#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১০.
“প্রণয়কে আজ রাতের মধ্যেই ফা*সি দেয়া হবে আপু!”
অরিনের ক্রন্দনরত মুখে বাক্যখানা শুনতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে চাঁদের।ঘনঘন শ্বাস নেয় সে।অতঃপর ঢোক গিলে বলে,
“কিন্তু জজ তো সেদিন বাদ জুমার কথা বলেছিলেন?”
নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে অরিন বলে,
“হা….হ্যা বলেছিলেন তবে তিনি তা লিখেননি।শুক্রবারই ফা*সি হবে তবে রাতের মধ্যেই।বারোটার পরপরই।আমি প্রতিবাদ করেছিলাম।কিন্তু…..”
অরিনকে ঝাঁকিয়ে চাঁদ বলে,
“কিন্তু কী?”
“কিন্তু এটাই নিয়ম আপু!একজন আসামির ফা*সি কবে কার্যকর হবে এটা কাউকে জানানো হয়না।বিশেষ করে তার পরিবারকে।আর বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী রাত বারোটার পরেই ফা*সি দেয়া হয়।আমার মাথা থেকে বিষয়টা বের হয়ে গিয়েছিলো।ধরতে পারিনি”
“কিন্তু পরিবারের সাথে শেষবারের ন্যায় দেখাও তো করানো হয়!এটাতো নিয়ম অরিন”
“হ্যা দেখা করানো হবে তবে শুধু হাতেগুনা দুই থেকে তিনজন।কিন্তু চিন্তার বিষয় তা নয়।কাল যাও হাতে সময় ছিলো আহিন ভাইয়ার প্ল্যান আমায় বলেছিলো তারা কাজে নেমেও পড়েছে।তোমরা তো দেশের খবর জানোনা।জেলায় জেলায় মিছিল হচ্ছে।আন্দোলন করা হচ্ছে।ডক্টর লিমা চার দফা আন্দোলনে নেমেছেন।আহিন ভাইয়াও সাথে আছেন।যেখানে মেয়র নিজেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সেখানে আশাহত হওয়ার কথা নয় কিন্তু এখন সাতটা বাজে।আমাদের হাতেতো সময় নেই!আমি এটাও জানিনা প্রণয়কে ওরা নিয়েছে কোন জেলে”
বলেই নিজের মাথা চে!পে চুল টেনে ধরে অরিন।সমুদ্র অরিনকে জিজ্ঞেস করে,
“চার দফা কী কী?”
“দাড়ান আমি নিউজ দেখাচ্ছি”
বলেই নিজের রুমে রাখা ল্যাপটপ অন করে তাতে আজকের সরাসরি খবরের চ্যানেল লাগায় অরিন।তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে জায়গায় জায়গায় আন্দোলন হচ্ছে,বেশিরভাগই নারী।পুরুষেরাও আছে।পুলিশ হাজার চেষ্টা করেও কাউকে থামাতে পারছেনা।জনগণ বেশ ক্ষু*ব্ধ বর্তমান সরকারের প্রতি।অতঃপর চ্যানেল বদলাতেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে লিমাসহ আহিন আর আহানকেও।লিমার দুই হাতে দুই ব্যানার।একটাতে স্পষ্ট লেখা ‘আমাদের দাবি মানতে হবে!ডক্টর প্রণয়ের ফা*সি আমরা মানিনা’ অপর ব্যানারে লেখা,
আমাদের চার দফা দাবি,
১.ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের ফা*সি অকৃতকার্য করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
২.ধ!র্ষণের শাস্তি কেবল ধ!র্ষকের মৃ*ত্যুই হবে এরূপ নতুন আইন জারী করতে হবে।
৩.ধ!র্ষক যদি তার প্রাপ্য শাস্তি না পায় এবং ছেড়ে দেয়া হয় তবে তাকে রাস্তার যেখানেই দেখা হোক না কেনো সেখানেই মে*রে ফেলার নিয়ম জারী করতে হবে।এক কথায়,নারীর সম্ভ্রম কে!ড়ে নেবার শাস্তি ধ!র্ষকের প্রাণ কে*ড়ে নিয়ে হবে।এতে কোনো আইন বাঁধা দিতে পারবেনা।
৪.উপরের তিনটি দফা মানা না হলে বর্তমান সরকারকে তার গদি ছাড়তে হবে।আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে এরূপ সরকার দেশে চাই!না কি অপরা*ধীদের সমর্থনকারী সরকার।যদি এমনটা না হয় উনিশশো একাত্তরে যেমন ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালি ঝেপে পড়েছিলো দেশের মুক্তি জন্য।তদ্রুপ আমরা নারীরাও নেমে পড়বো ধ!র্ষণের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে!
নিউজ রিপোর্টাররা কেবল এ কথাই বলে চলেছেন,
“এবার সরকারের কী সিদ্ধান্ত হবে?তারা কি চার দফা মানবেন?নাকি দেশে ফের যু*দ্ধের আমন্ত্রণ দেবেন?কী ভাবছেন দেশপ্রধান?”
এরূপ সংবাদ দেখে লোমকূপ দাঁড়িয়ে যায় চাঁদের সে কোনোকিছুই ভাবতে পারেনা।মস্তিষ্ক তার অচল হয়ে পড়ছে।ধপ করে ফ্লোরে পড়ে যেতেই অরিন তাকে ধরে।সামনে আসে উশ্মিও।চাঁদকে সামলাতে সামলাতেই অরিন সমুদ্রকে বলে,
“মিস্টার সমুদ্র আপনি কাইন্ডলি আহিন ভাইয়াকে কল দিয়ে বলুন প্রণয়কে ঢাকা কারাগার থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।সেখানে সে নেই।তারা যেনো খোঁজ করে তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে”
অরিনের কথা মোতাবেক সমুদ্র আহিনের নাম্বারে ডায়াল করে।সে ধরছেনা বলে লিমার নাম্বারেও করে।তবে সেও ধরেনা।এবারে সমুদ্র অরিনকে বলে,
“ধরছেনা কেউ।এই সমাবেশ,বিক্ষো*ভের মাঝে ফোনের আওয়াজ শুনবে কী করে?”
অরিন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে,
“চাঁদ আপুর সাথে তোমরা থাকো।আমি আ……সমুদ্র আপনি,উশ্মিপু আর মির ভাইয়া আমার সাথে চলো”
অরণ প্রশ্ন করে,
“কোথায় যাবি?”
“প্রণয়ের জন্য শেষ চেষ্টাটুকু করবো ভাই”
অতঃপর সমুদ্র,উশ্মি আর মিরকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় অরিন।অরিন চলে যেতেই চাঁদ চুপচাপ একধ্যানে বসে থাকে ফ্লোরে।কোনোকিছুই ভাবতে পারেনা।মস্তিষ্ক তার ফাকা ফাকা লাগছে।এমতাবস্থায় শিফা তার কাধে হাত রেখে বলে,
“চিন্তা করো না ভাবি।ভাগ্যের উপর ছেড়ে দাও।সব ঠিক হবে।আল্লাহ ভাইয়ার কপালে যা লিখেছেন তাই হবে।তুমি নিজের…..”
হঠাৎ চেচায় চাঁদ,
“জাস্ট শাট আপ শিফা!শাট ইওর মাউথ!কী ঠিক হবে আর?কী ঠিক হবে?আর কেনোই বা চিন্তা করবোনা?নিজের মতো ভাবছো?যে ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে হারাতে দেবো?চুপচাপ সেটা সহ্য করবো?ভাগ্যের কাছে ছেড়ে দেবো?আসলে তুমি ভালোবাসার কী মর্ম বুঝবে?নিজের ভালোবাসাইতো আটকাতে জানোনা,পারোনা।অন্যের আশায় থাকো।শুধু কাদতেই জানো।কেদে ভালোবাসা পাওয়া যায়?যায়না!তার জন্য সংগ্রাম করতে হয়”
রিদি চাঁদকে ধরতে এলে চাঁদ তার দিকে আঙুল তাক করে বলে,
“খবরদার!খবরদার রিদি!যদি সামনে এসেছো তো!এই মেয়ের কোনো তরফদারি আমি শুনবো না।ও একটা দুর্বল চিত্তের মেয়ে!আমি এরূপ দুর্বল মানুষ মোটেও পছন্দ করিনা।মেয়ে হয়েছে বলে কি দুর্বল হতে হবে?আরে!উশ্মিতো শুধু শুধু ওর জন্য রায়হান ভাইকে ছেড়েছিলো।উশ্মি নিজেও ভালোবাসার মর্ম বুঝেনা।বুঝলে কোনোদিনই রায়হান ভাইয়াকে ছাড়তে পারতোনা তাও আবার এই দুর্বল মেয়েটার জন্য।বাচ্চা বয়সে কাউকে মন দিতে পেরেছে কিন্তু সেই মানুষটাকে একবার বলতে পারেনি আমি তোমাকে ভালোবাসি?আর উশ্মির কথাই বা কী বলবো!ও নিজেইতো এই অযুহাতে রায়হান ভাইকে ছেড়েছে।ভালোবাসা কি এতটাই ঠুনকো যে একজনের জন্য আরেকজনকে ছাড়বো?তারপর আরেকজনকে ধরবো?আর এই শিফা?চোখের পানি ফেলে ফেলে কী বুঝাতে চায়?রায়হান ভাইকে খুব ভালোবাসে?খুব!ভালোবাসলে তার প্রমাণ কোথায়?শুধু কাদলেই ভালোবাসা হয়?একবারও চেষ্টা করেছে নিজের ভালোবাসা পাবার?করেনিতো!করবেও কী করে ও তো অন্যের ভালোবাসা সহ্য করতে পারেনা।তাদের দিকে ঠিকই নজর রাখে।আরে!ওর সাহস কী করে হয় আমাকে আমার প্রণয়ের চিন্তা করতে মানা করতে?কে ও হ্যা?কে?আমি আমার স্বামীর চিন্তা করে করে ম*রে যাবো তাতে ওর কী?ওর কী?ও কি জানে আমার ভেতর দিয়ে কী যাচ্ছে?বুঝতে পারবে কখনো?পারবেনাতো!রায়হান ভাইতো আর ওকে ভালোবাসেনা!বুঝবে কী করে?রুবা!এই মেয়েকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাওতো।আমার ওকে একদমই সহ্য হচ্ছেনা।তোমরা এক্ষুনি বের হও এখান থেকে।জাস্ট গো!আমার প্রণয়ের কিছু হলে কাউকে ছেড়ে কথা বলবোনা আমি”
রিদি কিছু বলতে নিলেই মিরা তাকে ইশারায় বাকি দু’জনকে নিয়ে বের হতে বলে।তিনজনই বের হতে গেলে দেখতে পায় দরজার কাছে বিস্ফোরিত নয়নে রায়হান আর রামিম চেয়ে আছে চাঁদের পানে।রায়হান আর রামিমকে দেখে শিফার বুকে দহন য*ন্ত্রণা হয়।সেদিকে তাকাতে পারেনা সে!দৃষ্টি নত করে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে বের হয় শিফা।যাওয়ার সময় তার ওড়নার ঝাপটা এসে রায়হানের বাহুতে এসে লাগে।শিফার পানে তাকায় রায়হান।শিফাকে যেতে দেখে দৌড়ে রিদি আর রুবাও তার পিছু যায়।আর চৈত্র চাঁদের কাছে এসে তাকে ধরে বলে,
“শান্ত হ!শান্ত হ ছোটি।এভাবে হাইপার হলে চলবে?তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতগুলো…..”
ভাইয়ের বুকে ঝাপটে পড়ে চাঁদ হাউমাউ করে বলে,
“আমি কী করে শান্ত হবো ভাই?কী করে হবো?বছরের পর বছর যাকে হৃদয়ে সযত্নে লালিত করেছি সে আমার চিত্ত চি!ড়ে চলে যাচ্ছে আমি কী করে শান্ত হই রে ভাই!কী করে হই!ও ভাই!আমার প্রণয়কে বাঁচা না ভাই।ভাইরে!আমার প্রণয়….আমার প্রণয়কে ওরা মে*রে ফেলবে ভাই।ও ভাই!ভাইরে!”
বলতে বলতেই ধীরে ধীরে ভাইয়ের বুক থেকে নেমে হাত ধরে তার পায়ের কাছে পড়ে চাঁদ।অতঃপর চৈত্রের পা ধরেই কাদতে কাদতে বলে,
“আমি তো এভাবে কাউকে বলতে চাইনি রে ভাই!বলতে চাই নি!আমার প্রণয় কে এনে দে না ভাই!এনে দে।আমি ম*রে যাচ্ছি।আমা…..আমাকে বাঁচা”
বলেই ঢলে পড়তে নিলে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে আসে রায়হান।এসেই চাঁদকে ধরে দাড় করায়।অতঃপর তার দুই গালে আলতো থাপ!ড়াতে থা!পড়াতে বলে,
“চোখ বন্ধ করবেনা চাঁদ।তোমাকে সজাগ থাকতে হবে।চোখজোড়া খুলে রাখতে হবে প্রণয়ের জন্য।কেউই তোমার কাছে প্রণয়কে এনে দেবেনা।তোমার নিজেকেই প্রণয়ের কাছে যেতে হবে।তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।সেজন্য পথ খোঁজো!তোমাদের অতীতের দিনের কথা ভাবো যখন সমস্যাগুলো শুরু হয়েছিলো।কী করে প্রণয়কে আনা যায় তাই ভাবো!তোমাকেই আনতে হবে চাঁদ।তুমিই পারবে আমার ভাইকে ফেরাতে”
চাঁদ আকস্মিক চোখ খুলে রায়হানকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ভাইয়া!ও ভাইয়া!আমায় একটা উপায় বলুন না।বলুন না।আমি তো কিছুই ভাবতে পারছিনা”
চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে চাঁদকে বিছানায় বসিয়ে ইশারায় চৈত্রের কাছে পানি চায় রায়হান।অতঃপর চাঁদকে পানি খাইয়ে বলে,
“আগে নিজেকে ঠান্ডা করো।আমরা একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবো!তুমি আগে নিজের মাথা ঠান্ডা করো।লম্বা শ্বাস নাও।ভাইয়া তোমার পাশেই আছি।আমি প্রণয়কে নিয়ে আসবো।তোমার জন্য আমি প্রণয়কে ছাড়িয়ে আনবো”
রায়হানের বুকে মাথা রেখেই চাঁদ বলে,
“সত্যি ভাইয়া?”
“হ্যা সত্যি”
অতঃপর ঘনঘন শ্বাস নিয়ে রায়হানের সাথেই লেপ্টে থাকে চাঁদ।রায়হান চাঁদকে ধরে রেখেই বাকিদের নিকট প্রশ্ন করে,
“কারো কাছে কোনো উপায় আছে?এই বিক্ষোভে আদোতে কিছু হবে?যদি প্রণয়ের সত্যিই!”
হঠাৎ চাঁদ চেচায়,
“না!… ”
ফের চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে রায়হান বলে,
“হিশ!শান্ত হও।কিছু হবেনা প্রণয়ের।অরিন গিয়েছেতো। আমরাও কিছু না কিছু করবোই।কিন্তু কী?কী করবো রে রামিম?কিছু করা যাবে?খোঁজ পেলি প্রণয়কে কোথায় নিয়েছে?”
রামিমের থেকে আশানুরূপ জবাব আসেনা।তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অরণই বলে,
“চাঁদ আর প্রণয়কে কি দূরে কোথাও পালাতে দেবো?কিন্তু প্রণয়কে ছাড়িয়ে আনবো কী করে?অরিন কি পারবে?”
হঠাৎ রিহা বলে,
“অহেতুক কথা বলিস না।প্রণয়কে সেখান থেকে আনা সম্ভব না।আর আনলেও কোথায় পালাবে ওরা?যেখানেই যাবে খুঁজে ঠিকই বের করবে”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রায়হানের বুক থেকে মাথা তুলে গম্ভীর কন্ঠে চাঁদ বলে,
“আমার প্রণয় এরূপ কাজ কখনোই করবেনা।আমিও চাইনা এমন কিছু করতে।আমি আমার প্রণয়কে স্বসম্মানে বের করবো”
অতঃপর অরণের দিকে নির্লস চাহনী নিক্ষেপ করে শান্তস্বরে বলে,
“আপনাকে যে আমি তাদের বিরুদ্ধের সকল প্রমাণস্বরূপ একটা ফোন দিয়েছিলাম সেই ফোনটা কোথায় অরণ?”
চাঁদের কথা শুনে কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে অরণ বলে,
“হ্যা!ফোনটা!ফোনটাতেই তো সব প্রমাণ ভিডিও করা ছিলো।সেটা দেখালেই প্রণয়কে ওরা ছাড়তে বাধ্য!কিন্তু ফোনটা?ফোনটা?”
বলতে বলতেই চোখজোড়া বুজে অরণ।অতঃপর চোখমুখ কুচকে চিন্তা করতে করতেই চাঁদের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে চাঁদের পানে তাকায় সে,
“কোথায় রেখেছিলেন অরণ?”
অরণ অনেক্ক্ষণ চিন্তা করে হঠাৎ ই বলে,
“জুতা!হ্যা জুতার ভেতর রেখেছিলাম।যেনো ওরা বুঝতে না পারে।কিন্তু তুমি যখন আমায় আ*ঘা*ত করলে তারপর আর কিছুতো আমার জানা নেই।তোরা পেয়েছিলি ফোনটা?”
রিহা প্রশ্ন করে,
“কীসের ফোন?”
রবিন জবাব দেয়,
“তুই জুতার ভেতর ফোন রেখেছিলি অরণ?কিন্তু আমরাতো এমন কিছু পাই নি”
চাঁদের নিকট এসে গম্ভীরভাবে মিরা বলে,
“সে কি তার মোজার ভেতরে ভরে ফোনটা রেখেছিলো কিনা জিজ্ঞেস করো তো চাঁদ!”
মিরার কথা শুনে মিরার নিকট এগিয়ে এসে তার দুই বাহুতে হাত রেখে নিজের দিকে মিরাকে ঘুরিয়ে অরণ বলে,
“তুই পেয়েছিস?তুই পেয়েছিলি মোবাইল টা?আমি মোজায় ভরে জুতার ভেতরই রেখেছিলাম মিরু।তুই ই পেয়েছিস তাইনা?এখনো ফোনটা রেখেছিস নাকি ফেলে দিয়েছিস?”
অরণের চোখে চোখ রাখতে পারেনা মিরা।যন্ত্রের ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে অরণের বুকের দিকে চোখ রেখে বলে,
“না।আছে আমার কাছে।রেখে দিয়েছিলাম”
“কোথায় এখন?”
“বাসায়”
“চল তাহলে”
“কিন্তু একটা সমস্যা আছে”
ভ্রু কুচকে অরণ বলে,
“কী সমস্যা?”
সেভাবে থেকেই ধীরকন্ঠে মিরা বলে,
“ফোনটা ভেঙেচুরে গিয়েছে।আমি জানিনা তোরা সেটা দিয়ে কীভাবে কী করবি”
মিরার কব্জি ধরে তাকে নিজের সাথে নিতে নিতে অরণ বলে,
“আগে চল তো!এই চাঁদ চলো”
চাঁদও অরণ মিরার পিছু আসে।সেখানে উপস্থিত সকলেই রওয়ানা হয় তাদের সাথে তবে রুবাদের সাথে রিহা আর রামিমকে রেখে যায় তারা।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে হাতে মাইক নিয়ে হাজির হয় অরিন।সাথে আছে সমুদ্র,মির আর উশ্মি।মিরের হাতে ফোন।সে তার ফোনটা অরিনের দিকেই তাক করে রেখেছে।অরিনের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসেছে মির।সেটাই ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে অরিনের দিকে করে রেখেছে।আর অরিন সামান্য কেশে মুখের সামনে বড় মাইকটা এনে বলতে আরম্ভ করে,
“হ্যালো?হ্যালো?অ্যাটেনশন এভ্রিওয়ান।আমি ধাণমণ্ডি থানার মেইন জেলার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সহকারী কমিশনার।লাইভে কেনো এসেছি সেটাও বলছি তার আগে ডক্টর লিমা?এখানে আসুনতো একটু!”
অরিনের জোরালো কন্ঠ মাইকে শুনতে পেয়ে তার নিকট লিমা এগিয়ে আসতেই অরিন মিরকে ইশারা করে আর মির লিমার দিকে ফোন ঘুরায়।অতঃপর অরিন লিমার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাইকের সামনে মুখ রেখেই ক্যামেরার দিকে চেয়ে ফের বলা শুরু করে,
“এতক্ষণে তো সকলেই সকল খবর জানেন।তবে যা জানেন না সেটা হচ্ছে ডক্টর রুহায়ের প্রণয়কে আগামীকাল বাদ জুমা নয়,বরং আজ রাতের মধ্যেই ফা*সি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।এবং তার উদ্দেশ্যে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সেই বিকেলবেলাই নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এখন তাকে কোন কারাগারে নেয়া হয়েছে এবং কোথায় ফা*সি দেয়া হবে তা আমরা কেউই জানিনা।কাইন্ডলি যারা যেখান থেকে যেই স্থান থেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছেন যদি প্রণয়কে কোথাও দেখেন!অথবা কোন জেলে নেওয়া হয়েছে তার কোনো খবর পান ইমিডিয়েট এই লাইভের ক্যাপশনে কয়েকটা নাম্বার দেওয়া হয়েছে তাতে ফোন করে জানাবেন প্লিজ!আপনাদের একটা পদক্ষেপ একজন ভালো এবং নিষ্পাপ মানুষকে বাঁচাতে পারে।একজন খু*নীকে নিষ্পাপ বলায় বিব্রত হবেন না!কেনোনা সে যাদের খু*ন করেছে তারা একেকটা নর্দমার কী*ট থেকেও জঘন্য!ধ!র্ষকদের শাস্তিস্বরূপ প্রণয় তাদের মৃ*ত্যু দিয়েছে।আমি নিজেও তাতে সন্তুষ্ট।যেখানে মেয়র আহিনেরই তার বাবার মৃ!ত্যুতে কোনো আফসোস নেই সেখানে অন্যকারোও থাকার কথা নয়।তাছাড়া অধিরাজ শেখ এবং তার চেলারা শুধুই ধ!র্ষক নয়।তাদের প্ল্যান আরও বড় ছিলো এবং সেটা ছিলো দেশের বিরু*দ্ধে।তারা ছিলো দেশদ্রো*হী।দেশদ্রো!হীদের মে*রে প্রণয় অবশ্যই কোনো অন্যায় করেনি।বরং তার সাথে এতদিন জেলের ভেতর অন্যা*য় হয়েছে।তাকে রিমাইন্ডে নেয়া হতো প্রতিদিন!তবুও সে কিছুই বলতোনা।হাসিমুখেই মেনে নিতো।কার্ডিয়াক সার্জন রুহায়ের প্রণয় সম্পর্কে আপনাদের বেশিরভাগেরই জানার কথা!তার ডাক্তারী সম্পর্কেও জানার কথা।সে অপারেশন করেছে এবং তাতে কারো মৃ*ত্যু হয়েছে এরূপ রেকর্ড এখনো পাওয়া যায়নি।বরং তাকে সকলে সম্মান করে।আর আপনারা সেই প্রণয়কেই ভুয়া ডাক্তার,ভন্ড,খু*নী,ঠক,প্রতারক বলছেন।কিন্তু কেনো?তার দোষ টা কোথায়?সে কেবলই ধ!র্ষকদের শাস্তি দিয়েছে সেজন্য?এমন ফা*সি মানিনা!আমিও চার দফার পক্ষে।এই যে এই চার দফা সরকারকে মানতেই হবে!’ধ!র্ষণ’ নামক সামাজিক এই ব্যাধি দেশ থেকে পরিত্রাণ করতেই হবে!আমরা মেয়েরা কেনো ধ!র্ষণের ভয়ে ধুকে ধুকে ম*রবো?এই আন্দোলনে যোগদান এবং চার দফার পক্ষে থাকার জন্য যদি আমার পদবী ত্যাগ হয়।আমাকে বরখাস্ত করা হয় তাতেও আমার কোনো আফসোস নেই!তবে প্রণয়ের ফা*সি আমি মানিনা!আমরা মানবোনা!ঠিক কিনা আপুরা?”
সেখানে উপস্থিত সকল মেয়েই সমস্বরে বলে উঠে,
“হ্যা!হ্যা মানিনা।মানবোনা”
অতঃপর সমুদ্র আর উশ্মি এগিয়ে আসে সামনে।তাদের হাতেও মাইক।এবারে মির তাদের দিকে ফোন তাক করতেই উশ্মি মুখের সামনে মাইক রেখেই বলা শুরু করে,
“আসসালামু আলাইকুম!আমি ব্যারিস্টার উশ্মিতা উশ্মি। ডক্টর রুহায়ের প্রণয়ের সেকেন্ডারি অ্যাডভোকেট।সেইসাথে এও জানিয়ে দেই আমি তার চাচাতো বোনও।সে আমার ভাই বলে তার পক্ষ নিচ্ছি ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই।সর্বপ্রথম আমি একজন নারী।আর একজন নারী হয়ে অপর নারীর সংসার উজার হতে তো দেখতে পারি না তাই না?আমার ভাবি ডক্টর চাঁদ।প্রণয় ভাইয়ার ওয়াইফ,সে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা।এখন আপনারাই বলুন এমন কয়েকজন মানুষের খু*নের দায়ে আমার ভাইকে ফা*সি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত যারা কিনা ধ!র্ষক ছিলো!আমার ভাবি কতটা প্রেশারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে বোঝাতে পারবোনা।আচ্ছা পারিবারিক জিনিস সাইডে রাখলাম।যুক্তি দিয়েই ভাবুন সে দোষের কী করেছে?শুধু এটাই যে আইন নিজ হাতে তুলে নিয়েছে।ব্যাস এইটুকুই!হয়তো বলতেই পারেন আমি তার বোন বলে অহেতুক কথা বলছি।একজন ব্যারিস্টারের মুখে আইনবিরো*ধী কথা মানায় না।তবে আমি এটাই বলবো যে এটা কেমন আইন যেই আইনে ধ!র্ষণের কোনো শাস্তি নাই?বরং যে ভিক্টিম তাকেই দোষারোপ করা হয়?একজন মেয়েকেই বলা হয় সে নিজেকে প্রদর্শন করিয়ে বেরিয়েছে বলেই তার সাথে অমন হয়েছে!সেও তাতে স্বায় দিয়েছে?এমনটা কেনো?আরে ভাই!বোরকা পরেও তো আজকাল মেয়েরা সুরক্ষিত নয়।নোংরা লোকেদের নোংরা দৃষ্টি কয়েকটা জায়গায় গিয়েই আটকে যায়!হোক সেটা বোরকা পরেই অথবা হোক হিজাব পরিধান করলেও।তার চোখ সেখানে যাবেই!লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে চাইতেই হবে!মানে কেনো?এরকম টা কেনো?দেশে প্রতিদিন প্রতিনিয়তই ধ!র্ষণ হচ্ছে।ধ!র্ষিতা কেউ আত্মহ*ত্যা করছে তো কাউকে আবার মে*রেও ফেলা হচ্ছে।সেই খবর কি আমরা জানি?খোঁজ রাখি?আমাদের জানানো হয়না!এতটা সাহস কারো মাঝে নেই যে এসব বিষয় সামনে আনবে!একজন ভিক্টিমেরই কেনো সবসময় দোষ হয়?তাকে কেনো দুর্বল ভাবা হয়?সে মেয়ে বলে?কেনো?সবসময় এমনটাই কেনো!এখন যদি আমার ব্যারিস্টারী ডিগ্রি বাতিলও হয় তো হোক!তবুও আমি,আমরা এই ফা*সি মানিনা!মানবোই না!চার দফার পক্ষে আমিও আছি!প্রণয় ভাইয়াকে একবারের জন্য ছেড়ে দিতে বলবোনা।এতই যেহেতু আইন এই দেশে মানা হয় তাকে কয়েক মাস?কয়েক বছরের শাস্তি দিক!ফা*সি কেনো দিতে হবে?আমার ভাইয়ের দোষ টা কোথায়?তার বাচ্চা কেনো বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হবে?দেশের আইন এমন কেনো?এখন কি মেয়র আহিনকেও মেয়র পদবী থেকে বাদ করা হবে নাকি?কয়জনকে কয় জায়গা থেকে বাদ দেবে এই সরকার?কেনো দেবে?অপরাধ কী?”
অতঃপর উশ্মি থামতেই সমুদ্র ধীরকন্ঠে মাইক নিয়ে বলে,
“আমি ব্যারিস্টার সমুদ্র চৌধুরী।আর আমি কিন্তু ডক্টর প্রণয়ের কিছু লাগিনা।আত্মীয়ও নই।তবে আমি তার পক্ষের অ্যাডভোকেট।আমি ব্যাস এতটুকুই চাইবো আইনের মধ্যে থেকে তার সঠিক বিচার করা হোক।না কি অহেতুক ফা*সির মতো কোনো বিবেচনাহীন শাস্তি।আমিও বলতে চাই প্রণয় ভাইয়ার ফা*সি আমিও মানিনা।তার মুক্তি কামনা করছি।চার দফা দাবি আন্দোলন করছি।আমাদের দাবি মানতেই হবে।না মানলে দেশে কী ধরণের প্রলয় আমরা ঘটাতে পারবো তার ধারণাও কারো নেই।তাতে আপনাদের সকলের সাহায্যের প্রয়োজন!প্লিজ আসুন,সাহায্য করুন।যেখানেই প্রণয় ভাইয়ার কোনো খোঁজ পাবেন আমাদের তৎক্ষনাৎ জানানোর অনুরোধ”
সমুদ্রের পরপরই ফের অরিন মাইক হাতে নিয়ে বলে,
“যে যেখানে যেভাবেই আছেন বের হয়ে পড়ুন!আজ নয় তো আর কোনোদিনই নয়।ধ!র্ষণ রুখতে হলে আজই বের হতে হবে বোনেরা,ভাইয়েরা!আমি সাব-কমিশনার অরিন আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিচ্ছি!আসুন সাহায্য করুন!”
To be continued……
[বিঃদ্রঃগল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক]