আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ১৩.

0
801

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

১৩.
অরণের ঠাট্টাস্বর কর্ণগোচর হতেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার পানে চায় প্রণয়।আর হকচকিয়ে প্রণয়ের উপর থেকে চাঁদ উঠতে চাইলে প্রণয়ই তাকে ধরে নিজের উপর থেকে উঠায়।অতঃপর প্রণয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই প্রণয়ও চাঁদের বাড়ানো হাতে হাত রেখেই উঠে দাঁড়ায়।চাঁদের কা*টা হাতে একটু বেশি চাপ লাগতেই মৃদু ব্যথিতস্বর উচ্চারিত হয় তার কন্ঠধ্বনি হতে।তৎক্ষনাৎ প্রণয় বিচলিত হয়ে চাঁদের হাত পরখ করতে কর‍তে বলে,

“কী হয়েছে?কী হয়েছে দেখি?”

অতঃপর চাঁদের কনিষ্ঠাঙুল বাদে বাকিসবগুলোই মোটামুটি কা*টাছেড়া র*ক্তাক্ত দেখে গম্ভীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“হাত কে!টেছে কী করে?”

চাঁদের বদলে অরণই জবাব দেয়,

“কী করে আবার?আপনার গলার দড়ি কা*টতে গিয়ে”

চাঁদের দিকে চেয়ে প্রণয় বলে,

“সবসময় বেশি বেশি না করলে আপনার হয়না না?”

ভ্রু কুচকে চাঁদ কিছু বলার পূর্বেই অরণ বলে,

“বেশি বেশি না করলে এতক্ষণে জিভ বের করে উপরে চলে যেতি শা*লা বদ!”

অরণের পানে চেয়ে প্রণয়ও তার ভ্রুযুগল সামান্য কুঞ্চিত করে বলে,

“শা*লা তো আমার তোকে বলা উচিত।আমার বউয়ের ওকালতি করছিস কেন?”

হঠাৎ ভ!ড়কানো সুরে চাঁদ প্রশ্ন করে,

“তার বোনের ওকালতি সে করবে তাতে আপনার কী?”

“এজন্যইতো শা*লা বললাম”

“যেহেতু ম*রিসই নি অযথা মেয়েটাকে ভয় কেনো দেখিয়েছিস?”

অরণের প্রশ্নে তার পানে চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে প্রণয়,

“শুধু মেয়েটাই নাকি আপনিও শা*লাসাহেব?”

প্রণয়ের কাছে এগিয়ে এসে বন্ধুর কাধে এক হাত রেখে অপরহাতে প্রণয়ের থুতনী আলতো হাতে চেপে অরণ বলে,

“জ্বি হ্যা দুলাভাই!আমার গলার কাছে এনে শ্বাস আপনি আটকে ফেলেছিলেন।এবার বিস্তারিত বলুন”

প্রণয়ও তার এক হাতে অরণের কাধে হাত রেখে অপরহাতে চাঁদের হাত ধরে পাটাতন হতে নিচে নামতে নামতে বলে,

“তোরা আরেকটু দেরি করলে হয়তো সত্যি সত্যি ম*রে যেতাম।সত্যি বলতে মাথায় র*ক্ত উঠে গিয়েছিলো,সব অন্ধকার দেখছিলাম।দম বন্ধ….”

কথাগুলো শুনতেই পা জোড়া থমকায় চাঁদের।চাঁদ থামতেই প্রণয় আর অরণেরও থামতে হয়।আর প্রণয় আড়চোখে চাঁদের পানে চেয়ে তাকে অস্থির হতে দেখে অরণকে ছেড়ে দুই হাতেই চাঁদকে ধরে নিচে নামতে নামতে বলে,

“এখন ঠিক আছি তো চন্দ্র!অ্যাবসোলুটটি পার্ফেক্ট অ্যান্ড ফাইন”

নিচে নেমে এসে প্রণয়ের পিঠের দিকে এক হাত রেখে অপরহাত কাধে রেখে প্রণয়ের বুকের কাছে মুখ গুজে নিম্নস্বরে চাঁদ বলে,

“তখন যে পা নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলো?আমার জান বেরিয়ে যাচ্ছিলো জানেন?”

চাঁদকে দুই হাতে আলিঙ্গন করে তার চুলের উপর চুমু খেয়ে প্রণয় বলে,

“কিন্তু আমার জান তো আপনি”

প্রণয়ের কথায় লজ্জায় বুক থেকে মুখ তোলার মতো সাহস আর হয়না চাঁদের।অরণ খানিক কেশে গলা পরিষ্কার করতে করতে গম্ভীরভাবে বলে,

“ইহিম!সত্যিটা বলে সবকিছু খালাশ কর তো প্রণয়!তারপর এই ইন্সপেক্টরেরও একটা ব্যবস্থা করা লাগবে”

কপাল কুচকে প্রণয় প্রশ্ন করে,

“কোন ইন্সপেক্টর?”

সামনে এগুতে এগুতে গম্ভীরভাবে অরিন বলে,

“ইন্সপেক্টর রুবায়েত।ওনি আপনার ফা*সি নিষেধাজ্ঞার বার্তা সুপারিন্টেন্ডেন্টকে দেন নি।বরং তার উল্টোটা করেছেন”

অরিনের কথা শুনে ইন্সপেক্টর রুবায়েতের পানে বাকা চোখে চায় প্রণয়।অতঃপর চাঁদকে বুকের কাছ হতে উঠিয়ে ধীরপায়ে এগোয় তার পানে।এগিয়ে গিয়ে রুবায়েতের কানের কাছে মুখ নিয়ে নিম্নকন্ঠে শুধায়,

“বলেছিলাম না?জিভ টেনে ছি*ড়ে ফেলবে?বাঘিনী আমার!”

কথাখানা বলে আলতো পায়ে সরে আসে রুবায়েতের নিকট হতে।অতঃপর গম্ভীরস্বরে সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“ইন্সপেক্টর রুবায়েত এরকমটা কেনো করেছেন জানিনা।তবে ফা*সির নিষেধাজ্ঞা কীভাবে জারী হলো?ওরা আমায় নিয়ে এতটা বিচলিত তবুও আপনারা কেউ কিছু করছেন না?”

সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রণয়ের সামনে এসে তার কাধে হাত রেখে বলেন,

“ভাগ্য করে এমন এক বউ পেয়েছো প্রণয়!তোমার জন্য তোমার এই স্ত্রী……কী যেনো নাম?”

চাঁদের পানে আড়দৃষ্টি নিক্ষেপ করেই প্রণয় বলে,

“চাঁদ”

“হ্যা হ্যা!চাঁদ।তোমার জন্য তোমার ওয়াইফ চাঁদ পুরো দুনিয়া ল!ণ্ডভণ্ড করতেও হয়তো প্রস্তুত!যেইভাবে আমাদের ধাক্কিয়ে পলকের মাঝে তোমার কাছে উঠে দাড়িয়েছে।উসাইন বোল্টও তোমার বউয়ের সামনে মাথা নত করবে”

সুপারিন্টেন্ডেন্টের কথায় মাত্রাতিরিক্ত লজ্জিত হয় চাঁদ।দৃষ্টি দ্রুত নত করে সে।আর প্রণয় চাঁদ হতে দৃষ্টি সরিয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্টকে বলে,

“জ্বি স্যার!আরেকটু ঝুলে থাকলে হয়তো প্রাণপাখি সত্যিই আমার উড়াল দিতো।ইন্সপেক্টর রুবায়েতের ইচ্ছেটাও পূর্ণ হতো।কিন্তু ভাগ্য তার সহায় হয়নি।আমি এখনো ধরণীজুড়ে শ্বাস নিচ্ছি”

“সব ক্রেডিটই তোমার বউয়ের”

এমতাবস্থায় চাঁদ হকচকিয়ে বলে,

“না স্যার!সবকিছু সম্ভব হয়েছে সকলের সাহায্যের বদৌলতে।এবং আমি এখনো চাই চার দফা কার্যকর হোক”

প্রণয়ের প্রশ্ন,

“চার দফা?”

অরিন জবাবে বলে,

“হিম।চার দফা কার্যকর হয়েছে আপু।মেনে নেওয়া হয়েছে”

উৎফুল্লতার সহিত চাঁদ প্রশ্ন করে,

“সত্যিই?”

“হ্যা।প্রণয়ের ফা*সি নিষেধাজ্ঞার সাথেই চার দফা মেনে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স ডাকিয়েছিলেন দেশপ্রধান।এতক্ষণে শুরুও হয়ে গিয়েছে হয়তো।অধিরাজ শেখের ফাস হওয়া ভিডিওর দরুনই বেশ উগ্র হয়েছেন তিনি।তার কিছুক্ষণ পরই এরূপ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।দেশে আর কোনো গেঞ্জাম চাচ্ছেন না এই নিয়ে।আর শুধু শুধু অহেতুক খু*নের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা রাখতে নিষেধ করা হয়েছে।সকল মামলা তুলে নিতে বলা হয়েছে”

সাথে সাথেই প্রণয় বলে,

“খু*ন তো আমি করেছি অরিন।সত্যিই করেছি।তারা অবশ্যই জঘন্যতম কাজ করেছে তবে আমিও যে পূন্যময় কাজ করেছি তেমনটাও নয়।এর জন্য নিজের দোষ ঢাকতে চাচ্ছিনা”

“কিন্তু প্রণয় চার দফার প্রথম দফাই ছিলো আপনার ফা*সি অকার্যকর করে আপনাকে মুক্তি দেওয়া”

“মুক্তি আমি চাচ্ছিনা,এরকম টা না।তবে শাস্তিতো আমার পাওনা?”

সুপারিন্টেন্ডেন্টসহ ঢাকা কারাগারের জেলার প্রণয়ের সামনে আসেন।অতঃপর প্রণয়ের কাধে হাত রেখে জেলার বলেন,

“এজন্যই তুমি সকলের সম্মানীয় এবং প্রিয়।হয়তো সেজন্যই তোমার জন্য বি*ক্ষোভে পর্যন্ত নেমে গিয়েছে লোকজন।তোমায় বেঁধে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না”

সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রণয়ের দিকে চেয়ে ধীরকন্ঠে বলেন,

“চার দফা যেহেতু মানা হয়েছে।কোনোভাবেই তোমায় আমরা আটকে রাখতে পারিনা প্রণয়।তোমার ফা*সি অকার্যকর করে মুক্তি আমাদের দিতেই হবে।উই হ্যাভ নো আদার চয়েজ।আর আমরা চাইও না তুমি আর কোনো যন্ত্রণা ভোগ করো।অনেকতো করলে।এবার বউ,বাচ্চার কাছে ফেরত যাও।নাহয় তোমার বউ যেই রণচণ্ডী আমাদেরই না খু*ন করে বসে।আমি বেশ ভয়ার্ত”

সুপারিন্টেন্ডেন্টের কথা শুনে আড়দৃষ্টিতে চাঁদের পানে চায় প্রণয়।আর চাঁদ মৃদুকণ্ঠে বলে,

“এবার বেশ লজ্জা পাচ্ছি স্যার”

সুপারিন্টেন্ডেন্টের বদলে জেলার বলেন,

“তোমার মতো চন্ডী মেয়ে লজ্জাও পায়?”

“না স্যার।আমার চন্দ্রময়ী অসম্ভবরকম লজ্জাময়ী”

অতঃপর একে একে সকলে স্থান পরিত্যাগ করতে আরম্ভ করে।আর অরিনসহ ঢাকা কারাগারের জেলার মিলে রুবায়েতকে ধরে বাইরে এসে পুলিশ জিপে উঠে বসে।সকলে চলে যেতেই সেখানে রয় কেবল সুপারিন্টেন্ডেন্ট,প্রণয়,অরণ আর চাঁদ।তারা সকলে মিলে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ আলোচনায় মগ্ন হয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
প্রতিটা খবরের চ্যানেলসহ সকল সংবাদ মাধ্যমে হট নিউজ হিসেবে প্রণয়েরই চর্চা।প্রাক্তন ডাক্তার রুহায়ের প্রণয়ের ফা*সি অকার্যকর সহ চারদফা মেনে নেওয়া হয়েছে এবং তার নামে ফের শুনানি ডাকা হয়েছে।রায় ঘোষিত হবে আগামীকাল বিকেল তিনটায়।

পরেরদিন বিকেলবেলা,
তিনটা বেজে দশ মিনিট।পক্ষ,প্রতিপক্ষ সকলের আলোচনায় ধ্যানমগ্ন বিচারক।চাঁদসহ পরিবারের সকলেই বিচলিত।চাঁদ খানিক ঘেমেও গিয়েছে।চোখ বন্ধ করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে সে।সেইসাথে কী যেনো ঠোট নাড়িয়ে বলছেও!কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ডান হাত পকেটে গুজে অপরহাত কোমড়ের পেছন দিকে রেখে অনেক্ক্ষণ যাবৎ ই মেয়েটাকে পর্যবেক্ষণ করছে প্রণয়।এত কেনো কাপছে?ম*রে তো আর সে যাচ্ছেনা।ফা!সি দেয়া হবেনা আর তাকে।বেশি থেকে বেশি জেলই হবে।তবুও মেয়েটার এমন অস্থিরতা পছন্দ হচ্ছেনা প্রণয়ের।তার বাচ্চাটার ক্ষ*তি হবেনা?এই অবস্থায় এতটা হাইপার হওয়া কি জরুরী?এমনিতেই কম ধকল তো সহ্য করেনি।বেশ বিরক্ত হয় প্রণয়।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাঁদের পানে চেয়ে রয় কেবল।ধারালো তার সেই দৃষ্টি,কপাল খানিক কুচকানো।মুখে গাম্ভীর্যভাব স্পষ্ট।তবে বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়না।কপাল শিথিল হয়,ঠোট মৃদু বাকে।কন্ঠনালি অতি স্বল্পমাত্রায় কাপে।হাসে প্রণয়ের বিড়ালাক্ষীদ্বয়।মেয়েটা ঠোট নাড়িয়ে নাড়িয়ে কিছু একটা বলতে বলতেই বুকের কাছে ফু দিয়ে প্রণয়ের পানে চেয়ে তার দিকেও ফু দেয়ার ভঙ্গিমা করে।জিনিসটা বেশ ভালো লাগে প্রণয়ের।এজন্যই এতক্ষণ ঠোট নাড়ছিলো?সূরাহ পড়ছিলো কি?তার জন্য দুআ করছিলো নিশ্চয়ই?অতঃপর পেটে হাত রেখে চাঁদকে কিছু বিড়বিড় করতে দেখে মনে শীতলতা ছেয়ে যায় প্রণয়ের।লম্বা শ্বাস নেয় সে।দুই হাতই বুকের কাছে এনে বগলদাবা করে এক হাতের বৃদ্ধাঙুলি আর তর্জনী দ্বারা থুতনীতে হাত রাখে।অতঃপর চাঁদের সাথে চোখাচোখি হতেই ঠোট বাকিয়ে বাকা চোখে চেয়ে চোখ মারে তাকে।তৎক্ষনাৎ ভড়কায় চাঁদ।আশেপাশে নজর বুলায়।কেউ দেখেছে কিনা!চাঁদের কর্মে ফের হাসে প্রণয়।তবে মনে মনে।এখানে যে তাকে নিয়ে একটু বাদে রায় ঘোষিত হবে সেদিকে কোনো তোয়াক্কা নেই তার।সে মশগুল তার প্রেমমানবীর সনে প্রেমিঙ্গিত কর‍তে।তার বেশ পছন্দ হচ্ছে বিষয়টা।চাঁদকে লজ্জায় ফেলে হৃদয় পুলকিত হচ্ছে।আরেকটু লজ্জায় ফেলবে কি?চাঁদ কপাল কুচকে প্রণয়ের পানে চেয়ে তাকে ইশারা করে আদালতে মন দিতে।তবে চাঁদ কি জানে প্রণয়ের মন এই চশমা পরহিত সহজ সরলা শুভ্রাঙ্গীর নিকটে?জানে হয়তো!তবুও সে লজ্জা পাচ্ছে।গালদু’টো একটু একটু করে জ্বলে উঠছে।তবে মাত্রাতিরিক্ত তার তখন জ্বললো যখন প্রণয় তার থুতনীতে রাখা তর্জনী ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝ বরাবর রেখে ইশারা করলো কিছু একটা।লজ্জায় তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি নত করে চাঁদ।গাল দু’টো তার ভারী জ্বলছে।ফুলে উঠেছে খানিক।চোখ বন্ধ করে কামিজ খা!মচে ধরে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।অপরদিকে চাঁদের পানে চেয়ে থেকেই দুই ঠোট ভেতর দিকে চেপে ধরেছে প্রণয়।অতঃপর ঘাড় ডানপাশে ঘুরিয়ে মৃদু হাসি প্রগাঢ় করে সে।বিড়ালাক্ষীজোড়ায় চাঞ্চল্য বিদ্যমান।নিজেকে সামলে ফের ধ্যানমগ্ন হয় বিচারালয়ে।আর তাকায়নি নিজ ব্যক্তিগত গোলাপের দিকে।তাকালেই যে স!র্বনাশ।মেয়েটার লজ্জামাখা মুখশ্রী বড্ড উন্মাদ করে তাকে।বেশ হিমশিম খেতে হয় নিজ গম্ভীর সত্তার কাছে।

অতঃপর আরও মিনিট দশেক বাদে প্রণয়ের নামে মাস ছয়েকের কারাদণ্ড বরাদ্দকৃত হয়।বাতিল ডিগ্রিসমূহ ফের সচলের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়।মাস ছয়েক বাদে কারা হতে বের হলে তার সমস্ত ডিগ্রিপ্রদানসহ সসম্মানে তাকে তার ডাক্তার পদবী ফেরত দেয়া হবে।ঠোটজোড়া প্রসারিত করে গম্ভীরমুখেই লম্বা শ্বাস নেয় প্রণয়।বিদায়ের সময় দু’হাত সম্মুখে মেলে চাঁদকে কাছে ডাকে।একটু আগেও অতিমাত্রায় লজ্জিত হওয়া চাঁদ সমস্ত লজ্জা খুইয়ে তৎক্ষনাৎ প্রণয়ের নিকট ছুটে আসে।হামলে পড়ে তার বুকের মাঝে।আলিঙ্গন করে একে অপরকে।চাঁদের আঁখিদ্বয় সিক্ত।তবে অশ্রু গড়াচ্ছেনা সেথা হতে।হয়তো কঠোর চিত্তের তাই!প্রণয় চাঁদের কানে ফিসফিসায়,

“আমার পুতুল কন্যাকে সযত্নে রাখবেন চন্দ্র।আমার পুতুলের সাথে পুতুলখেলা কেবল আমিই করবো”

প্রণয়ের কোমড়ে রাখা নিজ হাতসমূহ আরেকটু শক্ত করে চাঁদ বলে,

“মেয়ে হবে কে বললো?ছেলেও তো হতে পারে!”

শান্তস্বরে প্রণয় বলে,

“ছেলে,মেয়ে যেই হোক।সামলে রাখবেন তাকে এবং নিজেকেও।আমার চন্দ্রময়ী কেবলই আমার একান্ত এবং অতি ব্যক্তিগত লালগোলাপ।সেই গোলাপে কেউ হাত বাড়ালে ক্ষ*তবি*ক্ষত করবেন কাটার সাগরে”

“নিজেরও যত্ন নেবেন প্রণয়!এই লম্বাটে বিড়ালাক্ষী মানবও কিন্তু শুধু আমার এবং আমার অতি ব্যক্তিগত পুরুষ,আমার প্রেমিক পুরুষ।আমাদের বাচ্চার পৃথিবীতে আসার ঠিক আগ মুহুর্তে আপনাকে আমার পাশে চাই!অতি সন্নিকটে চাই”

চাঁদের কানে ফের ফিসফিসায় প্রণয়,

“থাকবো মিস রেডরোজ।ওরফে মিসেস প্রণয়!”

বলতে বলতেই অর্ধাঙ্গিনীর কানের পিঠে ঘাড়ের কাছে বেশ গোপনে দৃষ্টির আড়ালে চুমু খায় প্রণয়।সর্বাঙ্গ শিউরে উঠে চাঁদের,শ্বাস খানিক আটকায়।শক্ত করে সে তার হাতের বাধন।অতঃপর নিজেকে সামলে প্রণয়কে ছেড়ে তার পানে চেয়ে এক প্রশান্তির হাসি উপহার দেয় তার ব্যক্তিগত পুরুষকে।

চাঁদ সরে আসতেই প্রণয়ের নিকটে আসে তার অত্যাধিক প্রিয় সখা অরণ।দুই বন্ধু একে অপরকে আলিঙ্গন করে।বেশ ধীরকন্ঠে কিছু কথোপকথনও চালায় তারা।কারো কর্ণকুহর হয়না তা।তবে বেশ বোঝা যায় কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ তবে ছাড়তে হবে!কী কথা হলো তাদের মাঝে জানতে বেশ উৎসুক অনেকেই।তবে তারাও জানে সেসব জানা আদোতে কারো পক্ষে সম্ভব না।তারা কাউকে বলবেনা,কস্মিনকালেও না।অতঃপর অরণ প্রণয়ের কাছে থাকাবস্থায়ই তাদের বন্ধুমহল এসে জাপটে ধরে দু’জনকেই।খানিক শব্দ করেই হেসে দেয় প্রণয়।কথোপকথন চালায় একসঙ্গে সকলে।যেনো বহুপাখির কিচিরমিচির ধ্বনি।একে একে সকলকেই কিছু না কিছু অতি ধীরকন্ঠে কানের সম্মুখে গিয়ে বলে প্রণয়।প্রণয়ের সাথে কারো কথাই কারো কর্ণকুহর হয়না।লোকটা এমন কেনো?গম্ভীরস্বভাব বদলাতে চায়না কেনো?একটু সহজ হলে ক্ষতি কী?

রিদি,শিফা আর রুবাকে সামনে ডাকে প্রণয়।রিদির মাথার ডানপাশে হাত রেখে বলে,

“বোন লাগো,ভাবিও হও।ভাবি বলেই সম্বোধন করছি।বন্ধু আমার বেশ নাকানিচুবানি খাওয়াবে।তবে তাতে চুবে গেলে চলবে না।সমানে সমানে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।তোমাদের সংসার সুখের হোক।আর আমার চেয়েও অনেক বড় ডাক্তার হও!পাশাপাশি আমার চন্দ্রটাকে আর তোমার হবু ভাতিজির খেয়াল রেখো”

মুচকি হেসে রিদি বলে,

“অবশ্যই ভাইয়া!তোমার বলা সব কথাই আমি রাখার প্রাণপন চেষ্টা করবো”

বিনিময়ে প্রণয়ও ঠোট প্রসারিত করে।অতঃপর রুবার পানে চেয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“সবসময় রগচটা থাকলে কিন্তু চলবেনা রুবা।যেহেতু এরকম একটা প্যাশন বেছে নিয়েছো।পুরোপুরি তার দিকে ডেডিকেটেড থাকবে।ডেডিকেশনের সাথে স্বপ্নজয়ের প্রচেষ্টা চালাবে।আর হ্যা তোমার ভাবির যত্ন নিও”

“ইনশাআল্লাহ ভাইয়া”

অতঃপর ঠোট মৃদু প্রসারিত করে রুবার মাথায় হাত রেখে প্রণয় বলে,

“নিজেরও যত্ন নিও”

ভাইয়ের স্নেহের পরশে ভাইয়ের পানে সিক্ত দৃষ্টিতে চায় রুবা।ইশারায় রুবাকে সরতে বলে শিফার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রণয়।অতঃপর বলে,

“তোমায় বেশি কিছু বলার নেই।ভাবির কথায় মনে কিছু নিওনা।তোমার ভাবি তোমাদের বেশ ভালোবাসে”

প্রণয়ের কথার মাঝেই শিফা বলে উঠে,

“না ভাইয়া!আমি জানি,চিনিতো ভাবিকে।ভাবি তোমাকে নিয়ে অনেক ডিপ্রেসড ছিলো।আমি বুঝি সবটা।আমিও ভাবিকে খুব ভালোবাসি।যত্ন নেবো তার আর বাবুরও।চিন্তা করবেনা”

বোনের কথায় মৃদু হাসে প্রণয়।অতঃপর তার মাথায়ও স্নেহের হাত রেখে কানের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেও ধীরকন্ঠে ফিসফিসায় কিছু বাক্য,

“তোমার জন্যে অনেক বড় চমক আছে।অতিরিক্ত চমকাবে তুমি।ভাই তোমার পাশে থাকবো।আর এখন কানে কানে কী বললাম এটা কিন্তু ভুলেও কাউকে বলবেনা।মনে থাকবে?”

শিফা কেবলই মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।আর প্রণয়ের কর্মে হকচকায় অনেকেই।জানতে বেশ উৎসুক হয় প্রণয় শিফাকে কী এমন বললো!

আরও কয়েকজনের সাথে প্রণয় কথা বলে চৈত্রকে ডেকে আলিঙ্গন করে বড় ভাই সমতূল্য বউয়ের ভাইকে।অতঃপর কিয়ৎক্ষণ আলাপ করে শেষে বলে,

“জীবনকে হয়তো আরেকটা সুযোগ দেয়া উচিত ভাইয়া!”

একে একে প্রায় সকলের সাথেই কুশল বিনিময় করে সর্বশেষে নিজ মায়ের পানে চায় প্রণয়।অতঃপর দু’বাহু প্রসারিত করে মাকে ডাকে সে,

“মা?”

অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলের পানে চেয়ে পুষ্পিতা জামান ঠাই দাঁড়িয়ে রন।ফের প্রণয় শুধায়,

“মা?অভিমান করেছো?আসবেনা?”

ছেলের এরূপ স্নেহের ডাকে না এসে পারেন না তিনি।অতঃপর ছেলেকে আলিঙ্গন করতেই প্রণয় নিজে থেকে বলে,

“সর্বপ্রথম তোমায় আশা করেছিলাম মা”

পুষ্পিতা জামান নরম সুরে বলেন,

“মেয়েটা তোর জন্য প্রায় শেষই হয়ে যাচ্ছিলো।এত ভালোবাসে তোকে!জানিস?তোর জন্য এই অবস্থায়ও কত কত জায়গায় যে দৌড়িয়েছে।এখন শান্তি লাগছে তোদের জন্য।কোথায় পেয়েছিলি এমন ফুলের মতো এত শুভ্র একটা মেয়েকে?”

প্রণয়ও নরম সুরেই জবাব দেয়,

“সে নিজেইতো গোটা এক ফুলের বাগান মা।তবে শুভ্র নয় রক্তিম কুসুম সে!আমার গোলাপ,আমার একান্ত লালগোলাপ।কোনো এক শুভ্র সকালে,মৃদু পবনে রক্তিম বর্ণে আমার কাছে এসে ধরা দিয়েছিলো সে!তাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি মা।তার যত্ন নেবে”

To be continued……

[বিঃদ্রঃযারা ইন্সপেক্টর রুবায়েতকে নিয়ে সাস্পেক্টিভ ছিলেন!ইন্সপেক্টর রুবায়েত কেবলই এক সাইড ক্যারেক্টার।বিশেষ কোনো ভূমিকা নেই]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here