❤️(44_45)❤️
44-FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part: 44
উজান আর হিয়া শুয়ে পড়লে পাশের ঘরে বুলির ফোনে মেসেজ আসে পাবলোর……
পাবলো:ফোন দিবা খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে…
বুলি:একটু ওয়েট করো কাকিমা ঘুমিয়ে পড়লে আমি ছাদেঁ গিয়ে তোমাকে ফোন দিচ্ছি….
পাবলো:যথা আগগা বুলি ম্যাডাম….আমি অপেক্ষায় আছি…….
হিয়াদের ছাদঁ….
বুলি:বলো
পাবলো:আজকে তোমাকে নীল শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছিলো….
বুলি:এটা বলার জন্য ফোন দিতে বললে….
পাবলো:না তা নয়।খুব মিস করছিলাম তোমাকে তাই…..
বুলি:হুম তাই না…কাকিমা উঠে গেলে কি হবে আর কেউ যদি ছাদে আসে তখন
পাবলো:বলবে আমার সাথে কথা বলছিলে…
বুলি:খুব সহজ তাই না…..আজকে তুমি জা করলে না ইসস আমি তো লজ্জায় আর দিদি আর উজানদার সামনে যেতেই পারছি না…কি ভাবলো আমরা রুমের মধ্যে ইসস…….
পাবলো:তুমি বেশিই ভয় আর লজ্জা পাচ্ছো…এতে কি ভাবার আছে দাদাভাই কি বৌদি কে ভালোবাসে নাই নাকি…..
বুলি:উজান দা না তোমার মতো না….
পাবলো:আমি কেমন…..
বুলি:তুমি জানো….
…….প্রায় ১ঘন্টা ধরে বুলি আর পাবলো ফোনে কথা বলে এদিকে যে ১২টা পার হয়ে গিয়ে ১টা পার হতে চললো বুলির খেয়াল নেই…
বিকাশবাবু:তখন উজান আর পাবলোর সাথে গল্প করতে করতে ছাদে তো আমার কাপড় গুলোই তুলে আনতে ভুলে গেলাম…আকাশ তো খারাপ বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় যদি না না তুলে নিয়ে আসি…আর বুলি ওহ তো আরেক মহারানী এসব কি ওর মনে থাকে নাকি যে ছাদে কাপড় থাকতে পারে তুলে নিয়ে আসি…আমার দুটো মেয়েই এক বারে দু রকম হয়েছে……
বুলি:তারপর বাবা কি বললো?
পাবলো:কি আবার দাদাভাই এর মতো ছেলে খুঁজতে তোমার জন্য…….
বুলি:একটু ধরো তো কেউ মনে হয় আসছে….কে…..মামু তুমি…..
বিকাশবাবু:তুই এতো রাতে ছাদে কি করছিস…..?
বুলি:ইয়ে মামু আমি,আমি ছাদেঁ,আমি এতো রাতে ছাদেঁ কি করছিলাম
বিকাশবাবু:সেটাই তো জানতে চাচ্ছি
বুলি:(বুলির চোখ যায় কাপড় গুলোর উপর) আমি এই তো তোমার এই কাপড় গুলো তুলতে এসেছিলাম।আবহাওয়া টা দেখো বৃষ্টি হতে পারে তাই ভাবলাম গিয়ে দেখি ছাদে কোনো কাপড় আছে নাকি….তাই জন্য….
বিকাশবাবু:সেকি শুনছি আমি তোর মুখে এসব।যাক শুনে ভালো লাগলো এসব ছোট খাটো জিনিস নিয়েও তুই ভাবিস…হিয়া ওহ বাড়িতে চলে গেলে তো তুই আমার সম্বল রে……
বুলি:আচ্ছা হয়েছে এবার চলো নিচে যাই….
পরের দিন খাবার টেবিলে….
হিয়া:আরেকটা রুটি দেবো তোমায়….
উজান:না এটাই এনাফ…
হিয়া:বাবা তোমাকে দেবো…
বিকাশবাবু:না মা…..থাক বোস তুই….বুলি কই বেরিয়ে গেছে ক্লাস এর জন্য….?
বাসবি:হ্যা ও তো সকালেই বেরিয়ে গেলো কোনো রকম নাকে মুখে খেয়ে….মেয়ে টার ও তো সামনে পরীক্ষা….
হিয়া:মা তুমি খেয়েছো?
বাসবি:হুম আমি বুলির সাথে সকালেই খেয়েছি…তোরা খেয়ে না…আমি চা নিয়ে আসছি…
হিয়া:ঠিক আছে….
উজান:বাবা একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে..!
বিকাশবাবু:হুম বলো…
হিয়া:সবজি দেই একটু
উজান:দেও অল্প দিও…….বাবা বলছি কি পাবলো কে তোমার কেমন লাগে মানে ছেলে হিসাবে…?
হিয়া:
বিকাশবাবু:পাবলোর কথা বলছো ওহ তো তোমারি মতো খুব ভালো।ওর মার মতো ওহ হয়নি কি সুন্দর আমাদের সাথে হেসে খেলে কথা বলে…
উজান:তোমার ওকে পছন্দ হয়….?
বাসবি:এই যে চা,দেখি হিয়া বাটি টা উঠে নে তো এখান থেকে।আর এই যে রাজা তোর ব্ল্যাক কফি সবাই নিয়ে নেও কিন্তু….
উজান:মা একটু বসে যাও কথা ছিলো…হ্যা বাবা বলো পছন্দ হয় পাবলো কে তোমার?
বিকাশবাবু:পছন্দ না হওয়ার তো কিছু নেই উজান।কিন্তু কেনো বলো তো?
উজান:বুলির জন্য…তুমি কাল বললে না বুলির জন্য ওর মতো কাউকে তুমি চাও।আমার মনে হয় পাবলো বুলি কে খুব ভালো রাখতে পারবে…
বিকাশবাবু:কি যে বলো না তুমি উজান।সবাই কি তোমার মতো কোথায় তোমরা আর কোথায় আমরা বলো তো তুমি বলেই হিয়া কে ভালোবেসে বিয়ে করেছো কিন্তু পাবলো ওহ তো বুলি কে ভালো নাও বাসতে পারে আর পাবলোর মা মিনাক্ষী উনি তো হিয়াকেই মেনে নেয় নি তাহলে ওনার নিজের ছেলের বউ হিসাবে বুলি কে কি মানতে পারবে।পারবে না বাবা আরো অশান্তি বাধবে….
বাসবি:না বিকাশবাবু আপনি ভুল ভাবছেন পাবলো ওহ রকম না ওহ সম্পূর্ণ আলাদা…
উজান:আর আমি তো বলছি না এক্ষনি ওদের বিয়ে দিতে আগে বিহান বিয়ে টা করে নিক বুলির পড়াশুনো টা পুরোপুরি শেষ হোক আর পাবলো ও নিজের পায়ে দাড়াক তারপর…..
বিকাশবাবু:বুলি কি রাজি হবে….
উজান:তুমি ভেবো না সময় হলে আমি কথা বলে নিবো ওদের দুজনের সাথে…..তোমার আপওি নেই তো….
বিকাশবাবু:না তবে ওর মা বাবা কেও তো বলতে হবে…?
বাসবি:ওটা আপনি আমার উপর ছেড়ে দিন..দিদির সাথে আমার খুব মিল হয়ে গেছে এ কদিন এ আমি দিদি কে বুঝায় বলবো….
উজান:আচ্ছা আমার হয়ে গেছে আমাকে বের হতে হবে…..আমার গাড়ির চাবি…..হিয়া একটু খুজেঁ দেও না…..
হিয়া:আচ্ছা উঠো…..
………………….
হিয়া:কোথায় রাখছো চাবি।সাইড টেবিলেই তো রাখা থাকে সবসময়…ধুরো….উজানননন পাচ্ছি না তো….
উজান:(হিয়াকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে)…লাগবে না চাবি।ওটা আমার পকেট এই আছে…..
হিয়া:তাহলে এতোক্ষন ধরে আমাকে দিয়ে খুঁজতে দিলে কেনো?
উজান:কারন আমি যখন উঠে আসলাম আমার পিছন পিছন যে তুমিও আসবা সেই সেন্স তো নেই তোমার…তাই চাবি খুঁজতে বলে নিয়ে এলাম…(হিয়ার চুল গুলো নাড়তে নাড়তে)
হিয়া:তাই না…গেট খোলা মা বাবা কেউ যখন তখন এসে পড়বে….
উজান:আসবে না মা ছাদে আর বাবা একটু কাজে বের হলো….
হিয়া:ছাড়ো না উমহুম….এখন দেড়ি হচ্ছে না তোমার….উজানননন কি করছো কি…আরে আমার কিন্তু কাতুকুতু লাগছে….দেখো তো কি জ্বালা…হিয়ান কে কিন্তু বলে দিবো এবার….
উজান:দেও বলে…
হিয়া:উজানন…
উজান:আচ্ছা ছাড়বো তার আগে একটা চকলেট দেও….
হিয়া:না দিবো না….আর শুনো মনে করে তৃনা ম্যাম এর সাথে কথা বলে নিও কিন্তু কালকে এ্যাপোয়ন্টমেন্ট আছে উনি আজ তোমাকে একবার দেখা করতে বলেছিলো….
উজান:ঠিক আছে মনে আছে আমার….
হিয়া:উজান…..
উজান:আরে তখন থেকে উজান উজান বলে চেঁচাচ্ছ একবার দিয়ে দিলেই তো যাচ্ছি টিউলিপে…
হিয়া:কি হ্যা…কি…দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছো কিন্তু তুমি……
উজান:হলাম না হয়…
হিয়া:তাই না….এটাই লাস্ট হ্যা এর পর চকলেট কেক কোনো কিছুর বাহানা চলবে না কিন্তু বলে দিলাম
উজান:ঠিক আছে…..
….হিয়ার মুখ টা উপরে তু্লে উজান হিয়ার ঠোটেঁ ঠোটঁ ডুবিয়ে দেয়…..
এভাবে দেখতে দেখতে আরো ১মাস হয়ে যায়…
টিউলিপ…..
তৃনা ম্যাম:আর তো বেশি দিন নেই হিয়া।তুমি এ কটা দিন বাসাই থাকার চেষ্টা করো…আর আজ সব রিপোর্ট গুলো নরমাল ই আছে চিন্তার কোনো কারন নেই উজান কে বলো তোমাদের বেবি এখনো বেশ ভালো আছে…
হিয়া:ঠিক আছে ম্যাম থ্যাংক ইউ আপনি এতো দিন যা করলেন আমার জন্য সত্যি আমি কৃতঙ্গ আপনার কাছে….
তৃনা:এটা তো আমার ডিউটি হিয়া….কার সাথে বাড়ি যাবে এখন উজান নিয়ে যাবে
হিয়া:হুম…..
তৃনা:ঠিক আছে মা এসো….
হিয়া:আসছি ম্যাম……
……হিয়া কিছু মেডিসিন কিনতে গেলে দুজন নার্স এর কথা শুনতে পায় আর ওর ভীষন কষ্ট হয়….
নার্স:এ এটা তোদের উজান স্যার এর ওয়াইফ না কি যেনো নাম হিয়া না খবরের কাগজে পড়েছিলাম টিভি তেও তো বললো…
নার্স:হুম রে…ওহ তুই তো নতুন দেখবি কিভাবে…
নার্স:একটা কথা বুঝি না জানিস তো এই উজান স্যার তোদের কতো নাম ডাক কতো টাকা তার পর আবার এই টিউলিপের নতুন এমডি, কদিন নাকি ইউ এস তেও ছিলো তা ওনার মতো এরকম একজন মানুষের চয়েস এ রকম সাদামাটা কি করে হয়….শুনলাম হিয়া এই মেয়েটার নাকি সেরকম বড়ো কোনো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই শুধু মেডিকেলে পড়ে এই যা….
নার্স:দেখতে পাচ্ছিস না অন্তঃসওা….দেখ ফাঁসিয়েছি হয়তো উজান স্যার কে কোনো ভাবে না হলে তো উজান স্যার চলেই যেতো আবার ইউ এস এ তে থেকে গেলো কেনো বল…
নার্স:সেটাই….এর চেয়ে তো নিলীমা ম্যাম ই ভালো ছিলো বল…দেখতে শুনতে টিপটপ আবার এই টিউলিপের অর্ধেক পার্চেন্ট শেয়ার ও নাকি ওর বাবার নামে…ভাব কতো বড়লোক…উজান স্যার কিন্তু ভুল করলো জানিস।আর এটা আমি না টিউলিপের সবাই বলো স্যার এর মুখের উপর তো বলার সাহস নেই তাঔ আড়ালে আড়ালে বলে..
নার্স:বাদ দে আমাদের কথায় কি আর ওরা চলবে…চল চল ফাইল গুলো দিয়ে আসি দাসগুপ্তা ম্যাম অপেক্ষা করছে….
নার্স:হুম চল…
…….নার্স দুজনের কথায় হিয়ার মনে খুব কষ্ট হয় হিয়া কেঁদে ফেলে কিন্তু অনেক কষ্টে সেটা আড়াল করে…..
উজানের কেবিন…..
নিলীমা:আসতে পারি উজান
উজান:হুম এসো প্লিজ বসো…
নিলীমা:আজ ডিউটি নেই তোমার আর।
উজান:না একটা ওটি ছিলো শেষ করে এলাম মাএ।এখন বাড়ি যাবো হিয়া এলেই…
নিলীমা:ওহ হিয়া এখানেই টিউলিপে
উজান:আসলে ওর আজ চেকআপ ছিলো তৃনা ম্যাম এর কাছে তাই ওর অপেক্ষা তেই আছি….
নিলীমা:ওহ আচ্ছা….তোমাকে এটা দিতে এলাম মনে আছে রাজ এর কথা একসাথে পড়তাম আমাদের ব্যাচ এর খুব ভালো গিটার বাজাতো…
উজান:কেনো মনে থাকবে না কনভেন্ট এর সব ইভেন্ট এ তো ঔ ই গান করতো…
নিলীমা:ওর পরশু বিয়ে তোমার কাছে এসেছিলো তুমি ওটিতে ছিলে তাই আমাকে দিয়ে গেলো….
উজান:থ্যাংক ইউ নিলীমা।
নিলীমা:মাই প্লেজার…
…….উজান আর নিলীমা হেসে হেসে কথা বলে এমন সময় হিয়া এসে ওদের কে দেখে আরো কষ্ট পায়……
হিয়া:উজান আমার হয়ে গেছে তুমি রে….নিলীমা ম্যাম….
নিলীমা:আরে হিয়া এসো না বসো।
হিয়া:হুম….
নিলীমা:আমি তাহলে আজ আসি উজান।কাল দেখা হচ্ছে
উজান:হুম….
…….এদিকে বাসায় এসে উজানের সাথে হিয়ার তুমুল ঝগড়া লাগে…হিয়াস মেজাজ এমনিতেই খিটখিটে থাকে এসময় তার উপর নার্স দের ওসব কথা…..
উজান:হিয়া প্লিজ কে কি বললো সেটা দিয়ে তুমি আমাকে কেনো বিচার করছো….
হিয়া:তো কি করবো বলো কি করবো।সত্যি তো আমি তোমার যোগ্য নই…..তুমি তো চলেই গিয়েছিলে ইউ এস…কেনো থেকে গেলে তারপর। হিয়ান আর আমার জন্যেই তো….বাধ্য হয়েছো তুমি….
উজান:জাস্ট শেট আপ হিয়া….এর পর আমার মাথা গরম হয়ে গেলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি……
হিয়া:কি হবে কি খারাপ হবে।যা হবার তা তে হয়েই গেছে….এখনো সময় আছে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে নিলীমা ম্যাম কে বিয়ে করে নেও….
উজান:হিয়া….
হিয়া:একদম চিৎকার করবে না…কি ভুল বললাম আমি তুমি আমাকে বিয়ে করে তোমার লাইফের বড়ো ভুল করেছো এটাই ফ্যাক্ট উজান….
উজান:আর কিছু বলবে….বলো আমি শুনছি…
….(উজানের প্রচন্ড রাগ হয় হিয়ার উপর শুধু হিয়া আর পুচকুর কথা ভেবে নিজেকে কন্ট্রোল করে)
হিয়া:আমি মজা করছি না তোমার সাথে উজান…সত্যি তো কি আছে আমার না আছে রুপ না গুন শুধু মেডিকেল এ পড়লেই তো হয় না…ডক্টর উজান চ্যাটার্জীর ওয়াইফ হতে গেলে আরো অনেক কিছু থাকতে হয়…
উজান:হিয়া প্লিজ আমার কথা টা শুনো একটু শান্ত হও প্লিজ হিয়া…প্লিজ…
হিয়া:ছাড়ো আমাকে।ধরবা না তুমি…আমি তো ফাঁসিয়েছি তোমাকে…
উজান:কি সব বলছো তুমি হিয়া…আমার মাথা টা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে অনেক কষ্ট করে রাগ টাকে কন্ট্রোল করে রাখছি তুমি প্লিজ আমাকে আর রাগিও না…..
বাসবি:আহ কি শুরু করলি কি তোরা দুজন।কদিন তো ভালোই ছিলি আবার কি নিয়ে লাগলো…
উজান:ওটা তোমার মেয়ে কে বোঝাও তখন থেকে কি সব বলে যাচ্ছে…
বাসবি:কি হিয়া আমি তো সবটা শুনলাম গেটে দাড়িয়ে এসব কি বলছিস তুই এসময় এসে….আর কে কি বললো তাতে তুই তোর আর রাজার সম্পর্ক টা বিচার করতে বসলি…তুই তো জানিস আসল সত্যি টা কি তাহলে…..
হিয়া:আমি ওসব কিছু বুঝি না মা।তুমি তোমার ছেলে কে বলো আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে আর নিলীমা ম্যাম কে বিয়ে করে নিতে। এর পর আমার ফাইনাল ইয়ার শেষ হলে আমি আর পুচকু গ্রামে চলে যাবো ওকে আর নিলীমা ম্যাম কে আমি আর কখনো বিরক্ত করবো না…
উজান:তুমি দেখলে মা কিসব বলছে ওহ এর পরো তুমি আমাকে চুপ করতে বলছো….
বাসবি:আহ থামবি তোরা যেটা হবে না সেটা নিয়ে কথা বলে কি কোনো লাভ আছে…হিয়া চুপ কর তো…খাবি চল…আয়….
হিয়া:আমি খাবো না তোমরা খেয়ে নেও…
উজান:এগুলো কি নাটক হিয়া…
হিয়া:বললাম তো খাবো না…
উজান:এক্ষনি চলো আমার সাথে খাবে এসো…
হিয়া:আমার লাগছে হাতে ছাড়ো।
বাসবি:রাজা কি করছিস ছাড় ওর হাত ওভাবে কেউ ধরে….
উজান:কিছু না বলে বলে তুমি মাথায় উঠে গেছো..এতো ওডাসিটি আসে কোথা থেকে তোমার…
হিয়া:তোমাকে তার কৈফয়ত দিতে আমি বাধ্য নই….
বাসবি:আমি তোদের মা দাড়িয়ে আছি সামনে তোদের সাহস তো কম নয় তারপরো ঝগড়া করে যাচ্ছিস ডাকবো হিয়া বাবা কে কি রাজা ডাকবো…
উজান:তুমি আমাকে কি বুঝাতে চাইছো ওকে বলো না কেনো…যবে থেকে পুচকু এসেছে ওর রাগ যেনো বেড়েই চলছে…কোথায় থামতে হয় ভুলে যায় মাঝেমাঝে….পড়াশুনো তো নেই।সারাদিন এসব কে কি বললো না বললো এগুলোতেই মন………আর এই যে পড়াশুনো করবে না।না করলে বলে দেও এই বই খাতা গুলো সব ফেলে দিয়ে আসি বাহিরে…
(উজানের হাত থেকে বই গুলো নিয়ে)
হিয়া:এর পর থেকে আমার পার্সোনাল লাইফে তুমি নাক গলাবে না।আমি পড়বো কি পড়বো না সেটা আমার বিষয় আমি দেখে নিবো…
উজান:লিমিট ক্রস করবা না হিয়া বলে দিলাম….
হিয়া:লিমিট আমার আগেই ক্রস করা উচিৎ ছিলো..
উজান:(হিয়ার হাত থেকে আবার বই গুলো নিয়ে)..লাস্ট বার বলবো যাও মার সাথে খেতে হিয়া:খাবো না বললাম ই তো….
উজান:ডিসগাস্টিং…..
(….উজান রাগে ছাদে চলে যায় কারন আর কিছুক্ষণ হিয়ার কাছে থাকলে বাকি যেটুকু রাগ আছে সব বেরিয়ে আসবে….)
বাসবি:রাজা…
উজান:মা তুমি।তুমি আবার এতো রাতে উপরে আসতে গেলে কেনো…
বাসবি:কিছু কাপড় ছিলো তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম…তুই কি করছিস দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে চল খাবি চল….
উজান:হিয়া খেলো কি করছে এখন…
বাসবি:না খাই নি।কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লো।আমিও আর ডাকলাম না..ওর খিদে পেলে ওহ ঠিক উঠে খাবে তুই ভাবিস না…ঘুমোলে মন টা হালকা হবে তাই ডাকলাম না ওকে আর…..তুই আয় খাবি আয় আমার সাথে…
উজান:নাহ মা হিয়া খায়নি আমারো আর ইচ্ছে নেই খাওয়ার।দেখি রাতে ওহ উঠে কিছু খেলে তখন ওর সাথে খেয়ে নিবো….
বাসবি:ঠিক আছে।তোরা যা ভালো বুঝিস কেউ ই তো আর আমার কথা শুনবি না……যাই হোক ফ্রিজ রুটি ভাত সব বেড়ে রাখছি শুধু তরকারি টা গরম করে নিস না পারলে আমাকে ডেকে বলিস….
উজান:পারবো।তুমি যাও শুয়ে পড়ো..
বাসবি:হিয়ার কথায় কিছু মনে করিস না…রাগ করিস না ওর উপর আর….
উজান:রাগ তো হয়ই মা এসব শুনলে।বাবা শুনলে কি ভাববে বলো তো….ডিভোর্স দেও নিলীমা কে বিয়ে করো এসব কথা কোথা থেকে এলো আবার…হিয়া বুঝে না এসব বলে ওহ আমাকে কি কষ্ট টা দিচ্ছি…..
বাসবি:ওর তো ইদানীং একটু বেশি রাগ হচ্ছে তোদের মেয়ে আসলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে…
উজান:হুম…
………..
রাত তিনটে খিদের চোটে হিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।উজান সেই রাত থেকে হিয়া ওঠার অপেক্ষা তেই ছিলো.
হিয়া:উজান এখনো জেগে আছে….ধুরো কি খিদে পেয়েছে আমার…তখন তো খুব করে বললাম খাবো না এখন কি করি…..পেট ডাকছে তো…যাবো খেতে…না না আর একটু দেখি ওহ ঘুমায় পড়ুক তারপর….ঠিক আছে মা আর একটু অপেক্ষা কর কেমন….
……উজান দেখে হিয়া ঘুম থেকে উঠে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে।উজান বুঝে হিয়ার খুব খিদে পেয়েছে….উজান রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি গরম করে একটা প্লেটে দুজনের জন্য ভাত বেড়ে নিয়ে এসে হিয়ার পাশে গিয়ে বসে……
হিয়া:কি এগুলো….
উজান:উজান কিছু না বলে হিয়ার মুখের সামনে ভাত ধরে…
হিয়া:আমি তো বললাম আমি খাবো না..
উজান:উজান এবার বড়ো বড়ো রাগি রাগি চোখ নিয়ে হিয়ার দিকে তাকায়….
হিয়া:খাবো না মানে খাবো না….
উজান:হিয়া আমি লাস্ট বার বলছি এসব নাটক বন্ধ করো এর পর কিন্তু আমি রেগে গেলে তুমি জানো কি হবে…..
হিয়া:হিয়া আর কিছু না বলে মুখ বাড়িয়ে খেয়ে নেয়…..
…..দুজনে চুপচাপ উজান হিয়াকে তিন চার গাস খাওয়াও দেওয়ার পর হিয়ার আরে ভালো লাগে না…
হিয়া:আর খাবো না…
উজান:এটাই লাস্ট….
হিয়া:বললাম তো খাবো না…
উজান:কিসের এতো রাগ দেখাচ্ছো তুমি…আমার যে খারাপ লাগে এটুকু বোঝার সেন্স টুকু নেই তোমার….
হিয়া:তার জন্য তো বললাম আমাকে ছেড়ে নিলীমা ম্যাম কে বিয়ে করে নেও তাহলে আর কোনো খারাপ লাগা থাকবে না…
উজান:(একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে)এটাই তোমার লাস্ট কথা….
হিয়া:হ্যা..
উজান:আমি তোমাকে ডিভোর্স দিলে তুমি কি করবে একা একা তুমিও অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে…..
হিয়া:অন্য কাউকে বিয়ে কেনো করতে হবে আমি পুচকু কে নিয়ে গ্রামে চলে যাবে ওখানে সবার চিকিৎসা করবো….
উজান:(উজানের ডান হাতে ভাত লেগে থাকায় বাম হাত দিয়ে ঔষধ ছিড়ে হিয়ার মুখের সামনে ধরে…)……হা….পানি….
হিয়া:আমি তো কখনো তোমার লেভেলে যেতে পারবো না তোমার মতো এতো টাকা পয়সাও আমার হবে কি না জানি না…নিলীমা ম্যাম এর তো এমনিতেই সব আছে তোমার কখনো কোনো অসুবিধা হবে না…
উজান:একটা কথা বলবা যদি কখনো ধরো আমার এসব টাকা পয়সা না থাকলো আমি পুরো একা হয়ে গেলাম তখন তুমি কি করবে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে…?
হিয়া:এটা তো কখনো হবে না আমি জানি তাই এটার কোনো উওর আমি দেবো না….
উজান:এটার উওর যেহেতু তুমি দিতে পারবা না তাই প্লিজ কখনো আমাকে এসব কথা আর বলতে আসবে না হিয়া আমি বলে দিলাম….
হিয়া:আমি তোমার দয়া চাই না উজান।তুমি প্লিজ আমি যা বলছি তা করো…
উজান:আমি তোমাকে আর হিয়ান কে দয়া করছি হিয়া….!!….
…….উজান ভাতের প্লেটে টেবিলের উপর ছুড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় টিউলিপে……
FF: #মেডিকেল_ক্যাম্প
Part:45
……..সেদিন রাতে উজান হিয়ার উপর রাগ করে টিউলিপে ফিরে যায়।পরের দিন দুপুর পেরিয়ে বিকেল,বিকেল পেরিয়ে রাত হয় উজান আজ একবারো হিয়া কে ফোন দেয়নি এমনকি বাসবি বা বুলি কেও ফোন দিয়ে একবারো হিয়ার খোজ নেয়নি…..
রাত১১টা…..
হিয়া:মা আজ উজান আসবে না…তুমি যে তখন ফোন করলে….
বাসবি:না আজ আর আসবে না রাজা….
বিকাশবাবু:তুই যা বাড়াবাড়ি করছিস কি করবে এসে ও আবার তো ওহ এলে ওর সাথে ঝগড়া করবি রাগারাগি করবি…ওহ টিউলিপে আছে ওখানেই ভালো আছে..তোর তো ওর দরকার নেই….
……হিয়া মন খারাপ করে ওর রুমে চলে যায়…পরের দিন ও উজান আসে না হিয়া কে একটা ফোন ও করে না…হিয়ার ভিতরে ভিতরে খুব কষ্ট হয়।মাঝেমাঝে যতোই ব্যাস্ত থাকুক ওর উজান স্যার কিন্তু দিনে একবার হলেও হিয়াকে এসে দেখে যেতো কিন্তু আজ দুদিন হলো হিয়ার সাথে উজান রাগ করে বাড়ি আসে না..দুদিন না আছে চোখের দেখা না কোনো ফোন কলস…তিন দিন এর বেলায়…
হিয়া:মা আজো কি ওহ আসবে না…
বাসবি:জানি না…
বুলি:এসে কি করবে..না বল আমাকে তুই,সেদিন যে অহেতুক কতোগুলো কথা শুনিয়ে দিলি উজান দা কে।কোনো মানে ছিলো তার….
বিকাশবাবু:তা নয় তো কি।ছেলে টা আজ দুদিন ধরে টিউলিপে পড়ে আছে কি খাচ্ছে না খাচ্ছে ছিঃ হিয়া মাঝেমাঝে একটু আধটু রাগ ঠিক আছে কিন্তু সেদিন যা করলি তুই সেটা তোকে মানায় না মা….
বাসবি:আগে দিনে আমাকে দশ বারো বার ফোন করে জিঙ্গাস করতো মা হিয়া কি করে হিয়া খেয়েছে কিনা হিয়া পড়ছে তো কিন্তু আজ তিন দিন হলো সারাদিন এ একটা ফোন পর্যন্ত করে না..আমি ফোন করলেও হিয়ার কথা একবারো জানতে চায় না…..এখন তুই একবার ভাব কতো টা আঘাত দিয়েছিস তুই ছেলে টাকে….
…….হিয়া ওর রুমে গিয়ে উজানের একটা ফোটো ফ্রেম জরায় ধরে কাঁদতে শুরু করে…..
হিয়া:আমি না হয় এমন অবুঝ কিন্তু তুমি…আজ দুদিন হলো তোমাকে দেখি না…এতো রাগ তোমার…বলেছি না হয় আমি দুটো কড়া কথা তাই বলে আমাকে আর পুচকে এভাবে কষ্ট দিবা..এভাবে না দেখে থাকবা……….ভুল হয়েছে আমার……কিন্তু কিন্তু আমি কি করবো বলো আমি কি করবো সবাই বলে যবে থেকে আমি তোমার লাইফে এসেছি তোমার লাইফ টা হেল করে দিছি।তোমাকে শান্তি দেই নি…..আমি তোমার জন্য পারফেক্ট না আমার কোনো যোগ্যতা নেই তোমাকে ভালোবাসার তোমার ওয়াইফ হওয়ার…কখনো কেউ বলো মৃনালিনী ম্যাম তোমার জন্য ঠিক কখনো কেউ বলে নিলীমা ম্যাম..আমার কথা তো কেউ বলে না…..আমারো খারাপ লাগে আমারো কষ্ট হয় কেউ না বুঝুক তুমি তো বুঝবা…..ঠিক আছে তুমি আসবে না তো আমাকে দেখতে আমি যাচ্ছি হ্যা আমি যাবো তোমাকে আনতে…দেখি তুমি না এসে কি করে থাকো……পুচকু চল তোর মা ভুল করেছে তো ঠিক আছে তোর মা গিয়েই তোর বাবা কে নিয়ে আসবে…..
…….হিয়া টিউলিপে গিয়ে উজানের কেবিনে যায় কিন্তু উজান কেবিনে নেই….মিরাদী কে জিঙ্গাস করাতে মিরাদী বলে স্যার তো ওনার রুমে গেলো কিছুক্ষণ আগে…হিয়া উজানের রুমে ঢুকে গেট লাগায় দেয়…হিয়া কে দেখে উজান খানিকটা অবাক হয়ে যায় হিয়া এভাবে হঠাৎ আসবে উজান কল্পনাও করে নি…..হিয়া উজানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়…..
অনেক ক্ষন পর হিয়া উজানকে ছেড়ে দিয়ে উজানের বুকে হাতে অনেক গুলো মারতে শুরু করে…..
হিয়া:তুমি খুব খারাপ খুব খারাপ তুমি…করেছি না হয় আমি ভুল বলেছি না হয় আমি কটা খারাপ কথা তার জন্য আমাকে এভাবে কষ্ট দিবা..(কাঁদতে কাঁদতে)
উজান:হিয়া লাগছে আমার…আরে..
হিয়া:লাগুক তোমার লাগা দরকার..কেনো করলে আমার সাথে এমন..তুমি জানো কি ভীষন কষ্ট হচ্ছিলো আমার..করেছি না হয় আমি ভুল..তার জন্য আমাকে তুমি….
উজান:হিয়া আস্তে লাগছে আমার…হিয়া
হিয়া:আমার যদি কিছু হয়ে যেতো তখন তখন কি করতে…(তখনো কাঁদতে কাঁদতে উজানকে মারতে থাকে..)
উজান:আরে…
হিয়া:তুমি তো আমাকে বুঝো আর কেউ না বুঝুক..আমার কথা বাদ দিলাম পুচকু ওর কথা মনে পড়েনি একবারো ওকে তো দেখতে আসতে পারতে…
উজান:Stop crying হিয়া…হিয়া আমি বলছি না আমার সামনে তুমি এভাবে কাঁদবা না…
হিয়া:(হিয়া আরো জোরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে)….তোমার কি তাতে এটাই তো চেয়েছো তুমি…আমি কাঁদলে কষ্ট হয় তোমার…হয় না….
……উজান হিয়াকে আর কথা বলতে না দিয়ে হিয়াকে সপাটে ওর কাছে টেনে এনে হিয়ার ঠোঁটে ঠোটঁ ডুবিয়ে দেয়…..
অনেকক্ষন পর……উজান হিয়াকে ছেড়ে দেয় কিন্তু উজানের রাগ এখনো কমেনি….
উজান:কার সাথে এসেছো?
হিয়া:একাই
উজান:মানে সিরিয়াসলি তুমি এতো রাতে একাই।মা রাজি হলো কিভাবে তোমাকে আসতে দিতে…
হিয়া:কাউকে বলে আসিনি…
উজান:হোয়াট…
হিয়া:কি করবো কাউকে বললে তো আসতে দিতো না তাই আমি চুপ করে…
উজান:(একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে রাগিরাগি চোখে তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে)………
হিয়া:এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো..?
উজান:এখানে এসেছো কেনো।তুমি না সেদিন বললে গ্রামে চলে যাবে আমাকে আর বিরক্ত করবে না….তাহলে এলে কেনো?
হিয়া:বললাম তো ভুল হইছে আর হবে না…..
উজান:তুমি আমাকে একদিন বলেছিলে না জীবনে কিছু কিছু জিনিসের কোনো ক্ষমা হয় না..তুমি যেটা করছো,আমাকে যেসব বলেছো তার পর তোমাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না….
…….উজান ওর স্টেথোস্কোপ টা ঘাড়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে ধরলে….
হিয়া:কোথায় যাচ্ছো আমাকে রেখে…
উজান:আমি থাকলে তুমি খুশি হও হিয়া..?
হিয়া:হিয়া আবার কাঁদতে শুরু করে দেয়..
উজান:এসব কান্নাকাটি করে কোনো লাভ নেই আর যা কষ্ট দেওয়ার তা তো দিয়েই ফেলছো……
……..বেরুতে ধরলে গেট এর কাছে এসে..
উজান:রাতে কিছু খেয়েছো?
হিয়া:(কাঁদো কাঁদো হয়ে)হ্যা খেয়েই বের হইছি…
উজান:মেডিসিন?
হিয়া:নিছি….
……….উজানের আজ নাইট ডিউটি থাকায় উজান কেবিনে এসে মেট্রন কে ডেকে আজ রাত টা টিউলিপে উজানের গেস্ট রুমে হিয়ার সাথে থাকতে বলে….
মেট্রন:হিয়া আসবো…
হিয়া:মিরাদী তুমি….
মেট্রন:স্যার ছুটি দিয়ে বললো আজ রাত টা তোমার সাথে থাকতে…
হিয়া:কেনো ওহ কোথায় গেলো
মেট্রন:স্যারের তো আজ নাইট ডিউটি আছে জানো না তুমি…
হিয়া:না আমাকে বলে নি তো
মেট্রন:তুমি কি কাঁদছিলে হিয়া…?
হিয়া:আরে না চোখে কি যেনো একটা পড়েছে তো তাই….তুমি এসেছো ভালোই হয়েছে বলো সেই যে বাড়িতে এলে তারপর তো আর কথা হলো না আজ অনেক গল্প করবো…
মেট্রন:আচ্ছা বেশ….শুইয়ে শুইয়ে গল্প করি চলো….
হিয়া:হুম চলো…
…..হিয়া আর মেট্রন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে যায় পরের দিন সকালে মেট্রন উঠে গেলে হিয়া ফ্রেশ হয়ে উজানের কেবিনে যেতে ধরলে উজান আসে….
হিয়া বোঝে উজানের এখনো রাগ কমেনি।তাই হিয়া সব স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করছে….
হিয়া:তুমি এসেছো আমি তোমার কাছেই যেতাম😊
উজান:এখানে রেখে দিন…
সেফ:আর কিছু স্যার
উজান:না ঠিক আছে….আপনি আসুন
সেফ:ঠিক আছে স্যার….
…..সেফ চলে গেলে উজান দুটো প্লেট নিয়ে একটাতে হিয়ার জন্য দুটো স্যান্ডউইচ আর একটা তে ওর জন্য একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে নেয়…..আর হিয়ার টা টেবিলে রেখে দেয়….সোফায় বসে উজান স্যান্ডউইচ খাচ্ছিলো আর এমনি অহেতুক ফোন ঘাটছিলো…..
হিয়া:এটা আমার জন্য…আমি দুটো খাবো…হ্যা আমার না খুব খিদে পেয়েছিলো জানো😊😊…
উজান:উজান কিছু না বলে ওর মতো ফোন টিপছে..
হিয়া:বাড়ি যাবে না😶😶?(ভয়ে ভয়ে)
উজান:না…
হিয়া:কেনো…?
উজান:ওটি আছে।ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি আর বুলি আসছে তোমাকে নিতে বুলির সাথে বাড়ি চলে যাও…
হিয়া:তুমি যাবে না তাহলে….রাতে তো আজ ডিউটি নেই রাতেও যাবে না…
উজান:দেখি……
হিয়া:😢😢😥😥
……হিয়া বুলি এলে বাড়িতে চলে আসে।আসার পর সারাদিনে উজান একবারো ফোন দেয়নি।রাত ১২টা উজান এখনো নেই।হিয়া ধরে নিছে উজান আর আসবে না।
বারান্দায় দাড়িয়ে হিয়া পুচকুর সাথে কথা বলতে থাকে…
হিয়া:আমি এতো বার করে ক্ষমা চাওয়ার পরো তোর বাবা আসলো না পুচকু।সত্যি হয়তো খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি তাই ভুলে থাকতে পারছে এতো সহজে।আর আমার কষ্ট সেটা তো কেউ দেখলো না বল।তুই ও কি তোর বাবার মতো আমাকে ভুল বুঝবি…
…….এমন সময় উজান এসে কলিং বেল বাজালে হিয়া খুশিতে লাফিয়ে উঠে…
হিয়া:আমি জানতাম তোর বাবা আসবে..ইয়ে আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারবে না……
বাসবি গেট খুলে দিলে উজান রুমে এসে ওর হ্যান্ডব্যাগ টা বিছানার উপর রেখে দেয়।আর সাথে একটা কাগজের ঠোসা যেটায় হিয়ার জন্য রজনীগন্ধা আর গোলাপের খোপায় গোজানো মালা ছিলো..উজান হিয়া কে কথা দেওয়ার পর প্রতি Thursday তে হিয়ার জন্য একটা করে নিয়ে আসে আজো তার ব্যাতিক্রম হয়নি…..এদিকে হিয়া রুমে এসে কি বলে কথা শুরু করবে বুঝে উঠতে পারে না….
হিয়া:এতো দেড়ি হলো যে😊?
উজান:(উজান কোনো কথা না বলে শার্ট টা খুলে টাওয়েল আর ওর গেন্জি বের করতে থাকে ড্রয়ার থেকে)
হিয়া:স্নান করবে এখন😊…ঠান্ডা লাগবে তো…
বাসবি:রাজা কি খেয়ে এসেছিস না খাবি এখন?
উজান:না তুমি ভাত বাড়ো আমি স্নান করে আসছি..
বাসবি:ঠিক আছে আয়।হিয়া তোকে দিবো কিছু খেতে?
হিয়া:না না আজ খিদে নাই।
বাসবি:ঠিক আছে বেশি রাত জাগিস না শুইয়ে পড়….
হিয়া:হুম…
…..উজান স্নান করে ফ্রেশ হয়ে আসে মাথা মুছতে থাকে কিন্তু হিয়ার সাথে কোনো কথা বলে না…
হিয়া:আমি মুছে দেই😊
উজান:না😡
হিয়া:কফি খাবা ভাত খাওয়ার পর।আমি কফি করে দেই।
উজান:তোমাকে বলেছি কিছু করতে।আর এতো রাত ধরে জেগে আছো কেনো তুমি ঘুম নেই😡
হিয়া:হ্যা এইতো যাচ্ছি শুতে😒
উজান:এসে যেনো দেখি শুইয়ে পড়েছো..
হিয়া:😏😏😏
…..উজান খেতে গেলে হিয়া উজানের ব্যাগ টা বিছানা থেকে নিয়ে টেবিলের উপর রাখতে গেলে কাগজের মোড়কে হিয়ার চোখ যায়…হিয়া ওটা খুলে মুখে এক বালতি হাসি নিয়ে লাফিয়ে উঠে…
হিয়া:দেখলি পুচকু তোর বাবা কিন্তু ঠিক মনে করে আমার জন্য এটা নিয়ে এসেছে।আমি খুব খুব খুব খুশি হয়েছি জানিস তো…খুব কষ্ট দিয়ে ফেলছি না ওকে আর কখনো এমন রাগ করবো না এটা তোর মায়ের পাক্কা প্রমিস😘😘😘উফফ গন্ধ টা কতো মিস্টি….তাহলে মিস্টার ব্যানার্জী পারলে না তো আমার উপর রাগ করে থাকতে….
……..হিয়া আয়নার সামনে গিয়ে চুলে হালকা খোপা করে মালা টা পড়ে নেয়….
হিয়া:দেখ তো মা ঠিক হলো কি না…সবসময় তো তোর বাবা পড়ায় দেয় আজ নিজে পড়ে কেমন জেনো হচ্ছে না মনে হচ্ছে…..যাগ গিয়ে…এবার চল মিছেমিছি চোখ বন্ধ করে শুইয়ে পড়ি না হলে তো এসে আবার বকা শুরু করবে😒😒😒
…..হিয়া বিছানায় গিয়ে মাঝবরাবর শুইয়ে পড়ে।উজান এলে চোখ বন্ধ করে নেয়…বাসবি সব কিছু গুছিয়ে বুলির কাছে শুতে যায়। উজান এসে গেট টেট লক করে মশারি দিয়ে বিছানায় উঠে।উজান জানে হিয়া ঘুমোয় নি এমনি চোখ বন্ধ করে আছে।উজান হিয়ার পিছনে গিয়ে শুইয়ে হিয়াকে পিছন থেকে জরায় ধরে হিয়ার খোপা করা চুলে মুখ গুজে দেয়..আর ওর এক হাত দিয়ে হিয়ার পেটে আলতো করে জরিয়ে ধরে….
“”ঠিক এমন এভাবে তুই থেকে যা স্বভাবে
আমি বুঝেছি ক্ষতি নেই আর তুই ছাড়া গতি নেই””
“””ছুয়ে দে আঙ্গুল ফুটে যাবে ফুল ভিজে যাব গা।
কথা দেওয়াওয়া থাক গেলে যাবি চোখের বাহিরে না আর”””
পরের দিন সকালে ফোনের এলার্মে উজান হিয়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।উজান এলার্ম বন্ধ করে….
হিয়া:সকালে টিউলিপ চলে যাবা আজ😢
উজান:না আজ ছুটি নিয়েছি টানা তিন দিন ডিউটি করলাম তাই(চোখ কচলাতে কচলাতে)
হিয়া:সত্যি😮😮😮আজ সারাদিন বাড়িতে থাকবা..
উজান:হুম…
হিয়া:ইয়েএএ😘😘😘
……হিয়া আবার ব্লাঙ্কেট নিয়ে ভালো করে দুজনের গায়ে মুড়ে দিয়ে উজান কে জরিয়ে ধরে ঘুম দেয়……
সকাল ১০টা…
উজান:(হিয়া উজান কে এমন শক্ত করে জোরায় ধরে আছে যে উজান হিয়ার হাত টা ছাড়িয়ে উঠতেও পাচ্ছে না)…..হিয়া হিয়া উঠো… বেলা হয়ে গেছে…হিয়া…
হিয়া:উমমম উঠবোওওওও না এখন😒😒উজান:আরে…পুচকুর খিদে পাইছে উঠো😊
হিয়া:না পায়নি….পেলে আমাকে বলতো…
উজান:উঠো আজ তোমাকে নিয়ে পড়তে বসতে চেয়েছিলাম সকালে আর হলো কোথায়…
……হিয়া উজানের বুকের উপরেই শুইয়ে ছিলো পড়ার কথা শুনো এক নিমিষে চোখ খুলে….
হিয়া:কি কি বললে😡আমাকে নিয়ে এখন তুমি পড়তে বসবে।এই শুনো হ্যা আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি আজ আমাকে দিয়ে পড়তে বসালে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম😡😡😡
……..হিয়ার খোপা খুলে গিয়ে চুল গুলো উজানের মুখে এসে পড়লে উজান হিয়ার কানে চুল গুলো গুজে দেয়….হিয়ার চুল থেকে রজনীগন্ধা আর গোলাপ এর গন্ধ বের হতে থাকে।যদিও রাতে সেগুলো ছিড়ে গিয়ে বালিশ,উজানের গেন্জি তে লেপটে যায়🌹🌹🌹
উজান:তাহলে কি করবো সারাদিন ঝগড়া করবো..
হিয়া:(উজানের বুকে একটা মেরে দিয়ে)…আমি কি তাহ বলছি😡
উজান:তাহলে😒
হিয়া:অনেক দিন তো হলো আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাও না আজ নিয়ে চলো না😊😊😊
উজান:না।এখন ম্যাম কি বলছে বাসায় থাকতে সো এখন কোনো ঘোরাঘুরি কেনসেল
হিয়া:না উজান প্লিজ….
উজান:ঠিক আছে কিন্তু তার বিনিময়ে আমি কি পাবো😊
হিয়া:যা চাও তাই দিবো ওকে।এবার বলো ঘুরতে নিয়ে যাবে?
উজান:দিবে তো😊
হিয়া:হুম😒
উজান:তাহলে এখন একটা চকলেট দেও😊😊
হিয়া:এটা চাই বললেই হয় এতো বাহানার কি দরকার😊😊😊
…..হিয়া উজানের ঠোটে ওর ঠোট ডুবিয়ে দেয়😘😘😘….
খাবার টেবিল
হিয়া:এই তুই এখন কোথায় বের হচ্ছিস তুই না বললি আজ তোর ক্লাস নেই😡😡😡😡
বুলি:(বাসবির দিকে চায়)
বাসবি:আরে ওহ বের হচ্ছে হোক না।এমনিতে তো মেয়েটার সামনে পরীক্ষা তারপর তো আর বের হতে পারবে না..
হিয়া:কিন্তু কোথায় যাচ্ছে সেটা বলে যাক
বুলি:দিদি ঔ পাবলো আজ বললো দেখা করতে..
হিয়া:ঠিক আছে😒😒আর হ্যা পাবলো কে বলিস তো এসে যেনো একবার আমার সাথে দেখা করে..
উজান:উজান হিয়ার দিকে তাকায় একটা হাসি দেয়…
হিয়া:এতে হাসির কি আছে😒😒😒
বুলি:ঠিক আছে…
হিয়া:হুম…
বাসবি:তুই মেয়ে টাকে ওভাবে কেনো বকিস বল তো।জানিস ই তো পাবলোর সাথে দেখা করতে বের হয় তারপরো কেনো ওকে ভয় পাইয়ে দিস😊
হিয়া:আমি জানি না কি হবে আমি এখনো এটায় পুরোপুরি মত দিতে পারি নি…মিনাক্ষী ম্যাম কি হবে তখন….আচ্ছা যাগ গে কি রান্না করছো আজ…
বাসবি:কি খেতে চাস বল।রাজাও তো আজ বাড়িতে আছে।কি খাবি রাজা?
উজান:ওকে বলো যেটা ওহ খেতে চায়😒
হিয়া:বলছি কি একটু বিরিয়ানি করো না আজ খুব খেতে ইচ্ছে করছে😊
উজান:এই শরীর নিয়ে বিরিয়ানি😡
হিয়া:এটাই লাস্ট আর কখনো খেতে চাবো না।
উজান:না😡
বাসবি:একদিন ই তো খেতে চাচ্ছে মেয়ে টা।ওমন করিস কেনো।ঠিক আছে মা আজ তোর জন্য বিরিয়ানি ই রান্না করবো আমি…আর পাবলো যদি আসে না হয় মা আর জিনির জন্যেও পাঠিয়ে দিবো..
হিয়া:তুমি না খুব ভালো….
……..উজান বিরিয়ানি খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে রুমে গিয়ে এক্সারসাইজ করতে শুরু করে..হিয়া এসে…
হিয়া:(মনেমনে)ঢং কি দেখ পুচকু।একটু বিরিয়ানি খেয়েছে দেখে, এক্সারসাইজ করতে শুরু করছে।কে কে দেখবে শুনি এখন ওনাকে এতো বডি বানিয়ে কি হবে।আগে সিঙ্গেল ছিলো তখন ওসব করতো মানলাম।এখন কেনো করে।আমিই তো দেখবো নাকি।দুদিন পর মেয়ের বাবা হবে আর একে দেখো😒😒😏😏😡😡
উজান:কি হলো দাড়িয়ে কি ভাবছো(এক্সারসাইজ করতে করতে)
হিয়া:কিছু না…কখন নিয়ে বের হবে আমাকে😒
উজান:বের হবে না..
হিয়া:কেনো😡😡
উজান:বিছানায় যেই বই গুলো বের করে রাখছি ওগুলো গিয়ে চোখ দেও..আমি আসছি..
হিয়া:এটা কিন্তু কথা ছিলো না উজান😢
উজান:আগে দু ঘন্টা পড়ো তারপর রাতের দিকে নিয়ে যাবো যাও…..দাড়িয়ে দেখছো কি….
হিয়া:ভালো লাগে না আমার।বর না যেনো বর্বর😡😒😒
রাতে ১০টা…
উজান:কি হলো উঠো😒
হিয়া:কোথায় যাবো এতো রাতে😡😡
উজান:এমনি চলো আইসক্রিম খেয়ে নিয়ে আসি…
হিয়া:তুমি ছুটি কেনো নিলে হ্যা।টিউলিপে থাকলেই তো পারতে।ভালো লাগে না আমার😢
উজান:বেশি কথা সবসময়।উঠবা কি😡
হিয়া:ডিসগাস্টিং….
উজান:তোমার মুখে মানায় না😂😂
হিয়া:😡😡😡😡😡😡