আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ০২.

0
800

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

০২.
“ভাবি আহিন ভাইয়া তোমার সাথে দেখা কর‍তে এসেছে।বলবো আসতে?”

বিছানায় বসে কিছু একটা চিন্তায় ধ্যানমগ্ন ছিলো চাঁদ।এমতাবস্থায় উপরিউক্ত বাক্যটি শুনে রুবার পানে তাকায় সে।অতঃপর গম্ভীরভাবে বলে,

“বলো”

চাঁদের অনুমতি পেতেই রুবা বাইরে গিয়ে আহিনকে নিয়েই রুমে ফেরে।রুমে এসে একটা চেয়ার আহিনের দিকে দিতেই সেও চেয়ারটা নিয়ে চাঁদের পাশে বসে।অতঃপর রুবাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তুমি একটু বাইরে যাবে প্লিজ?চাঁদের সাথে আমার কিছু জরুরী কথা ছিলো”

“জ্বি ভাইয়া”

বলে তৎক্ষনাৎ রুবা বের হয়ে রুমের দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে যায়।আর আহিন খানিক কেশে মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে,

“কেমন আছো চাঁদ?”

চাঁদের সোজাসাপটা জবাব,

“যেমন দেখতে পাচ্ছেন তেমনই”

এবারে আহিন বেশ ধীরকন্ঠে বলে,

“যা ভাবছো সেরকম আসলে কিছুই না চাঁদ”

চাঁদও স্পষ্টবাদী,

“কিছুইতো ভাবলাম না মি.আহিন”

“ওয়েল,এখনো তেমনই আছো।তো যা বলছিলাম।যদিও কিছুই ভাবোনি তারপরও বলছি,আমি কিন্তু ম্যারেড চাঁদ।তাছাড়া তুমিও প্রণয়ের ওয়াইফ,সেইসাথে ক’দিন বাদে ওর বাচ্চার মা হবে।সো তোমার সাথে কোনোকিছুর কোনোপ্রকার চান্সই নেই।আর আমি তোমায় কেবলই বন্ধুর বউ হিসেবেই চিনি”

“তাহলেতো আমায় ভাবি ডাকা উচিত না?একবারও ডাকতে শুনলাম না”

এবারে খানিক হেসে দিয়ে আহিন বলে,

“সরি ঐটা সম্ভব না।কোনোদিনই সম্ভব না”

“এগুলোই কি আপনার জরুরী কথা?”

“না।আমি এসেছি প্রণয়ের ব্যাপারে আলাপ করতে”

“কী আলাপ করবেন এটাই যে প্রণ……”

“স্টপ।আগে শুনবে তারপর বলবে”

লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“শুনছি”

“শুক্রবার রাতে প্রণয় আমার সাথে ছিলো”

কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে চাঁদ বলে,

“আপনার সাথে?কিন্তু কেনো?”

“আমায় রা……”

আহিনের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই দরজা ঠেলে কারো ভেতরে প্রবেশ করার আওয়াজে সে পানে তাকায় আহিনসহ চাঁদও।অতঃপর হাসপাতালের পোশাকে মাথায় ব্যান্ডেজ,দুই হাতেও দুটো ছোট স্কচটেপসহ দরজার ঠিক সামনে হাপানোবস্থায় প্রায় বছর সাতেক পর অরণকে দেখতে পেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয় চাঁদের।গলার কাছে শ্বাস এসে আটকে রয়েছে যেনো।ঠোট দু’টোর মাঝে কিঞ্চিৎ ফাক হয়েছে,চোখজোড়াও হয়েছে স্থির।অতঃপর কিছুক্ষণ অরণের পানে চেয়ে থাকে চাঁদ।একসময় দৃষ্টি তার ঘোলাটে হয়ে আসে এবং দ্রুত গতিতে বিছানা ছেড়ে নেমে আসে ফ্লোরে।এসেই দৌড়ায় সে অরণের পানে।এবং অস্ফুটস্বরে বলে,

“অ…..অর….অরণ!অরণ…..”

চাঁদকে দৌড়ে আসতে দেখে অরণও তার হাটার গতি বাড়িয়ে চাঁদের বাহুতে দুই হাত রেখে বলে,

“আস্তে!আস্তে চাঁদ।এক্ষুনি তুমি আমার ভাতিজাকে মে*রে ফেলতে”

অতঃপর চাঁদকে বিছানায় বসাতে বসাতে বলে,

“থামো আর চুপচাপ বসো।আমি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছিনা”

চাঁদ কেবলই অরণের পানে চেয়ে আছে।অশ্রুসিক্ত হয়েছে তার দুই নয়ন।টুপ করে তা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তেই বেশ করুন কন্ঠে চাঁদ বলে,

“অর….অর….অরণ!প্রণয়….প্রণয়কে….”

“জানি আমি।আমি সবই জানি,ফায়ান বলেছে সবটা।মূলত ওর জন্যই আমি তোমার অথবা প্রণয়ের কাছে আসতে পারিনি।আজ সুযোগ বুঝে পালালাম”

কপাল কুচকে চাঁদ বলে,

“পালিয়েছেন?পালিয়েছেন কেনো?”

“তুমিতো ডাক্তার না?তাও ব্রেইন স্পেশালিস্ট রাইট?তোমারতো জানার কথা।প্রোপার রেস্টে না থাকলে ব্রেইনে এফেক্ট পড়বে।তবুও আমি চেষ্টা করেছিলাম আসার।প্রণয়ের কিছু করতে পারলে?এক্সেক্টলি কী হয়েছিলো খুলে বলবে?”

এবারে চাঁদ বিছানা থেকে উঠে অরণকে ধরে বিছানায় বসিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে বলে,

“আপনার রেস্টের প্রয়োজন”

মৃদু হেসে অরণ বলে,

“অনেকতো রেস্ট নিলাম।পুরো সাত বছর।হয়তোবা তারও বেশি।আর কত?”

এবারে আহিন মৃদু কেশে বলে,

“তুমি কোথায় ছিলে অরণ?চাঁদের পালিয়ে যাবার পর তুমিও নিখোঁজ।কেউ তোমার কোনো তথ্য দিতো না”

বেশ গম্ভীর কন্ঠে অরণ বলে,

“হয়েছিলো কিছু ইন্সিডেন্ট”

এবারে চাঁদ বলে,

“শুনুন আহিন।হয়তোবা আপনি জানেন না তবে আপনার বাবা অধিরাজ শেখ সে ছিলো….. ”

গম্ভীরভাবে আহিন বলে,

“আমি সবই জানি চাঁদ।বলছিলাম না?সে রাতে প্রণয় আমার সাথেই ছিলো।আরও কিছু ঘটনাও ঘটেছে যা আমি জানি।শোনো সবটা।আরও ছয়-সাত মাস আগে।প্রণয় আমায় থানায় ডাকায়।পরবর্তীতে কিসের যেনো সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েই ঝামেলাটা ছিলো মূলত।বাবা নাকি সেই ফুটেজের সবগুলোই মুছে ফেলেছে।কিন্তু একটা রয়ে গিয়েছিলো।আর প্রণয় সেটার জন্য মরিয়া হয়েছিলো তখন।সেই একটা ফুটেজের জন্য ও অরিনকে পর্যন্ত থানায় ডাকিয়ে এনেছে”

অরণ কপাল কুচকে বলে,

“অরিন?আমা….”

অরণের কথা আহিনই সম্পন্ন করে,

“হ্যা তোমার বোন অরিনই।ও তো এখন সহকারী কমিশনার”

“অরিন?”

“হ্যা”

চাঁদের প্রশ্ন,

“কীসের ফুটেজ?”

“সেটাতো জানিনা।প্রণয় কাউকেই বলেনি।তবে ফুটেজটা শহীদুল্লাহ হলের আশপাশেরই ছিলো এবং প্রায় সাত বছর আগেরই”

কথাগুলো বলে খানিক থেমে ফের আহিন বলে,

“ওয়েইট,ওয়েইট!মানে তোমার আর অরণ জড়িত কিছু?যেটায় বাবাও শামিল ছিলো?শিট!এতদিন মেলাতে পারিনি আমি”

অরণ গম্ভীরভাবে চাঁদকে বলে,

“প্রণয় জানতো চাঁদ?বলেছিলে তুমি?”

অতঃপর বিস্তারিতভাবে অরণ আর আহিনকে শুরু থেকে সবটা বলতে আরম্ভ করে চাঁদ।সব শোনার পর আহিন বলে,

“মানলাম প্রণয় ক্ষী*প্ত ছিলো তাদের প্রতি।তবে এতটা জঘ!ন্যভাবে কাউকে মা*রা যায়?আমি ভাবতে পারছিনা।প্রণয় এমনটা কেনো করলো?”

আহিনের কথা শুনে চাঁদ আর অরণ একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।আর অরণ বলে,

“কিছু জিনিস একান্ত ব্যক্তিগত থাকে আহিন।যা কাউকে বলা যায়না।হয়তোবা প্রণয়েরও আছে।তবে তুমি যা জানোনা তা হচ্ছে তোমার একটা ভাইও আছে তার নাম….”

“আহান?অথবা বলতে পারো অ্যালেন?”

“হিম”

চাঁদ জিজ্ঞেস করে,

“আপনি জানেন কী করে?”

“প্রণয় বলেছে আমায়।এও বলেছে তাকে যেনো আমি সুরক্ষিত ভাবে নিজের কাছে নিয়ে আসি।বাবা নাকি তাকে এসাইলামে রেখেছে।তার সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে।আর বলেছে ছেলেটাকে যেকোনো মূল্যে সেখান থেকে নিয়ে এসে সুন্দর একটা লাইফ লিড করতে দিবি।তার কাছে নাকি প্রণয় চির কৃতজ্ঞ।এমনটা কেনো বলেছে জানিনা।আর বলেছিলো ও যদি পারতো ও নিজেই আহান ভাইকে ছাড়িয়ে আনতো কিন্তু ওর বেশ জরুরী কাজ আছে।সেদিন না বুঝলেও পরে বুঝেছিলাম জরুরী কাজটা কী”

কথাগুলো বলে ফোস করে শ্বাস ফেলে আহিন।আর অরণ প্রশ্ন করে,

“তোমার বাবার সম্পর্কে এতকিছু জানলে।তবুও সেতো তোমার বাবা।প্রণয় তার সাথে এবং বাকিদের সাথে যা করেছে তাকে কতটুকু সমর্থন দাও অথবা তার বিপক্ষে তুমি?শুনেছি মেয়র হয়েছো।চাইলেই অনেককিছু করতে পারো”

“সে পারি তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করার মতো মানুষ আমি নই সে খবর তোমারও জানা অরণ।আর আমি জানিনা প্রণয়ের সাথে বাবার কী বিশেষ রেশারেশি ছিলো।তবে আমি সুনিশ্চিত এমন কিছুই ছিলো যার জন্য তারা সকলে সেটাই ডিজার্ভ করতো যা প্রণয় তাদের দিয়েছে।তুমিতো প্রণয়ের বেস্ট ফ্রেন্ড তোমারতো প্রণয় সম্পর্কে জানার কথা।যে মানুষ কারো সাথে মেশেনা দূরত্ব বজায় রাখে আর যার দ্বারা কাউকে একটা ফুলের টোকা দেয়াও সম্ভব না সে অতোটা বি!শ্রীভাবে একটা দু’টো না পুরো ছয়টা খু*ন করেছে।যেনো তেনো বিষয় না।আর আমি মনে করি ধ!র্ষকদের শাস্তি কেবলই মৃ*ত্যু।তাই কে বাবা,কে ভাই আর কে বোন সেগুলো তোয়াক্কা করিনা।সত্যের উপর আর কোনো সত্য নাই।সত্য সকলকিছুর ঊর্ধ্বে।আর সত্য এটাই যে আমার বাবা নিজেতো একজন ধ!র্ষক ছিলেনই এবং ধ!র্ষণের কারখানাও তিনি বানিয়ে রেখেছিলেন।আমি বরাবরই প্রণয়ের কাজে সন্তুষ্ট।নিজের তো বাবা শাস্তি দেওয়া যাচ্ছিলোনা।তাই প্রণয় যা করেছে আমি তাতে পূর্ণ সমর্থনকারী”

সকলকিছু শুনে অরণ বলে,

“তোমার থেকে আমি এটাই আশা করেছিলাম”

চাঁদের প্রশ্ন,

“কিন্তু প্রণয়কে?মানে কী করে?আমার মাথায় কিছুই আসছেনা”

চাঁদের মাথায় গাট্টা মেরে অরণ বলে,

“কারণ তোমার ঐ ছোট্ট মস্তিষ্কে কেবল প্রণয়ই ঘুরঘুর করে।বেশি প্রেশার দিও না আমার ভাতিজা এত প্রেশার নিতে পারবেনা।এমনিতেই তাকে কম কষ্ট দাওনি।আমি চাইনা এর চাইতে বেশি কষ্ট তুমি তাকে দাও”

“আপনি কী করে জানেন ভাতিজা হবে?”

“কী জানি মন বলছে একটা ছেলেই হবে যার মাঝে তোমার আর প্রণয়ের সংমিশ্রণ থাকবে।আর এও দেখার ইচ্ছা প্রণয়ের ন্যায়ই তারও একটা গম্ভীর ছেলে হয় কিনা।আই মিন সেকেন্ড প্রণয়”

লম্বা করে শ্বাস ফেলে চাঁদ বলে,

“প্রণয় একটাই হয় অরণ।প্রণয়ের আর কোনো ভার্সন নেই।সে কেবলই একজন,আমার বিড়ালাক্ষী মানব।এমনকি তার নিজের সন্তানরাও তার মতো না,হতে পারবেনা।সে কেবলই চাঁদের একান্ত এবং ব্যক্তিগত সম্পদ”

অরণ মশকরা করার ভঙ্গিতে বলে,

“প্রণয় এসব শুনলে নিশ্চিত প্রশংসায় ফুলে ফেপে উঠবে‌!”

আহিনও বলে,

“আমারতো প্রণয়ের সাথে বরাবরই হিংসে হয়”

আরও বেশকিছু কথা বলতে বলতেই হেসে দেয় তিনজনে।তাদের হাসার মাঝেই হুরমুরিয়ে রুমের ভেতর প্রবেশ করে অরণ-প্রণয়ের বন্ধুমহলসহ প্রণয়ের ভাইবোনেরাও।অরণ দরজার কাছে শোরগোল শুনে সে পানে তাকাতেই নিজের বন্ধুমহলকে দেখে পলকহীন চায় তাদের পানে।কিন্তু কতক্ষণ?কিছুক্ষণ নাকি অনেক্ক্ষণ?হয়তোবা দীর্ঘক্ষণ?চট করেই রিহা দৌড়ে এসে জাপটে ধরে অরণকে।পিছু আসে রবিন আর মিরও।আসে পূর্ণতাও।চারজনই যখন অরণকে জাপটে ধরতে ব্যস্ত অরণের নজর তখন অন্যপানে।ঠিক দরজার সামনেই।তার আঁখি জোড়া খুঁজে চলেছে কাঙ্ক্ষিত এক ব্যক্তিকে।আসছেনা কেনো সে?আসেনি নাকি?অভিমান নাকি রাগ?কোনটা করেছে এবার?অতঃপর অপেক্ষার অবসান ঘটলো।দরজার ভেতর দিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো মিরা।দু’হাত তার কাপছে।দৃষ্টি ফ্লোরপানে।ঘনঘন শ্বাস নেওয়ায় বারংবার বক্ষপিঞ্জর উঠানামা করছে।অরণের হৃদয় শীতল হলো,আঁখি হলো স্থির।শ্বাস তার আটকে আসলো।পলক পড়ছেনা।যখনই মিরা তার নিচু ঘাড় উঁচু করতে আরম্ভ করলো তখনই অরণ দৃষ্টি সরিয়ে তা বাকি বন্ধুদের পানে করে বললো,

“ছাড়!ছাড় আমায়।দম বন্ধ হয়ে মা*রা…..”

অরণের মুখ চেপে ধরলো রিহা।অতঃপর বললো,

“আরেকটা বাজে কথা বললে আমিই তোকে মে*রে ফেলবো”

খানিক হেসে অরণ বললো,

“আচ্ছা এবারতো ছাড়।মাথায় চোট পাবো”

তৎক্ষণাৎ ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো সকলে।আর পূর্ণতার প্রশ্ন,

“কিন্তু এতমাস কোথায় ছিলি তুই?হাসপাতালেও ছিলিনা।প্রণয় যেনো কোথায় নিয়েছিলো তোকে।আর তুই…মানে কিছুই বুঝতে পারছিনা”

“এটা চাঁদের জাদু।চাঁদ আর ফায়ান মিলেই আমার অপারেশন করেছে।আমার জন্য চাঁদ যেই স্ট্রাগল টা করেছে তা সত্যি বলতে কোনোকিছু দিয়েই আমার দ্বারা এর ঋণ শোধ সম্ভব না”

“কীসের ঋণ?আপনি আমার হাজবেন্ডের বন্ধু,আমার বাচ্চার চাচ্চু।তাছাড়া আমার বড় ভাই।একটা দু’টো সম্পর্কতো না আমাদের।আর মিরাপু?তুমি অতোদূর কেনো?এদিকে এসো।অরণের সাথে কথা বলবেনা?”

চাঁদের কথা শুনে সকলেই মিরার পানে মনোযোগ জ্ঞাপন করে।ফের মিরার পানে দৃষ্টি যায় অরণেরও।আর মিরা দৌড়ে আসে চাঁদের নিকট।তার কাছে এসে আকস্মিক জাপটে ধরে তাকে।চাঁদও মিরাকে আলিঙ্গন করে বলে,

“এই কী হয়েছে আপু?কী হয়েছে?কাদছো কেনো?আজ কি কাদার দিন?আজতো অপেক্ষার অবসান হলো।আর যাকে ধর….”

চাঁদকে থামিয়ে মিরা বলে,

“তুমি সত্যিই ম্যাজিশিয়ান চাঁদ!সত্যিই ম্যাজিশিয়ান।তোমার মাঝে এমন এক জাদু আছে যা তুমি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সকলের জীবন আলোকিত করে তুলতে সক্ষম।এজন্যই হয়তো তোমার নাম চাঁদ!চাঁদের মতোই অন্ধকারকে বিদায় করে আলোয় অভূতপূর্ব করে তোলো সমস্তকিছু”

মিরার পিঠে আলতো হাত বুলিয়ে মৃদু কন্ঠে চাঁদ বলে,

“আচ্ছা বুঝেছি।এবার অরণের কাছে যাওতো দেখি”

বলেই নিজের কাছ থেকে মিরাকে সরিয়ে ইশারায় অরণের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত করে চাঁদ।আর মিরাও স্মিত হেসে অরণের দিকে যেতে নিলেই হাত দ্বারা অরণ মিরাকে বাধা দিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,

“স্টপ।স্টপ দেয়ার”

অরণের কথা শুনে কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় মিরার।কপাল কুচকে সে কিছু বলতে নিলেই অরণ চাঁদকে বলে,

“আমি প্রণয়ের কাছে যাবো চাঁদ।ওর লইয়ার কে?তাকে এখানে আসতে বলো”

চাঁদ প্রতিত্তোর করে,

“কিন্তু অরণ মিরাপু?”

বেশ বিরক্তির সহিত অরণ বলে,

“কী?”

“মিরাপুর সাথে কথা বলবেন না?”

“কী কথা বলবো ওর সাথে আমি?ও,প্রণয় আর রবিন মিলে কী কী করেছে তা কি আমি জানিনা?সবই জানি,শুনেছি।তো যা বলছি তাই করো প্রণয়ের লইয়ারকে ডাকাও”

“কিন্তু অরণ…..”

“কোনো কিন্তু না।তুমি না পারলে এই মির দেখতো মামা তুই কল দে।দিয়ে বল আমি থানায় যাচ্ছি,তাকেও আসতে”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিরার থেকে নজর সরিয়ে অরণের পানে চেয়ে মির বলে,

“চাঁদের বেস্টফ্রেন্ডই প্রণয়ের লইয়ার।তুই চল,ও হয়তো ওখানেই আছে”

“ঠিক আছে চল”

বলেই এগোতে নেয় অরণ আর মিরা তার কব্জি ধরে বলে,

“অর…..”

কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই অরণ ঝাড়া মেরে মিরার হাত ছাড়াতেই মিরা ছিটকে যায় চাঁদের নিকট।আর চাঁদ তাকে ধরে ফেলে বলে,

“কী করছেন কী?হয়েছে টা কী?আপনি জানেনও মিরাপু আপ……”

চাঁদকে থামিয়ে মিরা বলে,

“হিশ!থামো”

অতঃপর অরণের দিকে চেয়ে বলে,

“কী হয়েছে অরণ?কথা বলবি না তুই?”

অরণের সোজাসাপটা জবাব,

“কী কথা বলবো তোমার সাথে?কে তুমি?”

কথাখানা বলে আর এক মুহুর্ত দাড়ানোর প্রয়োজনবোধ করেনা অরণ।ছুটে চলে সে মিরের কব্জি ধরে টানতে টানতে।উদ্দেশ্য তার প্রধান জেলখানা।প্রায় বছর,বছর সাতেক!কেমন হয়েছে প্রণয়?আগের ন্যায়ই গম্ভীর,চুপচাপ স্বভাবের?নাকি চাঁদের সংস্পর্শে এসে একটু হলেও বদলেছে?তার সেই বিড়ালাক্ষীজোড়া আগের ন্যায়ই কি হাসে?নাকি তাতে বিদ্যমান অজস্র বেদনা,হতাশারা?এখনো কি অরণবিহীন সে প্রতিদিন কল্পনা করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে?কেমন হবে প্রণয়ের প্রতিক্রিয়া যখন সে আরও একবার অরণকে তার নিজ পায়ে দাড়ানোবস্থায় দেখবে?কতটা প্রাণোচ্ছল থাকবে যখন দেখবে তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় বন্ধু ফের ধরণীজুড়ে শ্বাস নিচ্ছে?হাসছে তার পানে চেয়ে?কথা বলছে তার সাথে?অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে যখন সে ঠিক প্রণয়ের বরাবর দাঁড়াবে তখনকার যে প্রতিটা প্রতিক্রিয়া প্রণয়ের হবে সেসব ভেবেই অরণের হৃদস্পন্দন ক্রমাগত বাড়ে,শ্বাস হয় তার দ্রুত।মস্তিষ্কের নিউরণসমূহ তাকে কেবল এক জিনিসই ভাবাচ্ছে কীভাবে সে প্রণয়ের দিকে তাকাবে?কীভাবে প্রণয়ের সাথে সে কথা বলবে?কীভাবেই বা ‘প্রণয়’ বলে তাকে একবারের জন্য হলেও ডেকে উঠবে?সে কি আদোতে পারবে এতবছর পর বন্ধুর সামনে গিয়ে কঠোর থাকতে?শেষবার যখন তাদের কথা হয়েছিলো পরিস্থিতি ছিলো ভিন্ন।এবারের পরিস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত ভিন্ন।নানান চিন্তায় মস্তিষ্ক কিলবিল করছে অরণের,সেইসাথে বুকের ধুকপুকানিও বেড়ে চলেছে ক্রমাগত।আর কত পথ?কতটুকু পথ পেরোলে প্রাণপ্রিয় বন্ধুর দর্শন পাবে সে?তাকে কি আলিঙ্গন করার সুযোগ তার মিলবে?নাকি এ দেখাই হবে শেষ দেখা?

To be continued……

[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here