মন_কেমনের_বৃষ্টি #পর্ব_১৭

0
390

#মন_কেমনের_বৃষ্টি
#পর্ব_১৭
#পুষ্পিতা_প্রিমা

বাইক থেকে ইশা নেমে দাঁড়াল। গেইটের ভেতর ডুকে পড়ার আগেই ফিরে দাঁড়াল রিপের দিকে। রিপের এলোমেলো চুল, এলোমেলো চাহনি দেখে সে বলল,
‘ যখন বিয়ে করবে তখন তোমার বউ তোমাকে আর ও জাপটে ধরবে। তখন বলিও এই তুমি আমাকে ওভাবে ছুঁবেনা। এভাবে ছুঁবেনা। আমি বাইক চালাতে মনোযোগ দিতে পারছিনা। এটা। ওটা। বোন ছুঁয়েছে বলে তোমার যত কাহিনী।
মেয়েটি তো বকবক করতে ব্যস্ত। কিন্তু সে কি জানে তার ভেজা মুখের ফোলা চোখে তাকে দেখতে ভারী স্নিগ্ধ লাগছে। আজ একদম অন্যরকম লাগছে। ছেলেটির কাছে তাকে অপূর্ব সুন্দর মনে হচ্ছে। কোনো উত্তর না পেয়ে ইশা নাক ফুলায়। কোমরে হাত দিয়ে বলে,

‘ এভাবে কি দেখছ? বিদেশে এতগুলো বছর কি করেছ? একটা গার্লফ্রেন্ড ও যোগাড় করতে পারোনি। কেমন ছেলে তুমি? এত সুন্দর একটা ছেলে হয়ে যদি কোনো মেয়ে পটাতে না পারো তাহলে তুমি সুন্দর হয়ে ও ব্যর্থ। ফেল্টুস।
রিপ আওয়াজ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বলে,
‘ এই যে তুই আমাকে সুন্দর বলছিস এতেই আমি ধন্য। আর কারো কাছে সুন্দর হওয়া লাগবে না।
ইশা ভেংচি কাটে। মুখটা বিকৃত করে রিপকে দেখিয়ে চলে যায়।
রিপ হাসতে থাকে বাইকে বসে।
এই মেয়েটা কি এখনো সেই ছোট্ট ইশা আছে। সময়ের সাথে সাথে সব বদলেছে। কিশোরী ইশা আজ যুবতী। কিন্তু তার ধ্যানধারণাগুলো কেন পাল্টায়নি? সে কেন একটিবার রিপুদার চাওয়াপাওয়াগুলো বুঝে উঠতে পারছেনা। কেন এই সুন্দর ছেলেটির প্রেমে পড়তে পারছেনা। তার এই বয়সটা তো প্রেমে পড়ার। নাকি এই প্রেম বিষয়ক ব্যাপারগুলো ইশা বুঝতে চায়না। আজ রিপের নিজের উপর খুব রাগ হয় । খুব রাগ হয় কেন সে ইশুর ভাই হতে গেল? এই রিপুদা ডাকটিকে সে ঘৃণা করে। সে তো অন্যকিছু হতে পারত। অপরিচিত কেউ হতে পারত। ইশুর সাথে তার আচমকা এক মন কেমন করা বৃষ্টির দিনে দেখা হতে পারত। ধীরে ধীরে মন কেমনের অনুভূতি নিয়ে দুচোখ মেলে তাকিয়ে থাকতে পারত। মন কেমন করা চাহনি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে পারত রিপ ইশাকে কতভাবে চায়। ইশা কি তখন লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে হাসত না? কোমরে হাত দিয়ে এটা তো বলত না যে রিপুদা এভাবে কেন দেখছ?
হঠাৎ করে মন কেমনের বৃষ্টিতে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে সে কি ছাতা এগিয়ে দিতে পারত না? ছাতা দেওয়া নেওয়ার ফাঁকে না হয় দেওয়া নেওয়া হতো মনপ্রাণ। এমন একটা সুযোগ কেন এলোনা রিপের? রিপুদা না হয়ে শুধু রিপ হলে খুব একটা ক্ষতি হতোনা। ইশা নামের মেয়েটির শয়নেস্বপনে একটিবার ও কি রিপ নামের ছেলেটি আসেনা? একটিবার মেয়েটি কেন ভাবতে চায়না, বুঝতে চায়না। তার চোখের অপূর্ব সুন্দর ছেলেটি তাকে খুব করে চায়। তাকে খুব খুব বেশি ভালোবাসে। তার সমস্ত সৌন্দর্য শুধু ইশা নামের মেয়েটির জন্য। মেয়েটি আর কিভাবে বললে বুঝবে? কতভাবে বুঝালে বুঝবে? কখন বুঝবে?

____________________________

গা কাঁপিয়ে আদির জ্বর এল। খাবার টেবিলে বসে হাত নাড়াতে পারল না। রেস্টুরেন্ট থেকে আসা খাবার রাইনা গরম করে টেবিলে এনে রাখল। বলল, আদি এগুলো দিই।
আদি চুপচাপ এক লোকমা ভাত মুখে দিয়ে চুপচাপ বসে রইল। এসব খাবার খেতে তার মোটেও ভালো লাগছেনা। জ্বর আসার কারণে মেজাজ বিক্ষিপ্ত। বিরক্তি নিয়ে বলল,

‘ বাড়িতে রান্না হলে কি হয়? রোজ রোজ এসব আর ভালো লাগছেনা। রেহানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রেস্টুরেন্টের খাবার। রাইনা ভয়ে ভয়ে বলল,

‘ বাড়িতে রান্না হয়। কিন্তু মা তো বলল তোকে এসব খাবার না দিতে। তুই নাকি বাসার খাবার খেতে পছন্দ করিস না।

আদি রাগে গ্লাস আওয়াজ করে রেখে বলল,

‘ আমি শুধু বলেছি মিষ্টি জিনিস খাবনা আমি। আই হেইট সুইটস। বাকিগুলো খাব। মা কোথায়?

আলিয়া নেমে এল। আদির কপালে হাত লাগাল। বলল,
‘ জ্বর তো আর ও বেড়েছে আদি। খেয়ে তাড়াতাড়ি মেডিসিন নাও।
আদি প্লেট ঠেলে দিল। বলল, আমি এসব বাইরের খাবার আর খাব না। এমনকি এ বাড়ির কেউ খাবেনা। তুমি ও খাবেনা মা। বাবা ও খাবেনা।
আলিয়া আদির সাথে তাল মিলায়। বলে,
‘ আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি যা বলবে তাই হবে। এখন খেয়ে নাও।
আদি প্লেট ঠেলে দিল আবার। বলল,
‘ খেতে ইচ্ছে করছেনা।
আলিয়া ভেবে বলল,
‘ আমি খাইয়ে দেই?
আদি মাথা নাড়াল। রাইনা আর মিনু দূরে দাঁড়িয়ে আদির বাচ্চামো দেখতে লাগল। কিছুবছর আগে ও এই বাচ্চার মতো আদিটাকে সামলাতো একটি ছোট্ট মেয়ে ইশা। যার শাড়ির আচঁলে হাত পেঁচিয়ে রাখত আদি। যাতে মিষ্টি কোথাও না পালায়। মিষ্টির হাতের পায়েস খেতে অভ্যস্ত আদি আজ মিষ্টি খাবার ঘৃণা করে। মিষ্টি মিষ্টি করে পুরো ঘর মাথায় করে রাখা আদির দিনে একটিবার ও সেই নামটি ভুলে ও উচ্চারণ করেনা। মিষ্টি খাইয়ে দেওয়া ছাড়া আদি খেতনা। কিন্তু আজকের সেই আদি পুরোটা বিপরীত। সত্যি এ কখনোই মিষ্টির ডক্টর নয়। কখনো হতেই পারেনা।

জ্বরের ঘোরে আদির মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। আলিয়া ধরে বলল, শরীর বেশি খারাপ লাগছে আদি?
মেডিসিন নাও তাড়াতাড়ি।
আদি হেসে বলল,
‘ ডক্টরদের মেডিসিন নিতে হয়না। ডক্টররা কখনো অসুস্থ হয়না। হলে ও তা দেখাতে নেই।
আলিয়া চুপ থাকলেন। আদি সোজা উপরে চলে যায়। অল্পসময়েই ঘুমিয়ে পড়ে। ফোন বাজে তার অবিরত। ধরতে পারেনা সে। ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
ঘড়ির কাটার টুংটাং আওয়াজ তার কানে বেজে উঠে। তখন আলতোকরে সে পাশ ফিরে শোয়। ঘুম ঘুম চোখে ফোন হাতে নিতেই দেখতে পায় অনেকগুলো ফোনকল আর মেসেজ। সে হাসে। মেয়েটিকে চিন্তায় রেখে সে ঘুমোচ্ছে?
মাঝরাতে সে মেয়েটিকে ফোন দিয়ে আর ডিস্টার্ব করতে চাইল না। তার ঘুম ও পেল না আর।
বারান্দা চলে এল সে। চেয়ার পেতে বসল। মাথা এলিয়ে রাখল চেয়ারে। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে চোখ রাখল বহুদূরে। আবছা আবছা চাঁদের আলোয় বকুল তলা দেখা যাচ্ছে। ঠান্ডা ঠান্ডা হিম বাতাস বইছে বৃষ্টি হওয়ার কারণে। মনপ্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে সেই ঠান্ডা বাতাস।
বকুল ফুলগুলো চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে। সেই বকুল ফুলগুলোর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে আঁকাবাঁকা হাতের কিছুর লেখা।

‘ মন কেমনের রাতে যদি কখনো মনে পড়ে যায় মিষ্টিকে। তাহলে ভেবে নিবেন আপনি মিষ্টিকে ভালোবাসেন। যদি মনে পড়ে যায় মন কেমনের সন্ধ্যায় তাহলে ভেবে নিবেন আপনি ভালোবাসেন মিষ্টিকে। পৃথিবী এপার ওপার হোক। সব ভেসে যাক। সবাই যা বলার বলুক। মিষ্টিকে কখনো অবিশ্বাস করবেন না ডক্টর। মিষ্টি আপনার ছিল থাকবে। আপনি জানেন আপনি ও মিষ্টিকে ভালোবেসেছেন। এতটা ভালোবেসেছেন যে মিষ্টিকে ছাড়া আপনি কিছুই ভাবতে পারতেন না । মিষ্টির একটু রাগ,অভিমান আপনাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিত। আপনি জানেন আপনার গলার পাশের দাগটা কিসের? এটা মিষ্টির পক্ষ থেকে রেখে যাওয়া স্মৃতি। দেখেছেন আপনি? দাগটি মুছে যায়নি তো?

আদির হাসি পায়। এই মিষ্টি মেয়েটির সাথে তার কি অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল? নাহলে এই দাগটি?
এতসব প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবে সে? কে দেবে তাকে? মিষ্টি যদিই তার ডক্টরকে এতটা ভালোবাসে তাহলে এত দূরে থাকে কেন? আচ্ছা ভালোবাসাটাই বা কি? সে কি কাউকে ভালোবাসে? ইমিই কি তার ভালোবাসা? ইমিই তো হবে। তারপর ও কোথাও একটা কিন্তু কেন থেকে যাচ্ছে? ইমির প্রতি সে মুগ্ধ হয়ে তাকাতে পারেনা কেন? সে তো ইমিকে ভালোবাসে। ইমির চোখে কেন সে হারিয়ে যেতে পারেনা। ইমিকে তো সে ভালোবাসে।
কিন্তু পরক্ষণে তার মনে পড়ে আর ও একটি কথা।

‘ আপনি জানেন ডক্টর আপনি ও মিষ্টিকে ভালোবেসেছিলেন।

আদি অবাক হয়। সে মিষ্টিকে ভালোবেসেছে? দুজনকে কি একসাথে কখনো ভালোবাসা যায়? কে সত্যি? কে তার ভালোবাসা? আর কে ভালোলাগা?
রাত কাটে নির্ঘুম এভাবে চেয়ারে বসে। ওই আকাশের চাঁদ তার সাক্ষী।

__________________________

মিনি ঠোকর দেয় ইশার নাকের উপর। ইশা আওয়াজ করে বলে, মিনি ব্যাথা পাচ্ছি।
মিনি আবার ও ঠোকর দেয়। পরীকে কোলে নিয়ে রিপ বসা সোফায়। আড়চোখে দেখছে মিনি আর ইশার কান্ড। মিনি আবার ইশার গালে ঠোকর দিল। মিনমিন করে বলল, মিষ্টি খাব।
ইশা শুনল না। বলল, আর না মিনি। কিছুক্ষণ আগে খেয়েছ। বেশি খেলে পেট খারাপ করবে।
মিনি আবার ঠোকর দিল ইশার কানে। ইশা ব্যাথা পেল। রিপ পরীর সাথে খেলতে খেলতে বলল, ইশু তুই কি পাগল? রেখে দে মিনিকে।
ইশা হাসল। বলল, তুমি তোমার কাজ করো।
ইশা হাতে করে মিনিকে নিয়ে ছাদে চলে যায়।

মুনা এসে বসে পড়ে রিপের পাশে। বলে, দুই ভাইয়ের এত চেপে রাখার অভ্যাস কেন? মিনি ঠোকর দিচ্ছে সেটা সহ্য করতে পারছিস না,, অন্য কেউ ঠোকর দিয়ে দিলে কি করবি?
রিপ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মুনার দিকে। পরী ডাকল, রিইইইই,,,
রিপ পরীকে সোজা করে তার কোলে বসিয়ে বলল, বাজে কথা বলো কেন? কে ঠোকর দেবে? অত সাহস কার?
মুনা চোখ নামিয়ে হাসে। অনিচ্ছুক সেই হাসি। রিপ নড়েচড়ে বসে। বলে,
‘ আমার তার উপর বিশ্বাস আছে। আমার বিশ্বাসে সে কখনোই আঘাত করবেনা। ইশুর মতো করে আমি বোধহয় আর কাউকে চোখবন্ধ করে বিশ্বাস করতে পারব না। ওঁ আমার অনেকটা জুড়ে।
মিনা মুখ মোচড়াল। বলল, ছাড় অত ডং। সারাদিন আমাকে বলে বেড়াস। যাকে বলার তাকে বললে কি হয়? তোকে কি বলব তোর ভাই তো তার চাইতে আর ও বেশি। কোনোদিন আমাকে কিছুই বলেনি। কিন্তু আমি জানি তোর ভাই আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি তার চোখ পড়তে পারি। আমার খুব খারাপ সময়ে ও আমি তাকে আমার পাশে পেয়েছি। এর চাইতে বেশি কিছু আর চাইনা।
রিপ কথা কেড়ে নেয় মুনার মুখ থেকে। বলে,
‘ তোমাকে কিছু বলেনা তবু ও তুমি পড়তে পারো। ইশুর ও তো পারার কথা। সে পারেনা কেন?
মুনা হকচকিয়ে যায় রিপের অমন প্রশ্নে। বলে, আরেহ ধুরর, তুই শুধু ইশু ইশু করিস কেন? মেয়ে কি কম পড়েছে? তোর মত ছেলের জন্য কত মেয়ে পড়ে আছে। তুই পড়ে আছিস এই একটার জন্য। তার চাইতে বেস্টটাই ডিজার্ভ করিস তুই।
রিপ পরীকে তার কোলে বসায়। বলে, আমি তো কখনোই বেস্টটাই চাইনি। চাই ও না। আমার ওই একজনকে চাই। আমার কাছে ওই একজনই বেস্ট। ছিল। আছে। চিরকাল থাকবে। তুমি জানো আমি অন্যকারো কথা ভুলে ও ভাবতে পারিনা। ইশু কি করে পারবে? ইশু আমায় চাইনা এ কথাটাতে আমি বিশ্বাসী না। ইশু নিশ্চয় আমায় ভালোবাসে। হয়ত বলেনা। আমি বলিনা তাই।

মুনা চুপ হয়ে শোনে এক নিশ্চুপ প্রেমিকের অব্যক্ত অনুভূতি। আচ্ছা রিক ও কি তাকে এতটা বিশ্বাস করে? এতটা ভালোবাসে? এভাবে তো কখনো ভেবে দেখা হয়নি।
মুনা পরীর চুল সরিয়ে দেয় কপাল থেকে। রিপকে বলে,
‘ অত ভঙ্গিমা না করে বলে দে। নয়ত একদম বলবি না। অন্য কাউকে খুঁজে নে। নিজের কষ্ট বাড়াস না আর।
রিপ অবাক হয় সামান্য। বলে,
‘ কষ্ট কেন বাড়বে। সে তো আমার ছিল। আছে। থাকবে। অন্যকারো কথা দুজনের মাঝে কেন আসছে। আমি আসতেই দেব না কখনো। কখনোই না।
মুনা পরীর দিকে হাত বাড়ায়। অন্যকিছু বলেনা রিপকে। এই ছেলেটা যদি জানতে পারে তার ইশু আর তার নেই। তখন কি হবে? ছেলেটি কি জানে ইশু অন্যছেলের জন্য নির্ঘুম রাত কাটায়। ছেলেটি কি জানে ইশু অন্যকাউকে ভালোবাসে? ছেলেটি কি জানে ইশুর চোখের জল কারো নামে গড়ায়? ছেলেটি কি জানে ইশু কবেই অন্যের হয়ে গেছে। এত বড় অন্যায় যে হয়ে গেল তার সাথে, সে যখন জানবে তখন?

পরী ঝাপ দিল মুনার কোলে। মুনা তাকে কোলে নিল। পরী মুনার চুল নিয়ে খেলা করতে লাগল। টেনে টেনে চুলগুলো সামনে নিয়ে আসতে লাগল। তারপর খিলখিল করে হাসতে লাগল।
যখনি রিককে দেখল। লুটোপুটি দিয়ে মুনার গা বেয়ে নেমে পড়ল পরী। গুটিগুটি পায়ে ঢলতে ঢলতে গিয়ে দাঁড়ায় সোফার পেছনে। রিক তালহা বেগমের সাথে কথা বলে ফিরে তাকাতেই আর পরীকে দেখতে পেলনা। আশপাশ দেখল। মুনা রান্নাঘরে চলে গেল। রিপ কোনো এক চিন্তায় বিভোর। পরী সোফার পেছনে লুকিয়ে ডাক দিল,,, পাপপপপা,,,
রিক চমকাল। সোফার পেছনে দেখার চেষ্টা করল। পরীকে লুকোচুরি খেলতে দেখে সে ও সোফার সামনে গুটিসুটি মেরে বসে রইল। ডাক দিল,, পরী মা,,,,,
পরী খিলখিল করে হেসে দিল। দুহাত মুখ বরাবর দিয়ে বলল,নান নান না,,,,
রিক তার সামনে এসে বসল। পরীর মতো দুহাত মুখ বরাবর দিয়ে বলল, নান নান না।
পরী একবার মুখ থেকে হাত সরায়। যখন দেখল রিক সরাচ্ছে তখন আবার মুখ ঢেকে ফেলল দুহাত দিয়ে। এভাবে চলল বেশ কিছুক্ষণ। রিক সরালে পরী দুহাত দিয়ে ঢেকে ফেলে। পরী সরালে রিক ঢেকে ফেলে। পরী খিলখিল করে হাসতে থাকে। তারপর ছোট ছোট পা ফেলে দৌড়ে পুরো ড্রয়িংরুম। ডাকে, মিননননি,,,
রিক হাঁটে পরীর পিছু পিছু। পরী দৌড়াই। খিলখিল করে হেসে হেসে ডাকে, পাপপপা…….
রিক থেমে যায়। হাত বাড়িয়ে পরীকে ডাকে। পরী না,না,না,না বলে দৌড়াই। রিক হাসে। তালহা বেগম আর জহির মিয়া পরী আর রিকের কান্ড দেখে হেসে গড়াগড়ি খায়। চাপা স্বভাবের রিক পরীর জন্য বোধহয় হাসতে শিখেছে। ছেলের মুখে হাসি দেখে তালহা শান্তি পায়। পরীর সাথে দৌড়াই না রিক। কারণ তাকে যেতে দেখলে পরী জোরে দৌড়াচ্ছে। পড়ে যেতে পারে। পরী তা ও পিছু পিছু তাকিয়ে তাকিয়ে দৌড়াই। রিক হাত বাড়িয়ে ডাকে।
‘ পাপার কোলে আসো মা।
পরী মাথা নাড়ায়। সাথে সাথে চুলগুলো ও নড়ে। মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে পরী বলে, নান নান না।
রিক এগিয়ে যায় পরীর দিকে। পরী দৌড়াতে দৌড়াতে তালহা বেগমের পিছু গিয়ে দাঁড়ায়। তালহা বেগমের পা আঁকড়ে ধরে। রিক আবার ও এগিয়ে যায়। পরী দৌড়ে জহির মিয়ার পা আঁকড়ে ধরে। রিক মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে বলে,
‘ পরী মা পাপা টায়ার্ড। আর দৌড়াবে না।
পরী জহির মিয়ার পিছু থেকে গলা উঁচিয়ে দেখে রিককে। বলে, পাপপা দাদ্দা,,,,,,
সবাই একসাথে হেসে উঠে। রিক হাটুগেড়ে বসে থাকে। পরী রিকের বসে থাকা দেখে এক পা এক পা ফেলে রিকের দিকে এগিয়ে আসে। হাতের ছোট্ট মুঠি দিয়ে চুল সরায়। রিক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়। পরী চোখ পাকিয়ে তাকায় রিকের দিকে। ছোট্টছোট্ট পা ফেলে দৌড়ে যায়। রিকের গলা ধরে ঝুলে পড়ে। রিকের চোখের নিচে মুখে, নাকে লালা লাগিয়ে দেয়। নাকে ছোট্টছোট্ট কামর বসায়। চুলগুলো এলোমেলো করে দেয়। রিক হাসে। মেয়েকে একেবারে বুকের সাথে চেপে ধরে। ছোট্ট মুখটা আদর দিয়ে ভরিয়ে দেয়। কপালের চুলগুলো ছোট্টছোট্ট ক্লিপ দিয়ে আটকে দেয়। কপালে চুমু আঁকে। পরী তার ছোট্টছোট্ট ঠোঁটগুলো দিয়ে রিকের গালে আদর দিতে দিতে উচ্চারণ করে,পাপপপা,,পাপপপা।
দূরে দাঁড়িয়ে রিপ বাবা মেয়ের ভালোবাসার দৃশ্যগুলো ক্যামেরাবন্দী করে। এই দৃশ্যগুলো থেকে সুন্দর দৃশ্য আর হতেই পারেনা।

_________________________

মিনি উড়ে উড়ে বসে ইশার ঘাড়ে। ডাকে,মিষ্টি,,
ইশা মিনিকে তার হাতের তালুতে বসায়। বলে, মিনি ডক্টর কেমন আছে?
মিনি ডানা জাপটে ডাকে, ডকতর,ডকতর।
ইশা হাসে। বলে, ওহহ তুমি তো আদি নামেই চেনো। এবার বলো তোমার আদি কেমন আছে?
মিনি ডানা ঝাপটায়। বলে, আদি। আদি। মিস ইউ। মিস ইউ।
ইশা মিনিকে ধরে সোজা করে বসায়। বলে, এখানে তোমার আদি নেই মিনি।
মিনি ডাকে। আদি আদি। মিস ইউ। মিস ইউ।
ইশা চেয়ার পেতে বসে। ছাদের নতুন রেলিং ঘেষে বসে পড়ে চেয়ার পেতে। মিনি বসে রেলিংয়ের উপর। ডাকে,
‘ মিষ্টি। আদি।
ইশা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় মিনির দিকে। বলে,
‘ মিষ্টি নয় মিনি। ডাকবে ইমি।
মিনি ডানা ঝাপটায়। ডাকে, ইমি আদি। ইমি আদি।
ইশা হেসে উঠে আওয়াজ করে। বলে,
‘ মিনি তোমার আদির কাছে যাবে?
মিনি ডেকে উঠে। যাব। যাব।
ইশা হাসে। বলে, তোমাকে তোমার আদির কাছে পাঠিয়ে দেব আমি।
ইশা বলেই ফেলল। কিন্তু পরক্ষণে মনে হলো, পরী?
পরী তো মিনননিকে ছাড়া থাকতে পারবে না। তখন কি হবে?
তারমধ্যেই রিপের কোলে করে পরী চলে আসে। মিনিকে দেখে পরী গা বেয়ে নেমে পড়ে রিপের। ডাকে,মিনননি।
মিনি উড়ে যায় পরীর কাছে। পরীর কাঁধে বসতে পারেনা। হাতে ও বসতে পারেনা। পরী হাত বাড়িয়ে ডাকে মিনননি। হাত দিয়ে কাঁধ দেখিয়ে দেয়। যার অর্থ কাঁধে বসো। মিনি বসেনা। পরী ঠোঁট ফুলিয়ে হাত দেখিয়ে দেয়। মিনি তা ও বসেনা। যখন পরী কেঁদে দেবে। তখনি মিনি এসে বসে হাতের তালুর উপর। পরী তার ছোট্ট হাতে এত ভার সইতে পারেনা। পড়ে যায় মিনি। পরী হাত ঝাড়তে ঝাড়তে ডাকে, রিইইইইই।
রিপ আর ইশা দুজনই একসাথে হেসে উঠে। বলে, ব্যাথা পেয়েছে মা?
পরী হাত ঝাড়ে । ঝাড়তে ঝাড়তে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, উফফফ।
পড়ে যাওয়ায় মিনি ব্যাথা পায়। পরীর সাথে রাগ করে। রেগে পরীর গালে ঠোকর দিয়ে উড়ে গিয়ে রেলিংয়ে বসে ডাকে, পরী ব্যাড গার্ল। ব্যাড গার্ল।
পরী ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়। রেগে জোরে আওয়াজ করে ডাকে, রিইইইইইই। রিপ হাটুগেঁড়ে বসে বলে, কি?
পরী গাল দেখিয়ে দেয়। বলে, উফফফ।
ইশা দৌড়ে যায়। ওড়না দিয়ে পরীর মুখ মুছে দেয়। আদর করে দেয়। পরী ভেজা গাল দেখিয়ে দিয়ে বলে,
শাআআআআআ,, দুঃক্কু, উফফ।
ইশা হেসে ফুলানো ঠোঁট দুটো চেপে দেয় হাত দিয়ে। বলে, উফফফ।
রিপ হাসে। বলে, ইশু তুই ও ছোট বেলায় এমন ছিলি।

______________________________

কলেজ গেইট পেরিয়ে বের হয়ে আসল তিন বান্ধবী। ইশা পানির বোতল বের করে গলা ভেজাল। বলল,বাড়ি ফিরতে হবে দোস্ত।
অর্পি জেদ করে বলল, রোজ রোজ এত অজুহাত না দেখাতে বারণ করেছি ইশা। আজকের দিনটা ছেড়ে দে না।
ইশা ক্লান্ত হয়ে বলল,
‘ এসব ফুচকা টুচকা আমার ভালো লাগেনা অর্পি। এই নীরু কিছু বল না।
নীরা হাসে। বলে,
‘ আমি নাই বাপু। আমাকে কিছু বলিস না।
অর্পি লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটে। বলে, ঠিক আছে। চলে যাহ তোরা। আমি একাই খাব।
ইশা দৌড়ে যায়। বলে, এই অর্পি রাগিস কেন? যাব।
অর্পি হাসে। দেখায় না। বলে,
‘ কে যেতে বলেছে। আমি বলছিনা কিন্তু।
ইশা আর নীরা একসাথে হাসে। বলে, কেউ বলেনি আমরা এমনি এমনি যাচ্ছি।
তিনজনই হঠাৎ একসাথে হেসে উঠে। ফুচকার দোকানে চলে যায় তিনজন। অর্পি দোকানদারকে বলে,
‘ মামা বেশি ঝাল বেশি টক কিন্তু।
ইশা চমকে উঠে। বলে, এই আমি বেশি ঝাল খেতে পারিনা। কম দিতে বল। নাহলে আমি খাব না।
অর্পি হাসে। বলে, ঝাল খেলে ভালো। ঝাল না খেলে ভোঁতা থেকে যাবি আজীবন।
নীরা মাথা চুলকিয়ে বলে,
‘ এটা কেমন লজিকরে দোস্ত?
অর্পি হেসে বলে, এমনটা আমার ঠাম্মা বলে। ঝাল খেলে নাকি ভোঁতা মুখ ধারালো হয়।
অর্পির কথায় হো হো করে হেসে উঠে নীরা আর ইশা।
প্লেট হাতে নিয়ে ভয়ে ভয়ে মুখে দেয় ইশা। না তেমন ঝাল নেয়। অর্পি বলে, কি রে ঝাল কেমন?
ইশা মাথা নেড়ে বলে, ‘ ঠিক আছে।
নীরা বলল, আমি ঝাল খেতে পারি। এর চাইতে ও বেশি হলে ও খেতে পারব।
প্রথমেই কোনো প্রতিক্রিয়া বুঝা গেলনা। খেতে খেতে ইশা থেমে গেল। গালে দেওয়া ফুচকা আর গিলতে পারল না। চিবোতে পারল না। মাথার রগ যেন দপদপানি শুরু করে দিল। সে চেপে রাখল। কাউকে বুঝতেই দিলনা তার ঝাল লাগছে। এতটা সহ্যশক্তি তার। চোখদুটো ও যেন তার জ্বলছে জ্বলজ্বল করে। সাথে বুকটা ও। কানটা ও। সে পাশে থাকা বেঞ্চে বসে পড়ে আস্তে করে। এদিকওদিক তাকিয়ে ঝাল নিবারণেরর চেষ্টায় রত।

ফোন কানের নিচে। ছেলেটি বিরক্ত হয়ে ফোনের ওপাশের মেয়েটিকে বলে,
‘ আইমি এসব ফুটপাতের খাবার তোমার পছন্দ?
ফোনের ওপাশের মেয়েটি হেসে বলে,
‘ ফুটপাতের কেন বলছ। আমি শুধু সেই দোকানের ফুচকা খাই। অন্যদোকানের গুলো খাইনা। কেন খাই সেটা নিশ্চয় বুঝেছ?
আদি ফোন কানে রেখে বলে,
‘ মামা ফুচকা এই বক্সে দেবেন। ঝাল কম দেবেন।
আইমি ওপাশ থেকে বলে,
‘ না আদি বেশি ঝাল। বেশি টক। প্লিজ প্লিজ।
আদি বারণ করে।
‘ না ইমি। তুমি অত ঝাল সইতে পারবেনা। জেদ করোনা।
আইমি কন্ঠস্বর নরম করে বলে, আচ্ছা।
আদি হেসে দেয়। বলে,
‘ এই ইমি রাগ করেছ?
আইমি বলে,
‘ না। না। রাগ করিনি।
আদি হাসে। বলে, আচ্ছা আপনি যেটা বলবেন সেটাই হবে। বেশি বেশি ঝাল হবে।
আইমি হেসে দেয়। বলে, মেনি মেনি থ্যাংকস আদি।
আদি মাথা চুলকায়। বলে,
‘ ইমির কথা কি করে ইগনোর করতে পারে আদি? ইমি যা বলবে আদি তাই করবে। আদি তো ইমির জন্য।
নীরা অর্পির হাসির আওয়াজে কারণে আদি ফোন রেখে দেয়। পকেটে ফোন ডুকিয়ে রেখে বামপাশে তাকাতেই চোখ পড়ে একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটি পায়ের আঙুল দিয়ে মাটিতে আঁকিবুকি করছে। জুতোজোড়া খুলে ফেলেছে। মাথা নিচু করে চোখবন্ধ করছে আবার চোখ খুলছে। ফুচকার অর্ধেক খাওয়া প্লেটটি পাশে রাখা। আদি ভ্রুকুঁচকে তাকায় ইশার দিকে। মেয়েটি এমন করছে কেন?
নীরা অর্পি ছুটে গেল ইশার দিকে। ইশা মুখ তুলে তাকাল।
নীরা অর্পি ভড়কে গেল। অর্পি ভয় পেল। ঝাল কি বেশি হয়েছে। ইশার পুরো মুখ ঘেমে উঠল। সে ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে দাঁড়িয়ে পড়ল। নীরা অর্পিকে বলল, তোরা ধীরে সুস্থে আয় দোস্ত। আমাকে যেতে হবে। তোরা খেয়ে নে। অর্পি বোতল এগিয়ে দেয়। ইশা নেয় না। নীরা অবাক হয়ে বলে,
‘ দেখ চোখ দিয়ে কিভাবে পানি পড়ছে। পানি খা। একটু বোস। তারপর না হয়?
ইশা তাড়াতাড়ি পুরোমুখ মুছে নেয়। বলে,
‘ ওই ঝাল লাগলে একটুআধটু এমন হয়। চিন্তা করিস না। আমি আসি। তোরা সাবধানে যাস।
নীরা অর্পি হতভম্ব হয়ে তাকায় ইশার দিকে। এ মেয়েটা কি? পানিটা ও খেল না।
ইশা লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটল। কারো কথা শুনল না। পুরো মুখ আবার ঘেমে উঠল। কারো দৌড়ে আসার আওয়াজ শোনা গেল পেছনে।
টিস্যু এগিয়ে দিল আদি। বলল, মুখ মুছে নিন।
ইশা দাঁড়াল না। টিস্যুটা ও নিল না। শুধু লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটতে লাগল। আশেপাশে তাকিয়ে রিকশা খুঁজতে লাগল। রিকশা পেলনা। আদি গাড়িতে উঠে বসে পড়ল। ইশার সামনে গিয়ে বলে,
‘ উঠে বসুন।
ইশা দাঁড়ায়না তারপর ও। আদি অবাক হয়। এ মেয়েটি কি তার কথা শুনতে পাচ্ছেনা?
আদি গাড়ির হর্ন বাজায়। বলে, কি সমস্যা। উঠতে বলেছি!
ইশা জবাব দেয়না। হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই থেমে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে।
আদি তাকে কথা শোনায়। পানির বোতল এগিয়ে দেয়। বলে, পানি খেয়ে উঠে বসুন। এত রং তামাশা ভালো লাগেনা। বন্ধুর বোন তাই হেল্প করছি। এখন রিকশা পাওয়া টাফ। উঠুন।
ইশা কিছুটা দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। কালো গাড়ি থেকে মাথা বের করে তাকাল তার দিকে কেউ একজন। ভয়ে তার বুক কেঁপে উঠল। কানে বেজে উঠল একটি ডাক, আমমমমা……….
চোখে ভেসে উঠল, খিলখিল করে হাসা একটি মুখ।
তার চোয়াল শক্ত হয়ে এল। কালো গাড়িটির ভেতর বসা লোকটি তাকে সতর্ক বাণী দিল। আদির মাথায় রাগ চড়ে বসল। সে রেগে গর্জন করে উঠল। বলল,
‘ উঠবেন কি উঠবেন না? আপনার সাথে আমার কথা আছে। উঠুন।

ইশা রক্তিম চোখে তাকায় আদির দিকে। রোষানলে দগ্ধ হয়ে চেঁচিয়ে উঠে। বলে,
‘ কি চাই আপনার? এত নির্লজ্জ মানুষ আমি জীবনে দেখিনি। আপনাদের মতো মানুষকে আমি ঘৃণা করি। নির্লজ্জ কোথাকার। একা পেয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে ইচ্ছে করছে তাইনা। নেক্সট টাইম থেকে এভাবে পিছু নিলে খুব খারাপ হবে। পাবলিক ডেকে এনে মেরে রাস্তায় ফেলে রাখব। লজ্জা হয়না। বারবার বলেছি, কিন্তু আপনি আমার কথা শুনছেন না। এত নির্লজ্জ,বেহায়া মানুষ ও হয়? ঘেন্না হয় আমার। ছিহঃ।
আদি হতভম্ব হয়ে যায়। কোনো কথা বলতে পারেনা। এ মেয়েটা তাকে নির্লজ্জ বলল? সে নির্লজ্জ? এত বড় দুঃসাহস?
ইশা হাঁপিয়ে উঠে। ঘনঘন শ্বাস নেয়। গাড়ির সিটে বসে থাকা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আপনি আর কক্ষনো আমার সামনে আসবেন না। আপনাকে আমার সহ্য হয়না। আপনার সাথে আমার কি? আপনি কে হন আমার? লজ্জা থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবেন না আপনি।

খালি রিকশা যেতে দেখে ইশা। দৌড়ে যায়। রিকশাতে উঠে বসে। বলে,মামা একটু তাড়াতাড়ি যান। তার গলার কন্ঠস্বর ক্ষীণ। রিকশাচালক অবাক হয়ে রিকশা চালাতে মনোযোগ দেয়।
রক্ত টগবগ করে আদির মাথায় । সে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। গাড়ি চালায় জোরে। মাঝরাস্তায় যেতে না যেতেই গাড়ি থামায়। ফোন রিসিভ করে কানে দেয়। ফোনের ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
‘ আদি ফুচকা নিয়েছ? কোথায় তুমি?
আদি ফোন কানে নিয়ে বসে থাকে। মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। বক্সটা সে নিতে ভুলে গেছে।

রিকশায় বসা ইশা ডুকরে কেঁদে উঠে। এসব আর তার সহ্য হচ্ছেনা। আর কত ভয়ে ভয়ে দিন কাটাবে সে? আর কত সহ্য করবে এসব অন্যায়? ফোন বেজে উঠে তার। ফোন কানে দেওয়ার সাথে সাথে কানে বেজে উঠে।

‘ গ্রেট। দারুণ কাজ করেছ। মনে থাকে যেন।

ইশা ঘৃণাসহিত ফোনটা কেটে দেয়। কোনোমতে বাসায় গিয়ে পৌছে। সামনে এসে পড়া ছেলেটিকে দেখে সে হামলে পড়ে। রিপ কিছু বুঝে উঠার আগেই ইশা জাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে। সে অবাক হয়ে যায়। বলে,
‘ ইশু কি হয়েছে?
ইশা কাঁদতে কাঁদতে ভিজিয়ে দেয় রিপের বুক। এলোমেলো ভাবে বলে,
‘ রিপদা আমি আবার ও অন্যায় করেছি। আবার ও আমার নিজের ক্ষতি করেছি। আমি নিজ হাতে আমার আপনজনদের দূরে ঠেলে দিয়েছি। আমি কারো ভালোবাসার পাওয়ার যোগ্য নই রিপুদা। আমার কপালে কেন সুখ সয়না রিপুদা। আমার কি দোষ? আমার ভালো থাকতে ইচ্ছে করে রিপুদা। আমার সুখে থাকতে ইচ্ছে করে। আমার আর ভালো লাগছেনা এসব। একটু ও ভালো লাগছেনা।
ইশার কান্নার আওয়াজ শুনে বসে থাকা পরী কেঁদে উঠে। ডাকে, আমমমমমা,,,,,রিইইইউ
রিপ কিছুই বুঝে উঠতে পারেনা। শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
‘ তোকে আমি ভালো রাখব। তুই ভালো থাকবি। কাঁদিস না আর। আমাকে বল কে কি বলেছে?
পরী কেঁদে উঠে ভ্যা ভ্যা করে। ইশা ছেড়ে দেয় রিপকে। পরীর সামনাসামনি গিয়ে বসে। পরী ভয়ে ভয়ে থাকায় ইশার দিকে । তারপর পরই ইশার গলা জড়িয়ে ধরে। গালের সাথে গাল লাগিয়ে রাখে কিছুক্ষণ। তারপর ইশার গাল ভিজিয়ে দিয়ে ডাকে, আমমমমা……
ইশা চোখের জল ছেড়ে দেয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বুকের সাথে চেপে ধরে। এই ছোট্ট মেয়েটিই তার সন্তান। তার একমাত্র মেয়ে। তার আর ডক্টরের ভালোবাসার প্রতীক। সে পারেনি নিজের সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে। সে ভালোর জন্য দূরে ঠেলে দিয়েছে মেয়েকে। সে আজ মা ডাকে অন্য কাউকে। বাবা ডাকে অন্যকাউকে। তার কষ্ট হয় তখন। খুব কষ্ট হয়। তার খুব করে বলতে ইচ্ছে হয়, এই মা তুই শুধু আমাকেই মা ডাকবি। তোর বাবা আছে। ডক্টর আদি চৌধুরী তোর বাবা। আমি তোর মা। আমাকে একটিবার মা বলে ডাক। শুধু একটিবার।

চলবে,

( আপনাদের মতামত জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here