❤️62_63❤️ FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প Part:62

0
163

❤️62_63❤️
FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:62

পরের দিন হিয়া কথামতো পাবলো কে নিয়ে মোবাইল এ আসা এ্যাড্রেস এ চলে যায়..
পাবলো:তুমি সিউর তো বৌদি পারবে
হিয়া:পারতে যে আমাকে হবে পাবলো।
পাবলো:ঠিক আছে কিন্তু সাবধানে।আমি বাহিরের দাড়িয়ে আছি কোনো সমস্যা হলে জাস্ট একবার আমাকে ফোন দিবে আমি চলে আসবো
হিয়া:হুম।তুমি ফোনটা সাথেই রাখো।
হিয়া যেতে ধরলে
পাবলো:বৌদি
হিয়া:কি
পাবলো:তুমি একা যাবে ফ্লাটে।আমার মন সায় দিচ্ছে না😖
হিয়া:(ব্যাগ থেকে চিলি স্প্রে বের করে)…এই যে কোনো গন্ডগোল দেখলে এটা আছে না।আর তুমি তো আছোই….আসছি😊
পাবলো:বৌদি তুমিও পারো বটে…All the best..😎

……….
হিয়া:এই ফ্লাটের নাম্বার টাই তো লেখা আছে…হ্যা এটাই…কলিং বেল কলিং বেল এইতো…একি গেট তো খোলা…..(হিয়া গেটে নক করে)…কেউ আছে ভিতরে….কেউ কি আছে…(হিয়া অনেকবার ডাকে কেউ সারা দেয় না)……আমি ঢুকবো ভিতরে কিন্তু যদি,নাহ পাবলো তো আছেই নিচে….আমাকে উজানের জন্য রিস্ক টুকু নিতেই হবে….

…হিয়া ভিতরে ঢুকে কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পায় না কারো।এমন সময় একটা হাত হিয়ার কাধ স্পর্শ করে..
রাহুল:ওয়েলকাম মাই সুইটহার্ট
….হিয়া রাহুলের গলা চিনতে পেরে আতকে উঠে।হিয়ার হাত পা কাপা শুরু করে।হাত থেকে ব্যাগ টা পড়ে যায়।হিয়া সামনের দিকে সরে গিয়ে পিছনে মুখ করে…

হিয়া:রাহুল স্যার আপনি
রাহুল:কি ভেবেছিলে তোমার কোনো ওয়েল উইশার….হাউ ফানি হিয়া….
হিয়া:এগোবেন না বলে দিচ্ছি।একদম এগোবেন না…খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু বলে দিচ্ছি।আর না।
রাহুল:আরে আরে সুইটহার্ট এতো ভয় পাচ্ছো কেনো…আমিই তো…দেখো তো কি মুশকিল..

….হিয়া পেছাতে পেছাতে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে আটকে যায়…রাহুল হিয়ার কাছে এসে হিয়ার চুল গুলো আলতো করে ধরে…

রাহুল:ইসস আমার হিয়া টার চেহারা টা কেমন শুকিয়ে গেছে দেখো…ড.চ্যাটার্জী বোধহয় ঠিকমতো খাওয়াতে পারে না এখন তাই না..অবশ্য খাওয়াবেই বা কি করে পকেটে তো ফুটো কড়ি পর্যন্ত নেই…

হিয়া:রাহুল স্যার দেখুন আমি ভালো করে আপনাকে বলছি আমাকে যেতে দিন।উজান যদি জানতে পারে আপনাকে ওহ শেষ করে ফেলবে..

রাহুল:এই রাখো তো তোমার উজান স্যার।কি মুরোদ আছে ওর করার এখন…

…..রাহুল হিয়ার কাছে ঘেসতে ধরলে হিয়া ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা বড়ো চাকু টা হাতে নিয়ে রাহুল এর সামনে ধরে…

হিয়া:ছাড়ুন আমাকে।সরে যান আমার সামন থেকে।সারুন বলছি।নইলে কিন্তু আমি

রাহুল:আরে সুইটহার্ট রিলাক্স।কাম ডাউন বেবি…….কি তেজ এরকমি তো একজন দরকার আমার..

হিয়া:কি চাই আপনার।আর আপনি বা ঔ সিসিটিভি চিপের কথা জানলেন কি করে?

রাহুল:যদি বলি তোমাকে চাই
হিয়া:রাহুল স্যার😠

রাহুল:আস্তে আস্তে..তুমি না মেডিকেল স্টুডেন্ট তুমি জানো না এসময় এতো উওেজনা ভালো না…

হিয়া:তাহলে এসবের পিছনে আপনিও মিনাক্ষী ম্যামদের সাথে ছিঃ😡

…..রাহুল ঔ সিসিটিভি চিপ টা বের করে হিয়ার সামনে ধরে….

রাহুল:এটাই নিতে এসেছিলে তাই না
হিয়া:ওটা ওটা দিন বলছি😡

রাহুল:নিবে নেও….নিতে গেলে যে আমার কাছে আসতে হবে সুইটহার্ট…….আসো…ওহ কামন হিয়া আসো না….

হিয়া:না একদম না।একদম আমার দিকে আগানোর চেষ্টা করবেন না😡

রাহুল:যাহ আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম……বাই দা ওয়ে তোমাকে আরো কিছু জিনিস দেখানোর বাকি আছে…..ওয়েট……

হিয়া:এসব এসব কি😢

রাহুল:চিনতে পারছো না…দেখো

হিয়া:এসব এসব তো ওর মেডিকেল সার্টিফিকেট এগুলোতো ওর ওর কেবিনে ছিলো(হিয়ার মনে পড়ে সেদিন ওহ কেবিনে উজানের কোনো কিছু ঠিক মতো পায় নি)……তারমানে আপনি ওসব….আর এগুলো এগুলো তো আমার আলমারি তে ছিলো ওগুলো আপনি কি করে….

রাহুল:তুমি কতো বোকা হিয়া…..ইসস..এতো বোকামি নিয়ে তুমি ডক্টর হবে কি করে আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছে

হিয়া:এগুলো ওর কষ্ট করে করা এক একটা অর্জন। আমি আপনার কাছে হাত জোড় করছি প্লিজ ওগুলো ঠিক মতো রেখে দিন..😭

রাহুল:রেখে দেওয়ার জন্য নিয়ে এসেছি নাকি…….এটা এটা কিসের😮সার্টিফিকেট ওফ ফাস্ট স্টুডেন্ট ইন টিউলিপ মেডিকেল কলেজ…এটা এটা তো হ্যা সার্টিফিকেট ওফ দা ফার্স্ট রাংকিং ওফ মেডিকেল বোর্ড এক্সাম…..সার্টিফিকেট ওফ দা বেস্ট কোয়ালিফাইড স্টুডেন্ট ওফ লান্ডান মেডিকেল কলেজ……😮😮

হিয়া:(ভীষন কাঁদতে কাঁদতে)… কেনো করছেন আপনারা আমাদের দুজনের সাথে এমন…স্যার আমি আপনার হাত জোড় করছি প্লিজ ওগুলো দিয়ে দিন….রাহুল স্যার…😭😭😭

রাহুল:আরে সোনা কাদেঁ না….দেখতে দেও না আর কি কি এচিভ করেছে তোমার উজান স্যার…বাহ কত্তোগুলো মেডেল…ইসস হিংসে হচ্ছে জানো হিয়া কেনো যে আমার এসব হলো না…..😏

হিয়া:স্যার দিয়ে দিন না ওগুলো প্লিজ স্যার…😭😭😭😭

রাহুল:কি মুশকিল আমি কোথায় ভালো ভালো জিনিস দেখাচ্ছি ওগুলো না দেখে তুমি কাঁদছো😒
দিস ইস নট ফেয়ার হিয়া……….আরে আরে এটাই তো খুঁজছিলাম…..হিয়া দেখো…..

হিয়া:কিসের সার্টিফিকেট ওটা😭

রাহুল:ওয়ান ওফ দা ওয়াল্ড বেস্ট হার্ট সার্জন…
হিয়া:রাহুল স্যার😭😭😭

রাহুল:নাহ আর পারছি না এবার আমার খুব হিংসে হচ্ছে…..আচ্ছা ক একটা সার্টিফিকেট পুড়িয়ে দিলে কেমন হয়?

(রাহুল পকেট থেকে গ্যাস লাইট টা বের করে আগুন জ্বালিয়ে সার্টিফিকেট গুলোর সামনে ধরে)

হিয়া:নাহ না না আপনি ওরকম কিছু করবেন না…প্লিজ ওগুলো ঠিক করে রাখুন…স্যার প্লিজ😭😭😭😭😭😭😭😭😭😭

রাহুল:আরে এতো ভয় কেনো পাচ্ছো। এতো ভয় তো সেদিন রাতেও তুমি পাও নি যেদিন আমি তোমাকে

হিয়া এবার কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পড়ে😭😭😭😭😭😭😭

রাহুল:আচ্ছা বেশ আমি এগুলো আমার ড্রয়ার এ রেখে দিচ্ছি তুমি যেদিন আমার হবে আমি এগুলো স্বসম্মানে উজানকে দিয়ে আসবো

….রাহুল সব সার্টিফিকেট ব্যাচ মেডেল গুলো ওর ড্রয়ারে রেখে চাবি টা নিজের ওয়ালেটে ঢুকিয়ে নেয়..
রাহুল:এই যে চাবি টা দেখছো এটা এখন সবসময় আমার কাছে থাকবে…
হিয়া:উজাজাজাজানননন😭😭😭😭

রাহুল:উজানকে ডেকে লাভ নেই।ওহ আসবে না…

হিয়া:আপনার সমস্যা তো আমাকে নিয়ে আপনি কেনো ওকে এসবের মধ্যে আনছেন স্যার…😭😭

…..রাহুল এবার রেগে গিয়ে এক হাতে হিয়ার চুল আর এক হাতে হিয়ার গাল দুটো গায়ের জোড় দিয়ে ধরে..

রাহুল:কি ভেবেছিলে।আমি এতো সহজে তোমাদের দুজন কে ছেড়ে দেবো…খুব অহংকার ছিলো না তোমাদের দুজনের…পড়লে তো সেই মুখ থুবড়ে….এই এই কষ্ট টাই তো দেখতে চেয়েছিলাম আমি…কাদো হিয়া আরো কান্না করে…এভাবে আতকে উঠো এভাবেই হাত জোড় করো ক্ষমা চাও…এটাই তো দেখতে চাই…

….হিয়ার গাল দুটো রাহুল শক্ত করে চিপে ধরায় হিয়া কথা বলতে পারে না তবু চেষ্টা করে..

হিয়া:উজান এসব জানতে পারলে আপনি ভাবতেও পারছেন না কি হবে আপনাদের সাথে😡😡

রাহুল:তাই কি করতে পারবে ওহ….সব তো এখন আমার কাছে….

হিয়া:কি চাই আপনার😭😭😭

রাহুল:বললাম না তোমাকে।উজানকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করে নেও…আগে একটা রাতের জন্য হলেও চেয়েছিলাম তোমাকে কিন্তু তোমার স্যার উনি তো মাঝখানে গন্ডগোল টা পাকিয়ে দিলো।এখন তো আমার একটাই লক্ষ্য কিভাবে ওর কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিয়ে নিজের করা……….😠😠

হিয়া:উজান আর হিয়াকে কেউ কখনো আলাদা করতে পারে নি আর কখনো পারবেও না😡

রাহুল:এখনো এতো তেজ হ্যা😠😠😠….কি আছে উজানের।সব টাই তো শেষ….বেকার ছেলে একটা…জাস্ট থার্ড ক্লাস যার নিজের বলতে কিচ্ছু নেই. রাস্তার ভিক্ষারীও না ওর চাইতে বড়োলোক আছে…রাসকেল একটা😡

….উজানের জন্য এসব কথা শুনে হিয়ার সহ্যের সীমা ভেঙ্গে যায় হিয়া আর নিজেকে সামলাতে না পেরে রাহুল কে একটা থাপ্পড় মারে…

হিয়া:যেমন আপনার চরিএ তেমনি আপনার মানসিকতা…😡😡

রাহুল:এতো বড়ো সাহস তোমার তুমি আমাকে মারলে…….😡😡😡

হিয়া:আহ😭😭😭

রাহুল:খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।তা ডাকো তোমার উজান স্যার কে কই আসুক তোমাকে বাচাঁতে।

হিয়া:ছিঃ আপনি এতো নোংরা

রাহুল:সে তুমি যাই বলো… আমি তোমাকে শুধু আজ রাত টা ভাবার জন্য সময় দিলাম তুমি উজান কে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করবে না হলে আমি এইসব সার্টিফিকেট মেমোরি চিপ সব পুড়ে ছাই করে দিবে তখন চাইলেও আর উজানকে নির্দোষ তুমি প্রমাণ করতে পারবে না…নাও ইউর ডিসিশন বাট একটা শর্ত আছে

হিয়া:কি শর্ত😭😭

রাহুল:রিলাক্স বেবি….শর্ত টা হলো এই যে উজান যেনো কোনো ভাবে কোনো ভাবে মানে কোনোভাবে এটা না জানতে পারে যে আমি তোমাকে জোড় করে এসব করিয়েছি আর যদি জানতে পারে তাহলে
হিয়া:তাহলে😭😭

রাহুল:সব কিছু হওয়ার আগেই আমি এগুলো পুড়ে শেষ করে দিবো আর তোমার মেয়ে হিয়ান কে

হিয়া:খবরদার যদি আমার মেয়ের কোনো কোনো ভাবে আপনি কোনো ক্ষতি করারর চেষ্টা করেছেন তো😡

রাহুল:তাহলে এই কথাই রইলো।যাও বাসায় গিয়ে ঠান্ডা মাথায় ভাবো সবটা তোতোক্ষন সবটা আমার কাছে আমার আলমারিতে সেফ এ থাক…

…..

উজান হিয়ান কে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছিলো।একটা সময় হিয়ান ঘুমিয়ে গেলে উজান হিয়ানকে বিছানায় শুইয়ে দেয়…উজান নিজের ফোন টা চেক করতে গেলে হিয়ানের ঝুনঝুনি টা খাটের নিচে পড়ে যায়..

উজান:যাহ পড়ে গেলো😊

….উজান ঝুনঝুনি টা তুলতে গেলে দেখে হিয়ার গুড লাক মানে টাকা জমানোর ব্যাংক টা ভাঙ্গা।কেউ টুকরে গুলো খুব সাবধানে কোনায় পালা করে রেখেছে…উজান ওগুলো হাতে নিয়ে দেখে.

উজান:এটা এভাবে ভাঙ্গলো কে…এটা তো হিয়ার গুড লাক…….হিয়া এটা কবে ভাঙ্গলো আমি বাড়িতে থেকেও জানলাম না…….তারমানে কালকে আমার ওয়ালেটে ওতোগুলো টাকা এমনি এমনি আসে নি হিয়া ওর গুড লাক ভেঙ্গে আমার ওয়ালেটে রেখেছিলো………..(বিছানায় গিয়ে হিয়ানের পাশে শুয়ে ফোন টা বের করে কালকে বিকালে তোলা ছবি গুলো বের করে)
…….এতো কেনো ভালোবাসো আমাকে তুমি হিয়া…কি দরকার ছিলো মিথ্যা কথা বলার আমি তো নিয়েই যেতাম তোমাকে দুদিন পর…কিন্তু ম্যাডামের তো কালকেই যাওয়া চাই….(উজান এক মনে হিয়াকে দেখে আর কালকের দিনের পুরো বিকাল টার কথা ভাবতে থাকে)…..ইডিয়ট একটা….😊😊😍😍

বাসবি:রাজা আছিস….ঘুমোলো মা টা😊

উজান:হ্যা মা ঘুমালো…কিছু বলবে তুমি😊

বাসবি:রাজা শোন না বলছি কি সমরেশ এর কাছে টাকা নিতে কি সমস্যা তোর।এভাবে আর কদিন তুই ব্যাংক এর এই খুচরো টাকা গুলো দিয়ে চলবি😢
উজান:না মা সে আমি যেভাবেই চলি।এমনতি সেদিন আমার সাসপেন্ড এর সাথে ১কোটি টাকা ওটা পুরোটাই বাবা দিয়েছে।আমি আর বাবার কাছে কিচ্ছু নিতে চাই না মা প্লিজ তুমি আমাকে জোড় করো না😢
বাসবি:রাজা
উজান:আমি হিয়া আমরা এভাবেই ভালো আছি মা।
বাসবি:ঠিক আছে আমি তোকে জোড় করবো না।তা তোর বউ টি আজ কোথায় আবার টিউলিপে গিয়েছে বুঝি
উজান:তুমিও না মা।ওর মাথায় যে কখন কি চলো😊

বাসবি:আচ্ছা আমি একটু বাহির থেকে আসছি।কিছু লাগলে বুলি কে বলিস ওহ আছে বাড়িতে

উজান:হুম.
….বাসবি চলে গেলে উজান ওর চশমা খুলে হিয়ানের গায়ে গা লাগিয়ে শুইয়ে পড়ে..
উজান:কোথায় তোর মা টা।খুব মনে পড়ছে হিয়া তোমাকে।তাড়াতাড়ি বাসায় এসো….তোমার কোলে মাথা রেখে খুব ঘুম দিতে ইচ্ছে করছে😢
পাবলো:এতো দেড়ি কেনো লাগছে হিয়াদির…একটা চিপ নিতে এতোক্ষন তো লাগার কথা না…..না আমার একবার ভিতরে যাওয়া উচিৎ…যদি কিছু…

….পাবলো যেতে ধরলে হিয়াকে আসতে দেখে..

পাবলো:বৌদি না হ্যা বৌদি তো……….একি বৌদি তুমি কাঁদছো…হিয়াদি…..কি হলো এভাবে কাঁদছো কেনো….বলবে তো নাকি….ঔ চিপ টা পেয়েছো…
হিয়াদি প্লিজ এভাবে চুপ করে থেকো না কিছু তো বলো….. আচ্ছা এখান টায় বসো তো আগে…বসো……নেও পানি টা খাও নেও….এবার বলো তো কাঁদছো কেনো তুমি

….হিয়া এক এক করে পাবলো কে সব কথা খুলে বলে…

পাবলো:তাহলে এখন😮

হিয়া:এখন তো সবার আগে তোমার দাদাভাই এর ঔ সার্টিফিকেট গুলো আমাকে নিতে হবে যে করেই হোক..

পাবলো:কিন্তু তুমি যে বললে ওগুলো ওনার আলমারিতে আর চাবি ওনার কাছে..

হিয়া:কিছু তো একটা উপায় বের করতে হবে পাবলো।আমার হাতে সময় ও বেশি নেই…..ওগুলো ওগুলো তোমার দাদাভাই এর এক একটা রাত জাগা, না খেয়ে না ঘুমিয়ে পড়াশুনোর সাথে নিজেকে একাকার করে দিয়ে অর্জন করা জিনিস আমি ওগুলো কোনোভাবে নষ্ট হতে দিবো না…

পাবলো:কিন্তু কিভাবে।দাদাভাই কে না জানিয়ে তুমি ওগুলো কিভাবে

হিয়া:আমি উজান কে জানাবো কিন্তু এখন না আগে ওগুলো হাতে পাই মেমোরি চিপ না হলেও চলবে কিন্তু ওগুলো হাতে নিয়ে তারপর ওকে জানাবো নাহলে রাহুল স্যার যদি জানতে পারে আমি উজান কে বলেছি তাহলে উনি উনি সব শেষ করে দিবে..

পাবলো:ঠিক আছে।আমি তোমার পাশে আছি।তোমার যখনি কোনো দরকার হবে শুধু একবার আমাকে জানাবে শুধু একবার….আর মম আর মেজ দাও জরিত তো এসবে এবার ওদের ও একটা শিক্ষা দিতে হবে…

হিয়া:হুম..

……হিয়া সেদিন অটোতে করে একা একা বাড়ি ফিরে।পুরো রাস্তা ওর নিজেকে অসহায় লাগতে শুরু করে।সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করতে থাকে….

হিয়া:সব সব আমার জন্য হলো।সেদিন যদি উজান আমাকে না বাচাতো তাহলে হয়তো রাহুল স্যার ওর এতো বড়ো ক্ষতি করতো না…আমাকে ক্ষমা করো তুমি উজান।তোমার এ অবস্থার জন্য কোনো না কোনোভাবে আমি দায়ী….আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি সবাইকে সবাইকে শাস্তি দিয়ে তোমাকে নির্দোষ প্রমান করবো আমি….😭😭😭😭

….হিয়া সেদিন এক রাশ মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে ঢুকে..গেটের কাছে বাসবি বুলি হিয়ান পাশের বাড়িতে ঘুরতে যাবে বলে বের হয়..

বুলি:দিদি তুই এসে গেলি….দেখ তোর মেয়ে কে আজ আমি সাজিয়ে দিলাম কেমন লাগছে বল
হিয়া:(মুখে হাসি নেই তবু জোড় করে হালকা হেসে)…কোথায় যাচ্ছো তোমরা 🙂

বাসবি:এইতো সামনে তোর পুস্পা কাকিমার বাড়িতে।ওনার মেয়ের আজ জন্মদিন আমাকে জোড় করে বলে গেছে যেতে।তাই ভাবলাম বুলি আছে ওকেও আর হিয়ান কেও নিয়ে যাই।খুশি হবে..তুই ও যাবি নাকি

হিয়া:না না তোমরা যাও

বুলি:গেট লাগায় দে দিদি।মামু নেই কাজে বেরিয়েছে বললো রাত হবে আসতে।
হিয়া:হুম..

…হিয়া গেট লাগিয়ে দিয়ে ওর রুমে ঢুকে….উজান ব্ল্যাঙ্কেট জড়ায় বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো..
উজান:এলে তুমি….তা আজ শপিং কেমন করলে?শপিং করলে না অন্য কোথাও গিয়েছিলে.. আরে আমি তো মজা করলাম😊😊

হিয়া:(মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে)..ভালো..

…..হিয়া ওর একটা জামা বের করে ওয়াশরুমে চলে যায় স্নান করতে।বার্থরুমে ঢুকে হিয়া ওর মুখ চিপে ধরে কাঁদতে শুরু করে আর সব কিছুর জন্য নিজেকে দায়ী ভাবে….অনেকক্ষণ পর

উজান:হিয়া…হিয়া হলো তোমার…ঠান্ডা লাগবে হিয়া…😊

হিয়া:(মাথা মুছতে মুছতে কান্না চাপা দিয়ে কোনোরকমে বের হয়)কিছু খাবে
উজান:একটু কফি করে দিও তবে এখন না পরে…
হিয়া:ঠিক আছে
….হিয়া উল্টোদিক হয়ে মাথা মুছতে থাকে কিন্তু চোখের পানি আর থামে না।এদিকে উজান বক বক করতে থাকে একটার পর একটা হিয়ার ওদিকে কোনো হুশ ই নাই….শেষে হিয়া আর নিজেকে সামলাতে না পেরে উজানের কাছে দৌড়ে গিয়ে ব্ল্যাঙ্কেট সরিয়ে উজান কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে…😭😭😭😭

উজান:আরে আরে আরে😮😮হিয়া কি করছো কি…হিয়া……(মনেমনে:কি হলো এটা হিয়া এভাবে।আসার পর থেকে দেখছি মুখ টা মন মরা…)….হিয়া কেউ কিছু বলেছে…(হিয়া উজানের বুকে মুখ গুজে দিয়ে মাথা নাড়ায় না)….তাহলে…হিয়া কাঁদছো তুমি…এই হিয়া আমি কিছু করেছি….হিয়া…আরে বলবে তো…. মাথা টাও মুছো নি ভালো করে।দেখো তো চুল গুলো ভেজা পানি পড়ছে…..ঠান্ডা লাগবে তো হিয়া…(হিয়া হাতের ইশারায় উজানকে বলে হিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতে)….কি,কি করবো জরিয়ে ধরবো..(উজান ব্লাঙ্কেট টা দুজনের গায়ের উপর দিয়ে হিয়াকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে)…..হিয়া তোমাকে বলছি না তুমি কাঁদলে আমার ভিতর টা ছিড়ে যায় তাও তুমি….হিয়া….এই মেয়ে কি হলো তোমার….(হিয়ার চুলের ভেতর আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে)….এবার কান্না না থামালে আমি কিন্তু রেগে যাবো হিয়া….

(অনেক্ষন পর হিয়া কান্না থামালে)…..দেখি তাকাও আমার দিকে….হিয়া….তাকাও….

উজান:কি হয়েছে

হিয়া:কই কিছু না তো(মুখে আবার হাসি).. এই তো দেখো আমি হাসছি।

উজান:একটু আগে যে কান্না করলে সেটা

হিয়া:ওহ ওটা ওটা তো এমনি।

FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:63

উজান:কি হয়েছে

হিয়া:কই কিছু না তো(মুখে আবার হাসি).. এই তো দেখো আমি হাসছি।

উজান:একটু আগে যে কান্না করলে সেটা😒

হিয়া:ওহ ওটা ওটা তো এমনি।😊

উজান:তুমি আমার কাছ থেকে লুকোচ্ছো হিয়া😢

তুমি জানো না তুমি অন্য কারো কাছে মিথ্যে বলতে পারলেও আমার কাছে ধরা পড়ে যাও…

হিয়া:আমি ঘুমোবো😊
উজান:কথা ঘুরাচ্ছো হিয়া😢
হিয়া:নাহ সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে😢
উজান:ঠিক আছে আসো আমার বুকে..😊
হিয়া:হুম….😊

হিয়া ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে…কিছুক্ষণ পর…

উজান:কি মিসেস চ্যাটার্জী ঘুম ভাঙ্গলো…এই নিন😊
হিয়া:হুমমমমমম….কি করেছো কি…তুমি আবার😮
উজান:কেনো আমি কি কফি বানাতে পারি না।একদিন না হয় আমার এই ইডিয়ট টাকে কফি বানিয়ে খাওয়ালাম তাতে কি…😊

হিয়া:হুমম তাহলে তো খেতে হয়…😊

….হিয়া উঠে বালিশে হেলান দেয়.

উজান:আচ্ছা হিয়া তোমার গুড লাক টা কোথায় অনেক দিন দেখি না…😊

হিয়া:(এই রে সেরেছে কাজ। এখন ওকে কীভাবে বলি আমি ওটা কাল ভেঙ্গেছি😖😖)

উজান:কি হলো চুপ করে কেনো😊

হিয়া:এই তুমি হঠাৎ আমার গুড লাক এর কথা কেনো বলছো😒😒শুনো হ্যা ওটা আমার গুড লাক…ওটাতে নজর দিবে না কিন্তু,তোমার পকেটে যদি এক পয়সাও না থাকে আমি ওটা ভাঙ্গবো না বলে দিচ্ছি 😏😏

উজান:তাই…….
হিয়া:😏😏😏😏

পরের দিন সকালে…..
হিয়ার আজ মুখে কথা নেই।রাহুল ওকে একটা রাতি সময় দিছে।এরপর কি হবে হিয়া জানে না…এমন সময় রাহুল আসে…হিয়া ভাবতেও পারে নি রাহুল এভাবে আচমকা ওদের বাড়িতে চলে আসবে…..

রাহুল:আসতে পারি
বুলি:আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
রাহুল:হিয়া বাসায় আছে…?
বুলি:দিদির কাছে এসেছেন…দিদি বাসায় আছে আসুন আপনি..ভিতরে আসুন………এই দিদি….দিদি….

এমন সময় উজান সকালের কফি মগ টা বুলি কে দিতে এসে।রাহুল কে দেখে উজান রেগে যায়।উজানের রাগ চরম পর্যায়ে চলে যায়।উজান হাত থেকে মগ টা ফেলে দিয়ে তেড়েবেগে এসে রাহুল এর কলার ধরে….

উজান:বুলি মগ টা রাখো………….রাহুল………হাউ ডেয়ার ইউ কোন সাহসে তুমি এখানে এসেছো😡😡😡তুমি কি ভুলে গেছো আমি কি করেছি তোমার সাথে….😡😡

রাহুল:কাম ডাউন ডক্টর চ্যাটার্জী…….আমার কলার টা ছাড়ন😡…..হিয়া হিয়া….

উজান:(আরো জড়ে কলার চেপে ধরে)…..হিয়ার নামো তুমি মুখে আনবে না….এতো সাহস কে দিলে তোমাকে আমার বাড়িতে এসে এভাবে হিয়াকে ডাকার…😡😡😡

রাহুল:(কলার থেকে উজানের হাত ছেড়ে)…..হিয়া….হিয়া….

…..হিয়া নিজের চুল গুলো মুছতে মুছতে বাহিরের ঘরে এসে রাহুল কে দেখে অবাক হয়ে যায়….

হিয়া:রাহুল স্যার আপনি

….রাহুল হিয়ার কাছে এসে হিয়ার কানে কানে..

রাহুল:কি ভাবলে তাহলে…তুমি এখন আমার সাথে যাবে না আমি উজানের ওসব সার্টিফিকেট মেমোরি চিপ ওগুলো😊
হিয়া:না…😢

উজান:কি হলে হিয়া।কি বলছে ওহ তোমায়…..এতো সাহস হলো কি করে হিয়ার কাছে যাওয়ার….😡😡

রাহুল:রিলাক্স উজান চ্যাটার্জী।আমি তো হিয়াকে নিয়ে যেতে এসেছি…হিয়া তুমি বলোনি বাসায়…

উজান:হিয়া ও এসব কি বলছে।হিয়া চুপ করে থেকো না হিয়া😡

রাহুল:আমি বলছি।হিয়া এখন আমার সাথে যাবে আমরা কিছুক্ষণ ঘুরবো।ডিনার করবো।শপিং করবো।আরো কতো কতো কি….হিয়া যাও না রেডি হয়ে আসো দেড়ি হয়ে যাচ্ছেতো

উজান:(হিয়ার বাহু ধরে)এসব ওহ কি বলছে হিয়া।তুমি কোথথাও যাবে না।কোথথাও না মানে কোথথাও না….😡

হিয়া:আমাকে ছাড়ো উজান😢

উজান:হিয়ায়ায়ায়া😮

হিয়া:আমাকে যেতে হবে ছাড়ো আমাকে

রাহুল:(হিয়ার কাধ থেকে উজানের হাত সারিয়ে)…ওকে ছেড়ে দিন
….হিয়া ওর কাধ থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ওর রুমে চলে যায়….

হিয়া:হ্যালো পাবলো।তোমাকে কাল যা বলেছি সব মনে আছে তো
পাবলো:হ্যা বৌদি আমি একদম তৈরি।
হিয়া:আমি রাখছি তাহলে এখন…

…………..
উজান:কি বলেছো তুমি হিয়াকে।কি বলে ওকে ব্ল্যাকমেইল করেছে?আমি তোমাকে হাড়ে হাড়ে চিনি তুমি যে কতো নোংরা আমার তা জানতে বাকি নেই😡😡😡

রাহুল:তাই…তাহলে হিয়া কেনো রাজি হলো আজ আমার সাথে যেতে?শুধু আজ কেনো কালকে বিকেলেও তো এসেছিলো ওহ আমার ফ্লাটে তাহলে কাল কোনো এলো?

উজান:হোয়াট ননসেন্স।কি সব বলছো তুমি।আমি আমার হিয়াকে চিনি নিজের থেকে বেশি ওকে আমি বিশ্বাস করি ওহ কখনো নিজে থেকে তোমার কাছে যাবে না।

রাহুল:তাই যদি হয় তাহলে হিয়াকেই জিঙ্গেস করো ওহ কাল কেনো গিয়েছিলো আমার কাছে….ঔ তো হিয়া…কি হিয়া তুমি বলোনি যে কাল তুমি আমার কাছে আমার ফ্লাটে গিয়েছিলে

হিয়া:(মনেমনে:আমাকে ক্ষমা করো উজান।কখনো তোমাকে এসব আমি বলবো ভাবনাতেও আনি নি।কিন্তুআজ আমাকে বাধ্য হয়ে এসব বলতে হচ্ছে)……হ্যা গিয়েছিলাম তো

উজান:হিয়া….হিয়া কি বলছো তুমি এসব তোমার মাথা টা ঠিক আছে😭

হিয়া:আমি ঠান্ডা মাথায় সবটা বলছি।কি আছে এখন তোমার।যে আমি তোমার কাছে পড়ে থাকবো?

উজান:হিয়ায়ায়ায়া😭😭

হিয়া:আমি আমার জীবনটা নতুন করে শুরু করতে চাই প্লিজ তুমি আর আমাকে বাধা দিও না😢

উজান:আমি তোমার এগুলো একটা কথাও বিশ্বাস করি না।

উজান:হিয়া তুমি এভাবে যেতে পারো না।হিয়া লিসেন্ট হিয়া প্লিজ ডোন্ট ডু দিস ননসেন্স।হিয়া….😡😡😡

……হিয়া রাহুল কে নিয়ে বেরিয়ে আসে।এদিকে উজান কিছুতেই বিলিভ করে না হিয়া ওর সাথে এমনটা করতে পারে।

বাসবি:রাজা😢

উজান:মা এটা হিয়া না।আমি আমার হিয়াকে চিনি।ওহ কখনো এমন করতে পারে না।ওর যদি আমাকে ছেড়ে যেতেই হতো তাহলে তো প্রথম দিনি ছেড়ে যেতে পারতো বলো।এতোদিন তাহলে ছিলো কেনো আমার সাথে।ওকে আসতে দেও আমার জবাব চাই সব কিছুর।এক রাতে কি এমন হলো যে ওকে এই ডিসিশন টা নিতে হলো।

……এদিকে হিয়া রাহুল এর সাথে প্রথমে একটা রেস্টুরেন্ট এ যায়।কথা অনুযায়ী পাবলো ও সেই রেস্টুরেন্ট এ আসে।প্লান ছিলো হিয়া কোনোভাবে রাহুল এর পকেট থেকে চাবি গুলো নিয়ে পাবলোর হাতে দিবে আর পাবলো চাবি গুলোর ডুপ্লিকেট কপি তৈরি করে আসল চাবি গুলো রেস্টুরেন্ট এ ফেলে যাবে।প্লান মতো সব টাই হয় হিয়া খাবারের ফাকে চাবি গুলো সরিয়ে নিয়ে পাবলো কে দিয়ে দেয়।এরপর হিয়া রাহুলের সাথে একটা শপিং মলে যায়।রাহুল হিয়াকে কয়েকটা শাড়ি কিনে দেয়…

রাহুল:এই লাল বেনারসি টা তুমি আমাদের রিসিপশনে পড়বে।একদম লাল পড়িদের মতো লাগবে তোমায়।

…হিয়া রাহুলের প্রত্যেকটা কথা মুখ বুজে সহ্য করে নেয়।শাড়ি কেনা হলে ওরা জুয়েলারি দোকানে যায়।রাহুল হিয়ার জন্য একটা ডায়মন্ড এর নেকলেস সিলেক্ট করে।রাহুল হিয়ার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে নেকলেস টা পড়াতে গেলে হিয়া রেগে উঠে।

রাহুল:এতো রেগে যাচ্ছো কেনো সুইটহার্ট।আমি তো ধরেছি নাকি।

….হিয়া রাহুলের হাত থেকে নেকলেস টা নিয়ে নিজে পড়ে নেয়….এদিকে পেমেন্ট করতে গেলে রাহুল দেখে ওর পকেটে চাবি নেই।রাহুলের মাথা নষ্ট হয়ে যায়।রাহুল কিছুটা হিয়াকে সন্দেহ করে।পরে হিয়ার কথা মতো ওরা রেস্টুরেন্ট এ গেলে ওয়েটার এসে রাহুল কে বলে ওহ চাবি ফেলে গিয়েছিলো।এদিকে পাবলো দূর থেকে হিয়াকে হাত দেখিয়ে আশ্বাস দেয় ওর কাজ কম্পিলিট…হিয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাচলো…
হিয়া কে রাহুল ড্রপ করে দিতে চাইলেও হিয়া রাজি হয় না।নিজে একটা অটো ঠিক করে বাড়িতে পৌঁছে….

বাড়ির সামনে এসে হিয়া ওর হাতে থাকা শপিং ব্যাগ গুলো বাড়ির সামনের ডাস্টবিন টায় ফেলে দেয়।কিন্তু গলার নেকলেস টা খুলতে ভুলে যায়।এদিকে উজান বাড়িতে সবাই কে মানা করে দেয় হিয়া বাসায় এলে যেনো ওকে কেউ কিছু না বলে যা বলার উজান ওকে বলবে…….হিয়া এলে সবার সাথে চোখাচোখি হয় কেউ ওকে কিছু বলে না।হিয়াও কিছু না বলে ওর রুমে ঢুকে যায়….

…….
হিয়া রুমে ঢুকলে উজান গেট লাগায় দিয়ে হিয়ার হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় হিয়াকে ফেলে দেয়….হিয়ান পাশেই ঘুমোচ্ছিলো..

উজান:হয়েছে তোমার নাটক……এখন আমাকে একটু খুলে বলবা প্লিজ কেনো এমনটা করলে😡😡😡😡😡😡😡

হিয়া:(উঠতে ধরলে উজান আবার হিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে)…..আহ😢

উজান:আমাকে এ্যান্সার না দেওয়া পর্যন্ত তুমি এখান থেকে এক পাও নড়বা না😡😡😡

হিয়া:আমি আমি তোমাকে জবাব দিতে বাধ্য নই।

উজান:তুমি বাধ্য😡😡😡

হিয়া:আমি আমার জীবনটা কাকে নিয়ে থাকবো না থাকবো পুরো টা আমার বিষয়।আমি আর এভাবে থাকতে পারছি না।দম বন্ধ লাগছে আমার।শুধু দু বেলা খেতে পারলেই সব হয় না।জীবনে অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় যেটা এখন তুমি চাইলেও আমাকে দিতে পারবে না😡

উজান:(উজান এবার রেগে গিয়ে হিয়াকে ঠেসে ধরে)….তাহলে এতোদিন কেনো ভাবো নি সেসব😡😡😡আর কালকে রাত পর্যন্ত তো তুমি ঠিক ছিলে।আমার কাছে আমার এখানে(নিজের বুকের দিকে ইশারা করে)জরিয়ে ঘুমোলে আর একটা রাতে কি এমন হলো যে তুমি আমাকে ভুলে অন্য একজনের কাছে গিয়ে থাকতে চাইছো😡😡😡

হিয়া:বললাম তো আমি তোমাকে জবাব দিতে বাধ্য নই…😡😡

….হিয়া উজানকে সারিয়ে উঠে পড়ে।টেবিলে গিয়ে হোচট খায়…টেবিলের উপর হিয়ানের ফিডারের জন্য গরম পানি করা ছিলো ওগুলোয় গিয়ে হিয়ার হাত পড়লে হিয়ার হাত হালকা পুড়ে যায়।উজান দূত গিয়ে বার্নল মলম এনে হিয়াকে বিছানায় বসিয়ে মলম মাখতে থাকে…

উজান:এখনো নিজেকে সামলাতে পারো না আর তুমি কিনা গিয়েছিলে অন্য কারো সাথে জীবন সাজাতে😢
হিয়া:সেটা আমার ইচ্ছে😒

উজান:পারবে তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে😢
হিয়া:না পারার কি আছে😢

উজান:আর হিয়ান?
হিয়া:হিয়ান কে আমি আমার সাথে করে নিয়ে যাবে😢
উজান:আমার জীবনটা কেড়ে নিয়ে যাবে শেষ পর্যন্ত😢

হিয়া:তুমি হিয়ান কে কিছু দিতে পারবে না।তার চেয়ে হিয়ান আমার কাছেই ভালো থাকবে।

উজান:তাহলে কাঁদছো কেনো তুমি
হিয়া:কই না তো।আমি কেনো কাঁদবো।

….মলম লাগাতে লাগাতে উজানের চোখ যায় হিয়ার গলার নেকলেস টার উপর…

উজান:নেকলেস টা বোধহায় আমার দেওয়া দেওয়া নেকলেস টার থেকেও দামি😊

হিয়া:(হিয়ার নেকলেস টার কথা একদম খেয়াল নেই।উজান মনে করাতে হিয়া আতকে উঠে ওর গলার দিকে তাকিয়ে উঠে)

উজান:আর কি কিনে দিলো রাহুল তোমাকে😢

হিয়া:(আমাকে আর প্রশ্ন করো না উজান তুমি।প্লিজ চুপ করো এবার।আমি আর তোমাকে মিথ্যাে বলতে পারছি না আমার খুব খুব কষ্ট হচ্ছে কেনো এতো ভাবছো আমাকে নিয়ে তুমি।পুড়ে যাক আমার হাত😂😂😂)…

উজান:হিয়া আমি তোমাকে ছাড়া বাচতেঁ পারবো না😢

…..হিয়া আর কিছু না বলে উঠে ফ্রেশ হতে যায়…হিয়া রাতে ঔ নেকলেস টা রান্নাঘরের ময়লা ফেলার বালতি তে ফেলে দিতে গেলে উজান দেখে ফেলে…

উজান:(কি লুকোচ্ছো আমার কাছে হিয়া তুমি।আমি জানি এটা আমার হিয়া না।কেনো করছো এমন।একবার সবটা খুলে বলো।এটুকু ভরসা নেই নিজের উজান স্যারের উপর😢😢😢)

….এদিকে হিয়া ওটা ফেলে রুমে এসে হিয়ান কে আজ মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।উজান এসে হিয়া কে এভাবে শুতে দেখে উজানের খুব কষ্ট হয়।হিয়ান হওয়ার পর একমাএ টিউলিপের ইমার্জেন্সি ছাড়া উজান কোনোদিন রাতে হিয়াকে ওর বুকে না নিয়ে ঘুমোয়নি…

উজান:বাহ হিয়া।এতো টাই পর করে দিলে।আমার পাশে ঘুমোতেও তোমার এতো সমস্যা এখন…😢😢(উজান কিছু না বলে চুপ চাপ হিয়ানের পাশে দেয়াল ঘেষে শুয়ে পড়ে)

হিয়া:আমাকে ক্ষমা করো তুমি।অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে।শুধু আর একটা দিন একটা দিন পাবলো সব নিয়ে এলেই আমি তোমাকে সবটা জানাবো।কিন্তু এখন তোমার পাশে শুলে যে আমি নিজেকে আর নিজের মধ্যে রাখতে পারবো না।আমাকে তুমি ক্ষমা করো উজান।😢😢😢
পরের দিন পাবলো রাহুল এর বাসায় গিয়ে ওগুলো নিয়ে আসার কথা ছিলো।কিন্তু পাবলো যায় নি।না গিয়েই হিয়াকে ফোন করে টিউলিপের সামনে আসতে বলে…

হিয়া:হ্যা পাবলো বলো।
পাবলো:বৌদি কোনোভাবো কি এখন টিউলিপে আসতে পারবা
হিয়া:এখন এসময়।কেনো।আর টিউলিপে কেনো।তোমার তো আজ রাহুল স্যারের বাড়ি যাওয়ার কথা ছিলো।
পাবলো:ওসব কালকেও করা যাবে।তুমি প্লিজ একবার টিউলিপে এসো
হিয়া:ঠিক আছে আমি দেখছি…
…………..
বিকাশবাবু:কোথায় যাচ্ছিস তুই
হিয়া:আসছি
বিকাশবাবু:এটা আমার কথার উওর হলো না হিয়া।
হিয়া:বললাম তো আসছি।কাজ আছে আমার
বিকাশবাবু:কিসের কাজ তোর।আমাকে বোকা পেয়েছিস তুই।উজান তোকে কিছু বলতে মানা করেছে বলে আমরা সবাই চুপ আছি।কিন্তু আমি যদি দেখি কোনোরকম এদিক ওদিক আমি কিন্তু ভুলে যাবো তুই আমার মেয়ে।

…..হিয়া মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে পাবলোর সাথে দেখা করতে যায়…..

……
উজান:মা হিয়া কোথায়
বাসবি:বেরিয়েছে
উজান:কোথায় গিয়েছে ওহ।আবার রাহুল এসেছিলো।বলো না মা চুপ করে আছো কেনো
বাসবি:জানি না আমি।শুধু বললো ওর কাজ আছে।আমাকে আর কিছু জিঙ্গাস করিস না রাজা আমার ভালো লাগছে না।
………..
পাবলো:এসেছো তুমি।বাড়িতে কি বলে এলে।কোনো সমস্যা হয়নি তো
হিয়া:আর সমস্যা।তা তুমি আসল কাজ না করে আমাকে কেনো এখানে আসতে বললে
পাবলো:এটা নেও
হিয়া:কি এটা…পেন
পাবলো:হুম পেন ক্যামেরা।এটায় ক্যামেরা সেট করা আছে
হিয়া:হ্যা পেনে আবার ক্যামেরা।তা হয় নাকি
পাবলো:এখন কতো কি হয় তুমি ওসব খেয়াল রাখো
হিয়া:আমি শুনেছি এটার কথা কিন্তু সত্যি সত্যি হয় আজ দেখলাম।কিন্তু এটা দিয়ে আমরা করবো কি
পাবলো:বলছি।আমি এটা দাদাভাই এর কেবিনে রেখে এসেছিলাম আজ।আর আজ রাহুল বলে লোকটা মেজ দা ভাই এর সাথে দেখা করতে এসেছিলো।ওদের মধ্যে যা যা কথা হয়েছে ওল কনভারসেশন এটায় রেকর্ড করা আছে
হিয়া:সত্যি পাবলো
পাবলো:হুম বৌদি সত্যি
হিয়া:আমি যে কি বলে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো।অনেক অনেক থ্যাংকস পাবলো তোমাকে অনেক থ্যাংকস
পাবলো:আমি এটা দিতে বাড়িতেই যেতাম।কিন্তু বুলি মনে হয় কিছুটা ধরতে পেরেছে তাই রিস্ক নেই নি
হিয়া:ভালো করেছে কারন ওহ বুঝলে সোজা গিয়ে উজানের কানে লাগিয়ে দিতো।
পাবলো:এখন শুধু সার্টিফিকেট গুলো নেওয়া বাকি।কালকেই সব হয়ে যাবে
হিয়া:আরো একটা দিন উজানের সামনে মিথ্যা বলতে হবে।আর পারি না পাবলো।খুব কষ্ট হয় ওকে মিথ্যে বলতে।
পাবলো:আমি বুঝি বৌদিভাই।আচ্ছা এখন তুমি বাড়ি যাবে তো
হিয়া:হুম
পাবলো:আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো
হিয়া:না না।আমি পারবো যেতে
পাবলো:ওটা সাবধানে রেখো।
হিয়া:হুম…আসছি।
…হিয়া যেতে ধরলে রাস্তায় রাহুলের সাথে ওর দেখা হয়…
রাহুল:হিয়া না…কি ব্যাপার সুইটহার্ট তুমি এসময় টিউলিপে
হিয়া:আসলে আমি কিছু মেডিসিন নিতে এসেছিলাম বাবুর।কোথাও পাওয়া যাচ্ছিলো না তাই…
রাহুল:বাই দা ওয়ে কাল কিন্তু তোমায় আমাকে সময় দিতে হবে।আমার কিছু কাজ আছে
হিয়া:কি কাজ..
…এমন সময় হিয়ার ফোনে উজানের ফোন আসে..ফোন টা রাহুল রিসিভ করে…
উজান:হিয়া কোথায় তুমি
রাহুল:হিয়া আমার সাথে
উজান:কে
রাহুল:আমি রাহুল।এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে
উজান:হিয়ার ফোন তোমার কাছে এলো কোথা থেকে।হিয়া কোথায়
রাহুল:হিয়া বেবি তো আমার কাছে
উজান:জাস্ট শেট আপ।হিয়া কে ফোন টা দেও।হিয়াকে ফোন টা দেও বলছি
রাহুল:নেও তোমার সো কলড হাডবেন্ড কথা বলবে তোমার সাথে
হিয়া:হ্যালো
উজান:হিয়ান কাঁদছে তাড়াতাড়ি বাসায় এসো।(রাগে)
হিয়া:হুম…
রাহুল:এখুনি যাবে চলে।আর একটু থাকো
হিয়া:না যেতে হবে হিয়ান কাঁদছে
রাহুল:ওকে তাহলে কাল দেখা হচ্ছে
….হিয়া বাড়িতে এলে উজান আর নিজেকে সামলাতে পারে না….গেট লাগায় দিয়ে হিয়াকে জরিয়ে ধরে।
উজান:কোথায় গিয়েছিলে তুমি।কেনো করছো এমন
হিয়া:উজান আমাকে ছাড়ো
উজান:ছাড়বো না।কি করবে তুমি
হিয়া:ছাড়ো বলছি…
….(হিয়া উজানকে জোড় করে ছাড়িয়ে দিয়ে বাথরুমে চলে যায়…সারাটা সন্ধ্যা উজান নানা ভাবে হিয়ার কাছে সবটা জানতে চাইলেও হিয়া কিছু বলে না শুধু উজানকে এড়িয়ে যায়…রাতে আজকেও হিয়া হিয়ান কে মাঝ বরাবর শুইয়ে দিয়ে এক পাশে শুইয়ে পড়ে..উজান গিয়ে দেয়ালের পাশে শুইশে পড়ে।কারো চোখে ঘুম নেই।হিয়া শুধু কালকের দিন টার অপেক্ষা তে আছে।কখন পাবলে সব নিবে আর হিয়া উজান কে সবটা বলে দিবে….

মাঝরাতে উজান আর হিয়ার এই আচরণ নিতে পারে না।হিয়ান কে দেওয়ালের পাশে শুইয়ে দিয়ে উজান মাঝখানে শুইয়ে হিয়াকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে…উজানের কান্নায় হিয়ার গালের এক পাশ ভিজে যায়…

উজান:কেনো করছো হিয়া তুমি এমন।আজ আমার কিছু নেই বলে তুমি আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবে….এই হিয়া…হিয়া….হিয়া আমি জানি তুমি ঘুমোও নি..হিয়া কথা বলো না…(উজান হিয়াকে ওর দিকে ঘুরাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না)
…..আমার খুব কষ্ট হচৃছে হিয়া….আমি কাঁদছি তাও তুমি কিছু বলবে না….হিয়া ঘোরো না আমার দিকে…হিয়া…আমি আর পারছি না হিয়া…আজ দুদিন হলো তুমি আমাকে কোলে নিয়ে ঘুম পারাও না।হিয়া…এই হিয়া আমার ঘুম আসছে না একটু আমার মাথার চুল গুলো টেনে দেও না হিয়া…হিয়া…কথা বলো..হিয়া..
(সারারাত এভাবে উজান হিয়াকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে হিয়া কাঁদতে পারে না।ওকে যে দূর্বল হলে চলবে না।শক্ত থাকতে হবে যে না হলে কিভাবে ওর উজান স্যারের সবকিছু ওহ ফিরিয়ে দিবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here