#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১৫.
“চৈত্র ভাইয়ার জন্য কোনোপ্রকার অনুভূতি রাখা তোর অনুচিত রুবা”
রিদির শান্ত কন্ঠস্বরের গম্ভীর বাক্যে হৃদস্পন্দন বাড়ে রুবার।কপাল খানিক কুচকায়ও।কিয়ৎক্ষণ রিদির পানে চেয়ে থেকে সেও গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করে,
“হঠাৎ এসব বলছিস যে?”
রিদির সোজাসাপটা জবাব,
“কারণ চৈত্র ভাইয়া হয়তো রিহাপুকে পছন্দ করেন”
বিকেলবেলা যারযার ক্লাস সেড়ে লালবাগের এক রেস্টুরেন্টে বসেছে তিন বান্ধবী রুবা,রিদি আর শিফা।রিদির এরূপ আকস্মিক দেওয়া জবাবে রুবার তুলনায় যেনো শিফাই অত্যাধিক বিস্মিত হয়েছে।রিদির পানে চেয়ে ভড়কানো দৃষ্টি সহিতই সে প্রশ্ন করে,
“আর ইউ সিরিয়াস রিদু?কীসব বলছিস?চৈত্র ভাইয়া কোনো মেয়েকে পছন্দ করেন?তাও আবার রিহাপু?সিরিয়াসলি?”
নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে শিফার পরপর রুবাও প্রশ্ন করে,
“তুই কী করে শিওর চৈত্র রিহাপুকে পছন্দ করে?”
পাশে রাখা কোল্ড ড্রিংকটা হাতে নিয়ে নিমিষেই তা সাবাড় করে শান্ত হয়ে রিদি বলে,
“আমি কিন্তু একবারও শিওর কথাটা বলিনি।আমি বলেছি ‘হয়তো’ পছন্দ করেন”
“আর সেই ভিত্তিতে তুই বলছিস চৈত্রকে নিয়ে ভাবা আমি বাদ দিয়ে দেবো?”
“বাদ দিতে বলিনি।জাস্ট আমার মনে হলো তাকে নিয়ে বেশিরকম ভাবাটা তোর উচিত হবেনা।সময় থাকতেই ফিরে আসতে বলছি”
“কেনো বলছিস?”
এবারে রুবার সামনাসামনি বসা রিদি তার দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চোখে চোখ রেখে অসহায় ভঙ্গিতে বলে,
“আমি তোকে ভালোবাসি তাই।আর আমি চাইনা আমার অথবা শিফুর মতো কোনো সিচুয়েশনে তোর পড়তে হোক বা পড়।যদিও আমার আর মিরের বিষয়টা এখন ভিন্ন,তারপরেও!তাছাড়া চৈত্র ভাইয়াকে বিগত দেড়-দুই বছরে কোনো মেয়ের সাথে আমি কথা বলতে দেখিনি তেমনভাবে।কিন্তু রিহাপুর সাথে সে হেসে কথা বলেছে”
শিফার প্রশ্ন,
“হেসে বলেছে?বলতেই পারে এতে এত ভাবার কী হলো?”
রুবার পাশে বসে থাকা শিফার পানে দৃষ্টি রেখে রিদি বলে,
“হেসে কথা বললে আমি এত ঘাটতাম না।কিন্তু ভাইয়া রিহাপুর আড়ালে তার জন্য হেসেছে।যা আমি এই পর্যন্ত কখনো তাকে করতে দেখিনি।মেয়েদের যথেষ্ট ইগনোর করে চৈত্র ভাইয়া।আর শুধু এটা হলেও চলতো।সে রিহাপুর সাথে আলাদাভাবে কোথাও যাবেও বলেছে।মেইবি ডেটিং টাইপ কিছু!মানে আমি শিওর না।তুই বেশি ভাবিস না রুবা”
রিদির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে খানিক সোজা হয়ে রুবা বলে,
“প্রথমত,আমি রিদিও না আর শিফাও না।তোদের প্রসঙ্গ সম্পূর্ণই আলাদা।এসব প্রেম,ভালোবাসায় যদিও আমি বিশ্বাস করিনা।তারপরেও মিস্টার চৈত্রকেই আমার মনে ধরেছে।তাকেই আমার লাগবে।সে যদি আমায় নাও চায় তারপরেও আমি কেবল তাকেই হৃদয়ে স্থান দিয়েছি।সে আমায় পছন্দ নাইবা করতে পারে।হয়তোবা রিহাপুকে সত্যিই পছন্দ করে।বলবোনা যে আমার তাতে কিছু যায় আসেনা।অবশ্যই যায় আসে,অনেক বেশিই যায় আসে আমার।তবে তোদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না করার মতো রুচি আমার নেই।আর জানিসও আমি ঐরকম মেয়েও না যে যাকে ভালোবাসি বা পছন্দ করি সে অন্যকে ভালোবাসলে আমার কাদতে হবে বা ডিপ্রেসড থাকতে হবে।হ্যা হয়তো আমি কষ্ট পাবো,তোদের আড়ালে দুই ফোটা অশ্রুও বিসর্জন দেবো কিন্তু আজন্ম ডিপ্রেসড বসে থেকেতো লাভ নেই।আমি আমার ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাসড আর ঐদিকেই থাকবো।মাঝে দিয়ে কোনো পুরুষের আগমণ জীবনে ঘটেছে,তাকে হৃদয় নিবেদন করেছি।তাকে নিয়ে ভাবি, ভালোলাগে।ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখেছি আপাতত।বাস্তব জীবনে সে অন্যকারোরই হোক।আমার কল্পনায় আমার চৈত্রমানব কেবলই আমার!রুবার একান্ত প্রেমপুরুষ।আমি তাকে পছন্দ করি আর আমার কাছে সেটাই অনেক।তবে আমি মনে করি আমার চৈত্র প্রণয় ভাইয়ার মতো মেয়ে এ!লার্জেটিক না হলেও সে ঘোর প্রেম আর নারী বিরো!ধী।তাই বেশি ভাবার কিছু নেই,ভাবছিও না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“খাইয়ে দিন”
প্রণয়ের অহেতুক আবদারে কপাল খানিক কুঞ্চিত হয় চাঁদের।সে কপাল কুচকে রেখেই বলে,
“দিনকে দিন বেশ বেহায়া হচ্ছেন আপনি”
“আপনার জন্য সর্বদাই বেহায়া ছিলাম মেয়ে”
প্রণয়ের কথা শুনে কান গরম হয় চাঁদের।আশেপাশে নজর বুলিয়ে প্রণয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে চাঁদ বলে,
“আশেপাশে মানুষজন দেখেন না?”
বলেই দূরে সরে এসে জর্দার বাক্সের মুখ খুলতে নিলে প্রণয়ও তার সন্নিকটে এসে গলার কাছে মুখ নিয়ে বেশ ধীরকন্ঠে শুধায়,
“আমার চন্দ্রময়ী লোকজনের পরোয়া কবে থেকে করে?”
অতঃপর খানিক থেমে ফের ফিসফিসায়,
“ভাবলাম কাছে গিয়েছেন চুমু খাবেন বলে!”
প্রণয়ের ফিসফিসানোর দরুন তার নাড়ানো ঠোটের স্পর্শ চাঁদের গলার হাড়ের কাছে বারংবার ছুইতেই মৃদু কেপে উঠে সে।নিজেকে সামলে বিড়বিড়িয়ে বলে,
“নির্লজ্জ পুরুষ!”
চাঁদের কাছ হতে সরতে সরতেই নিম্নস্বরে প্রণয় শুধায়,
“লালরাঙা হবেন না!একদমই হবেন না।অন্তত এখানে ততটা বেহায়া অথবা নির্লজ্জ হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না যতটা হলে সর্ববেহায়ার খেতাব আমি পাবো”
প্রণয়ের কথায় কানসহ গালদু’টো জ্ব!লে যায় চাঁদের।চোখদুটোও কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য বড় হয় খানিক।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে ঢোক গিলে কিছু বলার পূর্বেই ফের প্রণয়কে নিজের ঘাড়ের কাছে কানের সামনে আসতে দেখে ভড়কায় সে।অতঃপর লজ্জার মাত্রা প্রগাঢ় হয় তখন,যখন প্রণয় তার কানের পিঠে ঘাড়ের কাছে গভীর চুম্বন এঁকে বলে,
“বলেছিলাম লালরাঙা হতে না”
অতঃপর বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে সরে আসে প্রণয়।আর চাঁদ তখনও স্থির হয়ে চোখজোড়া বুজে একহাতে বাটি অপর হাত এপ্রোণের পাশ খা!মচে বসে থাকে।চাঁদকে এরূপ ভঙ্গিমায় বসা দেখে ফের তার নিকট ঘেষে বসে ধীরকন্ঠে প্রণয় আওড়ায়,
“আমি চাইনা আমার চন্দ্র ব্যতীত প্রণয়ের নির্লজ্জামি অন্য কেউ দেখুক।তাই আমায় স্বাভাবিক থাকতে দিন,রক্তিম বর্ণে নিজেকে রাঙানো বন্ধ করুন”
প্রণয়ের কথায় ধ্যান ভাঙে চাঁদের।অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে প্রণয়ের মুখের কাছে এক চামচ জর্দা নিতেই প্রণয় বলে,
“হাতে কী হয়েছে?”
“কী?”
চাঁদের প্রতিত্তোরে মুখশ্রীজুড়ে গম্ভীরভাব বিরাজ করে প্রণয়ের।ভ্রু জোড়া ঈষৎ কুচকায়।সেভাবে থেকেই সে বলে,
“খাইয়ে দিতে বলেছি”
“খাইয়েই তো দিচ্ছি”
“হাত থাকতে চামচ কেনো?”
ফের আশেপাশে চাঁদ চাইতেই দেখতে পায় কয়েদী সকলেই তাদের পানে চেয়ে মুচকি হাসছে।বেশ অস্বস্তিতে পড়ে চাঁদ।খানিক কেশে প্রণয়কে সে বলে,
“কয়েকদিন বাদে বাচ্চা হবে আমাদের।আর আপনি বুড়ো বয়সে এসে বাচ্চামো করছেন প্রণয়?”
কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুঞ্চিত হয় এবার প্রণয়ের।সে চাঁদের ফোলা পেটের দিকে চেয়ে থেকে বেশ বিরক্তির সহিত প্রশ্ন করে,
“তোমার আম্মু কী বলছে পুতুল?সে কি জানেনা প্রণয়ের সান্নিধ্য পেতে কত রমণী আকুল?তোমার ক্রাশ ম্যাটারিয়েল বাবাকে আম্মু বুড়ো বলছে কোন ভিত্তিতে?”
চাঁদও প্রণয়ের পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেই প্রশ্ন করে,
“বাবাকে প্রশ্ন করোতো আম্মু।এত যে রমণী আকুল,তো সেই রমণীদেরই বলুক খাইয়ে দিতে।আমায় কেনো বলছে?”
“আম্মু কি জেলাস পুতুল?তাকে হাত ধুয়ে ঝটপট খাওয়াতে বলোতো”
আর কথা না বাড়িয়ে হাত ধুয়ে এক লোকমা জর্দা প্রণয়ের মুখে তোলে চাঁদ।আর প্রণয়ও তা চিবুতে চিবুতেই প্রশ্ন করে,
“ভাইয়া কোথায়?কথা ছিলো কিছু”
“ভাই কি যেনো কাজে বেরিয়েছে।দরকার ছিলো নাকি”
“আপনি কি ছুটি নিচ্ছেন?”
“হ্যা।এপ্লিকেশন সাবমিট করে এসেছি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
“তুই চৈত্র ভাইকে পছন্দ করিস?”
“সিরিয়াসলি রিহু?কিন্তু কেমনে?মানে চৈত্র ভাই যেই রগচটা।আমার তো মনে হয় পাস্টে কোনো ছ্যাকা ট্যাকা খেয়েছিলো।প্রণয়ের থেকেও বেশি অপছন্দ করে সে মেয়েদের।প্রণয়ের থেকেও ডাবল,ট্রিপল খালা!মেয়ে যেনো চোখের বি*ষ তার।আর তুই?মানে কিছুই বুঝছি না চু*ল!এতবছর কারো প্রেমে পড়িস নাই।এখন কী দেখে তার প্রেমে পড়লি তুই?”
“শান্তই আছি আমি”
“কী!চৈত্র ভাই?চৈত্র ভাই তোর সাথে কোথাও যাবে?কোনো মেয়ের সাথে?রিয়েলি?মামা তুই আমারে থা!প্পড় দিয়ে যা প্লিজ।সিরিয়াসলি?তোরা ডেটে যাবি?”
“বেশি ভাবছি কই?ভাই সাবধান!কখন জানি তোকেই চ*ড়ায় দেয়।সাবধানে থাকবি।সারাজীবন কুমারি ছিলি এমন দেবদাসের প্রেমে পড়বি বলে?তোকে আমার থা!পড়াইতে মন চাচ্ছে ট্রাস্ট মি রিহা!”
“কী হয়েছে মির?কাকে মা*রবেন?”
আকস্মিক রিদির কন্ঠ পেয়ে পিছু ঘুরে মির।অতঃপর তার পানে চেয়ে থেকেই বলে,
“কাউকে না।রেস্ট নাও,ফ্রেশ হও আসছি আমি”
সোফায় ব্যাগ রেখে গায়ের এপ্রোণ খুলতে খুলতে রিদি প্রশ্ন করে,
“কার সাথে কথা বলছিলেন?”
“রিহার সাথে”
অতঃপর এপ্রোণ হাতে নিয়েই নিজেদের রুমের দিকে অগ্রসর হয় রিদি।আর মির ফোনে থেকেই রিহাকে বলে,
“সাবধানে যাস আর সহি সালামত ফিরে আসিস খালা।খবরদার যদি তোর গালে আগামীকাল কোনো থা*প্পড়ের চিহ্ন দেখেছি তো”
“রোম্যান্স মানে!বাচ্চা ডাউনলোডের আয়োজন করছি।ক’দিন বাদে ফুপি ডাক শুনবি।রাখ শা*লি!”
অতঃপর ফোন কেটে ফোস করে শ্বাস ফেলে সামনের দিকে এক ধ্যানে চেয়ে মনে মনে মির শুধায়,
“এখন ব্যাস,আমার বোনগুলোর একটা গতি হোক!”
বলতে বলতেই সোফা হতে রিদির কলেজ ব্যাগ নিয়ে পা বাড়ায় নিজ রুমের উদ্দেশ্যে।গিয়ে দেখে ওয়াশরুম থেকে হাত খোপা করতে করতে বের হচ্ছে রিদি।মুখে বিন্দু বিন্দু পানিকণা চিকচিক করছে।চোখের পাপড়িসহ ভ্রু যুগলও ভেজা।অতি সাধারণের মাঝেও নজর কাড়ে মেয়েটা।হৃদয়ে আলোড়ন বেগের মাত্রায় বাড়ে মিরের।তৎক্ষনাৎ মিরকে এভাবে তার পানে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভড়কায় রিদি।পিছু ঘুরে বলে,
“একটা নক করলে কী হতো?”
বিছানা হতে ওড়না তুলে রিদির দিকে তা ছুড়ে মেরে ভাবলেশহীনভাবে মির জবাব দেয়,
“নিজের রুমে আসবো নক করে?”
সাথে সাথেই রিদিও ওড়না ধরে তা গায়ে জড়াতে জড়াতে পিছু ঘুরে চায় মিরের পানে।অতঃপর আর কোনো জবাব সে দিতে পারেনা।অগ্যতা মিরই বলে,
“খেয়েছো কিছু?”
“হ্যা ওদের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম”
কপাল কুচকে মির প্রশ্ন করে,
“ওদের?”
“রুবা,শিফা”
“আচ্ছা।এদিকে এসো”
মিরের কথা মোতাবেক তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় রিদি।আর মির তার হাত ধরে ড্রেসিং টেবিলের টুলের উপর আয়না বরাবর বসিয়ে নিজ হাতেই রিদির করা খোপা খুলে হাতে চিরুনি নিতে নিতে বলে,
“ভেজা চুল বেঁধে রাখা নিষেধ করেছি না?শোনো না কেন?”
বলতে বলতেই সহধর্মিণীর চুলে চিরুনি চালায় মির।আর রিদি ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মিরের প্রতিবিম্বের পানে একধ্যানে চেয়ে ঘোরের মাঝেই বলে ফেলে,
“আপনার আদর নেবো বলে!”
তৎক্ষনাৎ হাত চালানো বন্ধ হয় মিরের।কপাল কুচকে রিদির চোখ বরাবর চেয়ে সে প্রশ্ন করে,
“কী বললে?”
ইতোমধ্যে মুখ ফসকে কী বলে ফেলেছে ভাবতে ভাবতেই কান গরম হয় রিদির।অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
“ক….কই?কিছু নাতো!”
আয়নার পানে রিদির লজ্জিত মুখশ্রী দেখে মনে মনে হাসে মির।অতঃপর রিদির চুল মাঝবরাবর সিথি করে পিঠজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে বলে,
“কাল যদি কোনো খুশির খবর পাই ঘুরতে যাবো।কলেজ থেকে দ্রুত ফিরবে।কারো সাথে কোথাও যাবেনা”
চুল আচড়ানো শেষে টেবিলের উপর চিরুনি রেখে বিছানার দিকে এগুতে নিলেই রিদি ঘাড় বাকিয়ে মিরের পানে চেয়ে বলে,
“খুশির খবর বলতে?”
“আছে”
বলেই ফের এগুতে নিলে মিরের কব্জি ধরে রিদি।অতঃপর মিনমিনে সুরে বলে,
“আপনি আমায় আগে এড়িয়ে চলতেন কেন মির?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রিহার বিপরীত পাশে হাতে কফি নিয়ে চুপচাপ তাতে চুমুক দিচ্ছে চৈত্র।আর রিহা বারবার ঢোক গিলছে,সাথে হাতও কচলাচ্ছে।বেশ অস্থির দেখাচ্ছে তাকে।কফি অর্ধেক শেষ করে মগটা টেবিলে রেখে হুট করেই চৈত্র আওড়ায় কিছু বাক্য,
“আগেও বলেছি,এখনো বলছি।সময় অপচয় আমার বেশ অপছন্দের রিহা”
টেবিলের পানে চেয়ে ইতস্তত করে রিহা বলে,
“সা….সরি”
“কফি খান”
“জ্বি…….জ্বি”
অতঃপর আরও মিনিট দু’য়েক রিহা বসে থাকায় কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে চৈত্র বলে,
“কফি খান”
হঠাৎ চৈত্রের গম্ভীর কন্ঠ কানে ঠিকই রিহার ভাসে তবে কী বলেছে ঠাওর করতে না পেরে তোতলায় সে,
“জা….জ্বি?”
“কফি খেতে বলেছি”
এবারে বেশ লজ্জিত হয়েই কফির মগ হাতে তোলে রিহা।অতঃপর তাতে দু’টো চুমুক দিতেই চৈত্রের কথা শুনে কেশে উঠে সে,
“ততটাও অবুঝ আমি নই যে একজন মেয়ের অনুভূতি বোঝার মতো ক্ষমতা আমার হবেনা।তবে আমি ম্যারেড রিহা।অথবা বলতে পারেন ডিভো*র্সড”
কাশতে কাশতেই কপাল কুচকে রিহা বলে,
“কী?”
পানির বোতলের মুখ খুলে রিহার দিকে তা এগিয়ে দিয়ে চৈত্র বলে,
“জ্বি।পানি খান”
পানি না নিয়েই রিহা বলে,
“ঠিক বুঝলাম না আপনার কথা?”
পানির বোতলের দিকে ইশারা করে চৈত্র বলে,
“পানি খেতে বলেছি”
অগ্যতা রিহা পানির বোতল নিয়ে অল্প একটু গলাধঃকরণ করে নামিয়ে রেখে বলে,
“কী যেনো বলছিলেন?”
“বেশ ভালো করেই তো শুনেছিলেন আমি কী বলেছি”
“তবে আমি বুঝিনি বিষয়টা”
“সচরাচর আমি কাউকে এক্সপ্লেনেশন দিতে পছন্দ করিনা।মেয়েদের সাথে কথা বলাও আমার অপছন্দের।তবে আপনি আমার বোনের পার্সোনাল ডাক্তার সেইসাথে বোনজামাইয়ের বান্ধবী যার দরুন আপনার সাথে প্রায়ই কথা হয়,অথবা বলতে হয়।সেই সাথে আপনি বেশ ম্যাচিওর প্রকৃতির মেয়েও।যার জন্যই আমার আপনাকে ভালো লাগে।এই ভালো লাগা সেই ভালো লাগা না।আপনি ম্যাচিওর,আমি কীসের কথা বলেছি আপনি অবশ্যই বুঝেছেন।আর এজন্যই আমি চাইনা আপনার মতো বুঝদার মেয়ে মরিচিকার পেছনে সময় ব্যয় করে ভুল পথে আগাক”
“কাউকে ভালোবাসা সময় ব্যয় করা চৈত্র?”
“কাউকে ভালোবাসা সময় ব্যয় না।তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা শুধু সময় ব্যয়ই না।বরঞ্চ,অযথা সময় নষ্ট করাও বটে।আর আপনার আমার প্রতি কেবলই সাময়িক মোহ”
চৈত্রের সোজাসাপটা কথায় রিহাও সোজাসাপটা জবাব দেয়,
“এই বয়সে এসে অবশ্যই মোহে পড়বোনা আমি?”
“হয়তো মোহে নাই পড়তে পারেন।তবে আমার পক্ষে আর কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না”
“অন্য কাউকে ভালোবাসেন?”
“বউ ছিলো আমার।বললাম তো ম্যারেড”
“সত্যিই কি?”
“মিথ্যা বলার মানুষ মনে হচ্ছে?”
“না”
“শুরু থেকেই বলছি।মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।আর আশা করছি আপনি পর্যন্তই বিষয়গুলো সীমাবদ্ধ থাকবে”
“বিশ্বাস করতে পারেন”
“এটাই কাউকে করা যায়না,পারিনা।তারপরেও বলছি।শুনুন”
খানিক থেমে লম্বা শ্বাস টেনে ফের চৈত্র শুধায়,
“সে আমার রূপ।আমার রূপন্তিকা বউ”
To be continued……