#আবার_প্রেম_হোক (২য় খন্ড)
#নুসরাত_জাহান_মিম
১১.
প্রকৃতি নীরব।কোথাও একটা কাকপক্ষীর দেখা নেই।বাতাসের শো শো শব্দ এতক্ষণ যাবৎ ঠিকই প্রণয়ের কর্ণকুহর হয়েছে।তবে আপাতত হট্টগোল আর দূর হতে শোরগোলের শব্দ ভেসে আসছে কানে।প্রকৃতি আর নীরব বসে থাকেনি।দুই হাতেই হাতকড়া পরাবস্থায় হাজতের ভেতরে একপাশে বসে আছে প্রণয়।সে খুব ধ্যানমগ্ন হয়ে শোনার চেষ্টা করছে বাইরে কী নিয়ে এত আওয়াজ চেচামেচি হচ্ছে।বেশকিছুক্ষণ নীরব থেকে চোখজোড়া বন্ধ রেখে মনোযোগ দিতেই কানে ভেসে আসে,
“ডক্টর প্রণয়ের ফা*সি আমরা মানিনা,মানবোনা!”
“ডক্টর প্রণয়ের মুক্তি চাই,মুক্তি চাই”
“আমাদের চার দফা মানতে হবে”
মুহূর্তেই কপাল ঈষৎ কুচকায় প্রণয়ের।কপাল কুচকে রেখেই চোখজোড়া খোলে সে।সে কি সঠিক শুনলো?নাকি তার ভ্রম কোনো?আদোতে সে ঠিক শুনেছে তো?যদি শুনেই থাকে তবে এরকম টা কেনো?মানুষ এসব বলছে কেনো?পাঁচ-ছয়দিন আগেইতো তার ফা*সির জন্য পাগলপ্রায় হয়ে গিয়েছিলো।তবে আজ এমন কী হয়ে গেলো যে তারা তার মুক্তি চাচ্ছে?খু*নী ডাক্তার বলে বলে জেলে আসার পথে ছোট ছোট ইট,টমেটো,ডিম মে*রেও যারা ক্ষান্ত হয়নি ফা*সি লাগবে বলতে তাদের লাগবেই তারাই বা কেনো তার ফা*সি এখন মানছেনা?হঠাৎ করে কী এমন বিশেষ কার্য ধার্য হলো?কিছুই বোধগম্য হয়না প্রণয়ের।তাই সে হাজতের শিকের সামনে এসে হাবিলদারকে ডেকে প্রশ্ন করলো,
“বাইরে কীসের এত শোরগোল হচ্ছে মামা?”
“আপনি জানেন না?”
প্রণয়ের গম্ভীর উত্তর,
“না”
“ওহ হো!জানবেন ও কী করে ছিলেন তো থানায়ই।আসলে বিকাল থেকে মিছিল,বি*ক্ষোভ হচ্ছে।আপনাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।চার দফা দাবিতেও জনগণ নেমেছে”
কপাল মাত্রাতিরিক্ত কুচকে প্রণয় বলে,
“কিন্তু এরকম টা কেনো?জনগণই তো আমার ফা*সিটা দ্রুত চেয়েছে।তাহলে এখন কী হলো?”
“অধিরাজ শেখ আর যাদেরকে আপনি খু*ন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু তথ্য লাইভে এসে ডক্টর লিমা,কমিশনার ম্যা’ম অরিন বলেছেন।তারাই বি*ক্ষোভ আর চার দফার দাবি করেছেন”
“কা….কীসের তথ্য?কী তথ্য দিয়েছে তাদের নামে?”
“তারা নাকি ধ!র্ষক ছিলো।তাদের একটা পতিতালয়ও ছিলো কিন্তু সেটা নাকি আপনি আর মেয়র আহিন মিলে বিনষ্ট করেছেন।যদি এটা শুধু ডাক্তার ম্যাডামই বলতেন তাও অবিশ্বাস করা যেত কিন্তু মেয়র আহিন আর অরিন ম্যা’ম বলেই বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছেন।বিশ্বাসও করা যাচ্ছেনা,আবার অবিশ্বাসও।তবে আমি মনে করি তারাই ঠিক।আপনার সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই জানি।কেউ কাউকে শুধু শুধু মা*রবেনা তাও আবার এতটা জঘ*ন্যভাবে!”
মনে মনে বেশ অস্থির হয়েও লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে প্রণয় বলে,
“আর কী বলেছে?কার ধ!র্ষণ কিছু বলেছে?”
“হ্যা বলেছে তো”
এবারে চোখজোড়া খানিক ছোট করে ঘনঘন শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে প্রণয় প্রশ্ন করে,
“কী বলেছে?”
“ঢাকা মেডিকেলের অনেক ডাক্তার মেয়েদের কথাই বললো।মেয়েরা নিজেরাই সেসব স্বীকার করেছে।মানে মহিলা ডাক্তারগুলো।আরও অনেক কিছুই বলেছে”
প্রণয় বেশ অস্থির হয়ে আছে।সে কপাল কুচকে মনে মনে ভাবছে সে যেই সত্যটা লুকিয়ে রেখে ধামাচাপা দেয়ার জন্য এতকিছু করলো তা কি এবার বেরিয়ে আসলো?কেউ কি সেই সত্যিটা বলে দিয়েছে?কলঙ্কের দাগ কি তার প্রাণেশ্বরীর গায়ে লেগে গেলোই?এরূপ বিভিন্ন প্রসঙ্গ চিন্তা করতে করতেই একজন পুরুষের গলার স্বরে ধ্যান ভাঙে প্রণয়ের।আর সে তার পানে চায়,
“কী হয়েছে?একজন খু*নের আসামীর সাথে কীসের এত কথা তোমার মোকবুল?”
মোকবুল হাবিলদার হকচকিয়ে যায় লোকটার কথা শুনে।সে আমতা আমতা করে বলে,
“আ…..আসলে স্যার ওনি জিজ্ঞেস করছিলো বাইরে কীসের এত আওয়াজ”
“তো তুমি বলে দিয়েছো সবটা?”
“হা….হ্যা!”
হাবিলদারের কথায় বেশ বিরক্তি নিয়ে তখনই লোকটা প্রণয়ের সামনে এসে শিকের উপর হাত রেখে গম্ভীর দৃষ্টিতে প্রণয়কে পরখ করে বলে,
“ভুলেও ভাববেন না এসব বি*ক্ষোভ,মিছিল বা কোনো দফা টফা আপনার মতো ব্লা!ডি কিলারকে বাঁচাতে পারবে।এতগুলো খু*ন করার পরেও আশা রাখছেন আপনি বেঁচে যাবেন?হাউ সিলি!”
হাজতের শিক ধরে রেখেই বাকা চোখে লোকটার পানে চেয়ে বেশ গম্ভীর কন্ঠে প্রণয় বলে,
“সাচ আ ফুলিশ ইন্সপেক্টর!আপনাকে কে বললো আমি কোনো আশা রাখছিও?”
“দাম্ভিকতা কমে না তাইনা?জেলের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন।একটু বাদেই ফা*সির দুয়ারে হাজির হবেন।অতঃপর ম*রে যাবেন দাম্ভিকতা তাও কমেনা না?”
খানিক কেশে গম্ভীরসুরেই প্রণয় শুধায়,
“প্রণয়ের কোনোকালেই দাম্ভিকতা ছিলোনা।তার একটাই দম্ভ,একটাই গর্ব তার প্রাণেশ্বরী কেবলই তার।তাছাড়া জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?”
কপাল বেশ কুচকে ইন্সপেক্টর বলে,
“প্রাণেশ্বরী?ইউ মিন আপনার ওয়াইফ হা?”
বেশ তীক্ষ্ণ আর ধারালো দৃষ্টি লোকটার পানে নিক্ষেপ করে প্রণয় বলে,
“ডোন্ট ট্রায় টু থিংক আ ব্লা!ডি শি*ট ‘বাউট হার।অর ট্রায় টু কিপ আই অন হার।আদারওয়াইজ আয় ওন্ট স্পেয়ের ইউ মিস্টার রুবায়েত” [তার সম্পর্কে একটা খারাপ চিন্তা অথবা তার উপর নজর রাখার চেষ্টাটুকুও করবেন না মিস্টার রুবায়েত।নাহয় আমি আপনাকে ছেড়ে দেবোনা]
প্রণয়ের কথায় যেনো বেশ মজা পায় ইন্সপেক্টর রুবায়েত।সে খানিক হেসে বলে,
“কী করবেন আপনি মিস্টার প্রণয়?আপনার বউকে নিয়ে যদি আমি কিছু ভাবিও কী করবেন টা কী আপনি?কিছু করার জন্য আপনার বেঁচেও তো থাকতে হবে তাইনা?একটু পরেইতো পগারপার হয়ে যাবেন!”
বলেই আরেকদফা হাসে রুবায়েত।আর প্রণয় তার পানে ধারালো দৃষ্টি বজায় রেখেই বলে,
“ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হোয়াট আয় রিয়েলি ক্যান ডু অর কান্ট।আমার বউয়ের জন্য আমি কী কী করতে পারি সেটা সম্পর্কে দুঃস্বপ্নে ভাবার ক্ষমতা আমার বউয়ের নিজেরও নেই!তাছাড়া আমি যদি বেঁচে নাও থাকি হাউ ক্যান ইউ থিংক আপনি আমার ওয়াইফের ধারেকাছেও যেতে পারবেন?শি ইজ নট লাইক দুজ টাইপ অফ ব্লা!ডি গার্লস।আমিতো জিভ টেনে ছুড়ি দিয়ে কে*টে ফেলেছি কিন্তু সে?সে হাত দিয়ে টেনেই ছি*ড়ে ফেলবে।ডোন্ট ট্রায় টু বি ওভারস্মার্ট।দ্যাট গার্ল ওয়াজ অলওয়েজ মাইন!অ্যান্ড অলওয়েজ উইল বি মাইন।চন্দ্রময়ীর জন্মই হয়েছে প্রণয়ের হৃদয়ে বসবাস করার জন্য।সে অন্য কারো হৃদয়ে পা টুকু পর্যন্ত দেয়ার চেষ্টা করবেনা।বিকজ!শি ইজ প্রণয়’স বেটার হাফ অ্যান্ড অনলি অ্যান্ড অনলি হিজ রেডরোজ।গট ইট?মিস্টার রুবায়েত!”
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
রাত আটটা বেজে দশ মিনিট,
মিরার বাড়িতে এসেই তার রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে চাঁদ।অতঃপর মিরাকে জিজ্ঞেস করে,
“কোথায় রেখেছো আপু?কোথায় রেখেছো মোবাইল?”
মিরা চাঁদকে শান্ত করিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলে,
“শান্ত হয়ে বসো।আমিই বের করে দিচ্ছি”
অস্থির ভঙ্গিমায় চাঁদ বলে,
“কী করে শান্ত হই আপু?সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে!প্লিজ তাড়াতাড়ি”
অতঃপর নিজের আলমারির ভেতরে রাখা ছোট্ট ওয়ারড্রব চাবি দিয়ে খুলে সেখান থেকে একটা ভাঙাচুরা মোবাইল বের করতেই চাঁদ উঠে আসে সামনে।এসেই মিরার হাত থেকে তা নিয়ে অন করার চেষ্টা করে তবে সম্ভব হচ্ছেনা।চাঁদ পারছেনা বলে তার হাত থেকে অরণ ফোনটা নিয়ে নিজেও চেষ্টা করে তবে সেও ব্যর্থ হয়।অতঃপর মিরা অসহায় কন্ঠে বলে,
“আগেইতো বলেছিলাম ফোনটা ভেঙে গিয়েছে।সম্ভবত তুই মোবাইল পায়ে রেখে দৌড়েছিলি তাই এরকম টা হয়েছে”
মিরার কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অরণ বলে,
“হয়তো তাই ই”
এবারে রায়হান প্রশ্ন করে,
“তাহলে এখন?”
চাঁদ অরণের হাত থেকে মোবাইলটা নিতে নিতে বলে,
“এখন আর কী?অবশ্যই এটা ঠিক করিয়ে আমাদের প্রণয়ের কাছে যেতে হবে”
চৈত্রের প্রশ্ন,
“কিন্তু এত পুরোনো ফোন আদোতে ঠিক হবে?আর এটা তোর ফোন না?”
চাঁদ জবাব দেয়,
“হিম।আমি জানি ভাই ফোন ঠিক হবে।ঠিক হওয়াই লাগবে।আমার প্রণয়ের কিছু হতে পারেনা।আমি হতে দেবোনা।আমার বাচ্চা তা হতে দেবেনা”
বলেই খানিক থেমে বলে,
“রায়হান ভাইয়া আপনি আর রবিন ভাইয়া অরিনদের কাছে গিয়ে বলবেন প্রণয়ের খোঁজ পেলে সাথে সাথে জানাতে আমরা ফোন রিপেয়ার করাতে যাচ্ছি।আর অরিনকে বলে রাখবেন সে যেনো উপরমহলে কথা বলে রাখে,তার প্রয়োজন পড়বে”
তখনই মিরা বলে,
“সবটা সম্ভব হবে চাঁদ?”
চাঁদ অস্থিরচিত্তে বেরুতে বেরুতে বলে,
“অসম্ভবকে সম্ভব আমার করতেই হবে আপু!”
“কিন্তু সময়তো বেশি নেই চাঁদ”
“সময়কে আজ আমার সাথে থাকতেই হবে আপু!এবার চলো।জলদি!”
অতঃপর ঘন্টা দেড়েকের পথ অতিক্রম করে রিপেয়ারিং অফিসে এসে হাজির হয় তারা।দোকানে দোকানে মোবাইল দেখিয়ে রিপেয়ার করার কথা বললেই চাঁদকে দেখে অনেকেই নাকচ করে দেয়।বহু চেষ্টা করেও চাঁদ যখন কিছু থেকে কিছু করতে পারেনা তখন হতাশ হয়ে বসে পড়ে সে ফ্লোরে।পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে।মাথাও খানিক ঘুরাচ্ছে।এমতাবস্থায় মিরা চাঁদের পাশে বসে তাকে ধরে বলে,
“বেশি খারাপ লাগছে চাঁদ?চলো কোথাও বসবে”
চাঁদ উঠার চেষ্টা করে বলে,
“না আপু।আমি ঠিক আছি চলো অন্য মলে যাই”
বলে উঠতে নিলেই ফের পড়ে যায় চাঁদ।তবে এবারে একপাশ দিয়ে অরণ আর অপরপাশে মিরা ধরে তাকে।বোনের করুন অবস্থা দেখে মাত্রাতিরিক্ত মেজাজ খারাপ হয় চৈত্রের।অতঃপর আকস্মিক গ!র্জে উঠে সে,
“সমস্যা কী?আপনাদের মধ্যে ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ আছে?মনুষ্যত্ব বলতে আদোতে কিছু বোঝেনও?খু*নীর স্ত্রী বলে বলে দূর করছেন?আপনারা কেউ কি কমিশনার অরিন,ডক্টর লিমাসহ ঢাকার মেয়র আহিন শেখের লাইভ দেখেননি!তাদের দেখানো প্রমানসমূহ চোখে পড়েনি?একজন প্রেগন্যান্ট মেয়ে তার স্বামীর জন্য জানপ্রাণ লাগিয়ে দিচ্ছে আর আপনারা তাকে মানসিকভাবে আ*ঘা*ত করে যাচ্ছেন?আবার কটুক্তিও করছেন ছিহ!আপনারা আদোতে মানুষ?সেই কাতারে পড়েনও?চল ছোটি অন্য কোথাও যাবো আমরা!”
বলেই চাঁদকে নিয়ে যেতে চাইলে এক মেয়ে এসে চাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে চৈত্রকে বলে,
“প্লিজ ভুল বুঝবেন না ভাইয়া।আসলে পুলিশের গেঞ্জাম কেউ চাচ্ছেনাতো তাই আরকি কেউ আপনাদের হেল্প করতে চাইছেনা।কিন্তু আপনারা আমার সাথে চলুন।আপুর অবস্থাতো ভালো না।একটু পানি খেয়ে নিবে।আসুন”
বলে চাঁদকে নিয়ে নিজেদের দোকানে নিতে গেলেই মেয়েটার ভাই বলে,
“দেখ রিমু শুধু শুধু ঝামেলা পাকাবিনা।এখানে আয়।দোকান বন্ধ করে আমরা চলে যাবো।জলদি আয়”
ভাইয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে কপাল কুচকে রিমু মেয়েটা নাকমুখ ফুলিয়ে কিছু বলার পূর্বেই চাঁদ রিমুর প্রস্তাব নাকচ করে বলে,
“থ্যাংক ইউ আপু কিন্তু পানি খাওয়ার মতো সময় এখন আমার হাতে নেই।আমার প্রণয়কে আমার বাঁচাতে হবে”
বলে যেতে নিলেই ফের মাথা তার চক্কর দিয়ে উঠে।আর রিমু মেয়েটা তাকে ধরে বলে,
“প্লিজ আপু আপনার অবস্থা ভালোনা।বেবির সমস্যা হতে পারে।বসুন একটু।আমার ভাই যদি না পারে এই ফোন আমিই আপনাকে রিপেয়ার করে দেবো আসুন প্লিজ!”
মেয়েটার কথা শুনে আশার আলো দেখে চাঁদ।অতঃপর মেয়েটার সাথে যেতে নিলেই রিমুর ভাই বলে,
“রিমু তুই কিন্তু এবার….”
ভাইকে চুপ করিয়ে রিমু বলে,
“শাট আপ ভাইয়া।মেয়েটা প্রেগন্যান্ট।এতদূর থেকে এসেছে।নিশ্চয়ই তার হাজবেন্ড ভুল কিছু করেনি।আর করলেও কী?ডক্টর প্রণয় ঠিকই করেছে।আমি প্রণয়কে চিনি।সে বেশ উচ্চমানের আর ভদ্র ডাক্তার।অযথা কথা বাড়াবেনা।এবার আর তোমাদের কারো কথা শুনছিনা।চুপ থাকো।আমার সময় নষ্ট করবেনা।একেকটা সেকেন্ড বেশ মূল্যবান”
বলেই চাঁদকে পানি খাওয়ায় মেয়েটা।তার ভাই ফের কিছু বলতে নিলেই মেয়েটা এবার চেচিয়ে উঠে,
“আমি চুপ থাকতে বলেছি কিনা?”
বোনের গর্জনে ছেলেটা চুপ মেরে যায়।আর চাঁদ পানি খেয়েই বলে,
“প্লিজ আপনারা ঝগড়া করবেন না”
চাঁদের কথা শুনে ছেলেটা কিছু বলতে চাইলে রিমু তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে চোখ পাকাতেই ছেলেটা তার দৃষ্টি অন্যদিকে করে।আর চাঁদ মেয়েটার পানে চেয়ে বলে,
“আপনি পারবেন আপু শিওর?”
চাঁদের কথা শুনে রিমু নিজের ভাইয়ের দিকে আড়চোখে চেয়ে বলে,
“যারা পারে তারা যদি করতে না চায় আমাকেতো করতেই হবে!একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সর্বনা!শতো আর আমি দেখতে পারিনা।লাইভগুলো আমিও দেখেছি।আন্দোলনে যেতে চেয়েছিলাম মা আর ভাইয়া কেউই যেতে দেয়নি!তবে এখন আপনার ফোন ঠিক করে দিয়ে আন্দোলনে আমি যাবোই!দেখি আমায় কে আটকায়”
বলেই রিমু ফোন নিয়ে তার প্রতিটা পার্ট খুলে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ফোনে সমস্যাটা হয়েছে কী!কিন্তু কিছুতেই কিছু সে করতে পারছেনা।ঘামছে বারংবার।চাঁদ,মিরা বারবার মেয়েটাকে তাড়া দিচ্ছে তবে মেয়েটার দ্বারা কিছুই সম্ভব হচ্ছেনা।তা দেখে অরণ বেশ বিরক্ত হয়ে গম্ভীরভাবেই বলে,
“আপনি কি ফোনটা ঠিক করতে পারবেন আপু?একটু জলদি করুন অলরেডি দশটা বেজে গিয়েছে।বারোটার আগে প্রণয়কে খুঁজে আমাদের যেতেও হবে।প্লিজ জলদি করুন!”
মেয়েটা হকচকিয়ে বলে,
“জ্বি আমি চেষ্টা করছি”
তখনই মেয়েটার বড় ভাই এসে মেয়েটার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,
“যে যেটা পারেনা তার সেটা করাও উচিত না”
অতঃপর সে নিজেই মোবাইল নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নানানধরণের জিনিস দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়।পরিশেষে আরও ঘন্টাখানেক যেতেই চৈত্র ছেলেটাকে তাড়া দেয়,
“একটু জলদি করুন ভাই এগারোটা বাজে।হাতে সময় নেই প্লিজ!প্লিজ একটু জলদি করুন।আমার বোনের শ্বাস বাড়ছে।একটু তাড়াতাড়ি করুন প্লিজ”
ছেলেটা বেশ বিরক্ত হয়ে বলে,
“ফোনটা বেশ পুরোনো মনে হচ্ছে!হয়েছিলো কী এটার সাথে?আর এত পুরোনো ফোন ঠিক করে করবেনই কী?আর এতে করে কীভাবে ডক্টর প্রণয়কে বাঁচাবেন?”
চাঁদ এবার অস্থির হয়ে বলে,
“প্লিজ ভাইয়া প্লিজ!একটু তাড়াতাড়ি করুন!এই ফোনটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ আমার আর প্রণয়ের জন্য।প্লিজ!”
অতঃপর আরও মিনিট পনেরো কিছু কারিগরি করে ছেলেটা পাওয়ার বাটন চেপে ফোনটা চাঁদের হাতে দিয়ে বলে,
“নিন আপনার ফোন!দেখুন সব ঠিক আছে কিনা”
ফোন চালু হতে দেখে চাঁদের চোখজোড়া খুশিতে ঝকমকিয়ে উঠে।আর ছেলেটা আড়চোখে নিজের বোনের দিকে তাকায়।মেয়েটাও তার ভাইয়ের দিকে চেয়ে ভাইকে মুচকি এক হাসি উপহার দেয়।কিন্তু তাদের হাসি নিমিষেই মিলিয়েও যায়।যখনই চাঁদ বাকিদের নিয়ে বের হতে নেবে এমন সময় সেখানে পুলিশ এসে তাদের ঘেড়াও করে।চাঁদ কপাল ঈষৎ কুচকে বলে,
“আপনারা?আপনারা এখানে কী করছেন?সমস্যা কী?”
“আপনি বেশ ভালো করেই জানেন আমরা কেনো এসেছি!এখান থেকে আপনাদের ব্যাপারে ফোন এসেছে।ঝামেলা পাকিয়েছেন নাকি?আমি বুঝতে পারছিনা সামান্য একজন খু*নীর ফা*সি নিয়ে এত মাতামাতির কিছুইতো দেখছিনা!”
অরণের হাতে ফোনটা বেশ সাবধানে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে লোকটার দিকে এগিয়ে যায় চাঁদ।অতঃপর তার গলা চে!পে ধরে হিংস্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“কী বললি?কী বললি তুই?আমার প্রণয়কে তুই খু*নীতো বলছিসই আবার সামান্য বলছিস?তার নখের যোগ্য হওয়ার যোগ্যতাও তোর নেই!টাকাখোর চামচা!সর সামনে থেকে”
বলেই লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে তার বাকি সহকারীদের উপর ফেলেই অরণের হাত ধরে পেছন দিয়ে দৌড় দিয়ে চেচাতে চেচাতে বলে,
“ভাই,মিরাপু তোমরা প্লিজ এদেরকে দেখো আমি অরণের সাথে গেলাম।আর প্লিজ!দয়া করে আপনারাও প্লিজ তাদের একটু সাহায্য করুন।এটা একজন অসহায় মায়ের আর দিশেহারা স্ত্রীর অনুরোধ।প্লিজ!প্লিজ!”
অতঃপর অরণের হাত ধরেই প্রাণপণে দৌড়ায় চাঁদ।আর মিরা,চৈত্র পুলিশদের ধরে রাখার চেষ্টায় মত্ত।তাদের সাহায্য করতে রিমুও আসে।আসে তার ভাইও।একে একে সকলেই তাদের সাহায্য করার জন্য উদ্যত হয়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
অরণের সাথে দৌড়াতে দৌড়াতেই চাঁদ অরণকে জিজ্ঞেস করে,
“কয়টা বাজে অরণ?”
অরণ পকেট থেকে ফোন বের করে তা দেখে দৌড়াতে দৌড়াতেই বলে,
“সাড়ে এগারোটা বাজে চাঁদ”
অতঃপর চাঁদের কব্জি ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“এই অবস্থায় এভাবে দৌড়ালে বাচ্চাকে তুমি মে*রে ফেলবে চাঁদ।প্লিজ থামো।আমরা গাড়ি নেই”
বেশ রুক্ষ কন্ঠে চাঁদ বলে,
“আমার প্রণয় ওখানে ম*রে যাচ্ছে আর আপনি আমাকে থামতে বলছেন?”
বেশ বিরক্ত হয়ে অরণ বলে,
“তুমি প্রণয়ের কথা ভেবে ভেবে বাচ্চার তো ক্ষ*তি করতে পারোনা।বাচ্চার কিছু হলে প্রণয় তোমায় মাফ করবে বলো?তোমাদের একমাত্র অংশ!এভাবে পাগলের মতো করলেতো হবেনা চাঁদ।তুমি এমনিতেই বাচ্চার অনেক ক্ষ*তি করে ফেলেছো।এবার ঠান্ডা হও।এখনো আধা ঘন্টা আছে।আমরা প্রণয়কে…..”
“কী বলতে চাইছেন আপনি?আধঘন্টায় প্রণয়কে খুঁজে তার ফা*সি আটকেও ফেলবো?যেখানে এখনো পর্যন্ত জানিই না তাকে কোন জেলে নেওয়া হয়েছে”
অরণ কিছু বলতে নিলেই চাঁদের ফোনে কল আসে।সে তার গায়ে থাকা প্রণয়ের র*ক্তেমাখা এপ্রোণের পকেটে রাখা মোবাইলটা হাতে নিতেই অপরিচিত নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকায়।তবুও সেটা রিসিভ করে সালাম দিতেই অপরপক্ষ থেকে সালামের জবাব নিয়ে একজন লোক বলেন,
“ডক্টর প্রণয়কে ফতুল্লা থানায় নেয়া হয়েছে।এই মাত্রই জিপে করে কোথাও নেয়া হচ্ছে।হয়তো ফা*সি দেয়ার জন্যই…..”
সঙ্গে সঙ্গে চাঁদ ফোন কে*টে দিয়ে রায়হানকে কল দিয়ে এই পাশের সব খবর জানায়।আর এও বলে চৈত্রকে যেনো জানানো হয়।তখনই রায়হান বলে,
“আমরা অলরেডি নারায়ণগঞ্জের পথে বের হয়ে গেছি।কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যাবো।অরিনের সেক্রেটারি আমাদের জানিয়েছে প্রণয়কে কোথাও নেওয়া হচ্ছে।সে তাদের ফলো করছে।লোকেশন ট্রেস করেই আমরা যাচ্ছি।তুমি অরণের ফোন দেখো লোকেশন পাঠিয়েছি।ওভাবে ওভাবেই এসে পড়ো”
রায়হানের সাথে কথা বলে ফোন কেটেই অরণের দিকে চেয়ে চাঁদ বলে,
“বেশি সময় নেই অরণ চল্লিশ বেজে গিয়েছে।ফতুল্লা থানা এখান থেকে সামনেই তাড়াতাড়ি চলুন”
“দাড়াও সিএনজি নিচ্ছি”
বলেই মিনিট দুয়েকের মাঝেই সিএনজিতে উঠে বসে দু’জনে।চাঁদ বেশ ঘেমে গিয়েছে।দুই হাটুতে দুই হাতের কনুই ঠেকিয়ে কপালে হাতজোড়া ঠেকিয়ে রেখে চোখজোড়া বুজে আছে।তার চোখের সামনে বারংবার বিকেলে দেখা সেই দুঃস্বপ্নই ভেসে উঠছে।প্রচন্ড ঘেমে গিয়েছে চাঁদ।অস্থির হয়ে উঠছে চিত্ত।শ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন।বুকের ধুকপুকানি ক্রমশই বাড়ছে।দাঁত দ্বারা ঠোট কামড়ে চোখ খিচে হাটুর কাছের কামিজ আর এপ্রোণ চেপে ধরে রেখেছে।মনে মনে বেশ কিছু সূরাহও পড়ছে।বারংবার একটাই প্রার্থণা তার প্রণয়ের যেনো কিছু না হোক!তবে ভাগ্য কি অতটা সহায় হয়?সর্বদা লোকে যা চায়,যা প্রার্থণা করে তাই কি পায়?সৃষ্টিকর্তা সবসময় কি সবার চাওয়া পূর্ণ করেন?তিনি তার সেরা সৃষ্টি মানবজাতির জন্য যা অতি কল্যাণকর,যা তার জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ তাইতো তাকে দেন!তাইতো তার সাথে ঘটে।এটাইতো তার নিয়তি!
বারোটা বাজার আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি!তখনই সিএনজি এসে পৌঁছায় লোকেশন অনুযায়ী।চাঁদ তৎক্ষণাৎ নেমে আশেপাশে কাউকে খুঁজতেই অরিনকে দেখে অস্থির হয়ে বলে,
“প্র….প্রণয় কোথায় অরিন?তাকে কোথায় নেয়া হয়েছে?”
অরিন কোনো কথা না বলেই চোখে অশ্রু নিয়ে তৎক্ষণাৎ চাঁদের হাত ধরে তাকে নিয়েই দৌড়ায় থানার ভেতরের দিকে।আর অরণ ভাড়া মিটিয়ে নিজেও তাদের পিছু নেয়।অতঃপর ভেতরে আসতেই চাঁদ দেখতে পায় পুলিশে ঘেড়াও করা থানার ভেতরের দিকটা।তার নয়ন কেবলই প্রণয়কে খুঁজে চলেছে।অতঃপর চট করেই ফা*সি দেবার স্থানে একদম সামনে বরাবর পাটাতনের উপরে কারো মুখ লাল কাপড় দ্বারা বাঁধাবস্থায় গলায় মোম গলানো মোটা দড়ি লাগানো দেখতে পায়।দু’হাত পেছন থেকে বাঁধা।শরীরের গড়ন দেখে চাঁদের বিন্দুমাত্র সময় লাগেনা লোকটাকে চিনতে।কেনোনা এই সেই তার প্রিয় মানব!তার একমাত্র অর্ধাঙ্গ,তার বিড়ালাক্ষী মানব।যাকে সে সর্বদা তার হৃদয়ে সযত্নে,অতি গোপনে লালিত করেছে সকলের আড়ালে,আবডালে।অতঃপর ঘড়ির কাটায় বারোটা পাঁচ বাজতেই কারা কর্তৃপক্ষ হাতের সাদা রুমালটি মাটিতে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পলকেই জল্লাদ ফা*সির মঞ্চের লিভারটি টান দেয়।তৎক্ষণাৎ প্রণয়ের পায়ের নিচের পাটাতন সরে গিয়ে নিচের দিকে ঝুলে যায় চাঁদের অতি প্রিয় প্রাণেশ্বর।তার একমাত্র,প্রথম এবং শেষ প্রেম।তার স্বামী,তার হৃদয়ে সূক্ষ্ম ব্যথা জাগ্রতকারী ডক্টর রুহায়ের প্রণয়।লোকটা চেচাচ্ছেনা কেনো?কেনো বিন্দুমাত্র আওয়াজ তার গলা দিয়ে বেরুচ্ছে না?চাঁদের কি এতটুকু অধিকারবোধ নেই তার প্রিয় সেই কন্ঠস্বর শেষবারের ন্যায় শোনার?একাংশ আওয়াজ গলা দিয়ে না বেরুলেও প্রণয় তার দুই পা ছটফটাচ্ছে,ঝাপটাচ্ছে বারংবার।জান টা কি তার অতি নি!র্মমভাবে বেরুচ্ছে?কেমন সেই অনুভূতি?অতি হৃদয় বিদারক কি?ইশ!দৃশ্যখানা সহ্য হলোনা কারোর।সকলেই চোখজোড়া বুজে নিলো।কেউ কেউ হাতের দুই আঙুল দ্বারা চোখের পাতা বন্ধ করলো।তো আবার কেউ তাদের দৃষ্টি পাকায় নিবদ্ধ করলো।চোখজোড়া বন্ধ করলোনা সেখানে উপস্থিত কেবল তিনজন।প্রণয়ের স্ত্রী চাঁদ,তার সর্বোপ্রিয় বন্ধু অরণ।আর?আর তাকে যে বিনা স্বার্থে ভালোবেসেছে সেই মেয়েটা।তবে সেকেন্ড দুয়েকের মাঝেই চোখজোড়া বুজতে বাধ্য হলো অরিনও।অতঃপর?অতঃপর প্রণয়ের প্রণয়পাতার সমাপ্তি হয়তোবা এভাবেই হলো!গগণবিদারী চিৎকার করলো চাঁদ,
“প্রণয়!”
সুমধুর কন্ঠের আ!র্তনাদ কর্নকুহর হলো প্রণয়ের।মুখে ঢাকা কাপড়ের আড়াল হতেই সে মুচকি হাসলো।ঠোটের একপাশ বাকা হলো তার।অবশেষে শান্তি পেলো সে!শেষবারের ন্যায় তার প্রেমমানবী এসেছিলো।হ্যা এসেছিলো!দর্শন করেছিলো তার অতি করুন পরিণতি।তার জন্য হৃদয় ছলাৎও করে উঠেছিলো তার।আ!র্তনাদও করেছিলো সে।চন্দ্রময়ীর ঐ সর্বনা!শা চোখ দিয়ে ধ্বংসা*ত্মক অশ্রু কি ঝড়েছিলো?বুক কি তার খা খা করে উঠেছিলো?দম কি তারও বদ্ধ হয়েছিলো?মস্তিষ্ক কি অচল হয়নি?অতঃপর প্রণয়ের ছটফটানো পা জোড়া থমকে গেলো।হাসি বহাল রইলো সর্বমুখে।এ যেনো বিজয়ের হাসি।সর্বকিছু পাওয়ার হাসি।পরিতৃপ্তির জোয়ার ভাসলো চিত্তে।অনেক না পাওয়ার মাঝেও শেষবারের ন্যায় কিছু একটা পাওয়া হয়তোবা তার হলো!
To be continued……
[বিঃদ্রঃআইনকানুন,পুলিশি কাজকর্ম এসবকিছু সম্পর্কে তেমন একটা আইডিয়া নেই।জানিনা এসব ব্যাপারে কতটুকু সঠিক লিখেছি।তবে যদি কোথাও ভুল থেকে থাকে জানানোর অনুরোধ।আমি সংশোধন করার চেষ্টা করবো।আর হ্যা গল্পটা অবশ্যই কাল্পনিক!তাই কাল্পনিকভাবেই নেওয়ার এবং ভুলসমূহ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ]