আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) [১৮+ এলার্ট] #নুসরাত_জাহান_মিম ২৪.

0
1170

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) [১৮+ এলার্ট]
#নুসরাত_জাহান_মিম

২৪.
দিগবিদিকশূন্য হয়ে কা*টা পা সহিতই দৌড়ে চলেছে পূর্ণতা।রাত তখন ঠিক এগারোটা বেজে সাতচল্লিশ মিনিট।জনমানবহীন নিস্তব্ধ পাকা সড়ক দিয়েই ভুতুড়ে পরিবেশ সমৃদ্ধ এক নীরব এলাকায় এসে থামে সে।হাটুতে হাত রাখতে গেলেও কা*টা ডান হাত তার ব্যথায় টনটনিয়ে উঠে।লম্বা শ্বাস টানতে টানতেই দাঁতে দাঁত চেপে আকাশপানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে সে,

“আল্লাহ গো!”

“ও আল্লাহ!সহায় হও”

হঠাৎ ই সে পিছু হতে শুনতে পায় জন দু’য়েক লোকের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“আল্লাহ আপনার প্রতি সহায় হবেন ভাবলেনও কী করে?”

“শুধু শুধুই নিজের ম*রণ ঘনিয়ে আনলেন না মিস পূর্ণতা?”

তৎক্ষনাৎ পিছু ঘুরে চায় পূর্ণতা।অতঃপর তারই সম্মুখে দুইপাশে দাঁড়ানো ফায়ান আর চৈত্রকে দেখে চোখদু’টো সামান্য বড় হয়।ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে সে প্রশ্ন করে,

“ফা….ফায়ান তুমি?তুমিও?”

“বেশ চমকে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে?”

ফায়ানের পাল্টা প্রশ্নে পূর্ণতা জবাব দেয়,

“তা….তুমি সব জানতে?”

পূর্ণতার পানে ধীরপায়ে এগুতে এগুতে ফায়ান বলে,

“আহা আপু!সব আর জানতাম কোথায়?তবে আপনার যেই ক্রি*মিনাল মাইন্ড এটা যদি আমার থাকতো নিশ্চিত দেশের এবং নিজের জন্য ভালো কিছু করা যেতো।কিন্তু আফসোস!আপনি কেবল অন্যের ক্ষ*তি করেই তৃপ্তি পেলেন।নাকি শুধু চাঁদের?”

নিজেও পিছু যেতে যেতে পূর্ণতা বলে,

“দা….দেখো যা চলে গেছে,গেছেই।তা….তোমরা শুধু….শুধুই আমার পেছনে পড়েছো”

তৎক্ষণাৎ প্রতিত্তোর চৈত্রের,

“শুধু শুধু তো কুকুরও আপনাকে কা!মড়াবেনা মিস অহনা।আমরাতো মানুষই”

চৈত্রের কথা শেষ হতেই ফায়ান বলে উঠে,

“আমার ভাবতেও অবাক লাগে আপনি আপনার বেস্টফ্রেন্ডকে পর্যন্ত ছাড়েননি।এতটা স্নিগ্ধ রূপের আড়ালে পৈশাচিক রূপ রয়েছে জানাই ছিলোনা”

পিছু ঘুরতে ঘুরতে পূর্ণতা বলে,

“আম….আমি এখানে এসেছি তোমরা কী করে জানো?”

জবাব আসে চৈত্র হতে,

“আমার বোনজামাই যে আপনার পায়ে বেশ সুন্দর কিছু উপহার দিয়েছে তার বদৌলতেই”

“আমি…..আমি কিন্তু চেচাবো!”

বলতে বলতেই ছুট লাগায় পিছু।তবে বেশিক্ষণ আর যেতে পারেনা।বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগতেই পড়ে যায় পূর্ণতা।অতঃপর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই নজরে আসে শীতল চাহনী তার পানেই নিক্ষেপ করা প্রণয়কে।ভয়ার্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে থেকেই পিছু যেতে যেতে পূর্ণতা বলে,

“দা….দেখ প্রণয়।আমা….আমায় তুই মাফ করে দে দোস্ত!আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি।আমায় তুই….আমায় তুই পুলিশের কাছে দিয়ে দে”

পূর্ণতার কথাসমূহ শান্ত ভঙ্গিতে শুনতে শুনতেই তার পানে এগিয়ে আসে প্রণয়।অতঃপর লম্বা হাতার হুডি কনুই অব্দি টেনে পূর্ণতার বাহু চেপে তাকে দাড় করায় এবং গম্ভীরস্বরে প্রশ্ন করে,

“তোর মনে আছে?দেখতো এই জায়গাটা।ঠিক এখানে দাড়িয়েই আমার চাঁদ আর অরণকে তুই ধরে রেখেছিলিস।মনে করে দেখতো মনে আদোতে তোর পড়ে কিনা!”

অতঃপর আশপাশে চোখ বুলাতেই পূর্ণতার স্মরণে আসে সত্যি সত্যিই এটা শহীদুল্লাহ হলের সেই পাশই যেই পাশে বছর সাতেক পূর্বে তারা তাদের জঘন্যতম কার্য ধারণ করেছিলো।প্রণয়ের পানে চেয়ে কিছু বলার পূর্বেই ব্যান্ডেজ করা কা*টা গালে বেশ শক্তপোক্তই থা*প্পড় পড়ে তার।প্রণয়ের পানে চাইতেই পরপর তার দুই গালে থা*প্পড়ের বর্ষণ হয়।এবং কর্ণগোচর হয় প্রণয়ের ঠান্ডাস্বর,

“আমার চাঁদের গালে ঠিক কতগুলো থা*প্পড় তুই দিয়েছিলি মনে আছে?আমি গুনে গুনে ঠিক ততগুলোই তোকে দেবো।গুনতে আরম্ভ কর।আই হ্যাভ নো এক্সট্রা টাইম ফর ইউ।হারি!বাড়ি ফিরতে হবে আমার।বউ অপেক্ষা করছে”

বাম হাত হুডির পকেটে গুজে ডানহাত দ্বারা একের পর এক উল্টো,সোজা দুইপিঠেই পূর্ণতার দু’গালে চ*ড় দিতে দিতেই উক্ত বাক্যসমূহ আওড়ায় প্রণয়।পূর্ণতার শরীরে বিন্দুমাত্র শক্তি নেই পালাবার।অথবা উপায়ও তার নেই।ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে চ*ড় পড়লেও র*ক্তে মাখোমাখো হয় তার কপোলদ্বয়।র*ক্তাক্ত হয় প্রণয়ের ডানহাতের দুইপিঠও।উল্টোপিঠ,সোজাপিঠ কোনোভাবেই থাপড়িয়ে ক্লান্ত হচ্ছেনা প্রণয়।বরং বিরক্ত হয়েই গাল হতে টেনে ব্যান্ডেজ তুলতেই মৃদু আ!র্তনাদ করে পূর্ণতা।এতক্ষণ কথা বলার সুযোগ না থাকলেও এবারে সে বলে,

“মা…মারবিই যেহেতু ড্রেসিং কেনো করেছিলিস?”

ফের পূর্ণতার ডান গালে হাতের উল্টোপিঠের চ*ড় শেষে থামে প্রণয়।অতঃপর বাম গালে সোজাপিঠে থা*পড়িয়ে আগের ন্যায়ই থা*প্পড়ের বর্ষণ ঝড়াতে ঝড়াতে বলে,

“মায়া জন্মেছিলো খানিক।যতই হোক বোন তথা বান্ধবী লাগিস।রিহু অথবা মিরুর তুলনায় কোনো অংশে কম তোকে দেখিনি।অথচ তুই কী করলি?আমাদের পিঠেই ছু*ড়ি চালিয়েছিস।প্রণয় কখনো ভাঙেনি।তবে তুই তাকে বহুবার ভেঙেছিস।বুকের ভেতর থাকা হৃদপিণ্ড আমার চি*ড়ে গিয়েছিলো বিশ্বাস কর!প্রথমবারের ন্যায় হৃদয়ে যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়েছিলো তখন,যখন আমার ভালোবাসার দুইজনের উপর দেওয়া তোর সেসব আরোপসমূহ আমি নিজ আঁখি সহিত দেখি!পরেরবার অরণের মৃ*ত্যুশয্যা এবং চাঁদের ধো*কা একইসঙ্গে মানতে পারছিলাম না।তৃতীয়বার কী হয়েছিলো বলতো?”

বলেই খানিকক্ষণ থামে প্রণয়।র*ক্তাক্ত হাত পূর্ণতার গাল হতে নামিয়ে ফের বলে,

“কী বলতে পারছিস না?আমিই বলছি”

বলেই গলা চে!পে ধরে পূর্ণতার।অতঃপর ঘাড় বাকিয়ে চৈত্রপানে চেয়ে বলে,

“ভাইয়া,ফায়ানকে নিয়ে ঐদিকটায় যান।দেখে আসুন”

“হ্যা যাচ্ছি।চলো ফায়ান”

বলেই ফায়ানকে নিয়ে হাটতে হাটতেই আরও খানিক নিটোল পরিবেশ সমৃদ্ধ এলাকায় হাটা ধরে চৈত্র।ফায়ানও কোনোকিছু বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে,

“আমরা কোথায় যাচ্ছি ভাইয়া?”

“মিস পূর্ণতার জন্য প্রণয় যা সাজিয়ে রেখেছে তার ব্যবস্থা নিতে”

ভ্রু কুচকে ফায়ান প্রশ্ন করে,

“কী সাজিয়ে রেখেছে?”

ফায়ান আর চৈত্র যেতেই পূর্ণতা প্রশ্ন করে,

“চাঁদের রে*পের ব্যাপারে ফায়ান কিছু জানেনা?কাউকেই বলিস নি তুই তাই কিনা?”

সঙ্গে সঙ্গেই পূর্ণতার গলায় রাখা হাত শক্ত করেই চে!পে ধরে দেয়ালের সঙ্গে পূর্ণতাকে মিশিয়ে র*ক্তিম দৃষ্টি তার পানে নিক্ষেপ করে প্রণয় বলে,

“শাট ইওর ব্লা!ডি মাউথ!আরেকটা বাজে বিষয় আমার চাঁদের নামে বলবি তোর জিভ এখানেই টেনে ছি*ড়ে দেবো”

বাম হাত দিয়ে গলায় রাখা প্রণয়ের হাত টানতে টানতে বহু কষ্টে পূর্ণতা আওড়ায়,

“তব….তবে তোর চাঁদ…..চাঁদ যে ধর্ষি!….ধ!র্ষিতা এ তো সত্যি!”

গলা চে!পে রেখেই হুডির পকেট হতে ধারালো এক ব্লে*ড বের করে প্রণয়।অতঃপর ব্লে*ডের কাগজ রাস্তায় ফেলে পূর্ণতার দিকে তা এগোতে নিলেই চোখজোড়া বড় বড় হয় তার।এবং প্রণয় যখন তার গলা হতে হাত সরায়।ভয়ার্ত কন্ঠে পূর্ণতা বলে,

“তা……তুই….তুই কা….কী করবি প্রণয়?দা…. দেখ আমি তোর বোনের মতো আমার সাথে তুই এমন…এমন করতে পারিস না”

পূর্ণতার কথা শেষ হতেই তার চোয়াল চে!পে রেখে প্রণয় বলে,

“তুইতো আমার বোনই পূর্ণ!তোকে আমি আমার ছোটবোনদের তুলনায় অধিক ভালোও বাসতাম।তবে সেই বোনের মর্যাদা তুই রাখতে পারিস নি।যেদিন আমার চাঁদের সাথে করা তোদের অমানবিক নি!র্যাতন সম্পর্কে অবগত হই সেদিনই মস্তিষ্ক ভেবে নিয়েছিলো অহনা নামক মেয়েটাকে ততটা ভয়াবহ শাস্তিই দিতে হবে যতটা দিলে তার রুহ পর্যন্ত কেপে যাবে।তবে যখন রিহুর কাছে জানতে পারি তুই ই অহনা!তুই ই সমস্ত কিছুর মূলে,এক পর্যায়ে সত্তা নড়ে গিয়েছিলো আমার।মনোবল টগবগিয়ে ছিলো খানিক।যার জন্য ঘৃণার পরিমাণটা ছিলো সর্বাধিক,সে যদি নিজেরই বোনের ন্যায় বান্ধবী বের হয় কীরূপে শাস্তি দেবো?আদোতে দিতে পারবো ও?নানান চিন্তা জেগেছিলো।তোকে খু*নটা কী করে করবো চিন্তায়ও আনতে পারছিলাম না!নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো সমস্ত পরিকল্পনা।পরবর্তীতে সর্বসহজ মৃ*ত্যুটাই দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু নিজের কাল তুই নিজেই ডাকিয়েছিস রিহুকে খু*ন করে।রিহাকে মা*রা তোর সত্যিই উচিত হয়নি।মেয়েটা এসবের একাংশেও ছিলোনা।তবুও তাকে তুই খু*ন করেছিস।তোর ভেতর যে পৈশাচিক আত্মা বিদ্যমান সেদিনই টের পেয়েছি যেদিন তুই নিজেই আমার চাঁদের ফেসমাস্ক লাগিয়ে আরেকটা ছেলের সঙ্গে…..সঙ্গে বিছানায় গিয়েছিস!সেসব ভিডিও করে…..করে আবার আমায় পাঠিয়েওছিস।কতটা নোংরা এবং বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী হলে নিজেরই বন্ধুর নামে অপবাদ ছড়াতে তার ফেসমাস্কসহ নিজে চাঁদের মাস্ক লাগিয়ে আমারই চোখের সামনে তুই!…….তুই ছিহ!তোকে বন্ধু বলতেও সত্তায় বাঝে আমার।সেজন্যই ফের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।তোকে সহজ মৃ*ত্যু দেয়ার কথা ভাবলেও নিমিষেই স্মরণে আসে তুই বন্ধু হওয়া দূর বলারও যোগ্য নস!এবং তুই সেই অধিরাজ শেখেরই মেয়ে যার জন্য আমার চন্দ্রের সাজানো,সহজ জীবন অন্ধকারে ঘনিয়েছিলো।যার সর্বমূলে ছিলিস তুই!তোকে তো এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না রে পূর্ণ!তোর প্রতি মায়া না,বরং ঘৃণা ব্যতীত অন্যকিছু আসার সম্ভাবনাই নেই!”

প্রতিটা বাক্য আওড়াবার সময় কন্ঠে খাদ নামে প্রণয়ের।এবং তার সমাপ্তি ঘটতেই পূর্ণতার ঠোটজোড়ার মাঝ বরাবর ধা*রালো ব্লে!ড ছুইয়ে ক্যাচ করেই টান দেয় প্রণয়।তৎক্ষনাৎ চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।র*ক্তে ভাসে চিবুকসহ গলা এবং বুকের কাছও।চোখের সামনে সমস্ত কিছু অন্ধকার ঠেকে তার নিকট।কথা পর্যন্ত বলার আর সুযোগ মেলেনা।নোনাজলের ধারা গড়ায় আঁখি হতে।ছটফটায় যন্ত্রণায়।অতঃপর উপলব্ধি করে ড্রেসিং করা তার হাতের ব্যান্ডেজ খুলছে প্রণয়।পরিশেষে চোখজোড়া বুজে আল্লাহকে স্মরণ করতেই শুনতে পায় প্রণয়ের শীতল কন্ঠস্বর,

“পালা,তোকে বাঁচার আরেকটা সুযোগ দিলাম।আমার হাতে আর কখনো পড়িস না।জানে মে*রে দেবো”

বলেই সরে আসে পূর্ণতার সম্মুখ হতে।এবং পূর্ণতা সত্যি সত্যিই ছুট লাগায় দূর হতে দূরান্তে।পূর্ণতার যাওয়ার পানে ঠোট মৃদু বাকিয়ে পলকহীন চেয়ে থাকে প্রণয়।অতঃপর নিজেও পিছু নেয় তার।

অনেকখানি পথ পেরিয়ে হাপিয়ে উঠে পূর্ণতা।হাপাতে হাপাতেই তার নজরে আসে কোনো এক জঙ্গলের ন্যায় এলাকায় সে এসে পড়েছে।খানিক ভয় জন্মালেও নিজেকে সামলানোর চেষ্টায়ই সুনসান নীরব মাঠের মাঝ বরাবরই সে বসে পড়ে।সমস্ত বদন তার যন্ত্রণায় টনটনাচ্ছে।বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকু ক্ষণে ক্ষণেই খোয়াচ্ছে।তবুও যেনো বাঁচার আকুল প্রচেষ্টা!মৃ*ত্যু যন্ত্রণা কি এতটাই বেদনাদায়ক?এতদিন যে কতশত মানুষ সে মে*রেছে তারাও কি এতটাই কষ্ট ভোগ করে দেহ ত্যা*গ করেছে?ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ নজরে আসে তার সম্মুখেই চৈত্র আর ফায়ান দাঁড়িয়ে।কিয়ৎক্ষণ বাদে প্রণয়কে সেথায় আসতে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে পূর্ণতার।ঘাম ছুটে গিয়েছে সমস্ত বদনজুড়ে।আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা জাগছেনা।এবারে সত্যি সত্যি মৃ*ত্যুকে আলিঙ্গন করার চিন্তা মস্তিষ্কে আসতেই নজরে আসে সামনেই এক খাচার ভেতর হিংস্র কিছু প্রাণী।চোখজোড়া বড় বড় হয় পূর্ণতার।শরীরের উষ্ণার*ক্তসমূহ নিমিষেই যেনো শীতল হচ্ছে।অতঃপর ভয় তার মাত্রাতিরিক্ত বাড়ে যখন নজরে আসে প্রণয় সেই খাঁচা খুলে পূর্ণতাকে তাক করেই দূর হতে লাইটের আলো ছড়ায়।সঙ্গে সঙ্গে নরখাদকগুলো ছুটে আসে পূর্ণতার নিকট।অতঃপর খুবলে খে*তে আরম্ভ করে বদনের প্রতিটা অংশ।র*ক্তে রঞ্জিত হয় মৃত্তিকা।যন্ত্রণায় ধরণী কাপানো আ!র্তনাদে ভাসে চারিপাশ।ধীরপায়ে এগিয়ে যায় প্রণয় সেথায় এবং শুনতে পায় পূর্ণতার আহাজারিসমূহ,

“মা!ও মা!”

“আল্লাহ,ও আল্লাহ!আল্লাহ গো!”

“প্রণয়!প্রণয়রে!আল্লাহ!”

“ও আল্লাহ!”

পৈশাচিক এক আনন্দানুভূতি জাগে সমস্ত সত্তাজুড়ে প্রণয়ের।ঠোট মৃদু বাকে তার।এবং পূর্ণতা সহিতই প্রাণীগুলোর চারিপাশে তরল জাতীয় কিছু চক্রাকারেই ঢালে সে।অতঃপর পিছু যেতে যেতে খানিক উচ্চস্বরেই বলে,

“তুই এই নরখাদক প*শুর তুলনায়ও নিকৃষ্ট পূর্ণ।তোর ঐ নোংরা দেহ পবিত্র মাটিকেও অপবিত্র করে তুলবে।এবং সেজন্যই তোর দেহাবশেষ পর্যন্ত আমি এই ধরণীজুড়ে থাকতে দেবোনা,দিতে পারিনা।তোর দেহের একাংশও কেউ কখনো খুঁজে পাবেনা।তার অস্তিত্বই থাকবেনা।তোর পৈশাচিক আত্মার পরিসমাপ্তি আমি এখানেই ঘটাবো।এবং মনে রাখবি প্রণয় তোকে ঘৃণা করে”

বাক্যসমূহ আওড়িয়ে কিয়ৎক্ষণ বাদে যখন নজরে আসে পূর্ণতার আর কোনো চিৎকার ভাসছেনা এবং নরখা*দকগুলো মাটিতে পড়ে থাকা কোনোকিছু টুকিয়ে খাচ্ছে।ঠোট ফের বাকে প্রণয়ের।এবং উপলব্ধি করে তার চাওয়া সত্যিই পূর্ণ হয়েছে।অতঃপর চট করেই হুডির অপর পকেট হতে গ্যাসলাইটার বের করে চক্রাকারে ঢালা কেরোসিনের উপরই জ্বালিয়ে তা ছু*ড়ে মারে।এবং দাউদাউ করে সেথায় নিমিষেই জ্ব!লে উঠে আগুনের ফুল্কিরেখা।প্রাণীগুলো ছুটে তাদের নিকট আ*ক্রমণের পূর্বেই জ্বলে ভ*স্ম হতে আরম্ভ করে।আর প্রণয় সেই আগুনের অগ্নিকান্ডেই চেয়ে থেকে হুডির পকেটে দুই হাত গুজে শীতলস্বরে আওড়ায়,

“অতঃপর পৈশাচিক তান্ডবের সমাপ্তি হয়তো এভাবেই ঘটে”

অতঃপর বিড়ালাক্ষীজোড়া হাসা বন্ধ হয় তার।আঁখি মৃদু সিক্ত।বুকের ভেতর কোথাও এক চাপা যন্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে।হতাশার শ্বাস নির্গত হতে চেয়েও যেনো পারছেনা।ঘাড় উচিয়ে দৃষ্টি তার অন্ধকারাচ্ছন্ন গগণ পানে স্থির করে মনে মনে সে আওড়ায়,

“তোর বেস্টফ্রেন্ডকে মে*রে দিয়েছি বলে কি রাগ করবি রিহু?”

অতঃপর বুক চি*ড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসার পূর্বেই পেছন হতে চিৎকার ভাসে কানে,

“প্রণয়!”

পিছু ঘুরে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই চাঁদকে নজরে আসতেই চোখজোড়া কিঞ্চিৎ বড় হয়ে আবার শিথিল হয় প্রণয়ের।ছুটে আসে সে চাঁদের নিকট।স্তব্ধ হওয়া চাঁদকে টেনে বক্ষপটে আলিঙ্গন করে শুধায়,

“হিশ!কিচ্ছু হয়নি,কিচ্ছু হয়নি চন্দ্রময়ী”

অতঃপর ইশারায় ফায়ান আর চৈত্রকে কিছু বলতে নিলেই চাঁদের পিছু অরণকেও নজরে আসে প্রণয়ের।অরণের দৃষ্টি আগুনে পু*ড়তে থাকা পূর্ণতার শেষ দেহাবংশপানে।এক নিমিষের জন্যও পলক তার পড়েনা।একধ্যানেই চেয়ে আছে অগ্নিপানে।চোখের কালচে মনিদ্বয়ে যেনো তারই প্রতিচ্ছবি ভাসছে।অতঃপর চাঁদকে যখন বুকের কাছেই ঢলে পড়তে দেখে,পিঠ এবং হাটুর নিচে আলতো হাতে চে!পে কোলে তুলে তাকে।এবং সাবধানতার সহিতই কোলে নিয়ে হাটা ধরে অরণপানে।বন্ধুর পাশে এসে ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“আমি জানি তুই পূর্ণকে ভালোবাসিস না”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বেশ কয়েকমাস সময়ই চাঁদ আর অরণের ব্যয় হয় কালো অধ্যায়ের কালচে সত্য হতে বেরিয়ে আসতে।প্রণয়ের মুখেই যখন সর্বসত্যিটা তারা জানে সেই মুহুর্তের তুলনায় কষ্টদায়ক মুহুর্ত আর কখনোই বোধহয় তারা উপলব্ধি করতে পারেনি।এবং তারা নিজেও রিহার ন্যায়ই বাকিদের থেকে সত্যসমূহ আড়াল করে।যেই পীড়া নিজেদের সহ্য করতে হয়েছে,একই পীড়া বাকি বন্ধুদের দিয়ে গ্লানি নিয়ে বাঁচতে তাদের না দেয়ার দরুনই এই পদক্ষেপ।থাকুক না বাকিরা একটুখানি সুখী?

নিত্যদিনকার ন্যায় হাসপাতাল থেকে ফিরেই বিছানায় বসে থাকা চাঁদের কোল দখল করে মাথা এলিয়ে পা গুটিয়েই শোয় প্রণয়।অতঃপর পেটের কাছে মুখ গুজে বাহু দ্বারা আলিঙ্গন করে শুধায়,

“বউ সর্বদা প্রণয়মগ্ন থাকে কিনা?”

চাঁদ হতে কোনো জবাব আসেনা বিধায় ফের প্রণয় শুধায়,

“চাঁদ?চন্দ্র?”

অতঃপর কপাল সামান্য কুঞ্চিত করে উদর হতে মুখ সরিয়ে ঘাড় বাকিয়ে চাঁদপানে চেয়ে বলে,

“এই লালগোলাপ?চাঁদ?”

“চন্দ্রময়ী?”

প্রণয়ের বারকয়েক ডাকে ধ্যানভগ্ন হতেই তার পানে চেয়ে চাঁদ বলে,

“জ্বি?”

“কী ভাবছেন?”

হতাশার শ্বাস ফেলে উত্তর দেয় চাঁদ,

“ভাবছি,জীবন বড়োই অদ্ভুত।কতকিছু হয়,আপনার কি মনে হয়না অরণের এখন উচিত মিরাপুকে সত্যিটা বলে দেয়া?”

“ওদের টা ওদেরই সামলাতে দিন”

বলেই ফের মুখ গুজে চাঁদের পেটের কাছে।অতঃপর সশব্দেই চুমু খায় সেথায়।

______________________________

আজকাল বেশ উদাসীন থাকা পড়ে মিরার।একে একে দুই বান্ধবীকে খুইয়ে কেমন যেনো মনমরা হয়েই থাকে সর্বদা।বড্ড একাকিত্ব অনুভব হয় তার।যদিও বা বেশিরভাগ সময়ই আশেপাশে রিদি থাকে।তবুও কোথাও যেনো শূন্যতাটা রয়েই যায়।এমনি এক দিনে মিরার পাশে তারই বিছানায় বসে খাবার খাচ্ছিলো রিদি।তাকেও দু’এক লোকমা খাইয়ে দিচ্ছে এবং নানান কল্পনা-জল্পনা শোনাচ্ছে।অতঃপর হঠাৎ বলা রিদির বাক্যে টনক নড়ে মিরার,

“আপু আমার….আমার মনে হয় মানে….আমি…..মানে আমি প্রেগন্যান্ট!প্রেগন্যান্ট হয়তো মানে!”

কপাল কুচকে অদ্ভুত দৃষ্টি রিদির পানে নিক্ষেপ করেই মিরা প্রশ্ন করে,

“কী বললে?”

“বললাম যে!না মানে হয়তো আমি প্রেগন্যান্ট?”

গম্ভীরস্বর মিরার,

“মির জানে?”

জিভ দ্বারা ঠোট ভিজিয়ে খানিক ঢোক গিলে রিদি বলে,

“না,এখনও বলিনি কিছু”

“তবে এত দ্রুত বিষয়টা…..”

কন্ঠে খাদ নামিয়ে রিদি বলে,

“আপু মির কি আমায় বকবে?”

মৃদু হেসে রিদির মাথায় হাত বুলিয়ে মিরা বলে,

“চিন্তা কীসের?আমি আছি না?বাবুর ফুপি।মির কী করে না করে জানিনা তবে আমি বেশ খুশি রিদু!আজই টেস্ট করিয়ে আসবো কেমন?”

ইতস্তত করে রিদি,

“কিন্তু মির?”

“ওর কথা বাদ দাও”

মাস পাঁচেক পরের কথা,
রিদিকে চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে আজ মাস খানেক হলো।বর্তমানে সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা।রিদির সাথে মিরও এসে হানা দিয়েছে বন্ধুর বাড়ি।দু’জনকেই আলাদা রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে।বেশকিছুক্ষণ আলাপ আলোচনা করে তারা রওয়ানা হয়েছে শেষবারের ন্যায় আলট্রাসনোগ্রাফি করতে।রিহা আর পূর্ণতার কেউই যেহেতু বর্তমানে জীবিত নেই গাইনী ডাক্তার হিসেবে পরিচিত কেবল লিমা।এবং লিমার কাছেই তাদের যাওয়া।অতঃপর পজিটিভ রিপোর্ট আসতেই চিন্তিত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে থাকা রিদির ফোলা পেটের কাছে হাটুগেরে বসে চুমু খেয়ে মির বলে,

“তুমি আমার শূন্য জীবনে ভালোবাসার পূর্ণ প্রতীক”

To be continued…..

[বিঃদ্রঃগল্পটা কাল্পনিক।তাই কাল্পনিকভাবে এবং ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here