আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম ০৯.

0
777

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম

০৯.
বর্তমান মেয়র ‘আহিন মোহাম্মদ শেখ’ এর ফেসবুক পেইজের লাইভ মিনিট পাঁচেকের মাঝেই লক্ষ ভিউ অতিক্রম করেছে।শেয়ারও গিয়েছে হাজার হাজার।কিছু চরম সত্য যখন সামনে আসে তখন নিশ্চয়ই এমনটাই হয়!ভিউ বাড়ছে বৈ কমছেনা।আহিনের পেইজ থেকে মূলত লাইভে এসেছে লিমা।লিমাকে দেখেই সকলের উৎকন্ঠা বেড়েছে,আগ্রহী হয়ে উঠেছে।ক’দিন আগেই যার বাবাকে নি!র্মমভাবে খু*ন করা হলো এবং যাকে নিয়ে বুড়ো বাচ্চা সকলের এক তীব্র ঝোক কাজ করে।বিশেষ করে বর্তমান মেয়েরা যেই পলিটিশিয়ানের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে থাকে তার পেইজ থেকে তার স্ত্রীর বদলে অপর একটি মেয়ে তাও আবার কিনা একজন ডাক্তার লাইভে এসেছে!বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছেনা সকলে।তাদের সন্দেহের মাত্রা গাঢ় হতে হতে মিনিট পাঁচেক পার হয়।লিমার পাশে এসে বসে আহিন।আহিন আসতেই লাইভের নিচে কমেন্টের এক তীব্র রোল পড়ে।প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে চারের অধিক কমেন্ট হচ্ছে।কিছুতেই পড়া যাচ্ছেনা।খানিক ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে লিমার কিছু বলার পূর্বে খানিক কেশে আহিনই শুরু করে,

“আসসালামু আলাইকুম!অনেকেই হয়তো অবাক হচ্ছেন অথবা বলবো ভীষণভাবে অবাক হচ্ছেন।হওয়ারই কথা।কয়দিনই বা হলো আমার বাবা সাবেক মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখের মৃ!ত্যুর?অথবা বলবো খু*নের?আর তার মধ্যেই মেয়ে নিয়ে লাইভে এসে পড়লাম সেসবই হয়তো ভাবছেন।তবে যেই মানুষটাকে সর্বোচ্চ ঘৃ*ণা করি তার জন্য আমার কষ্ট আদোতে লাভ আছে?বরং আমি বরাবরই ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের কাজে সন্তুষ্ট।সে যা করেছে তাকে উত্তম বললেও ভুল হবে।তাকে খু*ন করা ছিলো সর্বোত্তম কাজ।আমি আমার বন্ধুর কাজে সেদিনও খুশি হয়েছি এবং আজও লিমা আপনাদের কিছু সত্যির সম্মুখীন করাবে বলেও খুশি।বাকিটুকু লিমাই বলবে।ওহ হ্যা পরিচয় করাই,ও হচ্ছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের গাইনী বিভাগের ডাক্তার।পড়াশুনা করেছে ঢাকা মেডিকেল থেকেই,ব্যাচ দু’হাজার তেরো”

অতঃপর লিমার দিকে চেয়ে বলে,

“শুরু করো”

লিমা খানিক কেশে গলা পরিষ্কার করে লম্বা শ্বাস টেনে শুরু করে,

“আসসালামু আলাইকুম!এটাই ভাবছেন যে আমিই বা অধিরাজ শেখ সম্পর্কে কী বলবো?আর আহিন ভাইয়াই বা কেনো তার বাবার মৃ*ত্যুতে খুশি তাই নয় কি?”

অতঃপর অনেকগুলো কমেন্ট চেক করতে করতেই লিমা বলে,

“তো শুরু থেকেই শুরু করছি!খু*নী ডাক্তার বলে বলে আজ যেই ছেলেটার ফা!সি আপনারা দাবি করছেন সে খু*নী কেনো হয়েছে?কেনো সে অতটা নি!র্মমভাবে ছয় ছয়জনকে খু*ন করেছে ভেবেছেন একবারও?যেই ছেলেটা নিজেই একজন ডাক্তার,যার ধর্ম কর্ম সবটাই কারো জান বাঁচানো।সে কেনো কাউকে খু*ন করবে?জানেন না তো?আমি বলছি আপনাদের!যাকে নিয়ে ছাত্রসমাজ ক্ষু*ব্ধ,সকল মানুষ ক্ষু*ব্ধ।যাকে ঠক,প্রতারক ডাক্তার বলে বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলছেন তার খু*নী হতে চাওয়ার পথটা এতটা সহজ ছিলোনা!শুরুটা হয়েছিলো দু’হাজার নয় সালে।তখন আমি এমবিবিএস প্রথম বর্ষে সবে ভর্তি হলাম!চোখজুড়ে স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবো।তবে এই ডাক্তার হওয়া যে জীবনের সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়াবে কস্মিনকালেও ভাবিনি।খুব মনোযোগ সহকারে শুনবেন সকলে।ঠিক যেমন কেউ কোনো রূপকথার গল্প শোনে তেমনভাবে!আমার গল্পটা রূপকথার ভয়ঙ্কর গল্পের মধ্যে অন্যতম।শুনবেন মনোযোগ দিয়ে।তাহলেই জানতে পারবেন কেনো প্রণয় ভাইয়া একজন রক্ষক থেকে ভক্ষক হলো।কেনোই বা আহিন ভাইয়া নিজেরই বাবার খু*নে অত্যাধিক সন্তুষ্ট,প্রণয় ভাইয়ার খু*নগুলোকে তিনি কেনোই বা সমর্থন করেন।তো দিনটা ছিলো আমার নবীনবরণের দিন।কতশত স্বপ্ন নিয়ে আমি আমার স্বপ্নজয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে ঢামেক,আমার স্বপ্নের ঢামেকে পা রাখি।হাজার হাজার স্টুডেন্টের স্বপ্ন এটা তাইনা?তবে আমার জীবনের সর্বোচ্চ ভুলই ছিলো এই স্বপ্নটা দেখা।স্বপ্ন পূরণ করতে এসে যদি নিজের বেঁচে থাকার অবলম্বনটাই হারান বেঁচে থাকতে চাইবেন কি?একজন নারীর সম্ভ্রম তার জন্য তার জীবন থেকেও কি মূল্যবান নয়?অথচ সেই স্বপ্ন পূরণ করতে এসে!করতে এসে……”

খানিক আটকে লম্বা শ্বাস নিয়ে লিমা বলে,

“নিজের সম্ভ্রম হারিয়েছি আমি।লেগে গিয়েছিলো ধ!র্ষিতা ট্যাগ।আর আপনারা জেনে অবাক হবেন কিনা জানিনা তবে যাদের খু*ন প্রণয় ভাইয়া স্বহস্তে করেছে তাদের খু*নগুলো যদি নিজ হাতে আমি করতে পারতাম!আত্মাটা আমার শান্তি পেতো!দারুনরকম শান্তি!কেনো বলছি তাইতো?আন্দাজ কি কিছুটা করতে পারলেন?হয়তো পেরেছেন তবুও বলছি।যেই দা*নবগুলোকে প্রণয় ভাইয়া হ*ত্যা করেছে তারা সকলেই ছিলো একজনের থেকে আরেকজন বড় মাপের ধ!র্ষক!আর আমি হলাম তাদের গণধ*র্ষণের শিকার।শুধু আমি কেনো?এরকম অহরহ মেয়েই শিকার হয়েছে।এমনকি কতজন তাদের প্রাণ হারিয়েছে।কী?খুব অবাক লাগছে?ভাবছেন প্রণয় ভাইয়ার পক্ষে কথা বলছি?মোটেও নয়”

অতঃপর কমেন্ট চেক করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“অভিমত দেয়ার পূর্বে পুরোটা শুনুন।তারপর কথা বলুন।প্রমাণও অবশ্যই দেবো।সবটাই আছে।সপ্তাহখানেক পূর্বে আজিমপুরের পাশে বড়সড় বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছিলো খবর পেয়েছিলেন কি?আ*গুনটা লাগিয়েছিলো প্রণয় ভাইয়া ই!আর সেই বিল্ডিংটা ছিলো ধ*র্ষণজগৎ এর রাজ্যপুরী!যার রাজা ছিলেন সাবেক মেয়র অধিরাজ মোহাম্মদ শেখ।কতশত মেয়েকে যে এ অব্দি ধ!র্ষণ করলেন।কতজনকে যে মা*রলেন!আম্বিয়া নামক এক মেয়ে ছিলো।মেয়েটা শুধু সেই ত্রাসের রাজ্য ছেড়ে পালাতে চেয়েছিলো তাকে যে কি নিকৃষ্টভাবে হ*ত্যা করা হয়েছিলো দেখলেও গা শিরশিরাতো।ঐ মেয়েটার মৃ*ত্যু ছিলো এই ছয়জনের মৃ*ত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর,রুহ কাপানো।তার সেই রাজ্যের নাম ছিলো ‘রাজ ভিলা’।যেদিন বিল্ডিং ধ্বংস করা হয় সে রাত অব্দিও সেখানে চলছিলো ত্রাসের রাজত্ব।সেখানে কী হতো জানেন?আমি বলছি,তা ছিলো এক পতি*তালয়।শুধু যে পতি*তালয় তাও নয়।অধিরাজ শেখ অনেক মেয়েদের বিদেশেও পাঠিয়েছেন।কেনো পাঠিয়েছেন তা আমি জানিনা।তার আসল উদ্দেশ্য কী ছিলো সেটাও জানা নেই।যদি যুক্তির কথা বলি তবে তার বেশ নামধাম টাকা পয়সাই ছিলো।এসব করার এক্সেক্ট কারণ আজও আমি জানিনা।তবে একজন জেনেছিলো!সে কে জানেন?রুহায়ের প্রণয়ের স্ত্রী চাঁদ।মনে আছে তার কথা?সেই যে দু’হাজার আটে প্রথম হওয়া মেয়েটা।ভর্তি পরীক্ষায় আটানব্বই পেয়েছিলো যে।সর্বোচ্চ রেকর্ড।মুহাইমা বিনতে চাঁদ।মনে পড়েছে কি?সেই মেয়েটাই প্রণয় ভাইয়ার বউ।এখন এতকিছুর মাঝে সে কী করে এলো সেটাও বলছি,শুনুন।দু’হাজার দশের দিকে আমি সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম,চাঁদ আপু থার্ড ইয়ারে।আপু সন্দেহ করেই হোক বা যে কারণেই হোক মেডিকেল থেকে একে একে মেয়ে উধাও হচ্ছে বিষয়টা বুঝতে পেরে সবটাই খতিয়ে দেখতে দেখতে একসময় ত্রাসের রাজত্বে তাদের ত্রাসত্ব নষ্ট করতে নিজ জীবন,সম্ভ্রমের ভয় থাকা সত্ত্বেও কেবল আর কোনো মেয়ের জীবন যেনো নষ্ট না হয় সেই উদ্দেশ্যেই এসেছিলো।তবে সে ব্যর্থ হয়েছিলো।সে আর প্রণয় ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড অরণ।আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি প্রণয় ভাইয়া ছিলো দু’হাজার ছয় সালে প্রথম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী আর অরণ ভাইয়া ছিলো দ্বিতীয়।তো অরণ ভাইয়া,চাঁদ আপু আর আমিই মূলত সবটা জানতাম।আপু শেষ অব্দি অধিরাজ শেখের বিরুদ্ধে বেশ শক্তপোক্ত প্রমান জোগাড় করেছিলো।এবং সেটা কী ছিলো,কী নিয়ে ছিলো আর অধিরাজ শেখের মূল পরিকল্পনাও কেবল চাঁদ আপুই জানতো।হয়তোবা অরণ ভাইয়াও।সে খবর আমার জানা নেই।আপুর কাছে প্রমাণও ছিলো।সে সেগুলো নিয়ে পালিয়েই এসেছিলো তবে শেষ রক্ষা আর হয়না।তারা আপুকে ধা!ওয়া করে।অরণ ভাইয়াও ছিলো।দুজন’ই বেশ জখ*মগ্রস্ত হয়।আপু সেদিন বেঁচে ফিরলেও অরণ ভাইয়া ফিরতে পারেনি।ভাইয়া সাত বছর কোমায় ছিলো।বেশ কয়েকদিন হয়েছে সে কোমা থেকে বেরিয়েছে।সেদিন তারা পালাতে পেরেছিলো কেবল একজনের বদৌলতে।সে ছিলো ‘আহান মোহাম্মদ শেখ’ হ্যা ঠিকই শুনেছেন আমি আহানই বলেছি।এই আহান হচ্ছে আহিন ভাইয়ার বড় ভাই।অধিরাজ শেখের প্রথম স্ত্রীর ঘরের সন্তান।হ্যা অধিরাজ শেখ দুই বিয়ে করেছিলেন।প্রথম স্ত্রী ক্যানাডা বাসী।আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ছিলো এক মেয়ে।মেয়েটার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা নেই আমার।তবে আহানের জন্যই চাঁদ আপু আর অরণ ভাইয়া বাঁচতে পেরেছিলো।অরণ ভাইয়া যদিও বেঁচেও ম*রার ন্যায়ই ছিলো।সেই অরণ ভাইয়াকে ডক্টর চাঁদ আর ডক্টর ফায়ান সার্জারী করিয়ে শেষ অব্দি রক্ষা করতে সক্ষম হয়।এখন সে নিজ পায়ে দাড়িয়ে চলতে পারছে।ছোটাছুটি করছে বন্ধু আর বন্ধুর বউয়ের জন্য।তবে সেও ব্যর্থ!ব্যর্থ এক সখা।নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের জন্য কিছুই কর‍তে পারছেনা!কীভাবেই বা করবে?কীভাবে করবে বলবেন?আপনারাইতো দিচ্ছেন না!আপনারা এমন কয়জন মানুষের খু*নের জন্য প্রণয় ভাইয়ার ফা*সির জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন যারা নাকি মানুষের কাতারেও পড়েনা!পড়তে পারেনা।আমি নিজেইতো ভিক্টিম!সেইসাথে আছে আরও অনেকেই।কোথায় তারা?”

আহিনের দিকে চেয়ে কথাটা বলতেই আহিন ক্যামেরার দিকে এসে বলে,

“আপনারা হয়তো ভাবছেন লিমা মেয়েটা বানিয়ে বলছে?কিন্তু সত্যি সর্বদা সত্যিই হয়।সত্যের উপর আর কিছু কি আছে?নেইতো।তবুও প্রমাণ আমাদের কাছে আছে।প্রমাণ বলুন,স্টেটমেন্ট বলুন যাই বলুন সবই আছে।এই যে দেখুন।এই মেয়েগুলো?সবার গায়েই কিন্তু এপ্রোণ।তারা সকলেই ঢাকা মেডিকেল থেকে পাশ করে বের হওয়া ডাক্তার।আর যদি আরও প্রমাণের দরকারই হয় তাদের সার্টিফিকেটসমূহও দেখানো যাবে।আর ইনি?আমার পাশের ফর্সা এই ছেলেটাই আমার ভাই আহান।তাকেও আমার বাবা এসাইলামে রেখেছিলেন।কেনো রেখেছিলেন?কারণ তিনি চাইতেন না তার সমস্ত কালো খবরাখবর সামনে আসুক।আহান ভাই তার কালো মুখোশ সামনে নিয়ে আসুক।ভাইকে মা*রতেও সে পিছুপা হয়নি।চাঁদ আর অরণকে পালাবার সুযোগ করে দেয়ার অপরাধে তাকেও গু*লি করেছিলেন আমার কলঙ্কিত সেই বাবা!তাকে বাবা বলতেও লজ্জাবোধ হয় আমার!নিজের সন্তানকেই যে ভালোবাসেনা মা*রতে চায় অন্যের সাথে কী কী করতে পারে আইডিয়া আছে কারো?”

খানিক থেমে ফের বলে,

“লাইভে যে সমস্ত কথাই বলেছি,বলছি সমস্ত কিছুর প্রমাণও দেয়া হবে।আমার পেইজ থেকেই দেয়া হবে”

অতঃপর আহানের দিকে চেয়ে বলে,

“ভাই তুমি কি কিছু বলবে?”

গম্ভীরস্বরে আহান বলে,

“না”

আহিন আর আহান দু’জনই সামনে থেকে সরতেই একজন মহিলা ডাক্তার তার পরিচয় দিয়ে বলতে আরম্ভ করে,

“বহুবছর আগে এক আশা দেখেছিলাম।যখন জানতে পেরেছিলাম চাঁদ আপু ঐ প*শুগুলোর বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করে পালিয়েছে।আর তারাও হন্য হয়ে তাকে খুঁজছে জানার পর কেবল একটাই প্রার্থনা করেছিলাম আপুর যেনো কিছু না হয়।সেদিন সত্যিই আপু বেঁচেছিলো তবে অধিরাজ শেখের সেই মহল তবুও খাড়া ছিলো।কেউ কিচ্ছুটি করতে পারেনি।দিন গিয়েছে,মাস গিয়েছে,বছরের পর বছর গড়িয়েছে।আর কেউ সাহস করেনি তার বিরুদ্ধে যাওয়ার।হঠাৎ সপ্তাহখানেক আগে দু’জন ছেলে সেখানে আসে।এসে চলেও যায়।তাদের যাওয়ার বেশকিছুক্ষণ পর সেখানে মেয়র আহিন আসেন।তার সাথে আসে ডক্টর প্রণয়।এবং সঙ্গে ছিলো পুলিশ কর্মকর্তা সহ আরও কয়েকজন অফিসার।তারা সবাইকে ঘন্টার মধ্যে বেরিয়ে যেতে বলে পুরো বাড়ি খালি করতে বলে।আর প্রণয় ভাইয়া কেবল কয়েকটা কথাই বলেছিলো ‘আমি অধিরাজ শেখের এই রাজ্যপুরী জ্বা*লিয়ে ভস্ম করে দেবো।আপনারা সকলেই মুক্তি পাবেন।আর কোনো বাধা বিপত্তি থাকবেনা।নতুন আর কোনো পতিতা তৈরি হবেনা’ সে এও বলেছিলো প*শুগুলোর নিকৃষ্টতম শাস্তিও হবে।কি যে শান্তি মিলেছিলো সেদিন!বলে বুঝাতে পারবোনা।মনে মনে প্রণয় ভাইয়াকে সত্যের পথে থাকা কোনো দূতই মনে হয়েছিলো।সেই দাসত্বের জীবন থেকে আগের জীবনে ফিরে গিয়ে আমি ছিলাম মহাখুশি!তবে সবচাইতে কষ্টকর যা ছিলো তা ছিলো নিজের সর্বস্ব খুইয়েছিলাম।কী লাভ এই জীবন পেয়ে?কোনো লাভ নেই।তারা যা ক্ষ*তি করার করেই দিয়েছিলো।তবুও সেই জীবন থেকে ফিরতে পেরেছি এই ঢের!আর কোনো মেয়ে সেই পথে আসবেনা এইতো বেশি!এটাইতো শান্তির।নতুন কোনো ধ!র্ষিতার সৃষ্টি হবেনা এটাই অনেক!প্রণয় ভাইয়া সত্যিই সেদিন না আসলে আজন্ম এই জীবনে ধুকে ধুকে ম*রতে হতো”

বলতে বলতেই চোখজোড়া অশ্রুসিক্ত হয় মেয়েটার।পাশে এসে আরেকজন দাঁড়ায়।তার কাধে হাত রাখে।তবুও মেয়েটা নিজেকে সামলে মৃদু হেসে বলে,

“আপনারাই বলুন?এমন মানুষ কি সত্যিই এতটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডিজার্ভ করে?যেই মানুষটা কালো অতীত থেকে আমাদের বের করলো।অন্য কাউকে সেই পথে আসা থেকে বিরত করলো।যেই মানুষটা সেসব প*শুদের উচিত জবাব দিলো।সে কি সত্যিই এমন পরিণতির ভাগীদার?”

অতঃপর তার পাশে এসে দাঁড়ানো মেয়েটা নিজের পরিচয় দিতে দিতে বললো,

“নিজের পরিচয় দিচ্ছি বলে অবাক হবেন না।অনেকেইতো বলে বেড়াচ্ছেন টাকা খেয়ে এমন করছি”

অতঃপর কমেন্ট চেক করতে করতে খানিক হেসে মেয়েটা বলে,

“টাকা খেয়ে নিজেদের সম্পর্কে এসব রটাবো?তাও আবার সামান্য এক ছেলের জন্য?তাও আবার খু*নী কারো?ইহিম!আপনারাই ভাবুন!আমরা নিজেরাইতো ডাক্তার।টাকার কমতি কীসে?”

তার পাশেই আরেক মেয়ে এসে দাঁড়ায়।লম্বা শ্বাস নিয়ে মেয়েটার কাধে হাত রাখতেই চোখাচোখি হয় তাদের।অতঃপর চোখ সরিয়ে মোবাইল পানে দৃষ্টি রেখে মেয়েটা বলে,

“আমাদের নিজেদের পরিচয় দিয়ে সবার সম্মুখে সত্যিটা এনে যদি নিষ্পাপ কাউকে পাপমুক্ত করা যায় তবে আমরা তাই করবো!আমাদের জীবনে আর আছেই বা কী?হয়তো পরিবার আমাদেরও আছে তবে এই জীবনে বেঁচে থাকাটাই কেমন এক বোঝা!কিন্তু সেই মানুষটার তো একটা সংসার আছে,পরিবার আছে।বউ আছে,এমনকি তার সন্তান আসতে চলছে।বাচ্চাটা কী দোষ করেছে?সে কি বাবার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়?এখন আপনারা বলতেই পারেন খু*ন কেনো করলো তাহলে?বউ,বাচ্চার এত চিন্তা থাকলে কেনো এসব করলো?তবে আমি এটাই বলবো যে সে সর্বোত্তম কাজটাই করেছে!এসব ধ!র্ষকদের শাস্তি মৃ*ত্যু ব্যতীত অন্য কিছু হতে পারেনা।আর আইন কেনো হাতে তুললো তাইতো?তাহলে কোথায় ছিলো সেই আইন যখন একের পর এক মেয়ের জীবন ধ্বং!স করা হচ্ছিলো?টাকার কাছে,ক্ষমতার কাছে সবকিছুই পরাজিত!অধিরাজ শেখকে যদিও জেলে নেওয়াই হতো সে কি সেখান থেকে বের হতে পারতোনা?অবশ্যই পারতো!তবে প্রণয় ভাইয়ার দোষটাই বা কোথায়?সে যা করেছে সর্বোত্তম করেছে!আপনারাই অহরহ ধ!র্ষণ কেস দেখলে দেখতে পাবেন কয়েকদিন কয়েকমাস জেল খেটে বের হয়ে যাচ্ছে।কেউ কেউ তো ক্ষমতার জেড়ে যাচ্ছে আর বের হচ্ছে।কোনো শাস্তিই হচ্ছেনা।আচ্ছা একজন মেয়ের সম্ভ্রম কে!ড়ে নিয়ে বেঁচে থাকা কি এতই সোজা?একজন মেয়ের সম্ভ্রমে হাত দিয়ে অনায়াসে পার পেয়ে যাবে?ধ!র্ষণ করে একটা মেয়ের বেঁচে থাকার সম্বল ছিনিয়ে মৃ!ত্যু মুখে ঠেলে দিয়ে কেনো তারা বেঁচে থাকবে?আর অধিরাজ শেখেরা দিনের পর দিন বছরের পর বছর আমাদের মতো কতশত মেয়ের ধ!র্ষণ করেছে।এমনকি মে*রে পর্যন্ত ফেলেছে।আজ যখন তাদের মে*রে ফেলা হয়েছে এখন কেনো আপনাদের আইন তার আইনত্ব দেখাচ্ছে হা?তখন কোথায় ছিলো আইন?”

পাশের দুজনকে সরিয়ে অপর এক মেয়ে এসে মলিন মুখে বলে,

“আমি কিন্তু কোনো ডাক্তার না।সামান্য একটা মেয়ে।বাবা মায়ের মনোমালিন্যে বাবা নতুন বিয়ে করে আমার মাকে ছেড়ে দেয়।মা,মেয়ে পথে বের হতে চাইনি তবুও বের হতে হয়েছিলো।একবার এক লোক রাতের বেলা আমার মাকে কি যে নি*র্যাত*ন করলো!ছোট ছিলাম বুঝতাম না।ভয় পেয়েছিলাম।মা পালাতে বলেছিলো।পালিয়েছিলাম।পরে এসে মাকে আর পাইনি।আমার মা ম*রে গেছিলো।আমি হয়েছিলাম পথশিশু।ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়ে আর পড়া হয়নি,ফাইভের পরীক্ষাটাও দিতে পারিনি।বড়সড় উচ্চশিক্ষিত লোকদের সাথেই ‘রাজ ভিলা’ য় থাকতাম।সেখানে থেকেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে জানি,শিখেছি।শিক্ষিত মানুষের বিবেকবোধ বা মনুষ্যত্ববোধ খুবই কম।নাহলে উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা ধ!র্ষণ কী করে করে?কথায় আছে বেশি শিক্ষা ভালো নয়।আমি যখন মায়ের কাছে ফিরি মা আর ছিলোনা!সত্যিই পথশিশু,এতিম হয়ে গেছিলাম।রাস্তায় থাকা লাগতো!নিয়তি বোধহয় এমনই।আর সুখী হওয়া হয়নি।ঐ কু*ত্তার বাচ্চারা ধরে আনে তাদের পতিতালয়ে।সেখানেই বড় হয়েছি।বড় হওয়ার পর বুঝেছিলাম মাকে ঐ লোকটা ধ!র্ষণ করেছিলো।ঘুরেফিরে সেই ধ!র্ষণই আমার জীবন জড়িত।আমি নিজেও তো তার শিকার!যুবতী হওয়ার পর ডিমান্ড আমার বহুগুণে বেড়েছিলো।নিজেকে পণ্য ব্যতীত অন্যকিছুই মনে করিনি।এরকম জীবন আল্লাহ আমার শত্রুকেও না দিক!আর আপনারা?এখন কেনো এত দরদ দেখাচ্ছেন সেই মানুষদের জন্য যারা মানুষ নামের কলঙ্ক,প*শুর চেয়েও অধম!তারা যে ম*রেছে তাতে আমি বেশ পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি।প্রণয় ভাই যা করেছে তাকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি।হাজারের উপর মেয়েদের পতিতা বানিয়ে শতশত মেয়েদের খু*ন করে তারা কি পার পেয়ে যেতো?তাদের কি ফা*সি হতো না?তারাও তো ফা*সিই ডিজার্ভ করে তাইনা?ফা*সি বলতে সহজ কথায় মৃ!ত্যু।তো সেটা আইনের বদলে প্রণয় ভাইয়াই দিয়েছে সমস্যা কোথায়?তাছাড়া ছয়জনের খু*ন বড় নাকি শতশত খু*ন?একজন নারীকে ধ!র্ষণ করে মে*রে ফেলা কি এতটাই ফেলনা?যে তাদের শাস্তিই হবেনা!কেনো হবেনা?আজ যদি প্রণয় ভাইয়ার মতো সাহস আমাদের বা আমারও থাকতো ওদের অনেক আগেই জমের কাছে পাঠিয়ে দিতাম।আমরা নারীশক্তি এক হলে কোনো জায়গার আইন!কোনো পুরুষই আমাদের ঠেকাতে পারতোনা,পারবেনা।তখন আওয়াজ সোচ্চার না করলেও আজ করবো!প্রণয় ভাইয়ার ফা*সি আমরা মানিনা!মানবোনা!তার যদি ফা*সি হয় লণ্ডভণ্ড করে দেবো সমস্ত আইন!বাঁচার ইচ্ছাতো এমনিতেও নেই।একজন ভালো মানুষকে বাঁচিয়ে যদি ম*রতেই হয় সেই মরণও কবুল!”

কথা বলতে বলতেই শ্বাস দ্রুত হয় মেয়েটার।কাশতে আরম্ভ করে সে।তাই তাকে সরিয়ে পানি খেতে দিয়ে লিমা সামনে এসে বলে,

“আন্দোলন করবো আমরা!সেসব আইন মানিনা যেই আইনে নারীর কোনো সম্মান নেই!যেই দেশে অর্ধেকের বেশি নারী,নারীই দেশের মূল।সেই দেশে কেনো নারীদের কোনো সম্মান নেই?সম্মানহানির বিচার নেই?ধ!র্ষণের শাস্তি কেবল মৃ*ত্যু!আর মৃ*ত্যুই হতে পারে এবং হবেই!যেই পর্যন্ত দেশে এই আইন জারী না হয় আমরা এই বিক্ষোভ ছাড়বোনা।আমি আমার সকল বোনেদের আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেনো সোচ্চার হয়!আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।শুধু নারী কেনো?যেই ভাইয়েরা আমাদের সমর্থন করেন তাদেরও আহ্বান জানাই।আসুন!পাশে দাড়ান,রক্ষা করুন আপনার বোনেদের।ধ!র্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো একমাত্র ব্যক্তি প্রণয়!ডক্টর রুহায়ের প্রণয়!সে এমন এক প্রতিবাদের সূচনা করলো যা এর আগে কেউ কখনো করেনি!প্রতিটা ধ!র্ষকের ‘রুহায়ের প্রণয়’ নামটা স্মরণে রাখা উচিত।কোনো নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি দেয়ার পূর্বে তার মস্তিষ্কে ডক্টর প্রণয় নামটা ভেসে উঠা উচিত!অতঃপর অধিরাজ শেখসহ বাকিদের সেই নি!র্মম মৃ*ত্যুর কথা স্মরণ করে রুহ কেপে উঠা উচিত তাদের!উই ওয়ান্ট জাস্টিস!জাস্টিস ফর প্রণয়।ডক্টর রুহায়ের প্রণয়!জাস্টিস ফর এভ্রি গার্লস হু আর ফেসড ভা*য়োলেন্স,হু হ্যাড টু সাফার দ্যা পেইন অফ রেপ!প্রণয় ভাইয়ার ফা*সি মানি না!মানবো না!তাকে ফা*সি দিলে এমন আইন আমরা মানিনা!কখনোই মানবোনা!এমন সরকারও আমরা মানবোনা!আমরা নারী,আমরা সব পারি!মনে রাখতে হবে, ‘বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
সন্ধ্যা সাতটা,
উদ্ভ্রান্তের ন্যায় ফরমাল ড্রেসাপেই চাঁদকে যেই রুমে রাখা হয়েছে সেখানে হাজির হয় অরিন।পাগলপ্রায় হয়ে গলা উঁচিয়ে বারংবার বলতে লাগে,

“প্রণয়!……..প্রণয়…প্রণয়!”

চোখ ফেটে কান্নারা উপচে পড়ছে অরিনের।বোনের এরূপ বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে আঁতকে উঠে অরণ।সামনে এসে বোনকে ধরে বলে,

“কী হয়েছে?কী হয়েছে প্রণয়ের?”

চাঁদও দ্রুত বিছানা ছাড়ে।এসেই অরিনের দুই বাহু চেপে অস্থির হয়ে বলে,

“কী হয়েছে?প্রণয়ের সাথে ওরা কী করেছে অরিন?আমার প্রণয়কে কি ওরা মে*রে ফেলেছে?”

ধপ করে হাটুগেরে বসে ফ্লোরে হাত-পা ছুড়ে হাউমাউ করে কেদে দেয় অরিন।অরিনকে কখনো কেউ এতটা ভাঙতে দেখেনি।সর্বদাই গম্ভীর আর শক্ত স্বভাবের দেখেছে।তাকে এরূপ অবস্থায় কেউই মেনে নিতে পারছেনা।সকলের মনে ভয়ের দানা বেঁধেছে।অনাকাঙ্ক্ষিত,অপ্রত্যাশিত কিছু শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত নয়।বুকের ধুকপুকানি বাড়ছে সকলের!গলার কাছে শ্বাস আটকে আসছে।চাঁদ হম্বিতম্বি হয়ে অরিনের মতোই হাটুগেরে বসে তাকে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে,

“এই অরিন?এই?বলো?বলো!কী হয়েছে?কী হয়েছে আমার প্রণয়ের?এই অরিন!”

“অরিন!”

বেশ জোরেসোরেই চেচিয়ে অরিনের দুই গালে থা!পড়াতে থাপ!ড়াতে চোয়াল চে!পে ঝাঁকিয়ে চাঁদ বলে,

“এই?এই!আমার প্রণয়কে কি ওরা সত্যি সত্যি মে*রে ফেলেছে?মে*রে ফেলেছে হ্যা?”

To be continued……

[বিঃদ্রঃগল্পটা সেই শুরু থেকেই কাল্পনিক।এর কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই।গল্পের প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন প্রসঙ্গ,বিভিন্ন স্থান,ভবন,পলিটিক্যাল জিনিসপত্র এসেছে।তাই গল্পটাকে কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার আর বাস্তবিকতার সাথে তুলনা করে গুলিয়ে না ফেলার বিশেষভাবে অনুরোধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here