ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_12

0
676

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_12

চোখের উপর সূর্যের তীর্যক রশ্মি পড়াতে ঘুমটা ভেঙে গেলো , বেলকনি দিয়ে সকালের মৃদু বাতাস হালকা আসছে , চোখ বন্ধ রাখতে ই ভ্রু জোড়া কুচকে গেলো , পিটপিট করে চোখ খুলে উঠে বসলাম , জ্বর টা এখন নেই বললেই চলে।

এক হাতে পেচিয়ে চুল গুলো খোপা করতে করতে আশপাশে তাকালাম , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর একটা বাটিতে তোয়ালে এখনো ভিজানো আছে , তার সাথে ই ঔষধের পাতা গুলো ছড়ানো , আর থার্মোমিটার রাখা।

আশেপাশে তাকিয়ে ইলুকে খোঁজা র চেষ্টা করলাম , ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে বেলকনিতে উঁকি দিলাম নাহ্ বেলকনিতে তো নাই ইলু , কিচেন রুম, ড্রয়িং , ডাইনিং রুমে কোথাও নেই ইলু তবে গেলো টা কোথায় , এত সকাল সকাল বাসায় চলে গেলো না কি , কখনো তো এমন করে না , এটলিস্ট বিদায় টা নিতে পারতো ,

এত বেখেয়ালি মেয়েটা , সারারাত জেগে জেগে সেবা করলো আর ভোর হবার আগেই উধাও , ব্যপার টা ভয়ানক না! যেই মেয়ে রাত এগারো টার জায়গায় বারো টা হলেই সেদিন সকালে আর ঘুম থেকে টেনেও তোলা যায় না আজ সে সারা রাত সেবা করার পরও সক্কাল সক্কাল উধাও , আসলেই খটকা জনক ,

আর কিছু না ভেবে ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসতে বসতে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম ,

সবে মাত্র সাতটা আরো বহুত সময় বাকি আছে ,

আমি আর কিছু চিন্তা না করেই মোবাইল খুজতে লাগলাম , কিছু তো বলতেই হবে এই ছন্ন ছাড়া মেয়েটাকে , বড্ড বেখেয়ালি নিজের প্রতি।

ফোন খুঁজে বের করে অন করতেই ফোন আসতে লাগলো, প্রায় ৬০ -৭০ টা মিসড কল এসে জমা হলো কল লিস্টে , আমার ফোন আবার অফ থাকলে ও অন করার সাথে সাথে ই সকল নোটিফিকেশন আসা শুরু করে , সে যায় হোক ,

কল লিস্টে ঢুকেই দেখি ইলুর প্রায় ৪০+ মিসড কল আর আননোন নাম্বার থেকে প্রায় ৩০+ মিসড কল , ভ্রু কুচকে কিছু ক্ষন ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ইলুর নাম্বারে কল করলাম ,

কয়েকবার রিং বাজার পর ই ইলু কল পিক করলো , আমি কিছু বলার আগেই শুরু হলো তার উনিশসো কটকটি সালের ভাষন ,

” ওই মহারানী ভিক্টোরিয়া , তুই কোন দেশের প্রেসিডেন্ট রে না কি প্রেসিন্টের বউ তুই ? ডোনাল্ড ট্রাম্প এর এক্স বউ না কি তুই আর না কোন সেলিব্রিটি ? তোরে কেডা রাইতের বেলা ফোন দিয়ে জালাইবো ? কোন দুঃখে তুই ফোন ডা অফ করে ঘুমাস? তোরে কত বার ফোন দিসি ফোন টা ও ধরার ইচ্ছে করে নাই তাই না , শা*লি বলদি , ওই দিকে ওনি মরার মতো পইরা পইরা ঘুমা আর এদিকে টেনশনে আমি ফুসফুস অ্যাটাক করি ”

ইলুর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম ,

” তুই না সকালে গেলি শুধু আমার বাসা থেকে! আবার এসব কথার মানে কি ? আর বাপের জন্মে ফুসফুস অ্যাটাক এর নাম শুনি নাই ”

আমার কথা শুনে ইলু অবাক হয়ে বলল ,

” ওই পূর্ণ কি কস তুই ? আমি কবে তোর বাসাত গেলাম , আমি তো আমার বাসায় ই ! মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খাইছোস না কি রে ? কি আবল তাবল কথা বলতাছোস ? আর ফুসফুস অ্যাটাক শুনোস নাই বলে কি থাকতে পারে না! ”

” আমি আবল তাবল কথা বলতাছি নাকি তুই ভাউ খাইতাছোস ? সারারাত আমার সেবা করলি এখন আবার নাটক করছিস ? ”

” হুয়াট ? আর ইউ ক্রেজি পূর্ণ ? আমি কখন গেলাম তোর বাসায় ? আর তোর কি ই বা হয়েছে ? যে সারারাত সজাগ থাকতে হবে কেন আমার ? ”

” ওমা কাল রাতে তো তুই ই আসলি বেলকনি দিয়ে, কড়া পারফিউম এর গন্ধ , এখনো আমার ঘরের মাঝে আছে ”

” রাতে তাও আমি আবার মানুষের বাসায় যাবো বেলকনি দিয়ে , আমাকে কি তোর কোন এঙ্গেল এ চুর টুর মনে হয় ? আর তুই তো জানিস পূর্ণ আমি পারফিউম দেই না , কড়া হবে দুর ”

” তার মানে তুই বলতে চাইছিস তুই কাল মাঝ রাতে আমার বাসায় আসিস নি ? ”

” আরে বাবা না রে , কেন কিছু কি হয়েছে ? “..

” না মানে তুই যদি কাল না ই এসে থাকিস তাহলে আসলো কে ? আমার মাথার কাছে বসে কপালে জলপট্টি দিয়ে দিলো আবার সুপ খাইয়ে দিলো , ঔষধ খাইয়ে দিলো, মাথায় হাত রেখে ঘুম ও পারিয়ে দিলো , তুই না হলে আসলো কে ?

” আচ্ছা তুই টেনশন করিস না৷, আমি তোর বাসায় আসবো নে বিকেলে অফিস শেষ করে ”

বলেই বিদায় জানিয়ে ফোন টা কেটে দিলো ,

আমি বিছানার উপর বসে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ যায় , বিছানার পাশের টেবিল টার উপর ,
পানির গ্লাসে র নিচে একটা চিরকুট টাইপ কিছু রাখা আছে ,

আমি ভ্রু কুচকে সেই চিরকুট টা হাতে নিলাম ,

সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছিলো ,

________________

….ভালোবাসি তোমায় যতটা ভালোবাসলে লোকে পাগল বলে

আমি তোমার সেই পাগল প্রেমিক…

নিজের যত্ন নিবে , ভালো ভাবে খাওয়া দাওয়া করবে, এখন সিজন চেঞ্জ হচ্ছে বাইরে বেশি ঘুরাঘুরি করবে না আর একটা কথা , কখনো যদি মেয়ে তোমার ফোন বন্ধ পেয়েছি তাহলে সেদিন দেখবে পাগলের পাগলামি কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি ? বি কেয়ার ফুল মাই গার্ল ,

আর হ্যা ,
শুভ সকাল রানী …

__________________

তালুকদার ভিলায় ,

দোতলার একদম শেষ মাথার একটা রুম , আবছা অন্ধকার হয়ে আছে রুম টা , পর্দা দিয়ে জানলা গুলো ঢেকে দেওয়া , পর্দার ফাক গলে কিছু টা অবাধ্য রশ্মি প্রবেশ করেছে রুমের মেঝেতে ,

বিছানায় উপুড় হয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন এক যুবক , গায়ের চাদর টা কোমড় পর্যন্ত মেলে দেওয়া , পড়নে শুধু মাত্র একটা টাউজার ,

পা টিপে টিপে রুমে প্রবেশ করলো কেউ , রুমে এসেই জানলা থেকে পর্দা সরাতেই কয়েকগুচ্ছ আলোর প্রতি ফলন ঘটলো রুমে র মধ্যে ,

সূর্যের আলো টা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলল তাহরিম , চোখ বন্ধ করে ই বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো ,

” তোর কি আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তানজিম ? সকাল সকাল আমার ঘুমের বারো টা বাজাতে চলে আসলি? এমনি তেই সারা রাত ঘুমোতে পারি নাই , এখন যা তো যা, ঘুমোতে দে !

বলেই আবার কাথা দিয়ে নাক মুখ ঢেকে সুয়ে পড়লো ,

ভাইয়ের কান্ড দেখে তানজিম গা দুলিয়ে হেসে উঠলো ,

তাহরিমের মাথার কাছে এসে বসলো , চাদর টা একটু ফাক করে মুখ বাড়িয়ে তাহরিম এর কানের কাছে গিয়ে বলল ,

” কেন রে ভাইয়া ? সারা রাত কি চুরি করছিলি ? ছে ছে ছেহ , শেষ মেষ কি না মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার চুরি করছে তাও কোথায় , নিজের হনে ওয়ালা গার্লফ্রেন্ড এর বাসায় , হায় খোদা এটা শোনার আগে আমার কিডনি অ্যাটাক কেন হলো না , ”

তানজিম এর কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই হাতের কাছে থাকা বালিশ দিয়ে তানজিম কে ঢিল ছুড়ে বলল ,

” তানজুর বাচ্চা , তুই কি যাবি না কি আমি উঠবো? কাল কেই তো মাত্র গলাটা ঠিক হয়েছে , অকালে যদি পার্মানেন্ট বোবা না হতে চাস এখনি বের হ রুম থেকে আর আমাকে ঘুমাতে দে ”

তাহরিমের থ্রেট শুনে তানজিম খানিকটা দমে গেলো ,

রুম ছেড়ে যেতে যেতে বলল ,

” হুম হুম এখন দিন তোমার ই, করে নাও অত্যাচার এই অবলা প্রানী টার উপর , তবে মনে রাইখো এই দিন , দিন না, আরো দিন আছে
মনে রাইখো , এক মাঘে শীত যায় না ,
রাতের বেলা চুরি করে বউরে দেখতে যায়তে পারে আর আমি বললেই দোষ , হুহ ভালো মানুষের এই দুনিয়ায় দাম নাই , লোকে ঠিক ই বলে ”

বলতে বলতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো , তানজিমের আজগুবি কথা শুনে তাহরিম চোখ বন্ধ করে ই ঠোঁট এলিয়ে হাসলো , পুনরায় ডুবে গেলো ঘুমের অতল গহীনে ,

চলবে …

[ আশা করি সবাই গঠন গত মন্তব্য করবেন

হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here