দিয়ে তাকে খানিক আলগা করে সরিয়ে কপাল কুঞ্চিত করে প্রণয় বলে,
“মানে?এসব….”
মৃদু শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,
“বলছি।ফায়ান অরণকে তার বাড়িতে নিয়েছে না?সেটা আমিই বলেছিলাম তাকে।আমার সন্দেহ জেগেছিলো যে হয়তো হাসপাতালের কেউই এসবে জড়িত।আর আজ তা আরও প্রগাঢ় হলো জেনে যে আমার ফেসমাস্ক ব্যবহার করে কেউ আপনায় দিনের পর দিন ধো*কা দিয়েছে।এমনকি অরণকে নিয়েও আপনায় ধো*কায় রেখেছে।কেউ আছে যে চায়না আমাদের সকলের সম্পর্ক ভালো থাকুক।এবং এটা কে অথবা কেনো চায় তাতো জানিনা কিন্তু সে যে অরণকে মা*রার পেছনে পড়ে আছে তা শিওর।এখনও মা*রেনি কিন্তু তাকে বাঁচতেও দিতে চায়না।কিন্তু আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো প্রণয়।আপনার বন্ধুকে আবার আপনাদের মাঝে ফেরাবার আপ্রাণ চেষ্টা করবো আমি।যার জন্য শেষ মুহুর্তে হলেও বাঁচতে পেরেছি তাকে আমিও বাঁচাবার খুব করে চেষ্টা করবো”
“কিন্তু কিল কী করে?”
“অরণের মাথার এক্স-রে ফিল্মে দেখেছি প্রণয়।আপনাকেও দেখাবো।দেখলেই বুঝবেন।আর এটা বোধহয় তখন করা হয়েছে যখন অরণকে ক্যানাডা নেয়া হয়েছিলো।তবে আমার প্রশ্ন,আপনি থাকতে এমনটা হয় কী করে?”
“ক্যানাডা তো আমি যাইনি।তখন আমার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন চলছিলো।আর শুরুর দিকে ডাক্তাররা বলেছিলো বছর খানেকের মাঝে অরণ কোমা থেকে বেরুতে পারে কিন্তু তা এখনো হয়নি”
“হয়নি কারণ যা করার ক্যানাডাতেই করা হয়েছে”
প্রণয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“তাহলে অরণের অপারেশন প্রয়োজন।কিন্তু কে করবে?আপনি?নাকি ফায়ান?”
“দু’জন মিলেই করবো।একটুখানি রিস্ক আছে।আর সেটা হচ্ছে জীবন হুমকি।কেনোনা ব্রেইনের একদম পাশ ঘেষেই কিলটা বসানো”
“তবে?”
“আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো প্রণয়।আর বিষয়টা আমি,আপনি,ফায়ান ব্যতীত আর কেউ জানবেনা।আমি চাইনা অ!পরাধী এলার্ট হোক আর অরণকে কিছু করে ফেলুক”
To be continued……