❤️(36-37)❤️
36-FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:36
…….বাহিরে খুব জড়ো বৃষ্টি শুরু না হলেও গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পড়তে থাকে।হঠাৎ দমকা হওয়া দিতে শুরু করে।বারান্দা দিয়ে বাতাসের সাথে সাথে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা রুমে আঁচড়ে পড়ে….আমাদের গল্পের নায়িকা হিয়া সে কি একজায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকার মেয়ে…..বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া হিয়াকে নাড়া দেয়….ওহ এসে বারান্দার গ্রিল ধরে চোখ বন্ধ করে দমকা হাওয়া গুলো গায়ে মাখে…..এমন সময় পাশের বাড়ির কাকিমা চিৎকার দিয়ে ওঠে….
কাকিমা:রিয়া এই রিয়া কোথায় গেলি…ছাদ থেকে কাপড় গুলো তুলে আন জলদি….খুব বাতাস হচ্ছে উড়ে যাবে সব নাহলে..
….কাকিমার কথায় হিয়ার হুশ ফেরে…
হিয়া:কাপড় হ্যা হ্যা হ্যা কাপড়….ধ্যাত কি করে ভুলে গেলাম কাকিমা আজ এক বালতি কাপড় ধুয়ে দিয়ে ছাদে নেড়ে দিয়ে এসেছে।আমাকে বললো তখন আনতে…এখন ওগুলো ভিজে গেলে…নাহ নাহ এখনো বৃষ্টি জরে শুরু হয়নি আমাকে এক্ষুনি ছাদে যেতে হবে…..(দাত দিয়ে আঙ্গুল কামড়াতে কামড়াতে)
……হিয়া কথা গুলো বলে হন্তদন্ত হয়ে ছাদে যেতে ধরলে….
উজান:কি হলো এভাবে কোথায় যাচ্ছেন
হিয়া:ছাদে যাচ্ছি সরুন তো?
উজান:সরবো না।এখন এই বৃষ্টি তে ছাদে গিয়ে কি করবেন আপনি(দাতঁ খিচিয়ে)
হিয়া:আরে ছাদে আমার জামা আছে
উজান:কোন জামা আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি
হিয়া:ধুরো অনেক জামা আছে…সারুন তো আপনি….
…..হিয়া উজান কে পাশ কাটিয়ে ছাদে চলে যায়….
উজান:মিস মিএ ওয়েট…হিয়া…হিয়া আমিও যাবো আপনার সাথে….হিয়া….
…….ছাদে যেনো বাতাসের বেগ প্রচন্ড।আকাশে এক পাশে সাদা মেঘ তো এক পাশে ঘন কালো আধার।সাথে হালকা ফোটা ফোটা বৃষ্টি……
উজান:আপনি কি মানে😡মনে মনে পন করেই নিয়েছেন যে এ জীবনে কখনো আমার কোনো কথা আপনি শুনবেন না….
হিয়া:জামা গুলো দেখুন তো এগুলো এ দুটে আমার নতুন জামা আপনি চিনতেন।পারতেন এগুলো চিনে তুলে আনতে।পড়ে তো সেই আমাকেই আবার আসতে হতো……
উজান:হয়েছে তোলা এবার আসুন
হিয়া:আপনি কি হ্যা মানুষ না রোবট এতো সুন্দর একটা ওয়েদার এতো সুন্দর বাতাস আসছে আর আপনি খালি রুমে যাইযাই করছেন
উজান:তা বেশ কি করবো আমি এখানে..
হিয়া:নিন এগুলো ধরে থাকুন হাতে….আমি একটু ওপাশে থেকে বাতাস খেয়ে আসি…
উজান:যা মন চায় করুন😡
……….
উজান:হিয়া বৃষ্টি বাড়ছে রুমে চলুন…
হিয়া:যান আপনি আমি বৃষ্টিতে ভিজবো এমনিতেও এখনো স্নান করি নাই…..(ওপাশ থেকে চিৎকার করে)
উজান:(গিয়ে হিয়ার হাত ধরে)এক্ষুনি নিচে নামবেন আপনি আমার সাথে।এমনিতে হালকা ভিজে গেছেন…এর পর জ্বর আসলে…
হিয়া:আসবেনা জ্বর।এমন করছেন কেনো।আমার সাথে থাকতে ভালো লাগছে না বুঝি।ওহ বুঝতে পারছি মৃন ম্যাম এর কথা মনে পড়ছে আপনার তাই না…(চোখ পাকিয়ে)
উজান:না..তবে মনে হচ্ছে আপনাকে কিছু মনে করিয়ে দিতে হবে..
হিয়া:একদম কথা ঘোরাবেন না।জানি জানি সব জানি আমি….তা মৃন ম্যাম কেও নিয়ে আসতেন আপনার সাথে….
উজান:মৃন এর বিয়ে হয়ে গেছে।ওহ এখন ওর হাসবেন্ড এর সাথে ইতালি থাকে….
হিয়া:কি!😯😯আপনি কি বলছেন ভেবে বলছেন তো।উনি তো আপনাকে বিয়ে করবে বলে সাথে করে নিয়ে গেলো ইউ এস।তো আপনাকে ছেড়ে দিয়ে পারলো অন্য কাউকে বিয়ে করতে..
উজান:আপনি পারলে মৃন কেনো পারবে না😒
হিয়া:এই আপনি না আমাকে একদম কথা শোনাবেন না বলে দিচ্ছি😡
উজান:শোনাবো না তার আগে নিচে চলুন…
……….হিয়া উজান কে ভেংচি কেটে সামনের দিকে গিয়ে দুহাত মেলে চোখ বন্ধ করে উপরের দিকে চেয়ে বৃষ্টির ফোটা গায়ে মাখে…….আর আমাদের গল্পের নায়ক উজান সেই একি ভাবে আগের মতো হাতে এক গোছা কাপড় নিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়াকে দেখে…..
“”””দিল কা দাড়িয়া বেহি গ্যায়া”””
“””ইশক ইবাদত বান হি গ্যায়া””””
“””খুদকো মুঝে তো সওপ দে”””
“””মেরি জারুরাত তু বান গ্যায়া”””
………..
উজান:হয়েছে এবার।চলুন।আমার রান্না করতে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে হিয়া….
হিয়া:আচ্ছা চলুন…দিন ওগুলো আমায়…
উজান:লাগবে না আপনি নিজে আগে সাবধানে সিড়ি দিয়ে নামুন…
…হিয়ার মনে আবার দুষ্টু বুদ্ধি চেপে বসে…উজানের কোলে উঠার… কিন্তু এখন আর কি বলেই উজান এর কলে উঠবে..আগে তো মন চাইলেই উঠতে পারতো এখন তো সেই সুযোগ নেই….
হিয়া:পুচকোঁ এতো দিন পর তোর বাবাকে পেয়েছি।উঠবো না কোলে ওনার তা কি হয়…একটু বুদ্ধি দে না তুই।কি বাহানা বের করি…হ্যা পেয়েছি
হিয়া:আআআ স্যার….
উজান:হিয়া হিয়া কি হলো পড়ে গেলেন কি করে..
হিয়া:জানি না স্যার কিভাবে যেনো পা টা উল্টে গেলো….ওহ কি ভীষন ব্যাথা করছে এই পা টায় বুলি…কাকিমা…ঠাম্মি ও হো ও কি ব্যাথা করছে।ইসস
উজান:আরে বুলি কে মা কে ডেকে কি হবে।কোথায় লেগেছে দেখতে দিন আমায়…দেখি কোথায় লেগেছে…কোথায় এখান টায় এখানে….
হিয়া:হুম এখানে।ইসস ভীষন ব্যাথা করছে।আমি এখন নিচে যাবো কিভাবে…আআ কি ধরেছে
উজান:চুপ করুন আমি নিয়ে যাচ্ছি আপনাকে।আগে দেখতে দিন ভালোকরে।চুপ করুন…আবার কাদেঁ…বলছি তো কিচ্ছু হবে না….
….উজান কাপড় গুলো কাধে নিয়ে হিয়াকে কোলে তুলে সিড়ি দিয়ে নামতে ধরে।হিয়া দু হাত দিয়ে উজানের গলা জরিয়ে….
হিয়া:মনেমনে(দেখলি তো পুচকু আমি কিভাবে বাহানা বের করে উজান স্যার এর কোলে উঠলাম।আর উনি নিজেকে যে এতো স্মার্ট ভাবে পারলো বুঝতে,পারলো না তো।কি বোকা তোর বাবা টা ইসস)
“””মে ত্যানু ছামঝাবা কি”””
“””না তেরে বিনা”””
“”””লাগতা জি…তু কি জানে প্যায়ার মেরা”””
“””মে কারা ইনতেজার তেরা”””
“””তু দিল তু জান মেরি…মে ত্যানু ছামঝা বা কি””””
….উজান এসে হিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দিতেদিতে….
উজান:আমার কোলে চড়তে এতো ভালো লাগে আপনার।একটা ভালো কোনো বাহান বের করলেও তো পারতেন…(বুৃম বুম বুম)
হিয়া:ইয়ে ইয়ে আপনি আপনি কি বলতে চাইছেন আমি এই এই আপনার কোলে ওঠার জন্য এসব করেছি…মোটেই না…আমার সত্যি সত্যি লেগেছিলো….(চোখমুখ পাকিয়ে)
উজান:খালি নাটক ….নিন বসে বসে এসব ওল্টোপাল্টা বুদ্ধি মাথা থেকে বের করে কাপড় গুলো যেগুলো শুকিয়ে গেছে ওগুলো গুছিয়ে রাখুন আর বাকি গুলো বারান্দায় মেলে দিন…
………..রান্না ঘরে উজান খিচুড়ি বসিয়ে দিয়ে।বেগুন ভাজার জন্য বেগুন কেটে হলুদ মরিচ লবন মাখছিলো…আর ওর অজান্তে ওর নাকে মুখে কিছু মাখানো মশলা লেগে যায়…এদিকে হিয়ার বড্ড খিদে পেলে ও রান্না ঘরে এসে উজানের সাদা মুখে মশলার রঙ বেরঙরের ডিজাইন দেখে উন্মাদ গুলোর মতো হেসে পড়ে…..
উজান:কি হলো আপনি এভাবে হাসছেন কেনো..?…..স্টপ ইট হিয়া……আবার হাসছে….হিয়া(চিৎকার করে রাগে…)
হিয়া:আপনার আপনার মুখে…(হিয়া আবার হেসে দেয়…)
উজান:কি আমার মুখে…কোথায়…কি…
……উজান হাত দিয়ে ওর মুখ দেখতে গিয়ে আরো মশলা মাখে…হিয়ার কেলকেলানি হাসি তে ওর খেয়ালি নাই ওর হাতে মশলা লাগানো ছিলো..
হিয়া:আরে আরে আরে করছেন কি…থামুন আমি আসছি….(হিয়া আবার হেসে দেয়)
উজান:আগে আপনি আপনার এই হাসি টা বন্ধ করুন প্লিজ আমার ভীষন ইরিটেট লাগছে…ডিসগাস্টিং….
হিয়া:কই দেখি এদিকে আসুন….
…..হিয়া গিয়ে ওর ওড়না দিয়ে উজানের মুখে লাগা মশলা গুলো মুছে দেয়…আর উজান ফ্যাল ফ্যাল করে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে….
“””হে উড়ি উড়ি”””
“””হে খাবো কি পাড়ি”””
“”হে আঙ্গআরি খিলি”””
“””হে ছাড়ি রাতে গায়ি”””
“””খামোখা ছের দূ তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””
“””খামোখা চুম্মলু তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””
হিয়া:কি হ্যা আপনি…এভাবে কেউ রান্না করে…নিন হয়ে গেছে…পারলে মুখ টা একটু ধুয়ে আসুন না হলে ওরে জ্বালা করবে….
উজান:এজন্য এতো হাসি পাচ্ছিলো আপনার।ইডিয়ট……
হিয়া:শুধু আমার না আমার পুচকুর ও অনেক হাসি পাচ্ছিলো..(পেটে হাত দিয়ে..)…হিয়া আবার হাসে।
উজান:তাই…তা আপনার পুচকু ও বুঝি আপনার মতো ইডিয়ট…
হিয়া:(কপট রেগে গিয়ে)কি কি বললেন আমার পুচকু না মোটেও আমার মতো ইডিয়ট না ওহ তো আপনার মতো ইন্টিলিজেন্ট হবে বুঝলেন…(এটা বলে হিয়া জিভে কামড় দেয়…)…ইয়ে মানে ঔ ইয়ে আসলে ওর বাবার মতো…আপনার মতো না….
উজান:হুম বুঝলাম কার মতো…যাই হোক এখানে কিসের জন্য এসেছেন।কি চাই..
হিয়া:আমার না খুব খিদে পেয়েছে…কিছু আছে খাওয়ার…..
……উজান হিয়াকে দুটো আপেল কেটে দিয়ে খেতে বলে….উজান বেগুন গুলো প্যানে ছেড়ে দেয়…হিয়া পাশেই দাড়িয়ে আপেল গুলো খেতে খেতে উজানের সাথে বক বক করতে থাকে…
হিয়া:মৃন ম্যাম বিয়ে করে নিলো আপনার কষ্ট হলো না….
উজান:কষ্ট কেনো হতে যাবে….দেখি দূরে গিয়ে দাড়ান না একটু তেল ছিটায় আসবে….
হিয়া:আপনাকে খাইয়ে দেই এক পিচ…
উজান:না….তা আপনার হাসবেন্ড কে তো দেখলাম না সকাল থেকে ফোন করে একবারো আপনার কোনো খোজঁ নিলো…
হিয়া:ইয়ে মানে ওর না আজকে সকালে অনেক গুলো ওটি ছিলো তাই হয়তো….
উজান:তাই না..তা আপনার হাসবেন্ড কি এর মধ্যে আসবে না কলকাতা…
হিয়া:কেনো আমার হাসবেন্ড আসবে কি আসবে না আপনি জেনে কি করবেন..
উজান:না আছি যখন আর কদিন।ভাবলাম আপনার হাসবেন্ড এলে দেখা করে নেই একবার। এতো প্রশংসা করছেন আপনি আপনার হাসবেন্ড এর দেখতে ইচ্ছে করছে খুব…
হিয়া:(মনমনে)ইচ্ছে করে আমাকে জ্বালানোরর জন্য এসব করছেন উনি..কেনো যে কাকিমা এনাকে এখানে রেখে গেলো…
উজান:কি হলো চুপ করে আছেন যে…
হিয়া:কোথায় না তো।আর ওহ না অনেক বিজি আসতে পারবে না।আর ওর সাথে দেখা করার কোনো কি দরকার আছে আপনার…..এটা নিন…আমি স্নান এ গেলাম….এসে যেনো দেখি সব রান্না হয়ে গেছে…
উজান:যান..তবে আজ ওয়েদার ঠান্ডা বেশিক্ষণ স্নানে থাকার দরকার নেই…..
হিয়া:হিয়া আবার একটা ভেংচি কেটে চলে যায়..
উজান:ইডিয়ট….
…..হিয়া স্নান এ যায়।এদিকে উজানের সব রান্না শেষ…ওহ ফ্রেশ হয়ে রুমে গিয়ে সোফায় হেলান দিয়ে কিছুটা বিশ্রাম নেয়।এর মধ্যে হিয়া আসে স্নান করে..চুল দিয়ে তখনো টপ টপ করে পানি পড়ছে মেঝেতে….হিয়া এসে টাওয়াল টা বিছানায় ফেলে দেয়…….
উজান:এটা কি করলেন আপনি…ভেজা টাওয়াল টা ওভাবে বিছানায় রাখার জিনিস…
হিয়া:এই শুনুন আপনি না আমাকে শেখাতে আসবেন না আমি কি করবো আর আর না করবো।এটা আমার বাড়ি আমার যেখানে জিনিস রাখার আমি রাখবো…
উজান:চারটে মাস আমি ছিলাম না দেখে আপনার বড্ড পাখনা গজিয়েছে…সাহস বেড়ে গেছে..
হিয়া:হ্যা বেড়েছে তো…
উজান:একদম আমার মুখের উপর তর্ক করবেন না হিয়া….(হঠাৎ মেঝেতে উজানের চোখ গেলে ওহ দেখতে পারে হিয়ার চুল মোছা হয়নি ভালো করে। এখনো পানি ঝরছে….)
আর এসব কি আপনাকে বারবার আমি বলছি ঠান্ডা লেগে যাবে তারপরো আপনি..
হিয়া:কি করলাম আবার আমি..বৃষ্টিতে গোসল করতে দিলেন না…স্নান ও তাড়াতাড়ি করে আসলাম…এখন আবার কি…
উজান:আপনি কি কিছু করেন নাকি আবার…এদিকে আসুন….
…..উজান টাওয়াল টা নিয়ে,হিয়াকে বিছানায় বসে দিয়ে হিয়ার চুল গুলো মুছে দিতে থাকে…….
“”””তুঝকো মে রাখলু বাহা””””
“”””যাহা পে কাহি হো না মেরা একিন”””
“”মে জো তেরা না হুয়া””””
“””কিছি কা নেহি কিছি কা নেহি”””
হিয়ার মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে দিয়ে…
উজান:নিন এবার গিয়ে চুপচাপ ওখানে গিয়ে শুয়ে থাকুন।আমি আসছি….
হিয়া:আপনি স্নান করবেন না?
উজান:স্নান করে পড়বো টা কি….
হিয়া:দাড়ান….
……….হিয়া গিয়ে আলমারি থেকে একটা শার্ট আর জিংকস নিয়ে আসে…..
হিয়া:এই নিন🤗
উজান:এসব আপনার কাছে…!
হিয়া:হ্যা মানে ঔ কাকিমা রাখতে দিয়েছিলো তাই
উজান:তাই না….(হিয়ার কোমড় ধরে কাছে টেনে এনে…..)
হিয়া:এসব এসব কি করছেন।আপনি ভুলে যাচ্ছেন হ্যা আমি কিন্তু এখন অন্য কারো….
উজান:(হিয়ার গাল গুলো নাড়তে নাড়তে)হলেন না হয় অন্য কারো।একদিন তো আমার ছিলেন
হিয়া:ছিলাম।এখন আর নাই..
উজান:(হিয়ার মাথা থেকে টাওয়াল টা খুলে)যান গিয়ে শুয়ে পড়ুন আমি এসে খাবার দিচ্ছি….
………হিয়া গিয়ে বিছানায় বসে টিভি ওন করে…বাহিরে খুব ঝড় শুরু হয়…ঘুটঘুটে অন্ধকার….উজান স্নান ছেড়ে এসে…
উজান:পড়াশুনা তো কিচ্ছু নেই আপনার ঔ এক জিনিস করে বের হোন…সকাল থেকে টিভির সামনে এভাবে না আপনি জীবনেও ফাইনাল ইয়ায় টপকাতে পারবেন না….
হিয়া:দেখা যাবে….
……….
উজান:হিয়া….হিয়া….খেতে আসুন….হিয়া….সব বেড়ে দিছি আমি…..হিয়া….
হিয়া:এদিকে নিয়ে আসুন না…স্যার…
উজান:না আপনি এদিকে আসুন…
হিয়া:না আপনি এখানে বেড়ে সব নিয়ে আসুন….
উজান:হিয়া আমার চেচাঁতে ভালো লাগছে না…ঔষধ খেতে দেড়ি হয়ে যাচ্ছে….হিয়া….
………..উজান দু প্লেটে ওর আর হিয়ার জন্য সব বেড়ে টিভির রুমে নিয়ে আসে…….
উজান:আপনি তো আপনি কথা শুনবেন না।তো শুনবেনই না😡
হিয়া:এনেছেন…দাড়ান দাড়ান…আমি কিছু বিছিয়ে দেই আগে…..
…..উজান আর হিয়া বিছানায় বসে খেতে শুরু করে……
হিয়া:একটা কাচা পেয়াজ কেটে আনলে না খুব ভালো হতো🥰
উজান:আমি পারবো না।আমার আর এ্যানার্জি নেই…
হিয়া:ঠিক আছে আপনাকে আনতে হবে না আমি কেটে আনছি…আপনার জন্য আনবো…
উজান:না আমি ওসব কাচা পেয়াজ টেয়াজ খাই না আপনি জানেন ভালো করে….
হিয়া:বেশ আমি আমার জন্যই আনছি তাহলে..
…..হিয়া পেয়াজ কাটতে গেলে ওর হাত ফোস করে কেটে যায়…আর এক নিমিষে মেঝে রক্তের ছিটায় ভরে যায়….
হিয়া:আআ
উজান:কি হলো আবার….চেঁচাচ্ছেন কেনো
হিয়া:না স্যার কে বলা দেখা যাবে না।আমাকে তাহলে বকতে বকতে শেষ করবে…..
উজান:হিয়া?
হিয়া:না না কিছু হয়নি আপনি শুরু করুন আমি আসছি….কি করি আমি এখন বেন্ডেজ বেন্ডজ কোথায়….ওসব তো বুলি গুছিয়ে রাখে….এখন কোথায় খুজি….
উজান:কি করছে উনি।এতোক্ষন লাগে একটা পেয়াজ কাটতে….হিয়া হিয়া……কি করছেন কি এখানে দাড়িয়ে দিড়িয়ে।হয়নি পেয়াজ কাটা….
……..হিয়ার হাতে চোখ পড়লে….
উজান:হিয়া….এসব এসব কি করে হলো…কি হ্যা আপনি…আমাকে ডাকবেন না..
হিয়া:পেয়াজ টা কাটতে গিয়ে…
উজান:হোয়াট…আমারি ভুল হয়েছে আমার আপনাকে না পাঠিয়ে নিজে এসে…..খুব ব্ল্যাড বের হয়েছে না….ব্যাথা করছে খুব….দেখি দেখি এদিকে আসুন…..
হিয়া:কিছু হয়নি আমার। আপনি এতো ব্যাস্ত কেনো হচ্ছেন আমি ঠিক আছি….
উজান:দেখতেই তো পাচ্ছি কি ঠিক আছেন আপনি…ব্যান্ডেজ কোথায় থাকে আমাকে বলুন….
হিয়া:ওগুলো বুলির রুমে থাকে…কোথায় যে আছে এখন….
…….উজান গিয়ে বুলির রুম থেকে ব্যান্ডেজ এনে হিয়াকে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে রুমে নিয়ে আসে….
উজান:মা ঠিকি বলে আপনাকে একা রাখা একদমই ঠিক না।হিয়া আপনি কবে বড়ো হবেন।এখন আর আপনি একা নন এতো বার করে কেনো বলতে হয় আপনাকে কথা টা😥
হিয়া:ঠিক আছে আর হবে না।আসুন একসাথে আগে খাবার টা খাই……
উজান:ওয়েট।আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে
হিয়া:আমি পারবো
উজান:হাত কেটে গেছে তারপরো বলছেন পারবেন!
হিয়া:আচ্ছা ঠিক আছে দিন খাইয়ে….
…..উজান হিয়াকে খাইয়ে দিতে থাকে আর হিয়া ঠাকুমারঝুড়ির মতো জমে থাকা এই চারমাসের গল্প গুলো চালু করে দেয়….
“””””হতে পারি রোদ্দুর হতে পারি বৃষ্টি “””
“””হতে পারি জানলার এ হাওয়া ওহ তোমারি জন্য””
“””হতে পারি ডাকনাম হতে পারি বদনাম”””
“””হতে পারি সত্যি তোমারি জন্য”””
“””শুধু তুমি চাও যদি সাজাবো আবার নদি”””
“””এসেছি হাজার বারনে”””
“””শুধু তোমারি জন্য…শুধু তোমারি জন্য””””
………
উজান:নিন হয়ে গেছে।এবার এই পানি টা নিন সাথে এই ঔষধ দুটো খেয়ে নিন….
হিয়া:হুম….
উজান:আমি এগুলো রেখে আসছি….
……হিয়া ঔষধ গুলো খেয়ে বিছানায় এসে শুতে না শুতেই কারেন্ট চলে যায়…বাহিরের ঘুটেঘুটে অন্ধকার আর দমকা হাওয়ায় বারান্দার পর্দা উড়ছে।সাথে বজ্রপাতের বিকট শব্দ…
হিয়া:যাহ কারেন্ট চলে গেলো তো…স্যার উজান স্যার স্যার কোথায় আপনি খুব ভয় করছে তো…স্যার
উজান:এভাবে ষাড় এর মতে চেঁচাচ্ছেন কেনো।যেখানে আছেন ওখানে বসে থাকুন…আমি আসছি……কি যে বাড়ি একটা টর্চ মোম কিচ্ছু নেই…
হিয়া:স্যার…
উজান:বললাম না আসছি।মোম কোথায়?টর্চ নেই?
হিয়া:আমি জানি না ওগুলো কোথায়।ওসব বুলি গুছিয়ে রাখে।ওকে ফোন দিয়ে শুনুন…
…..হিয়া ভয়ে উঠে দাড়ায়।উজান ফোনের টর্চ ওন করে হিয়ার কাছে আসে….
উজান:বাড়িতে কোথায় কি জিনিস থাকে আপনি জানেন না…
হিয়া:আরে আমি সারাদিন কতো পড়াশুনো করি,পুচকু কে সময় দেই,কলেজ করি আমার কি আর সময় আছে বলুন ওসব দেখে রাখার..
উজান:পড়াশুনা করেন আপনি আমাকে সেটা বিশ্বাস করতে বলছেন।বিকেল হতে চললো একটা বই নিয়ে বসেছিলেন একবারো আজ….
হিয়া:ওহ তো আপনি আছেন জন্যই….
উজান:আর কতো এক্সকিউজ দিবেন আপনি…
…..হিয়া সামনে এগুতে ধরলে নিচে কিসের সাথে একটা ধাক্কা খেয়ে উজানের গায়ের উপর দিয়ে দুজনে বিছানায় ধপাস করে পড়ে যায়…
হিয়া:আউচ আআ
উজান:হিয়া লাগেনি তো আপনার আপনি ঠিক আছেন তো
হিয়া:নাহ আমি ঠিক আছি….
…..হঠাৎ মোড়ে একটা গাছে বিকট আওয়াজ করে বিদ্যুৎ পড়ে….ভয় পেয়ে হিয়া উজান কে সপাটে জরিয়ে ধরে….
উজান:এতো ভয় কেনো পেলেন আমি আছি তো..
হিয়া:কারেন্ট না পর্যন্ত এখানে থাকুন প্লিজ….
উজান:(মনে মনে)আমি তো এভাবে আপনাকে সবসময় আমার বুকে আগলে রাখতে চাই হিয়া……ঠিক আছে আমি আছি..দাড়ান বালিশে মাথা টা দিয়ে নেই….
উজান:আচ্ছা হিয়া আপনার পরীক্ষার আর কতোদিন আছে….
হিয়া:কিসের পরীক্ষা
উজান:ফাইনাল ইয়ায় এর
হিয়া:এখনো অনেক টাইম আছে সাত মাসের মতো…কেনো?
উজান:না এমনি।আচ্ছা বাবুর কতো মাস হলো..
বলি
উজান:বলুন?
হিয়া:মৃন ম্যাম তো বিয়ে করে নিলো।আপনি বিয়ে করবেন না..
উজান:কেনো করবো না।মৃন নেই তো কি হলো নিলীমা তো আছে…আর নিলীমা আমার ছোট বেলার বন্ধু আমাদের মাঝে কেমিস্ট্রি টাই অন্য রকম…(হিয়াকে রাগানোর জন্য)
……হঠাৎ উজানের কথা গুলো কোথায় যেনো গিয়ে হিয়ার খুব খারাপ লাগে।হিয়ার বুক ফেটে কান্না চলে আসে……
উজান:আর তাছাড়া আমাদের টিউলিপের সাথে ওদের একটা শেয়ার এর ব্যাপার আছে।আর আমি তো ভেবেছি বিয়ের পর আমি আর নিলীমা গিয়ে ইউ এস এ তেই সেটেল হয়ে নিবো।ওখানে একটা সুন্দর সংসার হবে আমাদের।আর দেখুন তো আজ ওয়েদার টাও কতো সুন্দর।এ রকম ওয়েদারে তো আপনাকে চাইলেও আমি জোরায় ধরতে ভালোবাসতে পারবো না আপনি তো এখন অন্য কারো।বিয়ের পর আমি নিলীমা এভাবে এক বারান্দায় একসাথে…
…….হিয়া এবার হাউমাউ করে কেদেঁ ফেলে….
উজান:হিয়া…….হিয়া আপনি কাঁদছেন।হিয়া প্লিজ।কি হলো।আমি কিছু করেছি।ব্যাথা….ব্যাথা হচ্ছে কোথাও।আমাকে বলুন কেনো কাঁদছেন আপনি।কষ্ট হচ্ছে। হিয়া….
…….হিয়া গিয়ে উজানের শার্টের কলার ধরে ওর কাছে টেনে এনে উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়…হিয়া উজানকে এমন ভাবে শক্ত করে জরিয়ে ধরে যেটায় হিয়ার নখের আঘাতে উজানের পিঠে আছড়ে ভরে যায়।উজানো নিজেকে সামলাতে না পেরে হিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে….মনে হয় যেনো বুকের এই রক্ত মাংস হাড় হাড্ডি গুলো না থাকলে দুজন দুজন কে নিজেদের কলিজায় ঢুকিয়ে নিতো….
…….বজ্রপাত এর হালকা শব্দ।হালকা বিদ্যুৎ এর ঝলকানি…সাথে রাতের দমকা হাওয়া।
“””খামোসিয়া আওয়াজ হে”””
“””তুম ছুননে তো আও কাভি”””
“””ছু কার তুমহে”””
“”””খিল যায়ে বো যারা ইনকো সামহালো আভি”””
অনেক অনেক অনেক ক্ষণ পর হিয়া উজান কে ছেড়ে দেয়…হিয়ার চোখ ভর্তি পানি।কি হলো উজান কিছু বুঝতে পারছে না।হিয়ায় চোখ গুলো লাল হয়ে ফুলে গেছে….
উজান:হিয়া আপনি কাঁদছেন কেনো আমার কষ্ট হচ্ছে..
…..হিয়া দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে গেট লক করে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে….উজান হিয়ার পেছন পেছন এসে…
হিয়া:তৃনা ম্যাম এর হিসাবে ধরলে আজ চারমাস ৬দিন হবে..বলুন না কেনো…?
উজান:না আপনি ঘুম দিন একটু।আমি আছি আপনাকে ধরে….
….হিয়া উজানের বুকে মুখ গুজে দিলে কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে পড়ে….
উজান:মনেমনে(তাহলে হিসাব করলে বাবু হওয়ার পর হিয়া আরো দুমাসের মতো পাবে পরীক্ষার জন্য তৈরি হতে….এ কদিন ওনাকে নিয়ে আমাকে বসতে হবে না হলে শেষের দিকে আমি সবটা শেষ করে উঠতে পারবো না….আর হিয়ার কোনোভাবে ইয়ায়র গ্যাপ যাক আমি চাই না…)
……উজান হিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হিয়ার সাথে ওই ও ঘুমিয়ে পড়ে….বাহিরের থম থম পরিবেশ।বারান্দা থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস।আজ কতোদিন পর হিয়া আবার তার উজান স্যার এর বুকে মাথা গুজেঁ শান্তিতে ঘুমোচ্ছিলো….
….রাত ৭:৩০দিক হিয়ার খিদে পেলে ঘুম ভেঙ্গে যায়।হিয়া নড়ে উঠলে উজানের ও ঘুম ভাঙ্গে…তোতোক্ষনে কারেন্ট এসে গিয়ে ঘর আলোকিত….
উজান:উঠে গেছেন..
হিয়া:হ্যা খিদে পেয়েছে..
উজান:আপনার না পুচকুর…?
হিয়া:(হিয়া হেসে দেয়)দুজনের….
উজান:ঠিক আছে আপনি হাত মুখ ধুয়ে নিন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি….
…..হিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে আবার টিভির সামনে বসলে উজান এসে রিমোট নিয়ে টিভি ওফ করে দেয়….
হিয়া:(কপট রেগে গিয়ে)টিভি টা কেনো ওফ করলেন।ওন করুন এক্ষুনি ওন করুন বলছি।
উজান:অনেক হয়েছে সারাদিন টিভি দেখা।নাস্তা টা খেয়ে নিয়ে ফাইনাল ইয়ায় এর বই গুলো নিয়ে আসুন আমি একটু দেখি কি কি শেষ করেছেন এই কটা মাস….
হিয়া:আমি আজকে পড়বো না।আমি প্রতিদিন পড়ি বিশ্বাস না হলে বাবা কে ফোন করুন বাবা বলে দেবে….কিন্তু আমি আজকে পড়বো না….
উজান:শেট আপ….যা বলছি তা করুন….খেয়ে নিন তাড়াতাড়ি…..
….খাওয়া হলে উজান কয়েকটা বই নিয়ে হিয়াকে পড়াতে বসায়…..
হিয়া:(মনেমনে)পুচকু দেখলি তো তোর বাবা কেমন।তুই তোর বাবার মতো হবি না তো।আমাকে জ্বালাবি না তো…এতোদিন পর আজ দুজনে একসাথে…চলেই তো যাবে দুদিন পর…আজকের দিন টা কি না পড়ালে হতে না..
উজান:যাক এটা জেনে ভালো লাগলো।এ অবস্থা তেও আপনি আপনার পড়া টা ভালো করে চালিয়ে গেছেন…
হিয়া:শুনুন স্যার আমি না একটা মেয়ে।আর একটা মেয়ে কি কি পারে তার কোনো ধারনা নেই আপনার।আমিও দেখি দিবো একটা মেয়ে কিভাবে সন্তান জন্ম দিয়েও তার কিছুদিন পর এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ায় এ্যাটেন্ড করে..
উজান:সময় আসলে দেখা যাবে…এখন এটা আমাকে পড়ে দিন তো….
হিয়া:আপনি দু ঘন্টা ধরে আমাকে পড়াচ্ছেন আমি কিছু বলি নি।কিন্তু এখন এখন আর আমি পড়বো না….
…..হিয়া উঠে গিয়ে বারান্দায় চলে যায়।ঝড় কমলেও দমকা হাওয়া এখনো আছে….
উজান:হিয়া হিয়া….
হিয়া:আমি এখন এখানে কিছু ক্ষন বাতাস খাবো।একটু মাথা টা রিলাক্স করবো।তারপর যদি মন চায় তখন গিয়ে ওটা পড়া কম্পিলিট করে দিবো..
উজান:ঠিক আছে….
হিয়া:আচ্ছা একটা কথা বলি
উজান:বলুন?
হিয়া:মৃন ম্যাম তো বিয়ে করে নিলো।আপনি বিয়ে করবেন না..
উজান:কেনো করবো না।মৃন নেই তো কি হলো নিলীমা তো আছে…আর নিলীমা আমার ছোট বেলার বন্ধু আমাদের মাঝে কেমিস্ট্রি টাই অন্য রকম…(হিয়াকে রাগানোর জন্য)
……হঠাৎ উজানের কথা গুলো কোথায় যেনো গিয়ে হিয়ার খুব খারাপ লাগে।হিয়ার বুক ফেটে কান্না চলে আসে……
উজান:আর তাছাড়া আমাদের টিউলিপের সাথে ওদের একটা শেয়ার এর ব্যাপার আছে।আর আমি তো ভেবেছি বিয়ের পর আমি আর নিলীমা গিয়ে ইউ এস এ তেই সেটেল হয়ে নিবো।ওখানে একটা সুন্দর সংসার হবে আমাদের।আর দেখুন তো আজ ওয়েদার টাও কতো সুন্দর।এ রকম ওয়েদারে তো আপনাকে চাইলেও আমি জোরায় ধরতে ভালোবাসতে পারবো না আপনি তো এখন অন্য কারো।বিয়ের পর আমি নিলীমা এভাবে এক বারান্দায় একসাথে…
…….হিয়া এবার হাউমাউ করে কেদেঁ ফেলে….
উজান:হিয়া…….হিয়া আপনি কাঁদছেন।হিয়া প্লিজ।কি হলো।আমি কিছু করেছি।ব্যাথা….ব্যাথা হচ্ছে কোথাও।আমাকে বলুন কেনো কাঁদছেন আপনি।কষ্ট হচ্ছে। হিয়া….
…….হিয়া গিয়ে উজানের শার্টের কলার ধরে ওর কাছে টেনে এনে উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়…হিয়া উজানকে এমন ভাবে শক্ত করে জরিয়ে ধরে যেটায় হিয়ার নখের আঘাতে উজানের পিঠে আছড়ে ভরে যায়।উজানো নিজেকে সামলাতে না পেরে হিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে….মনে হয় যেনো বুকের এই রক্ত মাংস হাড় হাড্ডি গুলো না থাকলে দুজন দুজন কে নিজেদের কলিজায় ঢুকিয়ে নিতো….
…….বজ্রপাত এর হালকা শব্দ।হালকা বিদ্যুৎ এর ঝলকানি…সাথে রাতের দমকা হাওয়া।
“””খামোসিয়া আওয়াজ হে”””
“””তুম ছুননে তো আও কাভি”””
“””ছু কার তুমহে”””
“”””খিল যায়ে বো যারা ইনকো সামহালো আভি”””
অনেক অনেক অনেক ক্ষণ পর হিয়া উজান কে ছেড়ে দেয়…হিয়ার চোখ ভর্তি পানি।কি হলো উজান কিছু বুঝতে পারছে না।হিয়ায় চোখ গুলো লাল হয়ে ফুলে গেছে….
উজান:হিয়া আপনি কাঁদছেন কেনো আমার কষ্ট হচ্ছে..
…..হিয়া দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে গেট লক করে দিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে….উজান হিয়ার পেছন পেছন এসে…
উজান:হিয়া কি হলো হিয়া…হিয়া দরজা টা খুলুন না হিয়া।আপনি এভাবে কাঁদছেন কেনো…..হিয়া আমার কষ্ট হচ্ছে…..হিয়া খুলুন না দরজা টা… হিয়া….কি কি করেছি আমি।নিলীমার কথা বললাম বলে আপনার খারাপ লাগছে….হিয়া….আর হবে না হিয়া….আমি তো শুধু মজা করছিলাম….হিয়া….প্লিজ হিয়া আমার খুব কষ্ট হচ্ছে….হিয়া আপনার উজান স্যার এর খুব কষ্ট হচ্ছে….হিয়া প্লিজ একবার গেট টা খুলুন…ঠিক আছে গেট খুলতে হবে না…কিন্তু কান্না টা থামান..আপনি জানেন না আপনি কাঁদলে আমি সহ্য করতে পারি না…হিয়া আমার বুক টা শেষ হয়ে যাচ্ছে প্লিজ চুপ করুন….
……হিয়ার কান্নার আওয়াজ উজানের বুক টা কে ভিতর থেকে দুমড়েমুচড়ে দেয়..কান্নার প্রতিটা ধ্বনি যেনো উজানের বুকে একটা করে ছুড়ির আঘাতের সমান হানা দেয়।এদিকে হিয়া তখনো কেঁদেই চলছে।কষ্ট তো ওর ও কম হচ্ছে না….
37-FF: #মেডিকেল ক্যাম্প
Part:37
হিয়া:(মনেমনে)কেনো এলেন আপনি আবার।আমাকে এভাবে এসব বলে কষ্ট দিতে।আপনি জানেন আপনি যখন মৃন ম্যাম বা নিলীমা ম্যাম এর কথা বলেন তখন আমার কতোটা কষ্ট হয়।আমিতো ভালোই ছিলাম নিজের মতো সবটা সামলো নিয়ে ছিলাম।আপনি এসে আবার আমাকে দূর্বল করে দিলেন…..(কাঁদতেকাঁদতে)
উজান:আমি কিন্তু এবার দরজা ভাঙ্গবো হিয়া।বের হোন বলছি…..হিয়া আমার কষ্ট হচ্ছে আপনি এভাবে কেনো কাঁদছেন….?(রেগে গিয়ে)
……..হিয়া চোখ মুছে গেট খুলে বের হতে না হতে উজান হিয়াকে সপাটে টেনে ওর বুকে শক্ত করে জরায় নেয়…….
উজান:আপনি কি হ্যা।এমন কেউ করে।এভাবে এভাবে কেউ কাঁদে।আপনি জানেন আমার ভেতরে কি চলছিলো….আমি আপনাকে লাস্টবারের মতো বলে দিচ্ছি হিয়া আমার সামনে আর কখনো কোনোদিন আপনি এভাবে কাঁদবেন না…..(হিয়ার চোখ গুলো মুছতে মুছতে)……একটু আগে কাঁদতে শুরু করলেন তারপর নিজে আমাকে কাছে টেনে নিলেন,আমাকে জরিয়ে ধরে ভালোবাসলেন,তারপর হঠাৎ করে বাথরুমে এসে আবার…কি কি চলে সারাক্ষণ মনের মধ্যে আপনার….চুচুচুপ আবার কাদেঁ…
……কিছুক্ষণ ওভাবে হিয়াকে বুকে নিয়ে উজান দাড়িয়ে থাকে….হিয়া কিছুটা স্বাভাবিক হলে…
হিয়া:ছাদে যাবো…দম বন্ধ লাগছে….
উজান:এখন।এখন প্রায় ১০টা পার হচ্ছে হিয়া। এসময়,আর বৃষ্টি ও হচ্ছে হালকা….
হিয়া:ভালো লাগছে না এখানে থাকতে…
উজান:আচ্ছা ঠিক আছে।আমি নিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আপনাকে কথা দিতে হবে আপনি আর আজ কাঁদবেন না
হিয়া:হুমম(হালকা হাসি দিয়ে)
…..উজান হিয়া কে নিয়ে ছাদে যায় যদিও এমন বৃষ্টির সময় হিয়াকে নিয়ে এতো রাতে ছাদে আসার কোনো ইচ্ছে উজানের ছিলো না।কিন্তু হিয়াকে কিছুটা শান্ত করার জন্য উজান কাজ টা করে….
উজান:এখানে দাড়ান।আর না হলে ছাতা টা সাথে রাখুন…
হিয়া:আমার খুব ভিজতে ইচ্ছে করছে!
উজান:না হিয়া।এ অবস্থায় এসময় না
……হিয়া কি উজানের কথা শোনার মেয়ে।বৃষ্টি খুব জোরে শুরু হলে ও দৌড় দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করে…উজান ছাতা নিয়ে হিয়ার পিছুপিছু এলে হিয়া ছাতা টা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়..হিয়া ভিজতে ধরলে উজান পিছন থেকে এসে হিয়ার কোমাড় ধরে……..
“”””যারা ছি দিলমে দে জাগা তু””””
“””যারা ছা আপনা লে বানা”””
“”যারা ছা খাবো মে সাজা তু””””
“””যারা ছা এ্যাদো মে বাছা””””
…..কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির সাথে হালকা হালকা ছোট ছোট বরফ পড়তে শুরু করলে……
হিয়া:স্যার স্যার দেখুন শিল পড়ছে..
উজান:তাই তো
হিয়া:দাড়ান দাড়ান..
উজান:আরে কি করছেন কি ওগুলো কুড়াচ্ছেন কেনো?
হিয়া:আরে দাড়ান না……নিন….আরে ধরুন না..
উজান:কি হবে এগুলো দিয়ে..
হিয়া:শুনুন আমি অনেকের কাছে শুনেছি যদি বৃষ্টির সময় বরফ পড়ে আর কেউ যদি সেগুলো থেকে কিছু খেয়ে মনেমনে কিছু চায় তার সেই ইচ্ছে গুলো পূরন হয়..
উজান:আপনি একজন মেডিকাল স্টুডেন্ট হয়ে কিভাবে এসব বিলিভ করেন হিয়া
হিয়া:আমি করি….আমাদের গ্রামে যখন এমন হতো আমি বুলি আর আমাদের সম বয়সি যারা আছে সবাই এটাই করতাম..
উজান:যতোসব ভোগাস কথাবার্তা
হিয়া:আপনার এটা মানতে ইচ্ছে হলে মানুন…কিন্তু আমি তো খাচ্ছি দেখুন….
উজান:ঠিক আছে ওয়েট। আমাকে তো এমনিতেই আপনি সারাদিনে পাগল বানিয়েছেন আজ। এই পাগলামি টা বা বাদ যায় কেনো….আমি ট্রাই করে দেখি আপনার টোটকা ট্রিটমেন্ট এর পাশাপাশি এই টোটকা ট্রিক গুলো যদি কাজ করে…
হিয়া:হুম হুমম….আগে একটু পরিষ্কার করে নিন কুড়োলাম না ময়লা লেগে আছে হয়তো….
উজান:হুম….
হিয়া:এখন বলুন কি চাইলেন আপনি?
উজান:বলবো..?
হিয়া:হুম বলুন না শুনতেই তো চাচ্ছি?
উজান:আমি চাইলাম আমাদের,মানে ঔ আপনার আর আপনার হাসবেন্ড এর যেনো একটা ফুটফুটে মেয়ে পুচকু আসে..ঠিক আপনার মতো….
হিয়া:এটা কি হলো।আপনাকে আমি আপনার জন্য চাইতে বললাম আর আপনি আমার জন্য চাইলেন…আর আমি মেয়ে না আমি চাই আমার যেনো ওর বাবার মতো এতো কেয়ারিং একটা ছেলে হয়….
উজান:না মেয়ে হবে আপনি মিলিয়ে নিয়েন…
হিয়া:না ছেলে হবে আমি জানি আমাকে পুচকু বলেছে কানেকানে…
উজান:(হিয়ার কথা শুনে হেসে দেয়)আপনার সাথে পুচকু কানে কানেও কথা বলে….
হিয়া:(হিয়াও এবার হেসে ফেলে)….
উজান:তা আপনি কি চাইলেন
হিয়া:কেনো বলবো।ওটা তো সিকরেট…
উজান:এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।আপনি আমার টা শুনলেন অথচ আপনার টা বলবেন না বলছেন….
হিয়া:(উজানের নাক টা টান দিয়ে)বলবো না….
…….দুজনে আরো কিছুক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজে……
উজান:হিয়া অনেকক্ষণ হয়েছে এবার চলুন এরপর ছাদে কেউ এসে গেলে আপনারি সমস্যা হবে…
…..হিয়ার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়।হাটতে ধরলে পায়ে কি যেনো একটা কাচের মতো টুকরা আটকে গিয়ে পা টা কেটে যায়….
হিয়া:আআ
উজান:কি হলো আবার।
হিয়া:পায়ে কি যেনো একটা আআ
উজান:কোথায় দেখি আমাকে দেখতে দিন।এজন্যই বললাম হিয়া খালি পা না হতে….হলো তো এবার….
হিয়া:ভীষণ যন্ত্রনা করছে…
……উজান হিয়ার পা থেকে হালকা কাচের ঔ টুকরো টা বের করে হিয়াকে সাবধানে নিচে নিয়ে এসে সোফায় বসায় দেয়..দুজনের জামা কাপড় ভেজা।ঘর গুলো পানিতে কাদায় মিশে গেছে।উজানের খানিকটা মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এসব কান্ডে।যদি হিয়া কথা শুনতো তাও হতো।উজান এসে হিয়াকে ব্যান্ডেজ করে দেয় জলদি জলদি।
উজান:ব্যান্ডস করে দিছি আর রক্ত বের হবে না…..কি হলো আবার
হিয়া:ব্যাথা করছে….
উজান:যান গিয়ে আরো একবার বৃষ্টিতে ভিজে আসুন…..
হিয়া:🥰🥰
উজান:আর কিছুক্ষণ দেখুন ব্যাথা না কমলে খাওয়ার পর পেইন কিলার দিবো খেয়ে নিয়েন।এ অবস্থায় ব্যাথার ঔষধ বেশি না খাওয়াটাই ভালো….
হিয়া:ঠিক আছে।আমি জামা টা চেন্জ করে আসি
উজান:আপনাকে কোথাও যেতে হবে না
হিয়া:আমি ভেজা জামা কাপড় নিয়ে থাকবো নাকি
উজান:না…আমি আনছি আমি চেন্জ করে দিচ্ছি
হিয়া:না আমি পারবো
উজান:দুপুরে হাত কাটলেন এখন পা।তার পরো আপনার জোর যায় না তাই না।মা যদি এসে দেখে আমি থাকা শর্তেও আপনি এসব বাধিয়েছেন কোনো ধারনা আছে আপনার আমাকে কি কথা টা শুনতে হবে…..তাই আমি যা বলছি চুপচাপ সেটা শুনে চলুন….
…….
…..উজান গিয়ে জামা নিয়ে এসে হিয়াকে চেন্জ করাতে চাইলে হিয়া বারন করে……
হিয়া:আপনি কেনো এসব করছেন।ভুলে যাচ্ছেন আমি এখন আর আপনার নই আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে…তাই এসব করার কোনো রাইট আপনার নেই….(অভিমানে)
উজান:(মনেমনে)আমাদের ডিভোর্স হয়নি হিয়া।আমরা তো কেউ পেপারস এ সাইন করি নাই..মা বলতে বারন করেছে বলে আমি চুপ করে আছি কিন্তু বিশ্বাস করুন খুব বলতে ইচ্ছে করছে আপনাকে সবটা।বলতে ইচ্ছে করছে হিয়া আপনি এখনো আমারি আছেন…..
হিয়া:কি ভাবছেন।আপনি ও ঘরে যান আমি এখানে বসে বসে যেভাবে পারি চেন্জ করে নিচ্ছি….
উজান:আমি যাবো না……কেনো যাবো তখনযখন আমাকে বারান্দাতে ওভাবে কাছে টেনে নিয়ে জরায় ধরে ওসব করলেন তখন খেয়াল ছিলো না আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। আপনি এখন অন্য কারো ওয়াইফ আর এখন এসব বলে কি বোঝাতে চাইছেন আপনি…………আমি যতোক্ষন এখানে আছি তোতোক্ষন আপনি আমার কথা শুনতে বাধ্য….
……..উজান গিয়ে হিয়াকে জামা চেন্জ করে দিয়ে।মাথা টাথা ভালো করে মুছে দিয়ে হিয়াকে ওখানে ওভাবে বসে থাকতে বলে।তারপর নিজে ঘর গুলো মুছে ওয়াশরুমে গিয়ে চেন্জ করে আসে….
…..চ্যাটার্জী মেনশন…..
ঠাম্মি:কি করছে দুজন বলতো একা একা।জানিস জিনি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে দুজন কে। দেখবি কেমন ওদের ভাব হয়ে গেলো….
বাসবি:না মা আপনি যতোটা সহজ ভাবছেন ব্যাপারটা তোতোটাও সহজ না….
ঠাম্মি:ওমা সেকি কথা কেনো সহজ না।দেখবা দুজন কাছাকাছি আসলে কেউ আর কারো ওপর অভিমান করে থাকতে পারবে না একদম গলে যাবে…আর হিয়া ওকে তো দেখলাম কি সুন্দর উজানের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।মনেই হলো না ওদের মাঝে এতো বড়ো একটা ব্যাপার ঘটে গেছে….
বাসবি:সেটাই তো সমস্যা মা….রাজার চলে যাওয়াটা মেয়ে টা মেনে নিতে পারি নাই।রাজার দেওয়া আঘাত গুলো হিয়াকে একদম পাথর বানিয়ে দিছে তাই উজান ওর পাশে থাকলেও আর না থাকলেও কোনো কিছু ওকে তেমন ছুতে পারে না…
ঠাম্মি:কিন্তু বাসবি তাই বলে…
বাসবি:আমি সব জেনেই বলছি মা।ওরা একসাথে আছে তার জন্য তো এতো কিছু করা….কিন্তু
ঠাম্মি:কিন্তু কি?
বাসবি:হিয়া আমাকে একদিন বলেছিলো ওহ রাজা কে কখনো কোনোদিন ক্ষমা করবে না….ওহ আমাকে এটাও বলেছিলো যদি কখনো ব্যাপার টা সামনে আসে আর রাজা সবটা জানতে পেরে ওকে ফিরে পেতে চায় হিয়া কোনোদিন রাজার কাছে ফিরে যাবে না আর ওদের সন্তান কেও কখনো রাজার কাছে আনবে না……
ঠাম্মি:এসব তুমি আমাকে আগে বলোনি কেনো..
বাসবি:কি বলতাম মা এসব কি বলার জিনিস বলুন…তাই আজো একটা ভয় আমার মাঝে কাজ করে যেদিন রাজা আর হিয়া মুখোমুখি হবে সত্যের সেদিন না হিয়া পিছিয়ে আসে…..তাই তো আমি রাজা কে বারন করেছি হিয়াকে সবটা না জানাতে আগে হিয়ার মনের কষ্ট টা শান্ত করুক ও…..
“”‘হিয়াদের বাড়ি””””
উজান:কি করছেন আপনি।বই নিয়ে বসলেন যে
হিয়া:কোনো আপনি তো তখন বললেন এটা আমাকে পড়ে দিন….
উজান:হুমম ওসব পড়ে আগে এদিকে আসুন ভাত টা খেয়ে নিন…১১টা পার হচ্ছে
হিয়া:ঠিক আছে খাইয়ে দিন তাহলে দুপুরের মতো
উজান:এটাই লাস্ট হ্যা নেহাত হাত কেটেছেন বলে খাইয়ে দিচ্ছি না হলে আমি নিজের কাজ নিজে করা পছন্দ করি….
হিয়া:আর আপনাকে খাইয়ে দিতেও হবে না আপনি তো চলেই যাচ্ছেন ইউ এস এ আবার তাহলে..
উজান:হুমম….হা করুন….
হিয়া:এই ভাত গুলো গোল গোল করুন না নাড়ুর মতো করে…(বুম বুম বুম)
উজান:হোয়াট…গোল গোল নাড়ুর মতো…মানে আপনি…যেভাবে খাইয়ে দিচ্ছি ওভাবেই খান আমি ওসব হাত দিয়ে গোল গোল করতে পারবো না।
হিয়া:দেখলি পুচকু তুই তো আমাকে বললি গোল গোল করে ভাত খাবি তাই আমি বললাম আর লোকটাকে দেখ কেমন হিংসুটে কেমন করছে আমার সাথে…..
উজান:পুচকু তাই না….এখন সব কথা পুচকুর বলে করিয়ে নিচ্ছেন তো আমিও দেখে নিবো….নিন…
হিয়া:আর একটু গোল করুন হয়নি ভালো করে……….
উজান:এখন?
হিয়া:হ্যা এবার হয়েছে দিন…..
…….রাতে খাওয়া শেষ হলে উজান আবার হিয়াকে নিয়ে পড়তে বসে….হিয়াকে পাশে বসিয়ে হিয়ার হাতে নতুন একটা চ্যাপ্টার ধরিয়ে দিয়ে উজান বালিশে হেলান দিয়ে শুইয়ে পড়ে।বেচারা আজ অনেক কাজ করেছে তাই খুব ক্লান্ত চোখে হালকা হালকা ঘুম….
হিয়া:দেখলি তো পুচকু আবার উনি আর একটা নতুন পড়া ধরিয়ে দিলো….ধুরো ভালো লাগে না….কাকিমা আসুক কালকে দেখিস আমি কি কি বলি ওনার নামে….এতো রাতে ১২টা বাজছে কারো পড়তে ইচ্ছে করে।ভালো লাগে না।
উজান:কি হলো চুপ করে আছেন যে পড়ুন,আমার যেনো কানে আসে পড়া….(চোখ বন্ধ করে)
হিয়া:এটা কি পড়ার সময়।ঘুম পাচ্ছে আমার।
উজান:দুপুরে না আমাকে জরিয়ে ধরে কতোক্ষন ঘুমোলেন তাও এখন ঘুম পাচ্ছে। খালি বাহানা….
হিয়া:ঘাট হয়েছে ঘুমিয়েছি বলে….আপনি জেগে আছেন কেনো আপনি ঘুমোন না…
…..উজানের চোখটা হালকা লেগে আসলে…
হিয়া:আমাকে পড়তে বসিয়ে উনি ঘুমোচ্ছেন তো।আমিও ওনাকে ঘুম পাড়াচ্ছি…..
……..হিয়া আলমারি থেকে ওর স্কেলেটন টা বের করে আস্তে করে উজানের পাশের বালিশে শুইয়ে দেয়।আর উজানের হাত টা আস্তে করে স্কেলেটন টার উপর দিয়ে দেয়।যেটা দেখে মনে হয় উজান স্কেলেটন টাকে জরিয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে……
হিয়া:এবার আপনি বুঝবেন ড.চ্যাটার্জি হিয়াকে বিরক্ত করার পরিনতি……..ইসস পুচকু ভাবতো যখন উনি চোখ খুলে এটা দেখবে কেমন শক টাই না খাবে….
……….হিয়া গিয়ে উজানের পায়ের কাছে বই নিয়ে বসে পড়ে আর অপেক্ষায় থাকে কখন উজান চোখ খুলে ওটা দেখে লাফিয়ে উঠবে…….
হিয়া:ধুরো উঠছে না কেনো।একবারে রাতের ঘুম ঘুমিয়ে পড়লো নাকি….কি করি,কি করি হ্যা একটু হালকা করে নড়ে দেই কেমন….
……উজান তাও উঠে না দেখে হিয়ার চরম রাগ লাগে…..অনেকক্ষণ পর উজান একটু নড়ে চড়ে বসলে হিয়া ওর মোবাইল এর ভিডিও টা ওন করে রেডি হয়….
হিয়া:উঠুন উঠুন উঠুন আরে চোখ খোলে না কেনো….উঠুন….উঠুন…
……..উজান এবার চোখ টা খুলে স্কেলেটন টাকে ওর বুকের পাশে দেখে রিতিমতো চিৎকার দিয়ে উঠে পেছনে সরে যেতে ধরলে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়….আর হিয়া কাজ সারছে আজ ওর হাসি আজ কোথায় থামবে কে জানে…..
হিয়া:🤣🤣🤣🤣পাগল গুলোর মতো হাসতে থাকে…
উজান:(উঠে দাড়া হয়ে)এটা এটা আপনি আপনি ইচ্ছে করে করেছেন তাই না…আপনি জানেন আমি কি ভয় টা পেয়েছি…..আপনি হাসছেন…আবার…..হিয়া…..জানেন এটা কোনো হার্ট এর রোগির সাথে করলে কি হতো…..(হাপাতে হাপাতে)
হিয়া:আপনি তো আর হার্টের রোগি নন আপনি তো হার্টের ডক্টর……(হিয়ার হাসি কোথায় থামে)
উজান:আবার আপনি হাসছেন…খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে হিয়া কিন্তু বলে দিচ্ছি…..
হিয়া:আপনি আপনি আপনি কেমন ভয় পেয়ে বিছানা থেকে পড়ে গেলেন…..
উজান:এনাফ ইস এনাফ।আপনি হাসি থামাবেন নাকি আমি আপনাকে….
হিয়া:দাড়ান একটু দম নিয়ে নেই….ওহ হুম হাপায় গেলাম….আমি না সত্যি ভাবতে পারি নাই আপনি এতো টা ভয় পেয়ে যাবেন….
উজান:খুব হাসি পাচ্ছে না আপনার আমি পড়ে গেলাম আর আপনি হাসছেন একটু দয়ামায় কিচ্ছু নেই না আপনার….(দাতঁ খিচিয়ে)
হিয়া:(আবার হাসে)…..এটা এটা তে আমি সব টা রেকর্ড করে রেখেছি কালকে কাকিমা আসলে আমি সবাই কে দেখাবো।ভয়ে আপনার মুখ টা কেমন শুকিয়ে গেছে….
উজান:হিয়া না ওটা দিন দিন বলছি…
হিয়া:দিবো না নিতে পারলে নিন…
…….উজান হিয়াকে ধরতে গেলে হিয়া দৌড় দেয়…বিছানার চারপাশে দুজনে গোল গোল ঘুরে…সারাবাড়ি ঘুরেও উজান হিয়ার নাগাল পায় না….
উজান:হিয়া দিন বলছি ওটা….
হিয়া:দিবো না দিবো না
উজান:ওটা ডিলিট করুন
হিয়া:করবো না।আমার কাছ থেকে নিয়ে ডিলিট করে দেখান….
উজান:হিয়া
…..দুজনে ধরাধরি খেলা শুরু করে…..
“””””””হে উড়ি উড়ি”””
“””হে খাবো কি পাড়ি”””
“”হে আঙ্গআরি খিলি”””
“””হে ছাড়ি রাতে গায়ি”””
“””খামোখা ছের দূ তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””
“””খামোখা চুম্মলু তো ভি তো ত্যাংক হোতি হে”””
……উজান এবার হিয়াকে ধরতে গেলে নিচে থাকা কার্পেট এ পা লেগে দুজনে বিছানায় আবার ধপাস করে পড়ে যায়…..
উজান:হিয়া(এবার রেগে গিয়ে চিৎকার করে উঠে)…….অনেকক্ষন থেকে বলছি থামুন,আপনি কথা শুনছেন না।দিতে হবে না ওটা।কিন্তু এ অবস্থায় আর কখনো যেনো না দেখি এভাবে দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি করা…(রাগে)….নিচে নিচে পড়ে গেলে কি হতো…সব সময় মজা আপনার….
হিয়া:আমি কি করলাম আপনি তো আমার পিছন পিছন এলেন….
উজান:ভুল হয়েছে আপনার পিছনে এসে…এবার গিয়ে চুপচাপ ঘুম দিন…আমি আসছি…
…..উজান হিয়াকে চাদর গায়ে শুইয়ে দিয়ে হিয়ার পাশে বালিশে হেলান দিয়ে পা মেলে লেপটপ নিয়ে বসে…..
হিয়া:কি করছেন?
উজান:কাজ….
হিয়া:আর কতোক্ষন
উজান:সময় লাগবে….
……..কিছুক্ষণ পর….
হিয়া:হয়নি…?
উজান:না…
…..কিছুক্ষণ পর….
হিয়া:হলো..?
উজান:একটু….
উজান:কি হইছে ঘুম পাচ্ছে না…
হিয়া:ঘুম পেলে আপনাকে এভাবে ডাকাডাকি করি…
…….লেপটপ টা ওফ করে সাইড টেবিলে রেখে….
উজান:এখানে মাথা দিন…ঘুম পাড়ায় দিচ্ছি…
…..হিয়া ঘুরে গিয়ে উজানের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে…উজানের তখনো বালিশে হেলান দেয়া…
হিয়া:আপনি আবার কবে ফিরে যাচ্ছেন?
উজান:দেখি…
হিয়া:নিলীমা ম্যাম ও যাবে আপনার সাথে…
উজান:নিলীমা এখানে আসলো কোথা থেকে…
হিয়া:না তখন বললেন তো তাই জানতে ইচ্ছে করলো….
উজান:(হিয়ার মাথার চুল গুলো বুলাতে বুলাতে)…..একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে…
হিয়া:বলুন….
উজান:পুচকু হলে কি নাম রাখবেন পুচকুর কিছু ভেবেছেন….
হিয়া:হুমম ভেবেছি তো(মুখে এক বালতি হাসি)
উজান:তাই….কি নাম
হিয়া:কেনো বলবো আপনাকে।যখন ওকে নাম ধরে ডাকবো তখন শুনবেন….
উজান:আরে এমন করছেন কেনো বলুন না…আমাকে বললে কি হবে আমি তো চলেই যাচ্ছি না আমি তো আর কাউকে বলবো না
হিয়া:সত্যি তো?
উজান:ওকে যান আপনার পাক্কা প্রমিস…
হিয়া:ঠিক আছে বলছি…..আমি ঠিক করেছি যে যদি মেয়ে হয় তাহলে আমি নাম রাখবো যে
উজান:যে
হিয়া:যে পুচকুর নাম আমি রাখবো…রাখবো…রাখবো…
উজান:হুম বলুন…
হিয়া:পুচকুর নাম রাখবো (হিয়ান)
উজান:হিয়ান….!…..এটা আবার কেমন নাম
হিয়া:কেমন মানে(কপট রেগে গিয়ে)….কেমন হতে যাবে কেনো…
উজান:না একটা মানে থাকতে হবে না নামের..
হিয়া:(মনে মনে)….মানে জানি না তবে নাম টা আমি কিছু ভেবেই রেখেছি….হিয়া উজানের হিয়ান…
উজান:আর যদি ছেলে হয়….
হিয়া:ছেলে হলে…আচ্ছা আগে শুনুন…আমি ঠিক করেছি আমার চারটে পুচকু হবে…
উজান:চারটে!
হিয়া:আরে শুনুন না….দুটো মেয়ে দুটো ছেলে…একটা পুচকু হবে হিয়ান একটা হবে নীল একটা হবে আকাশ আর একটা হবে রোদ…..কেমন বলুন…?
উজান:সব গুলোই বেস্ট….তবে এতো গুলো সামলাতে পারবেন আপনি…নিজেই তো এখনো পুচকু আছেন….
হিয়া:আচ্ছা সামলানোর কি আছে বলুন তো…ভাবুন তো সব গুলো কেমন পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখবে…একটা পুচকু আপনার মাথার উপর একটা পুচকু আপনার পিঠে…একটা পুচকু আমার কোলে একটা পুচকু দোলনায়….উফফ আমার তো ভাবতেই কতো ভালো লাগছে…(হিয়ার খেয়াল নেই ওহ যে উজান কে মিথ্যে হাসবেন্ড এর গল্প শুনিয়েছিলো)
উজান:কতো শখ না আপনার….সত্যি…নিন এবার ঠিক হয়ে শোন তো দেখি….
হিয়া:নাম টা কিন্তু বেশ বলুন…
উজান:হুম সুন্দর….
……উজান হিয়াকে পাশে শুইয়ে দিয়ে পেছন থেকে হিয়াকে জরিয়ে ধরে আলতো করে হিয়ার পেটে হাত দিয়ে ঘুম দেয়…হিয়াও মানা করে না একটা দিন ই তো তারপর তো উজান চলে যাবে….
……ভোর বেলা তিনটে নাগাত মেট্রনের ফোন এলে হিয়া উজান দুজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়…..
উজান:মেট্রন এতো রাতে….
…..উজান হিয়া দুজনে উঠে বসে….
উজান:আপনি উঠছেন কেনো?আপনি শুয়ে পড়ুন…….হ্যালো মেট্রন বলুন।এতো রাতে কোনো সমস্যা?
মেট্রন:নাহ স্যার আসলে আমি আপনাকে এতো রাতে বিরক্ত করতে চাইনি…আমার পাশের বাসায় আমার জেঠুর কদিন আগে হার্টে কিছু সমস্যা হয়েছিলো হুট করে আবার ব্যাথা বাড়ছে বাদিকে…এ অবস্থায় আমরা কে কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না….তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে…
উজান:ঠিক আছে এতে এতো ফর্মালিটি করতে হবে না।আমি আপনাকে ফোন দিচ্ছি।একটু ধরুন..
…….উজান টিউলিপে ফোন করে ইমিডিয়েট একটা এ্যাম্বুলেন্স এর ব্যাবস্থা করে।আর রাতে যেই হার্টের ডক্টর ডিউটি তে আছে তাকে বলে ইমিডিয়ট চিঝকিৎসারর ব্যাবস্থা করে মেট্রন কে সবটা বুঝিয়ে বলে…
হিয়া:সবটা জেনো ভালো হয় বলুন…
উজান:টেনশন এর কিছু নেই…সব ভালো হবে…
হিয়া:তাই যেনো হয়…আচ্ছা বাহিরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে না..
উজান:হুম তাই তো মনে হচ্ছে…
……উজান পাশে শুয়ে পড়ে হিয়ার চুল গুলো নাড়তে নাড়তে…..
উজান:এখন শুইয়ে পড়ুন…
হিয়া:এই একটা কথা বলি।আমার না কেমন জানি খুদা খুদা পেয়েছে কিছু আছে ফ্রিজে…
উজান:খুব খিদে হয়েছে আপনার এখন তাই না। আমি দেখছি কি আনতে পারি…
…….উজান রান্না ঘরে গিয়ে কিছু না পেয়ে নুডুলস রান্না করে আনলে…..
হিয়া:আপনি আপনি আবার এতো রাতে এসব কেনো করতে গেলেন বিস্কিট বা অন্য কিছু ছিলো না?
উজান:ওগুলো খেলে কি পেট ভরতো।পুচকোর তো একটু পর আবার খিদে পেয়ে যেতো….
হিয়া:(হেসে দেয়)…..মনেমনে(সবসময় যদি আপনাকে এভাবে আমার পাশে পেতাম আমি)
……..উজান হিয়াকে নুডুলস খাইয়ে দিয়ে.রান্না ঘর পরিস্কার করে।সব গুছিয়ে হিয়ার পাশে গিয়ে শোয়…
উজান:এবার তো আমারো খিদে পেয়ে গেলো…
হিয়া:তা আমার সাথে খেলেন না কেনো?কতো করে বললাম।
উজান:আরে ঔ খিদে নাকি…
হিয়া:খিদে তো খিদেই হয় এটা ওটা আবার কি…
উজান:না মানে ঔ একটু…..আর কি…..চকলেট হলে…….
হিয়া:তাই না….
……উজান হিয়ার কাছে গিয়ে ওর কপালে,গালে,চোখে,কাধে ওর ঠোট ছুইয়ে দেয়….
উজান:হিয়া…
হিয়া:কি হলো?
উজান:আপনার গা টা কেমন জানি গরম লাগছে।দেখি দেখতে দিন….জ্বর আসছে তো মনে হচ্ছে…
হিয়া:আরে না…ওটা এমনি…পরে ঠিক হয়ে যাবে…
উজান:দেখুন হ্যা কালকে যদি আবার জ্বর টর আসে আমি কিন্তু খুব রাগ করবো আপনার সাথে….
হিয়া:আরে না ওসব কিছু হবে না…(হিয়া উজান কে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুজে দেয়….)……(মনেমনে)আসলো না হয় একটু জ্বর একদিন ই তো আপনাকে পেলাম এই দিন টা নিয়ে না হয় সারাজীবন আমি আর পুচকু কাটাবো……