আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড) #নুসরাত_জাহান_মিম #সূচনা_পর্ব

0
898

#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
#সূচনা_পর্ব

“কেবলমাত্র সেই এক নারীর জন্য রক্ষক থেকে ভক্ষক হতেও আমার কোনো দ্বিধা নাই”

প্রণয়ের দ্বিধাহীন গম্ভীর স্বর শ্রবণ হতেই তার ঠিক সামনে বসে থেকে তার পানে একধ্যানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ব্যারিস্টার সমুদ্র চৌধুরী।অতঃপর বলে,

“তাই বলে এতগুলো খু*ন একসাথে কী করে ভাইয়া?আর কেনোই বা?”

এবারে হাজতের উঁচু পাকায় বসে থেকেই ঘাড় সামান্য বাকিয়ে নত দৃষ্টি সমুদ্রের পানে রেখে ধীরকন্ঠে প্রণয় শুধায়,

“কেনো করেছি তা আমি তোমায় কেনো?কাউকেই বলবোনা।তবে হ্যা সবটাই ছিলো আমার ধীর পরিকল্পিত কয়েক মাসের পরিকল্পনা”

পাকা হতে উঠে প্রণয়ের পাশে গিয়ে বসতে বসতে সমুদ্র বলে,

“কীরকম?”

ঠান্ডাস্বরে প্রণয় বলে,

“শুরুটা হয়েছিলো আরও মাস ছয়েক পূর্বে।যখন অনাকাঙ্ক্ষিত,অপ্রত্যাশিত কিছু সত্যের সম্মুখীন হই আমি।তারপর পরই বেশ কয়েক দিন চিন্তা করে সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম এই ব!র্বর পশুরা কখনোই যাবৎ জীবন অথবা কয়েক বছরের শাস্তি ডিজার্ভ করেনা।তারা আসলে মৃ*ত্যু ব্যতীত অন্য কিছুই ডিজার্ভ করতে পারেনা।এবং যেনোতেনো মৃ*ত্যু নয়।একটা ভয়ংকর,গা শিরশিরানো মৃ*ত্যু তাদের উপহার দেয়ার জন্যই আমার যত পরিকল্পনা।এবং নিজ হাতেই তাদের তা দিয়ে আমি পরিতৃপ্ত হবো এবং হয়েছিও”

“নিশ্চয়ই তারা মারাত্মক খারাপ কিছু করেছে?কিন্তু কী করেছে ভাইয়া?”

মাথা ধীর গতিতে কিঞ্চিৎ ডানে বায়ে করে প্রণয় বলে,

“ইহিম!না সমুদ্র।এর উত্তর আমি কখনোই কাউকে দেবোনা”

“কিন্তু ভাইয়া যদি আপনি না বলেন তাহলে আপনাকে কী করে?”

মৃদু ঠোট বাকিয়ে প্রণয় বলে,

“আর তিনদিন আছে সমুদ্র।কী করবে তিন দিনে?অথবা কী করতে চাও?কিছুই সম্ভব না।আমি আমার পরিণতি জানি।এবং আমি তাতে সত্যিই পরিতৃপ্ত”

“আর চাঁদ?চাঁদ আর আপনার অনাগত বাচ্চা?”

এবারে মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,

“আমার চন্দ্রকে বলবে মেয়ে হলে নাম রাখতে প্রণয়িনী”

“আর ছেলে হলে?”

“সেটা আমি আমার চন্দ্রের উপরই ছেড়ে দিলাম”

“মেয়ে খুব প্রিয়?”

শান্তস্বরে প্রণয় শুধায়,

“আমার প্রিয় কেবল তিন নারী।আমার মা,আমার চন্দ্র এবং আমার ভবিষ্যৎ কন্যা”

“ভাইয়া এখন তো বলুন কেনো খু*নগুলো করলেন?আর কীভাবে করলেন?আপনার নিজের গায়েও তো বেশ জখম ভর্তি”

“একসাথেতো সকলকে মা!রি নি।যার যার বাড়িতে গিয়ে মা*রার চিন্তা ছিলো।তবে তাদের সকলকে একই জায়গায় এনে তারপর মে*রেছি।ঐ যে?শহীদুল্লাহ হলের পাশে?হয়তো একটু আগে পরে হয়েছে তবে তারা সেটাই ডিজার্ভ করতো।সেই জায়গায় বেশকিছু স্মৃতি জড়িত আমার অথবা তাদেরও”

শুক্রবার রাতে ‘রাজ ভিলা’ জ্বালিয়ে দেবার পর সেই ভোরেই প্রণয় নিজেকে আড়াল করে সকলের নজর হতে।এমনকি নিজ মানুষদের থেকেও।অতঃপর পুরো একদিন আড়ালে আড়ালে থেকে পরেরদিন ছদ্মবেশে হাজির হয় কাশেম বাবুর্চির বাড়িতে।সে এসেছে ওয়াইফাই অফিসের কর্মরত লোক সেজে।প্রথমেই বাড়িতে ঢুকে সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করে কাশেম বাবুর্চির মেয়েকে সে তারই রুমে সুযোগ বুঝে আটকে নেয়।আটকায় তার স্ত্রীকেও।অতঃপর তাদের দিইয়েই কল দেওয়ায় কাশেম বাবুর্চিকে।পরপর তিনবার রিং বাজার পর সে ফোন ধরতেই তার মেয়ে ক্রন্দনরত কন্ঠেও নিজেকে সামলে বলে,

“হ্যা….হ্যালো বাবা?তুমি একটু জলদি আসোতো।আম্মুর প্রেশার অনেক বেড়ে গেছে।তুমি প্লিজ জলদি আসো।আর ডাক্তার নিয়ে এসো”

“বেশি সমস্যা হয়েছে রে?”

“হা…হ্যা বাবা।প্লিজ জলদি আসো”

কথাখানা বলতেই প্রণয় ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তা কেটে দিয়ে মৃদুস্বরে মেয়েটাকে বলে,

“থ্যাংক ইউ”

অতঃপর ফোন ফ্লোরে আছড়ে মেরে রুম থেকে বের হতে নিলেই মেয়েটা চেচিয়ে বলে,

“ভা…..ভাইয়া?আ….আমাদের ছাড়লেন না?”

মেয়েটার কথা শুনে ঘাড় বাকিয়ে তার পানে চেয়ে কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে ফের তার দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই মুখে হাসি ফুটে মেয়েটার।কিন্তু বেশিক্ষণ তা স্থায়ী হয়না।যখনই প্রণয় তার মুখে ফের কস্টেপ লাগিয়ে দেয় তখনই মেয়েটা নড়চড় শুরু করলে গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বলে,

“ডোন্ট মুভ”

অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে দরজা আটকে দিয়ে বের হয় বাড়ির বাইরে।বের হতে হতেই মুখের রুমাল খুলে পকেট থেকে মাস্ক বের করে তা পরিধান করে প্রণয়।অতঃপর হাতের ব্যাগ হতে এপ্রোণ বের করে তা গায়ে দিয়েই ছুটে চলে সামনের দিকে।উদ্দেশ্য কাশেম বাবুর্চির নিকটে যাওয়া।এবং দ্রুতই সে পৌঁছেও যায়।মেডিকেলের আশেপাশেই সে ঘুরঘুর করতে আরম্ভ করে।যেইনা কাশেম বাবুর্চিকে নজরে পড়ে তার সামনে দিয়ে এসে তার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতেই গায়ে পড়ে তার।বেশ বিরক্ত হয় কাশেম বাবুর্চি।অতঃপর প্রণয়ের দিকে চাইতেই প্রণয় তাকে বেশ সাবধানে এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে অপর হাত দিয়ে তার দুই হাত একসাথেই চেপে ধরতে খানিক হিমশিম খেলেও সে ধরে রাখে।মিনিট চারেকের ন্যায় প্রণয়ের সাথে ধস্তাধস্তি করে ঢলে পড়ে কাশেম বাবুর্চি প্রণয়ের বুকের কাছটায়।কাশেম বাবুর্চির থেকে প্রণয় বেশ লম্বা হওয়ায় তার বুকের কাছেই কাশেম বাবুর্চির মাথা ঠেকে থাকে।আর প্রণয় কপাল কুচকে বেশ সাবধানতার সহিত তাকে ধরে কাধে উঠিয়ে শহীদুল্লাহ হলের ঝোপের দিকে নিয়ে এসে প্রচন্ড ক্ষু*ব্ধ হয়েই ছুড়ে ফেলে কাচা মাটির দিকে।সশব্দেই কাশেম বাবুর্চির অচেতন দেহখানা গিয়ে পড়ে ঘাসের উপর।তবে কোনো হেলদোল নেই তার।যেনো ম*রার মতো পড়ে রয়েছে সে।

“তারপর?তারপর কি কাশেম বাবুর্চিকে সেখানেই মে*রে ফেললেন?”

সমুদ্রের কথা শুনে লম্বা শ্বাস ফেলে গম্ভীরভাবে প্রণয় বলে,

“না”

“তাহলে?”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়ালে টানানো সিলিং ফ্যানের দিকে পলকহীন চেয়ে আছে চাঁদ।মুখ তার শুকনো।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।গালের মাংস খানিক কমে গিয়েছে বোধহয়।গলার হারও স্পষ্ট।চোখের দুই পাশ দিয়ে পানির দাগ বসে গিয়েছে।কীসের সেই পানি?দুঃখে জর্জরিত বুক ফাটা আ!র্তনাদের?নাকি মুখ ফুটে বলতে না পারা সহস্র বেদনার?উত্তর মেলেনা কোথা হতে।কোনো নড়চড় নেই।সেই যে প্রণয়ের সাথে শেষবার দেখা হয়েছে কোর্টে এরপর বাড়ি এসে রুম থেকে বেরই হয়নি চাঁদ।দু’একটা ধমকে ধামকে বাচ্চার দোহাই দিয়ে পানি আর জুস ব্যতীত অন্যকিছুই খাওয়ানো যায়নি তাকে।কী করেই বা খাবে?গলা দিয়ে আদোতে নামবে খাবার?তা কি সম্ভব?চেষ্টা করলেও কি সম্ভব?কেনো মেয়েটার জীবনে এত দুঃখ,এত কষ্ট?কেনো তা কমার নাম নেয়না?একটু কি সুখের পাওনা সে নয়?সুখ খানিক উঁকি দিয়ে কেনোই বা পালিয়ে বেড়ায়?এসব ভাবতে ভাবতেই দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে একধ্যানে চেয়ে থাকে তার পানে রুবা।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেতরে প্রবেশ করে চাঁদের মাথার কাছটায় বিছানার উপর গিয়ে বসে সে।বসে হাতের খাবারের প্লেটটা টেবিলের কাছে রেখে চাঁদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

“বাবুর জন্য স্যুপ করে এনেছি ভাবি।খাবেনা একটু?”

কোনো হেলদোল দেখা যায়না চাঁদের মাঝে।সেভাবেই পলকহীন উপরের দিকে চেয়ে আছে সে।বেশকিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর ঘাড় খানিক বাকিয়ে দৃষ্টি রুবার পানে করে চাঁদ।অতঃপর কেবল চেয়েই থাকে।চাঁদের করুন আর মলিন দৃষ্টি দেখে রুবার ভেতরটা মুচড়ে উঠে।হতাশার শ্বাস ফেলে ফের কিছু বলতে নিলেই চাঁদ চোখের ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে রুবাকে।রুবাও কেবলই চুপ করে চেয়ে থাকে তার পানে।

মিনিট দশেক পর রুবা চলে গেলে রিদি উপস্থিত হয় সেখানে।এবারে চাঁদের দৃষ্টি জানালা বরাবর।পলক তার পড়ছেনা,কেবলই শ্বাস ওঠানামা করছে।রুমের ভেতর এগিয়ে আসতে আসতেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিদি।অতঃপর বিছানার কাছে বসে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,

“নিজের স্বার্থে বাবুকে কেনো অযথা কষ্ট দিচ্ছো ভাবি?বাচ্চাটা কী দোষ করেছে?”

আকস্মিক রিদির কন্ঠস্বর পেয়ে কোনো নড়চড় চাঁদের মাঝে না হলেও বাচ্চার কথা শুনে জানালা হতে দৃষ্টি সরিয়ে রিদির পানে করে চাঁদ।তবে সে থাকে ভাবলেশহীন,মুখে কোনো রা নেই।কেবলই রিদির পানে তাকিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে মাথা কাত করে বালিশের দিকে।চাঁদের এরূপ দশা কেউই মানতে পারছেনা।রিদিও পারলোনা।সে এসেছিলো চাঁদকে জোর করে খাওয়াতে তবে সেও রুবার ন্যায় ব্যর্থ হলো নিজের অনুভূতির কাছে।নিজেকে দাড় করালো চাঁদের জায়গায়।যদি আজ সে চাঁদের জায়গায় হতো?আর মির হতো প্রণয়ের?ভাবতে গিয়েও থেমে যায় রিদি।যে জিনিস তার পক্ষে ভাবাই সম্ভব না ঠিক সেটাই চাঁদ আর প্রণয় সহ্য করছে।মস্তিষ্কে চাপ পড়ে রিদির।সে বাচ্চার কথা বেমালুম ভুলে স্যুপের বাটি টেবিলে রেখে উঠে চলে যেতে নিলেই দরজা খোলার আওয়াজ পায়।অতঃপর সে পানে তাকিয়ে দেখতে পায় মির এদিকটায়ই আসছে।মিরকে দেখে বুকের ভেতর যন্ত্রণা হয় রিদির।তারও অবস্থা বেশি একটা ভালো নয়।চোখের নিচে কালচে বর্ণ ধারণ করেছে,চোখদু’টোতে কেমন নিদ্রাহীন ভাব!যেনো কত রাত ঘুমোয় নি!অতঃপর চট করেই চাঁদের পানে তাকায় রিদি।চাঁদের অবস্থা তার তুলনায়ও অত্যাধিক করুন।এক রাতও কি মেয়েটা ঘুমাতে পেরেছে?পেরেছিলো কি?মির তার স্বামী বলে তার কষ্টটা নিমিষেই চোখে ধরা পড়লো।তবে চাঁদ?চাঁদের টা বুঝতে পারার ক্ষমতা আদোতে তার মাঝে আছে?ভাবনা হতে বিচ্ছেদ ঘটে মিরের সাথে চৈত্র আর রুবাকে দেখে।সে দ্রুতই উঠে গিয়ে রুবার পাশে দাঁড়িয়ে চৈত্র আর মিরকে জায়গা করে দেয় চাঁদের কাছে আসতে।মিরও খুব ধীরগতিতে এগিয়ে আসে চাঁদের নিকট।অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“এটা প্রণয় তোমায় দিয়েছিলো চাঁদ”

প্রণয়ের কথা শুনে চট করেই চোখ খোলে চাঁদ।অতঃপর দ্রুতগতিতে উঠার চেষ্টা করলে মাথা তার ঘুরতে আরম্ভ করে।সঙ্গে সঙ্গে এক হাতে মাথা অপরহাতে বালিশ খাম!চে ধরে চাঁদ।বোনের বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে চটজলদি তার পানে এগিয়ে আসে চৈত্র।চাঁদের পাশে বসে বোনকে আগলে নেয় বুকে।চাঁদও ভাইয়ের বুকে শরীরের ভার ছেড়ে দেয় নিমিষে।অতঃপর লম্বা শ্বাস ফেলে শুকিয়ে ফেটে যাওয়া র*ক্তাক্ত ঠোটজোড়া উন্মুক্ত করে কিছু বাক্য আওড়াতে,

“কী দিয়েছে প্রণয়?কবে দিলো আজ?”

কি যে করুন শোনালো সেই কন্ঠধ্বনি!যেনো কতবছর পর মেয়েটাকে কথা বলতে শুনলো সকলে।আচ্ছা কতদিন হবে মেয়েটা কথা বলেনা?এইতো হলো দিন দুয়েক।তবে এত দীর্ঘ কেনো মনে হচ্ছে তা?সকলের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটে মিরের কন্ঠস্বর কর্ণকুহর হতে,

“সেদিনই দিয়েছে যেদিন তোমাদের শেষ দেখা”

ফের লম্বা শ্বাস ফেলে চাঁদ আওড়ায়,

“কীসের শেষ হা?কীসের শেষ?আমার প্রণয়কে আমি রোজ দেখি।এদিকে দাও তার এপ্রোণ।সেদিন কেনো দাওনি?তুমি বেশ নিঠুর!পা!ষাণ।ঠিক মিরজাফরের ন্যায়ই মিরজাফর তুমি”

বেশ রুক্ষ কন্ঠে বাক্যসমূহ আওড়িয়ে মিরের হাত থেকে প্রণয়ের র*ক্তাক্ত এপ্রোন ছিনিয়ে নিয়ে চৈত্রের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বুকের কাছটায় তা জাপটে ধরে চোখজোড়া বন্ধ করে চাঁদ।অতঃপর চৈত্রের বাহুতে হাত রেখে বিছানা ছেড়ে নিচে নামতে গেলেই মাথা ঘুরিয়ে পড়তে নিলে চৈত্র তাকে ধরে বলে,

“করছিস কী?বস”

দৃঢ় কন্ঠে চাঁদ বলে,

“না।এখন আর বসার সময় নেই ভাই।নামতে দাও”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বোনকে ধরে দাড় করায় চৈত্র।অতঃপর চাঁদ প্রণয়ের দেওয়া এপ্রোণ গায়ে দিয়ে বিছানায় বসে পেটে হাত রেখে সে পানে চেয়ে মৃদু হেসে বলে,

“দেখেছো সোনা?তোমার বাবা-মা দুজনই তোমার সাথে আছে।আর তুমি পৃথিবীতে আসার আগেই তোমার আম্মু তোমার আব্বুকে তোমার সামনে হাজির করবে অ্যান্ড দ্যাটস আ প্রমিজ আমার লক্ষ্মী”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে গম্ভীরভাবে মির বলে,

“শুধু শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে কী লাভ চাঁদ?”

মিরের কথায় তার পানে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চাঁদ বলে,

“মীরজাফরি করবেনা ভাইয়া।সবসময় নেগেটিভ বলা থামাও”

এবারে চৈত্র বলে,

“ভুল কিছু তো বলেনি ছোটি।তোর কী মনে হয় প্রণয়কে তুই ছাড়…..”

“থামো!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
মাহতিম স্যারের বাড়িতে স্বাভাবিকভাবেই এসেছে প্রণয়।হাতে কিছু কাগজের ফাইল।একজন বৃদ্ধা মহিলা দরজা খুলে দিতেই প্রণয় তাকে সালাম দিয়ে মাহতিম স্যারের কথা বলতেই তিনি বলেন,

“ভেতরে এসে বসো বাবা।আমি মাহতিমের মা।ওকে ফোন দিয়ে বলছি।নাম কী তোমার?”

বাইরে দাঁড়িয়ে থেকেই প্রণয় নিম্নকন্ঠে বলে,

“স্যার বাসায় নেই?এই কাগজগুলায় উনার কিছু সাইন প্রয়োজন ছিলো”

“না বাবা।ও তো এখন কলেজে সম্ভবত।নাহয় হাসপাতালে থাকবে।তুমি ভেতরে আসো আগে”

“না না আন্টি ঠিক আছে আমি হাসপাতালেই যাচ্ছি”

“সে কী?বসো আমি ওকে ফোন দিচ্ছি”

“সমস্যা নেই আন্টি।আপনি একটু কষ্ট করে স্যারের থেকে জিজ্ঞেস করে দিলে ভালো হতো যে সে এখন এক্সেক্টলি কোথায় আছে”

“আচ্ছা বলছি।নামটা?”

“জ্বি অনিন্দ্য ঘোষ”

“ঠিক আছে দাড়াও”

কিয়ৎক্ষণ বাদে কানে ফোন লাগিয়ে প্রণয়ের নিকট আসতে আসতে তিনি বলেন,

“হ্যা অনিন্দ্য ঘোষ।তোর কাছে পাঠাবো?আচ্ছা ঠিক আছে”

অতঃপর কল কেটে দিয়ে প্রণয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন,

“বাবা অনিন্দ্য মাহতিম বলেছে কাগজগুলো নিয়ে তোমার বাড়ি যেতে।ও নাকি ক্লাস শেষ করে তোমার বাড়িতেই যাবে”

বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই প্রণয় বলে,

“আচ্ছা!আচ্ছা আন্টি।থ্যাংক ইউ”

“তুমিতো ভেতরে আসলেনা।পানি টা অন্তত খেয়ে যেতে?”

মৃদু হেসে প্রণয় বলে,

“অন্য একদিন খাবো আন্টি।আজ আসি”

অতঃপর রাস্তায় এসে ঠোট কিঞ্চিৎ বাকিয়ে মনে মনে প্রণয় শুধায়,

“এক ঢিলে দুই পাখি হা?”

মনে মনে আরও বেশ কিছু চিন্তাভাবনা করতে করতেই অনিন্দ্য ঘোষের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায় প্রণয়।

“আজ আর না।টাইম ইজ ওভার স্যার,বাইরে আসুন”

হাবিলদারের কন্ঠস্বরে ধ্যান ভাঙে প্রণয়সহ সমুদ্রের।কপাল কিঞ্চিৎ কুচকায়ও সমুদ্রের।বেশ বিরক্ত হয়ে সে বলে,

“ঠিক আছে”

অতঃপর প্রণয়ের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে সমুদ্র।আর প্রণয় হতাশার শ্বাস ফেলে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করতেই চাঁদের হাস্যোজ্জ্বল মুখশ্রী ভেসে উঠে সামনে।ঠোটজোড়া কিঞ্চিৎ বাকা হয় প্রণয়ের,হৃদয়ে শীতলতা ছেয়ে যায় তার।চোখজোড়া বন্ধ রেখেই বক্ষপটে দুই হাত গুজে এক পায়ের হাটু ভাজ করে পাকার উপরে উঠায় সে।কিয়ৎক্ষণ বাদেই হাবিলদার হাজতের দরজা খুলে খাবারের প্লেটসহ এক গ্লাস পানি রেখে ফের দরজায় তালা ঝুলাতে ঝুলাতে বলে,

“খেয়ে নিন স্যার”

তখনই গম্ভীরভাবে প্রণয় বলে,

“একটা প্রশ্ন ছিলো মামা”

প্রণয়ের কথা শুনে দরজায় তালা ভালো করে লাগিয়ে সেখানে দাঁড়িয়েই হাবিলদার বলে,

“জ্বি বলুন?”

হাবিলদারের নিকট এসে মৃদুকন্ঠে প্রণয় বলে,

“সঠিক সঠিক উত্তর চাই মামা।কোনো ভেজালতা চাইনা”

কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে হাবিলদার বলে,

“জা…জ্বি”

“আমায় আপনি করে কেনো বলেন?অথবা স্যার?সেই যোগ্যতাতো এখন আর আমার নেই।ভর্ৎসনার বদলে এটাকে সম্মান হিসেবে গণ্য করবো কি?যদি তাই হয় কেনোই বা?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাবিলদার বলেন,

“আপনার মতো মহৎ মানুষ আমি দু’টো দেখিনি স্যার।আপনার সম্পর্কে যত বলবো ততই কম।তবে আপনার গোটা ক্যারিয়ারে যে আপনার অপারেশনের দরুন আজ অব্দি একটা প্রাণও যায়নি সে খবর আমার জানা।আপনি শেষ অব্দি কাউকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যান।আর সফলও হন তাতে।সেই ইতিহাস সম্পর্কে অবগত আমি।তাই কারো প্রা!ণ নেয়া তাও এতটা বিভৎসকরভাবে এটা বিশ্বাস করতে খানিক কষ্টই হচ্ছে আমার।তবে তা যে আপনিই করেছেন তাও জানি।এবং নিশ্চয়ই এর পেছনে গুরুতর কারণ আছে।যা কাউকে জানাতে চাচ্ছেন না।রোজ তারা আপনাকে রিমাইন্ডে নেয়।কিছু বলেন না কেন স্যার?বলে দিলে কী হয় যে কেনো সবাইকে মে!রেছেন?অন্তত এতটা আ*ঘা*ত তো আপনাকে পেতে হতো না।আপনাকে রোজ এতটা বিশ্রীভাবে লাঠি,বেল্ট এসবের মা*র খেতে দেখতে আমার বেশ কষ্ট হয় স্যার।আপনি হয়তো জানেন না তবে আপনিই ছিলেন যে আমার নাতনির শ্বাসকষ্টের সমস্ত ঔষধের খরচাপাতি দিয়েছিলেন।এমনকি আপনার সম্পর্কে এও শুনেছি যাদের সামর্থ্য নেই অথচ মা*রা যাচ্ছে তাদের আপনি অপারেশন পর্যন্ত বিনামূল্যে করেন।এরকম ভালো মানুষের এরূপ পরিণতি আদোতে মানা যায় স্যার?আল্লাহ ভালো মানুষের সাথে এতটা নিষ্ঠুর না হলেই কি পারেন না?”

হাবিলদারের সমস্ত কথা শুনে প্রণয় নিম্নস্বরে বলে,

“বেশ অনেককিছুই তো জানেন মামা।তবে যা জানেন না অথবা জেনেও মানতে চাচ্ছেন না তা হচ্ছে আমার পরিণতি।এই পরিণতি আমি নিজেই নিজের জন্য ডেকে এনেছি।আমার জন্য কিছু চাইবোনা মামা।তবে একটুও যদি আমার প্রতি আপনার সেই সম্মানটুকু থাকে তবে বলবো আমার বউ বাচ্চার জন্য দুআ করবেন।আমি যখন থাকবো না তারা যেনো নিজেদের যত্নে এবং সুরক্ষিত রাখতে পারে”

এবারে হাবিলদার তার চোখের কোনা মুছতে মুছতে বলেন,

“আপনি বেশ শক্ত মনের অধিকারী স্যার।আমি চাইবো আপনারা তিনজনই একে অপরের সাথে যুগযুগ ধরে বেঁচে থাকেন”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রণয় বলে,

“আহারে মামা!কি যে চাইলা তুমি!অসম্ভাব্য এক জিনিস সে!”

এবারে হাবিলদার ঠোট চেপে প্রণয়ের মাথায় হাত রেখে ভার কন্ঠে বলেন,

“বাবারে!তোমার মতো মানুষ এরকমভাবে শেষ হতে পারেনা।তুমি আরও অনেক বছর এই ধরণীতে শ্বাস নেওয়ার অধিকার রাখো।তবে তবে……..”

আর কিছু বলতে পারেন না তিনি।খানিক থেমে ফের বলেন,

“তোমার সামনে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিনা বাবা।তুমি ভালো থাকো ভালো থাকো”

বলেই চলে আসেন সেখান থেকে।আর প্রণয় তার পায়ের কাছটায় রাখা প্লেটের দিকে চায়।চেয়ে থেকেই লম্বা শ্বাস ফেলে শক্ত ভাতের সাথে অল্প একটু আলুর ভর্তা দেখে মৃদু হেসে সেগুলোই মাখতে মাখতে মনে মনে বলে,

“মামারে!এই ধরণীর তথাকথিত ভদ্রলোকেরাই আমায় আর বাঁচতে দেবে না”

খাওয়া শেষে ঘন্টাখানেক পর দুই তিনজন হাতে লাঠি নিয়ে হাজতের ভেতরে ঢুকে।এক পলক তাদের পানে চেয়ে চোখজোড়া হাটুর দিকে রেখে পা দুটো ভাজ করে পাকার উপর উঠিয়ে দুই হাত দ্বারা ধরে নিজ থুতনি হাটুতে রাখে প্রণয়।অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখজোড়া বন্ধ করে।একজন পুলিশ তার কোমড়ের বেল্ট খুলতে খুলতে বলে,

“আজও বলবিনা তাইনা?সেই পরিকল্পনা করেই এভাবে বসেছিস?”

আরেকজন বেশ গম্ভীর কন্ঠে বলে,

“কেনো এভাবে নিজেকে আ!ঘা!তপ্রাপ্ত করো প্রণয়?সত্যিটা বলে দিলে কী হয়?হয়তো বেঁচে……”

সেভাবে বসে থেকেই লোকটাকে থামিয়ে দিয়ে প্রণয় বলে,

“বেঁচে যাবো স্যার?আমি বাঁচতে চাইলেও কি আপনারা আমায় বাঁচতে দেবেন?অথবা অন্য কেউ দেবে?দেবেনাতো।যা করতে এসেছেন করে চলে যান”

তৃতীয়জন লাঠি ঘুরাতে ঘুরাতে প্রণয়ের কাছে এসে ঠিক তার বাহু বরাবর শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে আঘা!ত করে বলে,

“বেশ অহংকার তোর তাইনা?আর কয়দিন বাঁচবি তুই?কয়দিন বাঁচবি হ্যা?তিনদিন পরেইতো তোর অধ্যায় সমাপ্ত তাও তোর এই গম্ভীর অহংকার কমেনা তাইনা?”

ক্রুর হেসে প্রণয় বলে,

“অনিন্দ্য ঘোষের জিহ্বার জন্য পরাণ উতলিয়ে পড়ে আপনার তাইনা?”

প্রণয়ের কথাখানা শেষ হতেই তার গাল বরাবর লোকটা লাঠি দিয়ে সজোরে আঘা!ত করে।সঙ্গে সঙ্গেই গালের চামড়া ফে*টে ধীরগতিতে র*ক্ত গড়ায় সেখান থেকে।চোখের কাছটায়ও বেশ আঘা!ত পায় প্রণয়।দাঁত খিচে কেবলই সবটা সহ্য করছে সে।এমনিসময় প্রথমজন তার বেল্ট দিয়ে প্রণয়ের পিঠের দিকে বেশ শব্দ করেই মা!রতে আরম্ভ করে।দ্বিতীয়জন কেবলই তাদের পানে হতাশার শ্বাস ফেলে চেয়ে থেকে বলে,

“এতটা শক্ত মনের অধিকারী কি তুমি না হলেই পারতেনা প্রণয়?”

বাকি দুইজনের একের পর এক বেশ রূঢ় এবং নির্দয় আঘা!ত শরীরে বহন করতে করতেই প্রণয় বলে,

“আমার জন্য মনের কোনায় শীতল অনুভূতি রাখবেন না স্যার।আমি তার যোগ্য নই”

কথাখানা বলতেও ভীষণ কষ্ট হয়েছে প্রণয়ের।গালে লাগা লাঠির আঘা!তে ঠোটসহ গালের ভেতরে দাঁত লেগে কেটে গিয়ে র*ক্ত বেরিয়ে দাঁত এবং মাড়ি লালচে বর্ণ ধারণ করে চিবুক বেয়ে র*ক্তসমূহ গড়িয়ে পড়ছে।সেইসাথে একের পর এক লাঠিকাঘা!ত এবং বেল্টের আঘা!তে শরীরের শার্ট চিড়ে র*ক্ত বেরুচ্ছে প্রণয়ের।কি যে অসহনীয় যন্ত্রণা!তবুও কোনোরূপ শব্দ উচ্চারিত হয়নি মুখ থেকে তার।যখনই লাঠি দিয়ে প্রণয়ের কপালের ঠিক ডান পাশ বরাবর আঘা!ত করা হয় দ্বিতীয়জন আর সেসব দেখতে না পেরে তৎক্ষনাৎ বের হয়ে যান হাজতের বাইরে।

To be continued…..

১ম খন্ড
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=726018616207234&id=100063973064608&mibextid=Nif5oz

[বিঃদ্রঃআসসালামু আলাইকুম!মন মানসিকতা তেমন একটা ভালো নয় তাই বেশ দীর্ঘদিনের বিরতি নিয়েই ফিরলাম।জানিনা ২য় খন্ডের সূচনা পর্ব কেমন হয়েছে।তবে আমি চেষ্টা করেছি সবটা যেভাবে সাজানোর ছিলাম সেভাবেই সাজাতে।বাকিটুকু আপনাদের নিকট ছাড়লাম মন্তব্য করার উদ্দেশ্যে।আর হ্যা ২য় খন্ড বুঝতে হলে অবশ্যই ১ম খন্ড পড়া লাগবে।১ম খন্ডের লিংক সাথেই যুক্ত করে দেওয়া হলো।যদি ২য় খন্ড থেকে কেউ পড়া শুরু করেন তবে অবশ্যই অনুরোধ করবো ১ম খন্ড পড়ার জন্য।নাহয় কিছুই বুঝতে পারবেন না।আর হ্যা গল্পটা অবশ্যই কাল্পনিক ধারায় লিখিত!তাই কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার অনুরোধ রইলো]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here