ভালোবাসিবো_খুব_যতনে #Ayrah_Rahman #part_31( অনুভূতি)

0
631

#ভালোবাসিবো_খুব_যতনে
#Ayrah_Rahman
#part_31( অনুভূতি)

_______________________________

” ভাব লইয়েন না বেহাই মশাই , আমি আপনার দশ টা না পাঁচ টা না একটা মাত্র বেহাইন সাহেবা , আপ্যায়ন করা আপনার কর্তব্য ”

রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে ইলমীর দিকে তাকালো ,

উজ্জ্বল ফর্সা গড়নের মাথায় ঢেউ খেলানো চুলের মেয়েটা কি জানে সে বয়সের তুলনায় জ্ঞান বুদ্ধি অনেকাংশেই কম!

উহুম সে তো অনেক কথায় জানে না!

, সে আরো জানে না তার ওই বোকা বোকা কথা , বোকা হাসি , তার ওই কাজল টানা চোখ, জোড়া ভ্রু আর কুচকানো কপালের ভাঁজ কোন ছাব্বিশে পদার্পন করা এক তাগড়া যুবকের ঘুম কেড়েছে ,

উহুম সেসব তো কিছু ই জানে না! তার এই বোকাপাখি!

” আপনি বললেন না তো আপনি কে? ”

পিছনে থেকে পূর্ণার কন্ঠ শুনতে পেয়ে রুদ্র পিছনে ঘুরে দাড়ালো ,

” আমি রুদ্র তালুকদার , তাহরিমের চাচাতো ভাই , আর ওর থেকে বয়সে বড় আই মিন তিন দিনের বড় আর বড় তো বড় ই হয় তাই না? ”

আমি আলতো হাসলাম ,

” ঠিক বলেছেন ভাইয়া , বড় তো বড়ই হয় আর মন্ত্রী সাহেব আমাকে আপনার কথা বলেছে ”

রুদ্র হাসলো , সে জানে তাহরিম তার কথা পূর্ণা কে বলেছে তাও সে ফর্মালিটি পুরন করার জন্যই শুধু নিজের পরিচয় টা আবার দিলো ,

” কাল তোমার সাথে দেখা করতে পারি নি কারণ তুমি ঘুমিয়ে ছিলে আর আমি জরুরি মিটিং এটেন্ড করার জন্য চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম তাই দেখা হয় নি! ”

আমি হেসে বললাম ,

” ইট’স ওকে ভাইয়া , মেইবি আপনার মা মানে বড় চাচী কাল এসেছিলো ”

রুদ্র সোফায় বসতে বসতে বলল ,

” পূর্ণা তোমার কিছু ভুল হচ্ছে , আমার মা বাবা বেঁচে নেই , উনারা আমি ছোট থাকতে ই তারার দে-শে চলে গেছেন , আর তোমার যেমন বড় চাচী আমার ও তেমন ই বড় চাচী , আমার বাবা ছিলেন সবার ছোট ”

আমি জিভে আলতো কামড় দিয়ে হাসলাম ,

” আসলে আমি সরি ভাইয়া , আমি জানতাম না বাবারা ৩ ভাই তাই বড় চাচী কে আপনার মা ভেবে নিয়েছি ”

” ইট’স ওকে পূর্ণা , মানুষের ভুল হতে ই পারে আর তুমি তো জানতে না , ইট’স ওকে ”

ইলু গালে হাত দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে , কেন জানি তার রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে , ওয়াহ্ ছেলেটার হাসি কত্ত কিউট, হাসি দিলে গালে কি সুন্দর টোল পড়ে আর চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায়!

” আচ্ছা ভাইয়া আপনি বসেন আমি আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি , এত ক্ষনে মনে হয় চা হয়ে গেছে ”

রুদ্র কিছু বলল না যাস্ট হেসে সম্মতি দিলো ,

পূর্ণা চলে যেতেই রুদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে ইলুর দিকে তাকালো , কিন্তু ওর দিকে তাকাতেই রুদ্র ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় কারণ মেয়েটা গালে হাত দিয়ে ডেব ডেব করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে , চোখের পলক ও ফেলছে না , তার মনে হচ্ছে চোখের পলক ফেললেই কিছু একটা মিস হয়ে যাবে !

” এই যে মিস ভাঙা টেপ রেকর্ডার , কি দেখছেন ওমন ডেবডেব করে তাকিয়ে ”

রুদ্রের প্রশ্ন শুনে ইলু আনমনে ই বলে উঠলো ,

” আপনি এমন ধবল রুগীর মতো ফর্সা কেন? পুরা ধবল রুগীদের মতো লাগছে ”

” হুয়াট! আমি ধবল রুগী? ”

ইলমী গাল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসলো , গলা টা পরিষ্কার করে বলল ,

” তা নয় তো কি! নিজেকে কখনো আয়নার দেখেছেন , এত ফর্সা কি ছেলে মানুষ থাকে? একেবারে ইংরেজদের বংশধর , মনে হচ্ছে ওরা এদেশ ত্যাগ করার সময় ভুলে আপনাকে ফেলে রেখে চলে গেছে বাট কথা সেইটা না , আমি তো ভাবছি আরেকটা কথা! ”

রুদ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো ,

” কি ভাবছো শুনি! ”

” ভাবছি , ধরেন আপনি ও ফর্সা আর আপনার বউ ও ফর্সা হলো , তাহলে আপনার বাচ্চাকাচ্চা তো সবগুলো ধবল রুগী প্রো মেক্স ”

রুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলল , এই পাগলের মুখ থেকে এর থেকে ভালো কিছু আশা করা ই বেকার ,

” এত ফালতু কথা তোমার মুখ থেকে কিভাবে বের হয় আমাকে একটু বোঝাবা? ”

” আমি ও সেটাই ভাবছি , আমার এত গুরুত্বপূর্ন কথা গুলো কে সবাই এমন আজাইরা কথা মনে করে কেন? ”
” ভাইয়া ওর কথা ধরবেন না , ও কিছু দিন হলো পাবনা মানসিক হসপিটাল থেকে পালিয়ে এসেছে , বুঝলাম না , এত কড়া গার্ড থাকা সত্তেও ও পালিয়ে এসেছে কিভাবে! ”

আমি কথা গুলো বলতে বলতেই ট্রে টা টেবিলের উপর রাখলাম , সেখান থেকে একটা কাপ রুদ্রের দিকে এগিয়ে দিলাম , রুদ্র সেই কাপ টা নিতে নিতে এক পলক ইলমীর দিকে তাকালো ,

” হুমম কথা টা সত্যি ই বলেছো বিশ্বাস যোগ্য! ”

” ওই পূর্ণর বাচ্চা পূর্ণ , তুই কি আমার বান্ধবী না কি ওই বেহাইয়ের? হে? ”

” ফাস্ট অফ অল আমার কেন বাচ্চা নাই, সেকেন্ড আমি তোর বান্ধবী প্লাস রুদ্র ভাইয়ের বোন , সো আমি দুই দিকে ই আছি ”

বলেই হাসলাম ,

এভাবে অনেক ক্ষন গল্প করার পর কোন একটা জরুরি কাজে রুদ্র ভাই চলে গেলো এদিকে আবার অফিস টাইম হয়ে গেছে , যদিও বেশ কিছু দিনের ছুটি নিয়েছি তবুও একটা কাজ করতে ইমারজেন্সি যেতে হবে ,

” তুই কি এখন অফিস যাবি ইলু? ”

” হুম যাবো ”

” কাল রাতে তোর বাসায় থাকবো ”

আমার কথা শুনে ইলু বিছানা থেকে উঠতে নিয়েও থেমে গেলো , ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালো ,

” আমার সাথে ? ”

” হুম ”

” কিন্তু কেন? ”

” কারণ তো অবশ্যই আছে , যা হোক তুই তোর ফ্যামিলি তে বলবি তুই আমার সাথে আমার বাসায় থাকবি ”

” মানেহ? ”

” মানে আমরা কাল কেউই কারো বাসায় থাকব না , কাল রাতে একটা জায়গায় যাবো আর তুই রেডি হয়ে থাকিস আমি বাইক নিয়ে আসব ”

” কোথায় যাবো সেটা তো বল! ”

” উহুম সেটা পরে যখন যাবো তখন দেখিস এখন চল ”
আমি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে দেখলাম মা কোথায় , রান্না ঘরে উঁকি দিতেই নজরে এলো কালো শাড়ি পড়া এক মাঝ বয়সী মহিলা কোমড়ে আঁচল গোঁজে রান্না করছে মাঝে মাঝে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছছে ,

আমি পিছনে থেকে গিয়ে কিছু ক্ষন তাকিয়ে থেকে বললাম ,

” মা ”

উনি পিছনে ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা অমায়িক হাসি দিলেন,

হাতে ব্যাগ দেখে বললেন,

” কোথাও যাচ্ছো বাচ্চা? ”

” জি মা , একটু অফিস যাবো ঘন্টা দুয়েক এর মধ্যে ই চলে আসবো ”

” ঠিক আছে কোন ব্যাপার না , যাও তুমি , আর সাবধানে যাবে , রাস্তা পারাপারের সময় ডানে বায়ে ভালো ভাবে দেখে নিবে আর রাস্তায় থাকা কোন খোলা খাবার খেও না , ফুড পয়জন এর সমস্যা হবে , বুঝলে? ”

আমি পিছনে থেকে জরিয়ে ধরে বললাম ,

” জি মা মনে থাকবে ”

উনি পিছনে এক হাত দিয়ে আমার গাল স্পর্শ করে বললেন ,

” হুম সাবধানে কিন্তু ! ”

আমি বেরিয়ে আসতে আসতে বললাম,

” জি মা , আল্লাহ হাফেজ ”

ইলু এতক্ষণ রান্না ঘর এর দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে সব কিছু দেখলো ,

বাইরে বের হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল ,

” কি যাদু করেছো বলো না ”

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

” এটা তো একটা গানের লাইন ”

” হুম বাট আমার মনে হয় তুই মেইবি যাদু ই জানিস , না হলে এমন রুক্ষ মহিলা ও তোর সামনে গলে যায় না কি ”

” তুই যতটা গম্ভীর মনে করছিস উনি ততটা গম্ভীর নয় বেশ ফ্রেন্ডলী ”

আরো বিভিন্ন কথা বলতে বলতে অফিসে ঢুকলাম ,

কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই মেজাজ খারাপ করে ফেলল কারন ভেতরে ঢুকা মাত্র ই ওই ছেঁচড়া মৃদুলের মুখোমুখি ,

” হেইই পূর্ণা কেমন আছো? গত কয়েক দিন যাবত আসো না কেন? বাট আজ হঠাৎ শাড়ি পড়লে যে , ইউ লুক সোওও কিউট ”

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগেই পিছনে থেকে ইলু দাঁত কেলিয়ে বলে উঠলো ,

” কিউট তো হবেই , মন্ত্রীর বউ বলে কথা ”

ইলুর কথা শুনে মৃদুল চকিত নজরে ইলুর দিকে তাকালো ,

” মন্ত্রীর বউ মানে? পূর্ণা বিবাহিত ? ”

ইলু মুখ টিপে হেসে বলল,

” এমা মৃদুল তুমি জানো না ? পুরো বাংলাদেশ জানে মন্ত্রী তাহরিম তালুকদার এর বউ পূর্ণা আর তুমি ই জানে না! তাও একজন সাংবাদিক হয়ে? ”

মৃদুল মুখ টা ছোট করে বলল ,

” আসলে আমি কিছু দিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম আর ওখানে নেট পাওয়া যায় না তাই সোস্যাল মিডিয়ার সাথে কিছু দিন বিচ্ছিন্ন ছিলাম ”

বলেই মৃদুল গিয়ে নিজের ডেস্কে বসলো , ইলু মুখ টিপে হেসে আমার বাহু জরিয়ে ধরে আমার ডেস্কে নিয়ে এলো, যেহেতু আমার ডেস্ক আলাদা আর একটা রুমে সেহেতু ইলু সেটার ভিতর ঢুকে দরজা অফ করে পেট চেপে হাসতে লাগলো , আমি ভ্রু বাকিয়ে এক পলক ওকে দেখে ডেস্কে গিয়ে বসে ব্যাগ টা রাখলাম , যে কাজ গুলো আছে সেগুলো ঘন্টা খানেক এর মধ্যে শেষ করতে হবে আজ আবার বাড়ি তে অনুষ্ঠান ,

” ইলু নিজের কাজে যা আর আমাকে আমার কাজ করতে দে , ডিস্টার্ব করবি না ”

” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি , ভাগিয়ে দিচ্ছিস কেন? ”

আমি কোন কথা না বলে লেপটপ অন করে কাজ করতে লাগলাম , কাজ শেষ করতে করতে প্রায় দেড় ঘন্টা সময় লাগলো ,

বাসায় গিয়ে রেডি হতে হবে , তাই সব অফ করে ইলুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ,

” তুই না বলছিলি আজ ট্রিট দিবি তাহলে আমার ট্রিট কই? ”

” দোস্ত রাগ করিস না কাল সিউর তোকে ট্রিট দিবো, পাক্কা প্রমিস, আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে ”

” ঠিক আছে ঠিক আছে এত ভাউ খেতে হবে না যা কাল ই দিস ”

আমি বাসায় এসে ইলু কে নিচে বসিয়ে আমি উপরে গেলাম রেডি হতে ,

আমি কিছু চিন্তা করছি আর এগুচ্ছি , দরজা থাক্কা দিবো হঠাৎ দরজা খুলে গেলো, ভেতরে ঢুকতেই কেউ পিছনে থেকে দরজা টা লাগিয়ে দিলো ,

দরজা লাগানোর আওয়াজ শুনে আমি ঘুরে পিছনে তাকালাম ,

” কি সমস্যা দরজা লাগালেন কেন? ”

তাহরিম বাঁকা হেসে আমার দিকে এগুতে এগুতে নেশাক্ত কন্ঠে বলল ,

” সকালের পাওনা আদায় করতে ”

আমি চমকে উঠলাম ধীরে ধীরে পিছুতে পিছুতে আমতাআমতা করে বললাম ,

” কি আজগুবি কথা বার্তা বলছেন? কিসের পাওনা , যান তো , মাথায় ভুতে ভর করেছে ”

আমি পিছুতে পিছুতে দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম , পিছনে যাওয়ার তো জায়গা নেই ,

উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে এক হাত আমার কাঁধ ঘেঁষে দেয়ালে ঠেকালেন ,

কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন ,

” পালাচ্ছো কোথায় ? আর পালিয়ে যাবে কোথায় ? পুরো পৃথিবীতো গোল ঘুরে ফিরে এই আমার এই জায়গায় ই ফিরে আসবে , বউজান ”

নিজের বুকের বা পাশে এক আঙুল ঠেকিয়ে ইশারা করে কথা গুলো বলে উঠলেন ,

আমি চকিত নজরে উনার দিকে তাকালাম , কোথাও গিয়ে মনে হচ্ছে উনি হয়তো আমাকে ভালোবাসেন কিন্তু মুখে কখনো বলেন নি , আর মাঝে মাঝে মনে হয় উকি আমাকে কেন ই বা ভালোবাসবেন, এটা আমার মনের খেয়াল বয় আর কিছু ই না !

আমি উনার চোখে চোখ রেখে বললাম ,

” আমাদের বিয়েটাতো একটা এক্সিডেন্ট মাত্র , তাতে আপনার তো মত ছিলো না , তাহলে কেন বারবার আমার কাছে আসেন , এভাবে আমার অনুভূতি গুলো নাড়িয়ে দেন , কেন আসেন আপনি আমার কাছে ? ”

উনি হাসলেন , এগিয়ে আসলেন আমার আরো কাছে , দুজনের মাঝে তখন মাত্র এক ইঞ্চি দুরত্ব কি না সন্দেহ , উনি আমার হাত ধরে নিজের বুকের বা পাশে রাখলেন, আমি কেঁপে উঠলাম , অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি তার চোখে ,

আমার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন ,

” প্রশ্ন টা আবার করো বউজান ”

আমি কাপা কাপা কন্ঠে বললাম ,

“কেন আপনি বারবার আমার কাছে আসেন?? ”

উনি আমার কানের পাশে ঠোঁট নাড়িয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন ,

” অসীম মুগ্ধতাই ! ”

আমি থমকালাম , শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এলো শীতল স্রোত , এই ছোট্ট কথায় কি এমন ছিলো যেন মনে হচ্ছে শরীরের সকল শক্তি হ্রাস পাচ্ছে , এ কেমন অনুভুতি ? …

চলবে….

[ কিরাম হইছে বাচ্চারা ? একটু ও সুন্দর আর গঠন গত মন্তব্য তো আশা করাই যাই তাই না? “]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here