#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
২৩.(বর্ধিতাংশ)
পরেরদিন পূর্ণতার সাথে দেখা করার কথা থাকলেও সেথায় আর আসেনি প্রণয়।অতঃপর তার পরেরদিন বিকেলবেলাই সে হাজির হয় পূর্ণতার যত্নাদির দরুন।সাথে রয়েছে তার এক সঙ্গীও।ঘুমে কাবু থাকা পূর্ণতার মুখ হতে স্কচটেপ টেনে তুলতেই ঘুম তার আলগা হয় এবং খানিক শ্বাস নিয়ে অতি কষ্টে সে উচ্চারিত করে,
“কা……কে?প্রণ…প্রণয়?”
কথা তার শেষ হতে না হতেই কর্ণকুহর হয় এক পুরুষালি অতি গম্ভীর কন্ঠস্বর,
“আগে ভাবতাম পুরুষের জীবন ধ্বংসের জন্যই নারীর জন্ম।তবে আপনি আমায় ভুল প্রমাণিত করেছেন মিস পূর্ণতা।আপনি দেখিয়ে দিয়েছেন নারীরা সব পারে।এক নারী আরেক নারীর জীবন অতি রুক্ষ এবং তুষ্টভাবেই ধ্বংস করতে সক্ষম।আপনি নিজেই তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ”
প্রণয়ের কন্ঠের বদলে ভিন্ন কন্ঠ কর্ণগোচর হতেই কপাল কুচকায় পূর্ণতার।অতঃপর প্রশ্ন করে সে,
“কা….কে?কে আপনি?”
পূর্ণতার পেছনে গিয়ে তার চোখের বাধন খুলতে খুলতেই লোকটা বলে,
“আমি তাদেরই অতি আপনজন যাদের সর্বোচ্চ ক্ষ*তিটা আপনি করেছেন।যার সর্বস্ব খোয়ানোর মূলে ছিলেন আপনি।চৈত্র,চাঁদের ভাই?বড় ভাই কিনা?ভাইয়েরা কী করে জানেন?বোনের সুরক্ষায় কখনো পিছুপা হয়না।তবে আমি আমার বোনকে রক্ষা করতে পারিনি।না পেরেছি আমার ভাগ্নের রক্ষক হতে।আপনি তাদের জীবিতই মে*রে দিয়েছেন মিস পূর্ণতা”
অতঃপর পাশে এসে দাঁড়ায় প্রণয়ের।এবং প্রণয় চৈত্রের কাধে হাত রেখে ধীরকন্ঠে শুধায়,
“দেরিতে হলেও সময় সবারই আসে ভাইয়া”
কথাখানা শেষ করে ফের পূর্ণতার পায়ের নিকট বসে প্রণয়।অতঃপর হকচকায় পূর্ণতা এবং বলে,
“কা….কী করছিস?আজ কী করতে এসেছিস তুই?”
জবাব আসে চৈত্র হতে,
“চিন্তা করছেন কেনো?আপনার যত্নই করবে”
কথা শেষে হাতে থাকা ফার্স্ট এইড বক্স প্রণয়ের নিকট এগিয়ে দেয় চৈত্র।আর প্রণয় তা নিয়ে পূর্ণতার কা*টা হাত ড্রেসিং করতে উদ্যত হয়।দিন দু’য়েক বাদে কাটা জায়গায় স্পর্শ লাগতেই ব্যথা টনটনিয়ে উঠে পূর্ণতার।দাঁত কিড়মিড়িয়ে মনে মনে কেবল এই যন্ত্রণা হতে পরিত্রাণ চায় সৃষ্টিকর্তার নিকট।তবে সে তার সনে হওয়া পরবর্তী যাতনা সম্পর্কে রয় সম্পূর্ণ অনবগত।
পূর্ণতার ড্রেসিং শেষে প্রণয় তার পিছু দাঁড়িয়ে হুডির পকেট হতে ছু*ড়ি বের করে গালের কাছে তা রাখতেই পূর্ণতা বলে,
“দা…..দোস্ত দোস্ত তুই….তুই কা….কী কর….ছিস?”
“ভয় লাগছে মিস অহনা,সরি পূর্ণতা?”
চৈত্রের গম্ভীরস্বরও ঠাট্টামূলক ঠেকে পূর্ণতার নিকট।অতঃপর ঘাড় ঘুরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি চৈত্রের পানে নিক্ষেপ করে কিছু বলতে গেলে গালের চামড়ায় হঠাৎ জ্বলুনি এবং তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় তার।সাথে তরল কোনোকিছু কপোল বেয়ে চিবুক ছুতেই লোমকূপসমূহ দাঁড়ায় পূর্ণতার।শ্বাস তার ভারী হয়।মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয় শরীরে।বুঝতে তার কোনোপ্রকার অসুবিধা হয়না প্রণয়ই তার গালে আচড় কে*টেছে।অতঃপর পূর্ণতার গালে খানিক শক্তি প্রয়োগ করেই ছু*ড়ির মাথা চে!পে ধরলে মৃদু আ!র্তনাদ করে সে।আর প্রণয় খানিক গভীরতার সহিতই ছু*ড়ি চেপে ফের গালে টান দিতেই মাংস চি*ড়ে র!ক্ত গড়ায় পূর্ণতার।খানিক র*ক্ত প্রণয়ের কালচে বর্ণের হুডিতেও ছিটকে আসে।কিছুটা গালেও লাগে তার।ঠোট মৃদু বাকে।অতঃপর ছু*ড়ি সোজা হতে বাকা করে গালের মাঝ বরাবর প্রস্থাংশে টান দিতেই স্বল্প বিস্তর যাতনায় আ!র্তনাদ ভাসে পূর্ণতার।একই রূপে অপরপাশে কার্য ধারণ করলে পূর্ণতার প্রতিটা ছটফটানো চিৎকারে প্রশান্তি বয় হৃদয় জুড়ে তারই সম্মুখে বসে থাকা দুই মানবের।চৈত্র গম্ভীর দৃষ্টি পূর্ণতার পানে রেখেই এগিয়ে আসে প্রণয়ের নিকট।অতঃপর পেয়ালা ভর্তি মরিচের গুড়ো এগিয়ে দিতেই প্রণয় সেথা হতে দুই চিমটি পরিমাণ নিয়ে পূর্ণতার গালের চে*ড়া অংশসমূহে অতি ধীরে,সংগোপনে স্পর্শ করায়।তৎক্ষণাৎ উচ্চস্বরে আ!র্তনাদ করে পূর্ণতা।চোখ হতে গড়ায় তার বারিধারা।কা*টা গাল উষ্ণজলের সংস্পর্শে আসতেই জ্বলে উঠে নিমিষে।মৃদু আ!র্ত!নাদের সহিতই সে ডাকে,
“মা!”
“আল্লাহ!এম…এমন করিস না প্রণয়।আমায় তুই মা*রবিই।একবারে….একবারে মে*রে ফেল”
হুডির টুপি মাথা হতে সরাতেই প্রণয়ের এলোমেলো চুল নজরাবন্দী হয়।খানিক ছন্নছাড়াই লাগছে তাকে।চোখমুখ শুকনো।দৃষ্টি খানিক কমলাটে।চোখের নিচে দেবে গিয়ে হালকা কালচে বর্ণ দৃশ্যমান।ঘুমোয় না কত রাত?কিছুটা উন্মাদের ন্যায়ই পূর্ণতার চে*ড়া কপোলের মাংসের ভেতর ধীরেসুস্থে ম!রিচের গুড়ো ভরতে ভরতে গম্বীরস্বরে ধীরকন্ঠেই সে আওড়ায়,
“মা*রবোতো তোকে অবশ্যই।তবে মানসিক যা*তনা না ভুগিয়ে নয়।বল তো আমার চাঁদের সাথে তুই যা করেছিস।তোর বাপ যা করেছে।একই জিনিস যদি আমি অথবা আমরা মিলে তোর সাথে করি?”
চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।শ্বাস বেড়ে গিয়ে গলার কাছে আটকাতেই বহু কষ্টে সে আওড়ায়,
“তা….তুই রা….রেপ রে*পের…….”
কথার মাঝপথেই আকস্মিক পূর্ণতার কা*টা কপোলদ্বয় চে!পে ধরতেই হাতখানা র*ক্তে রঞ্জিত হয় প্রণয়ের।এবং গর্জায় সে,
“শাট ইওর ব্লা!ডি মাউথ!”
খানিক থেমে মৃদু শক্তি প্রয়োগ করে চোয়াল চে!পে রেখেই ফের শুধায়,
“তোর ন্যায় নোংরা মস্তিষ্ক নিয়ে প্রণয় চলেনা।এবং চাঁদ ব্যতীত প্রণয়ের হৃদয়ে কোনো নারী কখনো ছিলোনা,নজরেও নেই।তোর উপর আমি থু ও দেবো না,ইউ ব্লা!ডি চিপ লেডি!”
অতঃপর আকস্মিকই পূর্ণতার নেত্রদ্বয়ের পাতা বা’ হাতের তর্জনী এবং মধ্যাঙ্গুলি দ্বারা টেনে ধরে অপরহাতের আঙুলসমূহে থাকা লা*লমরিচের ছোয়া আঁখি দু’টোয় ঘষে ঘষেই স্পর্শ করায় প্রণয়।সঙ্গে সঙ্গে চেচায় পূর্ণতা,
“ও আল্লাহ গো!”
উচ্চস্বর ভাসে প্রণয়ের,
“ডু ইউ রিমেমবার?রিমেমবার পূর্ণ?আমার চাঁদের আহাজারিসমূহ তোর কানে কি এখনো গুঁজেনা?গোঁজা উচিত।অন্তত আজকের পর অবশ্যই গোঁজা উচিত।তোর মনে রাখা উচিত প্রণয়ের হৃদমহলে থাবা মে*রেছিস তুই।সেই কব্জি কে*টে মহলেই পুতে না রাখতে পারলে আমার নামও রুহায়ের প্রণয় না!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
নিত্যদিনকার ন্যায় আজও ভার্সিটি শেষে এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে হেটেই টিউশনে যাচ্ছিলো রুবা।এমতাবস্থায় হঠাৎ ই তার নজরে আসে বিষণ্ণ এবং ধীরগতিতে পথ অতিক্রম করা চৈত্রকে।তৎক্ষণাৎ দৌড়ে তার পানে এগোয় রুবা।তার পাশেই দূরত্ব রেখে হাটতে হাটতেই মৃদু কাশে।তবে কোনো সাড়া পায়না চৈত্র হতে।তাই গলা পরিষ্কার করে নিজেই ডাকে তাকে,
“কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার চৈত্র?”
আকস্মিক কোনো মেয়েলি কন্ঠে ঘাড় বাকিয়ে পাশে তাকায় চৈত্র।অতঃপর রুবাকে নজরে আসতেই কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় তার।এবং কোনো শব্দ ব্যয় না করেই পায়ের গতি দ্রুত করে সে।চৈত্রের কান্ডে অবাক হয়না রুবা।বরং ঠোট উলটে তার পানে চেয়ে ব্যাগ হতে মোবাইল বের করে কাউকে কল দেয়,
“আমার আসতে একটু দেরি হবে”
অতঃপর ধীরগতিতে পিছু নেয় চৈত্রের।হাটতে হাটতে মিন্টুরোডে এসে আশপাশ নীরব হতেই ফের হাজির হয় চৈত্রের নাগালে।চৈত্রের বা’পাশে দাঁড়িয়ে দুই হাত পিছু রেখে হাটতে হাটতেই সুর তোলে রুবা,
♪♪♪….চৈত্র বেয়াই চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কী তাতে?
হার মেনেছে দিনের আলো,
রাগলে তাকে লাগে আরও ভালোও হোহোহোও…♪♪♪
রুবার অতিষ্টপনায় মাত্রাতিরিক্ত বিরক্ত হয় চৈত্র।এমনিতেই পূর্ণতার সহিত দেখা করে মেজাজ তার চটে আছে।রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার দরুনই সে শূন্যপথে হাটছিলো।রুবাকে দেখেও বিশেষ কোনো তোয়াক্কা করেনি।কিন্তু রুবার বর্তমান কান্ডে রাগের মাত্রা তার বেগতিক বাড়ে।অগ্যতা সে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে রুবার গাল বরাবর হাত তুলে আকস্মিক থেমেও যায়।হুশে আসলে উঁচানো হাত মুঠিবদ্ধ করে নামায় সে।অতঃপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“সবসময় সবকিছু ভালো লাগেনা মিস রুবা!আপনার বেহায়াপনায় অতিষ্ট হচ্ছি আমি।যন্ত্রণায় মাথা ফে*টে যাচ্ছে”
বাক্যসমূহ আওড়িয়ে দু’হাত রুবার সম্মুখে খানিক শব্দ করেই মিলিয়ে চৈত্র বলে,
“দূরে থাকুন আমার থেকে।রেহাই দিন!ঘৃণা করতে চাচ্ছিনা,নিজেকে ঘৃণা করাতে বাধ্য করাবেন না প্লিজ!”
অতঃপর পিছু ঘুরে আগের ন্যায়ই হাটাধরে চৈত্র।আর রুবা কেবলই তার পানে চেয়ে রয়।দৃষ্টি তার স্থির দূর হতে দূরান্তে যাওয়া চৈত্র পানে।স্থির থাকাবস্থায়ই চৈত্রপানে সে ততক্ষণ চেয়ে থাকলো যতক্ষণ না চৈত্রের আবছা দৃশ্য তার নজর এড়ালো।সবসময়কার চৈত্রের তুলনায় কিয়ৎক্ষণ পূর্বের চৈত্রে বিশাল তফাৎ পরিলক্ষিত হলো রুবার।পূর্বে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেও আজ সে বিষণ্ণ এক চৈত্র,অসহায় এক চৈত্রকে দেখেছে।চৈত্রের এই রূপ আদোতে তার দেখা হয়নি।না এরূপ ব্যবহারের সম্মুখীন সে হয়েছে।চৈত্রের মন খারাপ ভেবে খানিক হাসাবার অথবা বিরক্ত করার চেষ্টায় ঘৃণ্যমান দৃষ্টি কি তার না দেখলেই হতোনা?এরূপ দৃষ্টি সহ্য করার সীমা কি রুবা রাখে?কস্মিনকালেও ভুল সিদ্ধান্ত না নেওয়া রুবার প্রথম আর শেষ ভুল কি এটাই?
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ক্যাম্পাসের ভেতরেই অরণের পাশে ঘাসের উপর বসে আছে ফায়ান।পা দু’টো মেলে টাখনুর উপর অপর পা রেখে হাত দু’টো পেছনে দিয়ে আকাশপানে চেয়ে আছে সে।অরণও সচরাচরের ন্যায়ই বসে আছে।দু’জনের মাঝে খানিক সখ্যতাও হয়েছে বিগত কয়েক মাসে।হঠাৎ ফায়ান তাকে বলে,
“ভাই তুমি এত বই পড়ো কেনো?কলেজ লাইফ থেকেই দেখে আসছি।অভ্যাস বদলানো যায়না?”
ফায়ানের কথায় তার পানে চেয়ে হাতে থাকা বইটা ঘাসের উপর ডান পাশে রেখে নিজেও ফায়ানের ন্যায় পা মেলে বসে অরণ।অতঃপর আকাশপানে চেয়েই বলে,
“মানুষ অভ্যাসের দাস ফায়ান।চাইলেও অভ্যাস বদলানো যায়না।অথবা বলতে পারো আমরাই বদলানোর চেষ্টা করিনা”
অরণের কথায় তার পানে কিঞ্চিৎ কুচকানো দৃষ্টি সহিত চায় ফায়ান।অতঃপর নিমিষেই তা শিথিল করে দৃষ্টি সম্মুখে রেখে বলে,
“মানুষ পারেনা এমন কিছু নেই ভাইয়া।এই যেমন মির ভাইয়াকেই দেখো।আমরা কি তাকে প্লেবয় হিসেবে চিনতাম না?অথচ রিদির সাথে তাকে দেখলে একজন পার্ফেক্ট হাজবেন্ডের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।এটা কি পরিবর্তন না?”
ভাবলেশহীন জবাব অরণের,
“ইহিম!”
কপাল কুচকে রেখেই ফায়ান প্রশ্ন করে,
“কেনো?”
“কারণ ও সর্বদাই রিদিকে ভালোবেসেছে।যেহেতু এখন রিদিকেই সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তখন নিজের সবটা উজাড় করেই ভালোবাসবে।অস্বাভাবিক কিছু?”
খানিক চিন্তা করে ফের ফায়ান প্রশ্ন করে,
“তুমি কী করে জানো মির ভাই রিদিকে ভালোবাসতো?”
“শুনেছি।তাছাড়া বন্ধুতো,বন্ধুর মনের খবর একটু হলেও তো রাখি!সন্দেহ ছিলো হয়তো কাউকে ভালোবেসেই দেবদাস হলো কিনা!তবে চৈত্র ভাই কেনো দেবদাস হয়েছে সে খবর এখনো অজানা।তুমি কি কিছু জানো?”
লম্বা শ্বাস টেনে ঠোট উলটে ভ্রুযুগোল উঁচিয়ে জবাব দেয় ফায়ান,
“না,আইডিয়া নেই”
ফায়ান থামতেই রসিকতা করে অরণ,
“তুমি বিয়ে করছো না যে?চৈত্র ভাইয়ের মতো দেবদাস হতে চাচ্ছো নাকি?”
“আমার বিয়ের বয়সতো এখনো পড়ে রয়েছে।তোমারটা বলো?তুমি করছো কবে?”
“শীঘ্রই”
অরণের জবাবে চমকায় ফায়ান।চট করেই ঘাড় ঘুরিয়ে তার পানে চেয়ে প্রশ্ন করে,
“কাকে ভাই?”
“যাকে আমি ভালোবাসি”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
দিন চারেক পরের কথা,
সকলে একসাথে খেতে বসেছে।প্রণয়ও তাই।ডান হাতে ভাত নেড়েচেড়ে বা’ হাতে পাশে বসে থাকা চাঁদের হাত টেবিলের নিচ হতেই ধরে রেখে খানিক কাছে গিয়ে ধীরকন্ঠে কিছু বাক্য আওড়াবার পূর্বেই শুনতে পায় টেবিলে বসা সকলের কাশির সুর।বিশেষ করে উজান।উজানের কাশির মাত্রা এতটাই তীব্র যে বিরক্তিতে কপাল সামান্য কুঞ্চিত হয় প্রণয়ের।সেভাবে থেকেই গম্ভীরকন্ঠে সে আওড়ায়,
“ছ’মাসের জন্য বউয়ের থেকে আলাদা হতে চাস?”
কাশি থামিয়ে হকচকায় উজান,
“কা….কা কাকে বলছো ভাই?”
ভাত মাখতে মাখতেই প্রণয় বলে,
“আমি আর তুই ব্যতীত এখানে যদি আর কেউ বিবাহিত থাকে তার নাম শুনতে চাচ্ছি”
খানিক কেশে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে উজান।অতঃপর আমতা আমতা করে বলে,
“ভা…ভাই আমি কী করেছি?হঠাৎ এসব বলছো কেনো?”
“যক্ষ্মা রোগীকে অবশ্যই ঘরে বসিয়ে রাখবোনা”
হঠাৎ শিফার প্রশ্ন,
“উজান ভাইয়ার যক্ষ্মা হলো কবে ভাইয়া?”
“ওকেই জিজ্ঞেস করো”
শিফার প্রশ্নে কপাল কুচকায় উজান।অতঃপর চোখ রাঙাতেই শুনতে পায় ইয়ানার শীতল কন্ঠস্বর,
“পিপীলিকার পাখা গজে মরিবারই তরে”
ইয়ানার কন্ঠে হকচকায় উজান,
“আ….আমি কী করেছি?তোম…তোমরা এমন…..”
উজানের কথা সম্পূর্ণের পূর্বেই হঠাৎ ফোনকল আসে প্রণয়ের।সবেই খাওয়া শুরু করেছিলো সে।এক লোকমা মুখে পুড়তে গেলেই ফোন আসায় ফের তা পাতে রেখে চাঁদের হাত ছেড়ে বা’ হাত দিয়েই ট্রাউজারের পকেট হতে ফোন বের করে কানে লাগাতেই এমন কিছু বার্তা তার কানের কাছে বাজে যা সে কস্মিনকালেও চিন্তা করেনি।অতঃপর খাবার রেখে উঠতে উঠতেই বলে,
“আমি….আমি এক্ষুনি আসছি।তোমরা আগে বাড়ো,আসছি আমি”
বলেই হুরমুরিয়ে উঠে দাঁড়ায় প্রণয়।এতক্ষণের শীতল মুখশ্রী হঠাৎ ই প্রণয়ের গম্ভীর হওয়ায় অপ্রস্তুত হয় চাঁদ।প্রণয়ের পানে একধ্যানে চেয়ে থেকে উপলব্ধি করে ভালো কিছু যে হয়নি সুনিশ্চিত।প্রণয়ও যে তাকে বলবেনা সেও জানে।তবুও খাবার রেখে উঠে দাঁড়িয়ে চাঁদ প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাচ্ছেন প্রণয়?”
চাঁদপানে স্থির দৃষ্টিসহিত কিয়ৎক্ষণ চেয়ে থাকে প্রণয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস নিয়ে দৃষ্টি নত করে চোখ বোজাবস্থায় বলে,
“প্রশ্ন করবেন না,ফিরে আসবো আমি”
প্রণয়ের অদ্ভুত কথার ধরণে বুকের ভেতর সশব্দে যন্ত্রণার উৎপাত হয় চাঁদের।করুন দৃষ্টি নিজেও ফ্লোরপানে নিবদ্ধ রেখে শ্বাস টেনে সে বলে,
“তখনও বলেছিলেন,তবে ফেরেন নি তো!”
কথাখানা শেষ হতেই চোখজোড়া বুজে চাঁদ।আর প্রণয় তার দৃষ্টি উঁচিয়ে চাঁদের হাতজোড়া নিজ হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজ কোমড়েরই দুইপাশে তা রাখিয়ে চাঁদের কপোলদ্বয় আলতো হাতে ছুয়ে দেয়।অতঃপর দু’হাতেই চাঁদের গালজোড়া ছুয়ে গভীর দৃষ্টি চাঁদের আঁখিপানে নিবদ্ধ করে বলে,
“ফিরবো চন্দ্র,ফিরে আসবো আমি”
To be continued……