আবার_প্রেম_হোক #নুসরাত_জাহান_মিম ৮০.

0
771

#আবার_প্রেম_হোক
#নুসরাত_জাহান_মিম

৮০.
“উজান অন্য কাউকে ভালোবাসে রামিম।ওর আর রিদির বিয়ে সম্ভব না।আমার ভাইয়ের উপর জোর করিয়ে কোনো ডিসিশন থপে দিতে পারবোনা আমি”

সবেমাত্র নিজ বাড়িতে সমুদ্রের সাথেই পা দিয়েছিলো চাঁদ।এবং ড্রয়িংরুমে উশ্মি আর রামিমকে বসা দেখে তাদের দিকে এগোলেই শুনতে পায় উশ্মির বলা উক্ত বাক্যটি।চাঁদ বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছে উশ্মি আর রামিমের পানে।অতঃপর সমুদ্রকে মৃদুস্বরে বলে,

“তুই ভাইয়ের রুমে যা ফ্রেশ হ”

“ওকে চান্দু”

বলেই কাধে ব্যাগ নিয়েই সমুদ্র হাটা ধরে চৈত্রের রুমের দিকে।আর চাঁদ এসে বসে উশ্মির পাশে।উশ্মির পাশে চাঁদ বসতেই রামিম চাঁদকে জিজ্ঞেস করে,

“কেমন আছো চাঁদ?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”

“এইতো আলহামদুলিল্লাহ তবে বউকে ছাড়া আর ক’দিন থাকবো?এবারতো আমার বউকে আমার কাছে ফেরত দাও”

চাঁদ হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে,

“তা যাবে তবে আপনারা উজান আর রিদিকে নিয়ে কিছু বলছিলেন?ওদের বিয়ে টাইপ সামথিং?”

হকচকিয়ে রামিম বলে,

“হ্যা না মানে আসলে হয়েছে কী!”

চাঁদ গম্ভীরভাবে বলে,

“কোনো পেঁচানো কথা না ভাইয়া।যেটা সত্যি সেটাই শুনতে চাচ্ছি”

রামিমও বেশ থমথমেভাবে বলে,

“আসলে চাঁদ ডিসিশনটা আমাদের নয়,বড়দের।তারাই উজান আর রিদিকে একসাথে দেখতে চান।রিদি যখন এইটের এক্সাম দিলো নাইনে উঠবে তখনই সকলে ডিসিশন নেয় উশ্মিকে আমাদের বাড়ি আনবে আর রিদিকে তাদের বাড়ি নেবে।কিন্তু উশ্মি এখন বলছে উজান নাকি অন্য কাউকে পছন্দ করে”

চাঁদ সোজাসাপটাভাবে বলে,

“হ্যা উজানের গার্লফ্রেন্ড আছে।এবং ওদের সম্পর্কও অনেক বছরের তাছাড়া রিদিও উজানকে ভাই বাদে অন্য নজরে দেখেনা।আপনাদের ওদের নিয়ে আর আগানো উচিত হবে না ভাইয়া”

উশ্মি প্রশ্ন করে,

“কিন্তু এটা ফ্যামিলিতে কী করে বলবো?উজানতো এখনও পড়ছে।চাইলেইতো ওর বিয়ে দিতে পারছিনা”

“কেনো পারবেনা?উজান পড়ছে মানলাম কিন্তু ও তো জবও করছে পাশাপাশি।আর চাচ্চুরও তো টাকাপয়সা কম আছে এমন না।উজান অবশ্যই সুপাত্র।মেয়ের বাড়ি থেকে অমত করবেনা”

রামিম বলে,

“হ্যা তা অবশ্যই করবেনা কিন্তু বাবা-মা’দের কী বোঝাবো বুঝতে পারছিনা”

চাঁদ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে,

“আপাতত কাউকে নিয়েই কিছু ভাবার প্রয়োজন নেই।যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে দিন।আমি দেখছি কী করা যায়”

হঠাৎ ই উশ্মি বলে,

“সবার জীবনের প্রব্লেম সর্ট আউট করছো অথচ নিজেরটার করছো না কেনো?”

গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,

“আমায় নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই।ভাইয়া আপনি উশ্মিকে নিয়ে আপনাদের বাড়ি ফিরে যান।বউ ছাড়া থাকা হয়তো কষ্টদায়কই”

“আমার ভাইও তো কষ্ট পাচ্ছে”

রামিমের কথা চাঁদের কর্ণকুহর হলেও সে না শোনার ভান ধরে উশ্মিকে বলে,

“ভালোমতো যেও আর গিয়ে কল দিও আমায়”

আর একমুহূর্ত সেখানে বসে না চাঁদ।উঠে যায় সেখান থেকে।অতঃপর নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আজিমপুর কলোনির এক ফ্লাট পুরোটাই প্রণয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো।যেহেতু তার নিজস্ব বাড়িই ছিলো তাই কখনো প্রয়োজন পড়েনি এখানে আসার।তবে মাস দুয়েক পূর্বেই যখন তার বাবা তাকে বাড়ি হতে বিতাড়িত করলেন সে ভেবেছিলো বন্ধুদের সাথে থাকলে কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলতে পারবে তবে মিরের থেকে প্রত্যাখ্যান পাওয়ার পর সে আর কারও কাছেই যায়নি।ইচ্ছা জাগেনি যাওয়ার।মেয়ে বান্ধবীরা যতই ঘনিষ্ঠ হোক সে কোনোদিনও একজন মেয়ের বাসায় থাকাকে প্রশ্রয় দেয়নি,কেনোনা তা তার স্বভাব বহির্ভূত।সে সর্বদাই ছিলো মেয়ে এলার্জে!টিক,তবে ব্যতিক্রম কেবল তার একান্ত নারীর ক্ষেত্রে।তাই রিহা আর পূর্ণতার বাসায়ও যাওয়া হয়নি।এবং রবিনের বাসায় সে নিজে থেকেই যায়নি।ছেলেটা যতবার তাকে বারণ করেছে সে শোনেনি উলটো তাকে দিয়ে কঠিন কঠিন কাজ করিয়েছে যা সে করতে চায়নি।তাই অপরাধবোধ থেকেই তার বাড়িও যাওয়া হয়নি।অতঃপর কয়েকদিন ভবঘুরের ন্যায় রাস্তায় রাস্তায় ই ঘুরে বেড়িয়েছে।চাঁদের বাসার নিচে গেলেও ভেতরে যাওয়ার সাহসটুকু তার কখনোই হয়নি।ফ্যামিলির সকলেই চাইলো তাদের ডিভো!র্স করাতে তবে প্রণয়ের গাম্ভীর্যতার ন্যায় তার জেদ সম্পর্কেও অবগত তারা।তাই চেয়েও ডিভো!র্সটা করাতে পারেনি।তিনদিন যখন বাইরে বাইরে ছিলো,কোনো খাওয়া নেই কিছু নেই যেকেউ দেখলে তাকে পাগল উপাধি ছাড়া আর কিছুই দেবেনা।পরবর্তীতে তার আর কিছু মনে নেই।সে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলো তারই মেডিকেলের এক প্রাইভেট কেবিনে।সকলকে জিজ্ঞেস করার পরও সে জানতে পারেনি আদোতে জ্ঞান হারানোর পর কে তাকে হাসপাতাল অব্দি এনেছিলো।তবে তার জানতে ইচ্ছা হয় সেই উদার মানুষটার সম্পর্কে।দিন গেলো মাস গড়ালো নিজেকে সে ফের শক্তপোক্ত করলো।চলে আসলো এই এপার্টমেন্টে।প্রফেশনাল লাইফ তার ঠিক থাকলেও ঠিক ছিলোনা ব্যক্তিগত জীবন।সারাক্ষণ কাজের মাঝে থাকার পর যখন আবার একলা হয়ে যেতো সে কি যাতনা!ছেলেদেরও যে দুঃখ হয় এটা কেউ বোঝার চেষ্টা করেনা কেন?কেনো কেউ একটু বুঝতে চায়না তাদের?এসব ভাবতে ভাবতেই একটা ড্রয়ারের কাছে গিয়ে তা খুলে সেখান হতে ডিভো!র্স পেপার টা বের করে সেখানে চাঁদের সাইন দেখার পরেও মৃদু হাসে প্রণয়।কখনো কারো সামনে না হাসা ছেলেটাও একলা ঘরে খানিক শব্দ করেই হাসে।কন্ঠনালি কাপে তার,বিড়ালাক্ষীজোড়া বন্ধ হয়।অতঃপর গলা উচু করে লম্বা শ্বাস ভেতরে টেনে মুখ দ্বারা বায়ু নির্গত করে হাতে থাকা ডিভো!র্স পেপারটা আবারও ড্রয়ারে রেখে তারই পাশে সন্তপর্ণে পড়ে থাকা চাঁদের শাড়ি পরা এক হাস্যোজ্জ্বল ছবি হাতে নিয়ে সে পানে একধ্যানে পলকহীন মগ্ন হয়ে মনে মনে সে বলতে লাগে,

“কত বোকা আপনি চাঁদ।কী করে ভাবলেন যাকে বছরের পর বছর হৃদয়ে লালিত করেছি তাকে এক নিমিষেই দূরে সরে যেতে দেবো?নাইবা হলো আপনার আর আমার প্রেম।নাইবা পেলাম কাছে আপনায়।আপনাকে কাছে পাওয়ার জন্যতো ভালোবাসি নি।ভালো কিন্তু আমিও আপনাকে বেসেছিলাম।তা তো আপনি দেখতে পারলেন না?উপলব্ধিও কি করতে পারলেন না?আমি আপনার সাথে কী খারাপ কাজগুলো করেছি শুধু সেইটুকুই দেখলেন?ভালো কতখানি বেসেছি তা কেনো দেখতে পারলেন না?ওহ আমি প্রকাশ করতে পারিনা বলে?আহিনের মতো আপনার পিছু পিছু ঘুরতে পারিনি বলে?নাকি ওর ন্যায় কখনো মুখ ফুটে ভালোবাসি বলিনি বলে?আচ্ছা বলুন তো ভালোবাসি না বললে কি ভালোবাসা হয়না?সকলেতো জানতো আমি আপনায় ভালোবাসি।আপনি নিজেও জানতেন।তবুও বোঝার চেষ্টা করেননি।আমি ইন্ট্রোভার্ট বলে মানুষের ন্যায় বারবার আপনাকে বলতে পারিনি আমি আপনাকে ভালোবাসি চাঁদ।সকলেই দেখলো আপনার জন্য বহু ছেলে পাগল।তারা নাকি আপনাকে ভালোবাসে।ভালো আপনাকে বাসতেই পারে।তবে প্রণয়ের ন্যায় ভালো আপনাকে কেউ বাসতে পারবেনা।সবাই ভাবে আপনাকে কষ্ট দেয়ার পর আমি খুব ভালো ছিলাম।অথচ কেউ এটা দেখলোনা আমার হৃদয় দহন যন্ত্রণায় কতটা পু*ড়েছে।নিজের অন্তরালের কথাগুলো কাউকে বলতে পারিনা বলে কেউ তো একটুও বোঝার চেষ্টা করতোনা।কারো থেকে অবশ্য আশা করিও না।তবে আপনিও করেন নি চাঁদ।আপনার ভাগের দুঃখগুলো সকলেই দেখলো, বুঝলো।তবে আমারটা কাকে বলবো?আমিতো কাউকে বলতে পারিনা।বলার চেষ্টাও করিনি কখনো।আর সেদিন কিন্তু ইচ্ছা করে আপনাকে ধাক্কাও দেইনি।ভুলবশত হয়ে গিয়েছিলো।আপনাকে র*ক্তাক্তবস্থায় দেখে প্রাণপাখিতো আমারও উড়াল দিতে চেয়েছিলো চাঁদ।কই সেটাতো কেউ দেখলোনা?সেদিন আপনি কেনো পালালেন?না পালালেই কি হতোনা?হ্যা আমি জানি এবং মানিও আমার আচরণ আপনার প্রতি ঠিক ছিলোনা কিন্তু কেউতো জানার চেষ্টা করলোনা আমি কেনো অমন করেছিলাম?যেমনভাবে কেউ জানেনা সে রাতে আপনার আর অরণের মাঝে কী হয়েছে?কোন ছেলে নাকি আপনাকে পছন্দ করে ফেলেছে সেখানে?পছন্দতো অনেকেই করে চন্দ্রময়ী।তবে ভালো ক’জন বাসে?অথবা বাসতে পারে?আপনি চলে যাওয়ার পরও এমন একদিন যায়নি আপনার বিরহে আমি দিনযাপন করিনি।মনের অন্তরালে শতশত প্রশ্ন অথচ জবাব দেবার জন্য ছিলেন না আপনি,ছিলোনা অরণ।আপনি যদি আমার প্রাণ হন অরণতো আমার নিশ্বাস।তাকে সেভাবে আপনার দ্বারা ক্ষ*তিগ্রস্ত হতে দেখে এবং আপনার বিরুদ্ধে এতশত প্রমাণ এমনকি নিজ চোখে দেখা জিনিস আমিতো ভুলতে পারিনা।যতবার আপনার চেহারাটুকু নজরে এসেছে,আপনাকে যতবার দেখেছি বি*শ্রী মুহুর্তসমূহ চোখের সামনে বারংবার ভেসে উঠেছে।তা কী করে বলবো কাউকে?এগুলোতো বলা যায়না।অন্তত আমি চাইনা সেসব কেউ জানুক।আপনি পূত-পবিত্র,কলঙ্কহীন এক চাঁদ চন্দ্রময়ী।আপনাকে আমি নাইবা পেলাম।তবে থাকুক না আপনার পাশে আমার নামটা?মরণের আগ অব্দি আপনি কেবল প্রণয়ের হয়েই বাঁচলেন নাহয়?আমিও নাহয় দূরে থেকেও আপনার হয়েই বাঁচি।তবে অন্য কারো হওয়ার কথা কেনো বলেন?কেনো বললেন আজও?জানেন না এ হৃদয় ক্ষ*তবি*ক্ষত হয় আপনাকে অন্যের সাথে চিন্তা পর্যন্ত করলে?অতীতের জিনিসগুলোর পূণরাবৃতি কেনো ঘটাতে চাচ্ছেন?এত এত রহস্য আমি কী করে উন্মোচন করবো?কী করেই বা আমার বন্ধুকে আবার আগের ন্যায় দেখবো?কতকিছু যে করা বাকি!আপনার আমার ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে কে কী করেছে,কেনো করেছে,সে রাতে কী হয়েছে এতগুলো জিনিস কী করে কী করবো আমি?কার থেকে সাহায্য চাইবো?তার মাঝে আবার কী বললেন?আমায় ডি‌!ভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবেন?ইহিম!তাতো সম্ভব না।অন্তত প্রণয় বেঁচে থাকতে চাঁদ অন্য কারো হতে পারেনা,হতে দেবোনা।আপনি সর্বদা মিসেস চাঁদ রুহায়ের প্রণয় হিসেবেই বেঁচে থাকুন আমি তাই চাই তাই চাই।আপনার নামের পাশে আমার মরণের পরেও প্রণয় নামটা জ্বলজ্যান্ত থাকুক তাই চাই”

মনের অন্তরালের কথোপকথন শেষ করে ছবিটা আগের জায়গায় রেখে ডিভো!র্স পেপার ফের হাতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই চার টুকরায় কাগজগুলো ছিড়তে কালবিলম্ব করলোনা প্রণয়।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে মৃদু হাসলো।হাসলো তার ঐ বিড়ালাক্ষীদ্বয়ও।হৃদয়ে ছেয়ে গেলো প্রশান্তির রেখা।এখন আর কোনো বাধা নেই বিপত্তি নেই।চাঁদ নামক ঐ চন্দ্রময়ী কেবলই প্রণয়ের নামে লিখিত এবং আমরণ থাকবে।হৃদয় চাইলো মরণের পরেও যেনো সে তারই থাকে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই চাঁদ বেরিয়ে গেছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে এবং সেখান থেকেই উজানকে একটা রেস্টুরেন্টে ডাকিয়েছে কিছু আলাপ-আলোচনার জন্য।আগে থেকেই চাঁদ কয়েকটা মেয়ের সাথে কথোপকথন করছিলো।উজানকে দেখতে পেয়ে সে উজানকে বললো,

“তুমি একটু খালি কোথাও বসো ওদের সাথে কথা বলেই আমি আসছি”

“ঠিক আছে ভাবি”

মিনিট বিশেক পর চাঁদের ফোনে মেসেজ এলো উজানের,

‘ভাবি আমি কি চলে যাবো?’

উজানের মেসেজ পেয়ে সকলকে বিদায় জানিয়ে উজানের দিকে এগিয়ে চেয়ার টেনে সামনাসামনি বসতেই উজান চাঁদকে প্রশ্ন করে,

“হাতে কী হয়েছে তোমার ভাবি?”

উজানের করা প্রশ্নে নিজ ডান হাতের দিকে নজর যায় চাঁদের।সে পানে তাকাতেই তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে গতকাল বিকালের কিছু মুহুর্ত,

চাঁদ আর সমুদ্রকে একসাথে হাটতে দেখে লম্বা শ্বাস ফেলতে ফেলতেই সেদিকে এগোয় প্রণয়।অতঃপর হঠাৎ করেই দু’জনের সামনে গিয়ে দাড়াতে চাঁদের পা জোড়া থমকায়,হাসিও বদ্ধ হয়।মুখ হয় গোমড়াটে।ঘাসপানে নজর রেখেই সে উপলব্ধি করে সামনে থাকা মানুষটা তার কোনো এক সময়কার অত্যন্ত প্রিয়,তারই হৃদমানব।যার দেহের সুভাসেই তাকে চিনতে কালবিলম্ব হয়না চাঁদের।তবে এখন আর আগের ন্যায় অনুভূতি জাগেনা।নিজেকে শক্তপোক্ত করে উপরের দিকে দৃষ্টি দিতেই দৃষ্টিমিলন ঘটে দুজনার।প্রণয়ের পানে তাকাতেই বুকের ভেতর কিছু একটা খিচে ধরে তার।সে যে কি যন্ত্রণা!লোকটাকে আগেতো কখনো এভাবে দেখেনি?এমন কেনো লাগছে?তার শুভ্র মুখশ্রীর সেই উজ্জ্বল ভাবটা কোথায় হারিয়েছে?ফর্সা মুখটা হালকা শ্যাম বর্ণের হলো কেমোনে?চোখের নিচের কালচে দাগগুলো কি কিছু বলতে চাইছে চাঁদকে?যেই আঁখিদ্বয়ের প্রেমে চাঁদ পড়েছিলো সেই অসম্ভব সুন্দর বিড়ালাক্ষীজোড়া এতটা নিরলস কী করে হলো?এতটা প্রাণহীন কেনো লাগছে তাদের?গালভর্তি ঘন দাড়িসমূহের আড়ালেও যে ভেঙে যাওয়া চোয়াল চাঁদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়তে পৌঁছালো দ্রুতই।তবে তাকেতো দাড়িহীন অথবা হালকা দাড়িতেই বেশ লাগে।ঘন দাড়িতেতো মানায় না!চুলগুলোও বেশ অগোছালো,অযত্নে বোধহয় বেড়ে উঠেছে তারা?কাটেনা নাকি?নিজের যত্ন কেনো নেয়না?একজন ডাক্তারের তো আগে নিজেকে পরিপাটি রাখা উচিত।এই প্রণয়কেতো চাঁদ চেনেনা।কেমন অদ্ভুত লাগছে।এত বেশি শুকিয়েছে কেনো?খায়না নাকি ঠিক মতো?অতঃপর প্রণয়ের জন্য তার চিন্তাগুলো নিজের বিবেকেই বাঁধলো চাঁদের।যেই ছেলে তার কথা বিন্দুমাত্র ভাবেনি।অপমান,লাঞ্চণা-বঞ্চণার কথা স্মরণে আসতেই চোয়াল জোড়া শক্ত হলো চাঁদের।দাঁতে দাঁত চেপে নাসারন্ধ্র প্রসারিত করে লম্বা শ্বাস নিলো।দৃষ্টিতে একরাশ ঘৃ!ণা প্রকাশিত পেলো।আর বেশিক্ষণ এই মানবের চোখে চোখ রাখা যাবেনা।ঐ বিড়ালাক্ষীজোড়া যে তার ধ্বংসের মূল!যেকোনো সময় তার জীবনে প্রলয় ঘটাতে তারাই সক্ষম,অন্য কোনো পন্থার প্রয়োজন নেই।তাই চাঁদ তার দৃষ্টি অন্যদিকে করলো।অতঃপর সমুদ্রের হাত ধরে অন্যদিকে যেতে নিলে ভেসে আসলো প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর,

“কেমন আছেন চাঁদ?”

প্রণয়ের প্রশ্নে চাঁদ থামতে না চাইলেও সমুদ্র থামলো।থেমে প্রণয়ের দিকে চেয়ে বললো,

“কে আপনি?আর চাঁদের নাম কী করে জানেন?ওয়েইট আপনার ক্যাট আইজ দ্যাটস মি…..”

সমুদ্রের কথা সম্পন্নের পূর্বেই চাঁদ বললো,

“লোকটাকে আমি চিনিনা জান।জানিনা কী করে আমার নাম জানলো।চলোতো তুমি”

চাঁদের কথায় বিস্ফোরিত নয়নে তার পানে তাকালো প্রণয়।তাকালো সমুদ্রও।সে আপাতত বোঝার চেষ্টা করছে চাঁদ করতে টা কী চাচ্ছে?সামনে থাকা লোকটা যে প্রণয় সেটা তার বিড়ালাক্ষীর মাধ্যমেই বুঝতে পেরেছে কিন্তু চাঁদের কাছ থেকে যেরকম তার সম্পর্কে সে শুনেছিলো এখন মোটেও তেমন লাগছেনা।কেমন একটা রোগা রোগা ভাব তাতে বিদ্যমান।এই লোক নাকি আবার ডাক্তার?তাও আবার সার্জন?নিজেরইতো চিকিৎসার প্রয়োজন।অন্যকে কী চিকিৎসা দেবে সে?এসব ভাবনার মাঝেই প্রণয়ের গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে,

“কী যা তা বলছেন?আপনি আমায় চেনেন না?আর…..আর এই লোকটাকে জান বলছেন কেনো?কে হয় ইনি আপনার?”

“তার কৈফিয়ত আপনাকে অবশ্যই আমি দেবোনা।যান তো,আদারওয়াইজ আমি লোক ডাকাবো”

“ডাকান।আমিও দেখি আমার বউ আর কতক্ষণ অন্য এক ছেলের সাথে এঁটে থাকে”

প্রণয়ের মুখে প্রথমবারের ন্যায় ‘আমার বউ’ শুনে অনুভূতি শূন্য হলো চাঁদ।কিছুক্ষণের জন্য স্মৃতিশক্তি লোপ পেলো তার।ধ্যান ভাঙলো সমুদ্রের ডাকে,

“এই চাঁদ ইনি কি প্রণয় ভাই……”

সমুদ্রকে ফের মাঝপথে আটকে দিয়ে চাঁদ বলে,

“হ্যা সোনা এই লোকই আমার প্রথম স্বামী।তুমি বেশিকিছু ভেবোনা।আমাদের খুব শীঘ্রই ডি!ভোর্স হয়ে যাবে”

কপাল কুচকে প্রণয় বলে,

“হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ডি!ভোর্স হয়ে যাবে?আমি না ম*রা অব্দি আমার থেকে মুক্তি পাবেন না আপনি।ডি!ভোর্সতো পরেরই বিষয়”

কিয়ৎক্ষণের জন্য আঁখি জোড়া বন্ধ করলো চাঁদ।অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নিয়ে বললো,

“আমি কী করবো কী করবো না সেটা অবশ্যই আপনার থেকে জানবোনা আমি?”

“তা জেনেও কী করবেন?ছেলেটা কে হয় বললেন না?”

চাঁদ বেশ দ্রুত গতিতেই বললো,

“বয়ফ্রেন্ড।আমার পুরোনো প্রেমিক হয় সে।আর আপনাকে ডি!ভোর্স দিয়ে আমি ওকেই বিয়ে করবো”

চাঁদের কথা শুনে হাসতে গিয়েও হাসলোনা প্রণয়।তবে চাঁদের কথা তার কাছে কৌতুকের থেকে কোনো অংশে কম মনে হলোনা।সে গম্ভীরভাব বজায় রেখেই বললো,

“সিরিয়াসলি চাঁদ?আপনি বলছেন এই ছেলেটা আপনার বয়ফ্রেন্ড?তাও আবার পুরোনো?এগুলো আমার বিশ্বাস করা লাগবে?সরি আয় জাস্ট কান্ট”

গম্ভীরভাবে চাঁদও বললো,

“বিশ্বাস করা না করা আপনার নিজস্ব বিষয়।অবশ্য কোন কালেই বা আপনি আমায় বিশ্বাস করেছিলেন?এখন আর আপনার বিশ্বাস পাবার আশায় থাকিও না”

বলেই সমুদ্রের দিকে চেয়ে বললো,

“এই জান এই লোকটাকে দেখিয়ে দাওতো আমরা আসলেই রিলেশনে কিনা?”

সমুদ্র ভ্যাবাচ্যাকার ন্যায় কেবল চাঁদের পানে চেয়ে আছে।সে চাঁদের পরিকল্পনার কোনোকিছুই বুঝতে পারছেনা।মেয়েটা করতে কী চাচ্ছে আসলে?সমুদ্রকে নিজের পানে তাকাতে দেখে মনে মনে বেশ বিরক্ত হয়ে মুখে হাসি ফুটিয়ে চাঁদ বলে,

“ওহ সমুদ্র!আমি বুঝিয়েছি টেক মি ইন ইওর আর্মস।কোলে নাও আমায়”

চাঁদের কথা শুনে রীতিমতো অবাক হয় সমুদ্র।চোখজোড়া বড় বড় করে চাঁদের পানে তাকিয়ে কিছু বলতে গেলেই দেখে চাঁদের কব্জি ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপাল বেশ কুচকে প্রণয় বলছে,

“আর ইউ ইনসেন চাঁদ?কী যা তা বলছেন আপনি?”

“বলছিই না করেও দেখাবো ওয়েইট”

কথাখানা বলেই প্রণয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সমুদ্রের দিকে চেপে এসে আঙুলের উপর ভর দিয়ে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে কী যেনো বলে চাঁদ।আর সমুদ্র একবার চাঁদের দিকে তাকায় তো আরেকবার প্রণয়ের।সে আসলে বুঝতে পারছেনা তার কী করা উচিত?চাঁদ সমুদ্রকে তাড়া দিতে দিতে বলো,

“কাম অন সমুদ্র।এখান থেকে দ্রুত নিয়ে চলো আমায়।এই লোককে দুচোখে আর সহ্য হচ্ছেনা আমার”

চাঁদের কথা শুনে তৎক্ষনাৎ সমুদ্রের দিকে তেড়ে এসে তর্জনী দ্বারা তাকে শাসাতে শাসাতে প্রণয় বলে,

“খবরদার আমার বউয়ের দিকে যদি এক হাতও বাড়িয়েছেন তো।আপনার হাত আর হাতের জায়গায় থাকবেনা।জাস্ট স্টে আওয়ে ফ্রম মাই ওয়াইফ”

প্রণয়কে নিজের দিকে আসতে দেখে ভড়কে গিয়ে এক পা পিছু হটে সমুদ্র।সমুদ্রকে ভয় পেতে দেখে রাগী চোখে তার পানে চাঁদের তাকাতেই সমুদ্র এখনও ভাবছে তার কী করা উচিত?দুই দিকেই তার বিরাট বিপদ।আপাতত আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কোনো উপায় সে দেখছেনা।এমতাবস্থায়ই চাঁদ সমুদ্রকে বলে,

“দেখো তুমি আমায় কোল…..”

চাঁদের কথা সম্পূর্ণ হবার পূর্বেই প্রণয় চাঁদের দিকে এগিয়ে এসে চাঁদের হাটুর নিচে একহাত আর অপরহাত কোমড়ে দিয়ে তাকে কোলে নিতে নিতেই বলে,

“নিয়েছি কোলে।এবার চুপ থাকুন।আর পরপুরুষ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন”

চাঁদের বেশ মেজাজ খারাপ হয়।সে তার হাত-পা ছুড়তে ছুড়তে বলে,

“দেখি ছাড়ুন,ছাড়ুন বলছি।মেজাজ খারাপ করবেন না আমার”

“এই ছেলেটা কে সেটা বললেই ছেড়ে দেবো আই মিন নিচে নামিয়ে দেবো”

এবার চাঁদ বেশ রুষ্ট কন্ঠে সমুদ্রের দিকে চেয়ে বলে,

“দেখ সমুদ্র তুই যদি আমায় এখন এখান থেকে না নিয়ে গিয়েছিস আয় উইল জাস্ট কি*ল ইউ টু বি অনেস্ট!এই লোকের কাছ থেকে নামা আমায়!”

সমুদ্র প্রণয়ের কাছে গিয়ে চাঁদকে ছুতে গিয়েও প্রণয়ের প্রখর চাহনীর কাছে হার মেনে আকুতি করে বলে,

“ভাই ভাই!চাঁদকে আপনি ছেড়ে দিন।আপনার ই তো বউ?আমি কি মানা করেছি নাকি?আমি কে আপাতত সেটা বললে আপনার বউ আমায় জ্যা!ন্ত রাখবেনা।দয়া করে আমার উপর একটু রহম করে মেয়েটাকে নামিয়ে দিন।পরবর্তীতে আমার সম্পর্কে জানতে পারবেন।আপাতত বিষয়টাকে ক্লোজ করুন প্লিজ‌!”

সমুদ্রের কথানুযায়ী চাঁদকে বেশ সাবধানে নামানো মাত্রই বেশ শব্দ করেই জোরেসোরে তার বাম গালে এক চ!ড় পড়ে।গাল গরম হয়ে গিয়েছে তার।কান দিয়ে কেমন এক বাশির সুরের ন্যায় সিটি বাজছে।গাল তার বোধহয় জ্বলে গিয়েছে।এইটুকুনি মেয়ের গায়ে এত জোর কোত্থেকে এলো?বিস্মিত নয়নে সে গালে এক হাত রেখে চাঁদপানে তাকালো।চাঁদকে ক্রোধান্বিত দেখে হকচকিয়ে গেলো প্রণয় এবং সমুদ্র দুজনেই।সেখানে উপস্থিত সকলের নজরই এখন তাদের দিকে।চড়ের শব্দটা যে বেশ জোড়ালো বোঝাই যাচ্ছে।এমন কিছু হবে না প্রণয় ভেবেছিলো আর না সমুদ্র।সমুদ্র অবাক চোখে কেবল চাঁদপানেই চেয়ে আছে।আর চাঁদ প্রণয়ের নাক বরাবর তর্জনী এনে বেশ চেচিয়েই বলছে,

“একবারতো বলেছি আপনাকে জীবনে আর চাইনা!যে সম্মান আর বিশ্বাস করতে জানেনা সে ভালোও বাসতে পারেনা।এবং আমিও আপনাকে ভালোবাসিনা।ডিভো!র্স পেপারতো পাঠিয়েছিই!সাইনও আছে তবুও বেশরম,বেহায়া এবং বেলাজের ন্যায় পিছু কেনো নিচ্ছেন?আপনার ব্যক্তিত্বের সাথে এসব একদমই যায়না প্রণয়।মোটেও যায়না!নিজের প্রতি ঘৃ!ণা কেবলই বাড়াচ্ছেন বৈ কমাচ্ছেন না।আর কোন কোন স্তরে আপনি নামবেন বলুন তো?কেনো বুঝতে চাচ্ছেন না আপনাকে আমার লাগবেনা!আপনার পাশে আর থাকতে চাচ্ছিনা আমি।দূরত্ব বজায় রাখবেন আমার থেকে”

কথাগুলো বলেই সমুদ্রের হাত ধরে সেখান থেকে চলে আসে চাঁদ।আর প্রণয় কেবলই তাকিয়ে থাকে চাঁদের চলে যাওয়ার দিকে।

পার্কের অন্যপাশে গিয়ে সমুদ্র আর চাঁদ বসতেই চাঁদের হাত নিজের দিকে টেনে এনে সমুদ্র বলে,

“তোর হাতের দিকে তাকিয়েছিস একবার?কতটা লাল হয়ে গিয়েছে?এত জোরে কেউ কাউকে মা!রে?”

সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে বেশ গম্ভীরভাবে চাঁদ বলে,

“কষ্টের বদলে কষ্ট এবং প্রতিশোধের বদলে প্রতিশোধে বিশ্বাসী আমি”

চাঁদের পাশে বসে থেকে দৃষ্টি ঘাসপানে রেখেই সমুদ্র ভরাট কন্ঠে বলে,

“তাই বলে তুই প্রণয় ভাইয়াকে থা!প্পড় দিবি চাঁদ?”

শেষের বাক্যখানা মনে আসতেই উজানের ডাকে ধ্যান ভাঙে চাঁদের,বাস্তবে ফেরে সে।অতঃপর হাত হতে দৃষ্টি সরিয়ে বলে,

“তেমন বিশেষ কিছুনা।চোট পেয়েছি খানিক”

উজান চাঁদের কথার প্রেক্ষিতে হাতের দিকে চেয়ে থেকেই বলে,

“ব্যান্ডেজ করা আবার তাতে র*ক্তের ছোপও আছে আর তুমি বলছো বিশেষ কিছুনা ভাবি?”

To be continued…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here