❤️(40_41)❤️
40- FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:40
……সেদিন রাতে উজান ড্রিংক করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে…এদিকে বাসবি হিয়া কে কিছু টা ঠান্ডা করে কোনোমতে ঘুম পাড়িয়ে দেয়….পরের দিন সকালেই উজান প্রেস মিট এর ব্যবস্থা করলে টিউলিপে সকল রিপোর্টার জমা হয়।এমন একটা খবর টিউলিপে আজ রমরমা আবহাওয়া।……..
রিপোর্টার:এতো বড়ো একটা সত্যি তাহলে আপনি এতোদিন কেনো গোপন করে রাখলেন….
উজান:এটা ঠিক গোপন না।কারন এর আগেও টিউলিপে আমাকে আর হিয়াকে নিয়া নানাভাবে নানা কথা আলোচনা হয়।সবাই এটাই ভাবতো আমি হিয়া কে ফেবার করি।কিন্তু এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারনা।হিয়া এই টিউলিপে যা অর্জন করেছে সেটা ওহ ওর নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছে।এখানে আমার বা অন্য কারো হাত নেই।কারন টিউলিপের কলেজ সেকশনে সব কিছু কতোটা স্ট্রিক্টলি দেখা হয় সেটা সবারি জানা কমবেশি….
রিপোর্টার:তাহলে আজ আপনার কি মনে হলো আপনি কি মনে করে আজ সবটা সবাইকে জানাবেন বলে ডিসিশন নিলেন….আর শুনেছি মিস হিয়া মিএ উনি নাকি প্র্যাগনেন্ট তাহলে কি এটাই সেই কারন….
উজান:ফাস্ট ওফ ওল উনি এখন আর মিস হিয়া মিএ নন উনি এখন মিসেস হিয়া চ্যাটার্জী….আমার হিয়ার মাঝে কিছু পার্সোনাল সমস্যার কারনে আমরা এতোদিন সবটা জানায়নি বাট আমার মনে হলো এক্ষনি সবাইকে সবটা জানানো দরকার….
রিপোটার:আপনাদের বিয়ের কতোদিন হলো….
…………উজান কে রিপোটার রা নানা রকম প্রশ্ন করে আর উজান তাদের সব গুলো প্রশ্ন খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে উওর দেয়…..আর এদিকে নিলীমার যেন সবটা আজ থমকে দাড়ায়….ওহ পাথরের মতো এক জায়গায় দাড়িয়ে সবটা শোনে….বিহান এসে নিলীমার কানের কাছে মুখ টা এগিয়ে…..
বিহান:যাহ কি খেললো না দাদাভাই!সত্যি শেষ বোলে খেলা টা কেমন ঘুরিয়ে দিলো…..তা নিলীমা তুমিও কি আগে থেকে সবটা জানতে….ওহ ধ্যাত আমিও কি বোকা বলোতো জানলে কি আর তুমি….Anyway তা দাদাভাই যখন করেই নিলো বিয়েটা আবার দুদিন পর বাবা ও হচ্ছে আমারো না কেমন জানি বিয়ে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে তা এবার যদি তুমি মত দেও…..
…….নিলীমা বিহানের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে ওঠে……
বিহান:আরে এতো রেগে যাচ্ছো কেনো আমি তো জাস্ট বললাম…..
…..নিলীমা রাগ হয়ে ওখান থেকে চলে যায়….
বিহান:(মনেমনে)পারলে না তো কিছু করতে নিলীমা……….খেলাটা দাদাভাই খেললেও ম্যাচ টা কিন্তু আমিই জিতলাম…….এমনি এমনি কি মম এতোদিন তোমার উপর এতো ইনভেস্ট করেছিলো ডক্টর উজান চ্যাটার্জি……….
……..এদিকে প্রেসমিট এর লাইভ টেলিকাস্ট টিভিতে চলছে।বুলি বিকাশবাবু ইচ্ছে করে জোরে সাউন্ড দিয়ে দেয়।হিয়া এক পাশে দাড়িয়ে কিছুটা শোনার পর টেবিলের উপর থেকে রিমোট টা নিয়ে টাস করে টিভি টা ওফ করে দেয়…….
হিয়া:সব নাটক😡😡
……….পরের দিন হিয়া টিউলিপে ওর এ্যাসাইন্টমেন্ট গুলো জমা দিতে গেলে সবাই হিয়াকে একটু অন্য চোখে দেখে।কিছুটা ভয় কিছুটা সম্মান দেখা যায় সবার মধ্যে।হিয়া মেডিসিন কিনতে গেলে ওকে লাইনে দাঁড়াতে হয় না সবাই সাইড দিয়ে দেয় ওকে।আর এসব জিনিস হিয়াকে খুব অস্বস্তি তে ফেলে……
মেট্রন:কি মিসেস হিয়া চ্যাটার্জী আসার সময় হলো আজ
হিয়া:মিরাদী তুমিও প্লিজ…..এভাবে আমাকে বলো না।তুমি তো সবটা প্রথম থেকেই জানো আর এখন উজান স্যার আর আমার সম্পর্কটাও কেমন জানি হয়ে আছে সেটাও তুমি জানো তাই তুমি প্লিজ সবার মতো আমাকে
মেট্রন:ঠিক আছে হিয়া।বলবো না…তবে কিন্তু এখনো উজান স্যার এটা কিন্তু ঠিক না…উজান বলতে শিখো…….
হিয়া:ধুরো কি যে বলো না।আসছি আমি………
এদিকে উজান হিয়াকে মানানোর জন্য হিয়ার বাড়িতে এসে বুলির সাথে মিলে হিয়ার ঘর টা নানা ধরনের ফুল দিয়ে সাজিয়ে নেয়।সাথে বিছানার উপর অনেক গুলো ছোট বড় নানা ধরনের টেডি বিয়ার,টয়েস দিয়ে ভর্তি।নতুন পর্দা।দেয়ালে নানা সোপিস……..আর বিছানার উপর একটা বড়ো গিফটের প্যাকেট ওটার উপর একটা লেটার যেখানে খুব বড়ো করে লেখা Sorry…..
উজান:কি বুলি কেমন হলো।পছন্দ হবে হিয়ার?
বুলি:পছন্দ হবে না মানে।আমারি তো মন ছুয়ে গেলো………… ইসস তুমি কতো রোমান্টিক আর পাবলো টাকে দেখো সব জেনো বলে বলে করাতে হয়….(এটা বলে বুলি ওর জিভে কামড় দেয়….)
উজান:তাই তা হলে তো পাবলো কে বলতে হয়
বুলি:ধুরো তুমিও না
উজান:আমার তবুও মনে হয় না। হিয়া কে এতো সহজে মানানো যাবে………দেখি তাও কিছু তো একটা দিয়ে শুরু করতে হবে।এভাবেই করি….
…..এদিকে হিয়া এলে উজান বুলির রুমে লুকিয়ে পড়ে….হিয়া এসে ওর রুমে ঢুকতেই খানিকটা অবাক হয়ে যায়……
হিয়া:বুলি একটু পানি এনে দে না…বুলি…(দাড়িয়ে যায়)…..এটা আমার রুম……….এভাবে সাজালো কে….এতো ফুল এতো টেডি কে আনলো…বাবা…! না না বাবার এতো টাকা কোথায় এখন………..তাহলে কে বুলি…..(হিয়া একটা টেডি হাতে নিয়ে)….না বুলি এসব কেনো করতে যাবে……(হঠাৎ চোখ পড়ে বিছানার উপর ঔ গিফটাতে….হিয়া ওটা হাতে নিয়ে চিঠি টা খোলে……)……..কি এটা?……কাগজ….কি লেখা আছে এটায়…….সরি………সরি কাকে…….আমাকে…..কে..
….উজান পিছন থেকে হিয়ার কাছে এসে…….
উজান:সরি হিয়া……
হিয়া:(হিয়া পিছন ফিরে)
উজান:I am sorry হিয়া…
হিয়া:ওহ আপনি….তাহলে এসব আপনি করেছেন…এসব টেডি টয়েস আপনি এনেছেন..?
উজান:হ্যা মানে…
হিয়া:তা এসব দিয়ে কি আমাকে আর পুচকু কে আপনি কিনতে চাচ্ছেন নাকি?
উজান:হিয়া😡😡(রেগে গিয়ে)
হিয়া:একদম চিৎকার করবেন না।আমার উপর চিৎকার করার রাইট আপনার নেই…..
উজান:হিয়া তুমি জানো ইদানীং তোমার কথা গুলো এই খান টায় গিয়ে লাগে আমার…(বুকের বা দিকে হাত দিয়ে)
হিয়া:সেটা আপনার সমস্যা…..আর আপনি কোন হিসাবে ভাবলেন এসব এসব করে আপনি আমার বিশ্বাস টা আবার ফিরে পাবেন।আমার ভরসা আমার ভালোবাসা আবার ফিরে আসবে….কোনোদিন না….
উজান:(হিয়ার হাত ধরে)…..হিয়া প্লিজ হিয়া কি করতে বলো তুমি আমাকে কি।তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।বলো না বলো কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে কি করলে বলো?
হিয়া:(উজানের হাত ছেড়ে দিয়ে)……কিছু কিছু জিনিসের ক্ষমা হয় না ডক্টর উজান চ্যাটার্জি
উজান:হিয়া
হিয়া:বুলি বুলি বুলি…(চিৎকার করে)
বুলি:হ্যা দিদি বল….(ভয়ে)
হিয়া:আমি স্নানে যাচ্ছি।এসে যেনো আমি আর এগুলো না দেখি….
বুলি:ঠিক আছে……..
…….পরের দিন তৃনা ম্যাম এর এ্যাপোয়ন্টমেন্ট হিয়ার।আজ হিয়া জানবে ওর মেয়ে হবে নাকি ছেলে।বাসবি হিয়া কে নিয়ে টিউলিপে আসে।এদিকে উজান তৃনা কে আগে থেকে বলে রাখে সবটা।আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার সময় যেনো ওহ উজান কে ডেকে নেয়……
তৃনা:কি হিয়া ভয় হচ্ছে
হিয়া:একটু।ভয় না কিন্তু মনের ভেতর কেমন জানো একটা হচ্ছে
তৃনা:তা তুমি কি চাও।উজানের মতো রাগি ছেলে না তোমার মতো মিষ্টি একটা মেয়ে…হুম?
হিয়া:(হিয়া কিছু বলতে পারে না উজানের সাথে যাই হোক ঘরের যা ব্যাপার সেটা তো মানুষের সামনে বলার জিনিস না)…….যা হবে আমি তাতেই খুশি….
উজান:(পিছন থেকে এসে)…..কিন্তু আমি চাই তোমার মতো একাট মেয়ে যে সারাক্ষণ তোমার মতো লাফিয়ে বের হবে🥰🥰
হিয়া:আপনি!
তৃনা:আমি ওকে ডেকেছিলাম।ওর ও তো জানতে হবে কে আসছে….
……হিয়া ভেতরে ভেতরে ক্ষেপে যায় কিন্তু কিছু বলতে পারে না……
তৃনা:দেখি হিয়া এদিকে শুইয়ে পড়ো তো মা…..উজান তুমিও আসো…….
উজান:হুম…..
…….এদিকে তৃনা রিপোর্ট নিয়ে আসে।হিয়ারা বসে তৃনার অপেক্ষা তেই ছিলো…..
তৃনা:তাহলে উজানের চাওয়া টাই মিললো শেষ পর্যন্ত।তোমার চাওয়ায় জোর আছে বলতে হবে উজান…..
উজান:(খুশিতে)তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমার আর হিয়ার
তৃনা:হুম এই নেও রিপোর্ট।তোমাদের কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে আসছে।কি হিয়া খুশি তো।
হিয়া:খুব খুব খুব খুশি…..(হিয়া উজানের হাত ধরে লাফিয়ে উঠে ওর খেয়ালি থাকে না উজানের সাথে ও নিজে রাগ করে আছে…)…….আমি তো সত্যি ভাবতেই পারি নাই ওর চাওয়া টা এভাবে মিলে যাবে…
উজান:আমি আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না ম্যাম আমি কতোটা খুশি…
তৃনা:আচ্ছা যেই মেডিসিন গুলো দিয়েছি ওগুলোই কন্ট্রিনিউ করো।আর মাস খানেক পর আরো একবার চেক আপ করে নিও…আমি তাহলে আসি….
উজান:ঠিক আছে ম্যাম।আর আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংকস
তৃনা:হুম…
…..তৃনা চলে গেলে হিয়ার হুশ ফিরে।ওর চোখ পড়ে ওহ এখনো উজানের হাত ধরে আছে। হিয়া উজানের হাত ছেড়ে দিয়ে….
হিয়া:মা চলো….
বাসবি:হ্যা মা চল
উজান:মা চলো আমি তোমাদের কে ড্রপ করে দিয়ে আসি…..
হিয়া:আমরা একাই যেতে পারবো উজান স্যার
বাসবি:হিয়া মা দেখ বাহিরের আবহাওয়া টা আজ কেমন জানি।যাক না রাজা পৌঁছে দিয়ে না হয় চলে আসবে
হিয়া:না মা।তোমার ওনার সাথে যেতে ইচ্ছে করলে তুমি যাও।আমি একা একা চলে যেতে পারবো
বাসবি:হিয়া…ঠিক আছে চল রাজা কে যেতে হবে না আমি আর তুই যাচ্ছি চল……রাজা আসি….
……পরেরদিন…..
…..বাহিরে ভীষন বৃষ্টি।রাত প্রায় ১১টা।উজানের কালকে থেকে আবার টিউলিপে জয়নিং।উজান ওর গেস্টরুমে একা একা।আজ সারা দিন হিয়ার খোজঁ নেই।বাসবিও ব্যাস্ত তাই উজানের ফোন ধরার সময় ওর ছিলো না।এভাবে একা একা বেশিক্ষণ উজান আর থাকতে পারে না।হিয়া কে আর পুচকু কে ওর খুব মনে পড়ে।তাই হিয়ার হাজার বারন থাকা স্বত্বেও উজান এতো রাতে হিয়াদের বাড়ি যায়…….
হিয়া:এতো রাতে আবার কে এলো।বুলি……মা………কেউ নেই নাকি……বুলি……..ধ্যাত এ অবস্থায় এক বার শুলে আর উঠতে ইচ্ছে করে নাকি…..আসছি আসছি…..ভালো লাগে না…..
…….হিয়া গেট খুলে দিয়ে….
হিয়া:আপনি এসময়…..
উজান:হিয়া আমি আর পারছি না।আমার তোমাকে দরকার।প্লিজ হিয়া
হিয়া:মা কে ডাকবো কিছু বলবেন আপনি মাকে
উজান:না আমি মার কাছে না আমি তোমার কাছে এসেছি হিয়া আজ।তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না হিয়া
হিয়া:তাই……আর কিছু বলবেন আপনি…বলবেন না তো….
……হিয়া গেট টা লাগাতে গেলে উজান আটকে দেয়….
উজান:হিয়া না….
হিয়া:আপনি চলে যান স্যার….
উজান:আমি কোথাও যাবো না।তোমাকে আর পুচকু কে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না….
হিয়া:তাই নাকি….যে মানুষ একবার আমাকে আর পুচকু কে ছেড়ে যেতে পারে সে যে আবার এই একই কাজ করবে না তার নিশ্চয়তা দিতে পারবেন আপনি….
উজান:হিয়া…(উজানের এবার চোখ দিয়ে দু এক ফোটা পানি পড়ে)
হিয়া:আপনি চলে যান প্লিজ।না হলে আমি গেট লাগায় দিতে বাধ্য হবো
উজান:আমি যাবো না।আমি এখানেই দাড়িয়ে থাকবো সারারাত….
হিয়া:আপনার ইচ্ছে……এই বৃষ্টি তে যদি আপনার দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হয় তো থাকেন আপনি দাড়িয়ে।আমার সত্যি কিছু করার নেই……
উজান:হিয়া না হিয়া…তুমি আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারো না হিয়া….হিয়া
…….হিয়া গেট লাগিয়ে দেয়।বাসবি পিছনে দাড়িয়ে সবটা দেখছিলো….
বাসবি:এটা তুমি ঠিক করলে না হিয়া।রাজা এতো বার তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে তুমি তারপরো আমার ছেলে টাকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেনো হিয়া ….এটা তুমি ঠিক করছো না
…….বাসবি কাঁদতে কাঁদতে ওর রুমে চলে যায়…..এদিকে রাত দুটো…উজান বাহিরে গাড়ির সামনে দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে…..হিয়ার চোখেও ঘুম নেই কিভাবে ঘুমোবে উজানের চিন্তা তো ওকে ঘিরে ধরেছে।হিয়া একটু পর পর জানালা দিয়ে উজান কে দেখে দেখে যায়….
হিয়া:কি করছে উনি।এই বৃষ্টিতে কেনো এভাবে ভিজছে।…….আপনি আর কতো আমাকে এভাবে কষ্ট দিবেন উজান স্যার……
………হিয়া কোনো কুল না পেয়ে উজান কে ফোন করে…….
হিয়া:স্যার প্লিজ আপনি চলে যান এখান থেকে
উজান:আমি তো তোমাকে বলছি যতোক্ষন না তুমি আমাকে ক্ষমা করবে আমি যাবো না
হিয়া:আমাকে ভালোবাসেন।যদি বেসে থাকেন তাহলে আপনি চলে যান
উজান:আমি তোমাকে ভালোবাসি কি বাসি না তুমি খুব ভালো করে জানো হিয়া তাই এসব বলে আমাকে তুমি আজ টিউলিপে পাঠাতে পারবে না
হিয়া:ঠিক আছে থাকুন তা হলে দাড়িয়ে
………রাত ৩টে…..উজান এখনো দাড়িয়ে আছে….হিয়া উজান কে আর এভাবে দেখতে না পেয়ে নিচে নেমে আসে………..রাস্তার মাঝে বৃষ্টিতে দুজন।হিয়ার এক হাতে ছাতা…….
হিয়া:আচ্ছা একটা কথা বলবেন আপনি আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে কি পান?
উজান:আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি না তুমি হিয়া
হিয়া:আপনি ফিরে যান টিউলিপে।আমাদের মাঝে আর কোনোকিছু সম্ভব না উজান স্যার
উজান:কি সম্ভব না হিয়া।তুমি চাইলেই সব টা সম্ভব
হিয়া:আপনি তাহলে যাবেন না
উজান:না……
……….হিয়া ওর ছাতা টা ফেলে দিয়ে উজানের সাথে ভিজতে শুরু করে…….
উজান:তুমি এটা কি করছো।তুমি ভিতরে যাও হিয়া
হিয়া:আমিও ভিজবো
উজান:হিয়া এটা ছেলেমানুষি করার সময় না।তুমি এখন আর একা নও কিন্তু আমাদের সন্তানো কিন্তু এখন তোমার মাঝে বড়ো হচ্ছে এটা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে হিয়া।
হিয়া:আমি এ রকম ই
উজান:হিয়া….
…….উজান ছাতা টা তুলে হিয়াকে ধরে…..
উজান:অনেক হয়েছে তোমার।এতো কিসের জেদ।আমি ভিজবো বৃষ্টিতে আমার জ্বর আসবে তোমার কি।কাছে তো আসতে দেও না দূরে থাকলেও তোমার সমস্যা।কি চাও তুমি
হিয়া:আপাতত এটাই চাই আপনি টিউলিপে ফিরে যান
উজান:যাবো না..
হিয়া:ঠিক আছে আমিও দাড়িয়ে থাকবো আপনার সাথে
…………..বিকাশবাবু এদের পাগলামো দেখে আর উপরে থাকতে পারলো না।রেগে মেগে নিচে নেমে এসে….
বিকাশবাবু:হিয়া
হিয়া:বাবা তুমি
বিকাশবাবু:এসব কি ছেলেমানুষি শুরু করছিস তোরা দুজন
উজান:বাবা আমি
বিকাশবাবু:আমি আর তোমাদের একটা কথা শুনতে চাই না।রাত কটা বাজে খেয়াল আছে তোমাদের।আমি কিন্তু বলে দিলাম তোমাদের দুজনের এই মান অভিমানের মাঝে যদি আমার নাতনি টার কিছু হয় আমি কিন্তু তোমাদের দুজনের কাউকে ক্ষমা করবো না
হিয়া:বাবা আমার কথা টা তো শোনো
বিকাশবাবু:আর কোনো কথা না দুজনে এবার ভিতরে গিয়ে জামা কাপড় পাল্টে নে।আয় জলদি…..কি হলো দাড়িয়ে আছিস কেনো…..উজান…..
উজান:আসছি বাবা……
হিয়া:হিয়া ক্ষেপে গিয়ে ভিতরে চলে যায়…..
…………এদিকে দু ঘন্টা টানা বৃষ্টিতে ভিজে উজানের শরীর টা খারাপ হতে শুরু করে…..উজান হিয়ার রুমে শুয়ে পড়লেও হিয়া আর আজ ওর রুমে যায় না….
বুলি:কি রে তুই এখানে এলি কেনো
হিয়া:শুবো
বুলি:তোর মনে হয় এখানে তিনজনের জায়গা হবে
হিয়া:তা আমি কোথায় ঘুমোবো
বুলি:তোর রুম নাই।যা তো দিদি
হিয়া:এরকম করছিস কেনো
বুলি:বিরক্ত করিস না তো ঘুম পাচ্ছে খুব…..(বুলি ইচ্ছে করে এমনটা করে…..)
হিয়া:ধ্যাত ভালো লাগে না…..আমি কোথায় শুবো এখন….
………হিয়া কোনো জায়গা না পেয়ে উজানের পাশে গিয়ে এক সাইডে আস্তে করে শুইয়ে পড়ে….
হিয়া:সব বাবার জন্য।কি দরকার ছিলো ওনাকে ভিতরে আসতে বলার….লোকটার কেনো জানি কোনো সাড়া শব্দ নেই ঘুমিয়ে পড়লো নাকি….
(হিয়া একবার পিছন ফেরে উজান কে দেখে নেয়..)
…..ভোর ছটা…উজানের শরীর টা হালকা খারাপ করলে ওহ উঠে পড়ে….এদিকে উজানের হালকা কাশের শব্দ এ হিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়..
হিয়া:কে কাশছে।বাবা…..(হিয়ার মনে পড়ে কালকে রাতে উজান আর ও বৃষ্টিতে ভিজেছিলো….)…….উজান স্যার না তো….(হিয়া পাশ ফিরে উজান কে খোজেঁ কিন্তু পায় না)……স্যার তো নেই……(হিয়া উঠে উজান কে খোজেঁ উজান বারান্দায়….)
হিয়া:উজান স্যার….স্যার….আপনি এখানে…..এভাবে কাশছেন কেনো?
উজান:তুমি উঠলে কেনো আবার হিয়া?যাও গিয়ে শুইয়ে পড়ো
হিয়া:আপনার শরীর টা খারাপ লাগছে?
উজান:না তুমি যাও…হিয়া…কথা শোনো আমার..তোমার ঘুম মানে পুচকুর ও ঘুম…যাও
হিয়া:আমার আর ঘুম ধরবে না।আপনি দাড়ান আমি আসছি
………হিয়া গিয়ে উজানের জন্য লং দিয়ে চা করে আনে……
হিয়া:এই যে নিন
উজান:কি
হিয়া:লং দিয়ে একটু চা করে আনলাম কাশ টা কমবে…মাথা টাও হালকা লাগবে
উজান:এতো যখন আমাকে ভালোবাসো তাহলে কেনো দূরে রাখো হিয়া বলতে পারবা
হিয়া:আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে আমি তার জন্য এটাই করতাম
উজান:তাই…তুমি মিথ্যে কথা বলতে পারো না হিয়া
হিয়া:খেয়ে নিন….আমি আসছি
…….হিয়া যেতে ধরলে উজান ওকে টেনে নিয়ে গ্রিল এর কাছে চেপে ধরে….
উজান:তুমি আমাকে শাস্তি দিচ্ছো তো হিয়া।ঠিক আছে এভাবে প্রতিদিন শেষ হওয়ার চাইতে আমি আজ একবারে নিজেকে শেষ করে দিবো….
……..উজান একাট ইন্জেকশন বের করে হিয়াকে ভিডিও কল করে……..
হিয়া:আপনি এসময় কিসের জন্য স্যার…….স্যার আপনি ড্রিংক করেছেন!!
উজান:তোমার কি তাতে হিয়া….এটাই তো তুমি চাও আমি কষ্ট পাই….
হিয়া:উজান স্যার আমি
উজান:কি হিয়া….??আজ কতোবার তোমাকে দেখতে গেলাম ফিরিয়ে দিলে….আমার বাচ্চা তাকে তো অন্তত দেখতে দিতে পারতে…..তাই আমিও ঠিক করেছি এভাবে একটু একটু করে তোমার দেওয়া কষ্ট পেয়ে নিজেকে শেষ করার চাইতে আমি একবারে আজ নিজেকে শেষ করে দিবো…(উজান সিরিন্জ আর ইনজেকশন টা হিয়ার সামনে ধরে…..)
হিয়া:(হিয়া ভয়ে কাঁপতে শুরু করে…)…..উজান…না একদম না….
উজান:দেখো হিয়া তুমি আমাকে শেষ করে দিতে চাইছিলে।আজ তাই করছি আমি
হিয়া:না উজান তুমি এটা করতে পারো না….ওটা ফেলো বলছি…মা মা….উজান না….(হিয়া কেঁদে ফেলে)……না উজান আমি আর এমন করবো না প্লিজ তুমি ওটা ফেলো
উজান:তুমি মিথ্যে বলছো….তুমি আবার আমাকে ফিরায় দিবে আমি জানি….(উজান সিরিন্জ পুশ করতে গেলে…)
হিয়া:তোমাকে আমাদের সন্তানের দিব্যি উজান
উজান:(আর ওটা ইনজেক্ট করতে পারে না)…..এটা তুমি কি করলে হিয়া….পুচকুর দিব্যি দিয়ে দিলে..আমি এখন কি করবো…পারবো না তো তোমার দেওয়া কষ্ট গুলো সহ্য করতে আর….
……উজান নিচে কিসের সাথে একটা হোচট খেয়ে পড়ে যায় আর নিচে থাকা কাচের টুকরো গুলো লেগে উজানের হাত টা অনেক কেটে যায় আর ভীষন রক্ত বের হয়….
হিয়া:কি হলো…..উজান স্যার….স্যার….
উজান:(ফোন হাতে নিয়ে)……দেখলে তো কিভাবে নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে গেলাম…আর তুমি কি না আমাকে দিব্যি দিয়ে দিলে….
হিয়া:রক্ত….রক্ত কিসের…উজান…(হিয়া এবার হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে..)……আমার খুব ভয় করছে উজান…..
উজান:আরে তুমি কাঁদছো কেনো।তোমাকে বলেছি না তুমি কাঁদলে আমার বুকের ভেতর টা শেষ হয়ে যায়……
হিয়া:উজান……মা মা…..আমি আসছি আমি এক্ষুনি আসছি…..তুমি প্লিজ এর মধ্যে আর কিছু করো না প্লিজ…..আমি আসছি…..
…….হিয়া কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়ে….
বুলি:তুই কোথায় যাচ্ছিস দিদি এতো রাতে।দিদি শোন না….দিদি…..
হিয়া:আমি টিউলিপে যাচ্ছি বুলি এসে সব বলছি
বুলি:কিন্তু তুই কাঁদছিস কেনো…দিদি বলে যা না…দিদি….
…….হিয়া অনেক কষ্টে একটা অটো মেনেজ করে টিউলিপে পৌঁছে……
……উজানের গেস্ট রুম।উজান এতোক্ষনে অনেকটা সচেতন হয়।উজান বিছানার নিচে হেলান দিয়ে আছে। ওর হাত দিয়ে তখনো ব্ল্যাড বের হচ্ছে।হিয়া এসে উজানের পাশে গিয়ে নিচে বসে পড়ে….
হিয়া:উজান….এসব কি হ্যা
উজান:হিয়া তুমি এখানে
হিয়া:না এসে পারলাম কি
উজান:এটা তুমি ঠিক করো নাই।যদি পুচকুর কিছু হয়ে যেতো কেনো আসলে তুমি…(রাগ হয় কিছুটা)
হিয়া:উজান…..দেখি রক্ত তো…কেনো করো এমন কি পাও আমাকে কষ্ট দিয়ে এতো তুমি….
……হিয়া তাড়াতাড়ি গিয়ে ফাস্ট এইড বক্স এনে উজানের ড্রেসিং করাতে চাইলে…..
উজান:আমি করবো না ড্রেসিং….বের হোক রক্ত তুমি তো এটাই চেয়েছিলে তাই না….
হিয়া:না উজান….
উজান:তুমি তো জানতে হিয়া আমি ছোটো থেকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত ছিলাম।আমি আমার মা কে পাইনি ছোট তে…বাবা তো থেকেও ছিলো না….আর আজ তুমি তুমিও তো আমাকে আমার বাচ্চা আমার ওয়াইফ সব থেকে বঞ্চিত করছো…..আসলে আমার কপাল টাই না খারাও জানো তো…কারো ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্যে নেই….
……..হিয়া উজান দুজনে কাঁদতে শুরু করে….উজান নিষেধ করলেও হিয়া কিছু না শুনে ওর হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়…..
উজান:কেনো এলে আজ…আবার তো কালকে সেই ফিরিয়ে দিবে….
হিয়া:আর হবে না
উজান:বিশ্বাস করি না তোমাকে
হিয়া:তোমার ইচ্ছা সেটা
উজান:এখনো জেদ দেখাবা
হিয়া:হ্যা দেখাবো
……উজান হিয়াকে ওর কাছে টেনে এনে….
উজান:আর কখনো এমন করবা না তো
হিয়া:করবো
উজান:তাহলে আমিও আবার এমন করবো
হিয়া:তোমার ইচ্ছে
উজান:তাই
…….উজান হিয়াকে জরিয়ে নিয়ে ওর ঠোঁটেঠোঁট ডুবিয়ে দেয়….
“””””তুঝে দেখ কারহি আখে হো জাতি নাম”””
“””সানাম তেরি কাছাম ও হো সানাম তেরি কাছাম””””
41-FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:41
……সেদিন রাতে বিছানার নিচে বসেই হিয়া উজানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে…..পরের দিন সকালে উজানের ফোন এলে দুজনের ই ঘুম ভেঙ্গে যায়……উজান ফোন রিসিভ করলে হিয়া আবার উজানের বুকের আর কাধের মাঝবরাবর মুখ গুজে দেয়……..
উজান:হ্যালো বুলি বলো….
বুলি:দিদি উঠেছে কি ঘুম থেকে?
উজান:না হিয়া এখনো উঠে নাই।কিছু বলবে দিদিকে?(হিয়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে)
বুলি:হ্যা মানে একটু আগে ঠাম্মি ফোন করেছিলো দিদি কে দেখবে বলে আসছে।দিদি কি আসবে এখন?
উজান:ঠিক আছে আমি নিয়ে যাচ্ছি হিয়াকে কিছুক্ষণ পর
বুলি:আচ্ছা এসো
……………….
উজান:(মনেমনে)হিয়া আবার ঘুমিয়ে পড়লো….হিয়া…..হিয়া
হিয়া:হুম
উজান:উঠো
হিয়া:না…ভীষন ঘুম পাচ্ছে
উজান:ঠাম্মি আসছে তোমাকে দেখবে বলে
হিয়া:ঘুমোবো আমি আরো
উজান:ঠিক আছে।আমি তাহলে তোমাকে উপরে শুইয়ে দেই
হিয়া:দেও
……….উজান কোলে করে হিয়াকে নিয়ে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়……….
বেলা ১১টা:
উজান হিয়ার মাথার কাছে গিয়ে:
উজান:হিয়া…হিয়া….অনেক বাজছে….উঠবে না…
হিয়া:উমহুম….কেনো ডাকলে ভালো লাগে না আমার।আজ কতোদিন পর একটু ঘুম হলো….
উজান:ঠিক আছে ব্রেকফাস্ট টা করে নিয়ে আবার ঘুমিয়ো
হিয়া:একবার ঘুম ভাঙ্গলে আবার ধরে নাকি
উজান:আচ্ছা সরি।এখন উঠো যাও ফ্রেশ হয়ে আসো
হিয়া:আর একটু
…….হিয়া আবার উজানের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে……
১১:৪০
উজান:হিয়া…..হিয়া
হিয়া:হুমমম
উজান:উঠো….আমার দুপুরে ওটি আছে হিয়া….
হিয়া:(উঠে যায়)…..তা তুমি যাও না চেম্বারে
উজান:এতো ঘুম ভালো না….উঠো মেডিসিন নিতে হবে….আগে খেয়ে নেও……….উঠো
হিয়া:এখানে ঔষধ কোথায় পেলে ওগুলো তো সব বাড়িতে
উজান:টিউলিপ থেকে নিয়ে এলাম এ বেলার টা
হিয়া:ভালো লাগে না আমার কিছু
উজান:এতো খিটখিট করো কেনো ইদানীং তুমি____সব কিছুতে ভালো লাগে না ভালো লাগে না
হিয়া:ভালো না লাগলেও আমার দোষ
উজান:ইদানীং কি যে তোমার ভালো লাগে আমাকে কষ্ট দেওয়া ছাড়া তুমি ভালো জানো।
হিয়া:তাই না….আর শোনো আমি না এই যে তোমার সাথে দুটো কথা বলছি হেসে হেসে তাই বলে ভেবো না আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিছি আমার রাগ কিন্তু এখনো আগের মতোই আছে হ্যা।আমি কিছু ভুলিনি কিন্তু….
উজান:এতোক্ষন যেভাবে কথা বললে সেটাকে হেসে হেসে কথা বলে বুঝি…….আর এ কদিন তুমি যে আমাকে কষ্ট দিলে ওটাও আমার মনে থাকবে আমিও কিছু ভুলবো না মিসেস হিয়া চ্যাটার্জী
হিয়া:😏😏😏😏
উজান:উঠো আবার বসে আছে…..তোমাকে বাড়িতে দিয়ে এসে আমাকে আবার টিউলিপে আসতে হবে।নেও তাড়াতাড়ি……
হিয়া:ভালো লাগে না।শুধু ওর্ডার করে সবাই
উজান:উঠবা কি
……..হিয়াদের বাড়ি…..
ঠাম্মি:কি রে আমি সেই কখন থেকে বসে আছি আর তোদের এখন আসার সময় হলো
উজান:আমি কি করবো ওর যতো বায়না।ওর জন্যেই এতো দেরি হলো।
হিয়া:হ্যা এখন তো সব আমার দোষ….জানো ঠাম্মি কি ঘুম পাচ্ছছিলো আজ আমার।কতোদিন পর ঘুমোলাম একটু শান্তি করে আর ও কানের কাছে হিয়া উঠো হিয়া উঠো বলতেই আছে বলতেই আছে__বলো ভালো লাগে__
ঠাম্মি:কেনো রে উজান মেয়েটা ঘুমোতে চাইলো তুই দিলি না কেনো
উজান:এই তোমরা না সবাই ওকে লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলছো জানো।এতো ঘুম কিসের ওর।পড়াশুনো তো সব লাটে উঠছে
হিয়া:দেখলে ঠাম্মি কেমন করে।মা দেখলে এজন্য না আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই না
উজান:হ্যা এসব বিচার দিতেই তো তুমি পারো।কি যেনো বলেছিলে যে আমি মেয়ে একটা মেয়ে তার প্র্যাগনেন্সিতেও কিভাবে পড়াশুনো করে ডক্টরি পরীক্ষা দেয় আমি হিয়া আমি দেখিয়ে দিবো।এই তার নমুনা……এভাবে পড়াশুনো করলে না এ জীবনে আর কখনো ফাইনাল ইয়ায় তোমার পাস করা হবে না
হিয়া:কি কি বললে তুমি…আর একবার বলো
বাসবি:আহ থাম তো তোরা….এসে থেকেই শুরু করে দিলো….আর রাজা কি হ্যা তুই…খালি শাসন করিস ওকে।এ অবস্থায় পড়তে ইচ্ছে করে কারো….(হিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে)
উজান:আমি আর কিছু বলবো না এভাবেই ওকে মাথায় তোলো তারপর একদিন দেখবো কোনো অঘটন বাধিয়ে বসেছে……ডিসগাস্টিং……
ঠাম্মি:আচ্ছা ওসব বাদ….আমার কথা শোন তো আগে…..তা হিয়া সামনের মাসে যে তোর পুচকুর সাত মাস হতে চললো তা অনুষ্ঠান করবো না….আমি কিন্তু সব ভেবে রেখেছি….অনেক বড়ো করে আমার নাতনিটার জন্য আয়োজন করবো….
বাসবি:হ্যা মা বাচ্চা টার উপর দিয়ে যে ঝড় গেলো এদের দুজনের মান অভিমানের মাঝে….এর পর আমার সোনা মা টার জন্য বড়ো করে অনুষ্টান না করলে কি হয় বলুন……
ঠাম্মি:দেখ দেখি দুজনে লজ্জা পাচ্ছে কেমন…
উজান:ঠিক আছে মা আমি আজ আসি আমার দুপুরে ওটি আছে…..আমাকে টিউলিপ ফিরতে হবে
হিয়া:হ্যা যাও তো তুমি…না হলে কানের কাছে এটা করো না ওটা করো না বলে সারাক্ষণ খ্যাচ খ্যাচ😡😡
উজান:যেটা পড়তে বলেছি চুপচাপ গিয়ে পড়ো। আমি রাতে এসে পড়া নিবো
হিয়া:😏😏
নিলীমার কেবিন….
বিহান:(হালকা কেশে দিয়ে)….মে আই কামিং মিস দেবরয়….
নিলীমা:কি চাই বিহান তোমার এই অসময়?
বিহান:নাহ এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই ভাবলাম একবার তোমার সাথে কথা বলে যাই…
নিলীমা:বলো কি বলবে আমার হাতে সময় নেই বেশি…
বিহান:সে আর আমার জন্য তোমার কোথায় সময় থাকে বলো…..তাহ কি ভাবলে মানে এর পর কি করবে….
নিলীমা:কি ভাবার কথা বলছো বিহান?
বিহান:আরে কি মুশকিল সব কেনো তোমাকে বলে দিতে হয় দেখো দেখি…..আমি দাদাভাই আর হিয়া মিএ ওহ সরি সরি এখন তো আবার হিয়া মিএ না হিয়া বৌদি……..ওদের নিয়েই ভাবার কথা বলছিলাম আরকি…….এই যে তুমি এতো কিছু করলে দাদাভাই কে পাওয়ার জন্য কি কি না করলে ইসস তার ১%ও যদি আমার জন্য করতে আনিওয়ে পেলে তো আর না তাই না……তাই বলছি কিছু ভাবলে কি করবে সামনে…..
নিলীমা:তুমি আমাকে কতো টুকু চিনো বিহান আমি ঠিক কি করতে পারি তোমার জাস্ট ধারনা নেই।
বিহান:(মনেমনে)কি যে করতে পারো তুমি সবটাই তো দেখলাম সো স্যাড……………এই নিলীমা তুমি আবার দাদাভাই এর বাচ্চা টার কোনো ক্ষতি করবে না তো।তাহলে কিন্তু দাদাভাই তোমাকে…..
নিলীমা:কি করবে তোমার দাদাভাই…উজান কে আমি ভয় পাই নাকি…..আর একটা কথা বিহান আমি একজন ডক্টর এস এ ডক্টর উজান হিয়া কে শাস্তি দিতে গিয়ে একটা ছোটো নিষ্পাপ বাচ্চার কোনো ক্ষতি আমি করবো না……..সময় আসতে দেও উজান কে কিভাবে পথে নামাতে হয় তার ব্যবস্থা আমি করবো।তখন দেখবো ওর এতো নাম ডাক টাকা পয়সা কোথায় থাকে।না খেয়ে না ওকে আর হিয়াকে দিন পার করতে হয়…….
বিহান:যা ভালো বোঝো তুমি করো…
আর হ্যা আমাদের ব্যাপারটাও একটু ভেবে দেখিও কেমন।আর কোনো অপশন ও তো নেই তোমার কাছে………আজ আসি কেমন……
নিলীমা:তোমাকে আর হিয়াকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না উজান কখনো না।তোমাকে আমি নিঃস্ব করে ছাড়বো উজান…তুমি দেখে নিও….
……..দুদিন পর……
…..আজ হিয়ার মন চাচ্ছে উজানের জন্য কেক বানাবে…উজানের এবার জন্মদিনে তো ওদের মান অভিমান চলছিলো হিয়া কিছু করতে পারে নাই…তাই কেক বানিয়ে উজানকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো…কিন্তু তা আর হলো কোথায়…কেক বানাতে গিয়ে নিচে পড়ে থাকা তেল এ পা পিছলে হিয়া পড়ে যায়…এদিকে উজান তো ওটিতে….
…………………
হিয়া আর পুচকুর গল্প…………
হিয়া:(হিয়া ওর পেটে হাত দিয়ে)……ভালো লাগছে না তো পুচকু😥তোর বাবা কখন আসবে……….এভাবে আর কতোক্ষন বসে থাকবো…………..ধুরো…………এই পুচকু কেক খাবি🥰……..জানিস মা এর আগেরবার তোর বাবার জন্মদিনে আমি সেই ভোর বেলা বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম তারপর সারাদিন ওর সাথে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যেতে বাড়ি ফিরলাম।কি ভালো ছিলো দিনটা❤️অনেক গুলে সুন্দর দিনের মধ্যে ওটা একটা দিন ছিলো❤️আর এবার তোর বাবার জন্মদিনে তো কিছুই করতে পারলাম না চলেই তো গেলো আমাকে ছেড়ে তখন ইউ এস……তাই আমিও আর রাগ করে তোর বাবাকে উইশ করি নাই মার কাছে জানতেও চাই নাই আজ ও কি করছে…….কিন্তু দোষ যারি থাক কষ্ট তো দুজনেই পেয়েছি বল😥কম খারাপ ব্যবহার তো করি নাই ওর সাথে😥তাই ভাবছি আজ তোর বাবাকে কিছু রেধে খাওয়ালে কেমন হয় বল তো……একটা কেক বানিয়ে আজ ওকে সারপ্রাইজ দেই চল🥰হুমম ওটাই বেষ্ট হবে🥰(মুখে এক বালতি হাসি)
হিয়াদের রান্নাঘরঃ
হিয়া:কি যেনো কি যেনো লাগবে ঠাম্মি সেদিন শিখিয়ে দিলো…..আটা,বিসকুট,তেল,ডিম…..
বাসবি:হিয়া মা তুই এসময় রান্নাঘর এ কি করছিস।কিছু লাগবে বল আমাকে।খাবি কিছু?
হিয়া:ওহ মা তুমি….কিছু না ইয়ে,আমি না ওর জন্য একটা ছোট্ট করে কেক বানাবো ভাবছিলাম।বসে বসে ভালো লাগছিলো না
বাসবি:তা আমাকে বলবি না।দেখি আমি বানিয়ে দেই তুই ঘরে যা
হিয়া:না না।তোমাকে লাগবে না আমি পারবো।আসলে কি বলো তো ওকে তো এ কদিন খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম তাই ভাবছি আজ ওর জন্য নিজে হাতে কেক বানিয়ে ওকে খাওয়াবো🥰কেমন হবে বলো🤗
বাসবি:আচ্ছা বেশ🥰পাগলি মেয়ে আমার…কিন্তু দেখিস সাবধানে।কিছু হয়ে যাক আর পরে রাজা জানতে পারলে কিন্তু আমাকেই বকবে উল্টো…এমনিতে তো বলে তোকে নাকি আমরা বেশি লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলছি…
হিয়া:ওর কথা ছাড়ো তো।ওর কথা শুনলে তো আমাকে সারাদিন ঔ বিছানায় বই নিয়ে বসে থাকতে হতো হু🥰
বাসবি:পারবি তো আমি থাকবো সাথে
হিয়া:হুম আমি পারবো।তোমাকে থাকতে হবে না
বাসবি:আচ্ছা কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে ডাক দিস।আমি বুলির রুমে আছি
হিয়া:ঠিক আছে
……..হিয়া তেলের ঢাকনা টা খুলতে গিয়ে ওর থেকে অনেকটা তেল নিচে পড়ে যায়……
হিয়া:যাহ পড়ে গেলো….এখন…..আচ্ছা এটা এখন এমনি থাক আগে ডিম গুলো ফেটে নেই ওটাই ভালো হবে……..
…….হিয়া ডিম ফেটে বিসকুট গুড়ো করে।ময়দা আনতে পিছনে ফিরলে ওর হুশ থাকে না নিচে তেল পড়ে ছিলো।তেলে পিছলে হাতে থাকা ডিমের বাটি সহ হিয়া ছিলিপ কেটে পড়ে যায়…….
হিয়া:……..উজান!!
বাসবি:…….হিয়া…….হিয়া মা……বুলি বুলি……হিয়া মা কি হলো কিভাবে পড়ে গেলি….!কষ্ট হচ্ছে মা….বল আমাকে বল না…..বুলি…..
হিয়া:উজান স্যার
বাসবি:রাজা রাজা কে ডাকবো মা…আমি ডাকছি….বুলি দাড়িয়ে কি দেখছিস ফোন কর না রাজা কে…..
বুলি:হ্যা আমি এক্ষুনি করছি
বাসবি:মা ব্যাথা করছে।খুব লেগেছে।কেনো এলি তুই রান্না করতে।আমি রাজা কে কি বলবো এখন।বিকাশবাবু ও নেই বাড়িতে…..বুলি করলি ফোন রাজা কে…..(কাঁদতে কাঁদতে)
বুলি:উজান দা তো ফোন ধরছে না
বাসবি:কি করছে কি রাজা…..তুই যা জলদি একটা অটো ডেকে আন….আমি হিয়াকে নিয়ে যাচ্ছি…..
বাসবি:কিছু হবে না হিয়া মা তোর।আমি নিয়ে যাচ্ছি তোকে টিউলিপ রাজা আছে ওখানে।কিচ্ছু হবে না তোর….
হিয়া:আমি ঠিক আছি কিন্তু পুচকু…..
বাসবি:কিছু হবে না পুচকুর ওর কোনো ক্ষতি হতে পারে না…….দেখিস তুই…..(হিয়ার চুল গুলো ঠিক করতে করতে)
বুলি:কাকিমা এসো অটো দাড়িয়ে আছে
বাসবি:তুই দরজায় তালা দে আমি হিয়াকে নিয়ে যাচ্ছি…..আর রাজা কে ফোন করতে থাক……
……..বাসবি হিয়াকে টিউলিপে নিয়ে এসে তৃনার চেম্বারে নিয়ে যায়….উজান ওটি থেকে বের হয়ে বুলির এতো গুলো মিসড কল দেখে খানিকটা ভয় পেয়ে যায়………..
উজান:এতো গুলো মিসড কল কার…..এসময়……বুলি..!!!!…..বুলি হঠাৎ এতো বার……হিয়া হিয়া ঠিক আছে তো….(উজান ঘামতে শুরু করে)……না না কি ভাবছি আমি…..বুলি ফোন টা তোলো…..ফোন কেনো তুলছে না বুলি…….
বুলি:হ্যা উজান দা বলো
উজান:কি হয়েছে বুলি তুমি এতেবার কেনো ফোন দিয়েছো।কিছু হয়েছে আমি ওটি তে ছিলাম।আর ফোন সাইলেন্ট ছিলো শুনতে পাইনি।হিয়া হিয়া ঠিক আছে।(উজান এবার হাপাতে শুরু করে)…..কই তোমার দিদি ওকে ফোন টা দেও তো…
বুলি:উজানদা(বুলি উজান কে সব খুলে বলে)…….এখন দিদি কাকিমার সাথে তৃনা ম্যাম এর চেম্বারে আছে তুমি আসো জলদি…..
……উজান আর কিছু শুনতে চায় না পারে না ওর হাত থাকি ফোন টা পড়ে যায়।কোনোমতে ফোন টা তুলে উজান তৃনা ম্যাম এর চেম্বারে দৌড় দেয়……
…….তৃনার চেম্বার….বুলির কাছে সব শোনার পর টেনশনের পাশাপাশি উজানের রাগ এখন পাহাড় সমান….আজ হিয়ার রক্ষা নাই…..
তৃনা:এসময় কেউ এমন অসতর্ক ভাবে চলাফেরা করে হিয়া….তোমার কপাল ভালো যে তোমার বেবির তেমন একটা কিছু হয়নি..আগের পজিশন এই আছে…কিন্তু ভাবো তো যদি সামন পাশে মুখ করে পড়ে যেতে তখন কি হতো…তখন কিন্তু অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেতো…আর উজান কি হুম হিয়াকে একটু বুঝাতে পারো না সাবধানে চলতে।তুমি বললে কি ওহ না শুনে বলো….
হিয়া:(মনেমনে)ম্যাম চুপ করুন ওকে কেনো টানছেন😖এমনিতে তো ওর চোখমুখ দেখে বুঝতে পাচ্ছি খুব ক্ষেপে আছে আমার সাথে আর আপনি এসব ওর সামনেই বলতে শুরু করলেন😖এর পর বাড়িতে গিয়ে কি যে ঝড় আছে কপালে😖হ্যা আমি বাড়িতে গিয়েই পুচকু র সাথে ঘুমিয়ে পড়বো..তাহলে তো আমাকে কিছু বলতেও পারবে না😖
তৃনা:আমি শুধু আর একটা টেস্ট দিলাম।ওটা করে বাড়ি চলে যেও।আর উজান তো আছে রিপোর্ট নিয়ে না হয় কাল একবার আসলো আমার চেম্বারে তাহলে হিয়াকে আর কষ্ট করে আসতে হয় না।তবে হিয়া এলে ভালো হয় কিন্তু আবার যাবে আবার আসবে….
হিয়া:আমি পারবো ম্যাম আসতে সমস্যা নেই
তৃনা:যদি পারো আসতে তাহলে এসো
উজান:ঠিক আছে ম্যাম থ্যাংকস।মা আসো….
বাসবি:হিয়া মা উঠ আমি ধরছি তোকে..
হিয়া:আমি পারবো কিছু হয়নি আমার…..আচ্ছা ম্যাম আসি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ….
তৃনা:এসো।আর সাবধানে থেকো আর উজান ওর কিন্তু খেয়াল রেখো।এসময় বেশি নড়াচড়া না করাই ভালো কেমন
উজান:হুম……
………….
উজান:মা তুমি হিয়াকে গেস্ট রুমে দিয়ে আসো আমার।বারবার বাড়ি থেকে আসা যাওয়ার কোনো দরকার নেই কাল….আর আমি ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি তোমাকে আর বুলি কে দিয়ে আসবে বাড়িতে….
হিয়া:(মনেমনে)…এই পুচকু এসব কি বলে তোর বাবা😯আমাকে একা পেলে তো খেয়ে ফেলবে😯দেখ কপালের রগ গুলো কেমন রাগে এখনো ভাজ হয়ে আছে না না আমি বাড়ি যাবো😯…….ইয়ে বলছি কি মা আমিও যাই না তোমাদের সাথে কালকে না হয় ওর সাথে আসবো🥰
উজান:উজান চোখ বড়ো বড়ো করে হিয়ার দিকে তাকায়
বাসবি:কি করছিস কি দেখছিস না রাজা ক্ষেপে আছে।ওহ যা বলছে শোন
হিয়া:কিন্তু মা
বাসবি:কোনো কিন্তু না চল আমার সাথে………আর রাজা রাতে কি খাবি আমি পাঠিয়ে দিবো কিছু বাড়ি থেকে
উজান:ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না আমি আছি টিউলিপ থেকে এ্যারেন্জ করে নিবো….
বাসবি:আচ্ছা বেশ..তা তুই কোথায় যাচ্ছিস এখন আরো ওটি আছে নাকি
উজান:না বিল গুলো পেমেন্ট করে আসি।আজ আর কোনো ডিউটি নেই আমার
বাসবি:আচ্ছা চাবি দে তাহলে রুমের
উজান:নেও..
উজানের গেস্ট রুম।হিয়া বিছানায় শুয়ে।উজান এতোটাই রাগ হয়েছে সবটা শোনার পর যে হিয়ার সাথে কোনো কথা বলার প্রয়োজন টাও আর মনে করে না….
হিয়া:কিরে পুচকু কেস টা কি বল তো তোর বাবা তো চুপ হয়ে আছে।কিছু তো বকাবকি শুরু করলো না এখনো…….আমি বলবো আগে কথা….যদি তেড়ে আসে………বলি না যা হবে দেখা যাবে…
হিয়া:এই যে শুনছো পানি খাবো একটু ঢেলে দেও না……
…….উজান গ্লাসে করে পানি এনে সাইড টেবিলে রেখে আবার সোফায় গিয়ে ল্যাপটপ চালায়……
হিয়া:যা দিয়ে চলে গেলো😥আমি কি করলাম ওর জন্যই তো কেক বানাতে গিয়ে ওসব হলো…আমি কি ইচ্ছে করে পড়ে গেছি নাকি😥
১৫মিনিট হয়ে যায় উজান এখনো চুপ হিয়ার প্রচন্ড বিরক্ত লেগে যায়ঃ
হিয়া:এটা আবার কি নিয়ম রাগ দেখানোর😡ভালো লাগে না।এর চেয়ে তো দুটো কথা শুনিয়ে দিলেই ঝামেলা চুকে যেতো….ধুরো….এভাবে কোনোদিন আমি চুপ করে বসে ছিলাম ওর সাথে😡
……..প্রায় আধা ঘন্টা উজান হিয়াকে ইগনোর করে কোনো কথা বলে না হিয়া একবার বিছানার এপাশ একবার ওপাশ খালি নড়েচড়ে বসে…….টিউলিপ থেকে খাবার দিয়ে যায়…..
সেফ:স্যার আসবো…….আপনাদের খাবার
উজান:এখানে রেখে দিন
সেফ:স্যার আমি আসি তাহলে কিছু লাগলে জানিয়ে দিয়েন
উজান:হুম
……সেফ খাবার দিয়ে চলে গেলে উজান হিয়ার খাবার টা বেড়ে বিছানার পাশে সাইড টেবিলে রেখে দিয়ে নিজের খাবার নিয়ে সোফায় বসে খেতে শুরু করে….
হিয়া:বেড়ে দিয়ে চলে গেলো….বললোও না হিয়া খেয়ে নেও………আমিও খাবো না দেখি কতোক্ষন এভাবে কথা না বলে থাকে…….
…….১৫মিনিট পর উজানের খাওয়া শেষ হলে ওহ প্লেট থুইয়ে হাত ধুয়ে আবার সোফায় গিয়ে মেইল চেক করে…..এদিকে হিয়া খাবার না খেয়ে এখনো বসে আছে।উজানের কোনো মাথা ব্যাথা নেই…..
হিয়া:দেখলি মা কি রকম আমাকে ছেড়ে খেয়ে নিলো😥এমনি দিন তো খেয়েছি কি না,কেনো খাই নাই এই নিয়ে কতো বার ফোন করে…বাড়িতে থাকলে নিজে এসে খাওয়াও দিয়ে যায় আর আজ দেখ কেমন করছে……..কি ভীষন খিদে পেয়েছে উফফ পেট ডাকছে আর একে দেখো এখনো রাগে গাল গুলো ফুলে ফুলে আছে……………………….এই যে শুনছো আমার না আজ খেতে ইচ্ছে করছে না তুমি না এগুলো কাউকে বলে নিয়ে যেতে বলো……
উজান:হিয়া আমার এসব নাটক একদম ভালো লাগে না কিন্তু😡😡
হিয়া:আমি নাটক করছি খেতে ইচ্ছে না করলে আমার দোষ………শুনো না বলছি কি কালকের দিনের বেলার মতো একটু খাইয়ে দেও না🥰
……উজান উঠে এসে খাবার গুলো নিয়ে….
উজান:থাক তোমাকে আর খেতে হবে না….
হিয়া:আরে আরে আমি কি বলছি খাবো না…দেও খাচ্ছি……
…….হিয়ার খাওয়া হয়ে গেলে উজান হিয়ার মেডিসিন গুলো খুলে বিছানার রেখে বারান্দায় গিয়ে কাকে যেনো একটা ফোন করে…..
হিয়া:দেখলি পুচকু আগে বাড়িতে থাকলে নিজে হাতে করে ঔষধ খাইয়ে দিতো আর আজ…..করেছি না হয় ভুল তার জন্য এমন করবে….৩ঘন্টা ধরে কথা বলে না আমার সাথে…..আমি কিন্তু এবার কেঁদে ফেলবো….
…..হিয়া ঔষধ গুলো খেয়ে বারান্দায় গিয়ে উজান কে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে…উজান তখনো ফোন এ কথা বলছিলো….
উজান:আপনি তাহলে এক কাজ করুন ওনাকে একবার কাল আমার চেম্বারে নিয়ে আসুন….আমি তারপর কিছু টেস্ট দিয়ে দেখি কি করা যায়……আচ্ছা রাখি তাহলে আজ।আপনি আসুন কালকে………(হিয়া তখনো উজানকে জরিয়ে ধরে আছে)
কথা হয়ে গেলে….
হিয়া:সরি😥কথা বলবে না আর আমার সাথে…..আমি তো তোমার জন্যই কেক বানাতে গিয়ে এসব হলো😥
……ঠাম্মির ফোন আসে…..
উজান:হ্যা ঠাম্মি বলো
ঠাম্মি:হিয়া কেমন আছে এখন কি করছে ও…
উজান:ভালো আছে…এই মাএ খেয়ে উঠলো….
ঠাম্মি:একটু খেয়াল রাখিস ওর….
উজান:ওর সাথে আমার আর কোনো কথা নেই।যে নিজের ভালো বোঝে না যাকে এখনো সব কিছু বলে বলে ধরে ধরে করে দিতে হয় তার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই…..
……….(এটা শোনার পর হিয়া উজানের পিঠে একটা জোরে কিল দেয়….)
ঠাম্মি:হয়েছে আর রাগ করে থাকিস না।বু্লি তো বললো তোর জন্যই কেক বানাতে গিয়ে এরকম একটা ঘটনা হলো।ওকে আর কিছু বলিস না
উজান:হুম….
ঠাম্মি:আচ্ছা রাখি এখন।কালকে যাবো একবার হিয়াকে দেখতে….
উজান:ঠিক আছে……..
……………..
হিয়া:ঘুমাবা না…?………সরি…….. আচ্ছা তুমি আমাকে বকে দেও সেটা ভালো হয় কিন্তু এভাবে রাগ করে থেকো না প্লিজ……উজান…….
উজান:হিয়া গিয়ে শুয়ে পড়ো আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না
হিয়া:ঠিক আছে তুমিও আসো তাহলে
……….উজান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।হিয়া উজানের পিছন পিছন গিয়ে বিছানায় উঠে পড়ে।উজান হিয়া কে দেখে পাশ ফিরে শোয়…..
হিয়া:দেখলি পুচকু বাড়িতে থাকলে সবসময় তোকে আর আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমায় আর আজকে দেখ কেমন মুখ ফিরিয়ে শুলো……………..(হিয়া উজানকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে…….)………মাথা টা না ভীষন ব্যাথা করছে একটু টিপে দিবা…?………উজান….উজান….উজান স্যার….উজান স্যার…..
রাত ২টো হিয়া উজানকে অনেক মানানোর ট্রাই করে কিন্তু উজানের রাগ পড়ে না….হিয়ার আর ঘুম আসে না…হিয়া উঠে বারান্দায় গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করে…….
হিয়া:আমারি ভুল ছিলো।কেনো আমি বানাতে গেলাম কেক ওর জন্য।উল্টে আমাকে ভুল বুঝে কথা না বলে আছে।এটুকু বোঝার ওর মন নেই ওর এমন ব্যবহার আমাকে কতো কষ্ট দিচ্ছে এর চেয়ে দাতঁ খিচিয়ে কিছুক্ষণ বকাবকি করতো……(কাঁদতে কাঁদতে)
………..উজান এসে হিয়ার পিছন থেকে চুল সরিয়ে হিয়াকে ওর বুকের কাছে পিছন দিক দিয়ে টেনে নেয়।আর হাত দুটো পিছন দিক দিয়ে ধরে পুচকু কে জরিয়ে ধরে……..
উজান:কাঁদছো তুমি
হিয়া:না😥
উজান:এসব কান্নাকাটি করে আমি ভুলবো এটা ভাবার কোনো মানে নেই এখন
হিয়া:বললাম তো কাঁদছিলাম না😥
উজান:ঘুম নাই..
হিয়া:না
উজান:রাতে জেগে থেকে সকালে দেড়ি করে উঠবা তারপর সকালের পড়া মিস….এগুলোই তো করছো কদিন থেকে…..
হিয়া:(হিয়া এবার কেঁদে ফেলে)……সারাক্ষণ খালি পড়া পড়া…ভালো লাগে না আমার…আমারো তো মন চায় তোমার জন্য কিছু করি সেটা কি ভুল আমার😭
উজান:কিছু করতে গিয়ে তো দেখলে কি হলো আজ।তারপরো এসব মনে আসে কোথা থেকে..
হিয়া:এজন্য তুমি এমন করবা আমার সাথে।কোথায় আমি পড়ে গেছি আমাকে এসে ধরবা দেখবা পুচকুকে আমি ঠিক আছি কি না তা না করে তুমি সেই সন্ধ্যে থেকে আমার সাথে কথা না বলে আছো…..ভালো লাগে না আমার😭
উজান:আমি তো বললাম আমি আর এরপর তোমাকে কিছু বলবো না
হিয়া:তুমি না এর পর আমার সাথে আর কথাই বলিও না।ওটাই ভালো হয়।
উজান:পানি মোছো চোখের
হিয়া:তোমার কি আমি কাঁদছি বলে
উজান:(হিয়ার কাধে একটা বড়ো নিশ্বাস ফেলে)….যাও গিয়ে ঘুম দেও….
হিয়া:ঘুম পাড়ায় দেও🥰
উজান:আসো🥰
……….উজান হিয়াকে নিয়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে হিয়ার মাথায় হাত বুলাতে থাকে……..
হিয়া:আর হবে না এমন।এর পর আমি দেখে শুনে চলবো…………কিছু বলবে না………….
উজান:বললাম তো না…